মামুনুর রশীদ
স্কুল-কলেজ খুলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়েছে; কিন্তু খোলার তারিখ ঘোষণা হয়নি। সে জন্য হলগুলো খোলেনি। অবর্ণনীয় সব কষ্ট নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা আত্মীয়স্বজনের বাড়ি অথবা অস্থায়ী সাবলেট নিয়ে থাকছে। দুটি বছর কেটে গেল, স্কুলে অটোপাস দেওয়া হলো। সে-ও আকাঙ্ক্ষিত নয়।
সারা পৃথিবীতেই শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা লন্ডভন্ড অবস্থা। শিক্ষা যে শুধু বইপুস্তক বা ক্লাস কিংবা পরীক্ষা নয়, এবারে তার প্রমাণ পাওয়া গেল। শিক্ষার্থীর জীবনে একটা বড় সংস্কৃতি। একটা বড় সমাজ যেখানে শিক্ষক থাকেন, ওপরের ক্লাসের, নিচের ক্লাসের ছাত্রছাত্রী থাকে, প্রতিযোগিতা থাকে, বন্ধুত্ব থাকে আবার পছন্দ-অপছন্দ থাকে। এসএসসি পাস করার পর স্কুলজীবনটা শেষ হয়ে যায়, তারপর শুরু হয় কলেজজীবন।
এই কলেজজীবনটা বড়ই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বন্ধুবান্ধব আসে। শিক্ষকেরা আসেন। একটা অপরিচিতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দ্রুতই একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দুই বছরের এই বন্ধুত্বটা বেশ স্থায়ী হয়। এই সময় কৈশোর আর যৌবনের ক্রান্তিকাল। এ সময়ই ভুলের সময় আবার ভুল শোধরানোরও সময়। স্কুলজীবনের অভিজ্ঞতাগুলো নতুন করে যাচাই করারও একটা সময়। অনেক অসম্ভব কল্পনা বাসা বাঁধে স্বপ্নে বিভোর হয়ে সঠিক-বেঠিক কিছু একটা করে ফেলতেও ইচ্ছে করে। এ সময়টা পার হলেই বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রকৌশল অথবা কোনো পেশাগত শিক্ষার কাল এসে যায়। তখন স্বপ্ন অনেকটাই স্থিত।
কিন্তু কেন গুরুত্বপূর্ণ ওই কলেজজীবন? কলেজ, সময়টায় এসে ঠিক বোঝা যায় স্কুলের পড়ালেখাটা ঠিক ছিল কি না? অনেক সময়ই ঠিকঠাক থাকে না। ইংরেজিটা দুর্বল, অঙ্কটা ঠিকমতো বুঝে করা হয়নি। ক্লাসের স্যাররা পড়াননি, কোচিংয়ের স্যার অনেক ছাত্রকে টিউশন দিতে গিয়ে সঠিকভাবে নজরটা দেননি।
মনে পড়ে যায় কোনো এক স্যারের কথা। ধরা যাক তিনি দক্ষিণা স্যার, বাংলা পড়াতেন; বিশেষ করে ব্যাকরণ। স্যার কোনো দিনই টিউশনি করতেন না। ক্লাসেই পড়াতেন। না বুঝলে বারবার বোঝাতেন। ছাত্ররাও মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করত। তাই কলেজে এসেও বাংলায় কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। কলেজে সবচেয়ে অসুবিধাটা হচ্ছে ইংরেজি আর অঙ্ক নিয়ে। ইংরেজির স্যার ক্লাসে আসতেন বিলম্বে, সঙ্গে নিয়ে আসতেন নোটবই। মূল বই না পড়িয়ে নোটবই থেকে নোট নিতে বলতেন। তারপর বিকেলে তাঁর কোচিং। সেখানেও নোটবই। বাক্য গঠন থেকে শুরু করে ব্যাকরণের মূল সূত্রগুলোই একটা ফাঁকে পড়ে থাকত। সেই ফাঁক থেকে বেরোনোর কোনো উপায় থাকল না। কলেজে এসে বারবার হোঁচট খেতে হচ্ছে। প্রাথমিকের অঙ্কের স্যাররা বেশ ভালো ছিলেন। কিন্তু মাধ্যমিকে এসে জ্যামিতি আর অ্যালজেব্রা ঠিকমতো পড়া হলো না।
সবখানেই স্যার কোচিং করাতেন। কোচিং মানে কিছু সহায়ক বই, মানে নোট বা গাইড বুক। ফাইনাল পরীক্ষা এসে যাচ্ছে আর নাকেমুখে শুরু হয় মুখস্থ। কলেজে এসেই বোঝা গেল অঙ্ক মুখস্থের বিষয় নয়, বোঝার বিষয়। ঠিকমতো বুঝতে পারলে কোনো অসুবিধা নেই। অঙ্ক মজার বিষয়, আনন্দের বিষয়। গণিত নিয়ে খেলা হয় অলিম্পিয়াডে। এত সব দুর্বলতা নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়ে দেখা গেল সেখানেও কোচিং! এ দুটি বছরও গেছে কোচিংয়ের মধ্য দিয়ে। কখনো আবার অনলাইনে কোচিং। অভিভাবকদের টাকা গেছে, কিন্তু শিক্ষাটি হয়নি। এবারে কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজের বন্ধুরা তারপরও থাকে। বাছাইটা হয়ে যায় কতজনের সঙ্গে সম্পর্কটা থাকবে। কিন্তু থেকে যায় স্মৃতি। সব স্মৃতিই আবার আনন্দের নয়, বেদনারও। কিন্তু কেউ যদি কালি দিয়ে দুটি বছরের স্মৃতি, অনুভব সব মুছে দেয়, তবে কেমন হবে? দুটি বছর যে গৃহপালিত প্রাণীর মতো সময়টা পার হয়ে গেল, তার কী হবে? অবশ্য দায়িত্বটা একটা ব্যাধির, একটা ভাইরাসের। আমাদের ওপর সেই ভাইরাসটা অনেক দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা কী ভাবছি? নাকি অদৃষ্টের হাতে সবকিছু চাপিয়ে দিয়েছি।
ভাইরাসকবলিত বিশ্বটা কিছুটা যে অদৃষ্টবাদী হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর মধ্যে ধর্ম ঢুকে যাবে। নানা ধরনের ধর্মব্যবসায়ীদের সুযোগ বাড়বে এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারটাও এ অবস্থার সুযোগ নেবে, যেমন কিছু ব্যবসায়ী এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে আবার রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। আমি অনেক দিন ধরেই বলে আসছি, আমাদের দেশে সুদূরপ্রসারী চিন্তকের (Visionary) একটা সমস্যা আছে। অতীতে যাঁরা সত্যিকারের চিন্তক, তাঁরা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের জায়গায় আসতে পারেননি। এখন তো সবটাই সরকার এবং আমলারাই একচ্ছত্রভাবে আধিপত্য বিস্তার করছে। এই যে লাখ লাখ ছেলেমেয়ে দুটি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বঞ্চিত হলো, তাদের বিষয়টায় কী করা প্রয়োজন। কোনো বিশেষ ব্যবস্থা কি করা যেতে পারে, যাতে এ দুটি বছরের শিক্ষাবঞ্চনা কোনোভাবে পূরণ হতে পারে?
এবারে একটা বড় শিক্ষা হয়েছে সারা পৃথিবীর মানুষের। মানুষ যে শুধু খেয়েপরে ঘরে বসে বাঁচে না, তার যে মুক্ত আলো-বাতাস প্রয়োজন এবং সর্বোপরি একটা সাংস্কৃতিক জীবন থাকা দরকার, সেই উপলব্ধি হয়েছে। প্রথম থেকেই সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ওপর এমনভাবে জোর দেওয়া হয়েছে যে মানুষ তীব্র মানবিক সংকটে থেকেও অন্যের প্রতি মমতা ভুলে গেছে। শিক্ষার্থীদের কি কোনোভাবে একটা সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে আনন্দময় সমাজে নিয়ে আসা যায়?
ইতিমধ্যে যদিও শিক্ষা পণ্য হিসেবে একেবারেই আনন্দহীন হয়ে পড়েছে। এখন শিক্ষা মানেই পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, শিক্ষা মানে নম্বর, যেখানে প্রকৃত শিক্ষার কোনো অবকাশ নেই। শিক্ষার্থীরা ভুলতে বসেছে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, স্নেহশীল শিক্ষক যার স্থান অধিকার করেছেন অর্থগৃধ্নু কোচিং মাস্টার। একটা বড় ধরনের বিপর্যয় হয়ে গেছে শিক্ষার ক্ষেত্রে। কিন্তু নতুন করে ভাবনার কী কোনো অবকাশ আছে?
রাজনীতিকেরা সব সময়ই বলে থাকেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। সেই মেরুদণ্ডটা নানাভাবে বেঁকে গেছে। একদা যখন শিক্ষকেরা তেমন মাইনে পেতেন না, সুযোগ-সুবিধা ছিল না, তখন তাঁরা ছিলেন আদর্শবাদী, শিক্ষার প্রতি অঙ্গীকার ছিল সর্বোচ্চ। এখন শিক্ষকেরা জীবনধারণের জন্য একটা মোটামুটি ভালো বেতন পান। কিন্তু তাতে তাঁদের হয় না। কোচিং সেন্টার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ তাঁদের প্রয়োজন। চোখটা এখন টাকার দিকে, তাই শিক্ষকতার আদর্শ গৌণ হয়ে গেছে। শিক্ষকদের সেই আগের জায়গায় নিয়ে আসা কঠিন। তাই প্রয়োজন নতুন উদ্ভাবনী।
উন্নত বিশ্বে শিক্ষকদের কাজের প্রকৃতির পরিবর্তন হয়। নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজে তাঁরা যুক্ত হন। ভালো শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনাও দেওয়া হয়। মানুষ তৈরির কারিগরদের জন্য সমাজে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়াও প্রয়োজন এবং সেটি প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। ছাত্রদের দীর্ঘ সময় পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকারও প্রয়োজন নেই। শ্রেণিকক্ষেই যেন তার লেখাপড়া শেষ হয়, সে জন্য উপযোগী কারিকুলাম তৈরি করাও জরুরি। শিক্ষার ক্ষেত্রে বিবিধ শিক্ষাব্যবস্থা রোধ করে শিশুকাল থেকে সারা দেশে একই ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করে সব স্কুলই ভালো স্কুল হতে হবে। শিক্ষকদের ওপর প্রশাসনিক অত্যাচারও রোধ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের নানা সৃজনশীল উপায় অবলম্বন করে শ্রেণিকক্ষকে আনন্দময় করতেই হবে। যেহেতু একটা বড় সংকটের পর স্কুল-কলেজ খুলছে, তাই এখনই সময় নতুন করে ভাবার।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
স্কুল-কলেজ খুলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়েছে; কিন্তু খোলার তারিখ ঘোষণা হয়নি। সে জন্য হলগুলো খোলেনি। অবর্ণনীয় সব কষ্ট নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা আত্মীয়স্বজনের বাড়ি অথবা অস্থায়ী সাবলেট নিয়ে থাকছে। দুটি বছর কেটে গেল, স্কুলে অটোপাস দেওয়া হলো। সে-ও আকাঙ্ক্ষিত নয়।
সারা পৃথিবীতেই শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা লন্ডভন্ড অবস্থা। শিক্ষা যে শুধু বইপুস্তক বা ক্লাস কিংবা পরীক্ষা নয়, এবারে তার প্রমাণ পাওয়া গেল। শিক্ষার্থীর জীবনে একটা বড় সংস্কৃতি। একটা বড় সমাজ যেখানে শিক্ষক থাকেন, ওপরের ক্লাসের, নিচের ক্লাসের ছাত্রছাত্রী থাকে, প্রতিযোগিতা থাকে, বন্ধুত্ব থাকে আবার পছন্দ-অপছন্দ থাকে। এসএসসি পাস করার পর স্কুলজীবনটা শেষ হয়ে যায়, তারপর শুরু হয় কলেজজীবন।
এই কলেজজীবনটা বড়ই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বন্ধুবান্ধব আসে। শিক্ষকেরা আসেন। একটা অপরিচিতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দ্রুতই একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দুই বছরের এই বন্ধুত্বটা বেশ স্থায়ী হয়। এই সময় কৈশোর আর যৌবনের ক্রান্তিকাল। এ সময়ই ভুলের সময় আবার ভুল শোধরানোরও সময়। স্কুলজীবনের অভিজ্ঞতাগুলো নতুন করে যাচাই করারও একটা সময়। অনেক অসম্ভব কল্পনা বাসা বাঁধে স্বপ্নে বিভোর হয়ে সঠিক-বেঠিক কিছু একটা করে ফেলতেও ইচ্ছে করে। এ সময়টা পার হলেই বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রকৌশল অথবা কোনো পেশাগত শিক্ষার কাল এসে যায়। তখন স্বপ্ন অনেকটাই স্থিত।
কিন্তু কেন গুরুত্বপূর্ণ ওই কলেজজীবন? কলেজ, সময়টায় এসে ঠিক বোঝা যায় স্কুলের পড়ালেখাটা ঠিক ছিল কি না? অনেক সময়ই ঠিকঠাক থাকে না। ইংরেজিটা দুর্বল, অঙ্কটা ঠিকমতো বুঝে করা হয়নি। ক্লাসের স্যাররা পড়াননি, কোচিংয়ের স্যার অনেক ছাত্রকে টিউশন দিতে গিয়ে সঠিকভাবে নজরটা দেননি।
মনে পড়ে যায় কোনো এক স্যারের কথা। ধরা যাক তিনি দক্ষিণা স্যার, বাংলা পড়াতেন; বিশেষ করে ব্যাকরণ। স্যার কোনো দিনই টিউশনি করতেন না। ক্লাসেই পড়াতেন। না বুঝলে বারবার বোঝাতেন। ছাত্ররাও মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করত। তাই কলেজে এসেও বাংলায় কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। কলেজে সবচেয়ে অসুবিধাটা হচ্ছে ইংরেজি আর অঙ্ক নিয়ে। ইংরেজির স্যার ক্লাসে আসতেন বিলম্বে, সঙ্গে নিয়ে আসতেন নোটবই। মূল বই না পড়িয়ে নোটবই থেকে নোট নিতে বলতেন। তারপর বিকেলে তাঁর কোচিং। সেখানেও নোটবই। বাক্য গঠন থেকে শুরু করে ব্যাকরণের মূল সূত্রগুলোই একটা ফাঁকে পড়ে থাকত। সেই ফাঁক থেকে বেরোনোর কোনো উপায় থাকল না। কলেজে এসে বারবার হোঁচট খেতে হচ্ছে। প্রাথমিকের অঙ্কের স্যাররা বেশ ভালো ছিলেন। কিন্তু মাধ্যমিকে এসে জ্যামিতি আর অ্যালজেব্রা ঠিকমতো পড়া হলো না।
সবখানেই স্যার কোচিং করাতেন। কোচিং মানে কিছু সহায়ক বই, মানে নোট বা গাইড বুক। ফাইনাল পরীক্ষা এসে যাচ্ছে আর নাকেমুখে শুরু হয় মুখস্থ। কলেজে এসেই বোঝা গেল অঙ্ক মুখস্থের বিষয় নয়, বোঝার বিষয়। ঠিকমতো বুঝতে পারলে কোনো অসুবিধা নেই। অঙ্ক মজার বিষয়, আনন্দের বিষয়। গণিত নিয়ে খেলা হয় অলিম্পিয়াডে। এত সব দুর্বলতা নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়ে দেখা গেল সেখানেও কোচিং! এ দুটি বছরও গেছে কোচিংয়ের মধ্য দিয়ে। কখনো আবার অনলাইনে কোচিং। অভিভাবকদের টাকা গেছে, কিন্তু শিক্ষাটি হয়নি। এবারে কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজের বন্ধুরা তারপরও থাকে। বাছাইটা হয়ে যায় কতজনের সঙ্গে সম্পর্কটা থাকবে। কিন্তু থেকে যায় স্মৃতি। সব স্মৃতিই আবার আনন্দের নয়, বেদনারও। কিন্তু কেউ যদি কালি দিয়ে দুটি বছরের স্মৃতি, অনুভব সব মুছে দেয়, তবে কেমন হবে? দুটি বছর যে গৃহপালিত প্রাণীর মতো সময়টা পার হয়ে গেল, তার কী হবে? অবশ্য দায়িত্বটা একটা ব্যাধির, একটা ভাইরাসের। আমাদের ওপর সেই ভাইরাসটা অনেক দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা কী ভাবছি? নাকি অদৃষ্টের হাতে সবকিছু চাপিয়ে দিয়েছি।
ভাইরাসকবলিত বিশ্বটা কিছুটা যে অদৃষ্টবাদী হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর মধ্যে ধর্ম ঢুকে যাবে। নানা ধরনের ধর্মব্যবসায়ীদের সুযোগ বাড়বে এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারটাও এ অবস্থার সুযোগ নেবে, যেমন কিছু ব্যবসায়ী এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে আবার রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। আমি অনেক দিন ধরেই বলে আসছি, আমাদের দেশে সুদূরপ্রসারী চিন্তকের (Visionary) একটা সমস্যা আছে। অতীতে যাঁরা সত্যিকারের চিন্তক, তাঁরা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের জায়গায় আসতে পারেননি। এখন তো সবটাই সরকার এবং আমলারাই একচ্ছত্রভাবে আধিপত্য বিস্তার করছে। এই যে লাখ লাখ ছেলেমেয়ে দুটি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বঞ্চিত হলো, তাদের বিষয়টায় কী করা প্রয়োজন। কোনো বিশেষ ব্যবস্থা কি করা যেতে পারে, যাতে এ দুটি বছরের শিক্ষাবঞ্চনা কোনোভাবে পূরণ হতে পারে?
এবারে একটা বড় শিক্ষা হয়েছে সারা পৃথিবীর মানুষের। মানুষ যে শুধু খেয়েপরে ঘরে বসে বাঁচে না, তার যে মুক্ত আলো-বাতাস প্রয়োজন এবং সর্বোপরি একটা সাংস্কৃতিক জীবন থাকা দরকার, সেই উপলব্ধি হয়েছে। প্রথম থেকেই সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ওপর এমনভাবে জোর দেওয়া হয়েছে যে মানুষ তীব্র মানবিক সংকটে থেকেও অন্যের প্রতি মমতা ভুলে গেছে। শিক্ষার্থীদের কি কোনোভাবে একটা সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে আনন্দময় সমাজে নিয়ে আসা যায়?
ইতিমধ্যে যদিও শিক্ষা পণ্য হিসেবে একেবারেই আনন্দহীন হয়ে পড়েছে। এখন শিক্ষা মানেই পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, শিক্ষা মানে নম্বর, যেখানে প্রকৃত শিক্ষার কোনো অবকাশ নেই। শিক্ষার্থীরা ভুলতে বসেছে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, স্নেহশীল শিক্ষক যার স্থান অধিকার করেছেন অর্থগৃধ্নু কোচিং মাস্টার। একটা বড় ধরনের বিপর্যয় হয়ে গেছে শিক্ষার ক্ষেত্রে। কিন্তু নতুন করে ভাবনার কী কোনো অবকাশ আছে?
রাজনীতিকেরা সব সময়ই বলে থাকেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। সেই মেরুদণ্ডটা নানাভাবে বেঁকে গেছে। একদা যখন শিক্ষকেরা তেমন মাইনে পেতেন না, সুযোগ-সুবিধা ছিল না, তখন তাঁরা ছিলেন আদর্শবাদী, শিক্ষার প্রতি অঙ্গীকার ছিল সর্বোচ্চ। এখন শিক্ষকেরা জীবনধারণের জন্য একটা মোটামুটি ভালো বেতন পান। কিন্তু তাতে তাঁদের হয় না। কোচিং সেন্টার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ তাঁদের প্রয়োজন। চোখটা এখন টাকার দিকে, তাই শিক্ষকতার আদর্শ গৌণ হয়ে গেছে। শিক্ষকদের সেই আগের জায়গায় নিয়ে আসা কঠিন। তাই প্রয়োজন নতুন উদ্ভাবনী।
উন্নত বিশ্বে শিক্ষকদের কাজের প্রকৃতির পরিবর্তন হয়। নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজে তাঁরা যুক্ত হন। ভালো শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনাও দেওয়া হয়। মানুষ তৈরির কারিগরদের জন্য সমাজে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়াও প্রয়োজন এবং সেটি প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। ছাত্রদের দীর্ঘ সময় পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকারও প্রয়োজন নেই। শ্রেণিকক্ষেই যেন তার লেখাপড়া শেষ হয়, সে জন্য উপযোগী কারিকুলাম তৈরি করাও জরুরি। শিক্ষার ক্ষেত্রে বিবিধ শিক্ষাব্যবস্থা রোধ করে শিশুকাল থেকে সারা দেশে একই ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করে সব স্কুলই ভালো স্কুল হতে হবে। শিক্ষকদের ওপর প্রশাসনিক অত্যাচারও রোধ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের নানা সৃজনশীল উপায় অবলম্বন করে শ্রেণিকক্ষকে আনন্দময় করতেই হবে। যেহেতু একটা বড় সংকটের পর স্কুল-কলেজ খুলছে, তাই এখনই সময় নতুন করে ভাবার।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৭ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৮ ঘণ্টা আগে