ডুবে যাওয়ার কয়েক শ বছর পরও খোঁজা হচ্ছে যেসব জাহাজ 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২২, ০৯: ০০

বিশ্বখ্যাত নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জাহাজ থেকে শুরু করে আমেরিকান বিপ্লবের সহায়ক বাণিজ্যিক জাহাজ কিংবা অনেক বিখ্যাত ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজের ভাগ্যে জুটেছিল সলিলসমাধি। কয়েক শ বছর আগের এমন অনেক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ আজও খোঁজা হচ্ছে। কেউ কেউ দাবি তুলছেন, তা আবার খারিজও হচ্ছে। চলুন এমনই কিছু বিখ্যাত জাহাজের বিষয়ে সবিস্তারে জানা যাক—

সান্তা মারিয়া
আমেরিকার খোঁজ পাওয়া ক্রিস্টোফার কলম্বাস তাঁর বিশ্বভ্রমণের মিশন তিনটি জাহাজ নিয়ে শুরু করেছিলেন—নিনা, দ্য পিন্তা ও সান্তা মারিয়া। এই তিন জাহাজের বহর নিয়েই ভারতে আসার সংক্ষিপ্ত পথ খুঁজে বের করতে ১৪৯২ সালে স্পেন থেকে রওনা দিয়েছিলেন কলম্বাস। এশিয়ায় না পৌঁছে কলম্বাসের আমেরিকায় চলে যাওয়া ও তাঁর সন্ধানের ইতিহাস তো সবারই জানা। কিন্তু স্পেনে নিরাপদে মাত্র দুটি জাহাজই পৌঁছাতে পেরেছিল। আটলান্টিক পাড়ি দিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল সান্তা মারিয়া। ধারণা করা হয়, ক্রিসমাসের এক রাতে সান্তা মারিয়ার নাবিক জাহাজের হাল তুলে দিয়েছিলেন এক অদক্ষ কেবিন ক্রুর হাতে। অপটু হাতে জাহাজ চালনা করে হাইতির কাছাকাছি একটি প্রবাল প্রাচীরের কাছে নিয়ে যান তিনি। জাহাজটি প্রবালে ধাক্কা খেয়ে দ্রুতই ডুবতে বসে। জাহাজে থাকা ব্যক্তিরা স্থানীয়দের সাহায্যে পাড়ে উঠতে এবং মালবাহী জাহাজটি খালি করতে সক্ষম হলেও জাহাজটি আর রক্ষা করা যায়নি। গভীর অতলে জাহাজটি ডুবে যায়। তখন থেকেই এটি একটি অনাবিষ্কৃত রহস্য হয়ে আছে। এর কারণ হচ্ছে, সান্তা মারিয়ার ধ্বংসাবশেষের কোনো চিহ্নই আর পাওয়া যায়নি। ২০১৪ সালে একটি দাবি ওঠে যে, সান্তা মারিয়াকে পাওয়া গেছে। কিন্তু ইউনেসকো তাদের গবেষক দল পাঠিয়ে দেখে, সেটি ১৭০০ কিংবা ১৮০০ শতকের অন্য একটি জাহাজ ছিল। 

ক্যাপ্টেন জেমস কুকের সশস্ত্র জাহাজ এনডেভারের খোঁজ চলেছে দুই শ বছরের বেশি সময় ধরে। ছবি: রয়টার্সএইচএমএস এনডেভার
বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ নাবিক ক্যাপ্টেন জেমস কুকের সশস্ত্র জাহাজ এইচএমএস এনডেভার, যার খোঁজ চলেছে ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে। ওক আর পাইন কাঠে তৈরি ছিল এই জাহাজ। ক্যাপ্টেন কুক প্রথমে নিউজিল্যান্ডের উপকূলরেখা এবং ১৭৭০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলরেখার সন্ধান দিয়েছিলেন। এনডেভার পরবর্তী সময়ে অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছিল এবং নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় লর্ড স্যান্ডউইচ। এনডেভার মূলত আমেরিকান বিপ্লবের সময় ব্রিটিশ সেনা জাহাজ হিসেবেই ব্যবহার করা হতো। ব্রিটিশ বাহিনী ১৭৭৮ সালে ইচ্ছাকৃতভাবে জাহাজটি ডুবিয়ে দেয়। এরপর জাহাজটির কোনো সন্ধান মেলেনি। নানা সময়ে এর অংশবিশেষ খুঁজে পাওয়ার দাবি উঠলেও জেমস কুকের জাহাজ আজও যেন এক রহস্য। 

গ্রেট লেকে ভেসে বেড়ানো প্রথম জাহাজের নাম হচ্ছে গ্রিফিন। ছবি: টুইটারদ্য গ্রিফিন
উত্তর আমেরিকার গ্রেট লেকে ভেসে বেড়ানো প্রথম জাহাজের নাম হচ্ছে গ্রিফিন। ফরাসি পর্যটক রেনে-রবার্ট ক্যাভেলিয়া ও সিউ দে লা সালে নামের দুই ব্যক্তি দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণের জন্য এই জাহাজটি তৈরি করেছিলেন। লা সালের উদ্দেশ্য ছিল নায়াগ্রা জলপ্রপাত, লেক ইরি, লেক হুরন ও লেক মিশিগান পাড়ি দেওয়া। ১৬৭৯ সালে জাহাজটি ছয়জন নাবিক ও এক কার্গো মালামালসহ গ্রিন বে-তে ডুবে যায়। গ্রিফিনকে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ২০১৪ সালে এক ব্যক্তি দাবি করেছিলেন যে তিনি গ্রিফিনের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু সবিস্তারে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে তাঁর ওই দাবি সত্য নয়। 

বনহোম রিচার্ডের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ খুঁজেও পাওয়ার দাবি করেছে কয়েকটি দল। ছবি: টুইটারবনহোম রিচার্ড
ফরাসি অর্থায়নে ১৭৭৯ সালে ক্যাপ্টেন জন পল জোন্সের অধীনে যাত্রা করে রণতরি বনহোম রিচার্ড। উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ জাহাজ দখল করা। এর কয়েক সপ্তাহ পর ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব উপকূলে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস সেরাপিসের বিরুদ্ধে ভয়ানক যুদ্ধে অংশ নেয় বনহোম রিচার্ড। জোন্স তাঁর লোকবল নিয়ে কয়েক ঘণ্টার যুদ্ধের পর সফলভাবে সেরাপিসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। দুর্ভাগ্যবশত, ততক্ষণে বনহোম রিচার্ডে আগুন ধরে যায়। ৩৬ ঘণ্টা চেষ্টার পর জোন্স ও তাঁর ক্রুরা জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সেটিকে উত্তর সাগরে ডুবিয়ে দেন। তখন থেকে এর ধ্বংসাবশেষ খুঁজছেন আগ্রহীরা। ব্রিটিশ স্থানীয় থেকে পেশাদার উদ্ধারকারী সংস্থা, মার্কিন নৌবাহিনী এবং এমনকি লেখক ও অভিযাত্রীরা পর্যন্ত এই জাহাজ খোঁজায় শ্রম ব্যয় করেছেন। বনহোম রিচার্ডের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ারও দাবি করেছে কয়েকটি দল। কিন্তু কোনোবারই শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

তথ্যসূত্র: হিস্ট্রি ডট কম ও ব্রিটানিকা ডট কম 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত