রানা আব্বাস, ঢাকা
প্রশ্ন: চার মাস আগে বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ পড়েই কি ভালো করার জেদ চেপেছিল মনে?
মেহেদী হাসান মিরাজ: জেদ ঠিক না। আমি যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলাম না, তখন আমার সঙ্গে বিসিবি সভাপতির (নাজমুল হাসান পাপন) কথা হয়েছিল। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, দলের সঙ্গে যেতে চাও কি না। আমি তখন পরিষ্কার হতে চাইলাম, ১৫ জনের দলে আমাকে রাখা হচ্ছে কি না। আমাকে বলেছিলেন, ১৭ জনের দলে সদস্য হতে; দলের সঙ্গে থাকতে। ১৭ জনের সদস্য হয়ে যেতে চাইনি। মনে হয়েছে, ওটা আমার জন্য ক্ষতি হবে। এই যে পাঁচটা মাস সুযোগ পেয়েছি, এ সময় নিজের ফিটনেস, স্কিল নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেটারই ফল পেয়েছি।
প্রশ্ন: প্রস্তুতির এই সময়ে স্কিলে কোথায় বেশি উন্নতি করতে চেয়েছেন?
মিরাজ: প্রস্তুতির শুরুতে বোলিংয়ে খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম। সোহেল স্যার (সোহেল ইসলাম) বারবার আমাকে নিয়ে টেনশন করছিলেন। এরপর কাজ করেছি। পরে যখন ঠিক হলো, তিনি অনেক স্বস্তি পেলেন। বাবুল স্যারের (মিজানুর রহমান) সঙ্গে ট্রিগার মুভমেন্ট, ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছি। দুজনের সঙ্গে কাজ করার ফল পেয়েছি।
প্রশ্ন: ওয়ানডে ও টেস্টে আপনি নিয়মিত, তিন সংস্করণেই নিয়মিত হতে আপনার আসলে আর কী করণীয়?
মিরাজ: আমি তিন ফরম্যাটেই খেলতে চাই। আমি যখন টি-টোয়েন্টিতে বাদ পড়েছি, ওটা যৌক্তিক ছিল। আমি এই সংস্করণে ভালো খেলতে পারিনি। চার বছর আগে যখন ফিরে এলাম এবং ওই সময়ে যখন বাদ পড়লাম, বাদ পড়ার অবস্থায় ছিলাম না। ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচসেরা, এশিয়া কাপে ওপেন করানো হয়েছে, একটাতে ৩৮ রানের ইনিংস খেলেছিলাম, আরব আমিরাতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ ম্যাচসেরা হয়েছিলাম—সব মিলিয়ে যখন টি-টোয়েন্টিতে বাদ পড়ি, তখন আমি আসলে বাদ পড়ার পজিশনে ছিলাম না। এটা জানি না, কেন আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে বলেছিল যে ওয়ানডে ও টেস্টে বেশি মনোযোগ রাখতে বাদ পড়েছি।
প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ে আপনাকে নিয়ে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে এত দিন, আপনি খুব ইতিবাচক, সহজেই ‘না’ করেন না। এ কারণেই কি আপনাকে নিয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে?
মিরাজ: ঠিক বলেছেন। যেখানেই বলে, সেখানেই রাজি হয়ে যাই খেলতে। আমি সব সময় দলের জন্য খেলি। দলের জন্য অনেক বিসর্জন দেওয়ার চেষ্টা করি, নিজের ক্যারিয়ারও বিসর্জন দেওয়ার চেষ্টা করি। রাজি হচ্ছি শুধু দলের জন্যই। একটা পজিশনে যদি খেলা যায়, সেই পজিশন সম্পর্কে ভালো জানা-বোঝা যায়। আমি আটে ব্যাটিং করি লম্বা সময়। ওখানকার ভূমিকা সম্পর্কে আমি খুব ভালো বুঝি।
প্রশ্ন: আরেকটু ওপরে ব্যাটিং করার কথা অনেকবার বলেছেন। আপনার সবচেয়ে পছন্দের পজিশন আসলে কোনটি?
মিরাজ: যদি পাঁচ-ছয়ে ব্যাটিং করতে পারি, অনেক ভালো। এই মুহূর্তে এখানে ব্যাটিং করা কঠিন। এখানে প্রতিষ্ঠিত যারা, অনেক দিন ধরে ভালো খেলছে, দীর্ঘদিন দলকে সার্ভিস দিচ্ছে। ওখানে এখন ব্যাটিং করার দাবি করব না, করাটা অযৌক্তিক হবে। তবে যখন সুযোগ আসবে, ওখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে ভালো লাগবে।
প্রশ্ন: আট নম্বর পজিশন মানে বেশির ভাগ সময়ে ব্যাটিং করতে হয় চাপের মধ্যে। বেশির ভাগ ইনিংস মেরামত করার কাজ করতে হয়। আর যেদিন আপনার একটু নির্ভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ মেলে, তখন দলের ৩০০-৪০০ রান হয়ে যায়, দল তখন ইনিংস ঘোষণার কাছাকাছি এসে যায়। এটা ভেবে একটু দুর্ভাগা মনে হয় কি না—সাকিব আল হাসানের মতো আরেকটু ওপরে ব্যাটিং করতে পারলে হয়তো এত দিনে নিজেকে দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন?
মিরাজ: না। সবশেষ দুই-তিন বছর ভালো ব্যাটিং করার চেষ্টা করছি। আমি বোলিংয়ে মনোযোগী ছিলাম। দুর্ভাগা না, প্রথম দিকে নিজেকে ওভাবে প্রমাণ করতে পারিনি। এখন ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে ব্যাটিং।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সিরিজের আগে ভাবনাটা কী ছিল? ভেবেছিলেন, এভাবে দাপটের সঙ্গে সিরিজ জিতবেন?
মিরাজ: আমরা সিরিজ জিতব, এটা কখনো ভাবিনি, চিন্তা করিনি। তবে হ্যাঁ, চিন্তা করেছিলাম, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। আমরা পাকিস্তানে গিয়ে ভালো রান করতে পারি, উইকেট নিতে পারি, আমরা ওদের সঙ্গে ফাইট দিতে পারি। একটা রেজাল্ট তখনই আসে, যখন ফাইট দেবেন। আমরা যদি ফাইটই দিতে না পারি, তখন কোনো রেজাল্ট আসবে না। এই মানসিকতা আমাদের দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ছিল, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ফাইট দিতে চাই। এবং ফাইট দিতে দিতে একটা সময় কিন্তু আপনি জিতে যাবেন।
প্রশ্ন: এই সিরিজে দুটি বড় জুটির সঙ্গে আপনার নাম জড়িয়ে। মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে দলের অবস্থান ভালো ছিল। কিন্তু ২৬ রানে ৬ উইকেট—মানে খুব বিপর্যয়ের মধ্যে কোন বিষয়টি ইতিবাচকভাবে এগোতে সহায়তা করেছে?
মিরাজ: লিটন আর আমি যখন ব্যাটিং শুরু করেছিলাম, তখন অবশ্য চাপ কাজ করেছে। তবে আমরা ওই মুহূর্তকে উপভোগের চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি, একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে। মুহূর্তটা উপভোগ করতে, এই পরিস্থিতিতে কীভাবে একেকটা বল খেলা যায়, আমরা গল্প করেছি। ওকে বলছিলাম, এশিয়া কাপে (২০১৮ সালের ফাইনাল) মনে আছে, তুমি আর আমি ওপেন করেছিলাম। ওই পরিস্থিতিটা কী রকম ছিল। হালকা হতে বিভিন্ন দুষ্টুমি করছিলাম। কারণ, আমাদের চাপ কমানোর প্রয়োজন ছিল। যখন আমরা দুজন খেলাটা ধরতে পারলাম, তখন আমরা সিরিয়াসনেস বাড়িয়ে দিলাম এবং গেমের মধ্যে ঢুকে গেলাম—কীভাবে খেলব, কীভাবে বড় ইনিংস করব, গেমকে সাজাব ইত্যাদি।
প্রশ্ন: যখন ওদের ডমিনেট করছিলেন, পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
মিরাজ: পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি, এটা বিশাল ব্যাপার। বিশেষ করে টেস্টে। একটা জিতেছেন, হয়তো অনেকে মনে করবেন, এমনি হয়ে গেছে। দুটি জয়—এটা কোনো মজার বিষয় নয়। আপনি দেখেন, আমরা ৯ দিনই ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এ জন্যই জিতেছি। পাকিস্তানে যেটা ভালো লেগেছে, ওখানে প্রত্যেক মানুষ শ্রদ্ধা করেছে।
প্রশ্ন: কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তাঁকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মিরাজ: তিনি পরিকল্পনা খুব ভালো করেন। ক্রিকেটারদের সঙ্গে যখন কথা বলেন, ক্রিকেটীয় জ্ঞান খুবই ভালো। বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করেন। সবশেষ টেস্টের এক লাঞ্চের পরে বলেছিল, সায়েম আইয়ুব ব্যাটিং করছিল (দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে), আমি দুটি ফিল্ডার পেছনে নিয়েছিলাম। দুজন ফিল্ডার পেছনে থাকলে ব্যাটার ঝুঁকি নিয়ে মারতে পারবে। তিনি বললেন, তুমি মিড অনটা সামনে রেখে মিড অফটা হাফওয়েতে রাখলে আর অফ স্টাম্পের বাইরে বল করলে ও একটা ভুল করলে তোমার সুযোগ থাকবে উইকেট নেওয়ার। ওভাবে ফিল্ডিং সাজিয়ে বল করার চেষ্টা করেছি। তখনই ডাউন দ্য উইকেটে সে আউট হয়েছে। এই যে ছোট একটা পরিকল্পনা দিয়েছে, এগুলো তাঁর মধ্যে আছে।
প্রশ্ন: সামনে ভারত সফর, এবার সেখানেও দুর্দান্ত কিছু করতে কতটা আত্মবিশ্বাসী?
মিরাজ: শুরুটা ভালো হয়েছে, লড়াই করার মানসিকতা আছে। সে ধরনের বোলার, ব্যাটার আছে। বিশ্ব ক্রিকেটকে আমরা জানান দিয়েছি, ভালোভাবে আসছি। এটা শুরু মাত্র। ধরে রাখতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট লম্বা প্রক্রিয়া। প্রতিটি প্রজন্মকে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে হবে। ভারতের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট সিরিজে (২০২২) ওদের প্রায় হারিয়েই দিয়েছিলাম। ওরাও জানে, আমাদের সামর্থ্য আছে, আমরা ওদের যেকোনো সময় ধরতে পারি। আমরা ভালো করব ইনশা আল্লাহ।
প্রশ্ন: সাকিব আল হাসানের পর দেশের আরেকজন সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার পথে মিরাজ কতটা এগোলেন?
মিরাজ: আমাকে অলরাউন্ডার হতে গেলে আরও অনেক কষ্ট করতে হবে। অনেক ভালো করতে হবে, ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই। আমি ভালো করার চেষ্টা করছি। যাতে বাংলাদেশ উপকৃত হয়। সাকিব ভাইকে দেখে আমরা সবাই অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি বাংলাদেশ দলকে অনেক দিন ধরে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। যখন মানুষ বলে, আমি অলরাউন্ডার হচ্ছি, শুনে খুব ভালো লাগে। এখন যেহেতু ভালো ব্যাটিংটা করছি; আরেকটু ওপরে দিকে নামতে পারলে আমার জন্য আরও ভালো হবে।
প্রশ্ন: ক্রিকেটের বাইরে যদি আসি, গত কিছুদিনে দেশে বড় একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ছোঁয়া বিসিবিতেও, নতুন সভাপতি এসেছেন। তাদের কাছে ক্রিকেটার হিসেবে আপনার চাওয়া কী?
মিরাজ: টেস্ট ক্রিকেট আমরা ভালো খেলতে পারি না, এত দিন এটাই বলা হতো। কিন্তু এখন সময় টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের আরও এগিয়ে নেওয়ার। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো আরও ভালো করা; ভালো ভালো উইকেটে আরও বেশি বেশি ম্যাচ খেলা; দেশের বাইরে বেশি ম্যাচ খেলা; ‘এ’ দল, এইচপি, বয়সভিত্তিক দলকেও বাইরে খেলার সুযোগ করে দেওয়া। আগে যে বাইরে খেলার সুযোগ ছিল না, তা নয়, কিন্তু এটা আরও বেশি করা দরকার। যত বেশি এটা করা যাবে, ততই এগিয়ে যাবে দেশের ক্রিকেট। ভালোর তো আর শেষ নেই।
প্রশ্ন: চার মাস আগে বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ পড়েই কি ভালো করার জেদ চেপেছিল মনে?
মেহেদী হাসান মিরাজ: জেদ ঠিক না। আমি যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলাম না, তখন আমার সঙ্গে বিসিবি সভাপতির (নাজমুল হাসান পাপন) কথা হয়েছিল। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, দলের সঙ্গে যেতে চাও কি না। আমি তখন পরিষ্কার হতে চাইলাম, ১৫ জনের দলে আমাকে রাখা হচ্ছে কি না। আমাকে বলেছিলেন, ১৭ জনের দলে সদস্য হতে; দলের সঙ্গে থাকতে। ১৭ জনের সদস্য হয়ে যেতে চাইনি। মনে হয়েছে, ওটা আমার জন্য ক্ষতি হবে। এই যে পাঁচটা মাস সুযোগ পেয়েছি, এ সময় নিজের ফিটনেস, স্কিল নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেটারই ফল পেয়েছি।
প্রশ্ন: প্রস্তুতির এই সময়ে স্কিলে কোথায় বেশি উন্নতি করতে চেয়েছেন?
মিরাজ: প্রস্তুতির শুরুতে বোলিংয়ে খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম। সোহেল স্যার (সোহেল ইসলাম) বারবার আমাকে নিয়ে টেনশন করছিলেন। এরপর কাজ করেছি। পরে যখন ঠিক হলো, তিনি অনেক স্বস্তি পেলেন। বাবুল স্যারের (মিজানুর রহমান) সঙ্গে ট্রিগার মুভমেন্ট, ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছি। দুজনের সঙ্গে কাজ করার ফল পেয়েছি।
প্রশ্ন: ওয়ানডে ও টেস্টে আপনি নিয়মিত, তিন সংস্করণেই নিয়মিত হতে আপনার আসলে আর কী করণীয়?
মিরাজ: আমি তিন ফরম্যাটেই খেলতে চাই। আমি যখন টি-টোয়েন্টিতে বাদ পড়েছি, ওটা যৌক্তিক ছিল। আমি এই সংস্করণে ভালো খেলতে পারিনি। চার বছর আগে যখন ফিরে এলাম এবং ওই সময়ে যখন বাদ পড়লাম, বাদ পড়ার অবস্থায় ছিলাম না। ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচসেরা, এশিয়া কাপে ওপেন করানো হয়েছে, একটাতে ৩৮ রানের ইনিংস খেলেছিলাম, আরব আমিরাতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ ম্যাচসেরা হয়েছিলাম—সব মিলিয়ে যখন টি-টোয়েন্টিতে বাদ পড়ি, তখন আমি আসলে বাদ পড়ার পজিশনে ছিলাম না। এটা জানি না, কেন আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে বলেছিল যে ওয়ানডে ও টেস্টে বেশি মনোযোগ রাখতে বাদ পড়েছি।
প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ে আপনাকে নিয়ে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে এত দিন, আপনি খুব ইতিবাচক, সহজেই ‘না’ করেন না। এ কারণেই কি আপনাকে নিয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে?
মিরাজ: ঠিক বলেছেন। যেখানেই বলে, সেখানেই রাজি হয়ে যাই খেলতে। আমি সব সময় দলের জন্য খেলি। দলের জন্য অনেক বিসর্জন দেওয়ার চেষ্টা করি, নিজের ক্যারিয়ারও বিসর্জন দেওয়ার চেষ্টা করি। রাজি হচ্ছি শুধু দলের জন্যই। একটা পজিশনে যদি খেলা যায়, সেই পজিশন সম্পর্কে ভালো জানা-বোঝা যায়। আমি আটে ব্যাটিং করি লম্বা সময়। ওখানকার ভূমিকা সম্পর্কে আমি খুব ভালো বুঝি।
প্রশ্ন: আরেকটু ওপরে ব্যাটিং করার কথা অনেকবার বলেছেন। আপনার সবচেয়ে পছন্দের পজিশন আসলে কোনটি?
মিরাজ: যদি পাঁচ-ছয়ে ব্যাটিং করতে পারি, অনেক ভালো। এই মুহূর্তে এখানে ব্যাটিং করা কঠিন। এখানে প্রতিষ্ঠিত যারা, অনেক দিন ধরে ভালো খেলছে, দীর্ঘদিন দলকে সার্ভিস দিচ্ছে। ওখানে এখন ব্যাটিং করার দাবি করব না, করাটা অযৌক্তিক হবে। তবে যখন সুযোগ আসবে, ওখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে ভালো লাগবে।
প্রশ্ন: আট নম্বর পজিশন মানে বেশির ভাগ সময়ে ব্যাটিং করতে হয় চাপের মধ্যে। বেশির ভাগ ইনিংস মেরামত করার কাজ করতে হয়। আর যেদিন আপনার একটু নির্ভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ মেলে, তখন দলের ৩০০-৪০০ রান হয়ে যায়, দল তখন ইনিংস ঘোষণার কাছাকাছি এসে যায়। এটা ভেবে একটু দুর্ভাগা মনে হয় কি না—সাকিব আল হাসানের মতো আরেকটু ওপরে ব্যাটিং করতে পারলে হয়তো এত দিনে নিজেকে দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন?
মিরাজ: না। সবশেষ দুই-তিন বছর ভালো ব্যাটিং করার চেষ্টা করছি। আমি বোলিংয়ে মনোযোগী ছিলাম। দুর্ভাগা না, প্রথম দিকে নিজেকে ওভাবে প্রমাণ করতে পারিনি। এখন ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে ব্যাটিং।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সিরিজের আগে ভাবনাটা কী ছিল? ভেবেছিলেন, এভাবে দাপটের সঙ্গে সিরিজ জিতবেন?
মিরাজ: আমরা সিরিজ জিতব, এটা কখনো ভাবিনি, চিন্তা করিনি। তবে হ্যাঁ, চিন্তা করেছিলাম, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। আমরা পাকিস্তানে গিয়ে ভালো রান করতে পারি, উইকেট নিতে পারি, আমরা ওদের সঙ্গে ফাইট দিতে পারি। একটা রেজাল্ট তখনই আসে, যখন ফাইট দেবেন। আমরা যদি ফাইটই দিতে না পারি, তখন কোনো রেজাল্ট আসবে না। এই মানসিকতা আমাদের দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ছিল, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ফাইট দিতে চাই। এবং ফাইট দিতে দিতে একটা সময় কিন্তু আপনি জিতে যাবেন।
প্রশ্ন: এই সিরিজে দুটি বড় জুটির সঙ্গে আপনার নাম জড়িয়ে। মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে দলের অবস্থান ভালো ছিল। কিন্তু ২৬ রানে ৬ উইকেট—মানে খুব বিপর্যয়ের মধ্যে কোন বিষয়টি ইতিবাচকভাবে এগোতে সহায়তা করেছে?
মিরাজ: লিটন আর আমি যখন ব্যাটিং শুরু করেছিলাম, তখন অবশ্য চাপ কাজ করেছে। তবে আমরা ওই মুহূর্তকে উপভোগের চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি, একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে। মুহূর্তটা উপভোগ করতে, এই পরিস্থিতিতে কীভাবে একেকটা বল খেলা যায়, আমরা গল্প করেছি। ওকে বলছিলাম, এশিয়া কাপে (২০১৮ সালের ফাইনাল) মনে আছে, তুমি আর আমি ওপেন করেছিলাম। ওই পরিস্থিতিটা কী রকম ছিল। হালকা হতে বিভিন্ন দুষ্টুমি করছিলাম। কারণ, আমাদের চাপ কমানোর প্রয়োজন ছিল। যখন আমরা দুজন খেলাটা ধরতে পারলাম, তখন আমরা সিরিয়াসনেস বাড়িয়ে দিলাম এবং গেমের মধ্যে ঢুকে গেলাম—কীভাবে খেলব, কীভাবে বড় ইনিংস করব, গেমকে সাজাব ইত্যাদি।
প্রশ্ন: যখন ওদের ডমিনেট করছিলেন, পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
মিরাজ: পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি, এটা বিশাল ব্যাপার। বিশেষ করে টেস্টে। একটা জিতেছেন, হয়তো অনেকে মনে করবেন, এমনি হয়ে গেছে। দুটি জয়—এটা কোনো মজার বিষয় নয়। আপনি দেখেন, আমরা ৯ দিনই ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এ জন্যই জিতেছি। পাকিস্তানে যেটা ভালো লেগেছে, ওখানে প্রত্যেক মানুষ শ্রদ্ধা করেছে।
প্রশ্ন: কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তাঁকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মিরাজ: তিনি পরিকল্পনা খুব ভালো করেন। ক্রিকেটারদের সঙ্গে যখন কথা বলেন, ক্রিকেটীয় জ্ঞান খুবই ভালো। বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করেন। সবশেষ টেস্টের এক লাঞ্চের পরে বলেছিল, সায়েম আইয়ুব ব্যাটিং করছিল (দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে), আমি দুটি ফিল্ডার পেছনে নিয়েছিলাম। দুজন ফিল্ডার পেছনে থাকলে ব্যাটার ঝুঁকি নিয়ে মারতে পারবে। তিনি বললেন, তুমি মিড অনটা সামনে রেখে মিড অফটা হাফওয়েতে রাখলে আর অফ স্টাম্পের বাইরে বল করলে ও একটা ভুল করলে তোমার সুযোগ থাকবে উইকেট নেওয়ার। ওভাবে ফিল্ডিং সাজিয়ে বল করার চেষ্টা করেছি। তখনই ডাউন দ্য উইকেটে সে আউট হয়েছে। এই যে ছোট একটা পরিকল্পনা দিয়েছে, এগুলো তাঁর মধ্যে আছে।
প্রশ্ন: সামনে ভারত সফর, এবার সেখানেও দুর্দান্ত কিছু করতে কতটা আত্মবিশ্বাসী?
মিরাজ: শুরুটা ভালো হয়েছে, লড়াই করার মানসিকতা আছে। সে ধরনের বোলার, ব্যাটার আছে। বিশ্ব ক্রিকেটকে আমরা জানান দিয়েছি, ভালোভাবে আসছি। এটা শুরু মাত্র। ধরে রাখতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট লম্বা প্রক্রিয়া। প্রতিটি প্রজন্মকে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে হবে। ভারতের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট সিরিজে (২০২২) ওদের প্রায় হারিয়েই দিয়েছিলাম। ওরাও জানে, আমাদের সামর্থ্য আছে, আমরা ওদের যেকোনো সময় ধরতে পারি। আমরা ভালো করব ইনশা আল্লাহ।
প্রশ্ন: সাকিব আল হাসানের পর দেশের আরেকজন সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার পথে মিরাজ কতটা এগোলেন?
মিরাজ: আমাকে অলরাউন্ডার হতে গেলে আরও অনেক কষ্ট করতে হবে। অনেক ভালো করতে হবে, ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই। আমি ভালো করার চেষ্টা করছি। যাতে বাংলাদেশ উপকৃত হয়। সাকিব ভাইকে দেখে আমরা সবাই অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি বাংলাদেশ দলকে অনেক দিন ধরে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। যখন মানুষ বলে, আমি অলরাউন্ডার হচ্ছি, শুনে খুব ভালো লাগে। এখন যেহেতু ভালো ব্যাটিংটা করছি; আরেকটু ওপরে দিকে নামতে পারলে আমার জন্য আরও ভালো হবে।
প্রশ্ন: ক্রিকেটের বাইরে যদি আসি, গত কিছুদিনে দেশে বড় একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ছোঁয়া বিসিবিতেও, নতুন সভাপতি এসেছেন। তাদের কাছে ক্রিকেটার হিসেবে আপনার চাওয়া কী?
মিরাজ: টেস্ট ক্রিকেট আমরা ভালো খেলতে পারি না, এত দিন এটাই বলা হতো। কিন্তু এখন সময় টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের আরও এগিয়ে নেওয়ার। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো আরও ভালো করা; ভালো ভালো উইকেটে আরও বেশি বেশি ম্যাচ খেলা; দেশের বাইরে বেশি ম্যাচ খেলা; ‘এ’ দল, এইচপি, বয়সভিত্তিক দলকেও বাইরে খেলার সুযোগ করে দেওয়া। আগে যে বাইরে খেলার সুযোগ ছিল না, তা নয়, কিন্তু এটা আরও বেশি করা দরকার। যত বেশি এটা করা যাবে, ততই এগিয়ে যাবে দেশের ক্রিকেট। ভালোর তো আর শেষ নেই।
সিনেমা, নাটক-কোনো কিছুরই তো কমতি ছিল না আজ আর্জেন্টিনা-প্যারাগুয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে। দেল চাকো স্টেডিয়ামে ব্রাজিলের রেফারি অ্যান্ডারসন দারাঙ্কোর একের পর এক কাণ্ডে ক্ষুব্ধ আর্জেন্টিনা ফুটবল দল। রেফারির সঙ্গে এক চোট হয়েই গেছে মেসির। এমনকি আঙুল উঁচিয়ে কথাও বলেছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী ফুটবলার।
১৫ মিনিট আগেভুলে যাওয়ার মতো একটি দিনই কাটিয়েছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তাও বাজে দিনটা এল ব্রাজিলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের সময়ই। তাঁর সুযোগ মিসের মহড়ার দিনে ব্রাজিল পারল না জিততে। হতাশা ঝরেছে ব্রাজিল কোচ দরিভাল জুনিয়রের কণ্ঠে।
১ ঘণ্টা আগেবিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ হলেও দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলকে একই টুর্নামেন্টে হারানো তো সহজ কথা নয়। প্যারাগুয়ে এবার সেই কঠিন কাজটিই করে দেখাল। ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সেপ্টেম্বরে প্যারাগুয়ে হারিয়েছিল ব্রাজিলকে। দুই মাস পর আজ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকেও হারিয়েছে প্যারাগুয়ে।
২ ঘণ্টা আগেএই শতাব্দির গোড়ার দিকের গল্প। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে গতিময় এক ফাস্ট বোলারকে চোখে পড়ল রাকিব হায়দার পাভেলের। সেই বোলার ব্যাটেও ঝড় তুলতে পারেন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই পাভেল ওই অলরাউন্ডারকে নিয়ে এলেন তাঁদের প্রথম বিভাগ ক্রিকেটের আজাদ স্পোর্টিংয়ে।
১৪ ঘণ্টা আগে