রুমিন ফারহানা
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। কীভাবে সেটি গঠিত হবে, কারা থাকবে, এমনকি সিইসি কে হলে ভালো হয়, সেসব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। যেহেতু আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তাই আগামী নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সংসদ ‘নির্বাচন’। বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেটা যদি অক্ষুণ্ন থাকে, তাহলে আদৌ ‘নির্বাচন’ কতটা হতে যাচ্ছে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
সংসদের বর্তমান অধিবেশনে উত্থাপিত হয়েছে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বিল, যা আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য গুরুত্ব রাখে। সীমানা নির্ধারণের মূল কারণ আসলে জনসংখ্যার পুনর্বিন্যাস। প্রতিটি আদমশুমারির পর দেশের এলাকা অনুযায়ী জনবিন্যাসের বিরাট পরিবর্তন দেখা যায়। বর্তমান বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ণের ফলে নগরকেন্দ্রিক আসনগুলোয় জনসংখ্যা অনেক বেড়ে যায় এবং গ্রামীণ এলাকায় মোট জনসংখ্যার ঘনত্ব তুলনামূলক কমে যায়। এ কারণেই প্রতিটি আদমশুমারির পরে সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস জরুরি।
বাংলাদেশে ২০১১ সালে পঞ্চম আদমশুমারিটি হয়েছিল। এর ১০ বছর পর, ২০২১ সালে ষষ্ঠ আদমশুমারি হওয়ার কথা, অর্থাৎ আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে সীমানা নির্ধারিত হবে। গোড়াতেই প্রশ্ন আসে, কেমন হয় বর্তমান সরকারের অধীনে আদমশুমারি?
১১ এপ্রিল, ২০১২ আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের সম্মেলনকক্ষে তৎকালীন সরকারের দুজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মীদের উদ্দেশে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী, বর্তমান সাংসদ মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বিবিএস অনেক সময় আমাদের ভুল তথ্য দেয়। তারা সঠিকভাবে আদমশুমারি করে না। তারা যে তথ্য দেয়, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৮০ লাখ নয়, আরও বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো মন্ত্রিপাড়ায় থাকি না। আমি যে এলাকায় থাকি, সেই এলাকায় বিবিএস ভালোভাবে লোক
গণনা করেনি।’ (কালের কণ্ঠ, ১২ এপ্রিল, ২০১২)
সেই একই সভায় তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী বর্তমান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক খাদ্য বরাদ্দের হিসাব দেখিয়ে প্রমাণ করেছিলেন, বিবিএস আদমশুমারিতে বাস্তবতাবিবর্জিত তথ্য দিয়েছে। এটি ২০১১ সালে হওয়া পঞ্চম আদমশুমারির পরের ঘটনা। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত ওই একটি আদমশুমারিই হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে।
জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া একটা সরকার ২০১১ সালের আদমশুমারি নিয়ে যে ছেলেখেলা করেছে, সেটা দেখলে যে কেউ খুব সহজে বুঝে যাবেন নির্বাচনের এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আদমশুমারি কতটা ভয়াবহ হতে পারে। এই আদমশুমারির ওপরে ভিত্তি করে তাহলে কিসের সংসদ নির্বাচনের আসনের সীমানা নির্ধারণ?
সামনে আরেকটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হওয়া উচিত হবে, গতবারের মতো সার্চ কমিটি গঠন করে, নাকি অন্যভাবে ইত্যাদি নানা আলোচনা সামনে আসছে। এ প্রসঙ্গে কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের আলোচনাও আছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়নের আলোচনা এ দেশে যতটা হয়েছে, তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ হয়নি নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইনের ক্ষেত্রে, অথচ সংবিধানের ৯৫(১) (গ) অনুযায়ী বিচারক নিয়োগের আইনটি তিনটি অপশনের মধ্যে একটি। ফলে এ আইনটি না থাকা অন্তত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।
সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি আইন থাকতেই হবে এবং সেই আইনের ভিত্তিতেই কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব। আচ্ছা, ধরে নেওয়া যাক, আইন হলো এবং যোগ্য নিরপেক্ষ মানুষদের নিয়ে অসাধারণ একটা নির্বাচন কমিশন গঠিত হলো, তাতেও কি দেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়ে যাবে? নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার কথা আমরা শুনি। নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের ওপরে কতটুকু ক্ষমতার চর্চা করতে পারবে, সেটা নিয়ে সংবিধানের ১২০ ও ১২৬ অনুচ্ছেদ দুটি ভীষণ অস্পষ্ট। ফলে একটা সরকার যদি না চায় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, তাহলে কোনোভাবেই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন এ দেশে সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনকে পদে পদে বাধা তৈরি করতে পারবে সরকার। এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গঠিত শামসুল হুদা কমিশন আওয়ামী লীগের সময়ে কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে গিয়ে সরকারের দিক থেকে নানা অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছিলেন।
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সময়ে দুটি নির্বাচন হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনটি সংবিধানের দৃষ্টিতে আদৌ নির্বাচনই ছিল না। সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদের ‘একক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে’ সংসদ গঠিত হওয়ার কথা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনে একটিমাত্র ভোট পড়ার আগেই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসনের বেশি জিতে গিয়েছিল ক্ষমতাসীন জোট। এরপর রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে বিচারবহির্ভূত হত্যা-গুম-পুলিশি নির্যাতন ইত্যাদির মাধ্যমে দমন-পীড়ন করে সংবিধানের আলোকে সেই অবৈধ সংসদটি পার করল তার পুরো মেয়াদ।
এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটিও ছিল একই অভিযোগে অভিযুক্ত এবং আরও অনেক ভয়ংকরভাবে। জনগণ তাদের ‘প্রত্যক্ষ ভোট’ দিতে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই সরকারি দল এবং প্রশাসন মিলে তথাকথিত ভোটের কাজ শেষ করে ফেলেছিল। সেই কলঙ্কিত নির্বাচনে গঠিত সরকারটিও তার মেয়াদের অর্ধেকের বেশি পার করে দিয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের কী চেহারা হয়, সেটি ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে হওয়া দুটি জাতীয় নির্বাচন আমাদের খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে।
এ দেশে ভোটার দিবস পালিত হয় ঘটা করে। মাঝে মাঝেই শোনা যায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কথা। এখন নতুন করে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের আইন করা হচ্ছে। দারুণ আলাপ চলছে আগামী নির্বাচন কমিশন গঠন করার পদ্ধতি নিয়ে। সব দেখে মনে পড়ল খুব পরিচিত জোকটির কথা।
যুদ্ধে হেরে সেনাপতি এসেছে রাজার কাছে। রাজা সেনাপতিকে জিজ্ঞেস করলেন, যুদ্ধে পরাজয়ের কারণ কী। সেনাপতি বললেন, হারার এক শ একটা কারণ আছে, প্রথম কারণ হচ্ছে বৃষ্টিতে গোলা-বারুদ ভিজে অকেজো হয়ে গিয়েছিল। সেনাপতি পরের কারণগুলো বলতে শুরু করার আগেই রাজা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, আর কোনো কারণ শোনার দরকার নেই।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দারুণ আলোচনা চলছে। কী কী আলোচনা চলছে, জানার আগে সবার আগে জানার চেষ্টা করা উচিত নির্বাচনের পরিকল্পনা কি এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে হচ্ছে? এর উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু করার জন্য আর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো আর শোনার দরকার নেই। এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনের নামে যা হয়, সেটা প্রহসনের বেশি কিছু নয়। পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচনের পর এটা নিয়ে ন্যূনতম সন্দেহ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও থাকার কোনো কারণ নেই।
লেখক: সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ও বিএনপিদলীয় হুইপ
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। কীভাবে সেটি গঠিত হবে, কারা থাকবে, এমনকি সিইসি কে হলে ভালো হয়, সেসব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। যেহেতু আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তাই আগামী নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সংসদ ‘নির্বাচন’। বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেটা যদি অক্ষুণ্ন থাকে, তাহলে আদৌ ‘নির্বাচন’ কতটা হতে যাচ্ছে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
সংসদের বর্তমান অধিবেশনে উত্থাপিত হয়েছে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বিল, যা আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য গুরুত্ব রাখে। সীমানা নির্ধারণের মূল কারণ আসলে জনসংখ্যার পুনর্বিন্যাস। প্রতিটি আদমশুমারির পর দেশের এলাকা অনুযায়ী জনবিন্যাসের বিরাট পরিবর্তন দেখা যায়। বর্তমান বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ণের ফলে নগরকেন্দ্রিক আসনগুলোয় জনসংখ্যা অনেক বেড়ে যায় এবং গ্রামীণ এলাকায় মোট জনসংখ্যার ঘনত্ব তুলনামূলক কমে যায়। এ কারণেই প্রতিটি আদমশুমারির পরে সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস জরুরি।
বাংলাদেশে ২০১১ সালে পঞ্চম আদমশুমারিটি হয়েছিল। এর ১০ বছর পর, ২০২১ সালে ষষ্ঠ আদমশুমারি হওয়ার কথা, অর্থাৎ আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে সীমানা নির্ধারিত হবে। গোড়াতেই প্রশ্ন আসে, কেমন হয় বর্তমান সরকারের অধীনে আদমশুমারি?
১১ এপ্রিল, ২০১২ আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের সম্মেলনকক্ষে তৎকালীন সরকারের দুজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মীদের উদ্দেশে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী, বর্তমান সাংসদ মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বিবিএস অনেক সময় আমাদের ভুল তথ্য দেয়। তারা সঠিকভাবে আদমশুমারি করে না। তারা যে তথ্য দেয়, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৮০ লাখ নয়, আরও বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো মন্ত্রিপাড়ায় থাকি না। আমি যে এলাকায় থাকি, সেই এলাকায় বিবিএস ভালোভাবে লোক
গণনা করেনি।’ (কালের কণ্ঠ, ১২ এপ্রিল, ২০১২)
সেই একই সভায় তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী বর্তমান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক খাদ্য বরাদ্দের হিসাব দেখিয়ে প্রমাণ করেছিলেন, বিবিএস আদমশুমারিতে বাস্তবতাবিবর্জিত তথ্য দিয়েছে। এটি ২০১১ সালে হওয়া পঞ্চম আদমশুমারির পরের ঘটনা। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত ওই একটি আদমশুমারিই হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে।
জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া একটা সরকার ২০১১ সালের আদমশুমারি নিয়ে যে ছেলেখেলা করেছে, সেটা দেখলে যে কেউ খুব সহজে বুঝে যাবেন নির্বাচনের এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আদমশুমারি কতটা ভয়াবহ হতে পারে। এই আদমশুমারির ওপরে ভিত্তি করে তাহলে কিসের সংসদ নির্বাচনের আসনের সীমানা নির্ধারণ?
সামনে আরেকটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হওয়া উচিত হবে, গতবারের মতো সার্চ কমিটি গঠন করে, নাকি অন্যভাবে ইত্যাদি নানা আলোচনা সামনে আসছে। এ প্রসঙ্গে কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের আলোচনাও আছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়নের আলোচনা এ দেশে যতটা হয়েছে, তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ হয়নি নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইনের ক্ষেত্রে, অথচ সংবিধানের ৯৫(১) (গ) অনুযায়ী বিচারক নিয়োগের আইনটি তিনটি অপশনের মধ্যে একটি। ফলে এ আইনটি না থাকা অন্তত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।
সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি আইন থাকতেই হবে এবং সেই আইনের ভিত্তিতেই কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব। আচ্ছা, ধরে নেওয়া যাক, আইন হলো এবং যোগ্য নিরপেক্ষ মানুষদের নিয়ে অসাধারণ একটা নির্বাচন কমিশন গঠিত হলো, তাতেও কি দেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়ে যাবে? নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার কথা আমরা শুনি। নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের ওপরে কতটুকু ক্ষমতার চর্চা করতে পারবে, সেটা নিয়ে সংবিধানের ১২০ ও ১২৬ অনুচ্ছেদ দুটি ভীষণ অস্পষ্ট। ফলে একটা সরকার যদি না চায় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, তাহলে কোনোভাবেই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন এ দেশে সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনকে পদে পদে বাধা তৈরি করতে পারবে সরকার। এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গঠিত শামসুল হুদা কমিশন আওয়ামী লীগের সময়ে কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে গিয়ে সরকারের দিক থেকে নানা অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছিলেন।
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সময়ে দুটি নির্বাচন হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনটি সংবিধানের দৃষ্টিতে আদৌ নির্বাচনই ছিল না। সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদের ‘একক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে’ সংসদ গঠিত হওয়ার কথা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনে একটিমাত্র ভোট পড়ার আগেই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসনের বেশি জিতে গিয়েছিল ক্ষমতাসীন জোট। এরপর রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে বিচারবহির্ভূত হত্যা-গুম-পুলিশি নির্যাতন ইত্যাদির মাধ্যমে দমন-পীড়ন করে সংবিধানের আলোকে সেই অবৈধ সংসদটি পার করল তার পুরো মেয়াদ।
এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটিও ছিল একই অভিযোগে অভিযুক্ত এবং আরও অনেক ভয়ংকরভাবে। জনগণ তাদের ‘প্রত্যক্ষ ভোট’ দিতে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই সরকারি দল এবং প্রশাসন মিলে তথাকথিত ভোটের কাজ শেষ করে ফেলেছিল। সেই কলঙ্কিত নির্বাচনে গঠিত সরকারটিও তার মেয়াদের অর্ধেকের বেশি পার করে দিয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের কী চেহারা হয়, সেটি ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে হওয়া দুটি জাতীয় নির্বাচন আমাদের খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে।
এ দেশে ভোটার দিবস পালিত হয় ঘটা করে। মাঝে মাঝেই শোনা যায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কথা। এখন নতুন করে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের আইন করা হচ্ছে। দারুণ আলাপ চলছে আগামী নির্বাচন কমিশন গঠন করার পদ্ধতি নিয়ে। সব দেখে মনে পড়ল খুব পরিচিত জোকটির কথা।
যুদ্ধে হেরে সেনাপতি এসেছে রাজার কাছে। রাজা সেনাপতিকে জিজ্ঞেস করলেন, যুদ্ধে পরাজয়ের কারণ কী। সেনাপতি বললেন, হারার এক শ একটা কারণ আছে, প্রথম কারণ হচ্ছে বৃষ্টিতে গোলা-বারুদ ভিজে অকেজো হয়ে গিয়েছিল। সেনাপতি পরের কারণগুলো বলতে শুরু করার আগেই রাজা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, আর কোনো কারণ শোনার দরকার নেই।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দারুণ আলোচনা চলছে। কী কী আলোচনা চলছে, জানার আগে সবার আগে জানার চেষ্টা করা উচিত নির্বাচনের পরিকল্পনা কি এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে হচ্ছে? এর উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু করার জন্য আর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো আর শোনার দরকার নেই। এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনের নামে যা হয়, সেটা প্রহসনের বেশি কিছু নয়। পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচনের পর এটা নিয়ে ন্যূনতম সন্দেহ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও থাকার কোনো কারণ নেই।
লেখক: সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ও বিএনপিদলীয় হুইপ
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৬ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৬ ঘণ্টা আগে