অনলাইন ডেস্ক
জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যে শিনজো আবে, তাঁকে আজ গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এটা যতটা না হত্যাকাণ্ডের জন্য, তার চেয়েও বেশি হত্যার স্থানটি জাপান বলে। সবার মাথাতেই একই প্রশ্ন, জাপানেও এমন হয়?
হ্যাঁ, জাপান বলেই বারবার সবাই বিস্মিত হচ্ছে। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে দেখা গেছে, জাপানে প্রতি এক লাখ লোকে অপরাধ করছে মাত্র দশমিক ২৬ জন। কিন্তু এ অপরাধের মধ্যে সহিংস অপরাধের সংখ্যা একেবারে কম। জাপানে এ ধরনের অপরাধের কথা সহজে কেউ ভাবতে পারে না।
কিন্তু অপরাধ তো হয়েছে। আর সেই অপরাধে প্রকাশ্য রাস্তায় একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যিনি ২০০৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই ছিলেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। ২০১২ সালে তিনি দ্বিতীয়বার জাপানের প্রধানমন্ত্রী হন। অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালে পদত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতা না থাকলেও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) ওপর যথেষ্ট প্রভাব ছিল তাঁর।
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গুলির খবর প্রকাশের পর থেকেই ঘুরেফিরে সব জায়গায় প্রশ্ন উঠছে—জাপানে এমনটা কীভাবে হতে পারে? না, প্রশ্নটি খুব বাড়িয়ে করা নয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সাংবাদিক রুপার্ট উইংফিল্ড-হেস এ নিয়ে একটি লেখা লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘জাপানে থাকলে আপনার প্রতিনিয়তই মনে হবে, এখানে সহিংস অপরাধ ঘটতে পারে না। কিন্তু হয়েছে। আর এই অপরাধের ভুক্তভোগী একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায়, এটি আরও বেশি হতবুদ্ধিকর। শিনজো আবে হয়তো এখন আর জাপানের প্রধানমন্ত্রী নন। কিন্তু তিনি জাপানের জনপরিসরে এখনো এক মহিরুহসম ব্যক্তিত্ব। এমনকি তিনি হয়তো গত তিন দশকে জাপানের সবচেয়ে আলোচিত রাজনীতিকও। কথা হলো, কে আবেকে খুন করতে চাইবে এবং কেন?’
হ্যাঁ, এই কে ও কেন প্রশ্ন দুটিই এখন বেশ প্রকট হয়ে উঠেছে। তল্লাশি চলছে আবের ক্ষমতায় থাকাকালের বিভিন্ন নীতি ও পদক্ষেপের তালিকায়। খোঁজা হচ্ছে এমন কোনো গুরুতর কারণ, যার কারণে তাঁকে হত্যার শিকার হতে হলো। একই সঙ্গে সবার নজর সেই হত্যাকারীর পরিচয় ও তাঁর ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের দিকে। বোঝার চেষ্টা চলছে, কীভাবে এই আগ্নেয়াস্ত্র ওই আততায়ী জোগাড় করলেন?
জাপানে আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা পাওয়াটা সহজ কিছু নয়। এমনকি সংঘবদ্ধ অপরাধীরাও বন্দুক সঙ্গে রাখা বা তা ব্যবহারের আগে দুবার ভাবে। রুপার্ট উইংফিল্ড-হেস বলছেন, ‘এখানকার মানুষ সহিংস অপরাধের কথা ভাবতে পারে না বললে একটুও বাড়িয়ে বলা হয় না। হ্যাঁ, এখানে ইয়াকুজা নামে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের অস্তিত্ব আছে, যারা তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে জাপানে বেশ আলোচিত। কিন্তু অধিকাংশ লোকেরই সৌভাগ্য যে, তাদের এদের সংস্পর্শে আসতে হয় না। এমনকি ইয়াকুজাও বন্দুক থেকে দূরে থাকে। কারণ, জাপানে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার শাস্তি ভয়াবহ। জাপানে একটি বন্দুকের মালিকানা পাওয়া বেশ কঠিন। এটা পেতে হলে কোনো অপরাধ-সংশ্লিষ্টতা থাকা চলবে না। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক, মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয় এবং আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানার আবেদন করা ব্যক্তির ইতিহাস তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয় অপরাধের চিহ্ন। সঙ্গে রয়েছে প্রতিবেশীদের সাক্ষাৎকারের বিষয়, যা পুলিশ বিভাগ নেয়। ফলে জাপানে বন্দুক হামলা বা এ ধরনের সহিংসতা প্রায় অস্তিত্বহীন। গড়ে দেশটিতে প্রতি বছর মাত্র ১০টি মৃত্যু হয়, যাার সঙ্গে বন্দুক জড়িত। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল তিন। ফলে শিনজো আবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি ও তাঁর ব্যবহৃত অস্ত্রটি নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ’
প্রশ্ন হলো, তিনি কে? তিনি কোথা থেকে এই বন্দুক জোগাড় করলেন? জাপানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ৪১ বছর বয়সী ওই আততায়ী জাপানের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক সদস্য। এই বাহিনী কিন্তু সেনাবাহিনীর সমতুল্য। কিন্তু এই তথ্যই যথেষ্ট নয়। এই আততায়ী জাপানের নৌবাহিনীতে মাত্র তিন বছর ছিলেন।
এ তো গেল ব্যক্তির পরিচয়। তাঁর ব্যবহৃত অস্ত্রটি আরও কৌতূহলোদ্দীপক। গুলির পর মাটিতে পড়ে থাকা অস্ত্রটির ছবিটি বলছে, এটি সম্ভবত ঘরে তৈরি। দুটি স্টিলের পাইপ জোড়া লাগিয়ে ঘরে তৈরি ট্রিগার জুড়ে এই বন্দুক তৈরি করা হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে, এটি ইন্টারনেট থেকে নামানো কোনো টিউটোরিয়াল অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এটা কি কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড? নাকি কোনো প্রচারাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির কাজ, যে একজন বিখ্যাত লোককে হত্যার মধ্য দিয়ে নিজে বিখ্যাত হতে চায়? এর উত্তর এখনো অজানা।
জাপানে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নতুন নয়। তবে এর কোনোটিই কাছাকাছি সময়ের নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতটি ছিল ১৯৬০ সালে। ওই বছর জাপানের সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা ইনেজিরো আসানুমাকে এক কট্টর ডানপন্থী সামুরাই হত্যা করেছিল। জাপানে এখনো কট্টর ডানপন্থীদের অস্তিত্ব আছে। তবে ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে তাদের লক্ষ্যবস্তু হওয়াটা আবের জন্য ঠিক খাপ খায় না।
গত কয়েক বছরে এখানে অবশ্য অন্য এক ধরনের অপরাধকে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে দেখা গেছে। সেটা হলো—কোনো একাকী ও আপাত নিরীহ পুরুষ হঠাৎ করেই অন্য ব্যক্তি বা বস্তুর ওপর রাগ ঝাড়তে শুরু করল এবং তা বেআইনি পন্থায়। ২০১৯ সালে এক ব্যক্তি কিয়োটোর এক জনপ্রিয় অ্যানিমেশন স্টুডিওতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল; মারা পড়েছিল ৩৬ জন। ওই ব্যক্তি পরে পুলিশকে বলেছিলেন, ওই স্টুডিওর ওপর তাঁর রাগ ছিল। কারণ, তারা তাঁর গল্প চুরি করেছিল। ২০০৮ সালে এক হতাশ যুবক টোকিওর আকিহাবারা অঞ্চলে ভরা রাস্তায় ভিড়ের ওপর ট্রাক তুলে দিয়েছিল। তারপর, ট্রাক থেকে বেরিয়ে যাকে সামনে পেয়েছে, তাকেই ছুরিকাঘাত করেছে। সেবার মারা গিয়েছিল সাতজন। এই হামলার আগে অনলাইনে ওই যুবক একটি বার্তা দিয়েছিলেন—‘আমি আকিহাবারার লোকেদের হত্যা করব। আমার একটিও বন্ধু নেই। কুৎসিত বলে আমাকে সবাই এড়িয়ে চলে। বর্জ্যের চেয়েও নিচুতে আমার অবস্থান।’
শিনজো আবে হত্যাকাণ্ড এগুলোর কোনটির সঙ্গে খাপ খায়, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, এই হত্যা জাপানকে বদলে দেবে।
জাপান কতটা নিরাপদ, তা বোঝা যায় এর নিরাপত্তা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার মধ্য দিয়েই। এখনকার মতোই নির্বাচনের প্রচারের সময় প্রার্থীরা, বড় বড় নেতারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেন, আশপাশের দোকানে থাকা এবং পথচলতি মানুষের সঙ্গে হাত মেলান। ঠিক এ কারণেই আবের হত্যাকারী এত সহজে তাঁর দেখা পেয়েছেন, অস্ত্রটি বের করতে পেরেছেন এবং গুলি চালিয়েছেন। নিরাপত্তার চাদর বলে যে কথাটা আছে, সেটা থাকলে জাপানে এই হত্যাটা হতে পারত না হয়তো। আগ্নেয়াস্ত্র রাখার যে আইন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অহিংস জাপানের যে যাত্রা—এসব মিলিয়ে জাপান সাধারণ মানুষের মধ্যেই একটা শান্ত ও সৌম্যভাব ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। হ্যাঁ, আবে তাঁর ক্ষমতাকালে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে আলোচনায় এসেছেন। জাপানের সশস্ত্রীকরণের পথে হেঁটেছেন। কিন্তু সেটা ছিল সমর প্রস্তুতি। দেশের অভ্যন্তরে নীতি কিন্তু আগের মতোই ছিল। তবু এ হত্যাকাণ্ড হলো। এতে নিরাপত্তা নিয়ে জাপানে তোড়জোড় শুরু হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার হয়ে গেছে। জাপানের নোরা শহরে অবস্থান করা বিবিসি সাংবাদিক রুপার্ট উইংফিল্ড-হেস যেমনটা বলছেন বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে যে, এই হত্যার পর এই সবই বদলে যাবে জাপানে। নিরাপদ জাপানে হয়তো নিরাপত্তার বাড়াবাড়িই সামনে বাস্তব হয়ে উঠবে।
জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যে শিনজো আবে, তাঁকে আজ গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এটা যতটা না হত্যাকাণ্ডের জন্য, তার চেয়েও বেশি হত্যার স্থানটি জাপান বলে। সবার মাথাতেই একই প্রশ্ন, জাপানেও এমন হয়?
হ্যাঁ, জাপান বলেই বারবার সবাই বিস্মিত হচ্ছে। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে দেখা গেছে, জাপানে প্রতি এক লাখ লোকে অপরাধ করছে মাত্র দশমিক ২৬ জন। কিন্তু এ অপরাধের মধ্যে সহিংস অপরাধের সংখ্যা একেবারে কম। জাপানে এ ধরনের অপরাধের কথা সহজে কেউ ভাবতে পারে না।
কিন্তু অপরাধ তো হয়েছে। আর সেই অপরাধে প্রকাশ্য রাস্তায় একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যিনি ২০০৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই ছিলেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। ২০১২ সালে তিনি দ্বিতীয়বার জাপানের প্রধানমন্ত্রী হন। অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালে পদত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতা না থাকলেও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) ওপর যথেষ্ট প্রভাব ছিল তাঁর।
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গুলির খবর প্রকাশের পর থেকেই ঘুরেফিরে সব জায়গায় প্রশ্ন উঠছে—জাপানে এমনটা কীভাবে হতে পারে? না, প্রশ্নটি খুব বাড়িয়ে করা নয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সাংবাদিক রুপার্ট উইংফিল্ড-হেস এ নিয়ে একটি লেখা লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘জাপানে থাকলে আপনার প্রতিনিয়তই মনে হবে, এখানে সহিংস অপরাধ ঘটতে পারে না। কিন্তু হয়েছে। আর এই অপরাধের ভুক্তভোগী একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায়, এটি আরও বেশি হতবুদ্ধিকর। শিনজো আবে হয়তো এখন আর জাপানের প্রধানমন্ত্রী নন। কিন্তু তিনি জাপানের জনপরিসরে এখনো এক মহিরুহসম ব্যক্তিত্ব। এমনকি তিনি হয়তো গত তিন দশকে জাপানের সবচেয়ে আলোচিত রাজনীতিকও। কথা হলো, কে আবেকে খুন করতে চাইবে এবং কেন?’
হ্যাঁ, এই কে ও কেন প্রশ্ন দুটিই এখন বেশ প্রকট হয়ে উঠেছে। তল্লাশি চলছে আবের ক্ষমতায় থাকাকালের বিভিন্ন নীতি ও পদক্ষেপের তালিকায়। খোঁজা হচ্ছে এমন কোনো গুরুতর কারণ, যার কারণে তাঁকে হত্যার শিকার হতে হলো। একই সঙ্গে সবার নজর সেই হত্যাকারীর পরিচয় ও তাঁর ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের দিকে। বোঝার চেষ্টা চলছে, কীভাবে এই আগ্নেয়াস্ত্র ওই আততায়ী জোগাড় করলেন?
জাপানে আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা পাওয়াটা সহজ কিছু নয়। এমনকি সংঘবদ্ধ অপরাধীরাও বন্দুক সঙ্গে রাখা বা তা ব্যবহারের আগে দুবার ভাবে। রুপার্ট উইংফিল্ড-হেস বলছেন, ‘এখানকার মানুষ সহিংস অপরাধের কথা ভাবতে পারে না বললে একটুও বাড়িয়ে বলা হয় না। হ্যাঁ, এখানে ইয়াকুজা নামে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের অস্তিত্ব আছে, যারা তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে জাপানে বেশ আলোচিত। কিন্তু অধিকাংশ লোকেরই সৌভাগ্য যে, তাদের এদের সংস্পর্শে আসতে হয় না। এমনকি ইয়াকুজাও বন্দুক থেকে দূরে থাকে। কারণ, জাপানে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার শাস্তি ভয়াবহ। জাপানে একটি বন্দুকের মালিকানা পাওয়া বেশ কঠিন। এটা পেতে হলে কোনো অপরাধ-সংশ্লিষ্টতা থাকা চলবে না। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক, মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয় এবং আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানার আবেদন করা ব্যক্তির ইতিহাস তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয় অপরাধের চিহ্ন। সঙ্গে রয়েছে প্রতিবেশীদের সাক্ষাৎকারের বিষয়, যা পুলিশ বিভাগ নেয়। ফলে জাপানে বন্দুক হামলা বা এ ধরনের সহিংসতা প্রায় অস্তিত্বহীন। গড়ে দেশটিতে প্রতি বছর মাত্র ১০টি মৃত্যু হয়, যাার সঙ্গে বন্দুক জড়িত। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল তিন। ফলে শিনজো আবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি ও তাঁর ব্যবহৃত অস্ত্রটি নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ’
প্রশ্ন হলো, তিনি কে? তিনি কোথা থেকে এই বন্দুক জোগাড় করলেন? জাপানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ৪১ বছর বয়সী ওই আততায়ী জাপানের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক সদস্য। এই বাহিনী কিন্তু সেনাবাহিনীর সমতুল্য। কিন্তু এই তথ্যই যথেষ্ট নয়। এই আততায়ী জাপানের নৌবাহিনীতে মাত্র তিন বছর ছিলেন।
এ তো গেল ব্যক্তির পরিচয়। তাঁর ব্যবহৃত অস্ত্রটি আরও কৌতূহলোদ্দীপক। গুলির পর মাটিতে পড়ে থাকা অস্ত্রটির ছবিটি বলছে, এটি সম্ভবত ঘরে তৈরি। দুটি স্টিলের পাইপ জোড়া লাগিয়ে ঘরে তৈরি ট্রিগার জুড়ে এই বন্দুক তৈরি করা হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে, এটি ইন্টারনেট থেকে নামানো কোনো টিউটোরিয়াল অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এটা কি কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড? নাকি কোনো প্রচারাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির কাজ, যে একজন বিখ্যাত লোককে হত্যার মধ্য দিয়ে নিজে বিখ্যাত হতে চায়? এর উত্তর এখনো অজানা।
জাপানে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নতুন নয়। তবে এর কোনোটিই কাছাকাছি সময়ের নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতটি ছিল ১৯৬০ সালে। ওই বছর জাপানের সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা ইনেজিরো আসানুমাকে এক কট্টর ডানপন্থী সামুরাই হত্যা করেছিল। জাপানে এখনো কট্টর ডানপন্থীদের অস্তিত্ব আছে। তবে ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে তাদের লক্ষ্যবস্তু হওয়াটা আবের জন্য ঠিক খাপ খায় না।
গত কয়েক বছরে এখানে অবশ্য অন্য এক ধরনের অপরাধকে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে দেখা গেছে। সেটা হলো—কোনো একাকী ও আপাত নিরীহ পুরুষ হঠাৎ করেই অন্য ব্যক্তি বা বস্তুর ওপর রাগ ঝাড়তে শুরু করল এবং তা বেআইনি পন্থায়। ২০১৯ সালে এক ব্যক্তি কিয়োটোর এক জনপ্রিয় অ্যানিমেশন স্টুডিওতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল; মারা পড়েছিল ৩৬ জন। ওই ব্যক্তি পরে পুলিশকে বলেছিলেন, ওই স্টুডিওর ওপর তাঁর রাগ ছিল। কারণ, তারা তাঁর গল্প চুরি করেছিল। ২০০৮ সালে এক হতাশ যুবক টোকিওর আকিহাবারা অঞ্চলে ভরা রাস্তায় ভিড়ের ওপর ট্রাক তুলে দিয়েছিল। তারপর, ট্রাক থেকে বেরিয়ে যাকে সামনে পেয়েছে, তাকেই ছুরিকাঘাত করেছে। সেবার মারা গিয়েছিল সাতজন। এই হামলার আগে অনলাইনে ওই যুবক একটি বার্তা দিয়েছিলেন—‘আমি আকিহাবারার লোকেদের হত্যা করব। আমার একটিও বন্ধু নেই। কুৎসিত বলে আমাকে সবাই এড়িয়ে চলে। বর্জ্যের চেয়েও নিচুতে আমার অবস্থান।’
শিনজো আবে হত্যাকাণ্ড এগুলোর কোনটির সঙ্গে খাপ খায়, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, এই হত্যা জাপানকে বদলে দেবে।
জাপান কতটা নিরাপদ, তা বোঝা যায় এর নিরাপত্তা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার মধ্য দিয়েই। এখনকার মতোই নির্বাচনের প্রচারের সময় প্রার্থীরা, বড় বড় নেতারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেন, আশপাশের দোকানে থাকা এবং পথচলতি মানুষের সঙ্গে হাত মেলান। ঠিক এ কারণেই আবের হত্যাকারী এত সহজে তাঁর দেখা পেয়েছেন, অস্ত্রটি বের করতে পেরেছেন এবং গুলি চালিয়েছেন। নিরাপত্তার চাদর বলে যে কথাটা আছে, সেটা থাকলে জাপানে এই হত্যাটা হতে পারত না হয়তো। আগ্নেয়াস্ত্র রাখার যে আইন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অহিংস জাপানের যে যাত্রা—এসব মিলিয়ে জাপান সাধারণ মানুষের মধ্যেই একটা শান্ত ও সৌম্যভাব ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। হ্যাঁ, আবে তাঁর ক্ষমতাকালে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে আলোচনায় এসেছেন। জাপানের সশস্ত্রীকরণের পথে হেঁটেছেন। কিন্তু সেটা ছিল সমর প্রস্তুতি। দেশের অভ্যন্তরে নীতি কিন্তু আগের মতোই ছিল। তবু এ হত্যাকাণ্ড হলো। এতে নিরাপত্তা নিয়ে জাপানে তোড়জোড় শুরু হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার হয়ে গেছে। জাপানের নোরা শহরে অবস্থান করা বিবিসি সাংবাদিক রুপার্ট উইংফিল্ড-হেস যেমনটা বলছেন বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে যে, এই হত্যার পর এই সবই বদলে যাবে জাপানে। নিরাপদ জাপানে হয়তো নিরাপত্তার বাড়াবাড়িই সামনে বাস্তব হয়ে উঠবে।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৩ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৭ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৯ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৯ দিন আগে