বিজন সাহা
অনেকেই ফোন করে বলেন, রাশিয়া এত সময় নিচ্ছে কেন? কেন আমেরিকার মতো কার্পেট বোম্বিং করে তাড়াতাড়ি যুদ্ধ শেষ করে না? আসলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করে নিজ দেশ থেকে অনেক দূরে। স্থানীয় লোকজন তাদের প্রতি কী মনোভাব পোষণ করল, না করল, তা নিয়ে তাদের তেমন মাথাব্যথা নেই। তাদের দরকার তেল বা ভৌগোলিক অবস্থান। রাশিয়া যুদ্ধ করছে প্রতিবেশী দেশে। মূল উদ্দেশ্য সেখানে যাতে অ্যান্টি-রাশিয়া তৈরি না হয়, ইউক্রেন যেন বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হয়। তাই তাকে সে দেশের জনগণের কথা ভাবতে হয়; আর সেখান থেকেই যুদ্ধের কৌশল।
এখানে আরেকটা কথা মনে রাখা দরকার। বর্তমান ইউক্রেন তো বটেই, অধুনালুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৫টি রিপাবলিকের সবকিছু, তা সে শিল্প হোক, কৃষি হোক, শিক্ষা ব্যবস্থা হোক—সবই গড়ে উঠেছিল সমস্ত জাতিগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। গত ৩০ বছরে অনেক কিছুই নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেটা হয়েছে হয় সোভিয়েত আমলের ভিত্তির ওপর, অথবা তাকে অস্বীকার করে। দ্বিতীয় অংশটা সত্য মূলত বাল্টিকের দেশগুলো ও ইউক্রেনের জন্য। ফলে সোভিয়েত আমলের তুলনায় তারা শিল্পে খুব একটা এগিয়ে যেতে পারেনি। কারণ, এসব দেশে উৎপন্ন দ্রব্য পশ্চিমা বিশ্ব নিতে আগ্রহী নয়। পশ্চিমা বিশ্বের প্রয়োজন এসব দেশের সস্তা কায়িক শ্রম, তাও তাদের নিজেদের দেশে। যেমন পূর্ব ইউরোপের জনগণ, তা সে পোলিশ হোক, বাল্টিক হোক বা অন্য কেউ অপেক্ষাকৃত কম বেতনে কাজ করে জার্মানি, ইংল্যান্ড বা ফ্রান্সে। আর তারা যে শূন্যতা তৈরি করে নিজ দেশে, সেটা তারা পূরণ করতে চায় ইউক্রেনের সস্তা শ্রমিকদের দিয়ে। তাই ইউক্রেন বা অন্য কোনো পূর্ব ইউরোপের দেশে শিল্প গড়ে তারা নিজেদের শ্রমিকদের প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি করতে আগ্রহী নয়। এটা নতুন কিছু নয়। সেই ব্রিটিশ আমলেও ইংরেজরা আমাদের তাঁত শিল্প ধ্বংস করেছিল নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে। সেদিক থেকে ইউরোপ এতটুকুও বদলায়নি। যা হোক, এসব কারণে ইউক্রেনের শিল্প বা জনগণের ওপর আঘাত রাশিয়ার ব্যাপক জনগণ নিজেদের অতীতের ওপরে আঘাত বলে মনে করে। এটাও কী রাজনৈতিক, কী সামরিক নেতৃত্বকে বাধ্য করে যুদ্ধ পরিচালনায় জনগণের এই আবেগ মাথায় রাখতে।
পশ্চিমা বিশ্বে অনেকেই বলার চেষ্টা করছে, যুদ্ধ কি বিশ্বযুদ্ধের রূপ নেবে? পোল্যান্ড চায় এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড বা জার্মানির পরিবর্তে নিজেকে ইউরোপের শেরিফ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। তাই যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত অন্য ফেজে চলে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাশিয়া তার ভান্ডারের সব অস্ত্রই ব্যবহার করতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সে ক্ষেত্রে ইউরোপের পাশে দাঁড়াবে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই যুদ্ধ ইউরোপের বাজার দখলের, আর তার অর্থনৈতিক শক্তি খর্ব করার। সেই সঙ্গে রাশিয়ারও। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে পারে। তাই ন্যাটোর বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক যুদ্ধে নামবে বলে মনে হয় না।
সিরিয়ায় বছর তিনেক আগে যখন তুরস্ক রুশ বিমান আক্রমণ করে ও দু দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর এই যুদ্ধে জড়ানোর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। অজুহাত ছিল—তুরস্ক নিজেই আক্রমণের হোতা। যদি রাশিয়া বাধ্য হয় ইউরোপে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগে তখন সেই ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো রকম আগ্রহ সৃষ্টি করবে বলে মনে হয় না। সেদিক থেকে ইউরোপীয়দের সতর্ক হতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র আর যাই হোক ইউরোপের স্বামী নয়, প্রেমিক। শুধু তাই নয়–বিবাহিত প্রেমিক। যুক্তরাষ্ট্র অন্য যেকোনো দেশে যায় পরকীয়া করতে। এর ফলাফল কী হয় সেটা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে।
দ্বন্দ্বের মূল কতটা রাজনীতি
রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের এই কনফ্রন্টেশন কি শুধুই বাজার নিয়ে? শুধুই অর্থনৈতিক? না। এর মূলে আছে মূল্যবোধ। যদিও সোভিয়েত আমলে এর পেছনে ছিল রাজনৈতিক বা সঠিকভাবে বললে অর্থনৈতিক আদর্শ—সামাজিক সম্পদ বণ্টন প্রশ্নে দ্বিমত, এখন এর মূলে আছে সামাজিক মূল্যবোধ। কী সেই মূল্যবোধ? যদিও সোভিয়েত আমলে এ দেশে ধর্ম চর্চা প্রায় বন্ধ ছিল এবং বিভিন্ন জরিপ থেকে জানা যায়, এ দেশের মাত্র ২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাসী। তারপরও অর্থোডক্স চার্চ তাদের মূল্যবোধে গভীর ছাপ রেখেছে। আরও তিন প্রধান ধর্ম ইসলাম, বৌদ্ধ ও ইহুদি ধর্ম। যদি মধ্যযুগে ইউরোপের খ্রিষ্টান ধর্ম বিভিন্ন সংস্কারের মধ্য দিয়ে যায়, রাশিয়ায় কিন্তু তেমনটা হয়নি। তা ছাড়া ইউরোপে যদি ভ্যাটিকানের পোপ হন সব ক্যাথলিক চার্চের প্রধান, পিটার দ্য গ্রেটের সময় থেকে জার ছিলেন রুশ চার্চের প্রধান। তা ছাড়া সে সময় চার্চ ধর্মীয় কাজকর্মের পাশাপাশি জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে—এসব ব্যাপারেও সরকারি দায়িত্ব পালন করত। ফলে রাশিয়ায় চার্চ রাষ্ট্র থেকে ভিন্ন হওয়ার পরও রাষ্ট্রীয় জীবনে অংশ নেয়, বা বলা চলে রাষ্ট্র এদের বিভিন্ন সামাজিক কাজে, বিশেষ করে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কাজে ব্যবহার করে। তাই পশ্চিমা বিশ্বে আজ যখন এলজিবিটি আন্দোলন সরকারি অনুমোদনে হয়, এরা তার বিরোধিতা করে। না, এদের বিরুদ্ধে কোনো রাষ্ট্রীয় তৎপরতা নেই, তবে এসবের প্রোপাগান্ডার সুযোগ নেই। বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এসব প্রোপাগান্ডা দণ্ডনীয়।
একইভাবে সম লিঙ্গের বিয়ের ব্যাপারে এদের আইনগত বাধা আছে। তাদের কথা—পরিবার এটা নারী ও পুরুষের সংঘ, যা বিয়ের মাধ্যমে হয়। দুই নারী বা দুই পুরুষের একত্রে থাকতে অসুবিধা নেই, কিন্তু তাদের ফর্মাল বিয়ে এরা রেজিস্ট্রি করে না। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, রাশিয়ার প্রচুর পরিবার ফর্মাল বিয়ে করে না। এটাকে তারা বলে সিভিল ম্যারেজ। যদি এ নিয়ে সম্পত্তিগত কোনো সমস্যা দেখা দেয়, সেটা তারা উইল করে মিটিয়ে ফেলতে পারে। এখানে মনে রাখা দরকার—রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ হলেও এর জনসংখ্যা মাত্র ১৪৫ মিলিয়ন। তাই এরা প্রতিটি সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য মাকে ভালো অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দেয়। অন্তত ডেমোগ্রাফির দিক থেকে দেখলেও এরা যে এ ধরনের লিবারিলিজমের বিরোধিতা করবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই যদি সোভিয়েত আমলে পশ্চিমের সঙ্গে এদের বিরোধ ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক, এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংস্কারও।
আগেই বলেছি, রাশিয়ার আধুনিক ইতিহাসের শুরু কিয়েভিয়ান রুশ থেকে। এর আগে এ দেশের ছোট ছোট রাজন্যবর্গের মধ্যে অনবরত যুদ্ধ লেগে থাকত। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই স্থানীয়রা রিউরিখের শরণাপন্ন হয়। তিনি ছিলেন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান। কিছুদিন আগেই নভগোরাদ দখল করে সেখানকার রাজা হন। শুরু হয় রুশ ইতিহাস। এখান থেকে আমরা যেটা পাই, তা হলো সেই জন্মলগ্ন থেকেই এ দেশের মানুষ শক্তিশালী নেতৃত্ব খুঁজেছে নিজেদের জন্য। পরবর্তীকালেও আমরা সেটাই দেখব। যখনই নেতৃত্ব দুর্বল হয়েছে, দেখা দিয়েছে অরাজকতা। আর সবল নেতার হাতে পড়ে রুশ দেশ নতুন করে নিজেকে বিকশিত করেছে। এ জন্যই তো ইভান গ্রজনি (আইভান দ্য টেরিবল), পিওতর ভেলিকি (পিটার দ্য গ্রেট), স্তালিনের (স্ট্যালিন) মতো নেতারা এ দেশে এখনো জনপ্রিয়। তার মানে এই নয় যে, দেশটির মানুষ স্বাধীনতাপ্রিয় নয়। একেবারেই উল্টো। আর তাই বলতে গেলে এরা সব সময়ই স্বাধীন ছিল।
আশির দশকের শেষের দিকে যখন অর্থনীতি তলানিতে, মানুষ ভেবেছিল যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাহায্য করবে। কিন্তু যে মুহূর্তে তারা দেখল যুক্তরাষ্ট্র আসলে তাদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চায়, দেশকে করতে চায় অনুগত ভৃত্য, এমনকি নব্বইয়ের দশকের সেই শত অনিশ্চয়তার মধ্যেও তারা এটাকে মেনে নেয়নি। আর সে কারণেই পুতিনের আগমনকে তারা স্বাগত জানিয়েছে। পুতিনের ক্ষমতায় এই দীর্ঘ অবস্থান তাই ভোট চুরি নয়, দেশটির মানুষের ঐতিহাসিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এ কথা যারা পুতিনের দীর্ঘ শাসন নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন, তাদের জন্য।
একটু ভেবে দেখতে পারেন নেহরু, মের্কেল—তাঁরা কত দিন ক্ষমতায় ছিলেন? বঙ্গবন্ধুও কিন্তু বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী দুইই ছিলেন। আসলে ১৯৯৩ সালে রাশিয়ার যে সংবিধান তৈরি হয়, তা করেছিল মার্কিনরা নিজেদের স্বার্থে, গৃহীত হয়েছিল পার্লামেন্ট ভবনে কামান দেগে। শেষ যে পরিবর্তন হয়েছে, তা হয়েছে গণভোটে। সবচেয়ে বড় কথা—কে কত দিন ক্ষমতায় থাকবে, না থাকবে সেটা তো সেই দেশের জনগণের ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রে তো অনেক সিনেটর যুগ যুগ ক্ষমতায় থাকেন। তাতে তো কোনো অসুবিধা হয় না? আমার ধারণা, সুযোগ থাকলে সেখানেও অনেকে দুই কেন, পাঁচ সাত টার্ম প্রেসিডেন্ট থাকতে গররাজি হতেন না। রুজভেল্ট চার টার্ম ছিলেন। আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন শিল্পপতিরা শক্তিশালী হয়ে ওঠেন, তাঁরাই আর চাইলেন না দীর্ঘমেয়াদি প্রেসিডেন্টকে। কারণ, সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন। তাঁকে তখন ম্যানিপুলেট করা কষ্ট। এটা অবশ্য আমার মত। বাস্তব হয়তো ভিন্ন। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনে যে, বড় পুঁজি বিরাট রোল প্লে করে, সে ব্যাপারে তো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়।
প্রায়ই অনেককে রুশ সৈন্যদের বর্বরতার কথা বলতে শুনি। তবে এসব নিয়ে আবেগি হওয়ার আগে সংখ্যাটা দেখে নেওয়া ভালো। জাতিসংঘের হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস যে তথ্য দিচ্ছে সেটা নিম্নরূপ—
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ভোর ৪টা থেকে ৩ এপ্রিল ২০২২ মধ্যরাত পর্যন্ত টোটাল বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা ৩ হাজার ৫২৭ জন, যার মধ্যে ১৪৩০ জন মৃত (২৯৭ পুরুষ, ২০২ নারী, ২২ বালিকা, ৪০ বালক, ৫৯ শিশু ও ৮১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক, যাদের লিঙ্গ এখনো জানা যায়নি)। আহত ২ হাজার ৯৭ জন, যার মধ্যে ২৪৮ পুরুষ, ১৮৯ নারী, ৪২ বালিকা, ৩৮ বালক, ৯৮ শিশু ও ১ হাজার ৪৮২ জন প্রাপ্তবয়স্ক, যাদের লিঙ্গ এখনো জানা যায়নি। এলাকাভিত্তিক হিসেবে দনেৎস্ক ও লুহানস্কে মোট হতাহত ১৫৩৮ (৪৭২ মৃত, ১০৪৬ আহত)। এর মধ্যে ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ৪০৫ নিহত ও ৭৯৩ আহত এবং মুক্ত এলাকায় ৬৭ নিহত ও ২৫৩ আহত। ইউক্রেনের অন্য এলাকায় নিহত ৯৫৮ ও আহত ১০৫১। এ হিসাবে ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে ৩ এপ্রিল মধ্যরাত—এই ৩৯ দিনে মোট নিহত ১৪৩০ জন। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৪০ জনেরও কম।
অনেক দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় এর চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। না, এর অর্থ এই নয় যে, আমি যুদ্ধে কোনো মৃত্যুর পক্ষে। কিন্তু যারা এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে বলে রাশিয়ার শ্রাদ্ধ করছে, তাদের বলব, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া—এসব দেশে ন্যাটোর বম্বিংয়ে কত লোক মারা গেছে, সেই সংখ্যার সঙ্গে এর একবার তুলনা করতে। তাহলেই বুঝবেন কেন এই যুদ্ধ এত দিন চলছে।
এখানে আরেকটা উদাহরণ দেওয়া যায়। কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা ছবি ভাইরাল হয়েছিল, যখন রুশ ট্যাংকের সামনে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছিল। আবার ফিরে আসি বাংলাদেশের যুদ্ধের কথায়। যুদ্ধের সময় আমরা বাড়িছাড়া হয়ে যেখানে থাকতাম, একবার সেখানে রাজাকার আসে। আমরা পালিয়ে যাই। মা সাঁতার কাটতে জানতেন না। তিনি বেতের জঙ্গলে কোনো রকমে নাক ভাসিয়ে ডুবে ছিলেন। টু শব্দ করেননি। কারণ জানতেন, শব্দ পেলেই গুলি চলবে। এ রকম ঘটনা তখন অনেকের সঙ্গেই ঘটেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে যারা পরিচিত, তারা এসব ভালোভাবেই জানে। আচ্ছা, বলুন তো কজন মানুষ বন্দুকের সামনে দাঁড়াবে যদি জানে যে, গুলি করবে? যে মানুষগুলো ইউক্রেনে প্রতিবাদ করেছিল, তাদের দেশপ্রেমকে খাটো করে করে দেখাচ্ছি না। তবে এটা বলতে চাই যে, এই লোকগুলো জানত যে, রুশ সৈন্যরা তাদের গুলি করবে না। এখন পর্যন্ত তারা সেটাই করে আসছে। এখানে মনে রাখা দরকার, ২০১৪ সালে বিজয় দিবসে ইউক্রেন সেনাবাহিনী যখন ট্যাংক নিয়ে দানেৎস্ক ঢোকে, তখন সেখানকার সাধারণ মানুষ এভাবেই দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিল, আর ওরা ট্যাংক দিয়ে অনেককে পিষে মেরেছিল।
যারা রুশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ইউক্রেনের শহর ও লোকালয় ধ্বংসের কথা বলছেন, তাদের বলি সাধারণত আগ্রাসী যুদ্ধবাজরা প্রথমে জল, বিদ্যুৎ—এসব সরবরাহ ধ্বংস করে। একইভাবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বারবার দনবাসের এসব কেন্দ্র আক্রমণ করছে। অন্যদিকে রুশ সৈন্যদের তত্ত্বাবধানে এসব মেরামত হচ্ছে। এমনকি প্রায় মাটির সাথে মিশে যাওয়া মারিউপোলেও জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ আছে। এটাই প্রমাণ করে পশ্চিমা সংবাদ কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য। স্মরণ করা যেতে পারে ইরাক আক্রমণের আগে কলিন পাওয়েলের মিথ্যা অভিযোগ এসব সংবাদমাধ্যমই জনগণের কাছে প্রচার করেছিল। তাই তাদের কাছে সত্য সেটাই, যেটা তাদের স্বার্থে কাজ করে।
যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী একটা দেশ যখন অন্য দেশ আক্রমণ করে, তাদের সৈন্য সংখ্যা হয় প্রতিপক্ষের তিনগুণ। কারণ, তারা বিদেশের মাটিতে যুদ্ধ করছে, আর স্থানীয় সেনারা দেশবাসীর কাছ থেকে সাহায্য পায়। যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনে সৈন্য সংখ্যা ছিল আড়াই লাখের মতো, আর রিজার্ভে আরও লাখ তিনেক। সেখানে রুশদের উচিত ছিল প্রায় সাত লাখ সৈন্য নামানো। কিন্তু তারা এসেছে মাত্র ১৮০ হাজার সৈন্য নিয়ে। যদিও প্রায় প্রতি দশ দিন অন্তর অন্তর চলেছে রোটেশন।
কেন রুশরা কিয়েভ দখল করেনি? কিয়েভে ইউক্রেনের সৈন্য ৭০ হাজার, যাদের মাত্র ৩৫ হাজার সেনা দিয়ে রুশরা আটকে দিয়েছে। দনবাসের মূল সেনাবাহিনীকে তারা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এদের রণকৌশল ছিল অভূতপূর্ব। নিজ দেশের মাটি, সংখ্যার আধিক্য—এসব থাকার পরও ইউক্রেন কিন্তু হেরে যাচ্ছে, হারছে পশ্চিমা বিশ্ব। কারণ, এরাই গত সাত বছর ধরে এই সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছে। এখনো ইউক্রেন পশ্চিমা প্রশিক্ষক দিয়ে ভরা। আরও আছে ভাড়াটে সৈন্য, যারা আসলে ন্যাটোর রেগুলার আর্মি—সাময়িকভাবে ছুটি নিয়ে এসেছে যুদ্ধ করতে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে ইউক্রেন সেনাবাহিনী যোদ্ধা হিসেবে ভালো, যেমনটা রুশ বাহিনী। এদের অনেকেরই আছে সোভিয়েত প্রশিক্ষণ।
আরেকটা কথা, রুশ সেনারা কিন্তু বন্দীদের ওপর অত্যাচার করছে না; তাদের চিকিৎসা পর্যন্ত করছে। এক কথায় জেনেভা কনভেনশন মেনে চলছে। সে কথা বলা যাবে না ইউক্রেনের ক্ষেত্রে। ওদের নিজেদের প্রচারিত ভিডিও থেকে দেখি, বন্দী রুশ সেনাদের পায়ে গুলি করছে তারা, অত্যাচার করে মেরে ফেলছে। সে দেশের উচ্চপর্যায়ের অনেকেই বলছে, বন্দীদের হত্যা করার জন্য। শুধু তাই নয় বিভিন্ন দেশে রুশদের হত্যা করার জন্য তারা কথা বলছে। কিন্তু এ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কোনো বিকার নেই। তাদের চোখে ভালো রুশ হচ্ছে মৃত রুশ। বন্দী দশায় এভাবে রুশ সেনা হত্যা কাউকে কি রাজাকারদের বাঙালি বন্দীদের হত্যার কথা একটুও মনে করিয়ে দেয় না?
যখন রাশিয়া বারবার কিয়েভের পেছন থেকে উগ্র জাতীয়তাবাদী, ফ্যাসিবাদী বান্দেরার অনুসারীদের শাসনের কথা বলে, অনেকেই বলার চেষ্টা করে জেলেনস্কি নিজে ইহুদি, সেখানে এটা হয় কীভাবে? আচ্ছা, বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কি বর্ণবাদ উঠে গিয়েছিল? যুক্তরাষ্ট্রে কি আফ্রো-আমেরিকানরা নিগ্রহের শিকার হয়নি? কে না জানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বান্দেরার রোল? কিয়েভ যখন সেই স্তেপান বান্দেরাকে হিরো ঘোষণা করে, তখন পোল্যান্ড পর্যন্ত এর বিরোধিতা করেছিল। ইসরায়েল এখনো করে। কারণ, বান্দেরা আর তাঁর অনুসারীরা ইহুদি-বিদ্বেষী। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ না জানলেও প্রশাসনের সেটা না জানার কথা নয়। বাইডেন প্রশাসনে সেক্রেটারি অব ট্রেজারি, স্টেট, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস, অ্যাটর্নি জেনারেল, ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স, সিআইএসহ অনেকেই ইহুদি বংশোদ্ভূত। তারপরও কিন্তু তারা বান্দেরার সমর্থকদের শুধু সাহায্যই করছে না, গড়েও তুলেছে। ইসলামের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কখনোই খুব একটা সদয় ছিল না। এটা কিন্তু তাদের তালেবান, আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট—এসব গড়তে বাধার সৃষ্টি করেনি। আসলে যুদ্ধে সব পদ্ধতিই ভালো।
লেখক: শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো
অনেকেই ফোন করে বলেন, রাশিয়া এত সময় নিচ্ছে কেন? কেন আমেরিকার মতো কার্পেট বোম্বিং করে তাড়াতাড়ি যুদ্ধ শেষ করে না? আসলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করে নিজ দেশ থেকে অনেক দূরে। স্থানীয় লোকজন তাদের প্রতি কী মনোভাব পোষণ করল, না করল, তা নিয়ে তাদের তেমন মাথাব্যথা নেই। তাদের দরকার তেল বা ভৌগোলিক অবস্থান। রাশিয়া যুদ্ধ করছে প্রতিবেশী দেশে। মূল উদ্দেশ্য সেখানে যাতে অ্যান্টি-রাশিয়া তৈরি না হয়, ইউক্রেন যেন বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হয়। তাই তাকে সে দেশের জনগণের কথা ভাবতে হয়; আর সেখান থেকেই যুদ্ধের কৌশল।
এখানে আরেকটা কথা মনে রাখা দরকার। বর্তমান ইউক্রেন তো বটেই, অধুনালুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৫টি রিপাবলিকের সবকিছু, তা সে শিল্প হোক, কৃষি হোক, শিক্ষা ব্যবস্থা হোক—সবই গড়ে উঠেছিল সমস্ত জাতিগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। গত ৩০ বছরে অনেক কিছুই নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেটা হয়েছে হয় সোভিয়েত আমলের ভিত্তির ওপর, অথবা তাকে অস্বীকার করে। দ্বিতীয় অংশটা সত্য মূলত বাল্টিকের দেশগুলো ও ইউক্রেনের জন্য। ফলে সোভিয়েত আমলের তুলনায় তারা শিল্পে খুব একটা এগিয়ে যেতে পারেনি। কারণ, এসব দেশে উৎপন্ন দ্রব্য পশ্চিমা বিশ্ব নিতে আগ্রহী নয়। পশ্চিমা বিশ্বের প্রয়োজন এসব দেশের সস্তা কায়িক শ্রম, তাও তাদের নিজেদের দেশে। যেমন পূর্ব ইউরোপের জনগণ, তা সে পোলিশ হোক, বাল্টিক হোক বা অন্য কেউ অপেক্ষাকৃত কম বেতনে কাজ করে জার্মানি, ইংল্যান্ড বা ফ্রান্সে। আর তারা যে শূন্যতা তৈরি করে নিজ দেশে, সেটা তারা পূরণ করতে চায় ইউক্রেনের সস্তা শ্রমিকদের দিয়ে। তাই ইউক্রেন বা অন্য কোনো পূর্ব ইউরোপের দেশে শিল্প গড়ে তারা নিজেদের শ্রমিকদের প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি করতে আগ্রহী নয়। এটা নতুন কিছু নয়। সেই ব্রিটিশ আমলেও ইংরেজরা আমাদের তাঁত শিল্প ধ্বংস করেছিল নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে। সেদিক থেকে ইউরোপ এতটুকুও বদলায়নি। যা হোক, এসব কারণে ইউক্রেনের শিল্প বা জনগণের ওপর আঘাত রাশিয়ার ব্যাপক জনগণ নিজেদের অতীতের ওপরে আঘাত বলে মনে করে। এটাও কী রাজনৈতিক, কী সামরিক নেতৃত্বকে বাধ্য করে যুদ্ধ পরিচালনায় জনগণের এই আবেগ মাথায় রাখতে।
পশ্চিমা বিশ্বে অনেকেই বলার চেষ্টা করছে, যুদ্ধ কি বিশ্বযুদ্ধের রূপ নেবে? পোল্যান্ড চায় এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড বা জার্মানির পরিবর্তে নিজেকে ইউরোপের শেরিফ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। তাই যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত অন্য ফেজে চলে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাশিয়া তার ভান্ডারের সব অস্ত্রই ব্যবহার করতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সে ক্ষেত্রে ইউরোপের পাশে দাঁড়াবে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই যুদ্ধ ইউরোপের বাজার দখলের, আর তার অর্থনৈতিক শক্তি খর্ব করার। সেই সঙ্গে রাশিয়ারও। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে পারে। তাই ন্যাটোর বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক যুদ্ধে নামবে বলে মনে হয় না।
সিরিয়ায় বছর তিনেক আগে যখন তুরস্ক রুশ বিমান আক্রমণ করে ও দু দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর এই যুদ্ধে জড়ানোর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। অজুহাত ছিল—তুরস্ক নিজেই আক্রমণের হোতা। যদি রাশিয়া বাধ্য হয় ইউরোপে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগে তখন সেই ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো রকম আগ্রহ সৃষ্টি করবে বলে মনে হয় না। সেদিক থেকে ইউরোপীয়দের সতর্ক হতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র আর যাই হোক ইউরোপের স্বামী নয়, প্রেমিক। শুধু তাই নয়–বিবাহিত প্রেমিক। যুক্তরাষ্ট্র অন্য যেকোনো দেশে যায় পরকীয়া করতে। এর ফলাফল কী হয় সেটা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে।
দ্বন্দ্বের মূল কতটা রাজনীতি
রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের এই কনফ্রন্টেশন কি শুধুই বাজার নিয়ে? শুধুই অর্থনৈতিক? না। এর মূলে আছে মূল্যবোধ। যদিও সোভিয়েত আমলে এর পেছনে ছিল রাজনৈতিক বা সঠিকভাবে বললে অর্থনৈতিক আদর্শ—সামাজিক সম্পদ বণ্টন প্রশ্নে দ্বিমত, এখন এর মূলে আছে সামাজিক মূল্যবোধ। কী সেই মূল্যবোধ? যদিও সোভিয়েত আমলে এ দেশে ধর্ম চর্চা প্রায় বন্ধ ছিল এবং বিভিন্ন জরিপ থেকে জানা যায়, এ দেশের মাত্র ২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাসী। তারপরও অর্থোডক্স চার্চ তাদের মূল্যবোধে গভীর ছাপ রেখেছে। আরও তিন প্রধান ধর্ম ইসলাম, বৌদ্ধ ও ইহুদি ধর্ম। যদি মধ্যযুগে ইউরোপের খ্রিষ্টান ধর্ম বিভিন্ন সংস্কারের মধ্য দিয়ে যায়, রাশিয়ায় কিন্তু তেমনটা হয়নি। তা ছাড়া ইউরোপে যদি ভ্যাটিকানের পোপ হন সব ক্যাথলিক চার্চের প্রধান, পিটার দ্য গ্রেটের সময় থেকে জার ছিলেন রুশ চার্চের প্রধান। তা ছাড়া সে সময় চার্চ ধর্মীয় কাজকর্মের পাশাপাশি জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে—এসব ব্যাপারেও সরকারি দায়িত্ব পালন করত। ফলে রাশিয়ায় চার্চ রাষ্ট্র থেকে ভিন্ন হওয়ার পরও রাষ্ট্রীয় জীবনে অংশ নেয়, বা বলা চলে রাষ্ট্র এদের বিভিন্ন সামাজিক কাজে, বিশেষ করে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কাজে ব্যবহার করে। তাই পশ্চিমা বিশ্বে আজ যখন এলজিবিটি আন্দোলন সরকারি অনুমোদনে হয়, এরা তার বিরোধিতা করে। না, এদের বিরুদ্ধে কোনো রাষ্ট্রীয় তৎপরতা নেই, তবে এসবের প্রোপাগান্ডার সুযোগ নেই। বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এসব প্রোপাগান্ডা দণ্ডনীয়।
একইভাবে সম লিঙ্গের বিয়ের ব্যাপারে এদের আইনগত বাধা আছে। তাদের কথা—পরিবার এটা নারী ও পুরুষের সংঘ, যা বিয়ের মাধ্যমে হয়। দুই নারী বা দুই পুরুষের একত্রে থাকতে অসুবিধা নেই, কিন্তু তাদের ফর্মাল বিয়ে এরা রেজিস্ট্রি করে না। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, রাশিয়ার প্রচুর পরিবার ফর্মাল বিয়ে করে না। এটাকে তারা বলে সিভিল ম্যারেজ। যদি এ নিয়ে সম্পত্তিগত কোনো সমস্যা দেখা দেয়, সেটা তারা উইল করে মিটিয়ে ফেলতে পারে। এখানে মনে রাখা দরকার—রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ হলেও এর জনসংখ্যা মাত্র ১৪৫ মিলিয়ন। তাই এরা প্রতিটি সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য মাকে ভালো অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দেয়। অন্তত ডেমোগ্রাফির দিক থেকে দেখলেও এরা যে এ ধরনের লিবারিলিজমের বিরোধিতা করবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই যদি সোভিয়েত আমলে পশ্চিমের সঙ্গে এদের বিরোধ ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক, এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংস্কারও।
আগেই বলেছি, রাশিয়ার আধুনিক ইতিহাসের শুরু কিয়েভিয়ান রুশ থেকে। এর আগে এ দেশের ছোট ছোট রাজন্যবর্গের মধ্যে অনবরত যুদ্ধ লেগে থাকত। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই স্থানীয়রা রিউরিখের শরণাপন্ন হয়। তিনি ছিলেন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান। কিছুদিন আগেই নভগোরাদ দখল করে সেখানকার রাজা হন। শুরু হয় রুশ ইতিহাস। এখান থেকে আমরা যেটা পাই, তা হলো সেই জন্মলগ্ন থেকেই এ দেশের মানুষ শক্তিশালী নেতৃত্ব খুঁজেছে নিজেদের জন্য। পরবর্তীকালেও আমরা সেটাই দেখব। যখনই নেতৃত্ব দুর্বল হয়েছে, দেখা দিয়েছে অরাজকতা। আর সবল নেতার হাতে পড়ে রুশ দেশ নতুন করে নিজেকে বিকশিত করেছে। এ জন্যই তো ইভান গ্রজনি (আইভান দ্য টেরিবল), পিওতর ভেলিকি (পিটার দ্য গ্রেট), স্তালিনের (স্ট্যালিন) মতো নেতারা এ দেশে এখনো জনপ্রিয়। তার মানে এই নয় যে, দেশটির মানুষ স্বাধীনতাপ্রিয় নয়। একেবারেই উল্টো। আর তাই বলতে গেলে এরা সব সময়ই স্বাধীন ছিল।
আশির দশকের শেষের দিকে যখন অর্থনীতি তলানিতে, মানুষ ভেবেছিল যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাহায্য করবে। কিন্তু যে মুহূর্তে তারা দেখল যুক্তরাষ্ট্র আসলে তাদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চায়, দেশকে করতে চায় অনুগত ভৃত্য, এমনকি নব্বইয়ের দশকের সেই শত অনিশ্চয়তার মধ্যেও তারা এটাকে মেনে নেয়নি। আর সে কারণেই পুতিনের আগমনকে তারা স্বাগত জানিয়েছে। পুতিনের ক্ষমতায় এই দীর্ঘ অবস্থান তাই ভোট চুরি নয়, দেশটির মানুষের ঐতিহাসিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এ কথা যারা পুতিনের দীর্ঘ শাসন নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন, তাদের জন্য।
একটু ভেবে দেখতে পারেন নেহরু, মের্কেল—তাঁরা কত দিন ক্ষমতায় ছিলেন? বঙ্গবন্ধুও কিন্তু বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী দুইই ছিলেন। আসলে ১৯৯৩ সালে রাশিয়ার যে সংবিধান তৈরি হয়, তা করেছিল মার্কিনরা নিজেদের স্বার্থে, গৃহীত হয়েছিল পার্লামেন্ট ভবনে কামান দেগে। শেষ যে পরিবর্তন হয়েছে, তা হয়েছে গণভোটে। সবচেয়ে বড় কথা—কে কত দিন ক্ষমতায় থাকবে, না থাকবে সেটা তো সেই দেশের জনগণের ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রে তো অনেক সিনেটর যুগ যুগ ক্ষমতায় থাকেন। তাতে তো কোনো অসুবিধা হয় না? আমার ধারণা, সুযোগ থাকলে সেখানেও অনেকে দুই কেন, পাঁচ সাত টার্ম প্রেসিডেন্ট থাকতে গররাজি হতেন না। রুজভেল্ট চার টার্ম ছিলেন। আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন শিল্পপতিরা শক্তিশালী হয়ে ওঠেন, তাঁরাই আর চাইলেন না দীর্ঘমেয়াদি প্রেসিডেন্টকে। কারণ, সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন। তাঁকে তখন ম্যানিপুলেট করা কষ্ট। এটা অবশ্য আমার মত। বাস্তব হয়তো ভিন্ন। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনে যে, বড় পুঁজি বিরাট রোল প্লে করে, সে ব্যাপারে তো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়।
প্রায়ই অনেককে রুশ সৈন্যদের বর্বরতার কথা বলতে শুনি। তবে এসব নিয়ে আবেগি হওয়ার আগে সংখ্যাটা দেখে নেওয়া ভালো। জাতিসংঘের হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস যে তথ্য দিচ্ছে সেটা নিম্নরূপ—
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ভোর ৪টা থেকে ৩ এপ্রিল ২০২২ মধ্যরাত পর্যন্ত টোটাল বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা ৩ হাজার ৫২৭ জন, যার মধ্যে ১৪৩০ জন মৃত (২৯৭ পুরুষ, ২০২ নারী, ২২ বালিকা, ৪০ বালক, ৫৯ শিশু ও ৮১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক, যাদের লিঙ্গ এখনো জানা যায়নি)। আহত ২ হাজার ৯৭ জন, যার মধ্যে ২৪৮ পুরুষ, ১৮৯ নারী, ৪২ বালিকা, ৩৮ বালক, ৯৮ শিশু ও ১ হাজার ৪৮২ জন প্রাপ্তবয়স্ক, যাদের লিঙ্গ এখনো জানা যায়নি। এলাকাভিত্তিক হিসেবে দনেৎস্ক ও লুহানস্কে মোট হতাহত ১৫৩৮ (৪৭২ মৃত, ১০৪৬ আহত)। এর মধ্যে ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ৪০৫ নিহত ও ৭৯৩ আহত এবং মুক্ত এলাকায় ৬৭ নিহত ও ২৫৩ আহত। ইউক্রেনের অন্য এলাকায় নিহত ৯৫৮ ও আহত ১০৫১। এ হিসাবে ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে ৩ এপ্রিল মধ্যরাত—এই ৩৯ দিনে মোট নিহত ১৪৩০ জন। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৪০ জনেরও কম।
অনেক দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় এর চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। না, এর অর্থ এই নয় যে, আমি যুদ্ধে কোনো মৃত্যুর পক্ষে। কিন্তু যারা এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে বলে রাশিয়ার শ্রাদ্ধ করছে, তাদের বলব, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া—এসব দেশে ন্যাটোর বম্বিংয়ে কত লোক মারা গেছে, সেই সংখ্যার সঙ্গে এর একবার তুলনা করতে। তাহলেই বুঝবেন কেন এই যুদ্ধ এত দিন চলছে।
এখানে আরেকটা উদাহরণ দেওয়া যায়। কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা ছবি ভাইরাল হয়েছিল, যখন রুশ ট্যাংকের সামনে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছিল। আবার ফিরে আসি বাংলাদেশের যুদ্ধের কথায়। যুদ্ধের সময় আমরা বাড়িছাড়া হয়ে যেখানে থাকতাম, একবার সেখানে রাজাকার আসে। আমরা পালিয়ে যাই। মা সাঁতার কাটতে জানতেন না। তিনি বেতের জঙ্গলে কোনো রকমে নাক ভাসিয়ে ডুবে ছিলেন। টু শব্দ করেননি। কারণ জানতেন, শব্দ পেলেই গুলি চলবে। এ রকম ঘটনা তখন অনেকের সঙ্গেই ঘটেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে যারা পরিচিত, তারা এসব ভালোভাবেই জানে। আচ্ছা, বলুন তো কজন মানুষ বন্দুকের সামনে দাঁড়াবে যদি জানে যে, গুলি করবে? যে মানুষগুলো ইউক্রেনে প্রতিবাদ করেছিল, তাদের দেশপ্রেমকে খাটো করে করে দেখাচ্ছি না। তবে এটা বলতে চাই যে, এই লোকগুলো জানত যে, রুশ সৈন্যরা তাদের গুলি করবে না। এখন পর্যন্ত তারা সেটাই করে আসছে। এখানে মনে রাখা দরকার, ২০১৪ সালে বিজয় দিবসে ইউক্রেন সেনাবাহিনী যখন ট্যাংক নিয়ে দানেৎস্ক ঢোকে, তখন সেখানকার সাধারণ মানুষ এভাবেই দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিল, আর ওরা ট্যাংক দিয়ে অনেককে পিষে মেরেছিল।
যারা রুশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ইউক্রেনের শহর ও লোকালয় ধ্বংসের কথা বলছেন, তাদের বলি সাধারণত আগ্রাসী যুদ্ধবাজরা প্রথমে জল, বিদ্যুৎ—এসব সরবরাহ ধ্বংস করে। একইভাবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বারবার দনবাসের এসব কেন্দ্র আক্রমণ করছে। অন্যদিকে রুশ সৈন্যদের তত্ত্বাবধানে এসব মেরামত হচ্ছে। এমনকি প্রায় মাটির সাথে মিশে যাওয়া মারিউপোলেও জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ আছে। এটাই প্রমাণ করে পশ্চিমা সংবাদ কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য। স্মরণ করা যেতে পারে ইরাক আক্রমণের আগে কলিন পাওয়েলের মিথ্যা অভিযোগ এসব সংবাদমাধ্যমই জনগণের কাছে প্রচার করেছিল। তাই তাদের কাছে সত্য সেটাই, যেটা তাদের স্বার্থে কাজ করে।
যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী একটা দেশ যখন অন্য দেশ আক্রমণ করে, তাদের সৈন্য সংখ্যা হয় প্রতিপক্ষের তিনগুণ। কারণ, তারা বিদেশের মাটিতে যুদ্ধ করছে, আর স্থানীয় সেনারা দেশবাসীর কাছ থেকে সাহায্য পায়। যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনে সৈন্য সংখ্যা ছিল আড়াই লাখের মতো, আর রিজার্ভে আরও লাখ তিনেক। সেখানে রুশদের উচিত ছিল প্রায় সাত লাখ সৈন্য নামানো। কিন্তু তারা এসেছে মাত্র ১৮০ হাজার সৈন্য নিয়ে। যদিও প্রায় প্রতি দশ দিন অন্তর অন্তর চলেছে রোটেশন।
কেন রুশরা কিয়েভ দখল করেনি? কিয়েভে ইউক্রেনের সৈন্য ৭০ হাজার, যাদের মাত্র ৩৫ হাজার সেনা দিয়ে রুশরা আটকে দিয়েছে। দনবাসের মূল সেনাবাহিনীকে তারা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এদের রণকৌশল ছিল অভূতপূর্ব। নিজ দেশের মাটি, সংখ্যার আধিক্য—এসব থাকার পরও ইউক্রেন কিন্তু হেরে যাচ্ছে, হারছে পশ্চিমা বিশ্ব। কারণ, এরাই গত সাত বছর ধরে এই সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছে। এখনো ইউক্রেন পশ্চিমা প্রশিক্ষক দিয়ে ভরা। আরও আছে ভাড়াটে সৈন্য, যারা আসলে ন্যাটোর রেগুলার আর্মি—সাময়িকভাবে ছুটি নিয়ে এসেছে যুদ্ধ করতে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে ইউক্রেন সেনাবাহিনী যোদ্ধা হিসেবে ভালো, যেমনটা রুশ বাহিনী। এদের অনেকেরই আছে সোভিয়েত প্রশিক্ষণ।
আরেকটা কথা, রুশ সেনারা কিন্তু বন্দীদের ওপর অত্যাচার করছে না; তাদের চিকিৎসা পর্যন্ত করছে। এক কথায় জেনেভা কনভেনশন মেনে চলছে। সে কথা বলা যাবে না ইউক্রেনের ক্ষেত্রে। ওদের নিজেদের প্রচারিত ভিডিও থেকে দেখি, বন্দী রুশ সেনাদের পায়ে গুলি করছে তারা, অত্যাচার করে মেরে ফেলছে। সে দেশের উচ্চপর্যায়ের অনেকেই বলছে, বন্দীদের হত্যা করার জন্য। শুধু তাই নয় বিভিন্ন দেশে রুশদের হত্যা করার জন্য তারা কথা বলছে। কিন্তু এ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কোনো বিকার নেই। তাদের চোখে ভালো রুশ হচ্ছে মৃত রুশ। বন্দী দশায় এভাবে রুশ সেনা হত্যা কাউকে কি রাজাকারদের বাঙালি বন্দীদের হত্যার কথা একটুও মনে করিয়ে দেয় না?
যখন রাশিয়া বারবার কিয়েভের পেছন থেকে উগ্র জাতীয়তাবাদী, ফ্যাসিবাদী বান্দেরার অনুসারীদের শাসনের কথা বলে, অনেকেই বলার চেষ্টা করে জেলেনস্কি নিজে ইহুদি, সেখানে এটা হয় কীভাবে? আচ্ছা, বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কি বর্ণবাদ উঠে গিয়েছিল? যুক্তরাষ্ট্রে কি আফ্রো-আমেরিকানরা নিগ্রহের শিকার হয়নি? কে না জানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বান্দেরার রোল? কিয়েভ যখন সেই স্তেপান বান্দেরাকে হিরো ঘোষণা করে, তখন পোল্যান্ড পর্যন্ত এর বিরোধিতা করেছিল। ইসরায়েল এখনো করে। কারণ, বান্দেরা আর তাঁর অনুসারীরা ইহুদি-বিদ্বেষী। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ না জানলেও প্রশাসনের সেটা না জানার কথা নয়। বাইডেন প্রশাসনে সেক্রেটারি অব ট্রেজারি, স্টেট, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস, অ্যাটর্নি জেনারেল, ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স, সিআইএসহ অনেকেই ইহুদি বংশোদ্ভূত। তারপরও কিন্তু তারা বান্দেরার সমর্থকদের শুধু সাহায্যই করছে না, গড়েও তুলেছে। ইসলামের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কখনোই খুব একটা সদয় ছিল না। এটা কিন্তু তাদের তালেবান, আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট—এসব গড়তে বাধার সৃষ্টি করেনি। আসলে যুদ্ধে সব পদ্ধতিই ভালো।
লেখক: শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
১ দিন আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
১ দিন আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
১ দিন আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
১ দিন আগে