জাহীদ রেজা নূর
মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ যে কয়টি বিষয় নিয়ে গর্ব করতে পারে, তার একটি নিশ্চিতভাবেই মঞ্চনাটক। বাহাত্তর সাল থেকেই বিভিন্ন নাট্যসংগঠন বিচিত্র সব নাটক উপহার দিয়ে সমাজজীবনে গভীর রেখাপাত করতে পেরেছিল। সমাজের নানা ধরনের অপূর্ণতা কিংবা অসামঞ্জস্যকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল এসব নাটক। তারই একটি ছিল থিয়েটারের ‘সুবচন নির্বাসনে’। লিখেছিলেন ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। সে নাটকে আমাদের দেশে প্রচলিত বচনগুলোর অসহায়ত্ব দেখানো হয়েছিল। প্রতিটি বচনই যে অসার হয়ে গেছে, সেটাই ছিল নাটকের মূল বিষয়।
বর্তমানকালের কিছু ঘটনার আলোকে আমরা বোঝার চেষ্টা করব, আসলেই আবহমানকাল ধরে আমাদের চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে যে প্রবাদবাক্য, বচন ইত্যাদি, তারা আসলে কেমন আছে।
মরা হাতি লাখ টাকা: ই-কমার্স
ই-কমার্সের নামে যে সামাজিক নাটকগুলো রচিত হচ্ছে হাল আমলে, তার নাট্যকারদের বাহ্বা দিতেই হবে। নানা ভনিতায় তারা জনগণের আস্থা অর্জন করে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা ফেঁদে; তারপর হঠাৎ করে বলছে, ‘সর্বনাশ! আমরা ফেল করেছি!’
এরই মধ্যে এ খাতে ‘ইনভেস্ট’ করে ফেলা মানুষেরা মাথা চাপড়াচ্ছেন আর হায় হায় করছেন। অনেকেই নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে এই জুয়া খেলায় নাম লিখিয়েছিলেন। ই-ব্যবসায়ীরাও সমাজের ‘আলোকিত’ ব্যক্তিদের কবজা করে নিয়ে এমন এক বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন যে সাধারণ মানুষ ভাবতেই পারেননি, তাঁরা হঠাৎ পা হড়কে পড়তে পারেন। এখানে আরেকটি প্রবাদের কথাও এসে যায়, ‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’। লোভের হাতছানিতে অন্ধ হয়ে যখন কেউ কোনো ফাঁদে পা দেয়, তখন তার কাণ্ডজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তোলা চলে।
একের পর এক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান জানিয়ে দিচ্ছে, তারা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু মাছের তেলে মাছ ভেজে খেতে খেতে এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর শরীরেও যে তেল-চর্বি লাগেনি, সে কথা কে বলবে? ১ লাখ টাকার কোনো পণ্য ৫০ হাজার টাকায় দেওয়ার অঙ্গীকার যিনি করেন, তিনি যে সৎ ব্যবসায়ী হতে পারেন না, সেটা বোঝার জন্য মহাজ্ঞানী হতে হয় না। সাধারণ গণিতের প্রাথমিক ধারণা থাকলেই মনে প্রশ্ন জেগে ওঠার কথা, ভর্তুকির গর্তটা এরা কী দিয়ে ভরবে?
কেন বলছি, মরা হাতির দাম লাখ টাকা? কারণ, এই শতকোটি বা হাজার কোটি টাকার বেশির ভাগই কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাবে না। আদালতে শাস্তি পাবেন অপরাধীরা (যদি শাস্তি পায়), শাস্তির মেয়াদ খেটে বের হয়ে আসবেন, তখন কিন্তু এই প্রবাদটি পোক্ত হয়ে উঠতে পারে। বোঝা যেতে পারে, ‘নিঃস্ব’ হয়ে যাওয়া হাজার-লাখ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে একদল মানুষ কীভাবে লাভবান হয়েছেন! সেই ‘হারানো টাকা’ দিয়েই তাঁরা তখন নরক গুলজার করবেন। কেউ জানতেও পারবে না, কয়েক বছর আগে তাঁরা কত মানুষের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করেছেন।
অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী: কোভিডের সূত্র
সেই সব ওয়াজকারীকে এখন সামনে আনতে হবে। কোভিড নিয়ে যাঁরা ধর্মকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করেছেন। তাঁরা প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে মহান সৃষ্টিকর্তা নাকি ইহুদি, নাসারাদের শায়েস্তা করার জন্য এই রোগ পাঠিয়েছেন। ধর্মে-ধর্মে বিরোধ সৃষ্টির প্ররোচনা এটা। ইরানে কোভিড ছড়িয়ে গেলে তাঁরা তারও হাস্যকর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মাস্ক না পরার আহ্বান জানিয়ে তাঁরা রীতিমতো ‘বিপ্লব’ সাধন করেছেন! তাঁদের কেউ কেউ স্বপ্নে কোভিডের টিকার সূত্রও আবিষ্কার করেছেন বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। এমনও বলেছেন, কোভিডের ভ্যাকসিন নিলে মেয়েরা ছেলে হয়ে যাবে।
অবলীলায় তাঁরা যে মিথ্যাচার করেছেন, তাতে দেশের অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষই বিভ্রান্ত হয়েছেন। এই এক দুর্ভাগ্য, কেউ মিথ্যাচার করলে তা যাচাই-বাছাই না করেই মেনে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে আমাদের। ‘হুজুর’ যদি কিছু বলেন, তাহলে তা বিনা দ্বিধায়, প্রশ্নহীনভাবে মেনে নেওয়া হয়। যদি তা হয় ধর্ম নিয়ে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা! পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফ থেকে রেফারেন্স ছাড়া উদাহরণ দেওয়ায় মনগড়া উদ্ভট অনেক কিছুই তাঁরা ছড়িয়ে দিতে পারেন সাধারণ মানুষের মনে। অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী, এটা যেমন এ ক্ষেত্রে ঠিক, তেমনি এর পেছনে মানুষকে ধর্মের নামে মিথ্যা বলে হিংস্র, প্রতিক্রিয়াশীল, পরমত অসহিষ্ণু করে তোলার কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।
অর্থই অনর্থের মূল রূপপুরের বালিশ
আমরা এ বচনটি একটু উল্টে নিলেই তা ঠিক ঠিকমতো বসে যাবে ঠিক জায়গায়। আমাদের বলতে হবে ‘অনর্থই অর্থের মূল’। অনর্থ না বাধালে এই অর্থ হস্তগত করা সম্ভব নয়। আমরা রূপপুরে বালিশ-কাণ্ডের কথা বলছি।
ব্যাপারটা তো শুধু এই নয় যে, ছয় হাজার টাকা দামে বালিশ কেনা হয়েছে কিংবা ৩০টি কমফোর্টার বেশি দামে কিনে প্রতিটিকে আলাদা আলাদা ট্রাকে করে প্রকল্প এলাকায় আনা হয়েছে! ব্যাপারটা হলো, এই কেনাকাটার প্রতিটি জায়গায় দুর্নীতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে আমি যখন চেনাজানা মহলে কথা বলতে গেলাম, তখন এক সুহৃদ বলল, ‘আপনি কি ভেবেছেন এটা শুধু সরকারি কেনাকাটায় হয়? আপনার অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখুন, দরপত্র দিয়েই মালামাল কেনা হয়। একটা তিন টাকা দামের কলম যদি সর্বনিম্ন দরপত্রে ৫০০ টাকা লেখা হয়, তাহলে সে দামেই কেনা হবে।’
এ কথা বলে তিনি যখন বুঝিয়ে দিলেন, কীভাবে, কাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কারা কীভাবে লাভবান হয়, তখন জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল ব্যাপারটা। অনর্থ না ঘটালে সহজে বড়লোক হওয়া যায় না। এ প্রক্রিয়াটি একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া। ধরা না পড়লে এটার দিকে চোখ যায় না কারও।
কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না: গাড়ির ড্রাইভার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক গাড়িচালক কষ্ট না করেই কেষ্টর দেখা পেয়েছেন। তিনি নিজের প্রভাব খাটিয়ে যা যা করেছেন, তাতে পরিশ্রমের কিছুই ছিল না। তবে নিশ্চয়ই নানাভাবে শুধু ম্যানেজ করতে হয়েছে ঊর্ধ্বতন কাউকে। ফলে বেশ কয়েকটি বাড়ি, জমি ইত্যাদির মালিক তিনি হয়ে যেতে পেরেছেন সহজেই। অষ্টম শ্রেণি পাস গাড়িচালক হয়েও হয়ে উঠেছিলেন কোটিপতি গডফাদার। তারপর যে কারণেই হোক ধরা পড়েছেন। ধরা না পড়লে বলা যেত, কষ্ট না করেই কেষ্ট মিলেছে তাঁর। মিলেছিল, কিন্তু ধরে রাখতে পারলেন না। কেউ হয়তো তাঁর প্রতি রাগ করে তাঁর ক্রিয়াকর্ম ফাঁস করে দিয়েছেন!
একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, যে উদাহরণগুলো দেওয়া হলো, তার কোনোটাতেই কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি। অপরাধীরা ধরা পড়েছেন বলেই তাঁদের সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। এ ছাড়া যে অগণিত অপরাধী এ রকম সৃষ্টিছাড়া কাজ করে চলেছেন, তাঁদের ব্যাপারে তো আমরা কিছুই জানতে পারি না। তলেতলে অপরাধের জগৎটাকে তাঁরা সুনিয়ন্ত্রিত করে নেওয়ার জন্য ‘মেহনত’ করে চলেছেন। একটা সময় আসবে, যখন ‘সুবচন’গুলোর ফসিলই থাকবে শুধু, কার্যকরভাবে সেগুলো আর পাওয়া যাবে না কোথাও। যেভাবে লুটেপুটে খাওয়া, দেশটাকে অরাজক করে তোলার খেলা শুরু হয়েছে, তাতে মনে হয় সেদিকেই এগোচ্ছে দেশ।
মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ যে কয়টি বিষয় নিয়ে গর্ব করতে পারে, তার একটি নিশ্চিতভাবেই মঞ্চনাটক। বাহাত্তর সাল থেকেই বিভিন্ন নাট্যসংগঠন বিচিত্র সব নাটক উপহার দিয়ে সমাজজীবনে গভীর রেখাপাত করতে পেরেছিল। সমাজের নানা ধরনের অপূর্ণতা কিংবা অসামঞ্জস্যকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল এসব নাটক। তারই একটি ছিল থিয়েটারের ‘সুবচন নির্বাসনে’। লিখেছিলেন ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। সে নাটকে আমাদের দেশে প্রচলিত বচনগুলোর অসহায়ত্ব দেখানো হয়েছিল। প্রতিটি বচনই যে অসার হয়ে গেছে, সেটাই ছিল নাটকের মূল বিষয়।
বর্তমানকালের কিছু ঘটনার আলোকে আমরা বোঝার চেষ্টা করব, আসলেই আবহমানকাল ধরে আমাদের চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে যে প্রবাদবাক্য, বচন ইত্যাদি, তারা আসলে কেমন আছে।
মরা হাতি লাখ টাকা: ই-কমার্স
ই-কমার্সের নামে যে সামাজিক নাটকগুলো রচিত হচ্ছে হাল আমলে, তার নাট্যকারদের বাহ্বা দিতেই হবে। নানা ভনিতায় তারা জনগণের আস্থা অর্জন করে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা ফেঁদে; তারপর হঠাৎ করে বলছে, ‘সর্বনাশ! আমরা ফেল করেছি!’
এরই মধ্যে এ খাতে ‘ইনভেস্ট’ করে ফেলা মানুষেরা মাথা চাপড়াচ্ছেন আর হায় হায় করছেন। অনেকেই নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে এই জুয়া খেলায় নাম লিখিয়েছিলেন। ই-ব্যবসায়ীরাও সমাজের ‘আলোকিত’ ব্যক্তিদের কবজা করে নিয়ে এমন এক বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন যে সাধারণ মানুষ ভাবতেই পারেননি, তাঁরা হঠাৎ পা হড়কে পড়তে পারেন। এখানে আরেকটি প্রবাদের কথাও এসে যায়, ‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’। লোভের হাতছানিতে অন্ধ হয়ে যখন কেউ কোনো ফাঁদে পা দেয়, তখন তার কাণ্ডজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তোলা চলে।
একের পর এক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান জানিয়ে দিচ্ছে, তারা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু মাছের তেলে মাছ ভেজে খেতে খেতে এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর শরীরেও যে তেল-চর্বি লাগেনি, সে কথা কে বলবে? ১ লাখ টাকার কোনো পণ্য ৫০ হাজার টাকায় দেওয়ার অঙ্গীকার যিনি করেন, তিনি যে সৎ ব্যবসায়ী হতে পারেন না, সেটা বোঝার জন্য মহাজ্ঞানী হতে হয় না। সাধারণ গণিতের প্রাথমিক ধারণা থাকলেই মনে প্রশ্ন জেগে ওঠার কথা, ভর্তুকির গর্তটা এরা কী দিয়ে ভরবে?
কেন বলছি, মরা হাতির দাম লাখ টাকা? কারণ, এই শতকোটি বা হাজার কোটি টাকার বেশির ভাগই কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাবে না। আদালতে শাস্তি পাবেন অপরাধীরা (যদি শাস্তি পায়), শাস্তির মেয়াদ খেটে বের হয়ে আসবেন, তখন কিন্তু এই প্রবাদটি পোক্ত হয়ে উঠতে পারে। বোঝা যেতে পারে, ‘নিঃস্ব’ হয়ে যাওয়া হাজার-লাখ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে একদল মানুষ কীভাবে লাভবান হয়েছেন! সেই ‘হারানো টাকা’ দিয়েই তাঁরা তখন নরক গুলজার করবেন। কেউ জানতেও পারবে না, কয়েক বছর আগে তাঁরা কত মানুষের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করেছেন।
অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী: কোভিডের সূত্র
সেই সব ওয়াজকারীকে এখন সামনে আনতে হবে। কোভিড নিয়ে যাঁরা ধর্মকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করেছেন। তাঁরা প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে মহান সৃষ্টিকর্তা নাকি ইহুদি, নাসারাদের শায়েস্তা করার জন্য এই রোগ পাঠিয়েছেন। ধর্মে-ধর্মে বিরোধ সৃষ্টির প্ররোচনা এটা। ইরানে কোভিড ছড়িয়ে গেলে তাঁরা তারও হাস্যকর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মাস্ক না পরার আহ্বান জানিয়ে তাঁরা রীতিমতো ‘বিপ্লব’ সাধন করেছেন! তাঁদের কেউ কেউ স্বপ্নে কোভিডের টিকার সূত্রও আবিষ্কার করেছেন বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। এমনও বলেছেন, কোভিডের ভ্যাকসিন নিলে মেয়েরা ছেলে হয়ে যাবে।
অবলীলায় তাঁরা যে মিথ্যাচার করেছেন, তাতে দেশের অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষই বিভ্রান্ত হয়েছেন। এই এক দুর্ভাগ্য, কেউ মিথ্যাচার করলে তা যাচাই-বাছাই না করেই মেনে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে আমাদের। ‘হুজুর’ যদি কিছু বলেন, তাহলে তা বিনা দ্বিধায়, প্রশ্নহীনভাবে মেনে নেওয়া হয়। যদি তা হয় ধর্ম নিয়ে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা! পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফ থেকে রেফারেন্স ছাড়া উদাহরণ দেওয়ায় মনগড়া উদ্ভট অনেক কিছুই তাঁরা ছড়িয়ে দিতে পারেন সাধারণ মানুষের মনে। অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী, এটা যেমন এ ক্ষেত্রে ঠিক, তেমনি এর পেছনে মানুষকে ধর্মের নামে মিথ্যা বলে হিংস্র, প্রতিক্রিয়াশীল, পরমত অসহিষ্ণু করে তোলার কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।
অর্থই অনর্থের মূল রূপপুরের বালিশ
আমরা এ বচনটি একটু উল্টে নিলেই তা ঠিক ঠিকমতো বসে যাবে ঠিক জায়গায়। আমাদের বলতে হবে ‘অনর্থই অর্থের মূল’। অনর্থ না বাধালে এই অর্থ হস্তগত করা সম্ভব নয়। আমরা রূপপুরে বালিশ-কাণ্ডের কথা বলছি।
ব্যাপারটা তো শুধু এই নয় যে, ছয় হাজার টাকা দামে বালিশ কেনা হয়েছে কিংবা ৩০টি কমফোর্টার বেশি দামে কিনে প্রতিটিকে আলাদা আলাদা ট্রাকে করে প্রকল্প এলাকায় আনা হয়েছে! ব্যাপারটা হলো, এই কেনাকাটার প্রতিটি জায়গায় দুর্নীতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে আমি যখন চেনাজানা মহলে কথা বলতে গেলাম, তখন এক সুহৃদ বলল, ‘আপনি কি ভেবেছেন এটা শুধু সরকারি কেনাকাটায় হয়? আপনার অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখুন, দরপত্র দিয়েই মালামাল কেনা হয়। একটা তিন টাকা দামের কলম যদি সর্বনিম্ন দরপত্রে ৫০০ টাকা লেখা হয়, তাহলে সে দামেই কেনা হবে।’
এ কথা বলে তিনি যখন বুঝিয়ে দিলেন, কীভাবে, কাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কারা কীভাবে লাভবান হয়, তখন জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল ব্যাপারটা। অনর্থ না ঘটালে সহজে বড়লোক হওয়া যায় না। এ প্রক্রিয়াটি একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া। ধরা না পড়লে এটার দিকে চোখ যায় না কারও।
কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না: গাড়ির ড্রাইভার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক গাড়িচালক কষ্ট না করেই কেষ্টর দেখা পেয়েছেন। তিনি নিজের প্রভাব খাটিয়ে যা যা করেছেন, তাতে পরিশ্রমের কিছুই ছিল না। তবে নিশ্চয়ই নানাভাবে শুধু ম্যানেজ করতে হয়েছে ঊর্ধ্বতন কাউকে। ফলে বেশ কয়েকটি বাড়ি, জমি ইত্যাদির মালিক তিনি হয়ে যেতে পেরেছেন সহজেই। অষ্টম শ্রেণি পাস গাড়িচালক হয়েও হয়ে উঠেছিলেন কোটিপতি গডফাদার। তারপর যে কারণেই হোক ধরা পড়েছেন। ধরা না পড়লে বলা যেত, কষ্ট না করেই কেষ্ট মিলেছে তাঁর। মিলেছিল, কিন্তু ধরে রাখতে পারলেন না। কেউ হয়তো তাঁর প্রতি রাগ করে তাঁর ক্রিয়াকর্ম ফাঁস করে দিয়েছেন!
একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, যে উদাহরণগুলো দেওয়া হলো, তার কোনোটাতেই কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি। অপরাধীরা ধরা পড়েছেন বলেই তাঁদের সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। এ ছাড়া যে অগণিত অপরাধী এ রকম সৃষ্টিছাড়া কাজ করে চলেছেন, তাঁদের ব্যাপারে তো আমরা কিছুই জানতে পারি না। তলেতলে অপরাধের জগৎটাকে তাঁরা সুনিয়ন্ত্রিত করে নেওয়ার জন্য ‘মেহনত’ করে চলেছেন। একটা সময় আসবে, যখন ‘সুবচন’গুলোর ফসিলই থাকবে শুধু, কার্যকরভাবে সেগুলো আর পাওয়া যাবে না কোথাও। যেভাবে লুটেপুটে খাওয়া, দেশটাকে অরাজক করে তোলার খেলা শুরু হয়েছে, তাতে মনে হয় সেদিকেই এগোচ্ছে দেশ।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১ দিন আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১ দিন আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১ দিন আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১ দিন আগে