বিজন সাহা
আগেই বলা হয়েছে ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের বেশ কিছু মিল রয়েছে। এভাবে শুনতে একটু বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের দিকে তাকালে মিলগুলো কিন্তু ভাবতে বাধ্য করবে।
এখানে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে,১৯৪৭ সালে পূর্ববাংলার ভোটেই পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল। আর বছর না পেরোতেই বাঙালি শুনেছিল, ‘উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। এর পরেরটুকু ইতিহাস। বাঙালির যদি অধিকার থাকে, ইউক্রেনের রুশদের কেন অধিকার থাকবে না রুশ ভাষাকে (যেটা প্রায় ৯০ শতাংশ ইউক্রেনবাসী সাবলীলভাবে বলতে পারে) দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দাবি করার? উত্তরে তারা পেল বুলেট। আট বছর চলল সেই যুদ্ধ। দনবাস জ্বলল তুষের আগুনের মতো ধীরে ধীরে; আন্তর্জাতিক বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের চোখের আড়ালে। আর এ জন্যই বললাম, আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে এদের সামঞ্জস্যের কথা। আসলে সেটা শুধু দনবাসের সাথে নয়, সমস্ত ইউক্রেনের সঙ্গেই মিলে যায়। কেমন করে? আসুন সে জন্য ফিরে যাই একাত্তরে।
একাত্তরে বাংলার মানুষের একদল যেমন স্বাধীনতার পক্ষে ছিল, আরেক দল তেমনি ছিল বিপক্ষে। মাত্র ২৪ বছর আগে এরাই পাকিস্তান তৈরি করেছে ভারত ভেঙে। তাই পাকিস্তানের পতাকা হাতেই সুখী ভবিষ্যৎ গড়তে চাওয়ায় অন্যায় কিছু নেই। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত এক সময় পাকিস্তান আন্দোলনের অগ্রনায়ক ছিলেন। কিন্তু এই পাকিস্তানপন্থীরা যে মুহূর্তে অস্ত্র হাতে তুলে নিল আর দেশের সাধারণ মানুষদের, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে শুরু করল, অবস্থা বদলে গেল। আইনের চোখে তারা হলো অপরাধী। এদের আমরা রাজাকার বলি। আজও যারা তাদের অনুসারী তাদের আমরা রাজাকার বলতেই পছন্দ করি।
আসুন দেখি ইউক্রেনে কী হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্তেপান বান্দেরা ও তার অনুসারীরা হিটলারের পক্ষে যুদ্ধ করে। তাদের হাতে মারা যায় হাজার হাজার রুশ, বেলারুশ, পোলিশ, ইহুদি, ইউক্রেনীয়। নুরেমবার্গে তাদের অনেকের বিচার হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সেসব যুদ্ধাপরাধীদের অনেককেই আশ্রয় দেয় পরবর্তীতে সোভিয়েত বিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করবে বলে। এমনকি সোভিয়েত আমলেও পশ্চিম ইউক্রেনে সোভিয়েতবিরোধী মনোভাব প্রবল ছিল। আগেই উল্লেখ করেছি, কীভাবে ইউক্রেন বিভিন্ন সোভিয়েত নেতাদের ইচ্ছায় বর্তমান রূপ পায়। আর সোভিয়েত আমলে কোনো নেতাই এসব করতে জনগণের মতামতের তোয়াক্কা করতেন না। এভাবে গঠনের ফলেই কি-না জানি না, তবে উত্তর-পশ্চিম ইউক্রেনে অ্যান্টি-সোভিয়েত, অ্যান্টি-রুশ মনোভাব বরাবরই উঁচু ছিল। অন্যদিকে ক্রিমিয়া, খারকভ, দনবাস, ওদেসা; অর্থাৎ, দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থীরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। যা হোক, জার্মান বাহিনীর দোসরদের বাঙালি কায়দায় আমরা রাজাকার বলতেই পারি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সেখানে সযত্নে বান্দেরার অনুসারীদের সঙ্ঘবদ্ধ করে। আজকের আজোভ, প্রাভি সেক্টর—এরা সেই ফ্যাসিস্ট আদর্শের অনুসারী।
প্রতি বছর, বিশেষ করে ৯ মে যখন দেশের মানুষ বিজয় দিবস উদ্যাপন করতে রাস্তায় নামে—তারা হামলা করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেসব সৈনিকদের ওপর। মনে রাখতে হবে, বেলারুশ, ইউক্রেন ও রাশিয়ায় খুব কম পরিবারই আছে, যারা সেই যুদ্ধে আপনজন হারায়নি। তাই যুদ্ধের স্মৃতি এদের জন্য খুবই পবিত্র, যেমনটা শহীদ মিনার আমাদের কাছে। এমনকি বলা চলে মহান পিতৃভূমির যুদ্ধের সবকিছুই এদের কাছে অনেকটা ধর্মীয় অনুভূতির মতো। ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত অনেকটা আত্মগোপনে থাকলেও গত আট বছর এই উগ্র জাতীয়তাবাদী অ্যান্টি-রুশ শক্তিই মূলত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছে। কী পারাশেঙ্কো, কী জেলেনস্কি, নিজের আর পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত এদের এজেন্ডাই বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। ফলে দেশের সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়েছে এসব উগ্রবাদী শক্তির হাতে।
আজ বাংলাদেশে মৌলবাদীদের (জামাত-শিবিরের জায়গা দখল করেছে হেফাজত) দৌরাত্ম্যে ভিন্ন মতাবলম্বী ও বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যেমন তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনে বাধাগ্রস্ত হয়, একইভাবে ইউক্রেনের রাজাকারদের, মানে ফ্যাসিস্টদের অত্যাচারে সোভিয়েত অতীতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, হিটলারের বিরুদ্ধে বিজয়ী জনতা মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারে না। পদে পদে লাঞ্ছনার শিকার হয়। বিভেদ বাড়ানোর জন্য পারাশেঙ্কো ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগান। যদিও অনেক আগেই ক্ষমতার প্রশ্নে ইউক্রেনে আলাদা ধর্মীয় গ্রুপ তৈরি হয়েছিল (রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশে অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের নেতা মস্কোকেন্দ্রিক চার্চ), যেটা পারাশেঙ্কোর প্রচেষ্টায় কনস্টান্টিনোপল চার্চের স্বীকৃতি পায়। এর ফলে রাজনৈতিক বিভাজনের পাশাপাশি ধর্মীয় বিভাজন নতুন মাত্রা পায়।
অনেকেই বলেন পুতিন কেন যুক্তরাষ্ট্রের ফাঁদে পা দিতে গেলেন। বিভিন্ন নথি থেকে জানা যায়, ইউক্রেন মার্চের প্রথমে দনবাসের ওপর অলআউট আক্রমণের প্ল্যান করেছিল। আসলে বারবার রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করবে বলে যুক্ত ও ইউরোপের যে ঘোষণা ছিল, তার উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে বিভ্রান্ত করা। তারা হয়তো আশা করেনি রাশিয়া শেষ পর্যন্ত আক্রমণ করে বসবে। তবে না করে উপায় ছিল না। কারণ, তখন না করলে কয়েক দিন পর করতে হতোই। আর সেটা করতে হতো নিজের সীমান্তে। এমনকি নিজেদের দেশেও হতে পারত। ততক্ষণে প্রচুর সাধারণ মানুষ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ত।
আসুন আমরা ফিরে যাই ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে। আমার বিশ্বাস তখন অনেকেই জানতেন বা অন্তত আঁচ করতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ব্যবহার করার প্ল্যান করছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দেন। তিনি বলেন, যদি বাংলার মানুষের ওপর আক্রমণ নেমে আসে, সবাই যার যা আছে, তাই নিয়ে যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর মোকাবিলায়। এ থেকে আমরা দুটো সিদ্ধান্তে আসতে পারি। প্রথমত, এ রকম একটা আক্রমণ আসতে পারে, সে ব্যাপারে তিনি কম-বেশি অবগত ছিলেন বা বলা যায় নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থেকে এমন ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি। দ্বিতীয়ত, তিনি আক্রমণ নয়, আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ করতে বলেছেন। তার কারণ, সে ক্ষেত্রে তাঁকে কেউ বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অপবাদ দিতে পারবে না।
যদি রাশিয়া আগে থেকে আক্রমণ না করত, দনবাসের ওপর আক্রমণ হতো ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকা আক্রমণের স্টাইলে। প্রচুর মানুষ মারা যেত। এখন প্রশ্ন হলো যদি সব জেনেশুনে ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের নেতৃবৃন্দ বেঙ্গল রেজিমেন্ট, পুলিশ এদের নির্দেশ দিতেন পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর প্রিভেন্টিভ আঘাত করতে, তাতে নিঃসন্দেহে এত বেশি সাধারণ মানুষ মারা যেত না। তবে ওরা আগে আক্রমণ করায় বাংলার মানুষ বিশ্বব্যাপী যে জনসমর্থন পেয়েছিল, সেটা হয়তো পেত না। কারণ, তখন আমরা আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত হতাম। কিন্তু সেটা হাজার হাজার মানুষকে প্রাণে বাঁচতে দিত। তাই অনেক সময় যুদ্ধ যদি অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে, তখন আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়াই ভালো। ১৯৪১ সালে স্তালিনের কাছে খবর ছিল জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করবে। এমনকি দিন, তারিখ, সময়—সব জানা ছিল। তিনি সেটা বিশ্বাস করেননি। হয়তো ভেবেছেন শেষ পর্যন্ত হিটলার মন পরিবর্তন করবে। ফলাফল আমরা জানি। আসলে পাশের দেশ যখন উগ্রবাদীদের দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা এক ধরনের অপরাধ। কারণ, আজ হোক, কাল হোক আগুন জ্বলবেই। আগুন নেভানোর চেয়ে আগুন যাতে কেউ না লাগাতে পারে, সে চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। না, আমি এখানে পুতিনের পক্ষে ওকালতি করতে চাইছি না। তবে অনেক সময় বড় বিপদ এড়াতে ছোট বিপদে পা দিতে হয়।
লেখক: শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো
আগেই বলা হয়েছে ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের বেশ কিছু মিল রয়েছে। এভাবে শুনতে একটু বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের দিকে তাকালে মিলগুলো কিন্তু ভাবতে বাধ্য করবে।
এখানে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে,১৯৪৭ সালে পূর্ববাংলার ভোটেই পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল। আর বছর না পেরোতেই বাঙালি শুনেছিল, ‘উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। এর পরেরটুকু ইতিহাস। বাঙালির যদি অধিকার থাকে, ইউক্রেনের রুশদের কেন অধিকার থাকবে না রুশ ভাষাকে (যেটা প্রায় ৯০ শতাংশ ইউক্রেনবাসী সাবলীলভাবে বলতে পারে) দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দাবি করার? উত্তরে তারা পেল বুলেট। আট বছর চলল সেই যুদ্ধ। দনবাস জ্বলল তুষের আগুনের মতো ধীরে ধীরে; আন্তর্জাতিক বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের চোখের আড়ালে। আর এ জন্যই বললাম, আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে এদের সামঞ্জস্যের কথা। আসলে সেটা শুধু দনবাসের সাথে নয়, সমস্ত ইউক্রেনের সঙ্গেই মিলে যায়। কেমন করে? আসুন সে জন্য ফিরে যাই একাত্তরে।
একাত্তরে বাংলার মানুষের একদল যেমন স্বাধীনতার পক্ষে ছিল, আরেক দল তেমনি ছিল বিপক্ষে। মাত্র ২৪ বছর আগে এরাই পাকিস্তান তৈরি করেছে ভারত ভেঙে। তাই পাকিস্তানের পতাকা হাতেই সুখী ভবিষ্যৎ গড়তে চাওয়ায় অন্যায় কিছু নেই। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত এক সময় পাকিস্তান আন্দোলনের অগ্রনায়ক ছিলেন। কিন্তু এই পাকিস্তানপন্থীরা যে মুহূর্তে অস্ত্র হাতে তুলে নিল আর দেশের সাধারণ মানুষদের, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে শুরু করল, অবস্থা বদলে গেল। আইনের চোখে তারা হলো অপরাধী। এদের আমরা রাজাকার বলি। আজও যারা তাদের অনুসারী তাদের আমরা রাজাকার বলতেই পছন্দ করি।
আসুন দেখি ইউক্রেনে কী হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্তেপান বান্দেরা ও তার অনুসারীরা হিটলারের পক্ষে যুদ্ধ করে। তাদের হাতে মারা যায় হাজার হাজার রুশ, বেলারুশ, পোলিশ, ইহুদি, ইউক্রেনীয়। নুরেমবার্গে তাদের অনেকের বিচার হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সেসব যুদ্ধাপরাধীদের অনেককেই আশ্রয় দেয় পরবর্তীতে সোভিয়েত বিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করবে বলে। এমনকি সোভিয়েত আমলেও পশ্চিম ইউক্রেনে সোভিয়েতবিরোধী মনোভাব প্রবল ছিল। আগেই উল্লেখ করেছি, কীভাবে ইউক্রেন বিভিন্ন সোভিয়েত নেতাদের ইচ্ছায় বর্তমান রূপ পায়। আর সোভিয়েত আমলে কোনো নেতাই এসব করতে জনগণের মতামতের তোয়াক্কা করতেন না। এভাবে গঠনের ফলেই কি-না জানি না, তবে উত্তর-পশ্চিম ইউক্রেনে অ্যান্টি-সোভিয়েত, অ্যান্টি-রুশ মনোভাব বরাবরই উঁচু ছিল। অন্যদিকে ক্রিমিয়া, খারকভ, দনবাস, ওদেসা; অর্থাৎ, দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থীরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। যা হোক, জার্মান বাহিনীর দোসরদের বাঙালি কায়দায় আমরা রাজাকার বলতেই পারি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সেখানে সযত্নে বান্দেরার অনুসারীদের সঙ্ঘবদ্ধ করে। আজকের আজোভ, প্রাভি সেক্টর—এরা সেই ফ্যাসিস্ট আদর্শের অনুসারী।
প্রতি বছর, বিশেষ করে ৯ মে যখন দেশের মানুষ বিজয় দিবস উদ্যাপন করতে রাস্তায় নামে—তারা হামলা করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেসব সৈনিকদের ওপর। মনে রাখতে হবে, বেলারুশ, ইউক্রেন ও রাশিয়ায় খুব কম পরিবারই আছে, যারা সেই যুদ্ধে আপনজন হারায়নি। তাই যুদ্ধের স্মৃতি এদের জন্য খুবই পবিত্র, যেমনটা শহীদ মিনার আমাদের কাছে। এমনকি বলা চলে মহান পিতৃভূমির যুদ্ধের সবকিছুই এদের কাছে অনেকটা ধর্মীয় অনুভূতির মতো। ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত অনেকটা আত্মগোপনে থাকলেও গত আট বছর এই উগ্র জাতীয়তাবাদী অ্যান্টি-রুশ শক্তিই মূলত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছে। কী পারাশেঙ্কো, কী জেলেনস্কি, নিজের আর পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত এদের এজেন্ডাই বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। ফলে দেশের সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়েছে এসব উগ্রবাদী শক্তির হাতে।
আজ বাংলাদেশে মৌলবাদীদের (জামাত-শিবিরের জায়গা দখল করেছে হেফাজত) দৌরাত্ম্যে ভিন্ন মতাবলম্বী ও বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যেমন তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনে বাধাগ্রস্ত হয়, একইভাবে ইউক্রেনের রাজাকারদের, মানে ফ্যাসিস্টদের অত্যাচারে সোভিয়েত অতীতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, হিটলারের বিরুদ্ধে বিজয়ী জনতা মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারে না। পদে পদে লাঞ্ছনার শিকার হয়। বিভেদ বাড়ানোর জন্য পারাশেঙ্কো ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগান। যদিও অনেক আগেই ক্ষমতার প্রশ্নে ইউক্রেনে আলাদা ধর্মীয় গ্রুপ তৈরি হয়েছিল (রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশে অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের নেতা মস্কোকেন্দ্রিক চার্চ), যেটা পারাশেঙ্কোর প্রচেষ্টায় কনস্টান্টিনোপল চার্চের স্বীকৃতি পায়। এর ফলে রাজনৈতিক বিভাজনের পাশাপাশি ধর্মীয় বিভাজন নতুন মাত্রা পায়।
অনেকেই বলেন পুতিন কেন যুক্তরাষ্ট্রের ফাঁদে পা দিতে গেলেন। বিভিন্ন নথি থেকে জানা যায়, ইউক্রেন মার্চের প্রথমে দনবাসের ওপর অলআউট আক্রমণের প্ল্যান করেছিল। আসলে বারবার রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করবে বলে যুক্ত ও ইউরোপের যে ঘোষণা ছিল, তার উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে বিভ্রান্ত করা। তারা হয়তো আশা করেনি রাশিয়া শেষ পর্যন্ত আক্রমণ করে বসবে। তবে না করে উপায় ছিল না। কারণ, তখন না করলে কয়েক দিন পর করতে হতোই। আর সেটা করতে হতো নিজের সীমান্তে। এমনকি নিজেদের দেশেও হতে পারত। ততক্ষণে প্রচুর সাধারণ মানুষ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ত।
আসুন আমরা ফিরে যাই ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে। আমার বিশ্বাস তখন অনেকেই জানতেন বা অন্তত আঁচ করতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ব্যবহার করার প্ল্যান করছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দেন। তিনি বলেন, যদি বাংলার মানুষের ওপর আক্রমণ নেমে আসে, সবাই যার যা আছে, তাই নিয়ে যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর মোকাবিলায়। এ থেকে আমরা দুটো সিদ্ধান্তে আসতে পারি। প্রথমত, এ রকম একটা আক্রমণ আসতে পারে, সে ব্যাপারে তিনি কম-বেশি অবগত ছিলেন বা বলা যায় নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থেকে এমন ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি। দ্বিতীয়ত, তিনি আক্রমণ নয়, আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ করতে বলেছেন। তার কারণ, সে ক্ষেত্রে তাঁকে কেউ বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অপবাদ দিতে পারবে না।
যদি রাশিয়া আগে থেকে আক্রমণ না করত, দনবাসের ওপর আক্রমণ হতো ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকা আক্রমণের স্টাইলে। প্রচুর মানুষ মারা যেত। এখন প্রশ্ন হলো যদি সব জেনেশুনে ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের নেতৃবৃন্দ বেঙ্গল রেজিমেন্ট, পুলিশ এদের নির্দেশ দিতেন পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর প্রিভেন্টিভ আঘাত করতে, তাতে নিঃসন্দেহে এত বেশি সাধারণ মানুষ মারা যেত না। তবে ওরা আগে আক্রমণ করায় বাংলার মানুষ বিশ্বব্যাপী যে জনসমর্থন পেয়েছিল, সেটা হয়তো পেত না। কারণ, তখন আমরা আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত হতাম। কিন্তু সেটা হাজার হাজার মানুষকে প্রাণে বাঁচতে দিত। তাই অনেক সময় যুদ্ধ যদি অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে, তখন আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়াই ভালো। ১৯৪১ সালে স্তালিনের কাছে খবর ছিল জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করবে। এমনকি দিন, তারিখ, সময়—সব জানা ছিল। তিনি সেটা বিশ্বাস করেননি। হয়তো ভেবেছেন শেষ পর্যন্ত হিটলার মন পরিবর্তন করবে। ফলাফল আমরা জানি। আসলে পাশের দেশ যখন উগ্রবাদীদের দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা এক ধরনের অপরাধ। কারণ, আজ হোক, কাল হোক আগুন জ্বলবেই। আগুন নেভানোর চেয়ে আগুন যাতে কেউ না লাগাতে পারে, সে চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। না, আমি এখানে পুতিনের পক্ষে ওকালতি করতে চাইছি না। তবে অনেক সময় বড় বিপদ এড়াতে ছোট বিপদে পা দিতে হয়।
লেখক: শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
১ দিন আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
১ দিন আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
১ দিন আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
১ দিন আগে