সাইফুল ইসলাম তালুকদার
আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষা উন্নয়নে শিক্ষকদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে ১৯৯৫ সাল থেকে ইউনেসকোর মাধ্যমে সারা বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে ইউনেসকো প্রতি বছর একটি স্লোগান প্রকাশ করে। এবারের স্লোগান—‘শিক্ষা পুনরুদ্ধারের প্রাণই হলো শিক্ষক’। স্লোগানটির মর্মার্থ যত দ্রুত উপলব্ধি হবে, শিক্ষা পুনরুদ্ধারে সাফল্য তত দ্রুত অর্জন করা যাবে। করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হওয়ার প্রায় ৫৪৪ দিন পর গত ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়গুলো খোলা হয়েছে। ফলে শিক্ষা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপরেখা তৈরির এখনই সেরা সময়। ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপকল্প প্রস্তুতের জন্য শিক্ষকেরাই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমাদের এই মুহূর্তে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা দরকার তা হলো—
শিক্ষকতা পেশার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: আলোকিত টিচার্স গত মাসে শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নে একটি সার্ভে করেছিল। সেখানে শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল—তাঁরা কি তাঁদের পেশাকে নিরাপদ মনে করেন? ২৫ শতাংশ শিক্ষকই এই প্রশ্নে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তাঁদের এই নেতিবাচক মন্তব্যের পেছনে যুক্তিগুলোও আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। অনেকেই করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে জীবিকার জন্য অন্য পেশাগুলো বেছে নিয়েছেন। অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, করোনাকালে প্রায় ১০ হাজার কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। শিক্ষকতা পেশার নিরাপত্তা না থাকায় ভবিষ্যতে এ পেশায় অনেক মেধাবীই আসতে চাইবে না। এখনই সময় এই পেশার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শিক্ষকেরা যেন ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সে জন্য বিভিন্ন বিমা, বিশেষ ঋণ সহায়তা দিয়ে পেশার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন সুনির্দিষ্ট করে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। শিক্ষকেরা যেন বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন, সময়ের সঙ্গে জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা করে তাঁদের বেতন-ভাতা মানসম্মত করা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
আগ্রহীদেরই শিক্ষকতায় নেওয়া দরকার: শিক্ষা সময়ের সেরা বিনিয়োগের ক্ষেত্র। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। ভারতের নোবেলজয়ী শিক্ষাবিদ কৈলাস সত্যার্থী বলেন, শিক্ষায় ১ ডলার বিনিয়োগ করলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে তা ১৫ গুন হয়ে ফিরে আসে। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী মূল্যায়নের মাধ্যমে এই পেশায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
শিক্ষকের দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া: প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পৃথিবী প্রতি সেকেন্ডে বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদেরও বদলাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একজন শিক্ষক আজকেই আগামী দশকের সময়, সুযোগ ও সমস্যা মোকাবিলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছেন। ফলে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিতে হবে। আলোকিত টিচার্সের গত মাসে করা জরিপে শিক্ষকদের একটি প্রশ্ন করেছিল, শিক্ষকেরা তাদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন মনে করেন কি না? এতে অংশগ্রহণকারীদের ৮৬ দশমিক ৭ শতাংশই দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন। করোনার মতো যেকোনো মহামারি মোকাবিলায় শিক্ষকদের আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। করোনার মতো পরিস্থিতিতে কীভাবে শিক্ষাকে পুনরুদ্ধার করা যায়, সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখতে হলে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল দুই উপাদান হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অভিভাবকের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক সাফল্য পেতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। করোনাকালে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা দীর্ঘসময় বাড়িতে অবস্থান করায় শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিকভাবে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে শিক্ষকেরা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সহযোগিতা করতে হবে। আর এই সার্বিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আন্তযোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই।
শিক্ষকতা হোক আনন্দদায়ক: শিক্ষা আনন্দদায়ক হোক—এটা সবার প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে বরাবরই শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করা হয়। শিক্ষার পাঠ্যক্রমেও শিক্ষার্থীর গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের চাপ কমানোর জন্য নানান পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমাদের ভাবতে হবে, শিক্ষকদেরও চাপমুক্ত রাখার বিষয়টি। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকেরা শিক্ষকতার পাশাপাশি অনেক জরিপকাজে অংশ নেন। অন্য শিক্ষকদেরও শিক্ষণের পাশাপাশি অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। এর সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন শিক্ষক। ফলে মূল কাজ শিক্ষণ থেকে অনেক সময়ই একজন শিক্ষককে বিচ্যুত হতে হয়। এর পরিবর্তন দরকার। পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য বিনোদন ছুটির ব্যবস্থা করাও জরুরি। শিক্ষকের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। এ জন্য নানা প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার ব্যবস্থা করা যায়।
শিক্ষকদের স্বীকৃতি দেওয়া: শিক্ষকতায় স্বীকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনা হিসেবে কাজ করে। ফলে শিক্ষকদের প্রতিটি কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠানই বছর শেষে ‘সেরা শিক্ষক’ ঘোষণার মাধ্যমে শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি দেয়। এই বছর সরকার এটুআই ও গ্রামীণফোনের উদ্যোগে ‘সংকটে নেতৃত্বে’ শিরোনামে শিক্ষকদের সম্মাননা দিয়েছে। এ ছাড়া আলোকিত টিচার্স ‘টিচার্স ইনোভেটরস-২০২১’ এর মাধ্যমে শিক্ষকদের নানা উদ্ভাবনের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের সব শিক্ষক থেকে আসা নানা উদ্ভাবনের মধ্যে সেরা তিনজনকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষকদের উদ্ভাবন ও কাজের স্বীকৃতি দিতে পারে।
আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে তার ভিতটি তৈরি করেন আজকের শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন হবে না। ফলে শিক্ষকের দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাধীনতা ও সম্মানের বিষয়ে যত্নশীল হওয়ার মাধ্যমেই আগামীর স্বনির্ভর ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
সাইফুল ইসলাম তালুকদার: প্রশিক্ষক, আলোকিত টিচার্স
আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষা উন্নয়নে শিক্ষকদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে ১৯৯৫ সাল থেকে ইউনেসকোর মাধ্যমে সারা বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে ইউনেসকো প্রতি বছর একটি স্লোগান প্রকাশ করে। এবারের স্লোগান—‘শিক্ষা পুনরুদ্ধারের প্রাণই হলো শিক্ষক’। স্লোগানটির মর্মার্থ যত দ্রুত উপলব্ধি হবে, শিক্ষা পুনরুদ্ধারে সাফল্য তত দ্রুত অর্জন করা যাবে। করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হওয়ার প্রায় ৫৪৪ দিন পর গত ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়গুলো খোলা হয়েছে। ফলে শিক্ষা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপরেখা তৈরির এখনই সেরা সময়। ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপকল্প প্রস্তুতের জন্য শিক্ষকেরাই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমাদের এই মুহূর্তে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা দরকার তা হলো—
শিক্ষকতা পেশার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: আলোকিত টিচার্স গত মাসে শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নে একটি সার্ভে করেছিল। সেখানে শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল—তাঁরা কি তাঁদের পেশাকে নিরাপদ মনে করেন? ২৫ শতাংশ শিক্ষকই এই প্রশ্নে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তাঁদের এই নেতিবাচক মন্তব্যের পেছনে যুক্তিগুলোও আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। অনেকেই করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে জীবিকার জন্য অন্য পেশাগুলো বেছে নিয়েছেন। অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, করোনাকালে প্রায় ১০ হাজার কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। শিক্ষকতা পেশার নিরাপত্তা না থাকায় ভবিষ্যতে এ পেশায় অনেক মেধাবীই আসতে চাইবে না। এখনই সময় এই পেশার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শিক্ষকেরা যেন ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সে জন্য বিভিন্ন বিমা, বিশেষ ঋণ সহায়তা দিয়ে পেশার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন সুনির্দিষ্ট করে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। শিক্ষকেরা যেন বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন, সময়ের সঙ্গে জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা করে তাঁদের বেতন-ভাতা মানসম্মত করা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
আগ্রহীদেরই শিক্ষকতায় নেওয়া দরকার: শিক্ষা সময়ের সেরা বিনিয়োগের ক্ষেত্র। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। ভারতের নোবেলজয়ী শিক্ষাবিদ কৈলাস সত্যার্থী বলেন, শিক্ষায় ১ ডলার বিনিয়োগ করলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে তা ১৫ গুন হয়ে ফিরে আসে। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী মূল্যায়নের মাধ্যমে এই পেশায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
শিক্ষকের দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া: প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পৃথিবী প্রতি সেকেন্ডে বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদেরও বদলাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একজন শিক্ষক আজকেই আগামী দশকের সময়, সুযোগ ও সমস্যা মোকাবিলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছেন। ফলে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিতে হবে। আলোকিত টিচার্সের গত মাসে করা জরিপে শিক্ষকদের একটি প্রশ্ন করেছিল, শিক্ষকেরা তাদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন মনে করেন কি না? এতে অংশগ্রহণকারীদের ৮৬ দশমিক ৭ শতাংশই দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন। করোনার মতো যেকোনো মহামারি মোকাবিলায় শিক্ষকদের আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। করোনার মতো পরিস্থিতিতে কীভাবে শিক্ষাকে পুনরুদ্ধার করা যায়, সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখতে হলে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল দুই উপাদান হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অভিভাবকের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক সাফল্য পেতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। করোনাকালে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা দীর্ঘসময় বাড়িতে অবস্থান করায় শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিকভাবে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে শিক্ষকেরা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সহযোগিতা করতে হবে। আর এই সার্বিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আন্তযোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই।
শিক্ষকতা হোক আনন্দদায়ক: শিক্ষা আনন্দদায়ক হোক—এটা সবার প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে বরাবরই শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করা হয়। শিক্ষার পাঠ্যক্রমেও শিক্ষার্থীর গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের চাপ কমানোর জন্য নানান পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমাদের ভাবতে হবে, শিক্ষকদেরও চাপমুক্ত রাখার বিষয়টি। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকেরা শিক্ষকতার পাশাপাশি অনেক জরিপকাজে অংশ নেন। অন্য শিক্ষকদেরও শিক্ষণের পাশাপাশি অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। এর সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন শিক্ষক। ফলে মূল কাজ শিক্ষণ থেকে অনেক সময়ই একজন শিক্ষককে বিচ্যুত হতে হয়। এর পরিবর্তন দরকার। পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য বিনোদন ছুটির ব্যবস্থা করাও জরুরি। শিক্ষকের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। এ জন্য নানা প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার ব্যবস্থা করা যায়।
শিক্ষকদের স্বীকৃতি দেওয়া: শিক্ষকতায় স্বীকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনা হিসেবে কাজ করে। ফলে শিক্ষকদের প্রতিটি কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠানই বছর শেষে ‘সেরা শিক্ষক’ ঘোষণার মাধ্যমে শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি দেয়। এই বছর সরকার এটুআই ও গ্রামীণফোনের উদ্যোগে ‘সংকটে নেতৃত্বে’ শিরোনামে শিক্ষকদের সম্মাননা দিয়েছে। এ ছাড়া আলোকিত টিচার্স ‘টিচার্স ইনোভেটরস-২০২১’ এর মাধ্যমে শিক্ষকদের নানা উদ্ভাবনের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের সব শিক্ষক থেকে আসা নানা উদ্ভাবনের মধ্যে সেরা তিনজনকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষকদের উদ্ভাবন ও কাজের স্বীকৃতি দিতে পারে।
আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে তার ভিতটি তৈরি করেন আজকের শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন হবে না। ফলে শিক্ষকের দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাধীনতা ও সম্মানের বিষয়ে যত্নশীল হওয়ার মাধ্যমেই আগামীর স্বনির্ভর ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
সাইফুল ইসলাম তালুকদার: প্রশিক্ষক, আলোকিত টিচার্স
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
৬ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
৬ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
৬ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৬ ঘণ্টা আগে