অনলাইন ডেস্ক
নেদারল্যান্ডসের সাধারণ নির্বাচনে অভাবনীয় জয়ে সরকার গঠনের পথে এগিয়ে আছে দেশটির ইসলামবিদ্বেষী জনপ্রিয় নেতা গির্ট উইল্ডারস। দেশটির নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, ২৫ বছর যাবৎ সংসদে থাকা উইল্ডারসের ফ্রিডম পার্টি পার্লামেন্টের ১৫০টি আসনের মধ্যে ৩৭টি আসন পেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থী জোটের চেয়ে দলটি অনেক এগিয়ে আছে। তবে সরাসরি ক্ষমতায় আসতে হলে গির্ট উইল্ডারসকে অন্য দলের সঙ্গে জোট করে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে। কোনো আইন প্রণয়ন করতে গেলেও জোটসঙ্গীদের সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এ নির্বাচনের ফলাফল নেদারল্যান্ডসের রাজনীতি ও সমাজের জন্য বড় এক ধাক্কা। শুধু নেদারল্যান্ডসের অভ্যন্তরেই নয় উগ্র-ডানপন্থীদের এই জয় ইউরোপজুড়ে একটি বড় ধাক্কা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নেদারল্যান্ডসে উগ্র-ডানপন্থীদের উত্থান
নেদারল্যান্ডসের জাতীয় নির্বাচনের আগে অনেকে ভেবেছিলেন, নির্বাচনে তৃতীয় স্থান দখলকারী মধ্য-ডানপন্থী দলের দিলান ইয়েসিলগোজ দেশটির প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হবেন। সাত বছর বয়সে তুরস্ক থেকে শরণার্থী হিসেবে নেদারল্যান্ডসে এসেছিলেন এই নেত্রী। সরকারে থাকাকালে তিনিই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর অবস্থান নেন।
অনেক মুসলিম নেতা অভিযোগ করেন, মসজিদ এবং ইসলামিক স্কুল বন্ধ করার জন্য ওয়াইল্ডারের যে অবস্থান সেটিকে স্বাভাবিক করা এবং উগ্র-ডানপন্থীদের জন্য সরকার গঠনের দরজা খুলে দেওয়ার কাজ করেছেন ইয়েসিলগোজ।
৪৬ বছর বয়সী ইয়েসিলগোজ এর আগের সরকারের আইনমন্ত্রী থাকলেও তিনি সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতেন। নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত অর্ধেক ভোটার ছিলেন দোদুল্যমান। ফলে তাঁরা ইয়েসিলগোজকে সমর্থন দেননি।
নেদারল্যান্ডসের দলীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এমন ফলাফল অবশ্য সবার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের শাসনকাল সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ হয়ে অনেক মানুষ মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলোর বিকল্পের খোঁজ করেছেন।
নেদারল্যান্ডসে মুসলিম সমাজে আতঙ্ক
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চরম দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তির নির্বাচনী সাফল্য, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। এবার নেদারল্যান্ডসের সংসদ নির্বাচনে গির্ট উইল্ডারসের ফ্রিডম পার্টির অভাবনীয় জয় পায়। তাঁর দলের এই জয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলমানদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মুসলমানদের বিপক্ষে কট্টর অবস্থান নেওয়া দলের জয়ের পর সে দেশের মুসলিমদের মনে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দলের নেতা গির্ট উইল্ডারস সুর নরম করলেও তাঁর নেতৃত্বে সম্ভাব্য জোট সরকারের নীতি নিয়ে তাঁদের মনে সংশয় রয়েছে।
নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে জয়ের পর গির্ট উইল্ডারস সুর নরম করে বলেন, তিনি গোটা দেশের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হতে চান।
ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের সম্পর্কে গির্ট উইল্ডারসের খোলাখুলি বিরূপ মন্তব্য নেদারল্যান্ডসের রাজনীতিতে বারবার আলোচনায় এসেছে। তিনি অতীতে নেদারল্যান্ডসে মসজিদ ও পবিত্র কোরআন নিষিদ্ধ করার ডাক দিয়েছেন। ফলে নির্বাচনে এমন ব্যক্তির প্রতি বিপুল জনসমর্থন নেদারল্যান্ডসের মুসলিমদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
নেদারল্যান্ডসের সিএমও নামের মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ডাচ মুসলমানদের জন্য নির্বাচনের এই ফলাফল অত্যন্ত মর্মান্তিক। তাঁর মতে, আইনের শাসনের মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি স্থির করে কোনো দল যে এত সাফল্য পেতে পারে, তা প্রত্যাশার বাইরে ছিল।
নেদারল্যান্ডসের জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ মুসলিম। গির্ট উইল্ডারস ক্ষমতায় এলে তাদের অনেকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিরিয়া থেকে আসা শিক্ষার্থী জুডি কারাজোলি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে নিজের উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, গির্ট উইল্ডারসের বর্ণবাদী পিভিভি দল খোলাখুলিভাবে দেশ থেকে ইসলাম ধর্ম দূর করার ঘোষণা দিয়েছেন।
কারজোলি বলেন, এমনকি গির্ট উইল্ডারসের ফ্রিডম পার্টির ইশতেহারে দাবি করা হয়েছে, সিরিয়ার কিছু অংশ বর্তমানে নিরাপদ থাকায় সেখান থেকে আশা শরণার্থীদের নেদারল্যান্ডসে বসবাসের অনুমতি বাতিল করে ফেরত পাঠানো উচিত। কারজোলি শুধু নিজের নন, তাঁর সিরীয় বন্ধুদের ভবিষ্যৎ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
গির্ট উইল্ডারসের দলের সাফল্যের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের কিছু কিছু জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা গেছে। উটরেখট শহরে প্রায় এক হাজার মানুষ ‘তোমরা একা নও’ স্লোগান দিয়ে মুসলমানদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। বামপন্থী দলগুলোর উদ্যোগে আয়োজিত এসব সমাবেশে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রামের অঙ্গীকার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমস্টারডাম শহরেও ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে সংকট
ইউরোপের জাতীয়তাবাদী ও উগ্র-ডানপন্থী দলের নেতারা উইল্ডারসকে অভিবাদন জানিয়েছেন। উইল্ডারসকে কেউ কেউ ‘ডাচ ট্রাম্প’ বলেও অভিধা দিচ্ছেন তাঁর বাগ্মিতা, চুলের শৈলি ও আচার-আচরণকে বিশ্লেষণ করে।
নেদারল্যান্ডসের স্বার্থ সবার আগে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন গির্ট উইলল্ডার্স। তিনি বলেছেন, ‘নেদারল্যান্ডসকে ফিরিয়ে দাও ডাচদের কাছে।’ একই ভঙ্গিমায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমেরিকাকে ফের মহান বানাও বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন।’
৬০ বছর বয়সী উইল্ডারস ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে নেদারল্যান্ডসকে বের করতে গণভোটের আয়োজন করতে চান, যেটাকে তিনি ‘নেক্সিট’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। ব্রেক্সিটের পর এমন সিদ্ধান্ত ইইউয়ের অস্তিত্বের জন্য এক বড় হুমকি। কেননা নেদারল্যান্ডস ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার মতো আবহ দেশের ভেতরে নেই।
এদিকে বিদায়ী ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট চলতি বছরের আগস্টে ইউক্রেনে এফ-১৬ জেট হস্তান্তর করতে সম্মত হন। সে সময় উইল্ডার্স কিয়েভের জন্য এ ধরনের সাহায্যের বিরোধিতা করেন
এত আশঙ্কার পরেও ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র এরিক মামার গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, সংস্থাটি উদ্বিগ্ন নয়। ইইউয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নেদারল্যান্ডস ব্লকের বিভিন্ন বিষয়ে ‘দৃঢ়ভাবে অংশগ্রহণ’ করবে বলে আশাবাদী।
তবে মাইগ্রেশন এবং জীবনযাত্রার খরচই এখন ইউরোপজুড়ে সবচেয়ে বড় সংকট। ভোটারেরা এই সমস্যার সমাধানই সর্বাগ্রে চান।
উইল্ডার্সের এই জয় ইউরোপজুড়ে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ডানপন্থীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অংশ হিসেবেই দেখতে হবে। ইউরোপের পরাশক্তি ফ্রান্সের ন্যাশনাল র্যালি পার্টি নির্বাচনে ভালো করেছে। দলটির প্রধান মেরি ল্যুঁপে উইল্ডারসকে অভিবাদন জানিয়ে বলেছেন, ‘জাতীয়তাবাদী পরিচয়ের নিরাপত্তার গুরুত্ব এই নির্বাচনে ফুটে উঠেছে।
জার্মানির উগ্র ডানপন্থী এএফডি জনমত জরিপে ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় এবং কখনো প্রথম স্থানে রয়েছে। এদিকে অস্ট্রিয়ার ফ্রিডম পার্টিও আবার সরকার গঠনের সুযোগ পেয়েছে।
এই দলগুলো অভিবাসন বিরোধী নীতিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তাঁরা সরকারে যেতে না পারলেও জনমত সৃষ্টি করে উদার ও বামপন্থী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। যেমন জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট সরকার বা ইমানুয়েল মাখোঁর রেনেসাঁ পার্টিকে ডানপন্থীদের নীতি বাস্তবায়নে বাধ্য করছে। সমগ্র ইউরোপের চিত্র একই।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, দ্য ইকোনমিস্ট
নেদারল্যান্ডসের সাধারণ নির্বাচনে অভাবনীয় জয়ে সরকার গঠনের পথে এগিয়ে আছে দেশটির ইসলামবিদ্বেষী জনপ্রিয় নেতা গির্ট উইল্ডারস। দেশটির নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, ২৫ বছর যাবৎ সংসদে থাকা উইল্ডারসের ফ্রিডম পার্টি পার্লামেন্টের ১৫০টি আসনের মধ্যে ৩৭টি আসন পেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থী জোটের চেয়ে দলটি অনেক এগিয়ে আছে। তবে সরাসরি ক্ষমতায় আসতে হলে গির্ট উইল্ডারসকে অন্য দলের সঙ্গে জোট করে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে। কোনো আইন প্রণয়ন করতে গেলেও জোটসঙ্গীদের সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এ নির্বাচনের ফলাফল নেদারল্যান্ডসের রাজনীতি ও সমাজের জন্য বড় এক ধাক্কা। শুধু নেদারল্যান্ডসের অভ্যন্তরেই নয় উগ্র-ডানপন্থীদের এই জয় ইউরোপজুড়ে একটি বড় ধাক্কা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নেদারল্যান্ডসে উগ্র-ডানপন্থীদের উত্থান
নেদারল্যান্ডসের জাতীয় নির্বাচনের আগে অনেকে ভেবেছিলেন, নির্বাচনে তৃতীয় স্থান দখলকারী মধ্য-ডানপন্থী দলের দিলান ইয়েসিলগোজ দেশটির প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হবেন। সাত বছর বয়সে তুরস্ক থেকে শরণার্থী হিসেবে নেদারল্যান্ডসে এসেছিলেন এই নেত্রী। সরকারে থাকাকালে তিনিই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর অবস্থান নেন।
অনেক মুসলিম নেতা অভিযোগ করেন, মসজিদ এবং ইসলামিক স্কুল বন্ধ করার জন্য ওয়াইল্ডারের যে অবস্থান সেটিকে স্বাভাবিক করা এবং উগ্র-ডানপন্থীদের জন্য সরকার গঠনের দরজা খুলে দেওয়ার কাজ করেছেন ইয়েসিলগোজ।
৪৬ বছর বয়সী ইয়েসিলগোজ এর আগের সরকারের আইনমন্ত্রী থাকলেও তিনি সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতেন। নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত অর্ধেক ভোটার ছিলেন দোদুল্যমান। ফলে তাঁরা ইয়েসিলগোজকে সমর্থন দেননি।
নেদারল্যান্ডসের দলীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এমন ফলাফল অবশ্য সবার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের শাসনকাল সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ হয়ে অনেক মানুষ মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলোর বিকল্পের খোঁজ করেছেন।
নেদারল্যান্ডসে মুসলিম সমাজে আতঙ্ক
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চরম দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তির নির্বাচনী সাফল্য, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। এবার নেদারল্যান্ডসের সংসদ নির্বাচনে গির্ট উইল্ডারসের ফ্রিডম পার্টির অভাবনীয় জয় পায়। তাঁর দলের এই জয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলমানদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মুসলমানদের বিপক্ষে কট্টর অবস্থান নেওয়া দলের জয়ের পর সে দেশের মুসলিমদের মনে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দলের নেতা গির্ট উইল্ডারস সুর নরম করলেও তাঁর নেতৃত্বে সম্ভাব্য জোট সরকারের নীতি নিয়ে তাঁদের মনে সংশয় রয়েছে।
নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে জয়ের পর গির্ট উইল্ডারস সুর নরম করে বলেন, তিনি গোটা দেশের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হতে চান।
ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের সম্পর্কে গির্ট উইল্ডারসের খোলাখুলি বিরূপ মন্তব্য নেদারল্যান্ডসের রাজনীতিতে বারবার আলোচনায় এসেছে। তিনি অতীতে নেদারল্যান্ডসে মসজিদ ও পবিত্র কোরআন নিষিদ্ধ করার ডাক দিয়েছেন। ফলে নির্বাচনে এমন ব্যক্তির প্রতি বিপুল জনসমর্থন নেদারল্যান্ডসের মুসলিমদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
নেদারল্যান্ডসের সিএমও নামের মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ডাচ মুসলমানদের জন্য নির্বাচনের এই ফলাফল অত্যন্ত মর্মান্তিক। তাঁর মতে, আইনের শাসনের মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি স্থির করে কোনো দল যে এত সাফল্য পেতে পারে, তা প্রত্যাশার বাইরে ছিল।
নেদারল্যান্ডসের জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ মুসলিম। গির্ট উইল্ডারস ক্ষমতায় এলে তাদের অনেকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিরিয়া থেকে আসা শিক্ষার্থী জুডি কারাজোলি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে নিজের উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, গির্ট উইল্ডারসের বর্ণবাদী পিভিভি দল খোলাখুলিভাবে দেশ থেকে ইসলাম ধর্ম দূর করার ঘোষণা দিয়েছেন।
কারজোলি বলেন, এমনকি গির্ট উইল্ডারসের ফ্রিডম পার্টির ইশতেহারে দাবি করা হয়েছে, সিরিয়ার কিছু অংশ বর্তমানে নিরাপদ থাকায় সেখান থেকে আশা শরণার্থীদের নেদারল্যান্ডসে বসবাসের অনুমতি বাতিল করে ফেরত পাঠানো উচিত। কারজোলি শুধু নিজের নন, তাঁর সিরীয় বন্ধুদের ভবিষ্যৎ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
গির্ট উইল্ডারসের দলের সাফল্যের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের কিছু কিছু জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা গেছে। উটরেখট শহরে প্রায় এক হাজার মানুষ ‘তোমরা একা নও’ স্লোগান দিয়ে মুসলমানদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। বামপন্থী দলগুলোর উদ্যোগে আয়োজিত এসব সমাবেশে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রামের অঙ্গীকার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমস্টারডাম শহরেও ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে সংকট
ইউরোপের জাতীয়তাবাদী ও উগ্র-ডানপন্থী দলের নেতারা উইল্ডারসকে অভিবাদন জানিয়েছেন। উইল্ডারসকে কেউ কেউ ‘ডাচ ট্রাম্প’ বলেও অভিধা দিচ্ছেন তাঁর বাগ্মিতা, চুলের শৈলি ও আচার-আচরণকে বিশ্লেষণ করে।
নেদারল্যান্ডসের স্বার্থ সবার আগে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন গির্ট উইলল্ডার্স। তিনি বলেছেন, ‘নেদারল্যান্ডসকে ফিরিয়ে দাও ডাচদের কাছে।’ একই ভঙ্গিমায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমেরিকাকে ফের মহান বানাও বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন।’
৬০ বছর বয়সী উইল্ডারস ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে নেদারল্যান্ডসকে বের করতে গণভোটের আয়োজন করতে চান, যেটাকে তিনি ‘নেক্সিট’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। ব্রেক্সিটের পর এমন সিদ্ধান্ত ইইউয়ের অস্তিত্বের জন্য এক বড় হুমকি। কেননা নেদারল্যান্ডস ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার মতো আবহ দেশের ভেতরে নেই।
এদিকে বিদায়ী ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট চলতি বছরের আগস্টে ইউক্রেনে এফ-১৬ জেট হস্তান্তর করতে সম্মত হন। সে সময় উইল্ডার্স কিয়েভের জন্য এ ধরনের সাহায্যের বিরোধিতা করেন
এত আশঙ্কার পরেও ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র এরিক মামার গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, সংস্থাটি উদ্বিগ্ন নয়। ইইউয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নেদারল্যান্ডস ব্লকের বিভিন্ন বিষয়ে ‘দৃঢ়ভাবে অংশগ্রহণ’ করবে বলে আশাবাদী।
তবে মাইগ্রেশন এবং জীবনযাত্রার খরচই এখন ইউরোপজুড়ে সবচেয়ে বড় সংকট। ভোটারেরা এই সমস্যার সমাধানই সর্বাগ্রে চান।
উইল্ডার্সের এই জয় ইউরোপজুড়ে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ডানপন্থীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অংশ হিসেবেই দেখতে হবে। ইউরোপের পরাশক্তি ফ্রান্সের ন্যাশনাল র্যালি পার্টি নির্বাচনে ভালো করেছে। দলটির প্রধান মেরি ল্যুঁপে উইল্ডারসকে অভিবাদন জানিয়ে বলেছেন, ‘জাতীয়তাবাদী পরিচয়ের নিরাপত্তার গুরুত্ব এই নির্বাচনে ফুটে উঠেছে।
জার্মানির উগ্র ডানপন্থী এএফডি জনমত জরিপে ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় এবং কখনো প্রথম স্থানে রয়েছে। এদিকে অস্ট্রিয়ার ফ্রিডম পার্টিও আবার সরকার গঠনের সুযোগ পেয়েছে।
এই দলগুলো অভিবাসন বিরোধী নীতিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তাঁরা সরকারে যেতে না পারলেও জনমত সৃষ্টি করে উদার ও বামপন্থী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। যেমন জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট সরকার বা ইমানুয়েল মাখোঁর রেনেসাঁ পার্টিকে ডানপন্থীদের নীতি বাস্তবায়নে বাধ্য করছে। সমগ্র ইউরোপের চিত্র একই।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, দ্য ইকোনমিস্ট
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৩ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৮ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
১০ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
১০ দিন আগে