নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১০টি খাত সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আইন ও বিচার, সংসদ, নির্বাচনব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি, সংবিধান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, পররাষ্ট্র ও ধর্মসংক্রান্ত সংস্কারে নির্দিষ্ট প্রস্তাব জানিয়েছে দলটি।
আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। আমিরের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ তাহের।
আইন ও বিচার খাত সংস্কার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বিচার বিভাগ থেকে দ্বৈত শাসন দূর করতে হবে। বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথককরণের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের স্বার্থে বিদ্যমান আইনসমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও গণমানুষের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন প্রণয়ন করতে হবে, সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ ও সব কালো আইন বাতিল করতে হবে, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, নিম্ন আদালতের যথাযথ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পৃথক বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে হবে, সব ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে, দেওয়ানি মামলা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং ফৌজদারি মামলাসমূহ সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান করতে হবে।
সংসদবিষয়ক সংস্কার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সংসদের প্রধান বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার মনোনীত করতে হবে, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার নেতৃত্বে ছায়া মন্ত্রিসভা গঠনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা (পিআর পদ্ধতি) চালু করতে হবে জানিয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করতে হবে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে, কোনো সরকারি চাকরিজীবী চাকরি ছাড়ার তিন বছরের মধ্যে কোনো ধরনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে জানিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতা বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ২০০৮ সালে প্রবর্তিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে, নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন একাধিক দিনে অনুষ্ঠিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা সংস্কারে পুলিশ ও র্যাবকে ভিন্ন উপায়ে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে জামায়াত। দলের আমির বলেন, পুলিশ আইন পরিবর্তন এবং পুলিশের জন্য একটি পলিসি গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং চাকরিচ্যুতির জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে, পুলিশ ট্রেনিং ম্যানুয়ালের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক অনুশাসন অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি। এ ছাড়া পুলিশের মধ্যে মারণাস্ত্রের ব্যবহার বাতিল, রিমান্ড চলাকালে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে আসামি পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতি এবং নারী আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদের অভিভাবকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
র্যাব সংস্কার প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, র্যাবের সামগ্রিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য সেল গঠন করতে হবে। কোনো র্যাব সদস্য আইনবহির্ভূত কাজে জড়িত হলে এই সেল তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করবে। মিডিয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন ও অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে।
জনপ্রশাসন সংস্কার প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, জনবল নিয়োগ, বদলি, পদায়নে তদবির, সুপারিশ ও দলীয় আনুগত্যের পরিবর্তে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততাকে প্রাধান্য দিতে হবে, যেকোনো চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে নিয়োগ পর্যন্ত সময়ক্ষেপণ না করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, সরকারি চাকরিতে আবেদন বিনা মূল্যে করতে হবে, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আগামী দুই বছরের জন্য ৩৫ বছর ও পরবর্তী বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে, চাকরির আবেদনে সকল ক্ষেত্রে বয়সসীমার বৈষম্য নিরসন করতে হবে। চাকরিতে বিরাজমান আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে এবং বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সরকারি চাকরিতে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও দলীয় বিবেচনায় চাকরি পেয়েছে, তাদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
দুর্নীতি দমনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে পরীক্ষিত সৎ, ন্যায়পরায়ণ, দক্ষ ও যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে, রাষ্ট্রের সব সেক্টরে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার স্বাধীনতা দিতে হবে, বিগত সরকারের আমলে দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উপযুক্ত বিধান প্রণয়ন ও তা কার্যকর করার পদক্ষেপ নিতে হবে, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করতে হবে, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন সংস্কার, জনবল ও পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে, রাষ্ট্রীয় ও জনগণের সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ–দখলকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখার বিধান সংযুক্ত করতে হবে। একই ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্কার প্রসঙ্গে দলটি বলেছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিকে উচ্চমাধ্যমিক হিসেবে বলবৎ রাখতে হবে, অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করে আগের পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে হবে, পাঠ্যপুস্তকে ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে, সব শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় মূল্যবোধবিরোধী উপাদান বাদ দিতে হবে।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাপ্রতিষ্ঠা, বিদ্যমান স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে সরকারীকরণ, প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে কামিল মাদ্রাসাকে সরকারীকরণ, কারিগরি ও ভকেশনাল শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার মূলধারায় যুক্ত করার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষার জন্য স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রস্তাব জানিয়েছেন তিনি।
সংস্কৃতি সংস্কারের ক্ষেত্রে দলটির প্রস্তাব—জাতির ঐতিহাসিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও মূল্যবোধের আলোকে বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে, জাতির ঐতিহাসিক দিনগুলোকে স্মরণীয় করার লক্ষ্যে বিশেষ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তা পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। নাটক, সিনেমাসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলো অশ্লীলতামুক্ত করতে হবে। নাটক, সিনেমা ও বিভিন্ন কনটেন্টে বিভিন্ন ধর্ম, বিশেষ করে ইসলামকে হেয় করা থেকে বিরত থাকার বিধান প্রণয়ন করতে হবে।
পররাষ্ট্রবিষয়ক সংস্কারের ক্ষেত্রে দলটি জানিয়েছে, পররাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে সাম্য ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে দলের আমির বলেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় চীন, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানিবণ্টন চুক্তির উদ্যোগ নিতে হবে। আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে সম্পাদিত সব চুক্তি রিভিউ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি রিভিউ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি। এ ছাড়াও সার্ক পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে জানান তিনি।
তা ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয় সংস্কারের প্রস্তাব জানিয়েছে জামায়াত। দলটি বলছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে (ইফাবা) রাষ্ট্রের কল্যাণে অর্থবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিকে স্বতন্ত্র সংস্থা বা দপ্তরে রূপান্তর করতে হবে, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। ইসলামিক মিশনকে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হজ ব্যবস্থাপনার জন্য স্বতন্ত্র অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হজ ও ওমরাহর খরচ কমানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে দেশের বরেণ্য আলেমরা সম্পৃক্ত থাকবেন। বিতর্কিত সব বই বাতিল ও প্রকাশনা বন্ধ করতে হবে। সব ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে আমির বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তার দোসররা যারা পালিয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘২০১৪, ’১৮ ও ’২৪ সালে আওয়ামী লীগ কি নির্বাচন চেয়েছিল? তারাই যদি নির্বাচন আসতে না চায়—তাহলে তাদের কীভাবে নিয়ে আসবে, তাদের ওপর নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে কি না? এটা জনগণ ঠিক করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, আ ন ম শামসুল ইসলাম, এ টি এম মাছুম, সাইফুল আলম খান মিলন, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১০টি খাত সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আইন ও বিচার, সংসদ, নির্বাচনব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি, সংবিধান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, পররাষ্ট্র ও ধর্মসংক্রান্ত সংস্কারে নির্দিষ্ট প্রস্তাব জানিয়েছে দলটি।
আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। আমিরের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ তাহের।
আইন ও বিচার খাত সংস্কার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বিচার বিভাগ থেকে দ্বৈত শাসন দূর করতে হবে। বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথককরণের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের স্বার্থে বিদ্যমান আইনসমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও গণমানুষের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন প্রণয়ন করতে হবে, সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ ও সব কালো আইন বাতিল করতে হবে, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, নিম্ন আদালতের যথাযথ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পৃথক বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে হবে, সব ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে, দেওয়ানি মামলা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং ফৌজদারি মামলাসমূহ সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান করতে হবে।
সংসদবিষয়ক সংস্কার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সংসদের প্রধান বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার মনোনীত করতে হবে, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার নেতৃত্বে ছায়া মন্ত্রিসভা গঠনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা (পিআর পদ্ধতি) চালু করতে হবে জানিয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করতে হবে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে, কোনো সরকারি চাকরিজীবী চাকরি ছাড়ার তিন বছরের মধ্যে কোনো ধরনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে জানিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতা বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ২০০৮ সালে প্রবর্তিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে, নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন একাধিক দিনে অনুষ্ঠিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা সংস্কারে পুলিশ ও র্যাবকে ভিন্ন উপায়ে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে জামায়াত। দলের আমির বলেন, পুলিশ আইন পরিবর্তন এবং পুলিশের জন্য একটি পলিসি গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং চাকরিচ্যুতির জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে, পুলিশ ট্রেনিং ম্যানুয়ালের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক অনুশাসন অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি। এ ছাড়া পুলিশের মধ্যে মারণাস্ত্রের ব্যবহার বাতিল, রিমান্ড চলাকালে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে আসামি পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতি এবং নারী আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদের অভিভাবকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
র্যাব সংস্কার প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, র্যাবের সামগ্রিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য সেল গঠন করতে হবে। কোনো র্যাব সদস্য আইনবহির্ভূত কাজে জড়িত হলে এই সেল তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করবে। মিডিয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন ও অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে।
জনপ্রশাসন সংস্কার প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, জনবল নিয়োগ, বদলি, পদায়নে তদবির, সুপারিশ ও দলীয় আনুগত্যের পরিবর্তে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততাকে প্রাধান্য দিতে হবে, যেকোনো চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে নিয়োগ পর্যন্ত সময়ক্ষেপণ না করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, সরকারি চাকরিতে আবেদন বিনা মূল্যে করতে হবে, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আগামী দুই বছরের জন্য ৩৫ বছর ও পরবর্তী বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে, চাকরির আবেদনে সকল ক্ষেত্রে বয়সসীমার বৈষম্য নিরসন করতে হবে। চাকরিতে বিরাজমান আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে এবং বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সরকারি চাকরিতে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও দলীয় বিবেচনায় চাকরি পেয়েছে, তাদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
দুর্নীতি দমনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে পরীক্ষিত সৎ, ন্যায়পরায়ণ, দক্ষ ও যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে, রাষ্ট্রের সব সেক্টরে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার স্বাধীনতা দিতে হবে, বিগত সরকারের আমলে দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উপযুক্ত বিধান প্রণয়ন ও তা কার্যকর করার পদক্ষেপ নিতে হবে, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করতে হবে, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন সংস্কার, জনবল ও পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে, রাষ্ট্রীয় ও জনগণের সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ–দখলকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখার বিধান সংযুক্ত করতে হবে। একই ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্কার প্রসঙ্গে দলটি বলেছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিকে উচ্চমাধ্যমিক হিসেবে বলবৎ রাখতে হবে, অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করে আগের পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে হবে, পাঠ্যপুস্তকে ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে, সব শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় মূল্যবোধবিরোধী উপাদান বাদ দিতে হবে।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাপ্রতিষ্ঠা, বিদ্যমান স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে সরকারীকরণ, প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে কামিল মাদ্রাসাকে সরকারীকরণ, কারিগরি ও ভকেশনাল শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার মূলধারায় যুক্ত করার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষার জন্য স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রস্তাব জানিয়েছেন তিনি।
সংস্কৃতি সংস্কারের ক্ষেত্রে দলটির প্রস্তাব—জাতির ঐতিহাসিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও মূল্যবোধের আলোকে বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে, জাতির ঐতিহাসিক দিনগুলোকে স্মরণীয় করার লক্ষ্যে বিশেষ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তা পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। নাটক, সিনেমাসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলো অশ্লীলতামুক্ত করতে হবে। নাটক, সিনেমা ও বিভিন্ন কনটেন্টে বিভিন্ন ধর্ম, বিশেষ করে ইসলামকে হেয় করা থেকে বিরত থাকার বিধান প্রণয়ন করতে হবে।
পররাষ্ট্রবিষয়ক সংস্কারের ক্ষেত্রে দলটি জানিয়েছে, পররাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে সাম্য ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে দলের আমির বলেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় চীন, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানিবণ্টন চুক্তির উদ্যোগ নিতে হবে। আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে সম্পাদিত সব চুক্তি রিভিউ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি রিভিউ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি। এ ছাড়াও সার্ক পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে জানান তিনি।
তা ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয় সংস্কারের প্রস্তাব জানিয়েছে জামায়াত। দলটি বলছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে (ইফাবা) রাষ্ট্রের কল্যাণে অর্থবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিকে স্বতন্ত্র সংস্থা বা দপ্তরে রূপান্তর করতে হবে, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। ইসলামিক মিশনকে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হজ ব্যবস্থাপনার জন্য স্বতন্ত্র অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হজ ও ওমরাহর খরচ কমানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে দেশের বরেণ্য আলেমরা সম্পৃক্ত থাকবেন। বিতর্কিত সব বই বাতিল ও প্রকাশনা বন্ধ করতে হবে। সব ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে আমির বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তার দোসররা যারা পালিয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘২০১৪, ’১৮ ও ’২৪ সালে আওয়ামী লীগ কি নির্বাচন চেয়েছিল? তারাই যদি নির্বাচন আসতে না চায়—তাহলে তাদের কীভাবে নিয়ে আসবে, তাদের ওপর নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে কি না? এটা জনগণ ঠিক করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, আ ন ম শামসুল ইসলাম, এ টি এম মাছুম, সাইফুল আলম খান মিলন, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চায়ের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মেগান বোল্ডিনের বাসভবনে গেলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
৯ ঘণ্টা আগেজুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলন সফল হওয়ার পেছনে খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থকদেরও ভূমিকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. খুরশিদ আলম। তিনি ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়নকারী ও নীতিমালা প্রস্তুতকারী ছিলেন
১০ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার পরবর্তী তিন মাস ‘মবের মুল্লুক’ মনে হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন তাঁরা চেষ্টা করছেন সংস্কার করার। তাঁদের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না। সময় দিতে হবে।’
১১ ঘণ্টা আগেসংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল চেয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ এক ধরনের বাক্স্বাধীনতাকে খর্ব করে। এ জন্য ৭০ অনুচ্ছেদ আমরা বাতিল চাই।’
১১ ঘণ্টা আগে