সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
সাম্প্রদায়িকতা কী, সে তো আমরা অবশ্যই জানি। দেখিও। আমরা ভুক্তভোগীও বটে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের এই দেশে দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গার পরিণতিতে একসময়ে অবিভক্ত বঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, এক খণ্ড যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে অন্য খণ্ড ভারতের। কিন্তু তারপরেও দাঙ্গা থেমেছে কি? দুই বঙ্গের কোনো বঙ্গেই থামেনি। সাম্প্রদায়িকতারও অবসান হয়নি। শেষ পর্যন্ত ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বন্ধন ছিন্ন করে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তারপরও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটেছে কি?
না, ঘটেনি। কেবল যে মানসিক সাম্প্রদায়িকতা রয়ে গেছে তা নয়, সাম্প্রদায়িক নির্যাতনও ঘটেছে। ২০০১-এর সাধারণ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বহু স্থানে নানা রকম নিপীড়নের খবর আমাদের লজ্জিত করেছে। সম্পত্তি দখল, নারী ধর্ষণ সবকিছুই ঘটেছে। এবারের শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে যেটি ঘটল, সেটা তো অতীতের ঘটনাগুলোকে কেবল অতিক্রম নয়, ম্লান করে দিয়েছে। কুমিল্লা থেকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতেও সক্ষম হয়েছে। এ লজ্জা রাখব কোথায়?
কাজেই সাম্প্রদায়িকতা জিনিসটা যে কেমন নির্মম, কদর্য ও ক্ষতিকারক, সেটা আমরা অবশ্যই জানি। না জানার কারণ নেই। সাম্প্রদায়িকতাকে চিনিও বটে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে যে কী, তা সব সময় খেয়াল করি না। কেন ঘটছে তা-ও বুঝি না। আমরা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কথাই বলছি। এই সাম্প্রদায়িকতার কারণে দুটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ পরস্পরকে ঘৃণা করে। ঘৃণা পারস্পরিক সংঘর্ষেরও জন্ম দেয়। রক্তপাত ঘটে। আমাদের দেশে যেমনটা ঘটেছে।
কিন্তু আমাদের দেশে তো বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে একত্রে বসবাস করেও এসেছে। হিন্দু কৃষক ও মুসলমান কৃষকের মধ্যে সংঘর্ষ বাধেনি। তারা একে অপরকে উৎখাত করতে চায়নি। নদীতে হিন্দু জেলে ও মুসলমান জেলে একসঙ্গে মাছ ধরেছে। তাঁতিরা তাঁত বুনেছে। সাধারণ মানুষ একে অপরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ও মসজিদের আজান একসঙ্গে মিশে গেছে। মানুষ একই পথ ধরে হেঁটেছে, একই বাজার-হাটে গিয়ে কেনাবেচা করেছে, থেকেছে একই আকাশের নিচে। কে হিন্দু, কে মুসলমান তা নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেনি, নাক সিটকায়নি। তাহলে? সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করল কারা? তৈরি হলো কীভাবে? কেন?
শুধু করল দুই দিকের দুই মধ্যবিত্ত–হিন্দু মধ্যবিত্ত ও মুসলিম মধ্যবিত্ত। ব্রিটিশ যুগেই এ ঘটনার সূচনা। তার আগে সম্প্রদায় ছিল, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। ব্রিটিশ আমলে হিন্দু মধ্যবিত্ত শিক্ষায় ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠায় উঠতি মুসলিম মধ্যবিত্তের তুলনায় অন্তত পঞ্চাশ বছর এগিয়ে ছিল। মুসলিম মধ্যবিত্ত দেখল, জায়গা তেমন খোলা নেই, অন্যরা দখল করে নিয়েছে। শুরু হলো দুই পক্ষের প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যারা দখল করে রেখেছে, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। শাসক ব্রিটিশরা এ ব্যাপারে দুই পক্ষকেই উসকানি দিল, যাতে তাদের রেষারেষিটা আরও বাড়ে। বাড়লে ব্রিটিশের সুবিধা, কেননা ঝগড়াটা তখন শাসক-শাসিতের থাকবে না, হয়ে দাঁড়াবে হিন্দু-মুসলমানের।
ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু সেই সংগ্রামে হিন্দু ও মুসলিম ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেনি, পারেনি ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধের কারণে। অবিভক্ত বঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে দুই সম্প্রদায়কে কাছে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন দাশ কিছুটা এগিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগে দুই সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে চাকরির সুযোগ-সুবিধা অর্ধেক অর্ধেক ভাগাভাগিতে তাঁরা সম্মত হন। এই চুক্তি তৈরি হয় ১৯২৩-এ, এর দুই বছর পর চিত্তরঞ্জন পরলোক গমন করেন এবং বলাই বাহুল্য ওই চুক্তি মোটেই বাস্তবায়িত হয়নি, বরং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, একের পর এক দাঙ্গা ঘটেছে এবং শেষ পর্যন্ত বাংলা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। মূল কারণ দুই মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্ব, যাতে ব্রিটিশের উসকানি খুব কাজে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা ওপর থেকে নিচে নেমেছে। নিচ থেকে ওপরে ওঠেনি।
চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর পর বাংলায় সর্বভারতীয় রাজনীতির অবাধ প্রবেশ ঘটে। ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়েই অত্যন্ত তৎপর হয়ে ওঠে। কংগ্রেস নিজেকে অসাম্প্রদায়িক বলত, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটি ছিল হিন্দুপ্রধান প্রতিষ্ঠান। গান্ধী নিজে অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, কিন্তু তিনি ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে চাননি। ফলে ধর্মীয় ধ্বনি তুলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির কাজটা মোটেই বাধাপ্রাপ্ত হয়নি। কংগ্রেসে কট্টর সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন লোকেরা ছিল এবং তারাই শেষ পর্যন্ত মূল শক্তি হয়ে ওঠে, পরে তারা গান্ধীকে পর্যন্ত হত্যা করে। ওদিকে মুসলিম লীগ তো মুসলিমদের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই গড়ে উঠেছে, তার নেতা জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে, অর্থাৎ ভারতে হিন্দু ও মুসলমান দুটি ভিন্ন ভিন্ন জাতি এই মতবাদের ওপর তাঁর রাজনীতিকে দাঁড় করিয়েছিলেন। কংগ্রেস ও লীগ উভয়ের রাজনীতিই হয়ে দাঁড়াল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।
ভারতবর্ষ ভাঙল, বাংলাও দুই টুকরো হলো, মূল কারণ ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধ এবং সেই সঙ্গে ব্রিটিশের উসকানি। কিন্তু তারপরেও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটল না। অবসান হবে বলে অনেকে আশা করেছিলেন। কেননা, ভারত হয়ে দাঁড়াল হিন্দুপ্রধান এবং পাকিস্তান মুসলিমপ্রধান। দুই রাষ্ট্রে দুই সম্প্রদায়ের প্রাধান্য এমন প্রবল যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে সংখ্যাগুরুর সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হবে, এটা মোটেই সম্ভব ছিল না। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতার পূর্বতন যে ভিত্তি ছিল, সেটা আর রইল না। দ্বন্দ্বের শেষ হলো। কিন্তু তবু যে সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়ে গেল না, তার কারণ কী? কারণটা হলো বৈষয়িক লালসা। আরও স্পষ্ট করে বললে সম্পত্তির লোভ। সম্পত্তি বলতে এ ক্ষেত্রে জমি, বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিবাকরি, সুযোগ-সুবিধা সবকিছুই বোঝাবে। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা সংখ্যালঘুদের উৎখাত করে তাদের সম্পত্তি দখল করতে তৎপর হয়ে উঠল। আসলে এ হচ্ছে দুর্বলের ওপর প্রবলের অত্যাচার। প্রবল, অর্থাৎ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা, দুর্বলের অর্থাৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি কেড়ে নিতে থাকল। ব্যাপারটি ছিল লুণ্ঠন, কিন্তু তার ওপর একটা আচ্ছাদন দেওয়া হলো, সেটা ধর্মীয়। ধর্মীয় আচ্ছাদনে দুটো সুবিধা। এক. এতে লুটপাটের ব্যাপারটাকে পবিত্র কর্তব্য বলে সাজানো যায়। দুই. ধর্মের জিগির তুললে মানুষের মধ্যে উন্মাদনাও তৈরি করা সহজে সম্ভব হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্রকে আমরা মানিনি। আমরা তার জিঞ্জির ছিঁড়ে বের হয়ে এসেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দ্বিজাতি তত্ত্ব পরিত্যক্ত হয়েছে। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জায়গায় এসেছে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। তবু সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়নি। না হওয়ার কারণ অন্য কিছু নয়, ওই যে সম্পত্তি দখল করা, সেটাই। সংখ্যালঘু হিন্দুরা এখানে দুর্বল, সংখ্যাগুরু মুসলমানরা তাই তাদের সম্পত্তি কবজা করতে তৎপর। কেবল যে হিন্দু সম্পত্তি লুণ্ঠিত হচ্ছে তা নয়, মুসলমানদের সম্পত্তিও চলে যাচ্ছে ধনীদের হাতে। কিন্তু হিন্দুদের সম্পত্তি বিশেষভাবে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। প্রথমত, অধিকাংশ হিন্দুই দরিদ্র; দ্বিতীয়ত, তারা আবার সংখ্যায় কম। তৃতীয়ত, তাদের সম্পত্তি দখল করার সময় ধর্মকে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
সাম্প্রদায়িকতা তাই ধর্মের ব্যাপার নয়, ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যাপার বটে। ধর্মব্যবসায়ীরা ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং বর্তমান আমলেও ধর্মকে ব্যবহার করে লুণ্ঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। যে জন্য সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটছে না।
সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারটা বোঝা গেল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর প্রতিকার কী? প্রতিকার খোঁজার আগে রাষ্ট্রের ভূমিকাটার দিকে তাকানো দরকার। ব্রিটিশ আমলে রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক বিরোধকে উসকানি দিয়েছে। পাকিস্তানের কালে রাষ্ট্র হিন্দুদের শত্রু বলে বিবেচনা করতে চেয়েছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রও যে ধর্মনিরপেক্ষ, তা বলা যাবে না। এই রাষ্ট্রের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার কথা ছিল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবেই এর অভ্যুদয় ঘটেছে। কিন্তু সংবিধানে এখন ধর্মনিরপেক্ষতা আর নেই। আমেরিকানরা আমাদের রাষ্ট্রকে মুসলিম রাষ্ট্র বলছে, আমরা প্রতিবাদ করছি না। বলছি না যে আমাদের রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক। এখানে সব নাগরিকের রয়েছে সমান অধিকার। আমরা প্রতিবাদ করছি না কথাটার অর্থ হলো, আমাদের যারা শাসন করে, তারা প্রতিবাদ করছে না। এ ব্যাপারে সরকার উৎসাহী নয়, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে কোনো দলেরই উদ্যোগ নেই, বরং ক্ষমতাসীন দলই ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। আর তারাই হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে আমাদের মুখপাত্র।
সংখ্যালঘুরা নিরাপদ বোধ করে না। নীরবে তাদের দেশত্যাগ যে ঘটছে, এটা মিথ্যা নয়। আমাদের রাষ্ট্রে বলতে গেলে কোনো নাগরিকেরই জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিশেষভাবে বিপন্ন। মূল কারণ হলো রাষ্ট্রের চরিত্র। যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, যার জন্য সংগ্রাম করেছি, সেই রাষ্ট্র আমরা পাইনি। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য রয়েছে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্যই প্রধান, সেই সঙ্গে নারী-পুরুষের বৈষম্যও স্পষ্ট এবং সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মধ্যকার পুরোনো বৈষম্য শেষ হয়ে যায়নি।
রাষ্ট্রকে তাই গণতান্ত্রিক করা চাই। শ্রেণি, ধর্ম, নারী-পুরুষ, জাতিসত্তানির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। তা না হলে শোষণ, লুণ্ঠন, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিসত্তার নিপীড়ন—কোনো ব্যাধিরই শেষ হবে না। আমরা ভুগতে থাকব এবং ভুগতে ভুগতে কেবলই দুর্বল হব।
কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্রে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনটা কীভাবে আসবে? নির্বাচনের মধ্য দিয়ে? সে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনেরা রাষ্ট্রের চরিত্রে বদল আনতে চাইবে না, চাইবে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ন রেখে লুণ্ঠন করতে। সে জন্য যারা দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক, তাদেরই কর্তব্য হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করা। আন্দোলন ছাড়া মুক্তির অন্য কোনো উপায় নেই। এ ব্যাপারটা আমাদের বুঝতে হবে। আমরা সামরিক শাসন দেখেছি, নির্বাচনও দেখেছি এবং দেখব। সামরিক সরকার অবৈধ, নির্বাচিত সরকার কি বৈধ? তথাকথিত বৈধ-অবৈধ যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, দুর্বল মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আসে না। স্বাধীন দেশে সরকার তো কয়েকবার বদল হয়েছে, কিন্তু দুর্বলের ভাগ্য প্রসন্ন হয়েছে কি? হয়নি। তাই সাধারণ মানুষের স্বার্থ যারা দেখবে, তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং অশুভ সাম্প্রদায়িকতাকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে। তা না হলে সাম্প্রদায়িকতার আরও নগ্ন ও সহিংস ঘটনা আমাদের দেখতে হবে।
লেখক: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাম্প্রদায়িকতা কী, সে তো আমরা অবশ্যই জানি। দেখিও। আমরা ভুক্তভোগীও বটে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের এই দেশে দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গার পরিণতিতে একসময়ে অবিভক্ত বঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, এক খণ্ড যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে অন্য খণ্ড ভারতের। কিন্তু তারপরেও দাঙ্গা থেমেছে কি? দুই বঙ্গের কোনো বঙ্গেই থামেনি। সাম্প্রদায়িকতারও অবসান হয়নি। শেষ পর্যন্ত ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বন্ধন ছিন্ন করে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তারপরও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটেছে কি?
না, ঘটেনি। কেবল যে মানসিক সাম্প্রদায়িকতা রয়ে গেছে তা নয়, সাম্প্রদায়িক নির্যাতনও ঘটেছে। ২০০১-এর সাধারণ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বহু স্থানে নানা রকম নিপীড়নের খবর আমাদের লজ্জিত করেছে। সম্পত্তি দখল, নারী ধর্ষণ সবকিছুই ঘটেছে। এবারের শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে যেটি ঘটল, সেটা তো অতীতের ঘটনাগুলোকে কেবল অতিক্রম নয়, ম্লান করে দিয়েছে। কুমিল্লা থেকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতেও সক্ষম হয়েছে। এ লজ্জা রাখব কোথায়?
কাজেই সাম্প্রদায়িকতা জিনিসটা যে কেমন নির্মম, কদর্য ও ক্ষতিকারক, সেটা আমরা অবশ্যই জানি। না জানার কারণ নেই। সাম্প্রদায়িকতাকে চিনিও বটে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে যে কী, তা সব সময় খেয়াল করি না। কেন ঘটছে তা-ও বুঝি না। আমরা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কথাই বলছি। এই সাম্প্রদায়িকতার কারণে দুটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ পরস্পরকে ঘৃণা করে। ঘৃণা পারস্পরিক সংঘর্ষেরও জন্ম দেয়। রক্তপাত ঘটে। আমাদের দেশে যেমনটা ঘটেছে।
কিন্তু আমাদের দেশে তো বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে একত্রে বসবাস করেও এসেছে। হিন্দু কৃষক ও মুসলমান কৃষকের মধ্যে সংঘর্ষ বাধেনি। তারা একে অপরকে উৎখাত করতে চায়নি। নদীতে হিন্দু জেলে ও মুসলমান জেলে একসঙ্গে মাছ ধরেছে। তাঁতিরা তাঁত বুনেছে। সাধারণ মানুষ একে অপরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ও মসজিদের আজান একসঙ্গে মিশে গেছে। মানুষ একই পথ ধরে হেঁটেছে, একই বাজার-হাটে গিয়ে কেনাবেচা করেছে, থেকেছে একই আকাশের নিচে। কে হিন্দু, কে মুসলমান তা নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেনি, নাক সিটকায়নি। তাহলে? সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করল কারা? তৈরি হলো কীভাবে? কেন?
শুধু করল দুই দিকের দুই মধ্যবিত্ত–হিন্দু মধ্যবিত্ত ও মুসলিম মধ্যবিত্ত। ব্রিটিশ যুগেই এ ঘটনার সূচনা। তার আগে সম্প্রদায় ছিল, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। ব্রিটিশ আমলে হিন্দু মধ্যবিত্ত শিক্ষায় ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠায় উঠতি মুসলিম মধ্যবিত্তের তুলনায় অন্তত পঞ্চাশ বছর এগিয়ে ছিল। মুসলিম মধ্যবিত্ত দেখল, জায়গা তেমন খোলা নেই, অন্যরা দখল করে নিয়েছে। শুরু হলো দুই পক্ষের প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যারা দখল করে রেখেছে, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। শাসক ব্রিটিশরা এ ব্যাপারে দুই পক্ষকেই উসকানি দিল, যাতে তাদের রেষারেষিটা আরও বাড়ে। বাড়লে ব্রিটিশের সুবিধা, কেননা ঝগড়াটা তখন শাসক-শাসিতের থাকবে না, হয়ে দাঁড়াবে হিন্দু-মুসলমানের।
ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু সেই সংগ্রামে হিন্দু ও মুসলিম ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেনি, পারেনি ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধের কারণে। অবিভক্ত বঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে দুই সম্প্রদায়কে কাছে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন দাশ কিছুটা এগিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগে দুই সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে চাকরির সুযোগ-সুবিধা অর্ধেক অর্ধেক ভাগাভাগিতে তাঁরা সম্মত হন। এই চুক্তি তৈরি হয় ১৯২৩-এ, এর দুই বছর পর চিত্তরঞ্জন পরলোক গমন করেন এবং বলাই বাহুল্য ওই চুক্তি মোটেই বাস্তবায়িত হয়নি, বরং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, একের পর এক দাঙ্গা ঘটেছে এবং শেষ পর্যন্ত বাংলা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। মূল কারণ দুই মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্ব, যাতে ব্রিটিশের উসকানি খুব কাজে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা ওপর থেকে নিচে নেমেছে। নিচ থেকে ওপরে ওঠেনি।
চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর পর বাংলায় সর্বভারতীয় রাজনীতির অবাধ প্রবেশ ঘটে। ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়েই অত্যন্ত তৎপর হয়ে ওঠে। কংগ্রেস নিজেকে অসাম্প্রদায়িক বলত, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটি ছিল হিন্দুপ্রধান প্রতিষ্ঠান। গান্ধী নিজে অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, কিন্তু তিনি ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে চাননি। ফলে ধর্মীয় ধ্বনি তুলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির কাজটা মোটেই বাধাপ্রাপ্ত হয়নি। কংগ্রেসে কট্টর সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন লোকেরা ছিল এবং তারাই শেষ পর্যন্ত মূল শক্তি হয়ে ওঠে, পরে তারা গান্ধীকে পর্যন্ত হত্যা করে। ওদিকে মুসলিম লীগ তো মুসলিমদের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই গড়ে উঠেছে, তার নেতা জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে, অর্থাৎ ভারতে হিন্দু ও মুসলমান দুটি ভিন্ন ভিন্ন জাতি এই মতবাদের ওপর তাঁর রাজনীতিকে দাঁড় করিয়েছিলেন। কংগ্রেস ও লীগ উভয়ের রাজনীতিই হয়ে দাঁড়াল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।
ভারতবর্ষ ভাঙল, বাংলাও দুই টুকরো হলো, মূল কারণ ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধ এবং সেই সঙ্গে ব্রিটিশের উসকানি। কিন্তু তারপরেও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটল না। অবসান হবে বলে অনেকে আশা করেছিলেন। কেননা, ভারত হয়ে দাঁড়াল হিন্দুপ্রধান এবং পাকিস্তান মুসলিমপ্রধান। দুই রাষ্ট্রে দুই সম্প্রদায়ের প্রাধান্য এমন প্রবল যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে সংখ্যাগুরুর সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হবে, এটা মোটেই সম্ভব ছিল না। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতার পূর্বতন যে ভিত্তি ছিল, সেটা আর রইল না। দ্বন্দ্বের শেষ হলো। কিন্তু তবু যে সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়ে গেল না, তার কারণ কী? কারণটা হলো বৈষয়িক লালসা। আরও স্পষ্ট করে বললে সম্পত্তির লোভ। সম্পত্তি বলতে এ ক্ষেত্রে জমি, বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিবাকরি, সুযোগ-সুবিধা সবকিছুই বোঝাবে। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা সংখ্যালঘুদের উৎখাত করে তাদের সম্পত্তি দখল করতে তৎপর হয়ে উঠল। আসলে এ হচ্ছে দুর্বলের ওপর প্রবলের অত্যাচার। প্রবল, অর্থাৎ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা, দুর্বলের অর্থাৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি কেড়ে নিতে থাকল। ব্যাপারটি ছিল লুণ্ঠন, কিন্তু তার ওপর একটা আচ্ছাদন দেওয়া হলো, সেটা ধর্মীয়। ধর্মীয় আচ্ছাদনে দুটো সুবিধা। এক. এতে লুটপাটের ব্যাপারটাকে পবিত্র কর্তব্য বলে সাজানো যায়। দুই. ধর্মের জিগির তুললে মানুষের মধ্যে উন্মাদনাও তৈরি করা সহজে সম্ভব হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্রকে আমরা মানিনি। আমরা তার জিঞ্জির ছিঁড়ে বের হয়ে এসেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দ্বিজাতি তত্ত্ব পরিত্যক্ত হয়েছে। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জায়গায় এসেছে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। তবু সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়নি। না হওয়ার কারণ অন্য কিছু নয়, ওই যে সম্পত্তি দখল করা, সেটাই। সংখ্যালঘু হিন্দুরা এখানে দুর্বল, সংখ্যাগুরু মুসলমানরা তাই তাদের সম্পত্তি কবজা করতে তৎপর। কেবল যে হিন্দু সম্পত্তি লুণ্ঠিত হচ্ছে তা নয়, মুসলমানদের সম্পত্তিও চলে যাচ্ছে ধনীদের হাতে। কিন্তু হিন্দুদের সম্পত্তি বিশেষভাবে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। প্রথমত, অধিকাংশ হিন্দুই দরিদ্র; দ্বিতীয়ত, তারা আবার সংখ্যায় কম। তৃতীয়ত, তাদের সম্পত্তি দখল করার সময় ধর্মকে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
সাম্প্রদায়িকতা তাই ধর্মের ব্যাপার নয়, ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যাপার বটে। ধর্মব্যবসায়ীরা ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং বর্তমান আমলেও ধর্মকে ব্যবহার করে লুণ্ঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। যে জন্য সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটছে না।
সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারটা বোঝা গেল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর প্রতিকার কী? প্রতিকার খোঁজার আগে রাষ্ট্রের ভূমিকাটার দিকে তাকানো দরকার। ব্রিটিশ আমলে রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক বিরোধকে উসকানি দিয়েছে। পাকিস্তানের কালে রাষ্ট্র হিন্দুদের শত্রু বলে বিবেচনা করতে চেয়েছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রও যে ধর্মনিরপেক্ষ, তা বলা যাবে না। এই রাষ্ট্রের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার কথা ছিল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবেই এর অভ্যুদয় ঘটেছে। কিন্তু সংবিধানে এখন ধর্মনিরপেক্ষতা আর নেই। আমেরিকানরা আমাদের রাষ্ট্রকে মুসলিম রাষ্ট্র বলছে, আমরা প্রতিবাদ করছি না। বলছি না যে আমাদের রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক। এখানে সব নাগরিকের রয়েছে সমান অধিকার। আমরা প্রতিবাদ করছি না কথাটার অর্থ হলো, আমাদের যারা শাসন করে, তারা প্রতিবাদ করছে না। এ ব্যাপারে সরকার উৎসাহী নয়, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে কোনো দলেরই উদ্যোগ নেই, বরং ক্ষমতাসীন দলই ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। আর তারাই হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে আমাদের মুখপাত্র।
সংখ্যালঘুরা নিরাপদ বোধ করে না। নীরবে তাদের দেশত্যাগ যে ঘটছে, এটা মিথ্যা নয়। আমাদের রাষ্ট্রে বলতে গেলে কোনো নাগরিকেরই জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিশেষভাবে বিপন্ন। মূল কারণ হলো রাষ্ট্রের চরিত্র। যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, যার জন্য সংগ্রাম করেছি, সেই রাষ্ট্র আমরা পাইনি। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য রয়েছে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্যই প্রধান, সেই সঙ্গে নারী-পুরুষের বৈষম্যও স্পষ্ট এবং সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মধ্যকার পুরোনো বৈষম্য শেষ হয়ে যায়নি।
রাষ্ট্রকে তাই গণতান্ত্রিক করা চাই। শ্রেণি, ধর্ম, নারী-পুরুষ, জাতিসত্তানির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। তা না হলে শোষণ, লুণ্ঠন, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিসত্তার নিপীড়ন—কোনো ব্যাধিরই শেষ হবে না। আমরা ভুগতে থাকব এবং ভুগতে ভুগতে কেবলই দুর্বল হব।
কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্রে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনটা কীভাবে আসবে? নির্বাচনের মধ্য দিয়ে? সে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনেরা রাষ্ট্রের চরিত্রে বদল আনতে চাইবে না, চাইবে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ন রেখে লুণ্ঠন করতে। সে জন্য যারা দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক, তাদেরই কর্তব্য হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করা। আন্দোলন ছাড়া মুক্তির অন্য কোনো উপায় নেই। এ ব্যাপারটা আমাদের বুঝতে হবে। আমরা সামরিক শাসন দেখেছি, নির্বাচনও দেখেছি এবং দেখব। সামরিক সরকার অবৈধ, নির্বাচিত সরকার কি বৈধ? তথাকথিত বৈধ-অবৈধ যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, দুর্বল মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আসে না। স্বাধীন দেশে সরকার তো কয়েকবার বদল হয়েছে, কিন্তু দুর্বলের ভাগ্য প্রসন্ন হয়েছে কি? হয়নি। তাই সাধারণ মানুষের স্বার্থ যারা দেখবে, তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং অশুভ সাম্প্রদায়িকতাকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে। তা না হলে সাম্প্রদায়িকতার আরও নগ্ন ও সহিংস ঘটনা আমাদের দেখতে হবে।
লেখক: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১৫ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১৫ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৬ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৬ ঘণ্টা আগে