সৈয়দ ফারুক হোসেন
পরিবেশদূষণ, বায়ুদূষণ, গাড়ির ধোঁয়া, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ধুলা ও যানজটের কারণে বসবাসের অযোগ্য শহর ঢাকা। ঢাকাকে ভাবা হয় দুনিয়ার সবচেয়ে অপরিচ্ছন্ন মেগাসিটি হিসেবে। অসংখ্য সমস্যার মধ্যে যেটি প্রধান হয়ে উঠেছে, তা হচ্ছে দুর্বিষহ যানজট। নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে গ্যাস-পানিসংকট, পয়োনিষ্কাশনের জটিলতা, দুর্গন্ধময় ও বিষাক্ত বাতাস, দূষিত পরিবেশ, অত্যন্ত ঘনবসতি, ভেজাল খাবার, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্দশা, জলাবদ্ধতা, ফুটপাত দখল, চাঁদাবাজি, মাদকের ভয়াল ছোবল, ছিনতাই, আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্য, লাগামহীন বাসাভাড়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ইত্যাদি সমস্যা।
২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্বের ১৪০টি দেশের সংস্কৃতি, জলবায়ু, পরিবেশ, শিক্ষা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের মানের ওপর ভিত্তি করে ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের বৈশ্বিক বাসযোগ্য শহরের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এবার বিশ্বের বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান নিচের দিক থেকে ৩ নম্বর, অর্থাৎ ১৩৮তম। বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় সর্বনিম্নে থাকা ১০ দেশের মধ্যে ঢাকার পরে রয়েছে মাত্র দুটি শহর; একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার দামেস্ক, অপরটি নাইজেরিয়ার লাগোস। পরিকল্পনামাফিক সবকিছু হলে শহরে বসবাসরত মানুষ শৃঙ্খলাপূর্ণ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। এতে তার নাগরিক জীবন হয় মর্যাদাপূর্ণ ও স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এ নগরই আবার পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে উঠলে তাতে নাগরিকদের জীবন অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। জনজীবনকে করে তোলে বিপর্যস্ত। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না। স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসুবিধা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং বকাঠামোসহ
৩০টি মানদণ্ডের বিবেচনায় ঢাকার স্থান তলানিতে।
জলাবদ্ধতা রাজধানীর একাংশের ঘাড়ে এমনই চেপে বসেছে, কোনটি রাস্তা আর কোনটি নর্দমা–তা উপলব্ধি করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মশার উপদ্রবে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেলায়ও স্বস্তিতে থাকা দায়। বাস্তবে ঢাকা শহর বসবাসের জন্য অনুপযোগী। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদ দখলদারিত্বের কবলে পড়ে আবদ্ধ জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে।
যানজটে মানুষের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার হিসাব বিভিন্ন সংস্থা দিয়েছে। বুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যানজটের কারণে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিপিআরসি বলেছে, এর পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ জাতিসংঘের ইউএনডিপি বলেছে, যানজটে বছরে ক্ষতি ৩৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
ঢাকা মহানগরে যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন নির্মাণকাজের কারণে বায়ুদূষণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতিও ভয়াবহ। মশাবাহিত রোগ; যেমন: চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু প্রভৃতির ঝুঁকি রয়েছে ব্যাপক। ময়লা-আবর্জনার কারণে দূষিত পরিবেশ; পেটের পীড়া, জন্ডিস ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় বহু মানুষ। ঢাকার একটি বার্ষিক ব্যাধি ডায়রিয়া। বছরে অন্তত দুবার–বর্ষার শুরুতে ও শেষে এটা দেখা দেয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ঢাকার মলমূত্রের মাত্র ২ শতাংশের নিরাপদ নিষ্কাশন হচ্ছে। বাকিটা মিশে যায় প্রকৃতিতে, পানির উৎসে। স্যানিটেশনব্যবস্থা ভালো নয় বলে একটু বৃষ্টি হলেই সুয়ারেজ, ড্রেন আর পাইপের পানি একাকার হয়ে যায়। আমরা প্রতিনিয়ত এই স্থবির শহরটিতে মরার মতো বেঁচে আছি। দিনে দিনে অবস্থা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৪ হাজার ৫০০ মানুষ বাস করে। ঘনবসতির দিক দিয়ে এক নম্বর অবস্থানে আছে ঢাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের মুম্বাই। বিভিন্ন জরিপে ঢাকার নাজুক অবস্থার কথা উঠে এসেছে বারবার। সর্বশেষ জাতিসংঘের হ্যাবিটেট প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান হয়েছে নিচের দিক থেকে ৪ নম্বর। সম্প্রতি রাজধানীর সীমা ছাড়িয়ে টঙ্গী, গাজীপুর ও আশপাশের অন্য শহরগুলোয়ও একই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ না করেও সহজেই বলা যায়, শহরটির সার্বিক ক্রমাবনতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে এ শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে মানুষ। কিন্তু বায়ুদূষণকারী উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে এখন মনে হচ্ছে, রাজধানীতে বিপুল পরিমাণে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়া, শিল্পকারখানার ধোঁয়া ও সীমান্ত পেরিয়ে আসা দূষিত বায়ু ঢাকা শহরের বাতাসকে বিষিয়ে তুলছে। ঢাকা শহরের বাতাসে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। এরপরেই পর্যায়ক্রমে নির্মাণকাজের ধুলা, যানবাহনের ধোঁয়া ও শিল্পকারখানা থেকে বের হওয়া দূষিত বায়ুর ভূমিকা রয়েছে।
দেশের বায়ুদূষণের অবস্থা একদিকে দিন দিন খারাপ হচ্ছে, অন্যদিকে বায়ুদূষণের উৎস দিন দিন বাড়ছে। বায়ুদূষণ মোকাবিলার প্রথম কাজ হচ্ছে দূষণের উৎস বন্ধ করা। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং জলাশয়গুলো রক্ষা করা। এই দূষিত বায়ুর মধ্যে নগরের মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকবে, সেই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। তবে সবার আগে বায়ুদূষণকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসেবে দেখতে হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এটি সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু বায়ু নয়, ঢাকা শহরের পরিবেশ নিয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। ঢাকা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশুদ্ধ এবং সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। এ সংকটের অনেক কারণের অন্যতম হচ্ছে জলাশয় কমে যাওয়া, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া। গাছপালা কমে যাওয়া, বিশুদ্ধ অক্সিজেনের অভাবও ঢাকা শহরে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে।
অন্যদিকে ঢাকার হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ শহরে পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণজনিত কারণে মারা যান প্রায় সাড়ে ছয় হাজার এবং আবাসস্থলের বায়ুদূষণে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ। পুরো ঢাকা শহরই এখন শব্দদূষণের শিকার। শহরের প্রায় সব এলাকাতেই শব্দ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঢাকার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ কোনো না কোনো ধরনের বধিরতায় আক্রান্ত হবে। ঢাকার পরিবেশদূষণ কতটা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটি তুলে ধরেছে বৈশ্বিকভাবে বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সাম্প্রতিককালে বেশির ভাগ সময় ঢাকা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর। পরিবেশদূষণের কারণে সবার জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও নারী ও শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, বাতাসে ভারী ধাতু ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায়, বুদ্ধিমত্তা কমে যায়।
বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য দূষণমুক্ত বাসযোগ্য একটি সুস্থ, সুন্দর, টেকসই ও পরিবেশসম্মত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনের জন্য সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যুগোপযোগী ও নির্মল পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কার্যকরভাবে মোকাবিলায় বেশ যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং সেগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের রয়েছে অনেক আইন ও বিধি। বিশ্ব উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ অভিঘাতের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন এবং প্রশমন বা কার্বন নিঃসরণ হ্রাস—এই সব খাতে সরকারকে বিভিন্ন পর্যায়ে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
একটি নগরে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। ঢাকাসহ দেশের অন্য শহরগুলোকে পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এখন
সময়ের দাবি।
লেখক: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
পরিবেশদূষণ, বায়ুদূষণ, গাড়ির ধোঁয়া, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ধুলা ও যানজটের কারণে বসবাসের অযোগ্য শহর ঢাকা। ঢাকাকে ভাবা হয় দুনিয়ার সবচেয়ে অপরিচ্ছন্ন মেগাসিটি হিসেবে। অসংখ্য সমস্যার মধ্যে যেটি প্রধান হয়ে উঠেছে, তা হচ্ছে দুর্বিষহ যানজট। নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে গ্যাস-পানিসংকট, পয়োনিষ্কাশনের জটিলতা, দুর্গন্ধময় ও বিষাক্ত বাতাস, দূষিত পরিবেশ, অত্যন্ত ঘনবসতি, ভেজাল খাবার, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্দশা, জলাবদ্ধতা, ফুটপাত দখল, চাঁদাবাজি, মাদকের ভয়াল ছোবল, ছিনতাই, আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্য, লাগামহীন বাসাভাড়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ইত্যাদি সমস্যা।
২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্বের ১৪০টি দেশের সংস্কৃতি, জলবায়ু, পরিবেশ, শিক্ষা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের মানের ওপর ভিত্তি করে ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের বৈশ্বিক বাসযোগ্য শহরের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এবার বিশ্বের বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান নিচের দিক থেকে ৩ নম্বর, অর্থাৎ ১৩৮তম। বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় সর্বনিম্নে থাকা ১০ দেশের মধ্যে ঢাকার পরে রয়েছে মাত্র দুটি শহর; একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার দামেস্ক, অপরটি নাইজেরিয়ার লাগোস। পরিকল্পনামাফিক সবকিছু হলে শহরে বসবাসরত মানুষ শৃঙ্খলাপূর্ণ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। এতে তার নাগরিক জীবন হয় মর্যাদাপূর্ণ ও স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এ নগরই আবার পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে উঠলে তাতে নাগরিকদের জীবন অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। জনজীবনকে করে তোলে বিপর্যস্ত। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না। স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসুবিধা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং বকাঠামোসহ
৩০টি মানদণ্ডের বিবেচনায় ঢাকার স্থান তলানিতে।
জলাবদ্ধতা রাজধানীর একাংশের ঘাড়ে এমনই চেপে বসেছে, কোনটি রাস্তা আর কোনটি নর্দমা–তা উপলব্ধি করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মশার উপদ্রবে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেলায়ও স্বস্তিতে থাকা দায়। বাস্তবে ঢাকা শহর বসবাসের জন্য অনুপযোগী। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদ দখলদারিত্বের কবলে পড়ে আবদ্ধ জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে।
যানজটে মানুষের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার হিসাব বিভিন্ন সংস্থা দিয়েছে। বুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যানজটের কারণে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিপিআরসি বলেছে, এর পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ জাতিসংঘের ইউএনডিপি বলেছে, যানজটে বছরে ক্ষতি ৩৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
ঢাকা মহানগরে যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন নির্মাণকাজের কারণে বায়ুদূষণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতিও ভয়াবহ। মশাবাহিত রোগ; যেমন: চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু প্রভৃতির ঝুঁকি রয়েছে ব্যাপক। ময়লা-আবর্জনার কারণে দূষিত পরিবেশ; পেটের পীড়া, জন্ডিস ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় বহু মানুষ। ঢাকার একটি বার্ষিক ব্যাধি ডায়রিয়া। বছরে অন্তত দুবার–বর্ষার শুরুতে ও শেষে এটা দেখা দেয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ঢাকার মলমূত্রের মাত্র ২ শতাংশের নিরাপদ নিষ্কাশন হচ্ছে। বাকিটা মিশে যায় প্রকৃতিতে, পানির উৎসে। স্যানিটেশনব্যবস্থা ভালো নয় বলে একটু বৃষ্টি হলেই সুয়ারেজ, ড্রেন আর পাইপের পানি একাকার হয়ে যায়। আমরা প্রতিনিয়ত এই স্থবির শহরটিতে মরার মতো বেঁচে আছি। দিনে দিনে অবস্থা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৪ হাজার ৫০০ মানুষ বাস করে। ঘনবসতির দিক দিয়ে এক নম্বর অবস্থানে আছে ঢাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের মুম্বাই। বিভিন্ন জরিপে ঢাকার নাজুক অবস্থার কথা উঠে এসেছে বারবার। সর্বশেষ জাতিসংঘের হ্যাবিটেট প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান হয়েছে নিচের দিক থেকে ৪ নম্বর। সম্প্রতি রাজধানীর সীমা ছাড়িয়ে টঙ্গী, গাজীপুর ও আশপাশের অন্য শহরগুলোয়ও একই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ না করেও সহজেই বলা যায়, শহরটির সার্বিক ক্রমাবনতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে এ শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে মানুষ। কিন্তু বায়ুদূষণকারী উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে এখন মনে হচ্ছে, রাজধানীতে বিপুল পরিমাণে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়া, শিল্পকারখানার ধোঁয়া ও সীমান্ত পেরিয়ে আসা দূষিত বায়ু ঢাকা শহরের বাতাসকে বিষিয়ে তুলছে। ঢাকা শহরের বাতাসে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। এরপরেই পর্যায়ক্রমে নির্মাণকাজের ধুলা, যানবাহনের ধোঁয়া ও শিল্পকারখানা থেকে বের হওয়া দূষিত বায়ুর ভূমিকা রয়েছে।
দেশের বায়ুদূষণের অবস্থা একদিকে দিন দিন খারাপ হচ্ছে, অন্যদিকে বায়ুদূষণের উৎস দিন দিন বাড়ছে। বায়ুদূষণ মোকাবিলার প্রথম কাজ হচ্ছে দূষণের উৎস বন্ধ করা। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং জলাশয়গুলো রক্ষা করা। এই দূষিত বায়ুর মধ্যে নগরের মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকবে, সেই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। তবে সবার আগে বায়ুদূষণকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসেবে দেখতে হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এটি সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু বায়ু নয়, ঢাকা শহরের পরিবেশ নিয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। ঢাকা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশুদ্ধ এবং সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। এ সংকটের অনেক কারণের অন্যতম হচ্ছে জলাশয় কমে যাওয়া, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া। গাছপালা কমে যাওয়া, বিশুদ্ধ অক্সিজেনের অভাবও ঢাকা শহরে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে।
অন্যদিকে ঢাকার হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ শহরে পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণজনিত কারণে মারা যান প্রায় সাড়ে ছয় হাজার এবং আবাসস্থলের বায়ুদূষণে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ। পুরো ঢাকা শহরই এখন শব্দদূষণের শিকার। শহরের প্রায় সব এলাকাতেই শব্দ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঢাকার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ কোনো না কোনো ধরনের বধিরতায় আক্রান্ত হবে। ঢাকার পরিবেশদূষণ কতটা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটি তুলে ধরেছে বৈশ্বিকভাবে বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সাম্প্রতিককালে বেশির ভাগ সময় ঢাকা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর। পরিবেশদূষণের কারণে সবার জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও নারী ও শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, বাতাসে ভারী ধাতু ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায়, বুদ্ধিমত্তা কমে যায়।
বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য দূষণমুক্ত বাসযোগ্য একটি সুস্থ, সুন্দর, টেকসই ও পরিবেশসম্মত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনের জন্য সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যুগোপযোগী ও নির্মল পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কার্যকরভাবে মোকাবিলায় বেশ যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং সেগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের রয়েছে অনেক আইন ও বিধি। বিশ্ব উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ অভিঘাতের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন এবং প্রশমন বা কার্বন নিঃসরণ হ্রাস—এই সব খাতে সরকারকে বিভিন্ন পর্যায়ে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
একটি নগরে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। ঢাকাসহ দেশের অন্য শহরগুলোকে পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এখন
সময়ের দাবি।
লেখক: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১৭ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১৭ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৭ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৭ ঘণ্টা আগে