রক্ষণাত্মক কৌশল যেভাবে রক্ষা করেছে বাংলাদেশকে

নাজিম আল শমষের
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২১, ১৩: ৪৩
আপডেট : ২৪ জুন ২০২১, ১০: ৫২

ঢাকা: ‘আক্রমণ জেতায় ম্যাচ, রক্ষণ জেতাবে শিরোপা’—সারাক্ষণ মুখে চুইংগাম চিবোতে চিবোতে ফুটবল নিয়ে নিজের দর্শনটাকে এভাবে তুলে ধরেছিলেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। কোচদের নির্দেশিকায় বড় হরফেই লেখা হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি স্কটিশ কোচের এই বচন।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সেবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ঘিরে হচ্ছিল তুমুল সমালোচনা। সংবাদমাধ্যমগুলোতে ধুয়ে দেওয়া হচ্ছিল ফার্গুসনের খেলার কৌশলকে। বলা হচ্ছিল, রক্ষণ খোলসে ঢুকে গেছে ম্যানইউ। ম্যাচপ্রতি গড়ে ১.৪ গোল নিয়ে কোনোভাবে লিগ জিতছে রেড ডেভিলরা। যে ধরনের ফুটবল খেলে ম্যানইউ অভ্যস্ত, এই দলটা তার প্রেতাত্মা ইত্যাদি, ইত্যাদি। সমালোচনার জবাবেই বলা হোক কিংবা নিজের মনের কথা—কিংবদন্তি কোচের এই বাণী তখন থেকেই অনেক কোচের সমালোচনার ঢাল।

ফার্গুসনের কথাটা আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। মনে করিয়ে দিচ্ছেন বর্তমান বাংলাদেশ দলের কোচ জেমি ডে। চার বছর আগে স্বদেশি ইংলিশ কোচ অ্যান্ড্রু অর্ডের পর বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন জেমি। দায়িত্ব নেওয়ার পর চেষ্টা করেছেন ইংলিশ ঘরানার লম্বা পাস আর প্রতি–আক্রমণে শিষ্যদের অভ্যস্ত করা। বাংলাদেশের ফুটবলাররা তাতে খানিকটা অভ্যস্ত হয়েছে বটে, পুরোপুরি নয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর কোচরা জানেন, বাংলাদেশ দল প্রতি–আক্রমণে বেশ ভালো। নিজের রক্ষণকে জমাট রাখো, প্রতিপক্ষ ওপরে উঠে এলেই বল নিয়ে দ্রুত গতিতে অপর প্রান্তে ডিফেন্ডারকে ভড়কে দাও—এই হচ্ছে পাল্টা আক্রমণের নীতি।

কিন্তু যখন এই পাল্টা আক্রমণ করার মতো যোগ্য খেলোয়াড় কোচের হাতে না থাকে, তখন কী হবে? কী হবে, সেটা কাতারে সর্বশেষ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলা বাংলাদেশের তিন ম্যাচই প্রমাণ!

কাতারে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দল রেখে গেছে আক্রমণভাগের তিন ফুটবলারকে। মো. ইব্রাহিম ও মাহবুবুর রহমান সুফিল ছিলেন করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ। সাদ উদ্দিনের চোট। জেমি ডের কৌশলে যে কজন ফুটবলার সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করেন, এই তিন ফুটবলার ছিলেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। সাদ রক্ষণ আর উইং ধরে আক্রমণে দারুণ কার্যকর। সুফিল ছিলেন দলের সবচেয়ে গতিময় ফুটবলার। ইব্রাহিম উইঙ্গার হিসেবে পরীক্ষিত। ইব্রাহিম পরে নেগেটিভ হয়ে কাতারে গেলেও বাকি দুজনের অনুপস্থিতি ভীষণ উপলব্ধি করেছেন বাংলাদেশ কোচ।

ভোগাতে পারে এমন ফুটবলার বাংলাদেশ দলে নেই—বিষয়টি জানার পর আফগানিস্তান-ভারত যেন আরও বেশিই চেপে বসেছিল জামালদের ওপর। অতিরক্ষণাত্মক হওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তাই খোলা ছিল না তখন বাংলাদেশের।

আফগানিস্তান, ভারত ও ওমান—এই তিন দলের বিপক্ষে শুধু আফগানদের বিপক্ষেই বল দখলের হার বলার মতোই ছিল বাংলাদেশের। আফগানরা ৬৪ শতাংশ বল নিয়ন্ত্রণ করেছে, বিপরীতে বাংলাদেশের কাছে বল ছিল ৩৬ শতাংশ। পাসের পরিমাণ বেড়েছে ৪৮ মিনিটে গোল হজমের পর। দলের রুগ্‌ণ অবস্থা দেখা গেছে ভারত-ওমান ম্যাচে। দুই দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের বল নিয়ন্ত্রণের হার ছিল যথাক্রমে ২৬ ও ২৩ শতাংশ। অতিমাত্রায় রক্ষণাত্মক হতে গিয়ে বলটাও পায়ে রাখতে পারেননি বাংলাদেশে ফুটবলাররা। ম্যাচপ্রতি বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল ২৮ শতাংশ। গড়ে প্রতি ম্যাচে ১০টি করে কর্নার নিয়েছে প্রতিপক্ষ, বেড়েছে ট্যাকল-ফাউলের সংখ্যা। নামের পাশে যুক্ত হয়েছে কার্ড। তিন ম্যাচে ৯টি হলুদ কার্ড দেখেছেন জামাল-বিপলু আহমেদরা, ‘ই’ গ্রুপের পাঁচ দলের মধ্যে যেটা সর্বোচ্চ!

একটা দলের খেলা তৈরি হয় মাঝমাঠ থেকে। প্রায় প্রতি ম্যাচেই একজন করে মাঝমাঠের খেলোয়াড় হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে সোহেল রানা, দ্বিতীয় ম্যাচে জনি আর শেষ ম্যাচের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে। একটা দলের আক্রমণ-মাঝমাঠ বলে যখন কিছু থাকে না, তখন কোচের হাতে রক্ষণ ছাড়া আর কী বিকল্প থাকতে পারে!

ফার্গুসন আক্রমণ ও রক্ষণে যথেষ্ট বিকল্প থাকার পরও রক্ষণে মন দিয়েই লিগ জিতেছিলেন। আর জেমি ডে বাংলাদেশকে রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলাচ্ছেন কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে। অতিরক্ষণে অবশ্য খানিকটা লাভ হয়েছে। কম গোল খেয়েছে বাংলাদেশ। ভারত-আফগানদের বিপক্ষে দুই ড্র আর গোলের পার্থক্যে এশিয়ান কাপের তৃতীয় রাউন্ডের বাছাইপর্বে খেলতে পারছে বাংলাদেশ। ‘ভাঙাচোরা’ দল নিয়েও বাংলাদেশ তাই সুখবর পেয়েছে!

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত