বিভুরঞ্জন সরকার
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৪ সালে। কিন্তু মাসখানেক ধরে দেশে নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের এক বৈঠকে আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগকে প্রস্তুতি নিতে বলেন। তারপর নড়াচড়া শুরু হয় বিএনপির। বিএনপিও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে টানা মিটিং করে, মতামত নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি তৈরি করছে।
বিএনপি দল গোছানোর কথা বলছে। কবে নাগাদ দল গোছানোর কাজ শেষ হবে এবং এবার আন্দোলনের ধরন কী হবে, তা স্পষ্ট না হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এটা বেশ জোর দিয়েই বলা হচ্ছে যে তারা আর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। সরকারের পতনই তাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য তারা সরকারবিরোধী অন্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং বর্তমানে কিছুটা নড়বড়ে ২০-দলীয় জোটের আয়তন বাড়ানোর চেষ্টা করবে।
বিএনপির আন্দোলন-প্রস্তুতি নিয়ে সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে কি না, কিংবা আন্দোলন মোকাবিলার জন্য সরকার এবং সরকারি দলের পাল্টা প্রস্তুতি কী, তা পরিষ্কার হতে আরও সময় লাগবে। তবে অতীতে বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে একাধিকবার আন্দোলনে নেমে তেমন সুফল পায়নি। সে জন্য বিএনপির আন্দোলন-সক্ষমতা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় আছে। বিএনপির গর্জন বেশি, বর্ষণ কম। অবশ্য বিএনপির প্রতি যাঁরা নমনীয়, তাঁরা মনে করেন সরকার দমন-পীড়ন চালিয়ে বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দেয় না।
সরকার পরিবর্তনের নিয়মতান্ত্রিক পথ হলো নির্বাচন। বিএনপি যদি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে সরকার পরিবর্তনের অনিয়মতান্ত্রিক পথেই দলটিকে হাঁটতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আওয়ামী লীগ মানবে না। এই দাবি আদায়ের জন্য দেশে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থানের কথা আওয়ামী লীগবিরোধীরা হরহামেশা বললেও, সত্য এটাই যে গণ-অভ্যুত্থান কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতার খেয়ালখুশিমতো হয় না।
খ. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে কিছু কথা বলেছেন, যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনাও হচ্ছে। ‘বিএনপিকে কে ভোট দেবে’–এ প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘একটা দল কীভাবে জিতবে, তার নেতৃত্ব কোথায়? একজন এতিমের টাকা চুরি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আরেকজন গ্রেনেড হামলার মামলায় কারাদণ্ড নিয়ে দেশান্তরি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি। জনগণ কোন ভরসায় ওই দলকে ভোট দেবে?’
অন্যরা কে কী বলছেন, তার আগে দেখে নেওয়া যাক এ নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ওনারা দেশের যে অবস্থা করেছেন, মানুষের জীবন-জীবিকার কোনো নিরাপত্তা নেই, চতুর্দিকে ভয়, ত্রাস আর সন্ত্রাস ছাড়া কিছু নেই। এর ফলে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। ওনাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে।’
মির্জা আলমগীর আরও বলেছেন, ‘সরকার বলছে অনেক উন্নয়ন করেছে। এত উন্নয়ন করে থাকলে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেয় না কেন? এত কথা বলেন, এত দাম্ভিকতা দেখান। একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখান।’
সেদিন এক সামাজিক অনুষ্ঠানে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলো। আমি জানতে চেয়েছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ঠিক, না মির্জা ফখরুল ঠিক কথা বলেছেন? একজন বললেন, দুজনই ঠিক কথা বলেছেন। যাঁরা আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক-ভক্ত, তাঁরা মনে করেন, বিএনপিকে মানুষ ভোট দেবে না। খালেদা-তারেকের নেতৃত্বে মানুষের আস্থা নেই। আবার যাঁরা বিএনপি-সমর্থক বা আওয়ামী লীগবিরোধী, তাঁরা মনে করেন, ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে মানুষ বিএনপির ধানের শীষ ছাড়া আর কোনো প্রতীকে সিল মারবে না। এ জন্যই অবাধে, মুক্ত পরিবেশে, মানুষ যাতে নিজের ভোট নিজে দিতে না পারে, সে ব্যবস্থাই সরকার গত দুই নির্বাচনে করেছে এবং পরের নির্বাচনেও তার ধারা অনুসরণ করা হবে বলে ধারণা।
সরকার যে দেশের এত উন্নতি করল, এত এত গৃহহীন মানুষকে ঠাঁই করে দিল, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ বানিয়ে মানুষের জীবনকে স্বছন্দ করল, বিনা মূল্যে বই দিয়ে শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখল, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের আওতায় এত মানুষকে নগদ সহায়তা দিল, ভোটের বাজারে কি এসবের কোনোই মূল্য নেই?
একজন উন্নয়নকর্মী বললেন, মানুষ শুধু উন্নয়ন দেখে ভোট দেয় না। আরও নানা কিছু হিসাবে নেয়, বিবেচনা করে। তা ছাড়া এক দলের টানা ক্ষমতায় থাকাও মানুষ পছন্দ করে না। যতই স্বাদের হোক এক খাবার মানুষ প্রতিদিন খেতে চায় না। স্বাদ বদল মানুষের একটি প্রিয় হবি।
‘আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের বড় শত্রু’–মন্তব্য করে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বললেন, শেখ হাসিনার ভালো কাজে গোবর ছিটিয়ে দিচ্ছে তাঁরই কিছু অপরিণামদর্শী নেতা-কর্মী। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের কিছু নেতা-কর্মীর ঔদ্ধত্য, নানা ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে আঙুল ফুলে বটগাছ হওয়ায় মানুষ সত্যি অতিষ্ঠ। আবার এটাও ঠিক, আওয়ামী লীগের ভালো বিকল্প হয়ে ওঠার চেষ্টা বিএনপির নেই। কারণ, আমাদের রাজনীতিতে ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতা নেই, প্রতিযোগিতা খারাপ হওয়ার। তাই বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়ছে না; তবে আওয়ামী লীগের কমেছে নিঃসন্দেহে। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে মানুষ কাকে বেছে নেবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।’
বিএনপি তো নির্বাচনকে ‘না’ বলে আন্দোলনকে ‘হ্যাঁ’ বলেছে। তাহলে দেশে কি আন্দোলনের ঝড় আসন্ন? সাংবাদিকের কৌতূহল নিয়ে জানতে চাই আমি। আওয়ামী লীগের সদস্য না হয়েও নৌকা প্রতীকেই ভোট দেন, এমন একজন বললেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসও সব সময় সঠিক হয় না। মানুষ কেন, কখন আন্দোলন করবে, কী কী কারণ ঘটলে মানুষ জীবনবাজি রেখে আন্দোলনে নামবে, তা বলার মতো রাজনৈতিক পণ্ডিত আমাদের দেশে আছে বলে মনে হয় না। তাই আন্দোলন নিয়ে আগাম দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই।
গ. ওই সামাজিক অনুষ্ঠানের পরের দিন নজরে পড়ল তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের একটি বক্তৃতার খবর। ৭ অক্টোবর তিনি বলেছেন, খালি কলসির মতোই জনসমর্থনহীন বলে বিএনপি বেশি বাজে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে যথার্থ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘কোন দুঃখে মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে! আবার কি পেট্রলবোমা মারার জন্য, পাঁচ শ জায়গায় আবার একসঙ্গে বোমা বিস্ফোরণের জন্য, আদালতে বোমা বিস্ফোরণের জন্য এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যেভাবে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, সে ধরনের জন্য, কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো সংসদ সদস্যদের হত্যা করার জন্য, বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমানের উৎপত্তি হওয়ার জন্য!’
এবার শোনা যাক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বাণী। তিনি বলেছেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, আমরা সবাই মাঠের আন্দোলনের জন্য একমত হয়েছি। এখন শুধু একটি ডাকের অপেক্ষায়। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে মাঠের আন্দোলনের জন্য এখন কাউকে একটা ডাক দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘গত তিন সাড়ে তিন বছর থেকে আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন করছি। আর মুক্তি আন্দোলন নয়, এখন থেকে আমরা শেখ হাসিনার পতন আন্দোলন করব।’
আমার একজন আইনজীবী বন্ধুর তাৎক্ষণিক মন্তব্য: কে সেই ডাক দেবেন? খালেদা জিয়া? নাকি তারেক রহমান? নাকি দুজনে একত্রে বাঁশি বাজাবেন? আচ্ছা, শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনের পরিণতি যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের মতো হয়?
আরেকজন বললেন, ‘কাউকে আন্ডার এস্টিমেট করা, দুর্বল ভাবা ঠিক হবে না, পচা শামুকেও পা কাটে!’আমি আর কী মন্তব্য করব? সবার কথা মাথায় থাক।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৪ সালে। কিন্তু মাসখানেক ধরে দেশে নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের এক বৈঠকে আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগকে প্রস্তুতি নিতে বলেন। তারপর নড়াচড়া শুরু হয় বিএনপির। বিএনপিও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে টানা মিটিং করে, মতামত নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি তৈরি করছে।
বিএনপি দল গোছানোর কথা বলছে। কবে নাগাদ দল গোছানোর কাজ শেষ হবে এবং এবার আন্দোলনের ধরন কী হবে, তা স্পষ্ট না হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এটা বেশ জোর দিয়েই বলা হচ্ছে যে তারা আর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। সরকারের পতনই তাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য তারা সরকারবিরোধী অন্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং বর্তমানে কিছুটা নড়বড়ে ২০-দলীয় জোটের আয়তন বাড়ানোর চেষ্টা করবে।
বিএনপির আন্দোলন-প্রস্তুতি নিয়ে সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে কি না, কিংবা আন্দোলন মোকাবিলার জন্য সরকার এবং সরকারি দলের পাল্টা প্রস্তুতি কী, তা পরিষ্কার হতে আরও সময় লাগবে। তবে অতীতে বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে একাধিকবার আন্দোলনে নেমে তেমন সুফল পায়নি। সে জন্য বিএনপির আন্দোলন-সক্ষমতা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় আছে। বিএনপির গর্জন বেশি, বর্ষণ কম। অবশ্য বিএনপির প্রতি যাঁরা নমনীয়, তাঁরা মনে করেন সরকার দমন-পীড়ন চালিয়ে বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দেয় না।
সরকার পরিবর্তনের নিয়মতান্ত্রিক পথ হলো নির্বাচন। বিএনপি যদি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে সরকার পরিবর্তনের অনিয়মতান্ত্রিক পথেই দলটিকে হাঁটতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আওয়ামী লীগ মানবে না। এই দাবি আদায়ের জন্য দেশে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থানের কথা আওয়ামী লীগবিরোধীরা হরহামেশা বললেও, সত্য এটাই যে গণ-অভ্যুত্থান কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতার খেয়ালখুশিমতো হয় না।
খ. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে কিছু কথা বলেছেন, যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনাও হচ্ছে। ‘বিএনপিকে কে ভোট দেবে’–এ প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘একটা দল কীভাবে জিতবে, তার নেতৃত্ব কোথায়? একজন এতিমের টাকা চুরি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আরেকজন গ্রেনেড হামলার মামলায় কারাদণ্ড নিয়ে দেশান্তরি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি। জনগণ কোন ভরসায় ওই দলকে ভোট দেবে?’
অন্যরা কে কী বলছেন, তার আগে দেখে নেওয়া যাক এ নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ওনারা দেশের যে অবস্থা করেছেন, মানুষের জীবন-জীবিকার কোনো নিরাপত্তা নেই, চতুর্দিকে ভয়, ত্রাস আর সন্ত্রাস ছাড়া কিছু নেই। এর ফলে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। ওনাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে।’
মির্জা আলমগীর আরও বলেছেন, ‘সরকার বলছে অনেক উন্নয়ন করেছে। এত উন্নয়ন করে থাকলে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেয় না কেন? এত কথা বলেন, এত দাম্ভিকতা দেখান। একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখান।’
সেদিন এক সামাজিক অনুষ্ঠানে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলো। আমি জানতে চেয়েছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ঠিক, না মির্জা ফখরুল ঠিক কথা বলেছেন? একজন বললেন, দুজনই ঠিক কথা বলেছেন। যাঁরা আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক-ভক্ত, তাঁরা মনে করেন, বিএনপিকে মানুষ ভোট দেবে না। খালেদা-তারেকের নেতৃত্বে মানুষের আস্থা নেই। আবার যাঁরা বিএনপি-সমর্থক বা আওয়ামী লীগবিরোধী, তাঁরা মনে করেন, ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে মানুষ বিএনপির ধানের শীষ ছাড়া আর কোনো প্রতীকে সিল মারবে না। এ জন্যই অবাধে, মুক্ত পরিবেশে, মানুষ যাতে নিজের ভোট নিজে দিতে না পারে, সে ব্যবস্থাই সরকার গত দুই নির্বাচনে করেছে এবং পরের নির্বাচনেও তার ধারা অনুসরণ করা হবে বলে ধারণা।
সরকার যে দেশের এত উন্নতি করল, এত এত গৃহহীন মানুষকে ঠাঁই করে দিল, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ বানিয়ে মানুষের জীবনকে স্বছন্দ করল, বিনা মূল্যে বই দিয়ে শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখল, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের আওতায় এত মানুষকে নগদ সহায়তা দিল, ভোটের বাজারে কি এসবের কোনোই মূল্য নেই?
একজন উন্নয়নকর্মী বললেন, মানুষ শুধু উন্নয়ন দেখে ভোট দেয় না। আরও নানা কিছু হিসাবে নেয়, বিবেচনা করে। তা ছাড়া এক দলের টানা ক্ষমতায় থাকাও মানুষ পছন্দ করে না। যতই স্বাদের হোক এক খাবার মানুষ প্রতিদিন খেতে চায় না। স্বাদ বদল মানুষের একটি প্রিয় হবি।
‘আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের বড় শত্রু’–মন্তব্য করে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বললেন, শেখ হাসিনার ভালো কাজে গোবর ছিটিয়ে দিচ্ছে তাঁরই কিছু অপরিণামদর্শী নেতা-কর্মী। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের কিছু নেতা-কর্মীর ঔদ্ধত্য, নানা ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে আঙুল ফুলে বটগাছ হওয়ায় মানুষ সত্যি অতিষ্ঠ। আবার এটাও ঠিক, আওয়ামী লীগের ভালো বিকল্প হয়ে ওঠার চেষ্টা বিএনপির নেই। কারণ, আমাদের রাজনীতিতে ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতা নেই, প্রতিযোগিতা খারাপ হওয়ার। তাই বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়ছে না; তবে আওয়ামী লীগের কমেছে নিঃসন্দেহে। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে মানুষ কাকে বেছে নেবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।’
বিএনপি তো নির্বাচনকে ‘না’ বলে আন্দোলনকে ‘হ্যাঁ’ বলেছে। তাহলে দেশে কি আন্দোলনের ঝড় আসন্ন? সাংবাদিকের কৌতূহল নিয়ে জানতে চাই আমি। আওয়ামী লীগের সদস্য না হয়েও নৌকা প্রতীকেই ভোট দেন, এমন একজন বললেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসও সব সময় সঠিক হয় না। মানুষ কেন, কখন আন্দোলন করবে, কী কী কারণ ঘটলে মানুষ জীবনবাজি রেখে আন্দোলনে নামবে, তা বলার মতো রাজনৈতিক পণ্ডিত আমাদের দেশে আছে বলে মনে হয় না। তাই আন্দোলন নিয়ে আগাম দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই।
গ. ওই সামাজিক অনুষ্ঠানের পরের দিন নজরে পড়ল তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের একটি বক্তৃতার খবর। ৭ অক্টোবর তিনি বলেছেন, খালি কলসির মতোই জনসমর্থনহীন বলে বিএনপি বেশি বাজে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে যথার্থ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘কোন দুঃখে মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে! আবার কি পেট্রলবোমা মারার জন্য, পাঁচ শ জায়গায় আবার একসঙ্গে বোমা বিস্ফোরণের জন্য, আদালতে বোমা বিস্ফোরণের জন্য এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যেভাবে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, সে ধরনের জন্য, কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো সংসদ সদস্যদের হত্যা করার জন্য, বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমানের উৎপত্তি হওয়ার জন্য!’
এবার শোনা যাক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বাণী। তিনি বলেছেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, আমরা সবাই মাঠের আন্দোলনের জন্য একমত হয়েছি। এখন শুধু একটি ডাকের অপেক্ষায়। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে মাঠের আন্দোলনের জন্য এখন কাউকে একটা ডাক দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘গত তিন সাড়ে তিন বছর থেকে আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন করছি। আর মুক্তি আন্দোলন নয়, এখন থেকে আমরা শেখ হাসিনার পতন আন্দোলন করব।’
আমার একজন আইনজীবী বন্ধুর তাৎক্ষণিক মন্তব্য: কে সেই ডাক দেবেন? খালেদা জিয়া? নাকি তারেক রহমান? নাকি দুজনে একত্রে বাঁশি বাজাবেন? আচ্ছা, শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনের পরিণতি যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের মতো হয়?
আরেকজন বললেন, ‘কাউকে আন্ডার এস্টিমেট করা, দুর্বল ভাবা ঠিক হবে না, পচা শামুকেও পা কাটে!’আমি আর কী মন্তব্য করব? সবার কথা মাথায় থাক।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
২০ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
২০ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
২০ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
২০ ঘণ্টা আগে