মানুষের মস্তিষ্কের টিস্যু দিয়ে তৈরি হলো ‘ব্রেইনোওয়্যার’ বায়োকম্পিউটার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ২৭

মানব মস্তিষ্কের মতো টিস্যুর সঙ্গে ইলেকট্রনিক হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে একধরনের কম্পিউটার তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই কম্পিউটারটি স্পিচ রিকগনিশন বা ভাষা শনাক্তকরণ এবং বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মতো কাজ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আজকের এই ছোট্ট আবিষ্কার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ো-কম্পিউটার তৈরির পথে বিশাল এক অগ্রগতি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচার ইলেকট্রনিকসে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এই আবিষ্কার নিউরোমরফিক কম্পিউটিংয়ের অগ্রগতির ক্ষেত্রে অনেক বেশি অবদান রাখবে। সাধারণত নিউরোমরফিক কম্পিউটিংয়ের গঠন অনেকটাই মানুষের মস্তিষ্কের নিউরনের মতো। অর্থাৎ এই কম্পিউটার মানুষের মস্তিষ্কে নিউরন যেভাবে কাজ করে, ঠিক সেভাবেই কাজ করার চেষ্টা করে। তবে এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম নিউরন ব্যবহার করা হয়।

এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীদের দাবি, এই আবিষ্কারের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার সম্ভব হলে সিলিকনভিত্তিক বর্তমান কম্পিউটারের তুলনায় নিউরোমরফিক কম্পিউটার আরও দ্রুতগতির ও শক্তি সাশ্রয়ী হয়ে উঠবে। পাশাপাশি উদীয়মান এই ক্ষেত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এগিয়ে নেবে, চিকিৎসাবিজ্ঞানকে সহজ করবে এবং গবেষণার কাজকেও আগের তুলনায় সহজ করে তুলবে।

গবেষকেরা নেচার ইলেকট্রনিকসে প্রকাশিত ওই জার্নালে লিখেছেন, ‘মস্তিষ্কের কার্যক্রম থেকে অনুপ্রাণিত কম্পিউটিং হার্ডওয়্যারের লক্ষ্য হলো—মস্তিষ্কের গঠন ও কাজের নীতিমালা অনুকরণ করা। এটিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বর্তমান সীমাবদ্ধতাগুলো মোকাবিলায় ব্যবহার করা যেতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটন, ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি ও সিনসিনাটি ইউনিভার্সিটি এবং সিনসিনাটি চিলড্রেনস হসপিটাল মেডিকেল সেন্টারের গবেষকেরা মানুষের স্টেম সেল থেকে উদ্ভূত একটি ত্রিমাত্রিক ব্রেইন অর্গানয়েড বা মস্তিষ্ক টিস্যুর অনুরূপ একটি টিস্যুর সাহায্যে ‘ব্রেইনোওয়্যার’ নামে একটি সিস্টেম তৈরি করেছেন।

পরে বিজ্ঞানীরা ওই ব্রেইনোওয়্যারে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের সঙ্গে যুক্ত করে তাতে বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা পাঠান। পরে এর প্রতিক্রিয়া যাচাই করে বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, নতুন এই সিস্টেম জাপানি স্বরধ্বনিকে চিনতে পেরেছে এবং একটি গাণিতিক মানচিত্রও শনাক্ত করেছে।

এই ব্রেইনোওয়্যারের ভাষাগত দক্ষতা যাচাই করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা সেটিকে আটজন জাপানি পুরুষের কণ্ঠের ২৪০টি অডিও ক্লিপ দেন। এই ব্রেইনোওয়্যারের অ্যালগরিদম নিয়ে কাজ করার পর বিজ্ঞানীরা দেখতে পান ভাষা ও কণ্ঠ আলাদা করার ক্ষেত্রে প্রথমে ৫১ শতাংশ নির্ভুলতা দেখায়। কিন্তু পরে আরেক দফা অ্যালগরিদম নিয়ে কাজ করার পর সেটি ৭৮ শতাংশ পর্যন্ত নির্ভুল উত্তর দিয়েছিল। 

ব্রেইনোওয়্যারটির গাণিতিক দক্ষতা যাচাই করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা এতে একটি হেনন ম্যাপ সম্পর্কে অনুমান করার কাজ দেন। প্রাথমিকভাবে ব্রেইনোওয়্যারটি বর্তমানে বিদ্যমান কম্পিউটারের চেয়ে কিছুটা কম নির্ভুল উত্তর দেয়। কিন্তু ট্রেইনিং দেওয়ার পর এর নির্ভুলতা ৯০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী গত ফেব্রুয়ারিতে ‘অর্গানয়েড ইন্টেলিজেন্স’ তৈরির একটি রোডম্যাপ সামনে আনেন। সেটির ওপর ভিত্তি করেই এই নতুন ব্রেইনোওয়্যার তৈরি করা হয়। তবে এটিই চূড়ান্ত অর্জন নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে আরও কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ-পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত