সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
‘কীভাবে যাচ্ছিস, কার সঙ্গে যাচ্ছিস, সিএনজিও তো নিরাপদ না, বাসে আর উঠবিই না, বাসায় পৌঁছে ফোন দিস কিন্তু’—বাবার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, কথার জবাবে ‘আচ্ছা’ বলে ফোন রাখি। প্রতিবার ফোনে একই কথা বোঝাই, ‘আমি তো বাচ্চা না, প্রাপ্তবয়ষ্ক। আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। রাস্তাঘাটে যে কারও যেকোনো বিপদ হতে পারে। তার জন্য আমি না শুধু, সবাইকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। বাবা, ইউ শুড বি প্রাউড, যে তোমার মেয়ে একজন চাকরিজীবী এবং সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। তোমার মেয়ের মনোবল বেশ দৃঢ়।’ এমন না যে, আমার বাবা কথাগুলো বোঝেন না বা গুরুত্ব দেন না। তবু বারবার একই দুশ্চিন্তায় মগ্ন থাকেন।
অফিস থেকে ফেরার পথে ক্লান্ত আমি সেদিন আর আমার কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি করিনি। ভাবছিলাম, বাবা-মায়েরা এমনই হয়। সন্তান দূরে থাকলে দুশ্চিন্তা বাড়ে তাঁদের। সঙ্গে বাড়ে রক্তচাপ! আচ্ছা, সব মা-বাবাই কি এমন হন?
সিএনজি অটোরিকশা চালককে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন, মামা?’ ‘তিনজন। দুইটা ছেলে, একটা মেয়ে।’ ‘পড়াশোনা করে?’
‘মেয়েটা মেজ, পড়ত স্কুলে, করোনা আসার পর আর স্কুলে যায় নাই। আবার দিমু কি না স্কুলে, ভাবতাসি। ছোট ছেলেটার স্কুলের বয়স হয় নাই। বড় ছেলেটা ইন্টার পাস কইরা এখন চাকরি করে।’ ‘কিসের চাকরি?’ ‘আড়ংয়ে, হেড অফিসে।’ ‘কোন পদে?’ ‘সেইটা জানি না। কিন্তু ভালো চাকরি করে।’
উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কেমন পদে চাকরি পাওয়া সম্ভব আমাদের দেশে, সেটা আঁচ করতে পেরে বললাম, ‘আরও পড়ালেন না কেন? তাহলে তো আরও ভালো চাকরি করতে পারত।’
জবাবে সিএনজিচালক বললেন, ‘আর পইড়া কী হইব? এট্টুক পইড়াই তো ভালো চাকরি করে। আর পড়ার তো দরকার নাই। এখনই ১২ হাজার টাকা বেতন পায়।’
‘আপনি খুশি তাতে?’
‘হ্যাঁ।’
‘আপনার নামটাই তো জানা হলো না।’
‘লাল মিয়া।’
‘বাড়ি কোথায় আপনাদের?’
‘সাইনবোর্ড।’
‘এত দূর থেকে আপনার ছেলে ঢাকায় এসে চাকরি করে! আপনার দুশ্চিন্তা হয় না?’
‘আমার চিন্তা নাই। হ্যায় হের মতো অফিস করে। ভালো বেতন পায়। আমি
এতেই খুশি।’
আশ্চর্য! এই সামান্য বেতনে ছেলে চাকরি করে, এত দূর যাতায়াত করে—এতে এই বাবাটার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। বরং তিনি খুশি। লাল মিয়ার ছেলে উপার্জন করছে, এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। অথচ আমাদের শিক্ষিত পরিবারের বাবা-মায়েরা চান সন্তান অনেক অনেক পড়াশোনা করবে, উচ্চ বেতনে চাকরি করবে এবং দিন শেষে সন্তানের নিরাপত্তার জন্য দুশ্চিন্তা করে করে নিজেরা অসুস্থ হয়ে পড়বেন! ‘বিসিএস দিতেই হবে’—এ রকম একটা সূক্ষ্ম জোর দাবি তো তাঁদের আছেই। একবার ভেবেছিলাম পিএইচডি করব। মামা বললেন, ‘ঠিক আছে মা, বিসিএসটাও দিস!’
কে কতটুকু ‘পড়াশোনা’র চাপ সহ্য করতে পারে, সেটা নিয়ে অভিভাবকদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। সন্তান কোন বিষয়ে পড়লে আনন্দ নিয়ে পড়তে পারবে, একটা যন্ত্র হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হবে না, সেটা নিয়েও মাথাব্যথা নেই। তাঁরা ‘লোকে কী ভাববে’ কথাটাকে খুব যত্ন করে মেনে চলেন।
অমুকজনের ছেলে তমুক জায়গায় পড়ে বা চাকরি করে, অত টাকা বেতন পায়—এসব কথা বলে নিজের সন্তানকে কিন্তু হতাশার দিকেই ঠেলে দেবেন।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি নিয়ম করে ‘গোপাল ভাঁড়’ কার্টুনটা দেখি। এক দিন গোপাল ভাঁড়কে বলতে শুনলাম, ‘আমি যদি ভাবি, “লোকে কী ভাববে”, তাহলে লোকে কী ভাববে বলুন তো?’
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
‘কীভাবে যাচ্ছিস, কার সঙ্গে যাচ্ছিস, সিএনজিও তো নিরাপদ না, বাসে আর উঠবিই না, বাসায় পৌঁছে ফোন দিস কিন্তু’—বাবার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, কথার জবাবে ‘আচ্ছা’ বলে ফোন রাখি। প্রতিবার ফোনে একই কথা বোঝাই, ‘আমি তো বাচ্চা না, প্রাপ্তবয়ষ্ক। আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। রাস্তাঘাটে যে কারও যেকোনো বিপদ হতে পারে। তার জন্য আমি না শুধু, সবাইকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। বাবা, ইউ শুড বি প্রাউড, যে তোমার মেয়ে একজন চাকরিজীবী এবং সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। তোমার মেয়ের মনোবল বেশ দৃঢ়।’ এমন না যে, আমার বাবা কথাগুলো বোঝেন না বা গুরুত্ব দেন না। তবু বারবার একই দুশ্চিন্তায় মগ্ন থাকেন।
অফিস থেকে ফেরার পথে ক্লান্ত আমি সেদিন আর আমার কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি করিনি। ভাবছিলাম, বাবা-মায়েরা এমনই হয়। সন্তান দূরে থাকলে দুশ্চিন্তা বাড়ে তাঁদের। সঙ্গে বাড়ে রক্তচাপ! আচ্ছা, সব মা-বাবাই কি এমন হন?
সিএনজি অটোরিকশা চালককে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন, মামা?’ ‘তিনজন। দুইটা ছেলে, একটা মেয়ে।’ ‘পড়াশোনা করে?’
‘মেয়েটা মেজ, পড়ত স্কুলে, করোনা আসার পর আর স্কুলে যায় নাই। আবার দিমু কি না স্কুলে, ভাবতাসি। ছোট ছেলেটার স্কুলের বয়স হয় নাই। বড় ছেলেটা ইন্টার পাস কইরা এখন চাকরি করে।’ ‘কিসের চাকরি?’ ‘আড়ংয়ে, হেড অফিসে।’ ‘কোন পদে?’ ‘সেইটা জানি না। কিন্তু ভালো চাকরি করে।’
উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কেমন পদে চাকরি পাওয়া সম্ভব আমাদের দেশে, সেটা আঁচ করতে পেরে বললাম, ‘আরও পড়ালেন না কেন? তাহলে তো আরও ভালো চাকরি করতে পারত।’
জবাবে সিএনজিচালক বললেন, ‘আর পইড়া কী হইব? এট্টুক পইড়াই তো ভালো চাকরি করে। আর পড়ার তো দরকার নাই। এখনই ১২ হাজার টাকা বেতন পায়।’
‘আপনি খুশি তাতে?’
‘হ্যাঁ।’
‘আপনার নামটাই তো জানা হলো না।’
‘লাল মিয়া।’
‘বাড়ি কোথায় আপনাদের?’
‘সাইনবোর্ড।’
‘এত দূর থেকে আপনার ছেলে ঢাকায় এসে চাকরি করে! আপনার দুশ্চিন্তা হয় না?’
‘আমার চিন্তা নাই। হ্যায় হের মতো অফিস করে। ভালো বেতন পায়। আমি
এতেই খুশি।’
আশ্চর্য! এই সামান্য বেতনে ছেলে চাকরি করে, এত দূর যাতায়াত করে—এতে এই বাবাটার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। বরং তিনি খুশি। লাল মিয়ার ছেলে উপার্জন করছে, এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। অথচ আমাদের শিক্ষিত পরিবারের বাবা-মায়েরা চান সন্তান অনেক অনেক পড়াশোনা করবে, উচ্চ বেতনে চাকরি করবে এবং দিন শেষে সন্তানের নিরাপত্তার জন্য দুশ্চিন্তা করে করে নিজেরা অসুস্থ হয়ে পড়বেন! ‘বিসিএস দিতেই হবে’—এ রকম একটা সূক্ষ্ম জোর দাবি তো তাঁদের আছেই। একবার ভেবেছিলাম পিএইচডি করব। মামা বললেন, ‘ঠিক আছে মা, বিসিএসটাও দিস!’
কে কতটুকু ‘পড়াশোনা’র চাপ সহ্য করতে পারে, সেটা নিয়ে অভিভাবকদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। সন্তান কোন বিষয়ে পড়লে আনন্দ নিয়ে পড়তে পারবে, একটা যন্ত্র হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হবে না, সেটা নিয়েও মাথাব্যথা নেই। তাঁরা ‘লোকে কী ভাববে’ কথাটাকে খুব যত্ন করে মেনে চলেন।
অমুকজনের ছেলে তমুক জায়গায় পড়ে বা চাকরি করে, অত টাকা বেতন পায়—এসব কথা বলে নিজের সন্তানকে কিন্তু হতাশার দিকেই ঠেলে দেবেন।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি নিয়ম করে ‘গোপাল ভাঁড়’ কার্টুনটা দেখি। এক দিন গোপাল ভাঁড়কে বলতে শুনলাম, ‘আমি যদি ভাবি, “লোকে কী ভাববে”, তাহলে লোকে কী ভাববে বলুন তো?’
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
২১ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১ দিন আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১ দিন আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১ দিন আগে