প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম, ঢাকা
দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে ঘুম। ঘুমের সময় মানুষের শরীর সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকে। সুস্থ মানুষের ঠিক কতক্ষণ ঘুমের দরকার—এ নিয়ে চিকিৎসকেরা একটা ধারণা দেন। তবে একেবারে না ঘুমিয়ে একটা মানুষ কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে, সেটি বহুদিন ধরেই মানুষের আগ্রহের বিষয় হয়ে আছে।
এমন আগ্রহ থেকেই ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৭ বছর বয়সী স্কুলপড়ুয়া রেন্ডি গার্ডনার একটানা ১১ দিন ও ২৫ মিনিট না ঘুমিয়ে ছিল। স্কুলের বিজ্ঞান মেলার এক প্রকল্পের জন্যই সে এটি করেছিল। তবে এই রেকর্ড ভেঙে দেন রবার্ট ম্যাকডোনাল্ড। তিনি ১৯৮৬ সালে টানা ১৮ দিন ও ২২ ঘণ্টা জেগে ছিলেন। তবে ম্যাকডোনাল্ডকে গার্ডনারের মতো কোনো চিকিৎসক বা অন্য কেউ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি।
১৯৭৭ সাল থেকে এই ধরনের বিষয় তালিকাভুক্ত করা বাদ দেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। কারণ, বেশি দিন না ঘুমিয়ে থাকলে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্যে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে কম ঘুমান, তারা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়—তা জানা থাকা দরকার।
মানসিক ও শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সঠিকভাবে চালু রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) মতে, অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন—ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, স্থূলতা ও হতাশা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বয়সভেদে মানুষের ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। তবে অনেকে নিয়মিত এতক্ষণ ঘুমান না। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়াশোনা করে। এতে কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। এ কারণে পরীক্ষার হলে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের স্লিপ মেডিসিনের ফেলো ড. ওরেন কোহেন বলেন, না ঘুমানোর ব্যাপারটার পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। কারণ, বেশিক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকলে সেই ব্যক্তি জেগে আছেন নাকি ঘুমিয়ে আছেন—তা বোঝা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত না ঘুমিয়ে থাকলে মস্তিষ্ক ততক্ষণের সংকেত পাঠাতে থাকে যে ব্যক্তিটি ঘুম ও জেগে থাকার মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছেন। যদিও দেখলে মনে হয়, তিনি জেগে আছেন।
এমন অবস্থাকে স্লিপ ইনট্রাকশন বা মাইক্রোস্লিপ বলা হয়। যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকে, তাদের মস্তিষ্ক অনিচ্ছাকৃত অস্বাভাবিক ঘুমের মধ্যে চলে যায়। ফলে মানুষ কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। এমনকি হ্যালুসিনেশন বা মতিভ্রম হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ ডিসঅর্ডার সেন্টারের চিকিৎসক অ্যালন আভিডান বলেন, ‘আমি কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘুমাইনি—কথাটি বাড়িয়ে বলা হয়! কারণ, এটি একটি অসম্ভব ঘটনা। দীর্ঘক্ষণ না ঘুমালে জেগে আছি মনে হলেও মস্তিষ্ক অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘুমের মধ্যে চলে যায়।’
ড. কোহেন বলেন, এই ধরনের মাইক্রোস্লিপ ছাড়া কেউ ২৪ ঘণ্টার বেশি জেগে থাকতে পারে না।
অ্যালন আভিডান বলেন, মানুষ আসলেই না ঘুমিয়ে কতক্ষণ থাকতে পারে এবং এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। কারণ, দীর্ঘ সময় না ঘুমিয়ে থাকলে স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই মানুষের ওপর এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা অনৈতিক। এটি একধরনের শারীরিক নির্যাতন।
অ্যালন আভিডান আরও বলেন, যদিও না ঘুমিয়ে মানুষ কত দিন থাকতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা করা ঠিক না, তবে এমন কিছু মানুষের তথ্য তাঁর কাছে রয়েছে, যারা ঘুমাতে পারে না। এটি একটি বংশগত বিরল রোগ। এটিকে ‘ফ্যাটাল ফ্যামিলিয়াল ইনসমনিয়া’ (এফএফআই) বলা হয়। জেনেটিক মিউটেশনের (জিন পরিব্যক্তি) ফলে এসব রোগীর মস্তিষ্কে একধরনের অস্বাভাবিক প্রোটিন জমা হয়। ফলে তাদের ঘুমে কমে যায় এবং স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। অস্বাভাবিক প্রোটিনগুলো মস্তিষ্কের কোষগুলোর ক্ষতি করে। ফলে এই রোগে আক্রান্ত হলে ১৮ মাসের মধ্যেই বেশির ভাগ রোগী মারা যায়।
১৯৮৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ইঁদুর একটানা ১১ থেকে ৩২ দিন পর্যন্ত না ঘুমিয়ে টিকে থাকতে পারে। তবে একপর্যায়ে এদের মৃত্যু হয়।
২০১৯ সালে ঘুম নিয়ে মানুষের ওপর একটি গবেষণা করা হয়। নেচার অ্যান্ড সায়েন্স অব স্লিপ ম্যাগাজিনে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। গবেষণাপত্রে বলা হয়, ১৬ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকার পরও অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক ও প্রাণবন্ত দেখা গেছে। তবে ১৬ ঘণ্টার পর তাদের মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তাদের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে।
২০০০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, মানুষ ২৪ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকলে রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষ হাত ও চোখের সমন্বয় করতে পারে না। কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নেয়। এ ছাড়া কথাবার্তা জড়িয়ে যায়, মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। আর কোনো বিষয় নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তও নিতে পারে না। এত দীর্ঘ সময় নির্ঘুম কাটানোর ফলে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, ৩৬ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকলে মানুষের রক্তে প্রদাহজনিত উপাদান দেখা যায়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং বিপাকক্রিয়ার গতি ধীর হয়।
একটানা ৭২ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকলে কী হয়—তা নিয়ে খুব অল্পসংখ্যক গবেষণা রয়েছে। এতক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকলে মানুষ উদ্বিগ্ন, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে ও মতিভ্রম হতে পারে।
২০২১ সালের আরেক গবেষণাপত্রে বলা হয়, ২৬ ঘণ্টা টানা কাজ করার পর ইসরায়েলি আবাসিক সার্জনদের মধ্যে বেশি আবেগ ও চিন্তায় ধীর গতি দেখা গেছে। কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও দেখা যায়।
কর্মক্ষেত্রে যাঁরা পরিবর্তনশীল শিফটে কাজ করেন, তাঁদের ঘুম পর্যাপ্ত হয় না। কারণ, তাঁরা সব সময় একই সময়ে ঘুমাতে যেতে পারেন না এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা দিনের আলো থাকার সময় ঘুমায়। এতে তাঁদের প্রাকৃতিক ঘুমের চক্র বিঘ্নিত হয়। তাঁদের ঘুমও অগভীর হয়। এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
এ ছাড়া দু-এক দিন কম ঘুমিয়ে পরে সেটি পুষিয়ে নেওয়ার ধারণাও সঠিক নয়। অ্যালন আভিডন বলেন, এক দিনের ঘুমের অভাব আরেক দিন পুষিয়ে নেওয়া যায় না। যারা ঘুম ছাড়া থাকে, তাদের ঘুমের একটি ঋণ তৈরি হয়। প্রতি এক ঘণ্টা কম ঘুম পুষিয়ে নিতে চাইলে পুরো আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়।
ড. কোহেন বলেন, অপর্যাপ্ত ঘুম অন্যান্য বিষয়েও প্রভাব ফেলে। এর ফলে মানুষের মনোযোগ বিঘ্নিত হতে পারে। যা মানুষ সাধারণত লক্ষ করতে পারে না। যেমন—অ্যালকোহলের প্রভাবে কেউ মনে করতে পারেন যে গাড়ি চালাতে পারবেন। সে রকম কেউ অল্প ঘুমালেও স্বাভাবিক রয়েছেন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে তাঁরা কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স
দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে ঘুম। ঘুমের সময় মানুষের শরীর সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকে। সুস্থ মানুষের ঠিক কতক্ষণ ঘুমের দরকার—এ নিয়ে চিকিৎসকেরা একটা ধারণা দেন। তবে একেবারে না ঘুমিয়ে একটা মানুষ কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে, সেটি বহুদিন ধরেই মানুষের আগ্রহের বিষয় হয়ে আছে।
এমন আগ্রহ থেকেই ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৭ বছর বয়সী স্কুলপড়ুয়া রেন্ডি গার্ডনার একটানা ১১ দিন ও ২৫ মিনিট না ঘুমিয়ে ছিল। স্কুলের বিজ্ঞান মেলার এক প্রকল্পের জন্যই সে এটি করেছিল। তবে এই রেকর্ড ভেঙে দেন রবার্ট ম্যাকডোনাল্ড। তিনি ১৯৮৬ সালে টানা ১৮ দিন ও ২২ ঘণ্টা জেগে ছিলেন। তবে ম্যাকডোনাল্ডকে গার্ডনারের মতো কোনো চিকিৎসক বা অন্য কেউ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি।
১৯৭৭ সাল থেকে এই ধরনের বিষয় তালিকাভুক্ত করা বাদ দেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। কারণ, বেশি দিন না ঘুমিয়ে থাকলে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্যে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে কম ঘুমান, তারা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়—তা জানা থাকা দরকার।
মানসিক ও শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সঠিকভাবে চালু রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) মতে, অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন—ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, স্থূলতা ও হতাশা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বয়সভেদে মানুষের ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। তবে অনেকে নিয়মিত এতক্ষণ ঘুমান না। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়াশোনা করে। এতে কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। এ কারণে পরীক্ষার হলে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের স্লিপ মেডিসিনের ফেলো ড. ওরেন কোহেন বলেন, না ঘুমানোর ব্যাপারটার পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। কারণ, বেশিক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকলে সেই ব্যক্তি জেগে আছেন নাকি ঘুমিয়ে আছেন—তা বোঝা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত না ঘুমিয়ে থাকলে মস্তিষ্ক ততক্ষণের সংকেত পাঠাতে থাকে যে ব্যক্তিটি ঘুম ও জেগে থাকার মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছেন। যদিও দেখলে মনে হয়, তিনি জেগে আছেন।
এমন অবস্থাকে স্লিপ ইনট্রাকশন বা মাইক্রোস্লিপ বলা হয়। যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকে, তাদের মস্তিষ্ক অনিচ্ছাকৃত অস্বাভাবিক ঘুমের মধ্যে চলে যায়। ফলে মানুষ কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। এমনকি হ্যালুসিনেশন বা মতিভ্রম হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ ডিসঅর্ডার সেন্টারের চিকিৎসক অ্যালন আভিডান বলেন, ‘আমি কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘুমাইনি—কথাটি বাড়িয়ে বলা হয়! কারণ, এটি একটি অসম্ভব ঘটনা। দীর্ঘক্ষণ না ঘুমালে জেগে আছি মনে হলেও মস্তিষ্ক অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘুমের মধ্যে চলে যায়।’
ড. কোহেন বলেন, এই ধরনের মাইক্রোস্লিপ ছাড়া কেউ ২৪ ঘণ্টার বেশি জেগে থাকতে পারে না।
অ্যালন আভিডান বলেন, মানুষ আসলেই না ঘুমিয়ে কতক্ষণ থাকতে পারে এবং এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। কারণ, দীর্ঘ সময় না ঘুমিয়ে থাকলে স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই মানুষের ওপর এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা অনৈতিক। এটি একধরনের শারীরিক নির্যাতন।
অ্যালন আভিডান আরও বলেন, যদিও না ঘুমিয়ে মানুষ কত দিন থাকতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা করা ঠিক না, তবে এমন কিছু মানুষের তথ্য তাঁর কাছে রয়েছে, যারা ঘুমাতে পারে না। এটি একটি বংশগত বিরল রোগ। এটিকে ‘ফ্যাটাল ফ্যামিলিয়াল ইনসমনিয়া’ (এফএফআই) বলা হয়। জেনেটিক মিউটেশনের (জিন পরিব্যক্তি) ফলে এসব রোগীর মস্তিষ্কে একধরনের অস্বাভাবিক প্রোটিন জমা হয়। ফলে তাদের ঘুমে কমে যায় এবং স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। অস্বাভাবিক প্রোটিনগুলো মস্তিষ্কের কোষগুলোর ক্ষতি করে। ফলে এই রোগে আক্রান্ত হলে ১৮ মাসের মধ্যেই বেশির ভাগ রোগী মারা যায়।
১৯৮৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ইঁদুর একটানা ১১ থেকে ৩২ দিন পর্যন্ত না ঘুমিয়ে টিকে থাকতে পারে। তবে একপর্যায়ে এদের মৃত্যু হয়।
২০১৯ সালে ঘুম নিয়ে মানুষের ওপর একটি গবেষণা করা হয়। নেচার অ্যান্ড সায়েন্স অব স্লিপ ম্যাগাজিনে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। গবেষণাপত্রে বলা হয়, ১৬ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকার পরও অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক ও প্রাণবন্ত দেখা গেছে। তবে ১৬ ঘণ্টার পর তাদের মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তাদের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে।
২০০০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, মানুষ ২৪ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকলে রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষ হাত ও চোখের সমন্বয় করতে পারে না। কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নেয়। এ ছাড়া কথাবার্তা জড়িয়ে যায়, মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। আর কোনো বিষয় নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তও নিতে পারে না। এত দীর্ঘ সময় নির্ঘুম কাটানোর ফলে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, ৩৬ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকলে মানুষের রক্তে প্রদাহজনিত উপাদান দেখা যায়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং বিপাকক্রিয়ার গতি ধীর হয়।
একটানা ৭২ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকলে কী হয়—তা নিয়ে খুব অল্পসংখ্যক গবেষণা রয়েছে। এতক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকলে মানুষ উদ্বিগ্ন, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে ও মতিভ্রম হতে পারে।
২০২১ সালের আরেক গবেষণাপত্রে বলা হয়, ২৬ ঘণ্টা টানা কাজ করার পর ইসরায়েলি আবাসিক সার্জনদের মধ্যে বেশি আবেগ ও চিন্তায় ধীর গতি দেখা গেছে। কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও দেখা যায়।
কর্মক্ষেত্রে যাঁরা পরিবর্তনশীল শিফটে কাজ করেন, তাঁদের ঘুম পর্যাপ্ত হয় না। কারণ, তাঁরা সব সময় একই সময়ে ঘুমাতে যেতে পারেন না এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা দিনের আলো থাকার সময় ঘুমায়। এতে তাঁদের প্রাকৃতিক ঘুমের চক্র বিঘ্নিত হয়। তাঁদের ঘুমও অগভীর হয়। এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
এ ছাড়া দু-এক দিন কম ঘুমিয়ে পরে সেটি পুষিয়ে নেওয়ার ধারণাও সঠিক নয়। অ্যালন আভিডন বলেন, এক দিনের ঘুমের অভাব আরেক দিন পুষিয়ে নেওয়া যায় না। যারা ঘুম ছাড়া থাকে, তাদের ঘুমের একটি ঋণ তৈরি হয়। প্রতি এক ঘণ্টা কম ঘুম পুষিয়ে নিতে চাইলে পুরো আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়।
ড. কোহেন বলেন, অপর্যাপ্ত ঘুম অন্যান্য বিষয়েও প্রভাব ফেলে। এর ফলে মানুষের মনোযোগ বিঘ্নিত হতে পারে। যা মানুষ সাধারণত লক্ষ করতে পারে না। যেমন—অ্যালকোহলের প্রভাবে কেউ মনে করতে পারেন যে গাড়ি চালাতে পারবেন। সে রকম কেউ অল্প ঘুমালেও স্বাভাবিক রয়েছেন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে তাঁরা কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিপিএসের সাহায্য ছাড়াই এআই ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া থেকে কোনো ব্যক্তির সাম্প্রতিক অবস্থান চিহ্নিত করা যাবে।
২ দিন আগেটয়লেটে ফোন নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে অনেকেরই। এমনও হতে আপনি হয়তো টয়লেটে বসেই মোবাইলে লেখাটি পড়ছেন। শৌচাগারে যে কাজটি ৩ মিনিটে করা সম্ভব সেটি কিছু পড়া, স্ক্রল এবং পোস্ট করে অন্তত ১৫ মিনিট পার করে দিচ্ছেন অনায়াসে। আপাতদৃষ্টিতে এটি সময় কাটানোর নির্দোষ উপায় মনে হলেও চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি আপনার স্বাস্থ্যের
২ দিন আগেসৌরজগতের সপ্তম গ্রহ ইউরেনাস ও এর পাঁচটি চাঁদ সম্পর্কে নতুন তথ্য জানাল বিজ্ঞানীরা। এই গ্রহ ও এর চাঁদগুলো একেবারে নিষ্প্রাণ নয়, বরং ইউরেনাসের চাঁদগুলোতে সমুদ্র থাকতে পারে। ফলে চাঁদগুলোয় জীবন ধারণের উপযোগী পরিবেশ থাকতে পারে। নতুন এক গবেষণায় এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
৩ দিন আগেসৌরজগৎ থেকে ৪ হাজার আলোকবর্ষ দূরে পৃথিবীর মতো একটি গ্রহ আবিষ্কার করেছেন একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী। এই পাথুরে গ্রহটির ভর পৃথিবীর মতোই এবং এটি শ্বেতবামন তারার চারপাশে আবর্তিত হচ্ছ। সাজেটেরিয়াস নক্ষত্রমণ্ডলীতে এই তারাটি অবস্থিত।
৫ দিন আগে