মারুফ ইসলাম
থাইল্যান্ডের এবারের নির্বাচন নানা দৃষ্টিকোণ থেকেই ঐতিহাসিক। বছরের পর বছর সেনাশাসনে পর্যুদস্ত দেশটিতে এবার গণতন্ত্র বুঝি বুকভরে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেল! গতকাল রোববার (১৪ মে) জাতীয় নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল তা-ই বলছে। আনকোরা বিরোধী দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি) ভোটে সবচেয়ে এগিয়ে; এরপর রয়েছে পুরোনো দল থাকসিন সিনাওয়াত্রার ফিউ থাই। ৫০০ আসনের পার্লামেন্টে এই দুই দল মিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ক্ষমতাসীন সেনা-সমর্থিত ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টি গোহারা হেরেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চিত্র সত্যিই বিস্ময়কর। বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতার কলকাঠি নাড়া সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থীদের এই উত্থান ঐতিহাসিক। কীভাবে এই ঐতিহাসিক কাণ্ড ঘটল, তা জানতে হলে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে।
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েক দিন আগের কথা। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের শহরতলি থেকে একটু দূরের এক ছোট্ট দোকানঘরে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন তরুণ ও যুবক ভোটের লিফলেট প্যাকেটবন্দী করছেন। উদ্দেশ্য, আশপাশের এলাকায় লিফলেটগুলো বিতরণ করা। এই তরুণেরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।
দেখতে দোকানঘরের মতো হলেও ছোট্ট এ ঘরটিই থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দল মুভ ফরোয়ার্ডের প্রচারণার সদর দপ্তর। আর এখানে লিফলেট প্যাকেটবন্দী করছেন যে তরুণেরা, তাঁরা তীব্র রোদ আর অসহ্য গরম উপেক্ষা করে সাইকেল চালিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যান ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে। এই তরুণেরা ‘আইস’-এর সদস্য।
আইস হচ্ছে, থাইল্যান্ডে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির তরুণ প্রার্থীদের একটি দল। এদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার—থাইল্যান্ডকে সামরিক থাবা থেকে বের করে আনা ও কোমরভাঙা গণতন্ত্রকে সুস্থ করে তোলা।
বলে রাখা ভালো, প্রায় দুই দশক ধরে সেনাশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় থাইল্যান্ড পরিচালিত হচ্ছে। গণতন্ত্র নেই বললেই চলে। ভেঙে পড়েছে বিচারব্যবস্থাও। রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে রাজ পরিবার, আমলা, সামরিক কর্মকর্তা ও বিচারকদের থলের ভেতর।
এই দমবন্ধ অবস্থারই পরিবর্তন চাইছেন তরুণেরা। তাই তাঁরা দলে দলে তরি ভিড়িয়েছেন মুভ ফরোয়ার্ডের কাছে। মুভ ফরোয়ার্ড হচ্ছে ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির উত্তরসূরি। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির।
থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব সিকিউরিটি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক থিতিনান পংসুধিরাক বলেছেন, ‘থাইল্যান্ডকে সেনাদের কবল থেকে উদ্ধার করাই ছিল ফিউচার ফরোয়ার্ডের মূল এজেন্ডা। আমাদের দেশে দুটি অভ্যুত্থান হয়েছে, দুটো নতুন সংবিধান পেয়েছি আমরা এবং আমাদের বিচার বিভাগ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের তরুণেরা এক অন্তহীন চক্রের মধ্যে পড়ে গেছে। এসব দেখতে দেখতে তরুণেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর তরুণদের এই অনুভূতিকেই ক্যাশ করে ফিউচার ফরোয়ার্ড।’
২০১৯ সালের নির্বাচনে তৃতীয় বৃহত্তম আসন জিতে রক্ষণশীলদের হতবাক করে দিয়েছিল ফিউচার ফরোয়ার্ড। তখন ভয় পেয়ে সামরিক কর্মকর্তা, সিনিয়র আমলা ও বিচারকেরা মিলে সাংবিধানিক আদালতের মাধ্যমে ফিউচার ফরোয়ার্ডের অনেক নেতাকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করেন। এমন অবস্থায় দলটি সংসদে তার এমপিদের এক-তৃতীয়াংশ হারায়। ফলে ফিউচার ফরোয়ার্ডের স্থলাভিষিক্ত হয় মুভ ফরোয়ার্ড এবং সংসদে তারা একমাত্র বিরোধী কণ্ঠে পরিণত হয়।
ফিউচার ফরোয়ার্ডের মতো মুভ ফরোয়ার্ডকেও স্তব্ধ করতে চেয়েছিল থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীনেরা। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের জনপ্রিয়তা কমাতে পারেননি তাঁরা। দেশের মানুষ মনে করে, থাইল্যান্ডের পরিবর্তনের জিয়নকাঠি মুভ ফরোয়ার্ডের হাতেই রয়েছে। এর প্রতিফলনও দেখা গেল গতকালের ভোটে।
২০১৪ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে থাইল্যান্ডে তৎকালীন নির্বাচিত সরকার উৎখাত হয়। এরপর গতকাল রোববারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করল মুভ ফরোয়ার্ড। প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, ৫০ লাখ ভোট পেয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে আছে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি)। বলা বাহুল্য, মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির এই বিস্ময়কর উত্থানের পেছনে রয়েছে দেশটির তরুণেরা।
মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির দিকে তরুণেরা কীভাবে পতঙ্গের মতো ঝুঁকে পড়লেন, সেটি জানা যায় এমএফপির তরুণের সংগঠন আইসের সদস্য রুকচানোক শ্রীনর্কের বক্তব্য থেকে। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল প্রাউথ চান ওচা যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন আমি উল্লাস করেছিলাম। কিন্তু এখন আমি বুঝি, সেটা আমার ভুল ছিল। এ জন্য আমি অপরাধবোধে ভুগি। কীভাবে একটি ভয়ংকর অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিলাম, তা ভাবলে এখনো আমার কষ্ট হয়। তারপর ধীরে ধীরে আমার তা সাওয়াং হয়।’
থাই ভাষায় ‘তা সাওয়াং’ একটি বিশেষ শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে, রাজতন্ত্র সম্পর্কে চোখ খুলে যাওয়া। অর্থাৎ রুকচানোক শ্রীনর্ক বোঝাতে চাইছেন, তাঁর চোখ খুলে গেছে।
এভাবে অনেক তরুণের চোখ খুলে গেছে থাইল্যান্ডে। তাঁরা দলে দলে জড়ো হয়েছেন মুভ ফরোয়ার্ডের পেছনে। বছর তিনেক আগেও অবশ্য এতটা জনপ্রিয়তা ছিল না মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা যেসব এজেন্ডা নির্ধারণ করেছে এবং থাই রাজতন্ত্র সংস্কারের জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, তা দিন শেষে বিপুলসংখ্যক মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।
চন্টিচা জাংগ্রু নামের এক তরুণ শুনিয়েছেন তাঁর চোখ খুলে যাওয়ার গল্প। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের আগেই তাঁর চোখ খুলে গেছে। তাই তিনি ২০১৪ সালে অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছিলেন। ২০২০ সালে যখন রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভ হয়, সেই বিক্ষোভেও তাঁর ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। এখন তিনি পার্লামেন্ট সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছেন। (নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন চন্টিচা। শেষ পর্যন্ত ভোটে জয়ী হয়েছেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি।)
নির্বাচনের কয়েক দিন আগে চন্টিচা জাংগ্রু বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ২৮টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলার রায়ে আমার ১৫ বছরের কারাদণ্ডও হয়েছে। তারপরও আমি থামব না। দেশের পরিবর্তনের জন্য কথা বলবই।’
থাই তরুণদের এ সাহসী ভূমিকা বয়স্ক ভোটারদেরও মুগ্ধ করেছে। অনেক প্রবীণ বিবিসিকে বলেছেন, তাঁরাও পরিবর্তন চান এবং তাঁরা বিশ্বাস করেন, এই তরুণেরা তাঁদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, থাইল্যান্ডে প্রবীণ ভোটারের সংখ্যা বেশি। সেখানে ২৬ বছরের কম বয়সী ভোটারের সংখ্যা মাত্র ১৫ শতাংশ। এরাই মূলত মুভ ফরোয়ার্ডকে সমর্থন করেন। কিন্তু অল্পসংখ্যক তরুণ ভোটারই বিপুলসংখ্যক প্রবীণদের নিজেদের পক্ষে ভেড়াতে সক্ষম হয়েছেন।
থিতিনান পংসুধিরাক নামের একজন থাই নাগরিক বলেছেন, মুভ ফরোয়ার্ডের এজেন্ডাগুলো সেনাবাহিনী, রাজতন্ত্র, বিচার বিভাগ ও ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে। আর এই এজেন্ডাগুলোই তরুণ-যুবাদের আকৃষ্ট করেছে।
সূত্র: বিবিসি, এএফপি ও আল-জাজিরা
থাইল্যান্ডের এবারের নির্বাচন নানা দৃষ্টিকোণ থেকেই ঐতিহাসিক। বছরের পর বছর সেনাশাসনে পর্যুদস্ত দেশটিতে এবার গণতন্ত্র বুঝি বুকভরে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেল! গতকাল রোববার (১৪ মে) জাতীয় নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল তা-ই বলছে। আনকোরা বিরোধী দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি) ভোটে সবচেয়ে এগিয়ে; এরপর রয়েছে পুরোনো দল থাকসিন সিনাওয়াত্রার ফিউ থাই। ৫০০ আসনের পার্লামেন্টে এই দুই দল মিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ক্ষমতাসীন সেনা-সমর্থিত ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টি গোহারা হেরেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চিত্র সত্যিই বিস্ময়কর। বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতার কলকাঠি নাড়া সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থীদের এই উত্থান ঐতিহাসিক। কীভাবে এই ঐতিহাসিক কাণ্ড ঘটল, তা জানতে হলে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে।
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েক দিন আগের কথা। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের শহরতলি থেকে একটু দূরের এক ছোট্ট দোকানঘরে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন তরুণ ও যুবক ভোটের লিফলেট প্যাকেটবন্দী করছেন। উদ্দেশ্য, আশপাশের এলাকায় লিফলেটগুলো বিতরণ করা। এই তরুণেরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।
দেখতে দোকানঘরের মতো হলেও ছোট্ট এ ঘরটিই থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দল মুভ ফরোয়ার্ডের প্রচারণার সদর দপ্তর। আর এখানে লিফলেট প্যাকেটবন্দী করছেন যে তরুণেরা, তাঁরা তীব্র রোদ আর অসহ্য গরম উপেক্ষা করে সাইকেল চালিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যান ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে। এই তরুণেরা ‘আইস’-এর সদস্য।
আইস হচ্ছে, থাইল্যান্ডে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির তরুণ প্রার্থীদের একটি দল। এদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার—থাইল্যান্ডকে সামরিক থাবা থেকে বের করে আনা ও কোমরভাঙা গণতন্ত্রকে সুস্থ করে তোলা।
বলে রাখা ভালো, প্রায় দুই দশক ধরে সেনাশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় থাইল্যান্ড পরিচালিত হচ্ছে। গণতন্ত্র নেই বললেই চলে। ভেঙে পড়েছে বিচারব্যবস্থাও। রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে রাজ পরিবার, আমলা, সামরিক কর্মকর্তা ও বিচারকদের থলের ভেতর।
এই দমবন্ধ অবস্থারই পরিবর্তন চাইছেন তরুণেরা। তাই তাঁরা দলে দলে তরি ভিড়িয়েছেন মুভ ফরোয়ার্ডের কাছে। মুভ ফরোয়ার্ড হচ্ছে ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির উত্তরসূরি। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির।
থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব সিকিউরিটি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক থিতিনান পংসুধিরাক বলেছেন, ‘থাইল্যান্ডকে সেনাদের কবল থেকে উদ্ধার করাই ছিল ফিউচার ফরোয়ার্ডের মূল এজেন্ডা। আমাদের দেশে দুটি অভ্যুত্থান হয়েছে, দুটো নতুন সংবিধান পেয়েছি আমরা এবং আমাদের বিচার বিভাগ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের তরুণেরা এক অন্তহীন চক্রের মধ্যে পড়ে গেছে। এসব দেখতে দেখতে তরুণেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর তরুণদের এই অনুভূতিকেই ক্যাশ করে ফিউচার ফরোয়ার্ড।’
২০১৯ সালের নির্বাচনে তৃতীয় বৃহত্তম আসন জিতে রক্ষণশীলদের হতবাক করে দিয়েছিল ফিউচার ফরোয়ার্ড। তখন ভয় পেয়ে সামরিক কর্মকর্তা, সিনিয়র আমলা ও বিচারকেরা মিলে সাংবিধানিক আদালতের মাধ্যমে ফিউচার ফরোয়ার্ডের অনেক নেতাকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করেন। এমন অবস্থায় দলটি সংসদে তার এমপিদের এক-তৃতীয়াংশ হারায়। ফলে ফিউচার ফরোয়ার্ডের স্থলাভিষিক্ত হয় মুভ ফরোয়ার্ড এবং সংসদে তারা একমাত্র বিরোধী কণ্ঠে পরিণত হয়।
ফিউচার ফরোয়ার্ডের মতো মুভ ফরোয়ার্ডকেও স্তব্ধ করতে চেয়েছিল থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীনেরা। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের জনপ্রিয়তা কমাতে পারেননি তাঁরা। দেশের মানুষ মনে করে, থাইল্যান্ডের পরিবর্তনের জিয়নকাঠি মুভ ফরোয়ার্ডের হাতেই রয়েছে। এর প্রতিফলনও দেখা গেল গতকালের ভোটে।
২০১৪ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে থাইল্যান্ডে তৎকালীন নির্বাচিত সরকার উৎখাত হয়। এরপর গতকাল রোববারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করল মুভ ফরোয়ার্ড। প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, ৫০ লাখ ভোট পেয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে আছে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি)। বলা বাহুল্য, মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির এই বিস্ময়কর উত্থানের পেছনে রয়েছে দেশটির তরুণেরা।
মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির দিকে তরুণেরা কীভাবে পতঙ্গের মতো ঝুঁকে পড়লেন, সেটি জানা যায় এমএফপির তরুণের সংগঠন আইসের সদস্য রুকচানোক শ্রীনর্কের বক্তব্য থেকে। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল প্রাউথ চান ওচা যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন আমি উল্লাস করেছিলাম। কিন্তু এখন আমি বুঝি, সেটা আমার ভুল ছিল। এ জন্য আমি অপরাধবোধে ভুগি। কীভাবে একটি ভয়ংকর অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিলাম, তা ভাবলে এখনো আমার কষ্ট হয়। তারপর ধীরে ধীরে আমার তা সাওয়াং হয়।’
থাই ভাষায় ‘তা সাওয়াং’ একটি বিশেষ শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে, রাজতন্ত্র সম্পর্কে চোখ খুলে যাওয়া। অর্থাৎ রুকচানোক শ্রীনর্ক বোঝাতে চাইছেন, তাঁর চোখ খুলে গেছে।
এভাবে অনেক তরুণের চোখ খুলে গেছে থাইল্যান্ডে। তাঁরা দলে দলে জড়ো হয়েছেন মুভ ফরোয়ার্ডের পেছনে। বছর তিনেক আগেও অবশ্য এতটা জনপ্রিয়তা ছিল না মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা যেসব এজেন্ডা নির্ধারণ করেছে এবং থাই রাজতন্ত্র সংস্কারের জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, তা দিন শেষে বিপুলসংখ্যক মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।
চন্টিচা জাংগ্রু নামের এক তরুণ শুনিয়েছেন তাঁর চোখ খুলে যাওয়ার গল্প। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের আগেই তাঁর চোখ খুলে গেছে। তাই তিনি ২০১৪ সালে অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছিলেন। ২০২০ সালে যখন রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভ হয়, সেই বিক্ষোভেও তাঁর ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। এখন তিনি পার্লামেন্ট সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছেন। (নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন চন্টিচা। শেষ পর্যন্ত ভোটে জয়ী হয়েছেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি।)
নির্বাচনের কয়েক দিন আগে চন্টিচা জাংগ্রু বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ২৮টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলার রায়ে আমার ১৫ বছরের কারাদণ্ডও হয়েছে। তারপরও আমি থামব না। দেশের পরিবর্তনের জন্য কথা বলবই।’
থাই তরুণদের এ সাহসী ভূমিকা বয়স্ক ভোটারদেরও মুগ্ধ করেছে। অনেক প্রবীণ বিবিসিকে বলেছেন, তাঁরাও পরিবর্তন চান এবং তাঁরা বিশ্বাস করেন, এই তরুণেরা তাঁদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, থাইল্যান্ডে প্রবীণ ভোটারের সংখ্যা বেশি। সেখানে ২৬ বছরের কম বয়সী ভোটারের সংখ্যা মাত্র ১৫ শতাংশ। এরাই মূলত মুভ ফরোয়ার্ডকে সমর্থন করেন। কিন্তু অল্পসংখ্যক তরুণ ভোটারই বিপুলসংখ্যক প্রবীণদের নিজেদের পক্ষে ভেড়াতে সক্ষম হয়েছেন।
থিতিনান পংসুধিরাক নামের একজন থাই নাগরিক বলেছেন, মুভ ফরোয়ার্ডের এজেন্ডাগুলো সেনাবাহিনী, রাজতন্ত্র, বিচার বিভাগ ও ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে। আর এই এজেন্ডাগুলোই তরুণ-যুবাদের আকৃষ্ট করেছে।
সূত্র: বিবিসি, এএফপি ও আল-জাজিরা
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
২ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৬ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৯ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৯ দিন আগে