মহিউদ্দিন খান মোহন
যতই দিন যাচ্ছে, আমাদের রাজনীতিকেরা কথাবার্তায় শিষ্টাচার ও শালীনতা রক্ষার বিষয়টি যেন ভুলে যাচ্ছেন। এটা কারও একার দোষ নয়। উভয় পক্ষেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত চর্চার প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়ে চলেছে।
১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘অঙ্গার’ ছবিতে প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের গাওয়া একটি গান ছিল, ‘আমি পাগল হবো, পাগল নেবো, যাবো পাগলের দেশে/ এই পাগলকে ঠেলে দিব সেই পাগলের কাছে/ যার জন্যে পাগল, ও যার জন্যে পাগল...’। গানটি তখন খুব শ্রোতাপ্রিয় হয়েছিল। আমাদের সংগীতে ‘পাগল’ শব্দটি এসেছে নানাভাবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে ওঠে...’ কিংবা জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানে ‘ওরে ও পাগলা ভোলা দে রে দে প্রলয় দোলা’য় আমরা পাগল শব্দের ব্যবহার দেখতে পাই। ফোকশিল্পী দিলরুবা খানের গাওয়া ‘পাগল মন মন রে, মন কেন এত কথা বলে’ গানটি নব্বইয়ের দশকে মানুষের মুখে মুখে ফিরত। স্বাধীনতার পরপর যখন এ দেশে পপসংগীতের অভিষেক হয়, তখন পপগুরু আজম খান গেয়েছিলেন, ‘পাগলীরে ফেলিয়া, পাগলা যায় চলিয়া, পাগলীর মন ঘরে থাকে না রে পাগল’।
আধ্যাত্মিক জগতে গুরুগণ শাগরেদদের আদর করে পাগল বলে সম্বোধন করে থাকেন। এই সম্বোধনে কেউ রাগ করে না; বরং পীর বাবার পাগল সম্বোধনে মুরিদেরা ধন্য হন। সেই আধ্যাত্মিক একটি গান ইদানীং সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ‘বাবায় হরেক রকম পাগল দিয়া মিলাইছে মেলা, বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের খেলা’ গানটি এখন মানুষকে বেশ আনন্দ দেয়। সংগীতের পাশাপাশি সাহিত্যেও জায়গা করে নিয়েছে পাগল। সুকুমার রায় তাঁর ‘বিষম চিন্তা’ কবিতায় লিখেছেন, ‘ভূত যদি না থাকবে তবে কোত্থেকে হয় ভূতের ভয়?/ মাথায় যাদের গোল বেঁধেছে তাদের কেন “পাগোল” কয়?’
তবে আমাদের সমাজে পাগল শব্দটি ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহার হয়ে থাকে বেশি। কেউ কাউকে পাগল বললে সে খেপে একেবারে আগুন হয়ে যায়। এই পাগল নিয়ে কৌতুকও চালু আছে। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের সময় একটি কৌতুক খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান গেছেন পাবনার হিমাইতপুরে মেন্টাল হাসপাতাল পরিদর্শনে। এক পাগল এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘এই মিয়া, তুমি কেডা? নতুন আইলানি?’ আইয়ুব খান বললেন, ‘আমি এ দেশের প্রেসিডেন্ট।’ পাগলটি বলল, ‘হ, এইহানে নতুন আইয়া সবাই নিজেরে এমুন পেসিডেন, মন্ত্রী-মিনিস্টার কয়। কয়দিন প্যাদানি খাও, পেসিডেনগিরি ছুইট্টা যাইব।’ এই পাগল শব্দের ব্যবহার প্রবাদ-প্রবচনেও রয়েছে। ‘পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়’–আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ। এ বাক্যটি সর্বাংশে সঠিক বলে মনে হয় না আমার কাছে। কারণ একজন পাগল কারণে-অকারণে নানা অসংলগ্ন কথা বললেও ছাগল কিন্তু সব ঘাস খায় না। যেমন ভেজা ঘাস বা কচুরিপানায় সে মুখও লাগায় না। আবার কাঁঠালপাতা, আমপাতা সে মজা করে খেলেও জামপাতা, নিমপাতা, ডুমুরপাতা এড়িয়ে চলে।
তাই বলে ইতিবাচক অর্থে পাগল শব্দের ব্যবহার নেই—এ কথা বলা যাবে না। যেমন মা-বাবা তাঁদের শিশুসন্তানকে আদর করে কখনো কখনো ‘আমার পাগল সোনাটা’ বলে চুমু খান। আবার স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকা তাঁদের কথোপকথনের আবেগঘন সময়ে একে আপরকে ‘যাহ্, পাগল’ বলে আদুরে গলায় আহ্লাদ প্রকাশ করে থাকেন। নাটক-সিনেমায় এই সংলাপের ব্যবহার অসংখ্যবার দেখেছি। যেমন নায়ক বলছে নায়িকাকে, ‘তোমাকে না পেলে আমি পাগল হয়ে যাব।’ বাস্তবে কেউ সে রকম পাগল হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। তবে লাইলির জন্য শাহজাদা কায়েসের পাগল হওয়ার কাহিনি গল্প-উপন্যাসে আমরা সবাই পড়েছি। যে কারণে কায়েসের নামই হয়ে গেল মজনু, অর্থাৎ পাগল।
আবার কারও কারও নামের আগে পাগল বা পাগলা শব্দটি বিশেষণ হিসেবে ব্যবহার হতে দেখেছি আমরা। নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক নেতার নাম পড়ে গিয়েছিল ‘পাগলা শহীদ’। তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্যে একধরনের পাগলাটে ভাব ছিল বলে শুনেছি। উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা সেই ছেলেটি সন্ত্রাসের রাজনীতির বলি হয়েছিল। একসময় যে ক্যাম্পাস সে দাবড়ে বেড়াত, সেই ক্যাম্পাসেই তাঁর বুক ঝাঁঝরা হয়েছিল ব্রাশফায়ারে।
আমাদের রাজনীতিকেরা একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য নানান কথা বলে থাকেন। দলীয় সমালোচনাকে আমরা নেতিবাচক দৃষ্টিতে কখনোই দেখি না। এক দল আরেক দলের সমালোচনা করবে না তো করবেটা কী? কিন্তু সেই সমালোচনা যখন ব্যক্তিগত কুৎসার পর্যায়ে চলে যায়, তখন আমাদের মতো নিরেট সাধাসিধে মানুষেরা বড়ই আশ্চর্য হই। সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘পাগল’ কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন। গত ১৭ অক্টোবর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাগল, না দেশের মানুষ পাগল? রাস্তায় যে পাগল ঘুরে বেড়ায়, সে মনে করে সবাই পাগল, শুধু সে ভালো। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যও সে রকম।’ (আজকের পত্রিকা, ১৮ অক্টোবর, ২০২১)। তথ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্য সচেতন মহলে যারপরনাই বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। যদিও আমাদের রাজনীতিকদের নেতিবাচক মনোভাবের কথা সর্বজনবিদিত। তারপরও তাঁরা পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ একেবারে হারিয়ে ফেলেছেন, এটা ভাবতে চাই না। বিএনপির মহাসচিব সম্বন্ধে তথ্যমন্ত্রীর উল্লিখিত উক্তি রাজনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন কি না, সে প্রশ্নে নাইবা গেলাম। তবে, একটি বিষয় আমাদের পীড়িত না করে পারে না। যতই দিন যাচ্ছে, আমাদের রাজনীতিকেরা কথাবার্তায় শিষ্টাচার ও শালীনতা রক্ষার বিষয়টি যেন ভুলে যাচ্ছেন। এটা কারও একার দোষ নয়। উভয় পক্ষেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত চর্চার প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়ে চলেছে। অথচ আমাদের যাঁরা প্রাতঃস্মরণীয় রাজনীতিক ছিলেন, তাঁরা প্রতিপক্ষের তীব্র সমালোচনা করার সময়ও সম্মানের বিষয়টি বিস্মৃত হতেন না।
মনে পড়ছে ১৯৭১ সালের সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের কথা। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ‘আপনি’, ‘জনাব’ এবং ‘সাহেব’ সম্বোধন করেছিলেন। যাঁরা বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বা ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইগুলো পড়েছেন, তাঁরা নিশ্চয় খেয়াল করে থাকবেন প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের তিনি কতটা সম্মানের চোখে দেখতেন। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদে আতাউর রহমান খান ছিলেন বিরোধী গ্রুপের নেতা। একজন প্রবীণ রাজনীতিকের কাছে শুনেছি, সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আতাউর রহমান খানকে ‘আমার নেতা’ বলে সম্বোধন করতেন। এতে কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছোট হয়ে যাননি; বরং তাঁর উচ্চতা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।
অপরকে সম্মান করে কথা বললে কেউ ছোট হয়ে যায় না; বরং তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। কিন্তু আমাদের হাল আমলের রাজনীতিকেরা কেন যে এ সত্যটি উপলব্ধি করতে পারেন না, তা ভেবে পাই না।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক।
যতই দিন যাচ্ছে, আমাদের রাজনীতিকেরা কথাবার্তায় শিষ্টাচার ও শালীনতা রক্ষার বিষয়টি যেন ভুলে যাচ্ছেন। এটা কারও একার দোষ নয়। উভয় পক্ষেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত চর্চার প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়ে চলেছে।
১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘অঙ্গার’ ছবিতে প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের গাওয়া একটি গান ছিল, ‘আমি পাগল হবো, পাগল নেবো, যাবো পাগলের দেশে/ এই পাগলকে ঠেলে দিব সেই পাগলের কাছে/ যার জন্যে পাগল, ও যার জন্যে পাগল...’। গানটি তখন খুব শ্রোতাপ্রিয় হয়েছিল। আমাদের সংগীতে ‘পাগল’ শব্দটি এসেছে নানাভাবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে ওঠে...’ কিংবা জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানে ‘ওরে ও পাগলা ভোলা দে রে দে প্রলয় দোলা’য় আমরা পাগল শব্দের ব্যবহার দেখতে পাই। ফোকশিল্পী দিলরুবা খানের গাওয়া ‘পাগল মন মন রে, মন কেন এত কথা বলে’ গানটি নব্বইয়ের দশকে মানুষের মুখে মুখে ফিরত। স্বাধীনতার পরপর যখন এ দেশে পপসংগীতের অভিষেক হয়, তখন পপগুরু আজম খান গেয়েছিলেন, ‘পাগলীরে ফেলিয়া, পাগলা যায় চলিয়া, পাগলীর মন ঘরে থাকে না রে পাগল’।
আধ্যাত্মিক জগতে গুরুগণ শাগরেদদের আদর করে পাগল বলে সম্বোধন করে থাকেন। এই সম্বোধনে কেউ রাগ করে না; বরং পীর বাবার পাগল সম্বোধনে মুরিদেরা ধন্য হন। সেই আধ্যাত্মিক একটি গান ইদানীং সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ‘বাবায় হরেক রকম পাগল দিয়া মিলাইছে মেলা, বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের খেলা’ গানটি এখন মানুষকে বেশ আনন্দ দেয়। সংগীতের পাশাপাশি সাহিত্যেও জায়গা করে নিয়েছে পাগল। সুকুমার রায় তাঁর ‘বিষম চিন্তা’ কবিতায় লিখেছেন, ‘ভূত যদি না থাকবে তবে কোত্থেকে হয় ভূতের ভয়?/ মাথায় যাদের গোল বেঁধেছে তাদের কেন “পাগোল” কয়?’
তবে আমাদের সমাজে পাগল শব্দটি ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহার হয়ে থাকে বেশি। কেউ কাউকে পাগল বললে সে খেপে একেবারে আগুন হয়ে যায়। এই পাগল নিয়ে কৌতুকও চালু আছে। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের সময় একটি কৌতুক খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান গেছেন পাবনার হিমাইতপুরে মেন্টাল হাসপাতাল পরিদর্শনে। এক পাগল এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘এই মিয়া, তুমি কেডা? নতুন আইলানি?’ আইয়ুব খান বললেন, ‘আমি এ দেশের প্রেসিডেন্ট।’ পাগলটি বলল, ‘হ, এইহানে নতুন আইয়া সবাই নিজেরে এমুন পেসিডেন, মন্ত্রী-মিনিস্টার কয়। কয়দিন প্যাদানি খাও, পেসিডেনগিরি ছুইট্টা যাইব।’ এই পাগল শব্দের ব্যবহার প্রবাদ-প্রবচনেও রয়েছে। ‘পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়’–আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ। এ বাক্যটি সর্বাংশে সঠিক বলে মনে হয় না আমার কাছে। কারণ একজন পাগল কারণে-অকারণে নানা অসংলগ্ন কথা বললেও ছাগল কিন্তু সব ঘাস খায় না। যেমন ভেজা ঘাস বা কচুরিপানায় সে মুখও লাগায় না। আবার কাঁঠালপাতা, আমপাতা সে মজা করে খেলেও জামপাতা, নিমপাতা, ডুমুরপাতা এড়িয়ে চলে।
তাই বলে ইতিবাচক অর্থে পাগল শব্দের ব্যবহার নেই—এ কথা বলা যাবে না। যেমন মা-বাবা তাঁদের শিশুসন্তানকে আদর করে কখনো কখনো ‘আমার পাগল সোনাটা’ বলে চুমু খান। আবার স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকা তাঁদের কথোপকথনের আবেগঘন সময়ে একে আপরকে ‘যাহ্, পাগল’ বলে আদুরে গলায় আহ্লাদ প্রকাশ করে থাকেন। নাটক-সিনেমায় এই সংলাপের ব্যবহার অসংখ্যবার দেখেছি। যেমন নায়ক বলছে নায়িকাকে, ‘তোমাকে না পেলে আমি পাগল হয়ে যাব।’ বাস্তবে কেউ সে রকম পাগল হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। তবে লাইলির জন্য শাহজাদা কায়েসের পাগল হওয়ার কাহিনি গল্প-উপন্যাসে আমরা সবাই পড়েছি। যে কারণে কায়েসের নামই হয়ে গেল মজনু, অর্থাৎ পাগল।
আবার কারও কারও নামের আগে পাগল বা পাগলা শব্দটি বিশেষণ হিসেবে ব্যবহার হতে দেখেছি আমরা। নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক নেতার নাম পড়ে গিয়েছিল ‘পাগলা শহীদ’। তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্যে একধরনের পাগলাটে ভাব ছিল বলে শুনেছি। উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা সেই ছেলেটি সন্ত্রাসের রাজনীতির বলি হয়েছিল। একসময় যে ক্যাম্পাস সে দাবড়ে বেড়াত, সেই ক্যাম্পাসেই তাঁর বুক ঝাঁঝরা হয়েছিল ব্রাশফায়ারে।
আমাদের রাজনীতিকেরা একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য নানান কথা বলে থাকেন। দলীয় সমালোচনাকে আমরা নেতিবাচক দৃষ্টিতে কখনোই দেখি না। এক দল আরেক দলের সমালোচনা করবে না তো করবেটা কী? কিন্তু সেই সমালোচনা যখন ব্যক্তিগত কুৎসার পর্যায়ে চলে যায়, তখন আমাদের মতো নিরেট সাধাসিধে মানুষেরা বড়ই আশ্চর্য হই। সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘পাগল’ কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন। গত ১৭ অক্টোবর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাগল, না দেশের মানুষ পাগল? রাস্তায় যে পাগল ঘুরে বেড়ায়, সে মনে করে সবাই পাগল, শুধু সে ভালো। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যও সে রকম।’ (আজকের পত্রিকা, ১৮ অক্টোবর, ২০২১)। তথ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্য সচেতন মহলে যারপরনাই বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। যদিও আমাদের রাজনীতিকদের নেতিবাচক মনোভাবের কথা সর্বজনবিদিত। তারপরও তাঁরা পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ একেবারে হারিয়ে ফেলেছেন, এটা ভাবতে চাই না। বিএনপির মহাসচিব সম্বন্ধে তথ্যমন্ত্রীর উল্লিখিত উক্তি রাজনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন কি না, সে প্রশ্নে নাইবা গেলাম। তবে, একটি বিষয় আমাদের পীড়িত না করে পারে না। যতই দিন যাচ্ছে, আমাদের রাজনীতিকেরা কথাবার্তায় শিষ্টাচার ও শালীনতা রক্ষার বিষয়টি যেন ভুলে যাচ্ছেন। এটা কারও একার দোষ নয়। উভয় পক্ষেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত চর্চার প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়ে চলেছে। অথচ আমাদের যাঁরা প্রাতঃস্মরণীয় রাজনীতিক ছিলেন, তাঁরা প্রতিপক্ষের তীব্র সমালোচনা করার সময়ও সম্মানের বিষয়টি বিস্মৃত হতেন না।
মনে পড়ছে ১৯৭১ সালের সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের কথা। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ‘আপনি’, ‘জনাব’ এবং ‘সাহেব’ সম্বোধন করেছিলেন। যাঁরা বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বা ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইগুলো পড়েছেন, তাঁরা নিশ্চয় খেয়াল করে থাকবেন প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের তিনি কতটা সম্মানের চোখে দেখতেন। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদে আতাউর রহমান খান ছিলেন বিরোধী গ্রুপের নেতা। একজন প্রবীণ রাজনীতিকের কাছে শুনেছি, সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আতাউর রহমান খানকে ‘আমার নেতা’ বলে সম্বোধন করতেন। এতে কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছোট হয়ে যাননি; বরং তাঁর উচ্চতা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।
অপরকে সম্মান করে কথা বললে কেউ ছোট হয়ে যায় না; বরং তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। কিন্তু আমাদের হাল আমলের রাজনীতিকেরা কেন যে এ সত্যটি উপলব্ধি করতে পারেন না, তা ভেবে পাই না।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
৮ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
৮ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
৯ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৯ ঘণ্টা আগে