জাহিদ হাসান
প্রশ্ন: খুব অল্প বয়সে আপনি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন। সে পেশাই কি পরে আপনাকে সমাজকর্মী হয়ে উঠতে প্রেরণা জুগিয়েছে?
আঞ্জেলা গমেজ: গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার মঠবাড়ি ধর্মপল্লির মাল্লা গ্রামের মিশন থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করি। সেখানে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হবে, এমন সময়ে পরিবার আমার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। ছিল অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করার। তাই সবার অজান্তে মঠবাড়ি মিশনে গিয়ে ফাদারকে আমার ইচ্ছার কথা বলি। তিনি আমার কথায় মুগ্ধ হয়ে কুষ্টিয়া মিশনের ঠিকানা দেন। ওই ঠিকানায় মাদার পিরিনা কলম্বিয়াকে চিঠি লিখি। তিনি বোর্ডিংসহ যাবতীয় খরচের হিসাব দিয়ে আমার চিঠির উত্তর পাঠান। এ-ও লিখলেন যে সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার ব্যবস্থা আছে। এরপর বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে বড় বোন-জামাইয়ের সঙ্গে চলে যাই সেখানে। অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর মাদারের সহযোগিতায় যশোরের ক্যাথলিক মিশনে গিয়ে ইতালিয়ান ফাদার চেলির সঙ্গে দেখা করি। তিনি মিশনের ভেতরে বসবাস করা মালি পরিবারের সঙ্গে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দেন। পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে আমি মিশনে সামাজিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ক্লাস নিয়েছি। ইতালিয়ান ফাদারকে বাংলায় লিখে দিয়ে সহযোগিতা করতাম। এসবের বিনিময়ে যা আয় করতাম, তা দিয়েই চলত পড়ালেখা আর থাকা-খাওয়ার খরচ। সময় পেলেই সিস্টারদের সঙ্গে গ্রামে যেতাম। দেখতাম নারীদের দুরবস্থা। শিশুরা স্কুলে যায় না। কীভাবে নারীরা নির্যাতিত হন, সেসব দেখতাম। এসব দেখে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, সমাজে নারী নির্যাতন বন্ধ না হলে কখনো বিয়ে করব না। সেই সিদ্ধান্ত থেকে আজও আমি কুমারী। নারীদের নির্যাতন দেখে যশোরের ক্যাথলিকে এসে ভাবতাম, এসব নারীর উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এরপর বিষয়টি নিয়ে ক্যাথলিকে ফাদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এসব কাজ করতে গেলে আমি ক্যাথলিকে থাকতে পারব না। চিন্তা করতাম, কীভাবে নারীদের এই দুরবস্থা দূর করা যায়, শিশুদের স্কুলে পাঠানো যায়, এসব নিয়ে। এ সময় সিস্টারদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলাম এক বছর।
এরপর পরিচয় গোপন করে যশোর সদরের ইছালী ইউনিয়নের এনায়েতপুরে গণিকারা চাচার বাসায় উঠলাম। সেখানে পরিচয় গোপন করে থাকতে হলো আঞ্জুয়ারা খাতুন নামে। তাঁর বাড়িতে কয়েক দিন থাকার সুবাদে জানতে পারি ওই এলাকায় নারী নির্যাতন ও শিশুদের দুরবস্থার কথা। চাচার দেওয়া আধা বিঘা জমি ও পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। প্রথমে একা একা এসব কাজ শুরু করলেও অচিরে গ্রামের নারীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করি। এ সময় তাদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করি।
প্রশ্ন: এভাবেই কি ‘বাঁচতে শেখা’র যাত্রা শুরু হয়েছিল?
আঞ্জেলা: হ্যাঁ। গণিকারা চাচার বাড়িতে নারীদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করি। কৃষি, মাছ চাষসহ বাঁশ-বেতের কাজ করার পাশাপাশি এলাকার রাস্তার পাশ দিয়ে রেশমগুটি চাষের মাধ্যমে রেশমি কাপড়ের বুনন প্রকল্প শুরু করি। রেশম থেকে সুতা বের করে শহরে বিক্রি করা হতো এক ব্যাপারীর মাধ্যমে। একটা সময় কানাডিয়ান সংস্থা কিউডো যশোরে এসে খোঁজ করতে থাকে, সমাজ উন্নয়ন নিয়ে কেউ এই জেলায় কাজ করে কি না। তাদের এক প্রতিনিধি আসে আমাদের কাছে। তারা আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর করে এবং কাজে সহযোগিতা করতে চায়। একটি অফিসও করতে চায় তারা। অফিস ও সংগঠনের একটা নামও ঠিক করতে বলে। তারপর নারীদের কাছে সংগঠনটির নাম চাওয়া হলো। প্রায় দুই শ নারী নাম দিলেন। এগুলোর মধ্যে ‘বাঁচতে শেখা’ নামটি পছন্দ হলো সবার। নামটি আবার ভোটের মাধ্যমে বিজয়ীও হয়। ১৯৮১ সালে বীজ রোপিত হলো ‘বাঁচতে শেখা’র। প্রথমে কাজ শুরু হয় যশোর শহরের প্রফেসর লুৎফুর হকের বাড়িতে। সেখানে তাঁর সন্তানদের আমি পড়াতাম আর কাজ করতাম। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঁচতে শেখা বড় হয়েছে, কাজের পরিধিও বেড়েছে।
প্রশ্ন: ১৯৮১ থেকে ২০২৩। চার দশকের বেশি সময় ধরে নারীদের নিয়ে কাজ করছেন। কতটুকু অগ্রগতি দেখছেন?
আঞ্জেলা: নারীদের অগ্রগতি ব্যাপক হয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমানভাবে কাজ করে চলেছেন। নির্যাতনের হার কমেছে। নারীরা সামাজিক কাঠামোগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সালিস-বিচার করছেন, সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এবং অফিস-আদালতগুলোতে তাঁদের অভিগম্যতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকার আদায়ে নারীরা সংঘবদ্ধ হচ্ছেন। পরিবারে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন, অল্প বয়সে বিয়ে হচ্ছে না খুব একটা। নারীরা আজ ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিছুটা ধীরে হলেও পরিবর্তন হয়েছে অনেক। এখন প্রয়োজন সমন্বয় রক্ষা করার। সরকারকে সক্রিয় করে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। একা করতে গেলে অনেক পিছিয়ে থাকতে হবে। আমি মনে করি, এ দেশের নারীদের জন্য আগে যে চ্যালেঞ্জগুলো ছিল, সেগুলোর কিছু এখনো রয়ে গেছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ বড় প্রয়োজন। সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রচার বাড়াতে হবে।
প্রশ্ন: ‘সমাজকর্মী’ অভিধাটি শুনতে আপনার কেমন লাগে?
আঞ্জেলা: প্রথমে আমি বাধা ও গালি শুনেছি। একটা সময়ে সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে যেতাম। গ্রামের মানুষ কোনোভাবেই সেটা মানতে পারত না। ঢিল মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে মার্শাল কোর্টে অভিযোগ হয়েছে। গ্রামে বিচার বসেছে। আমি খ্রিষ্টান, এটিও আমার জন্য একটা বড় বাধা ছিল। মিশনে থাকতাম বলে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটানো হতো। কোনো কিছুই গায়ে মাখিনি। লক্ষ্যে অবিচল থেকেছি। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। হেঁটেছি মাইলের পর মাইল। মাটি কেটেছি। নারীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে লাঙল দিয়েছি। মজাপুকুর পরিষ্কার করে সেখানে মাছ চাষ করেছি, মাছ ধরেছি। যত বেশি বাধা এসেছে, তত বেশি সাহসিকতা আর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে গেছি। সাহস ও আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে আমি সমাজসংস্কারের পথে এসেছি। এখন সমাজকর্মী শুনতে ভালোই লাগে।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আঞ্জেলা: আমার কোনো সম্পদই নেই। সবই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দিয়েছি। বাঁচতে শেখার একটি রুমে ভাড়া দিয়ে বসবাস করি। বাঁচতে শেখার ক্যানটিনে খাই টাকা দিয়ে। ২৬০ টাকার শাড়ি পরি। লিডারশিপ নিজের কাছে আটকে রাখিনি। অনেক আঞ্জেলা গমেজ তৈরি করেছি। তারাই সংগঠন চালাবে। আমি মরে গেলেও মরবে না ‘বাঁচতে শেখা’। অনেক কাজই এখনো বাকি। নারীদের জীবনে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে পারিনি। ঈশ্বরের কাছে আরেকটা জীবন চাই, যেন নারীদের জন্য একটা নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
প্রশ্ন: খুব অল্প বয়সে আপনি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন। সে পেশাই কি পরে আপনাকে সমাজকর্মী হয়ে উঠতে প্রেরণা জুগিয়েছে?
আঞ্জেলা গমেজ: গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার মঠবাড়ি ধর্মপল্লির মাল্লা গ্রামের মিশন থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করি। সেখানে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হবে, এমন সময়ে পরিবার আমার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। ছিল অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করার। তাই সবার অজান্তে মঠবাড়ি মিশনে গিয়ে ফাদারকে আমার ইচ্ছার কথা বলি। তিনি আমার কথায় মুগ্ধ হয়ে কুষ্টিয়া মিশনের ঠিকানা দেন। ওই ঠিকানায় মাদার পিরিনা কলম্বিয়াকে চিঠি লিখি। তিনি বোর্ডিংসহ যাবতীয় খরচের হিসাব দিয়ে আমার চিঠির উত্তর পাঠান। এ-ও লিখলেন যে সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার ব্যবস্থা আছে। এরপর বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে বড় বোন-জামাইয়ের সঙ্গে চলে যাই সেখানে। অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর মাদারের সহযোগিতায় যশোরের ক্যাথলিক মিশনে গিয়ে ইতালিয়ান ফাদার চেলির সঙ্গে দেখা করি। তিনি মিশনের ভেতরে বসবাস করা মালি পরিবারের সঙ্গে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দেন। পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে আমি মিশনে সামাজিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ক্লাস নিয়েছি। ইতালিয়ান ফাদারকে বাংলায় লিখে দিয়ে সহযোগিতা করতাম। এসবের বিনিময়ে যা আয় করতাম, তা দিয়েই চলত পড়ালেখা আর থাকা-খাওয়ার খরচ। সময় পেলেই সিস্টারদের সঙ্গে গ্রামে যেতাম। দেখতাম নারীদের দুরবস্থা। শিশুরা স্কুলে যায় না। কীভাবে নারীরা নির্যাতিত হন, সেসব দেখতাম। এসব দেখে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, সমাজে নারী নির্যাতন বন্ধ না হলে কখনো বিয়ে করব না। সেই সিদ্ধান্ত থেকে আজও আমি কুমারী। নারীদের নির্যাতন দেখে যশোরের ক্যাথলিকে এসে ভাবতাম, এসব নারীর উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এরপর বিষয়টি নিয়ে ক্যাথলিকে ফাদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এসব কাজ করতে গেলে আমি ক্যাথলিকে থাকতে পারব না। চিন্তা করতাম, কীভাবে নারীদের এই দুরবস্থা দূর করা যায়, শিশুদের স্কুলে পাঠানো যায়, এসব নিয়ে। এ সময় সিস্টারদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলাম এক বছর।
এরপর পরিচয় গোপন করে যশোর সদরের ইছালী ইউনিয়নের এনায়েতপুরে গণিকারা চাচার বাসায় উঠলাম। সেখানে পরিচয় গোপন করে থাকতে হলো আঞ্জুয়ারা খাতুন নামে। তাঁর বাড়িতে কয়েক দিন থাকার সুবাদে জানতে পারি ওই এলাকায় নারী নির্যাতন ও শিশুদের দুরবস্থার কথা। চাচার দেওয়া আধা বিঘা জমি ও পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। প্রথমে একা একা এসব কাজ শুরু করলেও অচিরে গ্রামের নারীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করি। এ সময় তাদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করি।
প্রশ্ন: এভাবেই কি ‘বাঁচতে শেখা’র যাত্রা শুরু হয়েছিল?
আঞ্জেলা: হ্যাঁ। গণিকারা চাচার বাড়িতে নারীদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করি। কৃষি, মাছ চাষসহ বাঁশ-বেতের কাজ করার পাশাপাশি এলাকার রাস্তার পাশ দিয়ে রেশমগুটি চাষের মাধ্যমে রেশমি কাপড়ের বুনন প্রকল্প শুরু করি। রেশম থেকে সুতা বের করে শহরে বিক্রি করা হতো এক ব্যাপারীর মাধ্যমে। একটা সময় কানাডিয়ান সংস্থা কিউডো যশোরে এসে খোঁজ করতে থাকে, সমাজ উন্নয়ন নিয়ে কেউ এই জেলায় কাজ করে কি না। তাদের এক প্রতিনিধি আসে আমাদের কাছে। তারা আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর করে এবং কাজে সহযোগিতা করতে চায়। একটি অফিসও করতে চায় তারা। অফিস ও সংগঠনের একটা নামও ঠিক করতে বলে। তারপর নারীদের কাছে সংগঠনটির নাম চাওয়া হলো। প্রায় দুই শ নারী নাম দিলেন। এগুলোর মধ্যে ‘বাঁচতে শেখা’ নামটি পছন্দ হলো সবার। নামটি আবার ভোটের মাধ্যমে বিজয়ীও হয়। ১৯৮১ সালে বীজ রোপিত হলো ‘বাঁচতে শেখা’র। প্রথমে কাজ শুরু হয় যশোর শহরের প্রফেসর লুৎফুর হকের বাড়িতে। সেখানে তাঁর সন্তানদের আমি পড়াতাম আর কাজ করতাম। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঁচতে শেখা বড় হয়েছে, কাজের পরিধিও বেড়েছে।
প্রশ্ন: ১৯৮১ থেকে ২০২৩। চার দশকের বেশি সময় ধরে নারীদের নিয়ে কাজ করছেন। কতটুকু অগ্রগতি দেখছেন?
আঞ্জেলা: নারীদের অগ্রগতি ব্যাপক হয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমানভাবে কাজ করে চলেছেন। নির্যাতনের হার কমেছে। নারীরা সামাজিক কাঠামোগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সালিস-বিচার করছেন, সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এবং অফিস-আদালতগুলোতে তাঁদের অভিগম্যতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকার আদায়ে নারীরা সংঘবদ্ধ হচ্ছেন। পরিবারে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন, অল্প বয়সে বিয়ে হচ্ছে না খুব একটা। নারীরা আজ ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিছুটা ধীরে হলেও পরিবর্তন হয়েছে অনেক। এখন প্রয়োজন সমন্বয় রক্ষা করার। সরকারকে সক্রিয় করে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। একা করতে গেলে অনেক পিছিয়ে থাকতে হবে। আমি মনে করি, এ দেশের নারীদের জন্য আগে যে চ্যালেঞ্জগুলো ছিল, সেগুলোর কিছু এখনো রয়ে গেছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ বড় প্রয়োজন। সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রচার বাড়াতে হবে।
প্রশ্ন: ‘সমাজকর্মী’ অভিধাটি শুনতে আপনার কেমন লাগে?
আঞ্জেলা: প্রথমে আমি বাধা ও গালি শুনেছি। একটা সময়ে সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে যেতাম। গ্রামের মানুষ কোনোভাবেই সেটা মানতে পারত না। ঢিল মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে মার্শাল কোর্টে অভিযোগ হয়েছে। গ্রামে বিচার বসেছে। আমি খ্রিষ্টান, এটিও আমার জন্য একটা বড় বাধা ছিল। মিশনে থাকতাম বলে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটানো হতো। কোনো কিছুই গায়ে মাখিনি। লক্ষ্যে অবিচল থেকেছি। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। হেঁটেছি মাইলের পর মাইল। মাটি কেটেছি। নারীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে লাঙল দিয়েছি। মজাপুকুর পরিষ্কার করে সেখানে মাছ চাষ করেছি, মাছ ধরেছি। যত বেশি বাধা এসেছে, তত বেশি সাহসিকতা আর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে গেছি। সাহস ও আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে আমি সমাজসংস্কারের পথে এসেছি। এখন সমাজকর্মী শুনতে ভালোই লাগে।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আঞ্জেলা: আমার কোনো সম্পদই নেই। সবই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দিয়েছি। বাঁচতে শেখার একটি রুমে ভাড়া দিয়ে বসবাস করি। বাঁচতে শেখার ক্যানটিনে খাই টাকা দিয়ে। ২৬০ টাকার শাড়ি পরি। লিডারশিপ নিজের কাছে আটকে রাখিনি। অনেক আঞ্জেলা গমেজ তৈরি করেছি। তারাই সংগঠন চালাবে। আমি মরে গেলেও মরবে না ‘বাঁচতে শেখা’। অনেক কাজই এখনো বাকি। নারীদের জীবনে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে পারিনি। ঈশ্বরের কাছে আরেকটা জীবন চাই, যেন নারীদের জন্য একটা নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
প্রবাদ আছে, দুঃসাহসে দুঃখ হয়। কিন্তু বাগেরহাটের প্রজাপতি স্কোয়াড দুঃসাহসে ভর করে আলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়া এখনো যে কতটা কঠিন কাজ, তা কারও অজানা নয়। সেই কঠিন কাজই করে চলেছে বাগেরহাটের কিশোরীরা। প্রজাপতি স্কোয়াড নামে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছে তার
৭ দিন আগেগাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে নিহত হয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন বা ওএইচসিএইচআর এ তথ্য জানিয়েছে। তাদের
৭ দিন আগেআপনি শিক্ষিত ও সচেতন একজন মানুষ। সম্পর্কের একটি সুন্দর পর্যায়ে আছেন। তবে আপনার সঙ্গীর যে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন, তা কিন্তু বড় ধরনের আবেগীয়
৭ দিন আগেশওকত আরা খন্দকার ওরফে ঝর্ণা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ঘর-সংসার সামলে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
৭ দিন আগে