মেজবাহ নূর, ঢাকা
একটি যন্ত্র তখনই স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠে যখন সেটিকে নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া যায়। এই নির্দেশনা দেওয়ার কাজটি করে মানুষই। আর সেটি হতে হয় বিশেষ কাঠামোবদ্ধ নির্দেশনা। এই কাজটি সহজ করতেই মানুষ উদ্ভাবন করেছে যন্ত্রের জন্য উপযোগী ভাষা।
এর মধ্যে প্রধান হলো কম্পিউটারের ভাষা বা প্রোগ্রামিং ভাষা। এটি এক ধরনের কৃত্রিম ভাষা। এ ভাষা কম্পিউটারের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। মানুষের মুখের ভাষার মতো প্রোগ্রামিং ভাষারও নিজস্ব ব্যাকরণ রয়েছে। তথ্য সুবিন্যস্তকরণ ও প্রক্রিয়াকরণে এবং অ্যালগরিদমগুলো নির্ভুলভাবে প্রকাশ করতে মূলত প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয়।
কিছু কিছু লেখক প্রোগ্রামিং ভাষা বলতে শুধু সেসব ভাষাকেই বোঝান যেগুলো সম্ভাব্য সমস্ত অ্যালগরিদম প্রকাশ করতে সক্ষম। কখনো কখনো কৃত্রিম ভাষাগুলোকে প্রোগ্রামিং ভাষা না বলে কম্পিউটারের ভাষা বলা হয়। এ পর্যন্ত হাজারেরও বেশি প্রোগ্রামিং ভাষা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়া, নিয়মিতই উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন প্রোগ্রামিং ভাষা। পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামার বলা হয় অ্যাডা লাভলেসকে। লাভলেস ছিলেন চার্লস ব্যাবেজের পৃষ্ঠপোষক এবং ব্যবসায়িক অংশীদার। তিনি ব্রিটিশ কবি লর্ড বাইরনের সন্তান।
কম্পিউটারের ভাষার ইতিহাস
প্রোগ্রামিংয়ের ভাষাগুলোকে বিভিন্ন প্রজন্মে ভাগে প্রকাশ করা হয়। এগুলো নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
প্রথম প্রজন্ম (মেশিন ভাষা)
প্রথম-প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোকে প্রোগ্রাম করতে ব্যবহৃত মেশিন স্তরের ভাষা। মূলত, প্রথম প্রজন্মের ভাষা কম্পাইল বা অ্যাসেম্বল করতে কোনো অনুবাদক ব্যবহার করা হতো না। প্রথম প্রজন্মের প্রোগ্রামিং নির্দেশাবলি কম্পিউটার সিস্টেমের সামনের প্যানেলের সুইচগুলোর মাধ্যমে প্রবেশ করানো হতো। মেশিন ভাষা মূলত বাইনারি সংখ্যা দিয়ে তৈরি। বাইনারি ভাষা ১ ও ০ (শূন্য) দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
দ্বিতীয় প্রজন্ম (অ্যাসেম্বলি ভাষা)
১৯৫০ সালে দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা বা অ্যাসেম্বলি ভাষা আবিষ্কার হয়। অ্যাসেম্বলি ভাষায় প্রোগ্রাম লেখার জন্য ০ ও ১ ব্যবহার না করে বিভিন্ন সংকেত ব্যবহার করা হয়।
এই সংকেতকে বলে সাংকেতিক কোড বা নেমোনিক। এটি সর্বোচ্চ পাঁচটি অক্ষরের সমন্বয়ে হয়, যেমন-SUB (বিয়োগের জন্য), MUL (গুণের জন্য), ADD (যোগের জন্য), DIV (ভাগের জন্য) ইত্যাদি।
তৃতীয় প্রজন্ম
তৃতীয় প্রজন্মের ভাষাগুলোকে উচ্চস্তরের ভাষা বলা হয়ে থাকে। সাংকেতিক ভাষা (অ্যাসেম্বলি ভাষা) এবং যন্ত্র ভাষায় (মেশিন ভাষা) প্রোগ্রাম লেখা একজন সাধারণ প্রোগ্রামারের পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য। এই অসুবিধা দূর করতেই আসে উচ্চস্তরের ভাষা। উচ্চতর ভাষায় মানুষের বোধগম্য বর্ণ, সংখ্যা, বাক্য ব্যবহার করে প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। ফলে যেকোনো প্রোগ্রামারের পক্ষে এই ভাষায় প্রোগ্রাম লিখতে ও প্রোগ্রামটি বুঝতে আর তেমন বেগ পেতে হয় না। এই ভাষায় অতি সহজে এবং দ্রুত প্রোগ্রাম লেখা যায়। মূলত এ কারণে উচ্চতর ভাষা জনপ্রিয়তা পায়।
তৃতীয় প্রজন্মের অন্যতম প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো হলো—সি, সি প্লাস প্লাস, সি শার্প, জাভা, পাইথন, পিএইচপি, পার্ল, বিএএসআইসি (বেসিক), প্যাসকেল, ফোরট্র্যান, এএলজিওএল এবং সিওবিওএল (কোবল)।
চতুর্থ প্রজন্ম
চতুর্থ প্রজন্মের অন্যতম প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো হলো—এবিএপি, ইউনিক্স শেল, এসকিউএল, পিএল/এসকিউএল, ওরাকল রিপোর্টস এবং আর।
ডেটাবেইস ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোয়েরি এবং রিপোর্ট জেনারেটর ও ডেটা সংশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত ভাষাগুলোকে চতুর্থ প্রজন্মের ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পঞ্চম প্রজন্ম
পঞ্চম প্রজন্মের ভাষাকে ‘স্বাভাবিক ভাষাও’ বলা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর যন্ত্র তৈরিতে এই প্রজন্মের ভাষা ব্যবহৃত হয়। পঞ্চম প্রজন্মের ভাষায় লেখা প্রোগ্রামকে মেশিন ভাষায় রূপান্তরের জন্য ইন্টেলিজেন্ট কম্পাইলার প্রয়োজন হয়। এই প্রজন্মের ভাষা ব্যবহার করে মানুষ যন্ত্রকে মৌখিক নির্দেশ দিতে পারে।
পঞ্চম প্রজন্মের অন্যতম প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো হলো—প্রোলগ, ওপিএস ৫, মারকিউরি ইত্যাদি।
এ প্রজন্মের ভাষাগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা যাতে কম্পিউটার কোনো প্রোগ্রামার ছাড়াই নিজে নিজে একটি সমস্যার সমাধান করতে পারে। ব্যবহারকারীকে শুধু কোন সমস্যাগুলো সমাধান করা দরকার এবং কোন শর্ত পূরণ করা দরকার তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আর সেগুলো সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় রুটিন বা অ্যালগরিদম প্রয়োগ করার কাজটি কম্পিউটার নিজেই করবে।
জনপ্রিয় কিছু উচ্চস্তরের ভাষা
সি (C)
১৯৭২ সালে সি প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন ডেনিস রিচি। এ ভাষাটি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় প্রোগ্রামারদের মাঝে। সি খুব শক্তিশালী প্রোগ্রামিং ভাষা। সি দিয়ে অনেক ধরনের কাজ করা যায়। কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা। কম্পিউটার-বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের সি শেখা এক প্রকার বাধ্যতামূলকই বলা যায়।
বর্তমানে সফটওয়্যার শিল্পে সি ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পাইলার তৈরি, সিস্টেম প্রোগ্রামিং ও আইওটির (ইন্টারনেট অব থিংস) বিভিন্ন প্রোগ্রাম তৈরিতে। সি-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি আরেকটি প্রোগ্রামিং ভাষা সি প্লাস প্লাসও (C++) বেশ জনপ্রিয়।
জাভা (Java)
১৯৯৫ সালে জাভা প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন জেমস গসলিং। এটি একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা। জাভা দিয়ে তৈরি সফটওয়্যার ভিন্ন ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে চালানো যেত বলে ডেস্কটপ ও ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরিতে জাভা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
শুরুর দিকে জাভা বেশ ধীর গতির প্রোগ্রামিং ভাষা বলে বিবেচিত হতো। তবে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে এখন এটি অত্যন্ত কার্যকর ও শক্তিশালী এক ভাষা হিসেবে পরিচিত। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের নেটিভ সফটওয়্যার (নির্দিষ্ট অপারেটিং সিস্টেম বা যন্ত্রের জন্য তৈরি প্রোগ্রাম) জাভা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
জাভাস্ক্রিপ্ট (JavaScript)
১৯৯৫ সালে ব্র্যানডন এইখ ডিজাইন করেন জাভাস্ক্রিপ্ট। জাভাস্ক্রিপ্ট মূলত ইন্টারনেটের প্রোগ্রামিং ভাষা। শুরুতে এটি শুধু ব্রাউজারের জন্য তৈরি করা হলেও ফ্রন্টএন্ড ও ব্যাকএন্ড—উভয় ক্ষেত্রেই এটি এখন বহুল ব্যবহৃত। এই প্রোগ্রামিং ভাষার ফলে ইন্টারঅ্যাকটিভ ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি অনেক সহজ হয়েছে।
জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে ফাংশনাল প্রোগ্রামিং, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিংসহ বিভিন্নভাবে প্রোগ্রাম তৈরি করা যায়। এমনকি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির অনেক ফ্রেমওয়ার্কেও জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পাইথন (Python)
১৯৯১ সালে গুইডো ফন রুজাম পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন। পাইথন একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা হলেও সি++ কিংবা জাভার তুলনায় বেশ সহজ। সুন্দর, সহজবোধ্য ও সাবলীল ভাষা হিসেবে পাইথনের বেশ সুনাম রয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা এটি।
এই ভাষা শেখা তুলনামূলক সহজ। তাই অনেক প্রতিষ্ঠানেই প্রথম প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে পাইথন শেখানো হচ্ছে। এটি ওয়েব জগতে জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি মেশিন লার্নিং ও ডেটা অ্যানালাইসিসের জন্যও বহুল ব্যবহৃত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান—সবখানেই পাইথনের ব্যবহার বাড়ছে।
পিএইচপি (PHP)
বলা যায়, পিএইচপি হচ্ছে ওয়েবজগতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ভাষা। ১৯৯৫ সালে রাসমুস লেরড্রফ পিএইচপি প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন। এ ভাষাটি তৈরি করা হয়েছে সি প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে।
ওয়েব প্রোগ্রামিং অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে পিএইচপি। ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, ড্রুপাল-এর মতো জনপ্রিয় সব কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার (সিএমএস) পিএইচপি দিয়ে তৈরি। যদিও বর্তমানে ওয়েবের জগতে পাইথন, রুবি এবং আরও কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সি শার্প (C#)
মাইক্রোসফটের ডট নেট ফ্রেমওয়ার্কে কাজ করার জন্য এই ভাষা অধিকাংশ সফটওয়্যার নির্মাতার প্রথম পছন্দ। সি শার্প একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা। পূর্ববর্তী প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দূর করার লক্ষ্যে মাইক্রোসফট করপোরেশন নতুন এই প্রোগ্রামিং ভাষা উদ্ভাবন করে। ২০০০ সালে আলফা ভার্সন হিসেবে এটি প্রথম উন্মুক্ত করা হয়।
একটি যন্ত্র তখনই স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠে যখন সেটিকে নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া যায়। এই নির্দেশনা দেওয়ার কাজটি করে মানুষই। আর সেটি হতে হয় বিশেষ কাঠামোবদ্ধ নির্দেশনা। এই কাজটি সহজ করতেই মানুষ উদ্ভাবন করেছে যন্ত্রের জন্য উপযোগী ভাষা।
এর মধ্যে প্রধান হলো কম্পিউটারের ভাষা বা প্রোগ্রামিং ভাষা। এটি এক ধরনের কৃত্রিম ভাষা। এ ভাষা কম্পিউটারের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। মানুষের মুখের ভাষার মতো প্রোগ্রামিং ভাষারও নিজস্ব ব্যাকরণ রয়েছে। তথ্য সুবিন্যস্তকরণ ও প্রক্রিয়াকরণে এবং অ্যালগরিদমগুলো নির্ভুলভাবে প্রকাশ করতে মূলত প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয়।
কিছু কিছু লেখক প্রোগ্রামিং ভাষা বলতে শুধু সেসব ভাষাকেই বোঝান যেগুলো সম্ভাব্য সমস্ত অ্যালগরিদম প্রকাশ করতে সক্ষম। কখনো কখনো কৃত্রিম ভাষাগুলোকে প্রোগ্রামিং ভাষা না বলে কম্পিউটারের ভাষা বলা হয়। এ পর্যন্ত হাজারেরও বেশি প্রোগ্রামিং ভাষা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়া, নিয়মিতই উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন প্রোগ্রামিং ভাষা। পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামার বলা হয় অ্যাডা লাভলেসকে। লাভলেস ছিলেন চার্লস ব্যাবেজের পৃষ্ঠপোষক এবং ব্যবসায়িক অংশীদার। তিনি ব্রিটিশ কবি লর্ড বাইরনের সন্তান।
কম্পিউটারের ভাষার ইতিহাস
প্রোগ্রামিংয়ের ভাষাগুলোকে বিভিন্ন প্রজন্মে ভাগে প্রকাশ করা হয়। এগুলো নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
প্রথম প্রজন্ম (মেশিন ভাষা)
প্রথম-প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোকে প্রোগ্রাম করতে ব্যবহৃত মেশিন স্তরের ভাষা। মূলত, প্রথম প্রজন্মের ভাষা কম্পাইল বা অ্যাসেম্বল করতে কোনো অনুবাদক ব্যবহার করা হতো না। প্রথম প্রজন্মের প্রোগ্রামিং নির্দেশাবলি কম্পিউটার সিস্টেমের সামনের প্যানেলের সুইচগুলোর মাধ্যমে প্রবেশ করানো হতো। মেশিন ভাষা মূলত বাইনারি সংখ্যা দিয়ে তৈরি। বাইনারি ভাষা ১ ও ০ (শূন্য) দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
দ্বিতীয় প্রজন্ম (অ্যাসেম্বলি ভাষা)
১৯৫০ সালে দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা বা অ্যাসেম্বলি ভাষা আবিষ্কার হয়। অ্যাসেম্বলি ভাষায় প্রোগ্রাম লেখার জন্য ০ ও ১ ব্যবহার না করে বিভিন্ন সংকেত ব্যবহার করা হয়।
এই সংকেতকে বলে সাংকেতিক কোড বা নেমোনিক। এটি সর্বোচ্চ পাঁচটি অক্ষরের সমন্বয়ে হয়, যেমন-SUB (বিয়োগের জন্য), MUL (গুণের জন্য), ADD (যোগের জন্য), DIV (ভাগের জন্য) ইত্যাদি।
তৃতীয় প্রজন্ম
তৃতীয় প্রজন্মের ভাষাগুলোকে উচ্চস্তরের ভাষা বলা হয়ে থাকে। সাংকেতিক ভাষা (অ্যাসেম্বলি ভাষা) এবং যন্ত্র ভাষায় (মেশিন ভাষা) প্রোগ্রাম লেখা একজন সাধারণ প্রোগ্রামারের পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য। এই অসুবিধা দূর করতেই আসে উচ্চস্তরের ভাষা। উচ্চতর ভাষায় মানুষের বোধগম্য বর্ণ, সংখ্যা, বাক্য ব্যবহার করে প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। ফলে যেকোনো প্রোগ্রামারের পক্ষে এই ভাষায় প্রোগ্রাম লিখতে ও প্রোগ্রামটি বুঝতে আর তেমন বেগ পেতে হয় না। এই ভাষায় অতি সহজে এবং দ্রুত প্রোগ্রাম লেখা যায়। মূলত এ কারণে উচ্চতর ভাষা জনপ্রিয়তা পায়।
তৃতীয় প্রজন্মের অন্যতম প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো হলো—সি, সি প্লাস প্লাস, সি শার্প, জাভা, পাইথন, পিএইচপি, পার্ল, বিএএসআইসি (বেসিক), প্যাসকেল, ফোরট্র্যান, এএলজিওএল এবং সিওবিওএল (কোবল)।
চতুর্থ প্রজন্ম
চতুর্থ প্রজন্মের অন্যতম প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো হলো—এবিএপি, ইউনিক্স শেল, এসকিউএল, পিএল/এসকিউএল, ওরাকল রিপোর্টস এবং আর।
ডেটাবেইস ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোয়েরি এবং রিপোর্ট জেনারেটর ও ডেটা সংশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত ভাষাগুলোকে চতুর্থ প্রজন্মের ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পঞ্চম প্রজন্ম
পঞ্চম প্রজন্মের ভাষাকে ‘স্বাভাবিক ভাষাও’ বলা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর যন্ত্র তৈরিতে এই প্রজন্মের ভাষা ব্যবহৃত হয়। পঞ্চম প্রজন্মের ভাষায় লেখা প্রোগ্রামকে মেশিন ভাষায় রূপান্তরের জন্য ইন্টেলিজেন্ট কম্পাইলার প্রয়োজন হয়। এই প্রজন্মের ভাষা ব্যবহার করে মানুষ যন্ত্রকে মৌখিক নির্দেশ দিতে পারে।
পঞ্চম প্রজন্মের অন্যতম প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো হলো—প্রোলগ, ওপিএস ৫, মারকিউরি ইত্যাদি।
এ প্রজন্মের ভাষাগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা যাতে কম্পিউটার কোনো প্রোগ্রামার ছাড়াই নিজে নিজে একটি সমস্যার সমাধান করতে পারে। ব্যবহারকারীকে শুধু কোন সমস্যাগুলো সমাধান করা দরকার এবং কোন শর্ত পূরণ করা দরকার তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আর সেগুলো সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় রুটিন বা অ্যালগরিদম প্রয়োগ করার কাজটি কম্পিউটার নিজেই করবে।
জনপ্রিয় কিছু উচ্চস্তরের ভাষা
সি (C)
১৯৭২ সালে সি প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন ডেনিস রিচি। এ ভাষাটি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় প্রোগ্রামারদের মাঝে। সি খুব শক্তিশালী প্রোগ্রামিং ভাষা। সি দিয়ে অনেক ধরনের কাজ করা যায়। কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা। কম্পিউটার-বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের সি শেখা এক প্রকার বাধ্যতামূলকই বলা যায়।
বর্তমানে সফটওয়্যার শিল্পে সি ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পাইলার তৈরি, সিস্টেম প্রোগ্রামিং ও আইওটির (ইন্টারনেট অব থিংস) বিভিন্ন প্রোগ্রাম তৈরিতে। সি-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি আরেকটি প্রোগ্রামিং ভাষা সি প্লাস প্লাসও (C++) বেশ জনপ্রিয়।
জাভা (Java)
১৯৯৫ সালে জাভা প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন জেমস গসলিং। এটি একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা। জাভা দিয়ে তৈরি সফটওয়্যার ভিন্ন ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে চালানো যেত বলে ডেস্কটপ ও ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরিতে জাভা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
শুরুর দিকে জাভা বেশ ধীর গতির প্রোগ্রামিং ভাষা বলে বিবেচিত হতো। তবে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে এখন এটি অত্যন্ত কার্যকর ও শক্তিশালী এক ভাষা হিসেবে পরিচিত। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের নেটিভ সফটওয়্যার (নির্দিষ্ট অপারেটিং সিস্টেম বা যন্ত্রের জন্য তৈরি প্রোগ্রাম) জাভা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
জাভাস্ক্রিপ্ট (JavaScript)
১৯৯৫ সালে ব্র্যানডন এইখ ডিজাইন করেন জাভাস্ক্রিপ্ট। জাভাস্ক্রিপ্ট মূলত ইন্টারনেটের প্রোগ্রামিং ভাষা। শুরুতে এটি শুধু ব্রাউজারের জন্য তৈরি করা হলেও ফ্রন্টএন্ড ও ব্যাকএন্ড—উভয় ক্ষেত্রেই এটি এখন বহুল ব্যবহৃত। এই প্রোগ্রামিং ভাষার ফলে ইন্টারঅ্যাকটিভ ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি অনেক সহজ হয়েছে।
জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে ফাংশনাল প্রোগ্রামিং, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিংসহ বিভিন্নভাবে প্রোগ্রাম তৈরি করা যায়। এমনকি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির অনেক ফ্রেমওয়ার্কেও জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পাইথন (Python)
১৯৯১ সালে গুইডো ফন রুজাম পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন। পাইথন একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা হলেও সি++ কিংবা জাভার তুলনায় বেশ সহজ। সুন্দর, সহজবোধ্য ও সাবলীল ভাষা হিসেবে পাইথনের বেশ সুনাম রয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা এটি।
এই ভাষা শেখা তুলনামূলক সহজ। তাই অনেক প্রতিষ্ঠানেই প্রথম প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে পাইথন শেখানো হচ্ছে। এটি ওয়েব জগতে জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি মেশিন লার্নিং ও ডেটা অ্যানালাইসিসের জন্যও বহুল ব্যবহৃত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান—সবখানেই পাইথনের ব্যবহার বাড়ছে।
পিএইচপি (PHP)
বলা যায়, পিএইচপি হচ্ছে ওয়েবজগতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ভাষা। ১৯৯৫ সালে রাসমুস লেরড্রফ পিএইচপি প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন। এ ভাষাটি তৈরি করা হয়েছে সি প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে।
ওয়েব প্রোগ্রামিং অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে পিএইচপি। ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, ড্রুপাল-এর মতো জনপ্রিয় সব কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার (সিএমএস) পিএইচপি দিয়ে তৈরি। যদিও বর্তমানে ওয়েবের জগতে পাইথন, রুবি এবং আরও কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সি শার্প (C#)
মাইক্রোসফটের ডট নেট ফ্রেমওয়ার্কে কাজ করার জন্য এই ভাষা অধিকাংশ সফটওয়্যার নির্মাতার প্রথম পছন্দ। সি শার্প একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা। পূর্ববর্তী প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দূর করার লক্ষ্যে মাইক্রোসফট করপোরেশন নতুন এই প্রোগ্রামিং ভাষা উদ্ভাবন করে। ২০০০ সালে আলফা ভার্সন হিসেবে এটি প্রথম উন্মুক্ত করা হয়।
আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য জেমিনি অ্যাপ চালু করল গুগল। নতুন অ্যাপটির মাধ্যমে আইফোনে গুগলের এআই টুল ব্যবহার করা যাবে, যা দৈনন্দিন উৎপাদনশীলতা থেকে শুরু করে সৃজনশীল কাজ বিভিন্ন কাজে সাহায্য করবে। এ ছাড়া অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সও আসছে, যার মাধ্যমে আইফোন ব্যবহারকারীরা সিরি, চ্যাটজিপিটি ও গুগলের জেমিনির মাধ্যম
৩ ঘণ্টা আগেকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির ওপর জোর দেওয়ার জন্য ১ হাজার কর্মী ছাঁটাই করছে বিশ্বের অন্যতম চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এএমডি। প্রযুক্তি বিশ্বে এআই কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে তা কোম্পানিটির এই সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যায়। বিশেষ করে এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির সাফল্য দেখে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এ
৫ ঘণ্টা আগেফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটাকে গতকাল বৃহস্পতিবার ৭৯৮ মিলিয়ন বা ৭৯ কোটি ৭৭ লাখ ২০ হাজার ইউরো (৮৪ কোটি ডলার) জরিমানা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ফেসবুকের মার্কেটপ্লেসে শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপন পরিষেবায় ব্যবহারকারীদের স্বয়ংক্রিয় প্রবেশাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে একচেটিয়া ব্যবসা সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করায় এই জরিমানা
৬ ঘণ্টা আগেদেশের বাজারে মিডরেঞ্জের সেরা পারফর্মিং স্মার্টফোন অনার এক্স৭সি নিয়ে এসেছে অনার বাংলাদেশ। সর্বাধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ এই স্মার্টফোনের দাম মাত্র ২২ হাজার ৯৯৯ টাকা। গত ১২ নভেম্বর থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে, যা ডিভাইসটি অনারের ব্র্যান্ড বা যেকোনো রিটেইল শপে কেনা যাচ্ছে।
২০ ঘণ্টা আগে