সাক্ষাৎকার

আফগানদের কাছে হার বড় কোনো আঘাত নয়

তানজিম হাসান সাকিব চোটে পড়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন না। চোট কাটিয়ে ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাদা বলের সিরিজে ফিরতে ৭০-৮০ ভাগ গতিতে বোলিং শুরু করেছেন তিনি। আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে পুরো গতিতে বোলিং করবেন। এ মাসেই খেলতে যাবেন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে। গতকাল মিরপুর একাডেমিতে তাঁর সাম্প্রতিক হালহকিকত শুনলেন আহমেদ রিয়াদ

প্রশ্ন: আপনার চোট থেকে সেরে ওঠার অগ্রগতি কতদূর?

তানজিম সাকিব: আলহামদুলিল্লাহ, এখন অনেকটা ভালো। চিকিৎসক ও ফিজিওর পরামর্শে নিয়মিত জিম করছি। থেরাপি নিচ্ছি। মাঠে ফিরতে আর কিছুদিন সময় লাগবে, কিন্তু এ সময়ে ফিটনেস ও শক্তি ধরে রাখতে হালকা অনুশীলন ও জিম করছি। বোলিং শুরু করেছি। ৭০-৮০ ভাগ গতিতে বোলিং শুরু করছি। কোনো ব্যথা নেই। ইনশা আল্লাহ, আগামী সপ্তাহে পুরোপুরি বোলিং শুরু করতে পারব।

প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রস্তুতি কবে থেকে শুরু করবেন?

তানজিম: একজন ক্রিকেটার কখনই চায় না চোটে পড়ে সিরিজ মিস করুক। আমার কাছে প্রথম খারাপ লেগেছে। চোট কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এটা মেনে নিতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ সামনে রেখে মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছি। আশা করছি, পুরোপুরি ফিট হয়ে সময়মতো খেলতে পারব। দলের জন্য নিজের সেরাটা দিতে চাই এবং ভালো করে সিরিজে অবদান রাখতে চাই।

প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পরই বিপিএল, এরপর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। বড় দুটি টুর্নামেন্ট নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

তানজিম: বিপিএলে সিলেট শক্তিশালী দলই গড়েছে এবং আমরা শিরোপা জিততে প্রস্তুতি নিচ্ছি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পেলে অবশ্যই নিজের সেরাটা দিতে চাই। এসব মঞ্চে খেলে নিজের দক্ষতা বাড়াতে চাই। আমি যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে থাকব, তখন হয়তো শুরু হয়ে যাবে এনসিএল টি-টোয়েন্টি। যদি দেশে ফিরে সুযোগ থাকে এই টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার চেষ্টা করব। আমি এ টুর্নামেন্ট বিপিএলের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছি। বিপিএলের প্রস্তুতি যেন ভালোভাবে নিতে পারি। বিপিএলে যেহেতু আমার দু-তিন বছরের খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে, এবার চেষ্টা করব আমার দল সিলেটটাকে ফাইনালে তুলতে।

প্রশ্ন: ভারত সিরিজে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পেসাররা একেবারে ভালো করতে পারেননি। আপনি উইকেট পেলেও বেশ রান দিয়ে ফেলেছিলেন। ভারত সফরটা যদি ফিরে দেখেন, ভুল কোথায় হয়েছে বেশি?

তানজিম: বোলাদের জন্য উইকেট আসলে চ্যালেঞ্জিং ছিল। বল একটু সোজা চলে যাচ্ছিল, আর ব্যাটাররা ব্যাকফুটে খেলে রান তুলছিল। কিছু রান দিয়েছি, তবে উইকেট নেওয়াই ছিল প্রধান লক্ষ্য। কখনো কখনো খুব ভালো বলেও ব্যাটাররা রান করে ফেলে; কিন্তু এটা ক্রিকেটের একটি অংশ।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক সময়টা খারাপ যাচ্ছে। সাফল্য সেভাবে ধরা দিচ্ছে না; বরং ব্যর্থই হচ্ছে বেশি।

তানজিম: হ্যাঁ, আমাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আসলে প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। ক্রিকেটে খারাপ-ভালো সময় আসে। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জয় কঠিন হলেও, আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিটি ম্যাচে দলীয় পারফরম্যান্স উন্নত করা। আফগানিস্তানের সঙ্গে হার কিছুটা হতাশার হলেও, এটা আমাদের জন্য বড় কোনো আঘাত নয়। এই সিরিজে আমাদের নিজেদের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পেরেছি। এটা কাটিয়ে উঠতে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। যদিও খারাপ সময় যাচ্ছে, কিন্তু দলের মনোভাব শক্তশালীই আছে। আমরা জানি, একসঙ্গে কাজ করলে আমরা ফিরে আসতে পারব। শুধু সময়ের ব্যাপার, আমরা নিজেদের সেরা রূপে ফিরতে পারব।

প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক বছর হয়ে গেছে। এ সময়ে নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

তানজিম: মিশ্র অভিজ্ঞতা ছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা আমার ভালো গেছে। নিজেই খুব ভালো উপভোগ করেছি। জাতীয় দলের প্রতিটি ম্যাচেই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা এখনো অনেক কিছু শিখছি। আরও উন্নতি করার চেষ্টা করছি। কীভাবে লম্বা সময় দেশকে সার্ভিস দিতে পারি, সে চেষ্টা করব। গত এক বছরে কিছু ভালো করতে পেরেছি, তবে কিছু জায়গায় উন্নতির সুযোগ রয়েছে। আমি নিজে আরও ধারাবাহিক ভালো করতে চাই। এ লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: বোলিংয়ে নতুন কোনো বৈচিত্র্য যোগ করেছেন?

তানজিম: চেষ্টা করি স্লোয়ার, নাকাল বল করার। তবে এখন চেষ্টা করছি অ্যাকশন ঠিক রেখে জোরের ওপর স্লোয়ার বল করার। এটা ব্যাটারদের কিছুটা বিভ্রান্ত করবে, যদি ঠিকঠাক আয়ত্ত করতে পারি। তবে আমার বোলিংয়ের মূল শক্তিই হচ্ছে ইন-সুইং, এটা যেন ঠিক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখছি।

প্রশ্ন: দলের লাল বলের পর সাদা বলে নাহিদ রানার অভিষেক হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমান, শরীফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ তো আছেনই। ইবাদত হোসেনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফেরার অপেক্ষায়। পেসারদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আবার বেড়েছে, চ্যালেঞ্জও কি বেড়ে গেল আপনার?

তানজিম: খুবই ভালো। নিজেদের মধ্যে এ প্রতিযোগিতা খুবই উপভোগ্য। এটিই হওয়া উচিত। একটি দেশের পেস বোলিংয়ের পাইপলাইন যত বেশি সমৃদ্ধ হবে, প্রতিযোগিতা থাকবে, তত বেশি বোলারের কঠোর পরিশ্রমের প্রবণতা বাড়বে। কারণ, যে জানে তার প্রতিযোগী আছে দলে, সে যদি তার জায়গায় সেরা না হতে পারে, তাকে পেছনে ফেলে ওই জায়গায় আরেকজন ঠিকই চলে আসবে। আমাদের প্রতিযোগিতা আসলে কারও সঙ্গে নয়। আমাদের প্রতিযোগিতা নিজেদের সক্ষমতা এবং সামর্থ্যের সঙ্গে। আমি নিজেকে কতটুকু উন্নত করে অন্যদের ছাড়িয়ে যেতে পারছি, এটিই প্রতিযোগিতা। এখন যদি দেখা যায়, শরীফুল ভাই, ইবাদত ভাই যদি উন্নতি করে আবার ফিরে আসেন, তাহলে আমিসহ বাকিদেরও সেরাটা দেওয়ার তাগিদ তৈরি হবে।

প্রশ্ন: প্রথমবারের মতো গ্লোবাল সুপার লিগে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন, সেটিও গায়ানার হয়ে। সুযোগটা কীভাবে এল?

তানজিম: গ্লোবাল সুপার লিগে খেলার সুযোগ পেয়ে ভীষণ রোমাঞ্চিত। এটি একটি বড় সুযোগ এবং এখানে ভালো পারফর্ম করতে পারলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হবে। আশা করছি, এর মাধ্যমে নিজেকে আরও উন্নত করতে পারব। এই লিগে খেলার প্রস্তাব আমাকে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার লেগ স্পিনার ইমরান তাহির ভাই। তিনি আমার নাম্বার ম্যানেজ করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিশ্বকাপে আমার বোলিং দেখেছেন। আমার বোলিং নাকি তাঁর ভালো লেগেছে। আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি ফ্রি আছি কি না? আমি বলেছিলাম, ফ্রি আছি। এরপর আমার এজেন্টের সঙ্গে বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

প্রশ্ন: গ্লোবাল সুপার লিগে রংপুর দল থাকবে। দেশের কোনো দলের হয়ে না খেলতে পেরে কি আফসোস আছে?

তানজিম: পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমি যে দলের হয়ে খেলব, সেখানে সেরাটা দিয়েই খেলার চেষ্টা করব। দেশের কোনো দলের হয়ে খেলতে পারলে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ একটু সহায়ক হতো। যেহেতু সুযোগ হয়নি, যে দলে আছি, ওটাতেই মনোযোগ রাখব।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত