মারুফ ইসলাম
নির্বাচন সামনে রেখে শাসক দলের মতিভ্রম হওয়ার নজির পৃথিবীতে কম নেই। এই সময়ে তাদের ওপর কোত্থেকে যেন ‘উনপঞ্চাশ বায়ু’ এসে ভর করে, সেই বায়ুর প্রভাবে তারা দেশের বুকে নানা কালাকানুন আরোপ করার চেষ্টা করে।
২০১৬ সালে পুতিন সরকার এমন আইন করেছিল যে রাশিয়ার কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন বা ব্যক্তি বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা এনজিওর কাছ থেকে কোনো ধরনের অর্থসহায়তা নিতে পারবে না।
আবার ২০১৪ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিরোধীদের দমন করতে জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অনুমতি ছাড়া অবস্থান কিংবা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি দেওয়া যাবে না মর্মে আইন পাস করেছিলেন।
এসবই নির্বাচনের আগে আগে বিরোধীদের দমন করার নজির। তবে সম্প্রতি ভারতের মোদি সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের দমন করতে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে নজিরবিহীন বলছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, একটু ‘বেশিই মতিভ্রম’ হয়েছে মোদি সরকারের।
মোদির মতিভ্রমের সবচেয়ে বড় নজির হিসেবে দেখা হচ্ছে ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যামেন্ডমেন্ট রুলস-২০২৩ বা আইটি রুলসকে। সম্প্রতি মোদি সরকারের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড আইটি মন্ত্রণালয় এটি পাস করেছে। এর মাধ্যমে সরকারবিরোধী ‘ফেক নিউজ’ ও ‘মিসলিডিং নিউজ’ অর্থাৎ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর খবর যাচাই করবে সরকার।
আইটি রুলসের অধীনে একটি ফ্যাক্ট চেক ইউনিট খুলেছেন মোদি। এর কাজ হচ্ছে, সরকার-সম্পর্কিত যাবতীয় খবর বিশ্লেষণ করা এবং অপছন্দের খবরটি সব অনলাইন মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে হাপিস করে দেওয়া।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারবিরোধী ফেক নিউজ সরাবে সরকার, বাকি ফেক নিউজগুলো কি তবে বহাল তবিয়তে থেকে যাবে? যে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও গুজবের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে ভারত, সেই মোদি এখন গুজব ঠেকাতে চান। প্রহসন আর কি!
একটু স্মৃতির উঠোনে উঁকি দিলেই দেখা যাবে মহাত্মন মোদি ইতিপূর্বে কতভাবে খবর নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং জবর খবরের জন্ম দিয়েছেন।
ভারতের ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশন প্রতিবছর ভারতের দারিদ্র্য ও বেকারত্ব-বিষয়ক পরিসংখ্যান প্রকাশ করত। মোদি ক্ষমতায় আসার পর সেই ধারাবাহিকতা আর রক্ষা হয়নি। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোনো ধরনের দারিদ্র্য ও বেকারত্ব-বিষয়ক তথ্যপ্রকাশ করতে দেননি।
কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে একটি রিপোর্ট কেমন কেমন করে যেন সংবাদমাধ্যমগুলোতে ফাঁস হয়ে যায়। দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতে বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ। যা গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। স্বাভাবিকভাবে সেই রিপোর্ট চাপা দিতে হেন কর্ম নেই যা মোদি সরকার করেনি।
ভারতের শ্রমশক্তি-সম্পর্কিত তথ্য জানাত দেশটির ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন (এনএসএসও)। এই সংস্থার দেওয়া তথ্য ছিল সর্বজনগ্রাহ্য, বিশ্বস্ত ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তাদের জরিপের নাম ছিল এমপ্লয়মেন্ট-আনএমপ্লয়মেন্ট সার্ভে। মোদি সেটি বন্ধ করে দিয়ে ‘পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে’ নামে নতুন জরিপ চালু করেন। এই জরিপের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে সর্বমহলে এখনো সমালোচনা রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মোদির নতুন জরিপটি তাঁর সুবিধামতো প্রচার চালানোর একটি যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। ২০২২ সালে পিএলএফএস (পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে) যে তথ্য দিয়েছে তা বিশ্বাস করার কোনোই কারণ নেই। পিএলএফএস জানিয়েছে, ‘গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে কর্মসংস্থান করোনার আগের সময়ের কর্মসংস্থানকে ছাপিয়ে গেছে’—এটি হাস্যকর প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বরং সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বলছে, করোনা-পরবর্তী ভারতে বেকারত্ব বেড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে।
সিএমআইর তথ্য যে সঠিক, তার প্রমাণ মেলে বিজেপির বিভিন্ন নেতাদের বিষোদ্গারমূলক বক্তব্য থেকে। হরিয়ানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর খেপে গিয়ে বলেছিলেন, হরিয়ানার বেকারত্ব ৩৯ শতাংশ দেখিয়েছে সিএমআই। এসব আজগুবি তথ্য কোথায় পায় তারা?
অক্সফাম ইন্ডিয়া নামের আরেকটি বেসরকারি সংস্থা প্রতিবছর ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদেরও আচ্ছামতো বকে দিয়েছেন মোদি। তিনি অক্সফাম ইন্ডিয়ার কার্যালয়ে সিবিআই (সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন) পাঠিয়ে হয়রানি করেছেন।
এক কথায় কর্মসংস্থান, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করতে চান না মোদি। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট লিখেছে, ভারতের জরিপ কাঠামো ভেঙে পড়েছে।
মোদির সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম হার্ভার্ডের জার্নালে এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ২০১১-১২ থেকে ২০১৬-১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার শতকরা ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ শতাংশ দেখানো হয়েছে।
তথ্য জালিয়াতির এক আশ্চর্য উদাহরণ নরেন্দ্র মোদি। তিনি এখন তথ্য জালিয়াতি ঠেকাতে ফ্যাক্ট চেক ইউনিট খুলেছেন।
মোদির শাসনামলে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) তাদের বাৎসরিক রিপোর্ট নিয়মিত প্রকাশ করতে পারছে না। ২০১৬ সালের রিপোর্ট তারা প্রকাশ করেছে ২০১৯ সালে। অথচ মোদি সরকারের আগে প্রতিবছর এই রিপোর্ট প্রকাশিত হতো। সেই বিলম্বিত রিপোর্টেও মোদি সরকার মুসলিম হত্যা, কৃষকদের আত্মহত্যার তথ্যসহ বিজেপির বিদ্বেষমূলক অপরাধের তথ্য ‘স্রেফ নাই’ করে দিয়েছে। করোনায় মৃত্যুর তথ্যও গোপন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে।
মোদির তথ্য গোপন ও তথ্য বিকৃতির এ রকম শত শত উদাহরণ দেওয়া সম্ভব। তাতে আরেকটি মহাভারত রচিত হতে পারে।
এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুললেই বিজেপির ফেসবুক পেজগুলোতে গুজব, ঘৃণা ও তথ্য বিকৃতির মহোৎসব দেখা যায়। তারপরও শখ মিটছে না তাদের। এবার মূলধারার গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতে চায়। সেই উদ্দেশ্যেই আইটি রুলস পাস করেছে।
এ মাসের শুরুতে মোদি সরকার জানিয়ে দিয়েছে, সরকার-সংক্রান্ত খবরের সত্যতা যাচাইয়ের ভার থাকবে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (পিআইবির) হাতে। কোনো খবর বা তথ্যকে পিআইবি ‘অসত্য’ বা ‘ফেক নিউজ’ জানিয়ে দিলে তা প্রচার করা যাবে না। সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, পিআইবি চিহ্নিত ফেক নিউজ বা অসত্য খবর গুগল, ফেসবুক, টুইটার বা সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে এডিটরস গিল্ড। তারা বলেছে, এই সিদ্ধান্ত দমনমূলক ও সেন্সরশিপের সমতুল্য।
কথা হচ্ছে, যে সরকার নিজেই ফেক নিউজের অবিরাম চাষবাস করে, সেই সরকার কী করে ফেক নিউজ ঠেকাতে ফ্যাক্ট চেক ইউনিট খোলে আর পিআইবির হাতে খবর যাচাইয়ের অধিকার তুলে দেয়। সেই নৈতিক ভিত্তি আছে কি মোদি সরকারের?
তথ্যসূত্র: দ্য হিন্দু, লাইভ মিন্ট, ইকোনমিক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
নির্বাচন সামনে রেখে শাসক দলের মতিভ্রম হওয়ার নজির পৃথিবীতে কম নেই। এই সময়ে তাদের ওপর কোত্থেকে যেন ‘উনপঞ্চাশ বায়ু’ এসে ভর করে, সেই বায়ুর প্রভাবে তারা দেশের বুকে নানা কালাকানুন আরোপ করার চেষ্টা করে।
২০১৬ সালে পুতিন সরকার এমন আইন করেছিল যে রাশিয়ার কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন বা ব্যক্তি বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা এনজিওর কাছ থেকে কোনো ধরনের অর্থসহায়তা নিতে পারবে না।
আবার ২০১৪ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিরোধীদের দমন করতে জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অনুমতি ছাড়া অবস্থান কিংবা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি দেওয়া যাবে না মর্মে আইন পাস করেছিলেন।
এসবই নির্বাচনের আগে আগে বিরোধীদের দমন করার নজির। তবে সম্প্রতি ভারতের মোদি সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের দমন করতে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে নজিরবিহীন বলছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, একটু ‘বেশিই মতিভ্রম’ হয়েছে মোদি সরকারের।
মোদির মতিভ্রমের সবচেয়ে বড় নজির হিসেবে দেখা হচ্ছে ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যামেন্ডমেন্ট রুলস-২০২৩ বা আইটি রুলসকে। সম্প্রতি মোদি সরকারের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড আইটি মন্ত্রণালয় এটি পাস করেছে। এর মাধ্যমে সরকারবিরোধী ‘ফেক নিউজ’ ও ‘মিসলিডিং নিউজ’ অর্থাৎ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর খবর যাচাই করবে সরকার।
আইটি রুলসের অধীনে একটি ফ্যাক্ট চেক ইউনিট খুলেছেন মোদি। এর কাজ হচ্ছে, সরকার-সম্পর্কিত যাবতীয় খবর বিশ্লেষণ করা এবং অপছন্দের খবরটি সব অনলাইন মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে হাপিস করে দেওয়া।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারবিরোধী ফেক নিউজ সরাবে সরকার, বাকি ফেক নিউজগুলো কি তবে বহাল তবিয়তে থেকে যাবে? যে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও গুজবের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে ভারত, সেই মোদি এখন গুজব ঠেকাতে চান। প্রহসন আর কি!
একটু স্মৃতির উঠোনে উঁকি দিলেই দেখা যাবে মহাত্মন মোদি ইতিপূর্বে কতভাবে খবর নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং জবর খবরের জন্ম দিয়েছেন।
ভারতের ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশন প্রতিবছর ভারতের দারিদ্র্য ও বেকারত্ব-বিষয়ক পরিসংখ্যান প্রকাশ করত। মোদি ক্ষমতায় আসার পর সেই ধারাবাহিকতা আর রক্ষা হয়নি। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোনো ধরনের দারিদ্র্য ও বেকারত্ব-বিষয়ক তথ্যপ্রকাশ করতে দেননি।
কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে একটি রিপোর্ট কেমন কেমন করে যেন সংবাদমাধ্যমগুলোতে ফাঁস হয়ে যায়। দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতে বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ। যা গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। স্বাভাবিকভাবে সেই রিপোর্ট চাপা দিতে হেন কর্ম নেই যা মোদি সরকার করেনি।
ভারতের শ্রমশক্তি-সম্পর্কিত তথ্য জানাত দেশটির ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন (এনএসএসও)। এই সংস্থার দেওয়া তথ্য ছিল সর্বজনগ্রাহ্য, বিশ্বস্ত ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তাদের জরিপের নাম ছিল এমপ্লয়মেন্ট-আনএমপ্লয়মেন্ট সার্ভে। মোদি সেটি বন্ধ করে দিয়ে ‘পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে’ নামে নতুন জরিপ চালু করেন। এই জরিপের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে সর্বমহলে এখনো সমালোচনা রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মোদির নতুন জরিপটি তাঁর সুবিধামতো প্রচার চালানোর একটি যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। ২০২২ সালে পিএলএফএস (পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে) যে তথ্য দিয়েছে তা বিশ্বাস করার কোনোই কারণ নেই। পিএলএফএস জানিয়েছে, ‘গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে কর্মসংস্থান করোনার আগের সময়ের কর্মসংস্থানকে ছাপিয়ে গেছে’—এটি হাস্যকর প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বরং সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বলছে, করোনা-পরবর্তী ভারতে বেকারত্ব বেড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে।
সিএমআইর তথ্য যে সঠিক, তার প্রমাণ মেলে বিজেপির বিভিন্ন নেতাদের বিষোদ্গারমূলক বক্তব্য থেকে। হরিয়ানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর খেপে গিয়ে বলেছিলেন, হরিয়ানার বেকারত্ব ৩৯ শতাংশ দেখিয়েছে সিএমআই। এসব আজগুবি তথ্য কোথায় পায় তারা?
অক্সফাম ইন্ডিয়া নামের আরেকটি বেসরকারি সংস্থা প্রতিবছর ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদেরও আচ্ছামতো বকে দিয়েছেন মোদি। তিনি অক্সফাম ইন্ডিয়ার কার্যালয়ে সিবিআই (সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন) পাঠিয়ে হয়রানি করেছেন।
এক কথায় কর্মসংস্থান, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করতে চান না মোদি। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট লিখেছে, ভারতের জরিপ কাঠামো ভেঙে পড়েছে।
মোদির সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম হার্ভার্ডের জার্নালে এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ২০১১-১২ থেকে ২০১৬-১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার শতকরা ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ শতাংশ দেখানো হয়েছে।
তথ্য জালিয়াতির এক আশ্চর্য উদাহরণ নরেন্দ্র মোদি। তিনি এখন তথ্য জালিয়াতি ঠেকাতে ফ্যাক্ট চেক ইউনিট খুলেছেন।
মোদির শাসনামলে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) তাদের বাৎসরিক রিপোর্ট নিয়মিত প্রকাশ করতে পারছে না। ২০১৬ সালের রিপোর্ট তারা প্রকাশ করেছে ২০১৯ সালে। অথচ মোদি সরকারের আগে প্রতিবছর এই রিপোর্ট প্রকাশিত হতো। সেই বিলম্বিত রিপোর্টেও মোদি সরকার মুসলিম হত্যা, কৃষকদের আত্মহত্যার তথ্যসহ বিজেপির বিদ্বেষমূলক অপরাধের তথ্য ‘স্রেফ নাই’ করে দিয়েছে। করোনায় মৃত্যুর তথ্যও গোপন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে।
মোদির তথ্য গোপন ও তথ্য বিকৃতির এ রকম শত শত উদাহরণ দেওয়া সম্ভব। তাতে আরেকটি মহাভারত রচিত হতে পারে।
এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুললেই বিজেপির ফেসবুক পেজগুলোতে গুজব, ঘৃণা ও তথ্য বিকৃতির মহোৎসব দেখা যায়। তারপরও শখ মিটছে না তাদের। এবার মূলধারার গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতে চায়। সেই উদ্দেশ্যেই আইটি রুলস পাস করেছে।
এ মাসের শুরুতে মোদি সরকার জানিয়ে দিয়েছে, সরকার-সংক্রান্ত খবরের সত্যতা যাচাইয়ের ভার থাকবে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (পিআইবির) হাতে। কোনো খবর বা তথ্যকে পিআইবি ‘অসত্য’ বা ‘ফেক নিউজ’ জানিয়ে দিলে তা প্রচার করা যাবে না। সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, পিআইবি চিহ্নিত ফেক নিউজ বা অসত্য খবর গুগল, ফেসবুক, টুইটার বা সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে এডিটরস গিল্ড। তারা বলেছে, এই সিদ্ধান্ত দমনমূলক ও সেন্সরশিপের সমতুল্য।
কথা হচ্ছে, যে সরকার নিজেই ফেক নিউজের অবিরাম চাষবাস করে, সেই সরকার কী করে ফেক নিউজ ঠেকাতে ফ্যাক্ট চেক ইউনিট খোলে আর পিআইবির হাতে খবর যাচাইয়ের অধিকার তুলে দেয়। সেই নৈতিক ভিত্তি আছে কি মোদি সরকারের?
তথ্যসূত্র: দ্য হিন্দু, লাইভ মিন্ট, ইকোনমিক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
কোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
১৫ ঘণ্টা আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৪ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৮ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
১১ দিন আগে