আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাত বাম দলের সমন্বয়ে নতুন আরেকটি বামপন্থী রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর তোপখানা রোডের আ ফ ম মাহবুবুল হক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘ফ্যাসিবাদীবিরোধী বাম মোর্চা’ নামে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয় সাত বামপন্থী দল। 

নতুন এই জোটের দলগুলো হলো—বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, গণমুক্তি ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মাহবুব), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ ও নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা। 

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান এবং শোষিত-নির্যাতিত জনগণের মুক্তি অর্জনের একমাত্র পথ ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রাম। শ্রমিক কৃষক ও ব্যাপক জনগণের লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে এই লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে জনগণের সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বৈপ্লবিক লক্ষ্যের দিকে। এই উপলব্ধির ভিত্তিতে আমরা সাতটি বামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন ফ্যাসিবাদবিরোধী ইস্যুভিত্তিক লড়াইয়ের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা’র নাম ঘোষণা করছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘অর্ধশতাব্দী পরও স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কখনো নির্বাচন এবং কখনো সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় দল ও ব্যক্তি বদল হলেও শোষণ-বৈষম্য-দুঃশাসনের অবসান হয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশে খোলাখুলিভাবেই ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় দেশের শ্রমজীবী মানুষকে নির্মমভাবে শোষণ করে এবং বেপরোয়া দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে অতীতের ধারাবাহিকতায় ধনিকগোষ্ঠী অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে।’ 

বিপরীতে দেশের সিংহভাগ মানুষ অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষা-কাজসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামসহ জীবনযাত্রার ব্যয় লাগামহীনভাবে বাড়লেও শ্রমিক-কৃষকসহ আপামর জনগণের আয় বাড়েনি। সরকার দফায় দফায় জ্বালানি তেল ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে নজরদারি ও ফোনে আড়িপাতার মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার মৌলিক অধিকার হরণ করার পাঁয়তারা চলছে। জনজীবনের সংকট সমাধানের চেয়ে দেশি বিদেশি শাসক শ্রেণির স্বার্থে মেগা প্রকল্প গ্রহণেই সরকারের উৎসাহ বেশি। এসব মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার দেশবাসীকে সাম্রাজ্যবাদীদের ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলছে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী দুঃশাসনের অবসানের লক্ষ্যে সাতটি বামপন্থী সংগঠনের অংশগ্রহণে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার যাত্রা শুরু হলো।’ 

সংবাদ সম্মেলন থেকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে নজরদারি ও ফোনে আড়িপাতার প্রতিবাদে আগামী ২৪ জানুয়ারি, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে নতুন এই রাজনৈতিক জোট। এ ছাড়া সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ-আধিপত্যবাদের হস্তক্ষেপ উচ্ছেদ এবং শ্রমিক-কৃষক জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণের মত প্রকাশ, সংগঠন সমাবেশ-আন্দোলন করার অবাধ অধিকার প্রতিষ্ঠা, ফ্যাসিবাদী খুঁটি ও ব্যবস্থার অপসারণ, বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং ফ্যাসিস্ট শাসনের অধীনে করা ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি ও প্রকল্পসমূহ বাতিলসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন আহম্মেদ নাসু, কমিউনিস্ট ইউনিয়নের আহ্বায়ক ইমাম গাজ্জালী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি শহিদুল ইসলাম (মুকুল) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান। নতুন এই জোটের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন।