অর্ণব সান্যাল
মানুষ থেকেই মানুষ আসে।
বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ।
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
—শ্রীজাত
আপনাদের বাসায় কোনো স্কুলপড়ুয়া শিশু আছে? বাসায় না থাকলেও বৃহৎ পরিবারের কোনো না কোনো কোনায় শৈশব (সরকারি নিয়মে) কাটাচ্ছে—এমন মানবসন্তান নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। তাদের যদি একটু জিজ্ঞেস করা যায়, প্রাণী আসলে কত প্রকার, তবে অন্যান্য উত্তরের পাশাপাশি অন্তত মেরুদণ্ডী-অমেরুদণ্ডী কথা শোনা যাবে। সেই শোনা বিষয়টি নিয়েই এবার একটু সময় নষ্ট করা যাক।
এসব আমরাও স্কুলে থাকার কালে গলাধঃকরণ করেছি। মেরুদণ্ডের ভিত্তিতে এ পৃথিবীর প্রাণীকুলকে যে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, তা জেনেছি। গেলার বিষয়টা এল, কারণ এ অঞ্চলে বইপত্রের শিক্ষা গিলতে পারাকেই সফলতা বলে মানা হয়। বুদ্ধি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা সবাই ক্লাসের পড়া গিলি। আর যখন বুঝতে পারি যে, এটা হলো গেলা, তখন বড্ড দেরি হয়ে যায়। ফলে চিবানো আর হয় না, গেলা চলতেই থাকে এবং বদহজমও ঠেকানো যায় না। সেভাবে গিলতে গিলতেই কেন জানি ইদানীং বোধ হয়, যতই দিন যাচ্ছে, ততই যেন ভুলে যাচ্ছি, এ বঙ্গের মানুষও একটি মেরুদণ্ডী প্রাণী।
এ কথার তীব্র প্রতিবাদ যে কেউ করতেই পারেন। যদিও ‘প্রতিবাদ’ বিষয়টাকে বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্র বাস্তবতায় একটু বাঁকা চোখেই দেখা হয়। ধরে নিলাম, আপনি প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে বাঁকা চোখকে ‘বাঁকা’ভাবেই দেখে থাকেন। সেই অনির্বচনীয় সাহস দেখিয়ে আপনি বলেই দিলেন, আমি ‘বাজে’ বকছি। এবার তবে চূড়ান্ত সভ্য মানব হিসেবে এর কারণ দর্শানোর পথে হাঁটি।
মেরুদণ্ড এমন এক জায়গায় থাকে, ওটি আসলে নিজ চোখে দেখা বেশ কঠিন। মানুষ তার মাথা ৩৬০ ডিগ্রিতে ঘোরাতে পারে না। ফলে নিজের চোখে নিজের চর্ম-আবৃত মেরুদণ্ড প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। অন্য কারও চোখে দেখতে হয়। এর বাইরে আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখার সুযোগ আছে, তবে কসরত করতে হবে। ফলে বইপত্রের জ্ঞান হাতেকলমে নিরীক্ষা করতে নিজের হাতের শরণাপন্ন হতে হয়। তাতেই পিঠের মাঝ বরাবর ‘শক্ত শক্ত’ কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
কিন্তু সব সময় কি তা পাওয়া যায়? সর্বদাই কি জায়গার জিনিস জায়গায় থাকে?
ঠিক যেমন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৬২ তম ব্যাচের ছাত্র মো. মাহাদি আকিব এখন তাঁর মাথায় হাত বুলালে কিয়দংশ হাড় পাবেন না। তাঁর মাথার খুলি থেঁতলে গেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাঁর পুরো মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ মোড়ানো। এক পাশে গোলাকার দাগ টানা হয়েছে, সেখানে লেখা—‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না।’ মাথায় যাতে কেউ স্পর্শ না করে, তাই যথারীতি আঁকা হয়েছে বিপদ চিহ্নও। আর এসব ঘটানোর পেছনে আছে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ। সে সংঘাত এমনই যে, একই দলভুক্ত মানুষেরাও অন্যের মাথা থেঁতলে দেয় নির্দয়ভাবে।
সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ—চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে এমনতর রেষারেষি চলছে। আর তার দরুন কলেজে পড়াশোনা এখন বন্ধ। চলছে দুপক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা দেওয়ার প্রতিযোগিতা।
তো এমন যখন অবস্থা হয়, তখন কি মনে হয় আক্রমণকারীদের মেরুদণ্ড ছিল? এ দেশের ছাত্র রাজনীতির এত দিনের রূপরেখা দেখে আসা যে কেউ নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারবেন—এভাবে পিটিয়ে ছাতু করে ফেলার পেছনে কোনো না কোনো ‘বড় ভাইয়ের’ নির্দেশনা বা উসকানি বা ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা—যে নামই দিন, ছিল সেসব। আর তা না বুঝেই বা বোঝার চেষ্টা না করেই যারা ‘হা রে রে’ বলে রাম দা, হকি স্টিক নিয়ে ছুটে যায়, তাদের আর যাই হোক, মেরুদণ্ড থাকার জো নেই। কারণ, ওটি যাদের থাকে, তারা নিজের জোরেই সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ক্ষমতাশালী কারও কথায় নুয়ে পড়ে অন্ধভাবে ছুটে চলে না।
অন্ধভাবে ছোটার প্রসঙ্গ যখন এলই, তখন আরেকটি কল্পিত উদাহরণ আমলে নেওয়া যাক। ধরুন, আপনার বাড়ি থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অচেনা কেউ কোনো কথিত একটা অপরাধ করল। আর তাতে আপনার পাশের বাড়ির এক প্রতিবেশীর মাথা গরম হয়ে গেল। তিনি এসে আপনাকে গালি দিলেন এবং আপনার বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দিলেন। আপনি কাঁদলেন এবং মাথা কুটলেন। সেই ঘটনা পাড়ার অন্যান্য সব প্রতিবেশী দেখল, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে টুঁ শব্দটি করল না। এর প্রতিকার করার মতো ক্ষমতাসম্পন্ন সংশ্লিষ্টদেরও কেমন একটা গা-ছাড়া ভাব। শেষে এ নিয়ে দেরিতে হলেও হইচই হলে, সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা মন্তব্য করলেন—এটি ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা! তখন কি আপনার মনে হবে, মানুষ একটি মেরুদণ্ডী প্রাণী এবং তারা আপনার আশপাশেই থাকে?
অন্তত এ যুগে এতদঞ্চলে ওপরের প্রশ্নের একটি ইতিবাচক উত্তর দেওয়া কিঞ্চিৎ কঠিন। যেখানে সব প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর কিছু নামের সামনে ম্লান হয়ে যায়, যে দেশে সমালোচনা করতে হয় ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো করে, যেখানে অপরাধ করেও অপরাধী আকাশপথে পালিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়, কেউ খুন হওয়ার কয়েক বছর পর জানা যায়, ওই ব্যক্তি খুন হলেও কেউ খুন করেনি এবং সর্বোপরি যে সমাজে ক্ষমতা ও অর্থই সকল সুখের মূল বলে বিবেচিত—সেখানে মেরুদণ্ডের তত্ত্ব-তালাশ করে সঠিক উত্তর দেওয়া বেজায় অস্বস্তির।
তার চেয়ে বরং চলতি পথের এক বচসার ঘটনা বলি। যানজটে আটকে পড়তে হয়েছিল। পাশের রিকশায় দুই যাত্রী ছিলেন। তাঁরা জট থেকে ছাড়া পেতে নেমে পড়তে চেয়েছিলেন। তখন ভাড়া নিয়ে কিছুটা দ্বান্দ্বিক পরিবেশ তৈরি করে ফেলেন যাত্রী ও রিকশাওয়ালা। শেষে তা গড়াল যাত্রীকে কেন ‘স্যার’ ডাকছে না রিকশার চালক! ওই চালকের এক কথা, শিক্ষককেই শুধু তিনি স্যার ডাকতে রাজি, অন্য কাউকে নয়। এ নিয়ে তুমুল শোরগোলের মধ্যেই জট ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিল। যাত্রীদ্বয়ও ক্ষান্ত দিলেন, যাওয়ার পথ ধরলেন। তবে সেই রিকশার চালক এক মনে বলেই চলেছেন সোচ্চারে–‘স্যার ডাকুম কেন? আমারে পড়াইছে?’
জটজর্জর রাজপথে এমন প্রতিবাদী চিৎকার হুট করে শুনলে প্রথমে সুখী বোধ হয়। মনে হয়, ‘বাহ্, ওর তো আছে! একদিন তবে আমিও…’
কিন্তু বাক্য অসম্পূর্ণই থেকে যায়। প্রবল হর্নে ভাবনা চাপা পড়ে যেতে সময় লাগে না। মাহাদির মাথার ব্যান্ডেজ, দিয়াজের মায়ের আহাজারি বা অধরা প্রিয়ার অসহায় কান্না দেখতে দেখতে আর পিঠে হাত বোলানোর সময় মেলে না। ফেসবুকে ওসবের পোস্টে নিস্পৃহ ‘স্যাড’ ইমো দিতে দিতে ভুলে যাই ‘অ্যাংরি’ ইমোকে। কারণ, গায়েবি বাঁজখাই স্বর নিশ্চিত করেছে, ‘মেরুদণ্ড নেই, চাপ নেবেন না!’
মানুষ থেকেই মানুষ আসে।
বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ।
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
—শ্রীজাত
আপনাদের বাসায় কোনো স্কুলপড়ুয়া শিশু আছে? বাসায় না থাকলেও বৃহৎ পরিবারের কোনো না কোনো কোনায় শৈশব (সরকারি নিয়মে) কাটাচ্ছে—এমন মানবসন্তান নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। তাদের যদি একটু জিজ্ঞেস করা যায়, প্রাণী আসলে কত প্রকার, তবে অন্যান্য উত্তরের পাশাপাশি অন্তত মেরুদণ্ডী-অমেরুদণ্ডী কথা শোনা যাবে। সেই শোনা বিষয়টি নিয়েই এবার একটু সময় নষ্ট করা যাক।
এসব আমরাও স্কুলে থাকার কালে গলাধঃকরণ করেছি। মেরুদণ্ডের ভিত্তিতে এ পৃথিবীর প্রাণীকুলকে যে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, তা জেনেছি। গেলার বিষয়টা এল, কারণ এ অঞ্চলে বইপত্রের শিক্ষা গিলতে পারাকেই সফলতা বলে মানা হয়। বুদ্ধি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা সবাই ক্লাসের পড়া গিলি। আর যখন বুঝতে পারি যে, এটা হলো গেলা, তখন বড্ড দেরি হয়ে যায়। ফলে চিবানো আর হয় না, গেলা চলতেই থাকে এবং বদহজমও ঠেকানো যায় না। সেভাবে গিলতে গিলতেই কেন জানি ইদানীং বোধ হয়, যতই দিন যাচ্ছে, ততই যেন ভুলে যাচ্ছি, এ বঙ্গের মানুষও একটি মেরুদণ্ডী প্রাণী।
এ কথার তীব্র প্রতিবাদ যে কেউ করতেই পারেন। যদিও ‘প্রতিবাদ’ বিষয়টাকে বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্র বাস্তবতায় একটু বাঁকা চোখেই দেখা হয়। ধরে নিলাম, আপনি প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে বাঁকা চোখকে ‘বাঁকা’ভাবেই দেখে থাকেন। সেই অনির্বচনীয় সাহস দেখিয়ে আপনি বলেই দিলেন, আমি ‘বাজে’ বকছি। এবার তবে চূড়ান্ত সভ্য মানব হিসেবে এর কারণ দর্শানোর পথে হাঁটি।
মেরুদণ্ড এমন এক জায়গায় থাকে, ওটি আসলে নিজ চোখে দেখা বেশ কঠিন। মানুষ তার মাথা ৩৬০ ডিগ্রিতে ঘোরাতে পারে না। ফলে নিজের চোখে নিজের চর্ম-আবৃত মেরুদণ্ড প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। অন্য কারও চোখে দেখতে হয়। এর বাইরে আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখার সুযোগ আছে, তবে কসরত করতে হবে। ফলে বইপত্রের জ্ঞান হাতেকলমে নিরীক্ষা করতে নিজের হাতের শরণাপন্ন হতে হয়। তাতেই পিঠের মাঝ বরাবর ‘শক্ত শক্ত’ কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
কিন্তু সব সময় কি তা পাওয়া যায়? সর্বদাই কি জায়গার জিনিস জায়গায় থাকে?
ঠিক যেমন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৬২ তম ব্যাচের ছাত্র মো. মাহাদি আকিব এখন তাঁর মাথায় হাত বুলালে কিয়দংশ হাড় পাবেন না। তাঁর মাথার খুলি থেঁতলে গেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাঁর পুরো মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ মোড়ানো। এক পাশে গোলাকার দাগ টানা হয়েছে, সেখানে লেখা—‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না।’ মাথায় যাতে কেউ স্পর্শ না করে, তাই যথারীতি আঁকা হয়েছে বিপদ চিহ্নও। আর এসব ঘটানোর পেছনে আছে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ। সে সংঘাত এমনই যে, একই দলভুক্ত মানুষেরাও অন্যের মাথা থেঁতলে দেয় নির্দয়ভাবে।
সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ—চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে এমনতর রেষারেষি চলছে। আর তার দরুন কলেজে পড়াশোনা এখন বন্ধ। চলছে দুপক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা দেওয়ার প্রতিযোগিতা।
তো এমন যখন অবস্থা হয়, তখন কি মনে হয় আক্রমণকারীদের মেরুদণ্ড ছিল? এ দেশের ছাত্র রাজনীতির এত দিনের রূপরেখা দেখে আসা যে কেউ নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারবেন—এভাবে পিটিয়ে ছাতু করে ফেলার পেছনে কোনো না কোনো ‘বড় ভাইয়ের’ নির্দেশনা বা উসকানি বা ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা—যে নামই দিন, ছিল সেসব। আর তা না বুঝেই বা বোঝার চেষ্টা না করেই যারা ‘হা রে রে’ বলে রাম দা, হকি স্টিক নিয়ে ছুটে যায়, তাদের আর যাই হোক, মেরুদণ্ড থাকার জো নেই। কারণ, ওটি যাদের থাকে, তারা নিজের জোরেই সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ক্ষমতাশালী কারও কথায় নুয়ে পড়ে অন্ধভাবে ছুটে চলে না।
অন্ধভাবে ছোটার প্রসঙ্গ যখন এলই, তখন আরেকটি কল্পিত উদাহরণ আমলে নেওয়া যাক। ধরুন, আপনার বাড়ি থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অচেনা কেউ কোনো কথিত একটা অপরাধ করল। আর তাতে আপনার পাশের বাড়ির এক প্রতিবেশীর মাথা গরম হয়ে গেল। তিনি এসে আপনাকে গালি দিলেন এবং আপনার বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দিলেন। আপনি কাঁদলেন এবং মাথা কুটলেন। সেই ঘটনা পাড়ার অন্যান্য সব প্রতিবেশী দেখল, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে টুঁ শব্দটি করল না। এর প্রতিকার করার মতো ক্ষমতাসম্পন্ন সংশ্লিষ্টদেরও কেমন একটা গা-ছাড়া ভাব। শেষে এ নিয়ে দেরিতে হলেও হইচই হলে, সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা মন্তব্য করলেন—এটি ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা! তখন কি আপনার মনে হবে, মানুষ একটি মেরুদণ্ডী প্রাণী এবং তারা আপনার আশপাশেই থাকে?
অন্তত এ যুগে এতদঞ্চলে ওপরের প্রশ্নের একটি ইতিবাচক উত্তর দেওয়া কিঞ্চিৎ কঠিন। যেখানে সব প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর কিছু নামের সামনে ম্লান হয়ে যায়, যে দেশে সমালোচনা করতে হয় ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো করে, যেখানে অপরাধ করেও অপরাধী আকাশপথে পালিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়, কেউ খুন হওয়ার কয়েক বছর পর জানা যায়, ওই ব্যক্তি খুন হলেও কেউ খুন করেনি এবং সর্বোপরি যে সমাজে ক্ষমতা ও অর্থই সকল সুখের মূল বলে বিবেচিত—সেখানে মেরুদণ্ডের তত্ত্ব-তালাশ করে সঠিক উত্তর দেওয়া বেজায় অস্বস্তির।
তার চেয়ে বরং চলতি পথের এক বচসার ঘটনা বলি। যানজটে আটকে পড়তে হয়েছিল। পাশের রিকশায় দুই যাত্রী ছিলেন। তাঁরা জট থেকে ছাড়া পেতে নেমে পড়তে চেয়েছিলেন। তখন ভাড়া নিয়ে কিছুটা দ্বান্দ্বিক পরিবেশ তৈরি করে ফেলেন যাত্রী ও রিকশাওয়ালা। শেষে তা গড়াল যাত্রীকে কেন ‘স্যার’ ডাকছে না রিকশার চালক! ওই চালকের এক কথা, শিক্ষককেই শুধু তিনি স্যার ডাকতে রাজি, অন্য কাউকে নয়। এ নিয়ে তুমুল শোরগোলের মধ্যেই জট ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিল। যাত্রীদ্বয়ও ক্ষান্ত দিলেন, যাওয়ার পথ ধরলেন। তবে সেই রিকশার চালক এক মনে বলেই চলেছেন সোচ্চারে–‘স্যার ডাকুম কেন? আমারে পড়াইছে?’
জটজর্জর রাজপথে এমন প্রতিবাদী চিৎকার হুট করে শুনলে প্রথমে সুখী বোধ হয়। মনে হয়, ‘বাহ্, ওর তো আছে! একদিন তবে আমিও…’
কিন্তু বাক্য অসম্পূর্ণই থেকে যায়। প্রবল হর্নে ভাবনা চাপা পড়ে যেতে সময় লাগে না। মাহাদির মাথার ব্যান্ডেজ, দিয়াজের মায়ের আহাজারি বা অধরা প্রিয়ার অসহায় কান্না দেখতে দেখতে আর পিঠে হাত বোলানোর সময় মেলে না। ফেসবুকে ওসবের পোস্টে নিস্পৃহ ‘স্যাড’ ইমো দিতে দিতে ভুলে যাই ‘অ্যাংরি’ ইমোকে। কারণ, গায়েবি বাঁজখাই স্বর নিশ্চিত করেছে, ‘মেরুদণ্ড নেই, চাপ নেবেন না!’
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
৯ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
৯ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
৯ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৯ ঘণ্টা আগে