সাক্ষাৎকার

‘নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশের বাইরে যাবে না’

নতুন ইতিহাস গড়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন। দীর্ঘদিনে ক্রীড়াঙ্গনে জেঁকে বসা অনিয়ম, সমস্যা, সংকট দূর করতে সংস্কারের অঙ্গীকার আসিফের। তরুণ কাঁধে বিশাল এক দায়িত্ব পাওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি তুলে ধরলেন স্বপ্ন, লক্ষ্যের কথা। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজকের পত্রিকার হেড অব স্পোর্টস রানা আব্বাস। 

প্রশ্ন: প্রথমেই ক্রীড়াঙ্গনের কী কী সংস্কার করতে চান? 
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া: আমি এখনো সচিবের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। মন্ত্রণালয়েও যেতে পারিনি। আজ (গতকাল) শুক্রবার ছিল। আগামীকাল (আজ) শনিবার। তবু একটা বিষয় আমার চোখে পড়েছে। নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের বিষয়টি। আমি এখন থেকেই তৎপরতা শুরু করেছি। আশা করি, এটা বাংলাদেশের বাইরে যাবে না। দেশ গঠনের সময়ে যদি এ রকম কিছু ঘটে, তাহলে সেটা আমাদের ভাবমূর্তির জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে। আমাদের সৌভাগ্য, ইউনূস স্যার আছেন সঙ্গে। আমাদের যেসব বিনির্মাণ করা প্রয়োজন, সচিবের কাছে কিছু কিছু শুনেছি। সেসব সংস্কারের জন্য আমরা রোববারেই বসব। আমি সচিবের সঙ্গে বসব। মন্ত্রণালয়ে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার আমাদের নেতৃত্বে আছেন, যিনি নিজেও ক্রীড়াপ্রেমী। তিনি কদিন আগে অলিম্পিকের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে আশা করি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আমাদের দেশেই ঠিকঠাক আয়োজন করতে পারব। এটা আয়োজনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। 

প্রশ্ন: নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রসঙ্গেই আসতাম...। 
আসিফ: বুঝতেই পারছেন, আমি মন্ত্রণালয়েও যাওয়ার সুযোগ পাইনি এখনো। গতকাল (পরশু) শপথ হয়েছে। আজ (কাল) মন্ত্রিপরিষদের আনুষ্ঠানিক অনেক সভা হয়েছে। আমাদের অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন দেশ গঠনের সময়। 

প্রশ্ন: যেহেতু সংস্কার আর পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মতো বড় ক্রীড়া সংস্থায় সেসব সংস্কার বা পরিবর্তন আনতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ উতরে যেতে চান কীভাবে? 
আসিফ: এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না। যেহেতু এখনো মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার সুযোগ পাইনি। সার্বিক অবস্থা না বুঝে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। 

প্রশ্ন: বিসিবি, বাফুফেতে দীর্ঘ সময়ে একই ধরনের নেতৃত্ব দেখা গেছে। এখানে আপনি কী ধরনের নেতৃত্ব দেখতে চান? 
আসিফ: নেতৃত্বের ব্যক্তি নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। আমরা প্রসেসের জন্য, সিস্টেমের জন্য আন্দোলন করেছি। সিস্টেমে বিশ্বাস করি, আমরা সিস্টেমের সংস্কার করব। একটা সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করব; সেখানে যিনিই নেতৃত্বে আসবেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করা দাঁড়াতে পারব। 

প্রশ্ন: আপনি যদি ক্রীড়া সংস্থাগুলোয় সংস্কার বা পরিবর্তন আনতে চান, সেখানে বর্তমান ক্রীড়া সংগঠকদের উপেক্ষা করা কঠিন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বেশির ভাগের নামের পাশে রাজনৈতিক পরিচয় আছে। বিভিন্ন কমিটিতে যদি রাজনৈতিক পরিচয়ের সংগঠকদেরই জায়গা দিতে হয়, আপনাদের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার কতটা ফলপ্রসূ হতে পারে বলে মনে করেন? 
আসিফ: আমি বিশ্বাস করি, ভালো সিস্টেম থাকলে যে মতাদর্শের লোকই হোন, সেটা ম্যাটার করে না। আপনাকে যখন একটা ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে কাজ করতে হবে, আর সেটার ওপর যদি ভালো তদারকি থাকে, তখন মতাদর্শ বিশেষ ম্যাটার করে না। 

প্রশ্ন: স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বড় সাফল্য পায়নি। ১৭ কোটির মানুষের দেশ একটা অলিম্পিক পদক আসেনি, ক্রিকেটে এখনো একটা এশিয়া কাপও (ছেলেদের) জেতা হয়নি, ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়াতেই ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। এখন যে দেশের তারুণ্যের জোয়ার, তাতে আপনি কতটা আশাবাদী যে সামনে ভিন্ন কিছু দেখবে বাংলাদেশ? 
আসিফ: এখানে সিনক্রোনাইজেশন খুব জরুরি। এখানে আসলে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স, ভালো দল তৈরি, ভালো খেলোয়াড় তৈরিসহ অনেক বিষয় জড়িয়ে। সব সিনক্রোনাইজেশন হলে ভালো ফল আসবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কাজ শুরু না করে বিস্তারিত কিছু বলা কঠিন। 

প্রশ্ন: আপনাকে একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন, মাত্র ২৬ বছর বয়সে একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। দাপ্তরিক কাজে চারপাশে যাঁরা থাকবেন, বেশির ভাগই আপনার বয়সে বড়, অভিজ্ঞ, বর্ষীয়ান। তাঁদের পরিচালিত করা কতটা চ্যালেঞ্জিং কাজ মনে হচ্ছে? 
আসিফ: আমি তো মনে করি, এই দায়িত্ব আমার কাছে কমপ্লিমেন্টারি। তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণেই ভালো কিছু অর্জন করা সম্ভব। এই সরকার পরিচালনায় ২৫ থেকে ৮৫ বছর পর্যন্ত মানুষ থাকছেন। অভিজ্ঞদের বিশাল অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের শক্তির মিশ্রণ রয়েছে। তারুণ্যের শক্তি দীর্ঘ সময় পর ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করতে পেরেছে দেশকে। তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণেই ভালো কিছু করা সম্ভব। মন্ত্রণালয়ে অভিজ্ঞরা থাকবেন। তাঁরা আমাকে সাফল্য পেতে সহায়তা করবেন বলে মনে করি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত