ড. শামসুল আলম
দেশের শাসনিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের ঘোর দুর্দিনে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কান্ডারি হয়ে ৩১ মে, ১৯৮১ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ একদিনে দেশে পা রেখেছিলেন। লাখ লাখ দেশপ্রেমিক জনতা ঝড়ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে, বৃষ্টিস্নাত হয়ে রাজপথ প্রকম্পিত করে সেদিন তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। অনিশ্চয়তা, ঝুঁকি ও চরম বিপৎসংকুল হয়েই তাঁর নতুন জীবন শুরু হয়েছিল ১৫ আগস্ট চরম বিয়োগান্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে। সেই থেকে ব্যক্তিগতভাবে তিনি জীবনের চরম ঝুঁকি, মৃত্যুশঙ্কা নিয়ে পিতার মতোই মাঠে-প্রান্তরে জনজীবনে মিশে গিয়ে প্রতিকূল এক সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার চেতনায় তিনিই ছিলেন পুরোধা আলোকবর্তিকা। অনিঃশেষ প্রেরণার উৎস।
দেড় দশকের সংগ্রাম শেষে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে পেরেছিলেন এবং সেই সময়ে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পেরেছিলেন। প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করেছেন। মূল্যস্ফীতির হার সর্বনিম্নে রাখতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে সাংবিধানিক বাধা দূর করতে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ব্যক্তি খাতে টিভি চ্যানেল চালু করেছিলেন। মোবাইল ফোন-সেবায় একক কর্তৃত্ব রহিত করে এর ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পেরেছিলেন।
দীর্ঘস্থায়ী বন্যার সফল মোকাবিলা করেছিলেন। কৃষি যন্ত্রপাতি ও আধুনিক উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ খাদ্যশস্য উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন। বৃদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা চালু করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি জোরদার করেছিলেন। ধর্মোন্মাদনাসহ পাক-জিন্দাবাদ সংস্কৃতির বিকাশ রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এত সব সাফল্যে, চেতনায় পাকিস্তানি সংস্কৃতির ধারক ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ভীতচকিত হয়ে ওঠে এবং আওয়ামী লীগকে যেকোনো উপায়ে ক্ষমতার বাইরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সামরিক ও অসামরিক প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী চক্রান্তে লিপ্ত হয়, যা প্রসারিত হয়েছিল তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পর্যন্ত। অথচ তৎকালীন সাংবিধানিক ধারার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শেখ হাসিনার সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কোনো জটিলতা সৃষ্টির প্রয়াস নেয়নি। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের মাঠে কোণঠাসা করে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং ধ্বংসাত্মক প্রতিহিংসামূলক কার্যক্রম শুরু হয়।
স্বাধীনতাকালের পরাজিত ঘৃণ্য শক্তি ক্ষমতার অংশীদার হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক নজির স্থাপন করে। স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী তৎকালীন সরকার সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে (দেখুন সংবিধানের ১৫ ক-গ ধারা), পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পথ পরিহার করে বিশ্বব্যাংক প্রণোদিত দারিদ্র্যবিমোচন কৌশলপত্র (পরিকল্পনা নয়) গ্রহণ করে। ক্রমধারায় দুটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন পরিহার করে এক দশক পরিকল্পনাবিহীন থাকে দেশ। ২০০১-এর অক্টোবরের পর থেকে রাজনৈতিক নির্যাতন, হত্যা, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণ, ঘরবাড়ি দখল, ধর্ষণ, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, ক্ষমতাসীন জোটের আশকারায় সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের উত্থান, বিশিষ্ট রাজনীতিক নিপাট ভদ্রলোক শামসুল কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ খ্যাতিমান সাংবাদিকদের হত্যা, একুশে আগস্টের ঘৃণ্য হামলার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সরকারের একাংশের প্রশ্রয়ে প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসে ব্যবহার-নিমিত্ত অস্ত্র আমদানির চালান ধরা পড়ার মতো সন্ত্রাসবাদী মুখোশ উন্মোচন হওয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা হস্তগত করে ক্ষমতা ধরে রাখার মতো সীমাহীন ন্যক্কারজনক প্রচেষ্টায় সেই সময়ে রক্তপাত ঘটানো ছিল দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের আরেক অন্ধকারময় সময়।
সেই সব দুঃসহ দিন কাটিয়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ে ৬ জানুয়ারি ২০০৯ দ্বিতীয়বারের মতো জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নির্বাচনের ইশতেহারে দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘রূপকল্প দলিল’ (Vision document) ‘রূপকল্প ২০২১’ উপস্থাপন করেন।
যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জন্মজয়ন্তী উৎসবের আগেই মধ্যম আয়ের দেশ হবে, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, প্রবৃদ্ধির হার ২০১৫ সালের মধ্যে ৭ শতাংশের ওপরে অর্জিত হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার শতভাগে উন্নীত হবে। বাংলাদেশের জন্মজয়ন্তী বছরের মধ্যেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ যাবে। রূপকল্প ২০২১ ঘোষণার মধ্য দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশ নতুন মাত্রা যুক্ত করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রূপকল্পের ভিত্তিতে তৈরি হয় বাংলাদেশের প্রথম পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১। এই পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, যেগুলো ছিল অতীতের পরিকল্পনাগুলো থেকে ভিন্নতর। অতীতেরগুলো ছিল মোটাদাগে বিনিয়োগ পরিকল্পনা। সুনির্দিষ্ট অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রা ধারণ করে কৌশলগত পরিকল্পনা হিসেবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলো নয়া জাতীয় পরিকল্পনার এক নবযুগ সৃষ্টি করে। অবিস্মরণীয় উল্লম্ফন ঘটে প্রবৃদ্ধির হারে ও আর্থসামাজিক প্রায় সব সূচকের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে সরকারি বিনিয়োগের প্রস্তাব ছিল মোট বিনিয়োগের ৮৭ শতাংশ আর বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ১৩ শতাংশ। অর্থনীতি বিকাশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের ভূমিকাই ছিল একচ্ছত্র। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭৭ শতাংশ আর সরকারি বিনিয়োগ ২৩ শতাংশ। সে কারণেই বাংলাদেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিনিয়োগ-পরিকল্পনা থেকে সরে আসে ‘কৌশলগত ও গতিশীল পরিকল্পনায়’। সরকার দায়িত্ব নেয় অর্থনৈতিক ও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অবকাঠামো গড়ে তোলার।
পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এ এক উল্লম্ফন (Pradigmshift)। ২০০২-১০ সময়ে বাংলাদেশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ছেড়ে দিয়েছিল, যা ছিল সংবিধান পরিপন্থী (সংবিধান অনুচ্ছেদ ১৫ গ)।
বাংলাদেশ তখন বিশ্বব্যাংকের প্ররোচনায় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র নিয়ে মজে ছিল। যেখানে অভীষ্ট হিসেবে প্রবৃদ্ধির হার পর্যন্ত চিহ্নিত ছিল না। সেটা ছিল ‘কৌশলপত্র’, কোনো পরিকল্পনা নয়। দূরদৃষ্টিতে লক্ষ্য-অভীষ্ট নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এগোলেন, রচিত হলো নয়া জাতীয় পরিকল্পনা একের পর এক। যেগুলোতে প্রাধান্য দেওয়া হলো প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ। মানবসম্পদ সৃষ্টির ওপর জোর দেওয়া হলো। সড়ক-জনপথ সৃষ্টির ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হলো, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার যে ঘোষণা ছিল, তা-ও বাস্তবায়িত হলো। গ্রামবাংলার প্রায় প্রতিটি গ্রাম সংযুক্ত হলো সড়ক যোগাযোগে। গড়ে উঠল অসংখ্য প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র শহরের যাবতীয় পণ্য সামগ্রী নিয়ে। সেবা পেতে শহর-গ্রাম ব্যবধান প্রায় একাকার হলো। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় জেন্ডার সমতায় বাংলাদেশ এগিয়ে গেল দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে বিস্মিত করে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকল দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে পেছনে ফেলে। এ সবই ঘটল লক্ষ্য-অভীষ্ট নিয়ে, সুন্দর পরিকল্পনা নিয়ে সমন্বিত বাজেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে প্রণয়ন করল দ্বিতীয় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১), রূপকল্প ২০৪১ ধারণ করে। রচিত হলো বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক পথচিত্র। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তৈরি হলো শতবর্ষী বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০। বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর চোখে এখন এক অদম্য বাংলাদেশ। তারই স্বীকৃতি রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায়। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজের গুরুদায়িত্ব সফলভাবেই সম্পন্ন করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ পাকিস্তানের উপনিবেশ ছিল ২৪ বছর। শোষণ-নির্যাতন জর্জরিত ছিল বাঙালি জাতি। টরন্টোভিত্তিক আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইটস অ্যান্ড সিকিউরিটি (আইএফআরএসএস) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, স্বাধীনতাকালে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি ধনী ছিল। আর এখন বাঙালিরা তাদের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ হ্যাজ গন ফ্রম বিইং হোয়াট হেনরি কিসিঞ্জার কল্ড এ “বাস্কেট কেস’’ টু এ কেস স্টাডি ইন র্যাপিড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট।’ আন্তর্জাতিক ডিপ্লোমেট ম্যাগাজিন লিখেছে, ‘২০১০–২০২০ গোল্ডেন ডিকেড অব ডেভেলপমেন্ট।’ এই ২০১০-২০ সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১২-এর অধিক আন্তর্জাতিক পদকে ভূষিত হয়েছেন; যেগুলো হলো–ইউএর এমডিজি অ্যাওয়ার্ড ২০১০, সাউথ সাউথ গ্লোবাল হেলথ অ্যাওয়ার্ড ২০১১, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ফর পোভার্টি রিডাকশন ২০১৩, এফএও ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড ২০১৩, আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ২০১৫, ইউএন এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ ২০১৫, প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন ২০১৬, গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড অ্যান্ড স্পেশাল ডিকটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ ২০১৮, ভ্যাকসিন হিরো ২০১৯ (জিএভিআই), চ্যাম্পিয়ন ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট ২০১৯, ইউএন পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২০। সর্বশেষ ২০২১-এ পেলেন এসডিজি সলিউশনস নেটওয়ার্ক কর্তৃক এসডিজি বাস্তবায়নে সাফল্যের সনদ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গত এক যুগের স্বর্ণালি শাসনকালেই দক্ষিণ এশিয়ায় নবউত্থান ঘটেছে বাংলাদেশের। ২০২১-এ আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে মার্কিন ডলারে ২ হাজার ২৩৮, ভারতের ২ হাজার ১৯১ এবং পাকিস্তানের ১ হাজার ৫৩০। বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী প্রকাশিত গড় আয়ুষ্কাল বাংলাদেশ ৭৩, ভারত ৭০ ও পাকিস্তানের ৬৭ বছর। বয়স্ক শিক্ষার হার (২০১৯) বাংলাদেশ ৭৫, ভারত ৭৪, পাকিস্তানে ৫৯ শতাংশ। গৃহে বিদ্যুৎ-সংযোগের হার বাংলাদেশ ৯৯, ভারত ৯৫.২ ও পাকিস্তানে ৭১.১ শতাংশ। প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যুর হার (২০১৯) বাংলাদেশ ২৬, ভারত ২৮ ও পাকিস্তানে ৫৬ জন। প্রতি নারীর সন্তান জন্মহার বাংলাদেশ ২, ভারত ২.২ ও পাকিস্তানে ৩.৫। আর্থসামাজিক প্রায় প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে। গত এক যুগের এই স্বর্ণসফলতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাহসী, দৃঢ়চিত্ত, বুদ্ধিমত্তা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের ফলেই অর্জিত হয়েছে। দেশের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরির ঘোষণা তাঁকে করেছে দুর্জয় বাঙালির অজেয়, অনমনীয় সাহসিকতার প্রতীক। যে অবিরাম গতিতে বাংলাদেশের এক যুগের অগ্রযাত্রা, সমুদ্রবিজয়সহ আঞ্চলিক ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি এবং বিশ্বপরিমণ্ডলে ডজনের অধিক অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তি, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে তাঁকে আজ দেশের এক মহান স্টেটসম্যান ও বিশ্বনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই তো তিনি ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্বরাজনীতি, অর্থনীতি ও চিন্তার ম্যাগাজিন ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে ‘বিশ্বের সেরা ১০০ চিন্তাবিদ’-এর তালিকায় প্রথম সারির দিকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ২০১৯ সালে এই ম্যাগাজিনের করা বিশ্বচিন্তাবিদের দশম সংস্করণের ‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা’ শ্রেণিতে এক দশকের অন্যতম সেরা চিন্তাবিদের তালিকায় তিনি স্থান করে নিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি কয়েক বছর ধরে বিশ্বের নামকরা বিজনেস ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’-এর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর (পাওয়ারফুল উইমেন) তালিকায় সম্মুখসারিতে থাকেন। বাঙালি জাতির সৌভাগ্য, বঙ্গবন্ধুর সার্থক উত্তরসূরি বাংলাদেশ পেয়েছে। যেমন বঙ্গবন্ধু, তেমনি শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের জন্য মহান স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ।
বিশ্বনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিনে আমার অন্তর্ময় অনিঃশেষ শুভকামনা। কায়মনে প্রার্থনা, সুস্বাস্থ্য নিয়ে তিনি দীর্ঘজীবী হোন। জয়তু শেখ হাসিনা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক: প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
দেশের শাসনিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের ঘোর দুর্দিনে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কান্ডারি হয়ে ৩১ মে, ১৯৮১ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ একদিনে দেশে পা রেখেছিলেন। লাখ লাখ দেশপ্রেমিক জনতা ঝড়ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে, বৃষ্টিস্নাত হয়ে রাজপথ প্রকম্পিত করে সেদিন তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। অনিশ্চয়তা, ঝুঁকি ও চরম বিপৎসংকুল হয়েই তাঁর নতুন জীবন শুরু হয়েছিল ১৫ আগস্ট চরম বিয়োগান্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে। সেই থেকে ব্যক্তিগতভাবে তিনি জীবনের চরম ঝুঁকি, মৃত্যুশঙ্কা নিয়ে পিতার মতোই মাঠে-প্রান্তরে জনজীবনে মিশে গিয়ে প্রতিকূল এক সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার চেতনায় তিনিই ছিলেন পুরোধা আলোকবর্তিকা। অনিঃশেষ প্রেরণার উৎস।
দেড় দশকের সংগ্রাম শেষে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে পেরেছিলেন এবং সেই সময়ে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পেরেছিলেন। প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করেছেন। মূল্যস্ফীতির হার সর্বনিম্নে রাখতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে সাংবিধানিক বাধা দূর করতে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ব্যক্তি খাতে টিভি চ্যানেল চালু করেছিলেন। মোবাইল ফোন-সেবায় একক কর্তৃত্ব রহিত করে এর ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পেরেছিলেন।
দীর্ঘস্থায়ী বন্যার সফল মোকাবিলা করেছিলেন। কৃষি যন্ত্রপাতি ও আধুনিক উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ খাদ্যশস্য উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন। বৃদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা চালু করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি জোরদার করেছিলেন। ধর্মোন্মাদনাসহ পাক-জিন্দাবাদ সংস্কৃতির বিকাশ রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এত সব সাফল্যে, চেতনায় পাকিস্তানি সংস্কৃতির ধারক ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ভীতচকিত হয়ে ওঠে এবং আওয়ামী লীগকে যেকোনো উপায়ে ক্ষমতার বাইরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সামরিক ও অসামরিক প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী চক্রান্তে লিপ্ত হয়, যা প্রসারিত হয়েছিল তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পর্যন্ত। অথচ তৎকালীন সাংবিধানিক ধারার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শেখ হাসিনার সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কোনো জটিলতা সৃষ্টির প্রয়াস নেয়নি। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের মাঠে কোণঠাসা করে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং ধ্বংসাত্মক প্রতিহিংসামূলক কার্যক্রম শুরু হয়।
স্বাধীনতাকালের পরাজিত ঘৃণ্য শক্তি ক্ষমতার অংশীদার হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক নজির স্থাপন করে। স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী তৎকালীন সরকার সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে (দেখুন সংবিধানের ১৫ ক-গ ধারা), পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পথ পরিহার করে বিশ্বব্যাংক প্রণোদিত দারিদ্র্যবিমোচন কৌশলপত্র (পরিকল্পনা নয়) গ্রহণ করে। ক্রমধারায় দুটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন পরিহার করে এক দশক পরিকল্পনাবিহীন থাকে দেশ। ২০০১-এর অক্টোবরের পর থেকে রাজনৈতিক নির্যাতন, হত্যা, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণ, ঘরবাড়ি দখল, ধর্ষণ, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, ক্ষমতাসীন জোটের আশকারায় সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের উত্থান, বিশিষ্ট রাজনীতিক নিপাট ভদ্রলোক শামসুল কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ খ্যাতিমান সাংবাদিকদের হত্যা, একুশে আগস্টের ঘৃণ্য হামলার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সরকারের একাংশের প্রশ্রয়ে প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসে ব্যবহার-নিমিত্ত অস্ত্র আমদানির চালান ধরা পড়ার মতো সন্ত্রাসবাদী মুখোশ উন্মোচন হওয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা হস্তগত করে ক্ষমতা ধরে রাখার মতো সীমাহীন ন্যক্কারজনক প্রচেষ্টায় সেই সময়ে রক্তপাত ঘটানো ছিল দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের আরেক অন্ধকারময় সময়।
সেই সব দুঃসহ দিন কাটিয়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ে ৬ জানুয়ারি ২০০৯ দ্বিতীয়বারের মতো জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নির্বাচনের ইশতেহারে দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘রূপকল্প দলিল’ (Vision document) ‘রূপকল্প ২০২১’ উপস্থাপন করেন।
যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জন্মজয়ন্তী উৎসবের আগেই মধ্যম আয়ের দেশ হবে, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, প্রবৃদ্ধির হার ২০১৫ সালের মধ্যে ৭ শতাংশের ওপরে অর্জিত হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার শতভাগে উন্নীত হবে। বাংলাদেশের জন্মজয়ন্তী বছরের মধ্যেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ যাবে। রূপকল্প ২০২১ ঘোষণার মধ্য দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশ নতুন মাত্রা যুক্ত করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রূপকল্পের ভিত্তিতে তৈরি হয় বাংলাদেশের প্রথম পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১। এই পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, যেগুলো ছিল অতীতের পরিকল্পনাগুলো থেকে ভিন্নতর। অতীতেরগুলো ছিল মোটাদাগে বিনিয়োগ পরিকল্পনা। সুনির্দিষ্ট অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রা ধারণ করে কৌশলগত পরিকল্পনা হিসেবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলো নয়া জাতীয় পরিকল্পনার এক নবযুগ সৃষ্টি করে। অবিস্মরণীয় উল্লম্ফন ঘটে প্রবৃদ্ধির হারে ও আর্থসামাজিক প্রায় সব সূচকের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে সরকারি বিনিয়োগের প্রস্তাব ছিল মোট বিনিয়োগের ৮৭ শতাংশ আর বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ১৩ শতাংশ। অর্থনীতি বিকাশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের ভূমিকাই ছিল একচ্ছত্র। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭৭ শতাংশ আর সরকারি বিনিয়োগ ২৩ শতাংশ। সে কারণেই বাংলাদেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিনিয়োগ-পরিকল্পনা থেকে সরে আসে ‘কৌশলগত ও গতিশীল পরিকল্পনায়’। সরকার দায়িত্ব নেয় অর্থনৈতিক ও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অবকাঠামো গড়ে তোলার।
পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এ এক উল্লম্ফন (Pradigmshift)। ২০০২-১০ সময়ে বাংলাদেশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ছেড়ে দিয়েছিল, যা ছিল সংবিধান পরিপন্থী (সংবিধান অনুচ্ছেদ ১৫ গ)।
বাংলাদেশ তখন বিশ্বব্যাংকের প্ররোচনায় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র নিয়ে মজে ছিল। যেখানে অভীষ্ট হিসেবে প্রবৃদ্ধির হার পর্যন্ত চিহ্নিত ছিল না। সেটা ছিল ‘কৌশলপত্র’, কোনো পরিকল্পনা নয়। দূরদৃষ্টিতে লক্ষ্য-অভীষ্ট নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এগোলেন, রচিত হলো নয়া জাতীয় পরিকল্পনা একের পর এক। যেগুলোতে প্রাধান্য দেওয়া হলো প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ। মানবসম্পদ সৃষ্টির ওপর জোর দেওয়া হলো। সড়ক-জনপথ সৃষ্টির ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হলো, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার যে ঘোষণা ছিল, তা-ও বাস্তবায়িত হলো। গ্রামবাংলার প্রায় প্রতিটি গ্রাম সংযুক্ত হলো সড়ক যোগাযোগে। গড়ে উঠল অসংখ্য প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র শহরের যাবতীয় পণ্য সামগ্রী নিয়ে। সেবা পেতে শহর-গ্রাম ব্যবধান প্রায় একাকার হলো। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় জেন্ডার সমতায় বাংলাদেশ এগিয়ে গেল দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে বিস্মিত করে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকল দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে পেছনে ফেলে। এ সবই ঘটল লক্ষ্য-অভীষ্ট নিয়ে, সুন্দর পরিকল্পনা নিয়ে সমন্বিত বাজেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে প্রণয়ন করল দ্বিতীয় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১), রূপকল্প ২০৪১ ধারণ করে। রচিত হলো বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক পথচিত্র। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তৈরি হলো শতবর্ষী বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০। বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর চোখে এখন এক অদম্য বাংলাদেশ। তারই স্বীকৃতি রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায়। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজের গুরুদায়িত্ব সফলভাবেই সম্পন্ন করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ পাকিস্তানের উপনিবেশ ছিল ২৪ বছর। শোষণ-নির্যাতন জর্জরিত ছিল বাঙালি জাতি। টরন্টোভিত্তিক আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইটস অ্যান্ড সিকিউরিটি (আইএফআরএসএস) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, স্বাধীনতাকালে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি ধনী ছিল। আর এখন বাঙালিরা তাদের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ হ্যাজ গন ফ্রম বিইং হোয়াট হেনরি কিসিঞ্জার কল্ড এ “বাস্কেট কেস’’ টু এ কেস স্টাডি ইন র্যাপিড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট।’ আন্তর্জাতিক ডিপ্লোমেট ম্যাগাজিন লিখেছে, ‘২০১০–২০২০ গোল্ডেন ডিকেড অব ডেভেলপমেন্ট।’ এই ২০১০-২০ সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১২-এর অধিক আন্তর্জাতিক পদকে ভূষিত হয়েছেন; যেগুলো হলো–ইউএর এমডিজি অ্যাওয়ার্ড ২০১০, সাউথ সাউথ গ্লোবাল হেলথ অ্যাওয়ার্ড ২০১১, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ফর পোভার্টি রিডাকশন ২০১৩, এফএও ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড ২০১৩, আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ২০১৫, ইউএন এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ ২০১৫, প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন ২০১৬, গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড অ্যান্ড স্পেশাল ডিকটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ ২০১৮, ভ্যাকসিন হিরো ২০১৯ (জিএভিআই), চ্যাম্পিয়ন ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট ২০১৯, ইউএন পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২০। সর্বশেষ ২০২১-এ পেলেন এসডিজি সলিউশনস নেটওয়ার্ক কর্তৃক এসডিজি বাস্তবায়নে সাফল্যের সনদ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গত এক যুগের স্বর্ণালি শাসনকালেই দক্ষিণ এশিয়ায় নবউত্থান ঘটেছে বাংলাদেশের। ২০২১-এ আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে মার্কিন ডলারে ২ হাজার ২৩৮, ভারতের ২ হাজার ১৯১ এবং পাকিস্তানের ১ হাজার ৫৩০। বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী প্রকাশিত গড় আয়ুষ্কাল বাংলাদেশ ৭৩, ভারত ৭০ ও পাকিস্তানের ৬৭ বছর। বয়স্ক শিক্ষার হার (২০১৯) বাংলাদেশ ৭৫, ভারত ৭৪, পাকিস্তানে ৫৯ শতাংশ। গৃহে বিদ্যুৎ-সংযোগের হার বাংলাদেশ ৯৯, ভারত ৯৫.২ ও পাকিস্তানে ৭১.১ শতাংশ। প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যুর হার (২০১৯) বাংলাদেশ ২৬, ভারত ২৮ ও পাকিস্তানে ৫৬ জন। প্রতি নারীর সন্তান জন্মহার বাংলাদেশ ২, ভারত ২.২ ও পাকিস্তানে ৩.৫। আর্থসামাজিক প্রায় প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে। গত এক যুগের এই স্বর্ণসফলতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাহসী, দৃঢ়চিত্ত, বুদ্ধিমত্তা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের ফলেই অর্জিত হয়েছে। দেশের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরির ঘোষণা তাঁকে করেছে দুর্জয় বাঙালির অজেয়, অনমনীয় সাহসিকতার প্রতীক। যে অবিরাম গতিতে বাংলাদেশের এক যুগের অগ্রযাত্রা, সমুদ্রবিজয়সহ আঞ্চলিক ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি এবং বিশ্বপরিমণ্ডলে ডজনের অধিক অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তি, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে তাঁকে আজ দেশের এক মহান স্টেটসম্যান ও বিশ্বনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই তো তিনি ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্বরাজনীতি, অর্থনীতি ও চিন্তার ম্যাগাজিন ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে ‘বিশ্বের সেরা ১০০ চিন্তাবিদ’-এর তালিকায় প্রথম সারির দিকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ২০১৯ সালে এই ম্যাগাজিনের করা বিশ্বচিন্তাবিদের দশম সংস্করণের ‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা’ শ্রেণিতে এক দশকের অন্যতম সেরা চিন্তাবিদের তালিকায় তিনি স্থান করে নিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি কয়েক বছর ধরে বিশ্বের নামকরা বিজনেস ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’-এর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর (পাওয়ারফুল উইমেন) তালিকায় সম্মুখসারিতে থাকেন। বাঙালি জাতির সৌভাগ্য, বঙ্গবন্ধুর সার্থক উত্তরসূরি বাংলাদেশ পেয়েছে। যেমন বঙ্গবন্ধু, তেমনি শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের জন্য মহান স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ।
বিশ্বনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিনে আমার অন্তর্ময় অনিঃশেষ শুভকামনা। কায়মনে প্রার্থনা, সুস্বাস্থ্য নিয়ে তিনি দীর্ঘজীবী হোন। জয়তু শেখ হাসিনা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক: প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১ দিন আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১ দিন আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১ দিন আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১ দিন আগে