অর্চি হক
৪১তম বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দুই বোন গুলে জান্নাত সুমি ও জান্নাতুন নাঈম খুশবু। সুমি শিক্ষা এবং খুশবু কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অর্চি হক।
প্রশ্ন: স্বপ্ন পূরণের যাত্রাটা কেমন ছিল?
সুমি: আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়েছি। শিক্ষকেরা বলতেন রাজনীতি বিজ্ঞান পড়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া সহজ। সেখান থেকেই আমার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন। পরে আমি যখন চাকরির জন্য সব জায়গায়তেই চাকরির পরীক্ষা দেওয়া শুরু করি, বুঝতে পারি, ব্যাংক আমার জন্য নয়, বিসিএসটাই আমার জন্য। ২০১৬ সালে প্রথমবার ৩৮ তম বিসিএস দিয়ে অকৃতকার্য হই। ৪০ তমতে কৃতকার্য হই। কিন্তু ক্যাডার লিস্টে ছিলাম না। তখন খুব খারাপ লাগে। করোনাকালে আমরা মিলেমিশে পড়াশোনা শুরু করি। যার যেটা ত্রুটি আছে সেটা সমাধান করার চেষ্টা করি। ৪১ তম বিসিএসের প্রস্তুতি আমরা একসঙ্গেই নিয়েছিলাম।
খুশবু: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নটা আমি দেখেছিলাম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে। সিনিয়র আপু ভাইয়াদের পড়াশোনা করতে দেখে আমার ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা জাগে। ২০১৯ সালে যখন ৪১ তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি আসে, আমি তখন স্নাতক শেষ করেছি মাত্র। প্রথমবারের মতো তখন বিসিএসে আবেদন করি। ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনার জন্য তা পিছিয়ে যায়। আমি তখন প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যাই।
প্রশ্ন: ফলাফল কীভাবে দেখেছিলেন? প্রথম কাকে জানিয়েছিলেন?
সুমি: ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ শেষে ফেসবুকে দেখলাম রেজাল্ট দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইট দেখলাম। খুশবু আমার হাত ধরে ছিল। আমি তখন চিন্তা করছি, যে কার রেজাল্ট আগে দেখব? ভাবলাম, আমি আগে বেশি কষ্ট পেয়েছি, আমার রোলটাই আগে দেখি। যখন দেখলাম আমার রোল এসেছে, খুশবু আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেয়। আমি তখন চুপ করে ওর রোলটা দেখছিলাম। যখন দেখলাম ওরও হয়েছে, আমরা দুই বোন একসঙ্গে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমি প্রায় আধা ঘণ্টার মতো কোনো কথা বলতে পারিনি।
খুশবু: প্রিলি, রিটেন, ভাইভা কোনো পরীক্ষার রেজাল্টই আমার দেখার সাহস হয় না। আমি আপুদের কাছে রোল নম্বরটা দিয়ে রাখি। রেজাল্ট দিলে ওরা দেখে দেয়। সেদিন যেহেতু একসঙ্গে ছিলাম, ভাবছিলাম যদি একজনের হয়, তাহলে আরেকজন কী করব? দুজনের না হলে কী হবে? আর কারওরই যদি না হয় তাহলে কী হবে? রেজাল্ট দেখার পর আপু এক দেড় ঘণ্টা স্তব্ধ থাকলেও আমি স্বাভাবিক ছিলাম। রেজাল্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি আম্মুকে ফোন করেছি, আব্বুকে জানাতে বলেছি। তারপর বড় আপুকে ফোন দিয়েছি।
প্রশ্ন: একজন আরেকজনকে কীভাবে সাহায্য করেছেন?
খুশবু: যেহেতু আমার প্রথম বিসিএস এটা। আমি সবকিছু আপুকে জিজ্ঞেস করে পড়তাম। ও যদি বলত, এটা পড়তেই হবে, আমি কঠিন হলেও চেষ্টা করতাম পড়ার। ও দেখিয়ে দিত, এখান থেকে আসবে, এখান থেকে আসবে না। ভাইভার সময় আমরা দুজন নিজেরা নিজেরা মক ভাইবা দিতাম। একটা রুম আমরা ভাইভা বোর্ডের মতো সেটআপ দিতাম। একজন আরেকজনকে ফর্মালি প্রশ্ন করতাম।
প্রশ্ন: ক্যাডার হিসেবে পছন্দের তালিকায় কী ছিল?
সুমি: বিসিএস প্রশাসন দুজনেরই। আমার সামনে ৪৩ তম আছে। স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা আমি করব।
খুশবু: আমিও চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: লিখিত, প্রিলি বা মৌখিক কোনটিকে কঠিন মনে হয়েছে?
সুমি: প্রিলি দুই ঘণ্টা, তাই মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন। একটু ভুল হলেই পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর লিখিত হচ্ছে ধৈর্যের পরীক্ষা। একটার পর একটা পরীক্ষা হয়। একটা বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে এসে রাত জেগে আবার আরেকটা বিষয় রিভিশন দেওয়া! তখন দুইটা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মনে হয়, আর সম্ভব নয়।
খুশবু: আমার মনে হয়, প্রিলিটা সবচেয়ে কঠিন। কোনো সিলেবাস নেই। নার্ভাসনেসের কারণে অনেক কিছু ভুলে যাই। আর লিখিত, যেহেতু সব গ্র্যাজুয়েটরাই পরীক্ষা দেয়, সবার মধ্যেই সৃজনশীলতা থাকে, সেটা সেখানে এপ্লাই করতে পারে। আমার কাছে সব সময়ই মনে হয়, প্রিলিটা বেশি কঠিন।
প্রশ্ন: তিনটি ধাপে পরীক্ষার সময় এমন কোনো মুহূর্ত আছে, যখন মনে হয়েছিল এবার হয়ে যাবে বা এবার হবে না?
সুমি: আমার রিটেন, প্রিলি, ভাইভা ভালো হয়েছিল। আমি খুব আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু যখন রেজাল্ট হবে হবে শুনছিলাম, তখন হঠাৎ করে মনে হচ্ছিল, বোধ হয় হবে না।
খুশবু: আমার সব সময় নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ভালো। ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় দেখা যায় যে,১৯০ আমি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছি। বাকি ১০ নম্বরের কিছু বাদ দিয়েছি বা ভুল লিখেছি। পরীক্ষার পর এই এক বছর, আমি ওই ১০ নম্বরের কথাই কেবল মনে করি। বাকি ১৯০ যে ভালো দিয়েছি, সেটা আর মনে পড়ে না। বারবারই আমি আপুকে বলতাম, আমিতো এটা ভুল করেছি। আমার বোধ হয় হবে না। তখন আপু বোঝাতো, ১০ বাদ দিলে বাকিটাতে তো তুই ভালো করেছিস। অনেকে ১৫০ নম্বরের উত্তর করে আসে, তুই তো ১৯০ নম্বর ভালোভাবে লিখেছিস। তখন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরে আসত।
প্রশ্ন: আপনাদের পড়াশোনা কোথায়?
সুমি: আমরা দুজনই হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করি। আমি মাধ্যমিক পাস করি ২০০৭-এ, আর খুশবু ২০১১-এ। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি।
খুশবু: আমি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছি। শিক্ষকদের ভাষ্য মতে, আমি শান্ত, ভদ্র ও ভালো ছাত্রী ছিলাম। ফাইভে, এইটে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট ছিল। বৃত্তিও পেয়েছিলাম।
প্রশ্ন: পরিবারে কে কে আছেন?
সুমি: আমরা তিন বোন। বাবা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এয়াকুব মিয়া। মা রুপিয়া বেগম, গৃহিণী।
খুশবু: আমাদের বড় বোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমরা দুজন যে সুযোগটা পেয়েছি, ও সেটা পায়নি। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর আপু প্রাইমারি স্কুলে জয়েন করে ফেলেছেন।
প্রশ্ন: আপনাদের এই সাফল্যের কারিগর বা অংশীদার কাকে বলবেন?
সুমি: সবচেয়ে বড় অংশীদার পরিবার। কারণ বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলাম, বয়স অনেক পার হয়েছে। অনেক সময় ভেঙে পড়েছি। কিন্তু আমার মা–বাবা–বোনদের সব সময় পাশে পেয়েছি। আমাদের আত্মীয়স্বজনও ভালো। আত্মীয়স্বজন কটু কথা বললে অনেক পরিবারই শক্ত থাকতে পারে না। আত্মীয়স্বজনও সব সময় আমাদের পাশে থেকেছেন।
প্রশ্ন: ছোটবেলায় বোনদের খুনসুটি হতো?
সুমি: ঝগড়া হতো। আমরা অনেক ঝগড়া করতাম। কথা বন্ধ করে দিতাম। রাগ করে বসে থাকতাম। বড় হওয়ার পর এখন ঝগড়া কম হয়।
প্রশ্ন: এক পরিবারে দুজন বিসিএস ক্যাডার—বিষয়টা কীভাবে উপভোগ করছেন?
খুশবু: এটা নিয়ে আপুর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি আপুকে বলছিলাম, তুমি যদি ৪০–এ হয়ে যেতে আর আমি ৪১–এ হতাম, তাহলে এত আলোড়ন হতো না। আমাদের এলাকা থেকে ফোন এসেছে, পৌরসভা থেকে একটা সংবর্ধনা দেওয়া হবে। স্কুল কলেজের শিক্ষকেরাও ফোন দিয়েছিলেন। সেখান থেকেও সংবর্ধনা দেওয়া হবে। নিজের বাবা–মাকে যে পরিচয় দিতে পেরেছি এ জন্য আমি সবচেয়ে বেশি খুশি।
প্রশ্ন: বর্তমান পেশা?
সুমি: আমি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করছি।
খুশবু: ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (বিবিএস) যোগ দিই। এখানো সেখানেই কাজ করছি।
প্রশ্ন: বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
খুশবু: কেউ যদি বিসিএস পরীক্ষা দিতে চায়, তাহলে তাকে ধৈর্য ধরতে হবে। মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়ার মতো জায়গা এটা নয়। প্রিলি পরীক্ষা দিয়ে রিটেনের জন্য পড়তে হবে। রেজাল্ট যা-ই হোক। রিটেন দিয়ে ভাইভার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। আবার ভাইভা দিয়ে পরের প্রিলির জন্য পড়া শুরু করতে হবে।
প্রশ্ন: যারা বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন না, তাদের কী বলবেন?
সুমি: বিসিএস প্রস্তুতি হলো ফুল প্যাকেজ। অনেক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। তাই বিসিএসে যাদের হবে না তারা অন্য খাতের কোনো না কোনো চাকরি ঠিকই পাবেন।
প্রশ্ন: মেয়েদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার পর পরিবার এবং সমাজ থেকে বিয়ের জন্য চাপ আসে। এটা নিয়ে আপনারা কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?
খুশবু: আমরা একটা সাপোর্টিভ পরিবার পেয়েছি। অন্যান্য নারীদের যে ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, আমাদের ক্ষেত্রে এটা খুবই কম। আমি যেটা সিদ্ধান্ত নেব, তারা সেটাতেই সমর্থন দেবেন। প্রত্যেকটা অভিভাবকের উচিত সন্তানকে সুযোগ দেওয়া।
সুমি: বিয়ে করতেই হবে এই মানসিকতাটা সমাজ থেকে দূর করা উচিত। যদি কোনো মেয়ে সংসার করতে চায়, তাকে সংসার করতে দেওয়া উচিত। কোনো মেয়ে যদি ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগী হতে চায়, তাকে সেই সুযোগটা দেওয়া উচিত। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্টিভ হতে হয়। কারণ মানসিকভাবে চাপে থাকলে এগিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। ৪০ তমতে যখন ক্যাডার পেলাম না, এরপর এক বছর ছয় মাস সময় গেল। এই সময়টাতে মাঝে মাঝেই কান্না পেত। হতাশা ঘিরে ধরত। যেহেতু আমার বয়স ৩০ হয়ে গেছে। এই সময়টাতে স্বাভাবিকভাবেই বিয়ে নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বোঝাবার চেষ্টা করত, পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করত। পরামর্শটা দিয়ে তারা আসলে আরও বেশি হতাশ করত। আমি কারও কথায় প্রতিক্রিয়া দেখাতাম না। চুপ করে শুনে যেতাম।
৪১তম বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দুই বোন গুলে জান্নাত সুমি ও জান্নাতুন নাঈম খুশবু। সুমি শিক্ষা এবং খুশবু কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অর্চি হক।
প্রশ্ন: স্বপ্ন পূরণের যাত্রাটা কেমন ছিল?
সুমি: আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়েছি। শিক্ষকেরা বলতেন রাজনীতি বিজ্ঞান পড়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া সহজ। সেখান থেকেই আমার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন। পরে আমি যখন চাকরির জন্য সব জায়গায়তেই চাকরির পরীক্ষা দেওয়া শুরু করি, বুঝতে পারি, ব্যাংক আমার জন্য নয়, বিসিএসটাই আমার জন্য। ২০১৬ সালে প্রথমবার ৩৮ তম বিসিএস দিয়ে অকৃতকার্য হই। ৪০ তমতে কৃতকার্য হই। কিন্তু ক্যাডার লিস্টে ছিলাম না। তখন খুব খারাপ লাগে। করোনাকালে আমরা মিলেমিশে পড়াশোনা শুরু করি। যার যেটা ত্রুটি আছে সেটা সমাধান করার চেষ্টা করি। ৪১ তম বিসিএসের প্রস্তুতি আমরা একসঙ্গেই নিয়েছিলাম।
খুশবু: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নটা আমি দেখেছিলাম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে। সিনিয়র আপু ভাইয়াদের পড়াশোনা করতে দেখে আমার ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা জাগে। ২০১৯ সালে যখন ৪১ তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি আসে, আমি তখন স্নাতক শেষ করেছি মাত্র। প্রথমবারের মতো তখন বিসিএসে আবেদন করি। ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনার জন্য তা পিছিয়ে যায়। আমি তখন প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যাই।
প্রশ্ন: ফলাফল কীভাবে দেখেছিলেন? প্রথম কাকে জানিয়েছিলেন?
সুমি: ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ শেষে ফেসবুকে দেখলাম রেজাল্ট দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইট দেখলাম। খুশবু আমার হাত ধরে ছিল। আমি তখন চিন্তা করছি, যে কার রেজাল্ট আগে দেখব? ভাবলাম, আমি আগে বেশি কষ্ট পেয়েছি, আমার রোলটাই আগে দেখি। যখন দেখলাম আমার রোল এসেছে, খুশবু আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেয়। আমি তখন চুপ করে ওর রোলটা দেখছিলাম। যখন দেখলাম ওরও হয়েছে, আমরা দুই বোন একসঙ্গে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমি প্রায় আধা ঘণ্টার মতো কোনো কথা বলতে পারিনি।
খুশবু: প্রিলি, রিটেন, ভাইভা কোনো পরীক্ষার রেজাল্টই আমার দেখার সাহস হয় না। আমি আপুদের কাছে রোল নম্বরটা দিয়ে রাখি। রেজাল্ট দিলে ওরা দেখে দেয়। সেদিন যেহেতু একসঙ্গে ছিলাম, ভাবছিলাম যদি একজনের হয়, তাহলে আরেকজন কী করব? দুজনের না হলে কী হবে? আর কারওরই যদি না হয় তাহলে কী হবে? রেজাল্ট দেখার পর আপু এক দেড় ঘণ্টা স্তব্ধ থাকলেও আমি স্বাভাবিক ছিলাম। রেজাল্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি আম্মুকে ফোন করেছি, আব্বুকে জানাতে বলেছি। তারপর বড় আপুকে ফোন দিয়েছি।
প্রশ্ন: একজন আরেকজনকে কীভাবে সাহায্য করেছেন?
খুশবু: যেহেতু আমার প্রথম বিসিএস এটা। আমি সবকিছু আপুকে জিজ্ঞেস করে পড়তাম। ও যদি বলত, এটা পড়তেই হবে, আমি কঠিন হলেও চেষ্টা করতাম পড়ার। ও দেখিয়ে দিত, এখান থেকে আসবে, এখান থেকে আসবে না। ভাইভার সময় আমরা দুজন নিজেরা নিজেরা মক ভাইবা দিতাম। একটা রুম আমরা ভাইভা বোর্ডের মতো সেটআপ দিতাম। একজন আরেকজনকে ফর্মালি প্রশ্ন করতাম।
প্রশ্ন: ক্যাডার হিসেবে পছন্দের তালিকায় কী ছিল?
সুমি: বিসিএস প্রশাসন দুজনেরই। আমার সামনে ৪৩ তম আছে। স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা আমি করব।
খুশবু: আমিও চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: লিখিত, প্রিলি বা মৌখিক কোনটিকে কঠিন মনে হয়েছে?
সুমি: প্রিলি দুই ঘণ্টা, তাই মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন। একটু ভুল হলেই পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর লিখিত হচ্ছে ধৈর্যের পরীক্ষা। একটার পর একটা পরীক্ষা হয়। একটা বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে এসে রাত জেগে আবার আরেকটা বিষয় রিভিশন দেওয়া! তখন দুইটা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মনে হয়, আর সম্ভব নয়।
খুশবু: আমার মনে হয়, প্রিলিটা সবচেয়ে কঠিন। কোনো সিলেবাস নেই। নার্ভাসনেসের কারণে অনেক কিছু ভুলে যাই। আর লিখিত, যেহেতু সব গ্র্যাজুয়েটরাই পরীক্ষা দেয়, সবার মধ্যেই সৃজনশীলতা থাকে, সেটা সেখানে এপ্লাই করতে পারে। আমার কাছে সব সময়ই মনে হয়, প্রিলিটা বেশি কঠিন।
প্রশ্ন: তিনটি ধাপে পরীক্ষার সময় এমন কোনো মুহূর্ত আছে, যখন মনে হয়েছিল এবার হয়ে যাবে বা এবার হবে না?
সুমি: আমার রিটেন, প্রিলি, ভাইভা ভালো হয়েছিল। আমি খুব আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু যখন রেজাল্ট হবে হবে শুনছিলাম, তখন হঠাৎ করে মনে হচ্ছিল, বোধ হয় হবে না।
খুশবু: আমার সব সময় নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ভালো। ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় দেখা যায় যে,১৯০ আমি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছি। বাকি ১০ নম্বরের কিছু বাদ দিয়েছি বা ভুল লিখেছি। পরীক্ষার পর এই এক বছর, আমি ওই ১০ নম্বরের কথাই কেবল মনে করি। বাকি ১৯০ যে ভালো দিয়েছি, সেটা আর মনে পড়ে না। বারবারই আমি আপুকে বলতাম, আমিতো এটা ভুল করেছি। আমার বোধ হয় হবে না। তখন আপু বোঝাতো, ১০ বাদ দিলে বাকিটাতে তো তুই ভালো করেছিস। অনেকে ১৫০ নম্বরের উত্তর করে আসে, তুই তো ১৯০ নম্বর ভালোভাবে লিখেছিস। তখন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরে আসত।
প্রশ্ন: আপনাদের পড়াশোনা কোথায়?
সুমি: আমরা দুজনই হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করি। আমি মাধ্যমিক পাস করি ২০০৭-এ, আর খুশবু ২০১১-এ। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি।
খুশবু: আমি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছি। শিক্ষকদের ভাষ্য মতে, আমি শান্ত, ভদ্র ও ভালো ছাত্রী ছিলাম। ফাইভে, এইটে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট ছিল। বৃত্তিও পেয়েছিলাম।
প্রশ্ন: পরিবারে কে কে আছেন?
সুমি: আমরা তিন বোন। বাবা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এয়াকুব মিয়া। মা রুপিয়া বেগম, গৃহিণী।
খুশবু: আমাদের বড় বোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমরা দুজন যে সুযোগটা পেয়েছি, ও সেটা পায়নি। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর আপু প্রাইমারি স্কুলে জয়েন করে ফেলেছেন।
প্রশ্ন: আপনাদের এই সাফল্যের কারিগর বা অংশীদার কাকে বলবেন?
সুমি: সবচেয়ে বড় অংশীদার পরিবার। কারণ বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলাম, বয়স অনেক পার হয়েছে। অনেক সময় ভেঙে পড়েছি। কিন্তু আমার মা–বাবা–বোনদের সব সময় পাশে পেয়েছি। আমাদের আত্মীয়স্বজনও ভালো। আত্মীয়স্বজন কটু কথা বললে অনেক পরিবারই শক্ত থাকতে পারে না। আত্মীয়স্বজনও সব সময় আমাদের পাশে থেকেছেন।
প্রশ্ন: ছোটবেলায় বোনদের খুনসুটি হতো?
সুমি: ঝগড়া হতো। আমরা অনেক ঝগড়া করতাম। কথা বন্ধ করে দিতাম। রাগ করে বসে থাকতাম। বড় হওয়ার পর এখন ঝগড়া কম হয়।
প্রশ্ন: এক পরিবারে দুজন বিসিএস ক্যাডার—বিষয়টা কীভাবে উপভোগ করছেন?
খুশবু: এটা নিয়ে আপুর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি আপুকে বলছিলাম, তুমি যদি ৪০–এ হয়ে যেতে আর আমি ৪১–এ হতাম, তাহলে এত আলোড়ন হতো না। আমাদের এলাকা থেকে ফোন এসেছে, পৌরসভা থেকে একটা সংবর্ধনা দেওয়া হবে। স্কুল কলেজের শিক্ষকেরাও ফোন দিয়েছিলেন। সেখান থেকেও সংবর্ধনা দেওয়া হবে। নিজের বাবা–মাকে যে পরিচয় দিতে পেরেছি এ জন্য আমি সবচেয়ে বেশি খুশি।
প্রশ্ন: বর্তমান পেশা?
সুমি: আমি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করছি।
খুশবু: ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (বিবিএস) যোগ দিই। এখানো সেখানেই কাজ করছি।
প্রশ্ন: বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
খুশবু: কেউ যদি বিসিএস পরীক্ষা দিতে চায়, তাহলে তাকে ধৈর্য ধরতে হবে। মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়ার মতো জায়গা এটা নয়। প্রিলি পরীক্ষা দিয়ে রিটেনের জন্য পড়তে হবে। রেজাল্ট যা-ই হোক। রিটেন দিয়ে ভাইভার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। আবার ভাইভা দিয়ে পরের প্রিলির জন্য পড়া শুরু করতে হবে।
প্রশ্ন: যারা বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন না, তাদের কী বলবেন?
সুমি: বিসিএস প্রস্তুতি হলো ফুল প্যাকেজ। অনেক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। তাই বিসিএসে যাদের হবে না তারা অন্য খাতের কোনো না কোনো চাকরি ঠিকই পাবেন।
প্রশ্ন: মেয়েদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার পর পরিবার এবং সমাজ থেকে বিয়ের জন্য চাপ আসে। এটা নিয়ে আপনারা কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?
খুশবু: আমরা একটা সাপোর্টিভ পরিবার পেয়েছি। অন্যান্য নারীদের যে ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, আমাদের ক্ষেত্রে এটা খুবই কম। আমি যেটা সিদ্ধান্ত নেব, তারা সেটাতেই সমর্থন দেবেন। প্রত্যেকটা অভিভাবকের উচিত সন্তানকে সুযোগ দেওয়া।
সুমি: বিয়ে করতেই হবে এই মানসিকতাটা সমাজ থেকে দূর করা উচিত। যদি কোনো মেয়ে সংসার করতে চায়, তাকে সংসার করতে দেওয়া উচিত। কোনো মেয়ে যদি ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগী হতে চায়, তাকে সেই সুযোগটা দেওয়া উচিত। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্টিভ হতে হয়। কারণ মানসিকভাবে চাপে থাকলে এগিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। ৪০ তমতে যখন ক্যাডার পেলাম না, এরপর এক বছর ছয় মাস সময় গেল। এই সময়টাতে মাঝে মাঝেই কান্না পেত। হতাশা ঘিরে ধরত। যেহেতু আমার বয়স ৩০ হয়ে গেছে। এই সময়টাতে স্বাভাবিকভাবেই বিয়ে নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বোঝাবার চেষ্টা করত, পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করত। পরামর্শটা দিয়ে তারা আসলে আরও বেশি হতাশ করত। আমি কারও কথায় প্রতিক্রিয়া দেখাতাম না। চুপ করে শুনে যেতাম।
প্রবাদ আছে, দুঃসাহসে দুঃখ হয়। কিন্তু বাগেরহাটের প্রজাপতি স্কোয়াড দুঃসাহসে ভর করে আলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়া এখনো যে কতটা কঠিন কাজ, তা কারও অজানা নয়। সেই কঠিন কাজই করে চলেছে বাগেরহাটের কিশোরীরা। প্রজাপতি স্কোয়াড নামে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছে তার
৩ দিন আগেগাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে নিহত হয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন বা ওএইচসিএইচআর এ তথ্য জানিয়েছে। তাদের
৩ দিন আগেআপনি শিক্ষিত ও সচেতন একজন মানুষ। সম্পর্কের একটি সুন্দর পর্যায়ে আছেন। তবে আপনার সঙ্গীর যে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন, তা কিন্তু বড় ধরনের আবেগীয়
৩ দিন আগেশওকত আরা খন্দকার ওরফে ঝর্ণা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ঘর-সংসার সামলে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
৩ দিন আগে