ড. আবদুল আলীম তালুকদার
মানুষের পাঁচটি মৌল-মানবিক অধিকারের মধ্যে শিক্ষা অন্যতম; যা মানুষকে সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে নিরক্ষরতা মানুষের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে। শিক্ষাহীন জীবন নির্বোধ-অচৈতন্য প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এককথায় নিরক্ষরতা একটি অভিশাপ।
১৯৬১ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবীর সব দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯৬৫ সালের ৮-১৯ সেপ্টেম্বর ইউনেসকোর উদ্যোগে তেহরানে বিশ্ব সাক্ষরতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে ইউনেসকোর সাধারণ সম্মেলনের ১৪তম অধিবেশনে ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর ইউনেসকো কর্তৃক ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ঘোষণা করা হয় এবং এটি ১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মতো উদ্যাপিত হয়। প্রতিবছর দিবসটি উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দেশের সাক্ষরতা ও বয়স্ক শিক্ষার অবস্থা তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে ১৯৭২ সাল থেকে। এর লক্ষ্য ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও সমাজের কাছে সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরা।
আভিধানিক অর্থে সাক্ষরতা হলো অক্ষরপরিচিতি, লেখা ও পড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়া। অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বিষয় পড়ে, সেটা লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়, তাহলে তাকে সাক্ষর বলে। ইউনেসকোর বিশেষজ্ঞ কমিটি সাক্ষরতার সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে: ‘একজন ব্যক্তির পাঠের ক্ষমতা অক্ষরপরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পাঠের বিষয়ের বোধগম্যতা ও লিখে নিজের মনের ভাব প্রকাশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’ সাক্ষরতা শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়: ব্যবহারিক সাক্ষরতা ও আনুষ্ঠানিক সাক্ষরতা। ব্যবহারিক সাক্ষরতা বলতে বোঝায় লেখা, পড়া ও গণিতের সাধারণ জ্ঞান অর্জন করা আর আনুষ্ঠানিক সাক্ষরতা হলো স্কুল-কলেজে পড়ে যে শিক্ষা পাওয়া যায়।
একসময় সাক্ষরতা বলতে সাধারণত অক্ষরজ্ঞানসম্পন্নতাকেই বোঝানো হতো। অর্থাৎ নিজের নাম লিখতে যে কয়টি বর্ণমালা প্রয়োজন, তা জানলেই তাকে সাক্ষর বলা হতো। কিন্তু দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এর পরিধি। এখন শুধু সাক্ষরজ্ঞান থাকলেই তাকে সাক্ষরতা বলা চলে না। ১৯৪০ সালের দিকে পড়ার সঙ্গে লেখার দক্ষতাকে সাক্ষরতা বলে অভিহিত করা হতো। ষাটের দশকে পড়া আর লেখার দক্ষতার সঙ্গে হিসাবনিকাশের যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ সাক্ষর হিসেবে পরিগণিত হতো।
১৯৬৭ সালে ইউনেসকো প্রথম সাক্ষরতার সংজ্ঞা দেয়। পরে ১৯৯৩ সালে ইউনেসকো সাক্ষর সম্পর্কে যে সংজ্ঞাটি নির্ধারণ করে তা হলো: যে ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে এবং দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাবনিকাশ করতে পারবে। বাংলাদেশে সাক্ষরতার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯০১ সালে। বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪.৭০ শতাংশ।
ভাষাভিত্তিক পরিসংখ্যানিক ওয়েবসাইট এথনোলগ ডটকম থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, পৃথিবীতে বর্তমানে আনুমানিক সাত হাজারের বেশি ভাষা প্রচলিত আছে। তন্মধ্যে দুই হাজার ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা এক হাজারের কম। এ ছাড়া মোট ভাষার মাত্র অর্ধেকের আছে লেখ্য রূপ। এসব ভাষায় ব্যবহার করা হয় ৪৬ ধরনের বর্ণমালা। বাকিগুলো মৌখিকভাবেই চর্চিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাকেন্দ্রিক গবেষণার তথ্যানুযায়ী প্রতি দুই সপ্তাহে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি
করে ভাষা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের রয়েছে সাক্ষরতা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৯১৮ সালে আমাদের দেশে নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এরপর ১৯৩৪ সালে খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ্ ও নবাব আবদুল লতিফ প্রমুখের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র। ১৯৬০ সালে ভি-এইড কার্যক্রমের আওতায় সফলভাবে পরিচালিত হয় বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ব্যুরো অব নন ফরমাল এডুকেশন’। শুধু তা-ই নয়, সাক্ষরতা সমস্যা উত্তরণে বহুবিধ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ১৯৯১ সালে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে বই সরবরাহ করা হচ্ছে আর শিক্ষার্থীদের জন্য তো শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছেই। আমাদের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে ৬-১০ বছরের ছেলেমেয়ের জন্য বিনা মূল্যে মৌলিক শিক্ষা প্রদানের গুরুত্বারোপ সাক্ষরতা বৃদ্ধির ইতিবাচক পদক্ষেপ।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, বিশ্বে সাক্ষরতার হার দিন দিন বাড়লেও বর্তমানে বিশ্বের ২৮ কোটির বেশি শিশু-কিশোর বিদ্যালয়ে যায় না। তার সঙ্গে ৬০ কোটির বেশি মানুষ সাক্ষরতা ও হিসাবনিকাশে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। এ অবস্থায় শুধু সাক্ষরতা অর্জন নয়, প্রায়োগিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানও বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসীর জন্য।
কুসংস্কার, দারিদ্র্য, ধর্মান্ধতা, অনগ্রসরতা, শিশুশ্রম, নারীশিক্ষার অপ্রতুলতা, নারী-পুরুষের বৈষম্য প্রভৃতি দূর করতে সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শিশুমৃত্যুর হার রোধ, সুষম উন্নয়ন এবং জাতিকে সমৃদ্ধির পথে উত্তরণের ক্ষেত্রেও সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে ন্যূনতম শিক্ষা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। এটি ব্যক্তির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক মনোবল বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধেও সাহায্য করে। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নাগরিকদের সাক্ষরতার দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে তাই শুধু শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রাই যথেষ্ট নয়, জনসংখ্যাকে যথার্থ অর্থেই সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা, সবার জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে এবং সরকার কর্তৃক গৃহীত ২০৩০ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের তালিকায় উন্নীত হওয়ার কাজটি সহজতর হবে নিঃসন্দেহে। তাই বিশ্বদরবারে স্বাধীন দেশের মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে নিজেদের গৌরব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত সাক্ষরতা অভিযানে সবার অংশগ্রহণ আবশ্যক।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ
মানুষের পাঁচটি মৌল-মানবিক অধিকারের মধ্যে শিক্ষা অন্যতম; যা মানুষকে সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে নিরক্ষরতা মানুষের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে। শিক্ষাহীন জীবন নির্বোধ-অচৈতন্য প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এককথায় নিরক্ষরতা একটি অভিশাপ।
১৯৬১ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবীর সব দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯৬৫ সালের ৮-১৯ সেপ্টেম্বর ইউনেসকোর উদ্যোগে তেহরানে বিশ্ব সাক্ষরতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে ইউনেসকোর সাধারণ সম্মেলনের ১৪তম অধিবেশনে ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর ইউনেসকো কর্তৃক ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ঘোষণা করা হয় এবং এটি ১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মতো উদ্যাপিত হয়। প্রতিবছর দিবসটি উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দেশের সাক্ষরতা ও বয়স্ক শিক্ষার অবস্থা তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে ১৯৭২ সাল থেকে। এর লক্ষ্য ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও সমাজের কাছে সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরা।
আভিধানিক অর্থে সাক্ষরতা হলো অক্ষরপরিচিতি, লেখা ও পড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়া। অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বিষয় পড়ে, সেটা লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়, তাহলে তাকে সাক্ষর বলে। ইউনেসকোর বিশেষজ্ঞ কমিটি সাক্ষরতার সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে: ‘একজন ব্যক্তির পাঠের ক্ষমতা অক্ষরপরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পাঠের বিষয়ের বোধগম্যতা ও লিখে নিজের মনের ভাব প্রকাশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’ সাক্ষরতা শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়: ব্যবহারিক সাক্ষরতা ও আনুষ্ঠানিক সাক্ষরতা। ব্যবহারিক সাক্ষরতা বলতে বোঝায় লেখা, পড়া ও গণিতের সাধারণ জ্ঞান অর্জন করা আর আনুষ্ঠানিক সাক্ষরতা হলো স্কুল-কলেজে পড়ে যে শিক্ষা পাওয়া যায়।
একসময় সাক্ষরতা বলতে সাধারণত অক্ষরজ্ঞানসম্পন্নতাকেই বোঝানো হতো। অর্থাৎ নিজের নাম লিখতে যে কয়টি বর্ণমালা প্রয়োজন, তা জানলেই তাকে সাক্ষর বলা হতো। কিন্তু দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এর পরিধি। এখন শুধু সাক্ষরজ্ঞান থাকলেই তাকে সাক্ষরতা বলা চলে না। ১৯৪০ সালের দিকে পড়ার সঙ্গে লেখার দক্ষতাকে সাক্ষরতা বলে অভিহিত করা হতো। ষাটের দশকে পড়া আর লেখার দক্ষতার সঙ্গে হিসাবনিকাশের যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ সাক্ষর হিসেবে পরিগণিত হতো।
১৯৬৭ সালে ইউনেসকো প্রথম সাক্ষরতার সংজ্ঞা দেয়। পরে ১৯৯৩ সালে ইউনেসকো সাক্ষর সম্পর্কে যে সংজ্ঞাটি নির্ধারণ করে তা হলো: যে ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে এবং দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাবনিকাশ করতে পারবে। বাংলাদেশে সাক্ষরতার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯০১ সালে। বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪.৭০ শতাংশ।
ভাষাভিত্তিক পরিসংখ্যানিক ওয়েবসাইট এথনোলগ ডটকম থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, পৃথিবীতে বর্তমানে আনুমানিক সাত হাজারের বেশি ভাষা প্রচলিত আছে। তন্মধ্যে দুই হাজার ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা এক হাজারের কম। এ ছাড়া মোট ভাষার মাত্র অর্ধেকের আছে লেখ্য রূপ। এসব ভাষায় ব্যবহার করা হয় ৪৬ ধরনের বর্ণমালা। বাকিগুলো মৌখিকভাবেই চর্চিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাকেন্দ্রিক গবেষণার তথ্যানুযায়ী প্রতি দুই সপ্তাহে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি
করে ভাষা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের রয়েছে সাক্ষরতা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৯১৮ সালে আমাদের দেশে নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এরপর ১৯৩৪ সালে খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ্ ও নবাব আবদুল লতিফ প্রমুখের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র। ১৯৬০ সালে ভি-এইড কার্যক্রমের আওতায় সফলভাবে পরিচালিত হয় বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ব্যুরো অব নন ফরমাল এডুকেশন’। শুধু তা-ই নয়, সাক্ষরতা সমস্যা উত্তরণে বহুবিধ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ১৯৯১ সালে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে বই সরবরাহ করা হচ্ছে আর শিক্ষার্থীদের জন্য তো শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছেই। আমাদের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে ৬-১০ বছরের ছেলেমেয়ের জন্য বিনা মূল্যে মৌলিক শিক্ষা প্রদানের গুরুত্বারোপ সাক্ষরতা বৃদ্ধির ইতিবাচক পদক্ষেপ।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, বিশ্বে সাক্ষরতার হার দিন দিন বাড়লেও বর্তমানে বিশ্বের ২৮ কোটির বেশি শিশু-কিশোর বিদ্যালয়ে যায় না। তার সঙ্গে ৬০ কোটির বেশি মানুষ সাক্ষরতা ও হিসাবনিকাশে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। এ অবস্থায় শুধু সাক্ষরতা অর্জন নয়, প্রায়োগিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানও বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসীর জন্য।
কুসংস্কার, দারিদ্র্য, ধর্মান্ধতা, অনগ্রসরতা, শিশুশ্রম, নারীশিক্ষার অপ্রতুলতা, নারী-পুরুষের বৈষম্য প্রভৃতি দূর করতে সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শিশুমৃত্যুর হার রোধ, সুষম উন্নয়ন এবং জাতিকে সমৃদ্ধির পথে উত্তরণের ক্ষেত্রেও সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে ন্যূনতম শিক্ষা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। এটি ব্যক্তির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক মনোবল বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধেও সাহায্য করে। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নাগরিকদের সাক্ষরতার দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে তাই শুধু শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রাই যথেষ্ট নয়, জনসংখ্যাকে যথার্থ অর্থেই সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা, সবার জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে এবং সরকার কর্তৃক গৃহীত ২০৩০ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের তালিকায় উন্নীত হওয়ার কাজটি সহজতর হবে নিঃসন্দেহে। তাই বিশ্বদরবারে স্বাধীন দেশের মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে নিজেদের গৌরব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত সাক্ষরতা অভিযানে সবার অংশগ্রহণ আবশ্যক।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৭ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৮ ঘণ্টা আগে