ধেয়ে আসছে সৌরঝড়, ৩৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ৪১
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ৪২
সূর্য থেকে নির্গত সৌর ফ্লেয়ারস বা সৌর শিখা, করোনাল মাস ইনজেকশন বা সিএমই এবং চুম্বকীয় ঝড়ের কারণ সৌরঝড় হয়। ছবি: নিউজিল্যান্ড হ্যারাল্ড

তীব্র সৌরঝড়ের কারণে নিউজিল্যান্ডের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে দেশটির জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (এনইএমএ)। আর এই অবস্থাটি ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই ধরনের ঘটনা মোকাবিলায় সংস্থাটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি, যা পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে আপডেট করা হবে।

সৌরঝড় হলো সূর্যের কার্যকলাপের কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরের অঞ্চলে ঘটে যাওয়া এক ধরনের ঘটনা। সূর্য থেকে নির্গত সৌর ফ্লেয়ারস বা সৌর শিখা, করোনাল মাস ইনজেকশন বা সিএমই এবং চুম্বকীয় ঝড়ের কারণ সৌরঝড় হয়। করোনাল মাস ইনজেকশন মূলত সূর্যের বাইরে থেকে একটি বিশাল প্লাজমা বা গ্যাসের বিশাল ঝাঁক যে সূর্যের করোনাল স্তর থেকে বেরিয়ে আসে। এই প্লাজমা প্রোটন, ইলেকট্রন এবং অন্যান্য আণবিক কণিকা ধারণ করে। এগুলো ছিটকে পৃথিবীর দিকে আসে।

গত মে মাসে যখন নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডের কিছু অংশে অরোরা বা মেরুজ্যোতি দেখা যাচ্ছিল, তখন সৌর ঝড়ের প্রভাবের কারণে আটলান্টিকের ওপর দিয়ে চলা বিমানগুলোকে চলাচলের দিক পরিবর্তন করতে হয়। কারণ বিমানগুলো জিপিএস সংকেতের সমস্যা হচ্ছিল। সেই সঙ্গে বৈদ্যুতিক গ্রিডের কিছু অংশ বন্ধ করতে হয়েছিল, যাতে সৌর ঝড়ের কারণে সৃষ্ট বিঘ্নিত প্রবাহের ফলে অতিরিক্ত তাপ সৃষ্টি হয়ে যন্ত্রপাতি নষ্ট না হয়।

এই ঝড়গুলো পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং বায়ুমণ্ডলকে প্রভাবিত করতে পারে, যা স্যাটেলাইট, জিপিএস, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

গত অক্টোবরে নাসা, জাতীয় মহাসাগরীয় এবং বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন (এনওএএ) এবং আন্তর্জাতিক সোলার সাইকেল প্রেডিকশন প্যানেল জানায়, বর্তমানে সূর্যের ১১ বছরের চক্র ‘সোলার ম্যাক্সিমাম’ চলছে। এই অবস্থায় সূর্য থেকে শক্তিশালী সৌর ফ্লেয়ারস বা করোনাল মাস বিচ্ছুরণ হতে পারে, যা পৃথিবীকে প্রভাবিত করবে এবং এর ফলে সৌরঝড়ের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

এনইএমএ–এর অন্তর্বর্তীকালীন পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, শক্তিশালী সৌরঝড়ের প্রভাবে ভূ-চুম্বকীয় ঝড় বা সৌরঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ, স্যাটেলাইট যোগাযোগ, জিপিএস, রেডিও এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতি হলে জরুরি সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো বিভিন্ন বিকল্প যোগাযোগ পদ্ধতির ব্যবহার করবে এবং জনগণের জন্য সতর্কতা জারি করবে।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন যে, সৌরঝড়ের ফলে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষত, করোনাল মাস বিচ্ছুরণের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় তাপ বৃদ্ধি ও যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা দ্রুত মেরামত করা সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার একটি অংশ বন্ধ করে রাখা হতে পারে, যাতে অতিরিক্ত তাপ সৃষ্টি না হয়, তবে এটি ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

এরই মধ্যে ট্রান্সপাওয়ারের প্রধান ম্যাট কোপল্যান্ড জানান, তারা এই ধরনের সৌরঝড়ের প্রভাব মোকাবিলার জন্য ২০১০ সাল থেকে পরিকল্পনা করছে। তবে বর্তমানে সূর্যের সোলার ম্যাক্সিমাম আসন্ন হওয়ায় এই প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় জানা গেছে, এমন একটি বড় সৌরঝড়ের কারণে বিশ্বব্যাপী ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন নিউজিল্যান্ড ডলার)। নিউজিল্যান্ডের মন্ত্রিপরিষদও এই বিপর্যয়ের সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতি এবং প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় অব ওটাগো ২০২০ সালে ১৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে সোলার সুনামি প্রকল্পের জন্য, যা আগামী পাঁচ বছর ধরে চলবে।

যেহেতু সৌরঝড়ের প্রভাব সম্পর্কে এক দিনের আগে সতর্কতা পাওয়া যেতে পারে, তাই নিউজিল্যান্ডের জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। জনগণকে সতর্ক করতে এবং জরুরি পদক্ষেপ নিতে কাজ করছে নিউজিল্যান্ডের সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

তথ্যসূত্র: আরএসজেড

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গুজব

ববির ট্রেজারার সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে যোগদানে বাধা

বিগত সরকারে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ দিতেই যাবে শতকোটি টাকা

দুই দিনে ৭ ব্যাংককে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেননি রয়টার্সের প্রতিবেদক: সিএমপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত