অধ্যাপক ড. মো. ফখরুল ইসলাম
একত্রিশ বছর আগের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের আবাসিক ছাত্র আমি। মাস্টার্স পরীক্ষা শুরু হতে তখনো দুই মাস দেরি। অনার্সের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিপ্রাপ্তির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে একটি প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে চূড়ান্ত নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে গেলাম।
এর কয়েক দিন পর হঠাৎ আমাকে রাজশাহী যেতে হবে। তখন ঢাকা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত দু-একটি এসি নাইট কোচ চলত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত শুধু নন-এসি বাসের প্রচলন ছিল। মার্চ মাসের গরম শুরু হওয়ায় দূরের গন্তব্যে রাতের ঠান্ডা বাতাসে বাসের জানালা খুলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। সেটা ভেবে রাতের বাসের টিকিট করে যাত্রা শুরু হলো। ঢাকা থেকে আরিচাঘাট পর্যন্ত বাসটি ভালোই চালাচ্ছিলেন চালক। গন্তব্য রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। পুরো বাসের সিট যাত্রীতে ঠাসা।
আরিচাঘাটে দিনের আলোর আভা থাকতেই পৌঁছে গেলাম। কিন্তু ফেরি পেতে রাত ৯টা। যমুনা পাড়ি দিয়ে নগরবাড়ী পৌঁছাতে আড়াই-তিন ঘণ্টার নদীযাত্রা করতে হবে।
ফেরিতে সবাই তিনতলায় বা ছাদে উঠে নদীর ঠান্ডা বাতাসে অবগাহন করে প্রাণ জুড়ায়। সেখানে নদীর তাজা মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। খাওয়া সেরে অনেকে ছাদের ডেকে বসে গল্প করে, কেউবা ঘুমায়। তবে চালকেরা তাঁদের সহকারীর হাতে চাবি দিয়ে তাঁদের জন্য নির্ধারিত বিশ্রামের জায়গায় চলে যান। তাঁরা রাতের খাবার খান, শরীর ম্যাসাজ করান এবং অনেকে গাঁজা টানেন বা চোলাই মদ পান করে পেট পোরেন। তখনকার দিনে ফেনসিডিল, খাট, ইয়াবা, ক্রিস্টাল আইস ইত্যাদির প্রচলন ছিল না।
রাত ৩টার দিকে নগরবাড়ী ঘাটে ফেরি ভিড়তেই হাঁকডাক, শোরগোলে সবাই নিজ নিজ বাসে উঠে গেলে আমিও আমার বাস খুঁজে নিজের সিটে গিয়ে বসলাম। অনেকে সেদিন ঘুমিয়ে পড়লেও উত্তেজনায় আমার চোখে ঘুম আসেনি। সকাল হলেই যোগদান করব সরকারি চাকরিতে। শুধু ভাবনা আমার মাস্টার্স পরীক্ষার কী হাল হবে, কে জানে!
ফেরি থেকে নেমে মূল চালক বাসটির চাবি নিয়ে উল্কার মতো চালাতে শুরু করলেন। বিশ মিনিটও মনে হয় চালাননি, একবার একটি গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেল। এর কিছুক্ষণ পরের বিষয়টি আমার জীবনে একটি চির স্মরণীয় ঘটনা।
হঠাৎ লক্ষ করলাম বাসটি পিচঢালা পথ ছেড়ে পাশের কাঁচা মাটির রাস্তা দিয়ে এলোমেলোভাবে দ্রুত গতিতে ছুটছে। অন্যান্য বাস তাকে ওভারটেক করে শাঁ শাঁ করে সামনে চলে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে মূল রাস্তা দিয়ে চালানোর জন্য বলতে লাগলাম। কিন্তু মনে হয় কেউই সেটা শুনল না। বাসটি হঠাৎ সবাইকে নিয়ে পাশের একটি জলাভূমিতে নেমে গেল। বাসটির সামনের অংশের তিন ভাগ পানিতে, এক ভাগ ডাঙায়। সে অবস্থায় কাদায় চাকা আটকিয়ে থেমে জোরে শব্দ করতে লাগল। যাত্রীরা যে যেভাবে পারেন দরজা-জানালা দিয়ে লাফিয়ে বাইরে বের হতে লাগলেন। কিন্তু বাইরে তো পানি এবং কচুরিপানা ভর্তি অন্ধকার এক জগৎ!
আমি হাত ব্যাগটা নিয়ে খোলা দরজা দিয়ে নিজেকে জোর করে ঠেলে বের করে পানিতে নামলাম। পানির গভীরতা অনুভব করতেই সাঁতার দিয়ে ভিজে পাশের রাস্তায় উঠে গেলাম। ভেজা শরীর ও কাদামাখা পোশাকে ভিন্ন একটি বাসে করে রাজশাহী পৌঁছেছিলাম সেদিন। পরে খবরে জেনেছিলাম বাসের চালক ফেরিতে অতিরিক্ত মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় বাস চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ফেলে দিয়েছিলেন। বাসটি পানিতে পড়ে গেলেও সৌভাগ্যবশত কেউ মারা যাননি। মূল কথা হলো, মাদক সেবন এবং মাদকাসক্ত হয়ে যেকোনো কাজ করাই বিপজ্জনক এবং অনেক বিপদের প্রধান জন্মদাতা।
বর্তমানে মাদক ভয়ংকর রূপে লাখ লাখ মানুষের মুখে-শরীরে জায়গা দখল করে ফেলেছে। যারা মাতাল, তারা কী কাজ করবে? তাদের দ্বারা পরিবার ও সমাজের কী লাভ হবে বা কী ক্ষতি হবে বা হচ্ছে, সেটাই এখন বড় চিন্তার বিষয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা অসুস্থ মানুষ। এদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে একশ্রেণির লোভী, শঠ, পিশাচ, অবৈধ মাদক কারবারির অতি অর্থ লোভের কারণে। এরা একটি কালো সমাজ ও কালো পৃথিবীর নিকষ অন্ধকার অধ্যায়ের সূচনা করে ফেলেছে। মাদকের নানা ধরন, নানা নাম, নানা ব্যবসা ও সেবন গিলে ফেলছে সমাজের সুস্থ ভবিষ্যৎকে।
শুধু গাড়ির চালকই নন, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, আমলা, পুলিশ, চাকরিজীবী, এমপি, মন্ত্রী, খেলোয়াড়, সৈনিক, রিকশাওয়ালা, টোকাই, সাধারণ মানুষ সবাই কোনো না কোনো কারণে মাদকের গ্রাহক হচ্ছেন দিন দিন। আমাদের দেশে ভয়ংকরভাবে মাদকের গ্রাহক ও ভোক্তা বেড়ে গিয়ে মাদকদ্রব্যের বৃহত্তর বাজার তৈরি হয়েছে। মাদক পাচারের রুট এখন আমাদের সব সীমান্ত–আকাশ, নদী, সমুদ্র, স্থলপথ সবকিছু। চীন সীমান্তে অবস্থিত মিয়ানমারের শান রাজ্য থেকে বস্তা বস্তা ইয়াবার চালান বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সেদিনও দেশে (যুগান্তর, ৭. ১০. ২০২১) ১৩ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
মাদক ধ্বংস করছে চরিত্র, ফতুর করছে মাসিক বেতন, জমানো টাকা, অলংকার ও ব্যাংক হিসাব, নষ্ট করছে স্বাস্থ্য, অসাড় করছে দেহ-মন, ভেঙে দিচ্ছে পরিবার এবং ডেকে আনছে অকাল মৃত্যু। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না।
এমতাবস্থায় ডোপ টেস্ট একটি নতুন পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় খেপে যেতে পারেন মাদকাসক্তরা। ধরা খাবেন চাকরিরত মাদকাসক্তরা ও বিভিন্ন সেক্টরে চাকরিপ্রার্থীরা (ঢাকা পোস্ট, ৫. ৯. ২০২১)। তাই এই সুযোগ নিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসবে রিপোর্ট ভেজালকারী ও জালিয়াত চক্র। তারা করোনার অবৈধ সার্টিফিকেট বিক্রির মতো ডোপ টেস্টে পাস করিয়ে দেওয়ার নামে ভুয়া ডোপ টেস্টের ব্যবসা খুলে বসবে, সন্দেহ নেই! এটা ঠেকানো জরুরি। তাই যেনতেনভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণের এ নীতি বাস্তবায়ন করতে গেলে দেশের উপকার না হয়ে অপকারের আশঙ্কা বেশি।
এ ছাড়া আগাম ঘোষণা দিয়ে ডোপ টেস্ট করা যাবে না। হঠাৎ করে মোবাইল ডোপ টেস্টের ক্যাম্প করতে হবে সব প্রতিষ্ঠানে। সন্দেহভাজনদের টেস্ট করার আগাম তথ্য না জানিয়ে ডোপের মুখোমুখি করুন। তাতে সুফল মিলবে। কারণ, মাদক গ্রহণের পরে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে ডোপ টেস্টের ফল শূন্য হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে গোপনে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। মূত্র, লালা ইত্যাদি দিয়ে আধুনিক মাদকদ্রব্য সেবনকারীদের ডোপ টেস্টের ফল কার্যকরীভাবে বের না হলে উন্নত কেমিক্যাল টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে।
মাদকাসক্ত রুগ্ণ জাতি দিয়ে কী হবে? সে জন্য ডোপ টেস্ট করে মাদকাসক্ত নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। তবে ১৯৯০ সালে প্রণীত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত আইন, ২০১৮ সালে ২৪ (৪) ধারায় সংশোধিত হয়ে ধরা পড়া এবং ৩৬ (৪) ধারাটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ মনে না হলে আরও কঠিন করে সংশোধনী আনতে হবে।
আলাদা মাদকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমত, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বড় বড় বসকে দিয়ে শুরু করতে হবে এই ডোপ টেস্ট। তাহলে ছোটরা ভয়ে মাদক গ্রহণ ছেড়ে দেবে। বছরে সব চাকরিজীবীর জন্য অন্তত এক বা দুবার ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। যে কেউ টেস্টে পজিটিভ হলে তার বেতন বন্ধ, বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করা বলবৎ করতে হবে।
দেশে এখন ৭০ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। তবে যারা বেশি আসক্ত, তাদের কোনোভাবেই ঠেকানো না গেলে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ভুয়া করোনা সনদ বিক্রির মতো ডোপ টেস্টের ভুয়া সনদ বিক্রির পরিস্থিতি সৃষ্টি ও পরিণতি যেন না হয়, সে জন্য সতর্কতার সঙ্গে আগাম নৈতিক কর্মপরিকল্পনাও নিতে হবে।
একত্রিশ বছর আগের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের আবাসিক ছাত্র আমি। মাস্টার্স পরীক্ষা শুরু হতে তখনো দুই মাস দেরি। অনার্সের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিপ্রাপ্তির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে একটি প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে চূড়ান্ত নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে গেলাম।
এর কয়েক দিন পর হঠাৎ আমাকে রাজশাহী যেতে হবে। তখন ঢাকা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত দু-একটি এসি নাইট কোচ চলত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত শুধু নন-এসি বাসের প্রচলন ছিল। মার্চ মাসের গরম শুরু হওয়ায় দূরের গন্তব্যে রাতের ঠান্ডা বাতাসে বাসের জানালা খুলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। সেটা ভেবে রাতের বাসের টিকিট করে যাত্রা শুরু হলো। ঢাকা থেকে আরিচাঘাট পর্যন্ত বাসটি ভালোই চালাচ্ছিলেন চালক। গন্তব্য রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। পুরো বাসের সিট যাত্রীতে ঠাসা।
আরিচাঘাটে দিনের আলোর আভা থাকতেই পৌঁছে গেলাম। কিন্তু ফেরি পেতে রাত ৯টা। যমুনা পাড়ি দিয়ে নগরবাড়ী পৌঁছাতে আড়াই-তিন ঘণ্টার নদীযাত্রা করতে হবে।
ফেরিতে সবাই তিনতলায় বা ছাদে উঠে নদীর ঠান্ডা বাতাসে অবগাহন করে প্রাণ জুড়ায়। সেখানে নদীর তাজা মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। খাওয়া সেরে অনেকে ছাদের ডেকে বসে গল্প করে, কেউবা ঘুমায়। তবে চালকেরা তাঁদের সহকারীর হাতে চাবি দিয়ে তাঁদের জন্য নির্ধারিত বিশ্রামের জায়গায় চলে যান। তাঁরা রাতের খাবার খান, শরীর ম্যাসাজ করান এবং অনেকে গাঁজা টানেন বা চোলাই মদ পান করে পেট পোরেন। তখনকার দিনে ফেনসিডিল, খাট, ইয়াবা, ক্রিস্টাল আইস ইত্যাদির প্রচলন ছিল না।
রাত ৩টার দিকে নগরবাড়ী ঘাটে ফেরি ভিড়তেই হাঁকডাক, শোরগোলে সবাই নিজ নিজ বাসে উঠে গেলে আমিও আমার বাস খুঁজে নিজের সিটে গিয়ে বসলাম। অনেকে সেদিন ঘুমিয়ে পড়লেও উত্তেজনায় আমার চোখে ঘুম আসেনি। সকাল হলেই যোগদান করব সরকারি চাকরিতে। শুধু ভাবনা আমার মাস্টার্স পরীক্ষার কী হাল হবে, কে জানে!
ফেরি থেকে নেমে মূল চালক বাসটির চাবি নিয়ে উল্কার মতো চালাতে শুরু করলেন। বিশ মিনিটও মনে হয় চালাননি, একবার একটি গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেল। এর কিছুক্ষণ পরের বিষয়টি আমার জীবনে একটি চির স্মরণীয় ঘটনা।
হঠাৎ লক্ষ করলাম বাসটি পিচঢালা পথ ছেড়ে পাশের কাঁচা মাটির রাস্তা দিয়ে এলোমেলোভাবে দ্রুত গতিতে ছুটছে। অন্যান্য বাস তাকে ওভারটেক করে শাঁ শাঁ করে সামনে চলে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে মূল রাস্তা দিয়ে চালানোর জন্য বলতে লাগলাম। কিন্তু মনে হয় কেউই সেটা শুনল না। বাসটি হঠাৎ সবাইকে নিয়ে পাশের একটি জলাভূমিতে নেমে গেল। বাসটির সামনের অংশের তিন ভাগ পানিতে, এক ভাগ ডাঙায়। সে অবস্থায় কাদায় চাকা আটকিয়ে থেমে জোরে শব্দ করতে লাগল। যাত্রীরা যে যেভাবে পারেন দরজা-জানালা দিয়ে লাফিয়ে বাইরে বের হতে লাগলেন। কিন্তু বাইরে তো পানি এবং কচুরিপানা ভর্তি অন্ধকার এক জগৎ!
আমি হাত ব্যাগটা নিয়ে খোলা দরজা দিয়ে নিজেকে জোর করে ঠেলে বের করে পানিতে নামলাম। পানির গভীরতা অনুভব করতেই সাঁতার দিয়ে ভিজে পাশের রাস্তায় উঠে গেলাম। ভেজা শরীর ও কাদামাখা পোশাকে ভিন্ন একটি বাসে করে রাজশাহী পৌঁছেছিলাম সেদিন। পরে খবরে জেনেছিলাম বাসের চালক ফেরিতে অতিরিক্ত মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় বাস চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ফেলে দিয়েছিলেন। বাসটি পানিতে পড়ে গেলেও সৌভাগ্যবশত কেউ মারা যাননি। মূল কথা হলো, মাদক সেবন এবং মাদকাসক্ত হয়ে যেকোনো কাজ করাই বিপজ্জনক এবং অনেক বিপদের প্রধান জন্মদাতা।
বর্তমানে মাদক ভয়ংকর রূপে লাখ লাখ মানুষের মুখে-শরীরে জায়গা দখল করে ফেলেছে। যারা মাতাল, তারা কী কাজ করবে? তাদের দ্বারা পরিবার ও সমাজের কী লাভ হবে বা কী ক্ষতি হবে বা হচ্ছে, সেটাই এখন বড় চিন্তার বিষয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা অসুস্থ মানুষ। এদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে একশ্রেণির লোভী, শঠ, পিশাচ, অবৈধ মাদক কারবারির অতি অর্থ লোভের কারণে। এরা একটি কালো সমাজ ও কালো পৃথিবীর নিকষ অন্ধকার অধ্যায়ের সূচনা করে ফেলেছে। মাদকের নানা ধরন, নানা নাম, নানা ব্যবসা ও সেবন গিলে ফেলছে সমাজের সুস্থ ভবিষ্যৎকে।
শুধু গাড়ির চালকই নন, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, আমলা, পুলিশ, চাকরিজীবী, এমপি, মন্ত্রী, খেলোয়াড়, সৈনিক, রিকশাওয়ালা, টোকাই, সাধারণ মানুষ সবাই কোনো না কোনো কারণে মাদকের গ্রাহক হচ্ছেন দিন দিন। আমাদের দেশে ভয়ংকরভাবে মাদকের গ্রাহক ও ভোক্তা বেড়ে গিয়ে মাদকদ্রব্যের বৃহত্তর বাজার তৈরি হয়েছে। মাদক পাচারের রুট এখন আমাদের সব সীমান্ত–আকাশ, নদী, সমুদ্র, স্থলপথ সবকিছু। চীন সীমান্তে অবস্থিত মিয়ানমারের শান রাজ্য থেকে বস্তা বস্তা ইয়াবার চালান বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সেদিনও দেশে (যুগান্তর, ৭. ১০. ২০২১) ১৩ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
মাদক ধ্বংস করছে চরিত্র, ফতুর করছে মাসিক বেতন, জমানো টাকা, অলংকার ও ব্যাংক হিসাব, নষ্ট করছে স্বাস্থ্য, অসাড় করছে দেহ-মন, ভেঙে দিচ্ছে পরিবার এবং ডেকে আনছে অকাল মৃত্যু। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না।
এমতাবস্থায় ডোপ টেস্ট একটি নতুন পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় খেপে যেতে পারেন মাদকাসক্তরা। ধরা খাবেন চাকরিরত মাদকাসক্তরা ও বিভিন্ন সেক্টরে চাকরিপ্রার্থীরা (ঢাকা পোস্ট, ৫. ৯. ২০২১)। তাই এই সুযোগ নিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসবে রিপোর্ট ভেজালকারী ও জালিয়াত চক্র। তারা করোনার অবৈধ সার্টিফিকেট বিক্রির মতো ডোপ টেস্টে পাস করিয়ে দেওয়ার নামে ভুয়া ডোপ টেস্টের ব্যবসা খুলে বসবে, সন্দেহ নেই! এটা ঠেকানো জরুরি। তাই যেনতেনভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণের এ নীতি বাস্তবায়ন করতে গেলে দেশের উপকার না হয়ে অপকারের আশঙ্কা বেশি।
এ ছাড়া আগাম ঘোষণা দিয়ে ডোপ টেস্ট করা যাবে না। হঠাৎ করে মোবাইল ডোপ টেস্টের ক্যাম্প করতে হবে সব প্রতিষ্ঠানে। সন্দেহভাজনদের টেস্ট করার আগাম তথ্য না জানিয়ে ডোপের মুখোমুখি করুন। তাতে সুফল মিলবে। কারণ, মাদক গ্রহণের পরে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে ডোপ টেস্টের ফল শূন্য হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে গোপনে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। মূত্র, লালা ইত্যাদি দিয়ে আধুনিক মাদকদ্রব্য সেবনকারীদের ডোপ টেস্টের ফল কার্যকরীভাবে বের না হলে উন্নত কেমিক্যাল টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে।
মাদকাসক্ত রুগ্ণ জাতি দিয়ে কী হবে? সে জন্য ডোপ টেস্ট করে মাদকাসক্ত নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। তবে ১৯৯০ সালে প্রণীত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত আইন, ২০১৮ সালে ২৪ (৪) ধারায় সংশোধিত হয়ে ধরা পড়া এবং ৩৬ (৪) ধারাটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ মনে না হলে আরও কঠিন করে সংশোধনী আনতে হবে।
আলাদা মাদকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমত, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বড় বড় বসকে দিয়ে শুরু করতে হবে এই ডোপ টেস্ট। তাহলে ছোটরা ভয়ে মাদক গ্রহণ ছেড়ে দেবে। বছরে সব চাকরিজীবীর জন্য অন্তত এক বা দুবার ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। যে কেউ টেস্টে পজিটিভ হলে তার বেতন বন্ধ, বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করা বলবৎ করতে হবে।
দেশে এখন ৭০ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। তবে যারা বেশি আসক্ত, তাদের কোনোভাবেই ঠেকানো না গেলে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ভুয়া করোনা সনদ বিক্রির মতো ডোপ টেস্টের ভুয়া সনদ বিক্রির পরিস্থিতি সৃষ্টি ও পরিণতি যেন না হয়, সে জন্য সতর্কতার সঙ্গে আগাম নৈতিক কর্মপরিকল্পনাও নিতে হবে।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১৪ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১৪ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৪ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৪ ঘণ্টা আগে