বাবা ছিলেন কৃষক, খেলতেন হাডুডু ও কাবাডি। বাবার মতো মেয়েরও ছিল খেলোয়াড় হওয়ার ইচ্ছা। মেয়ে ভালো ছিল দৌড়ে। ১৯৯৭ সালে শিশু একাডেমি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে দৌড়ে অংশ নিতে পারেনি শিশুটি। দূর থেকে কষ্ট করে এসেছিল বলে সবশেষ ইভেন্ট সাঁতারে অংশ নিয়ে হয়েছিল জেলা পর্যায়ে প্রথম! এরপর একে একে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম ও জাতীয় পর্যায়ে সাঁতারে দ্বিতীয় হয় সেই শিশু। বড় হয়ে সেই শিশুই একদিন দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে নারীদের সাঁতারে প্রথম স্বর্ণ জয় করেছিলেন বাংলাদেশের হয়ে! এই গল্প যশোরের মেয়ে মাহফুজা খাতুন ওরফে শিলার। দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী সাঁতারু হিসেবে একটি নয়, দুটি স্বর্ণ পেয়েছিলেন মাহফুজা খাতুন। অথচ সাঁতারের কোনো ইচ্ছাই ছিল না তাঁর। কিন্তু শিশু একাডেমির প্রতিযোগিতার পর ধীরে ধীরে দেশে, এমনকি দেশের বাইরেও সাঁতারের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন তিনি।
এই শীতের এক সকালে মিরপুর ২ নম্বরের জাতীয় সাঁতার কমপ্লেক্সে দেখা হয়েছিল মাহফুজা খাতুনের সঙ্গে। গ্যালারির নীল চেয়ারগুলোকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে যখন তাঁর ছবি তুলছিলেন আমাদের ফটোগ্রাফার, তাঁকে বেশ সপ্রতিভ লাগছিল। আমার প্রশ্ন ছিল অনেক। বুঝতে পারছিলাম, তাঁরও বলার আছে কিছু। অবশেষে আমরা আলাপ করতে শুরু করি টুকরো টুকরোভাবে। মাহফুজার কথাগুলো রেকর্ড হতে থাকে। আর আমার মনে হতে থাকে, সেই কিশোরীর কথা, যে ঢাকায় এসেছিল দৌড়বিদ হতে। কিন্তু সময়ের বাধ্যবাধকতার কারণে হয়ে গিয়েছিল জলকন্যা। পরে এনেছিলেন দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সোনার পদক! আর এখন, মাহফুজা খাতুন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চিফ পেডি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কী বর্ণাঢ্য জীবন! সিনেমার মতো দেখা যায় প্রতিটি ঘটনা। ভাবনায় ছেদ পড়ে। মাহফুজা তখন বলে চলেছেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা।
কেন সাঁতার শিখতে হবে
মেয়েদের তিনটি কারণে সাঁতার শেখা উচিত বলে মনে করেন মাজফুজা। প্রথমত, জীবন বাঁচানোর জন্য। নদীমাতৃক এই দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে বিভিন্ন অঞ্চলে। তাতে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে নারীরা। অনেক মানুষ, বিশেষত শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এর জন্য সাঁতার শিখে রাখা ভালো।
দ্বিতীয়ত, শরীর ও মন ভালো রাখতেও সাঁতার শেখা উচিত। শুধু তা-ই নয়, এর নিয়মিত অনুশীলন করাও দরকার। তৃতীয়ত, মেয়েদের কর্মসংস্থান ও সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে সাঁতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাহফুজা বলেন, ‘আমরাই প্রথম ডিফেন্সে আমাদের সার্ভিস চালু করেছি। ২০১৪ সাল থেকে সেনাবাহিনী তাদের স্পোর্টস ইউনিটের মেয়েদের নেওয়া শুরু করেছে। জেলা পর্যায়ে স্পোর্টস অফিসারসহ বিভিন্ন খেলার জন্য নারী কোচও আছেন। এখানে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। স্কুলগুলোতে শারীরিক শিক্ষা পড়ানো হচ্ছে। সেখানে শিক্ষক দরকার। শুধু সাঁতার নয়, অন্যান্য খেলার মাধ্যমেও মেয়েরা নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করছেন নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে। সাঁতারেও এখন কর্মসংস্থান খুলে গেছে। তাই সাঁতার জানাটা জরুরি।’
লোকের কথায় না দিই কান
সামাজিক অনেক বাধা আসে একজন নারী সাঁতারুর জীবনে। প্রথম বাধা পোশাক। মেয়েদের সাঁতারের আঁটসাঁট পোশাক নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলত এবং এখনো বলে। এসব কথাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখার পরামর্শ দেন মাহফুজা। তিনি বলেন, এখন বেশির ভাগ মানুষই নারী খেলোয়াড়দের স্বাভাবিকভাবে নেয়। যখন কোনো খেলোয়াড় জার্সি পরে রাস্তা দিয়ে যান, সবাই রাস্তা করে দেয় তাঁর জন্য, সম্মানের চোখে দেখে।
এখন এই পথ আরও একটু সহজ। দরকার শুধু আগ্রহ। কেউ যে খেলা ভালো খেলে, খেলে আনন্দ পায়, তার সেটার সঙ্গেই যুক্ত হওয়া উচিত।
সুযোগ কম, তার পরও
সাঁতারের সুযোগ ইদানীং তুলনামূলক কম বলে মনে করেন মাহফুজা। এর জন্য গ্রাম ও শহরের পুকুর ভরাট করা একটা বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি। আবার শহরে সাঁতার শেখার আগ্রহ খুব একটা নেই। মাহফুজা জানিয়েছেন, ‘আমরা চাই শহরের মেয়েরা আসুক। শহরের পরিবারগুলো তুলনামূলক সচ্ছল বলে আর্থিক বাধা কম। তারা আগ্রহী হয়ে ভালো করলে সাঁতারে নারীরা আরও এগিয়ে যেতে পারে।’ মাহফুজা জানিয়েছেন, এখন অনেক সাঁতার প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেলে সুইমিংপুল আছে, যেখানে সাঁতার অনুশীলন করা যায়।
মাহফুজা খাতুন এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এ ছাড়া তিনি নৌবাহিনীর হয়ে আন্তবাহিনী সাঁতার প্রতিযোগিতার নিয়মিত মুখ।
কোথায় সাঁতার শিখবেন
আইভি রহমান সুইমিংপুল, পুরানা পল্টন
সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্স, মিরপুর
অফিসার্স ক্লাব, বেইলি রোড
সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, ধানমন্ডি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের উল্টো দিকে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে ঢাকা সুইমিংপুলে সাঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন তারকা হোটেলেও সাঁতার শেখার ব্যবস্থা রয়েছে।
বাবা ছিলেন কৃষক, খেলতেন হাডুডু ও কাবাডি। বাবার মতো মেয়েরও ছিল খেলোয়াড় হওয়ার ইচ্ছা। মেয়ে ভালো ছিল দৌড়ে। ১৯৯৭ সালে শিশু একাডেমি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে দৌড়ে অংশ নিতে পারেনি শিশুটি। দূর থেকে কষ্ট করে এসেছিল বলে সবশেষ ইভেন্ট সাঁতারে অংশ নিয়ে হয়েছিল জেলা পর্যায়ে প্রথম! এরপর একে একে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম ও জাতীয় পর্যায়ে সাঁতারে দ্বিতীয় হয় সেই শিশু। বড় হয়ে সেই শিশুই একদিন দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে নারীদের সাঁতারে প্রথম স্বর্ণ জয় করেছিলেন বাংলাদেশের হয়ে! এই গল্প যশোরের মেয়ে মাহফুজা খাতুন ওরফে শিলার। দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী সাঁতারু হিসেবে একটি নয়, দুটি স্বর্ণ পেয়েছিলেন মাহফুজা খাতুন। অথচ সাঁতারের কোনো ইচ্ছাই ছিল না তাঁর। কিন্তু শিশু একাডেমির প্রতিযোগিতার পর ধীরে ধীরে দেশে, এমনকি দেশের বাইরেও সাঁতারের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন তিনি।
এই শীতের এক সকালে মিরপুর ২ নম্বরের জাতীয় সাঁতার কমপ্লেক্সে দেখা হয়েছিল মাহফুজা খাতুনের সঙ্গে। গ্যালারির নীল চেয়ারগুলোকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে যখন তাঁর ছবি তুলছিলেন আমাদের ফটোগ্রাফার, তাঁকে বেশ সপ্রতিভ লাগছিল। আমার প্রশ্ন ছিল অনেক। বুঝতে পারছিলাম, তাঁরও বলার আছে কিছু। অবশেষে আমরা আলাপ করতে শুরু করি টুকরো টুকরোভাবে। মাহফুজার কথাগুলো রেকর্ড হতে থাকে। আর আমার মনে হতে থাকে, সেই কিশোরীর কথা, যে ঢাকায় এসেছিল দৌড়বিদ হতে। কিন্তু সময়ের বাধ্যবাধকতার কারণে হয়ে গিয়েছিল জলকন্যা। পরে এনেছিলেন দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সোনার পদক! আর এখন, মাহফুজা খাতুন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চিফ পেডি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কী বর্ণাঢ্য জীবন! সিনেমার মতো দেখা যায় প্রতিটি ঘটনা। ভাবনায় ছেদ পড়ে। মাহফুজা তখন বলে চলেছেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা।
কেন সাঁতার শিখতে হবে
মেয়েদের তিনটি কারণে সাঁতার শেখা উচিত বলে মনে করেন মাজফুজা। প্রথমত, জীবন বাঁচানোর জন্য। নদীমাতৃক এই দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে বিভিন্ন অঞ্চলে। তাতে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে নারীরা। অনেক মানুষ, বিশেষত শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এর জন্য সাঁতার শিখে রাখা ভালো।
দ্বিতীয়ত, শরীর ও মন ভালো রাখতেও সাঁতার শেখা উচিত। শুধু তা-ই নয়, এর নিয়মিত অনুশীলন করাও দরকার। তৃতীয়ত, মেয়েদের কর্মসংস্থান ও সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে সাঁতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাহফুজা বলেন, ‘আমরাই প্রথম ডিফেন্সে আমাদের সার্ভিস চালু করেছি। ২০১৪ সাল থেকে সেনাবাহিনী তাদের স্পোর্টস ইউনিটের মেয়েদের নেওয়া শুরু করেছে। জেলা পর্যায়ে স্পোর্টস অফিসারসহ বিভিন্ন খেলার জন্য নারী কোচও আছেন। এখানে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। স্কুলগুলোতে শারীরিক শিক্ষা পড়ানো হচ্ছে। সেখানে শিক্ষক দরকার। শুধু সাঁতার নয়, অন্যান্য খেলার মাধ্যমেও মেয়েরা নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করছেন নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে। সাঁতারেও এখন কর্মসংস্থান খুলে গেছে। তাই সাঁতার জানাটা জরুরি।’
লোকের কথায় না দিই কান
সামাজিক অনেক বাধা আসে একজন নারী সাঁতারুর জীবনে। প্রথম বাধা পোশাক। মেয়েদের সাঁতারের আঁটসাঁট পোশাক নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলত এবং এখনো বলে। এসব কথাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখার পরামর্শ দেন মাহফুজা। তিনি বলেন, এখন বেশির ভাগ মানুষই নারী খেলোয়াড়দের স্বাভাবিকভাবে নেয়। যখন কোনো খেলোয়াড় জার্সি পরে রাস্তা দিয়ে যান, সবাই রাস্তা করে দেয় তাঁর জন্য, সম্মানের চোখে দেখে।
এখন এই পথ আরও একটু সহজ। দরকার শুধু আগ্রহ। কেউ যে খেলা ভালো খেলে, খেলে আনন্দ পায়, তার সেটার সঙ্গেই যুক্ত হওয়া উচিত।
সুযোগ কম, তার পরও
সাঁতারের সুযোগ ইদানীং তুলনামূলক কম বলে মনে করেন মাহফুজা। এর জন্য গ্রাম ও শহরের পুকুর ভরাট করা একটা বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি। আবার শহরে সাঁতার শেখার আগ্রহ খুব একটা নেই। মাহফুজা জানিয়েছেন, ‘আমরা চাই শহরের মেয়েরা আসুক। শহরের পরিবারগুলো তুলনামূলক সচ্ছল বলে আর্থিক বাধা কম। তারা আগ্রহী হয়ে ভালো করলে সাঁতারে নারীরা আরও এগিয়ে যেতে পারে।’ মাহফুজা জানিয়েছেন, এখন অনেক সাঁতার প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেলে সুইমিংপুল আছে, যেখানে সাঁতার অনুশীলন করা যায়।
মাহফুজা খাতুন এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এ ছাড়া তিনি নৌবাহিনীর হয়ে আন্তবাহিনী সাঁতার প্রতিযোগিতার নিয়মিত মুখ।
কোথায় সাঁতার শিখবেন
আইভি রহমান সুইমিংপুল, পুরানা পল্টন
সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্স, মিরপুর
অফিসার্স ক্লাব, বেইলি রোড
সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, ধানমন্ডি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের উল্টো দিকে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে ঢাকা সুইমিংপুলে সাঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন তারকা হোটেলেও সাঁতার শেখার ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রবাদ আছে, দুঃসাহসে দুঃখ হয়। কিন্তু বাগেরহাটের প্রজাপতি স্কোয়াড দুঃসাহসে ভর করে আলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়া এখনো যে কতটা কঠিন কাজ, তা কারও অজানা নয়। সেই কঠিন কাজই করে চলেছে বাগেরহাটের কিশোরীরা। প্রজাপতি স্কোয়াড নামে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছে তার
৬ দিন আগেগাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে নিহত হয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন বা ওএইচসিএইচআর এ তথ্য জানিয়েছে। তাদের
৬ দিন আগেআপনি শিক্ষিত ও সচেতন একজন মানুষ। সম্পর্কের একটি সুন্দর পর্যায়ে আছেন। তবে আপনার সঙ্গীর যে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন, তা কিন্তু বড় ধরনের আবেগীয়
৬ দিন আগেশওকত আরা খন্দকার ওরফে ঝর্ণা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ঘর-সংসার সামলে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
৬ দিন আগে