স্বপ্না রেজা
ধর্মীয় উসকানি অস্ত্রের চেয়েও ধারালো। সরকারকে কঠোর হস্তে এমন পরিস্থিতির শিকড় উৎপাটন করতে হবে। রাষ্ট্র ও জাতির নিরাপত্তা শুধু সুসজ্জিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
রামু, নাসিরনগর, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর—সব কটি অঞ্চলই বাংলাদেশের মধ্যে। যে বাংলাদেশের সংবিধান অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধে রচিত। অথচ তারপরও উল্লিখিত অঞ্চলগুলোয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি মাঝে মাঝেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুনে। পুড়ে ছাই হয়। লুটপাট হয় আসবাব, গরু, স্বর্ণ, আরও কত-কী! এলাকাজুড়ে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের আর্তচিৎকার ধ্বনিত হয়। প্রাণে বেঁচে যেতে তাঁরা কাতর আকুলতায় মূর্ছা যান। রাতের আঁধারটা যেন আগুনের দলা হয়ে ওঠে। ধর্মের কারণে তাঁরা হয়ে যান নিজ দেশে পরবাসী। এমন চিত্র শুধু এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে নয়; সংখ্যালঘুদের ওপর এমন আঘাত এর আগেও ঘটেছে। গণধর্ষণ, প্রকাশ্যে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। মামলাও হয়েছে অসংখ্য। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কেউ বলতে পারবেন কি না, কয়টা মামলার বিচারকাজ শেষ হয়েছে এ পর্যন্ত, আর কয়টা বাকি আছে। বোধ হয় তাঁরা পারবেন না। বিষয়টি কখনোই তেমনভাবে গুরুত্ব পায়নি, পাচ্ছে না। সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিরাপত্তা, সুরক্ষার বিষয়টিও যেন দায়িত্বশীলদের চেতনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েই থেকেছে, থাকছে বারংবার। অন্যদিকে আইন প্রয়োগেও রয়েছে লঘুচাপ। দায়সারা আইনি ও প্রশাসনিক তৎপরতা কিংবা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জবাবদিহিরও বালাই নেই, থাকে না।
জবাবদিহি কেউ নেন না। ফলে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে বারবার নিয়ম করে। আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সহায়সম্বলহীন হন বারবার। তাঁদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
এ দেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে ধর্মীয় ইস্যুতে সংখ্যালঘিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চড়াও হতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ভেতরকার ধর্মান্ধদের বেগ পেতে হয় না। আর রাষ্ট্রযন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠদের আধিক্য থাকে বিধায় সংখ্যালঘুদের ওপর অন্যায়-অবিচার চালাতে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যকার উগ্রপন্থীরা যেকোনোভাবেই হোক, বেশ সহায়তা পেয়ে থাকে। সব ধর্মবিশ্বাসীর মধ্যে উগ্রপন্থী গোষ্ঠী থাকে, যাদের কাজই হলো ধর্মকে অপব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করা। এরা মানবসভ্যতাকে গুরুত্ব দেয় না।
ফলে মানবতা বা মানব মর্যাদার ধারেকাছে এরা থাকে না।
যা হোক, এটা প্রতীয়মান যে, ধর্মান্ধতা তখনই মুখ্য হয়ে ওঠে, যখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় সমন্বিত চেতনার প্রচণ্ড অভাব থাকে। কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক কথাটা সত্য। রাজনৈতিক দলগুলোর দোষারোপের সংস্কৃতি যে কতটা ভয়াবহ রকম সুযোগ সৃষ্টি করে ধর্মীয় অপশক্তির পক্ষে, তা কিন্তু অতীতে প্রমাণিত এবং যা বোঝার শক্তিও থাকে না এসব রাজনৈতিক দলের। এতে শুধু অরাজকতা, নৃশংসতা আর প্রাণহানির দৃষ্টান্ত মেলে। দৃষ্টান্ত মিলেছে বহু। তবু বোধোদয় ঘটে না, ঘটছে না রাজনৈতিক দলগুলোর, রাজনৈতিক নেতাদের। সাধারণত দেখা যায়, সংখ্যালঘিষ্ঠের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের আঘাত ধর্মীয় অজুহাতেই হয়ে থাকে। এমনটাই দেখা যায়। আর এই অজুহাত দেখিয়ে আসে সংখ্যাগরিষ্ঠের মাঝে লুক্কায়িত ধর্মান্ধ শ্রেণি-গোষ্ঠী বা ধর্মীয় উগ্রবাদীরা।
অনেকেই মনে করেন, সংখ্যালঘুদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের এই বর্বরতা দেশের দুর্বল রাজনৈতিক কাঠামো, সমন্বয়হীনতা, অনৈক্য মানসিকতারই ফল। স্বার্থদ্বন্দ্বে বিভাজিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিণতি।
অতীতের মতো এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে তাই তার দৃষ্টান্ত মিলেছে। আর এতেই শুরু হয়েছে এবারও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় আর দোষারোপ। সভা, সেমিনার, অনুষ্ঠান আয়োজন, এমনকি টেলিভিশনের পর্দা কাঁপছে নেতাদের বাক্ঝড়ে, বাগ্বিতণ্ডায়। তাঁরা মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন। টিভিওয়ালারা দর্শক-শ্রোতা পেতে এঁদের ধরে বেঁধে আনছেন পর্দায়।
রাজনৈতিক নেতাদের একদল বলছে, এটা অন্যের দায়িত্বের ব্যর্থতা। আরেক দল বলছে, এই নৃশংসতা অন্য পক্ষের ইন্ধনের জন্যই হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে একজন রিকশাচালক ওয়াহাব মিয়ার মতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার যত ভেজাল, সবটুকু যায় দেশবিরোধীদের পক্ষে, অপশক্তির পক্ষে। দল দুটির কারণে শত্রুপক্ষ বহাল তবিয়তে থেকে যায় দেশে। ওয়াহাব মিয়ার কথা ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটো বৃহৎ রাজনৈতিক দল দেশপ্রেম ও দেশের স্বার্থরক্ষায় ঐকমত্যে নেই, একটা সুস্পষ্ট সহনশীল জায়গায় নেই এবং কোনোভাবেই তারা থাকে না, থাকতে পারছে না কিংবা থাকতে চাইছেও না। ওয়াহাব মিয়ার এমন উপলব্ধির পেছনের যুক্তি হলো, দল দুটির কাছে দেশের চেয়ে দল বড়। বলতে দ্বিধা নেই, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এমন উপলব্ধি ও ধারণা অধিকাংশ সাধারণ মানুষের। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বা শত্রুপক্ষও সম্ভবত সেটা মনে রেখেছে, রাখে। তাই তারা সুযোগ পেয়েই দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করে। অতীতে নিজেদের স্বার্থে উগ্র ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় বসার যেমন উদাহরণ আছে, তেমনি আছে পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে শিক্ষা বোর্ড পর্যন্ত ধর্মীয় উগ্র সংগঠনকে হেফাজতে রাখার উদাহরণ। কোনোটাই আসলে দেশ ও অস্তিত্বের জন্য কল্যাণকর হয়নি। দলের জন্যও নয়। আবার বাংলাদেশে মোদির আগমনে হেফাজতের যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এবং মূর্তির দোহাইয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার যে ধৃষ্টতা, তা কিন্তু রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রশ্নের ওপর প্রশ্নটা হলো, সেটা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতারা বোঝেন কি না।
শারদীয় দুর্গোৎসবে কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় মন্দির ও পূজামণ্ডপে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার একটি সংঘবদ্ধ পরিকল্পিত অপচেষ্টা এবং যা দীর্ঘদিনের। শতভাগ সত্য। এটা সুপরিকল্পিত। শুধু কি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দায়ী? বোধ হয় না। ধ্বংসাত্মক আক্রমণ কুমিল্লার পূজামণ্ডপ দিয়ে শুরু হয়ে বিভিন্ন জেলার মন্দির ও পূজামণ্ডপে গিয়ে পৌঁছেছে। বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনা আকস্মিক কোনো ঘটনা ছিল কি না, প্রশ্ন উঠেছে। যদি আকস্মিক হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশ প্রশাসন কেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করল না। অনেকে মনে করেছে, পুলিশ প্রশাসনের মধ্যেও ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা ঘাপটি মেরে আছে। আছে প্রশাসনেও। তাই কি? আবার বিএনপি বলছে, সাম্প্রদায়িক এ ঘটনা আওয়ামী লীগের সৃষ্ট। তাদের কেউ কেউ বলছেন, এটা ক্ষমতাসীনদের ব্যর্থতা ইত্যাদি। বিএনপির নেতারা বলতে পারবেন কি, অসাম্প্রদায়িকতার জন্য তাঁরা কী করেছেন বা করছেন? সম্ভবত তাঁদের কাছে কোনো জবাব নেই। কেননা, স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক সংগঠন নিয়েই তাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন এবং সমন্বিত রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়েছেন।
ধর্মীয় উসকানি অস্ত্রের চেয়েও ধারালো। সরকারকে কঠোর হস্তে এমন পরিস্থিতির শিকড় উৎপাটন করতে হবে। রাষ্ট্র ও জাতির নিরাপত্তা শুধু সুসজ্জিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় রাজনৈতিক দোষারোপের সংস্কৃতি দ্বারাও। প্রয়োজন সংবিধানসম্মত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং তার বাস্তব প্রয়োগ। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং মুসলমান—সবারই নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক সংগঠনের আদর্শিক চেতনা যদি বাংলাদেশের সংবিধানসম্মত না হয়, তাহলে শুধু সংখ্যালঘু কেন, গোটা রাষ্ট্রই একদিন অরক্ষিত হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ঐক্যের অভাবই রাষ্ট্রের বড় ঝুঁকি—ওয়াহাব মিয়ার মতো কথাটা সবাইকেই বুঝতে হবে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ধর্মীয় উসকানি অস্ত্রের চেয়েও ধারালো। সরকারকে কঠোর হস্তে এমন পরিস্থিতির শিকড় উৎপাটন করতে হবে। রাষ্ট্র ও জাতির নিরাপত্তা শুধু সুসজ্জিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
রামু, নাসিরনগর, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর—সব কটি অঞ্চলই বাংলাদেশের মধ্যে। যে বাংলাদেশের সংবিধান অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধে রচিত। অথচ তারপরও উল্লিখিত অঞ্চলগুলোয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি মাঝে মাঝেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুনে। পুড়ে ছাই হয়। লুটপাট হয় আসবাব, গরু, স্বর্ণ, আরও কত-কী! এলাকাজুড়ে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের আর্তচিৎকার ধ্বনিত হয়। প্রাণে বেঁচে যেতে তাঁরা কাতর আকুলতায় মূর্ছা যান। রাতের আঁধারটা যেন আগুনের দলা হয়ে ওঠে। ধর্মের কারণে তাঁরা হয়ে যান নিজ দেশে পরবাসী। এমন চিত্র শুধু এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে নয়; সংখ্যালঘুদের ওপর এমন আঘাত এর আগেও ঘটেছে। গণধর্ষণ, প্রকাশ্যে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। মামলাও হয়েছে অসংখ্য। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কেউ বলতে পারবেন কি না, কয়টা মামলার বিচারকাজ শেষ হয়েছে এ পর্যন্ত, আর কয়টা বাকি আছে। বোধ হয় তাঁরা পারবেন না। বিষয়টি কখনোই তেমনভাবে গুরুত্ব পায়নি, পাচ্ছে না। সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিরাপত্তা, সুরক্ষার বিষয়টিও যেন দায়িত্বশীলদের চেতনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েই থেকেছে, থাকছে বারংবার। অন্যদিকে আইন প্রয়োগেও রয়েছে লঘুচাপ। দায়সারা আইনি ও প্রশাসনিক তৎপরতা কিংবা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জবাবদিহিরও বালাই নেই, থাকে না।
জবাবদিহি কেউ নেন না। ফলে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে বারবার নিয়ম করে। আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সহায়সম্বলহীন হন বারবার। তাঁদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
এ দেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে ধর্মীয় ইস্যুতে সংখ্যালঘিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চড়াও হতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ভেতরকার ধর্মান্ধদের বেগ পেতে হয় না। আর রাষ্ট্রযন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠদের আধিক্য থাকে বিধায় সংখ্যালঘুদের ওপর অন্যায়-অবিচার চালাতে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যকার উগ্রপন্থীরা যেকোনোভাবেই হোক, বেশ সহায়তা পেয়ে থাকে। সব ধর্মবিশ্বাসীর মধ্যে উগ্রপন্থী গোষ্ঠী থাকে, যাদের কাজই হলো ধর্মকে অপব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করা। এরা মানবসভ্যতাকে গুরুত্ব দেয় না।
ফলে মানবতা বা মানব মর্যাদার ধারেকাছে এরা থাকে না।
যা হোক, এটা প্রতীয়মান যে, ধর্মান্ধতা তখনই মুখ্য হয়ে ওঠে, যখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় সমন্বিত চেতনার প্রচণ্ড অভাব থাকে। কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক কথাটা সত্য। রাজনৈতিক দলগুলোর দোষারোপের সংস্কৃতি যে কতটা ভয়াবহ রকম সুযোগ সৃষ্টি করে ধর্মীয় অপশক্তির পক্ষে, তা কিন্তু অতীতে প্রমাণিত এবং যা বোঝার শক্তিও থাকে না এসব রাজনৈতিক দলের। এতে শুধু অরাজকতা, নৃশংসতা আর প্রাণহানির দৃষ্টান্ত মেলে। দৃষ্টান্ত মিলেছে বহু। তবু বোধোদয় ঘটে না, ঘটছে না রাজনৈতিক দলগুলোর, রাজনৈতিক নেতাদের। সাধারণত দেখা যায়, সংখ্যালঘিষ্ঠের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের আঘাত ধর্মীয় অজুহাতেই হয়ে থাকে। এমনটাই দেখা যায়। আর এই অজুহাত দেখিয়ে আসে সংখ্যাগরিষ্ঠের মাঝে লুক্কায়িত ধর্মান্ধ শ্রেণি-গোষ্ঠী বা ধর্মীয় উগ্রবাদীরা।
অনেকেই মনে করেন, সংখ্যালঘুদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের এই বর্বরতা দেশের দুর্বল রাজনৈতিক কাঠামো, সমন্বয়হীনতা, অনৈক্য মানসিকতারই ফল। স্বার্থদ্বন্দ্বে বিভাজিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিণতি।
অতীতের মতো এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে তাই তার দৃষ্টান্ত মিলেছে। আর এতেই শুরু হয়েছে এবারও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় আর দোষারোপ। সভা, সেমিনার, অনুষ্ঠান আয়োজন, এমনকি টেলিভিশনের পর্দা কাঁপছে নেতাদের বাক্ঝড়ে, বাগ্বিতণ্ডায়। তাঁরা মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন। টিভিওয়ালারা দর্শক-শ্রোতা পেতে এঁদের ধরে বেঁধে আনছেন পর্দায়।
রাজনৈতিক নেতাদের একদল বলছে, এটা অন্যের দায়িত্বের ব্যর্থতা। আরেক দল বলছে, এই নৃশংসতা অন্য পক্ষের ইন্ধনের জন্যই হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে একজন রিকশাচালক ওয়াহাব মিয়ার মতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার যত ভেজাল, সবটুকু যায় দেশবিরোধীদের পক্ষে, অপশক্তির পক্ষে। দল দুটির কারণে শত্রুপক্ষ বহাল তবিয়তে থেকে যায় দেশে। ওয়াহাব মিয়ার কথা ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটো বৃহৎ রাজনৈতিক দল দেশপ্রেম ও দেশের স্বার্থরক্ষায় ঐকমত্যে নেই, একটা সুস্পষ্ট সহনশীল জায়গায় নেই এবং কোনোভাবেই তারা থাকে না, থাকতে পারছে না কিংবা থাকতে চাইছেও না। ওয়াহাব মিয়ার এমন উপলব্ধির পেছনের যুক্তি হলো, দল দুটির কাছে দেশের চেয়ে দল বড়। বলতে দ্বিধা নেই, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এমন উপলব্ধি ও ধারণা অধিকাংশ সাধারণ মানুষের। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বা শত্রুপক্ষও সম্ভবত সেটা মনে রেখেছে, রাখে। তাই তারা সুযোগ পেয়েই দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করে। অতীতে নিজেদের স্বার্থে উগ্র ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় বসার যেমন উদাহরণ আছে, তেমনি আছে পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে শিক্ষা বোর্ড পর্যন্ত ধর্মীয় উগ্র সংগঠনকে হেফাজতে রাখার উদাহরণ। কোনোটাই আসলে দেশ ও অস্তিত্বের জন্য কল্যাণকর হয়নি। দলের জন্যও নয়। আবার বাংলাদেশে মোদির আগমনে হেফাজতের যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এবং মূর্তির দোহাইয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার যে ধৃষ্টতা, তা কিন্তু রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রশ্নের ওপর প্রশ্নটা হলো, সেটা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতারা বোঝেন কি না।
শারদীয় দুর্গোৎসবে কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় মন্দির ও পূজামণ্ডপে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার একটি সংঘবদ্ধ পরিকল্পিত অপচেষ্টা এবং যা দীর্ঘদিনের। শতভাগ সত্য। এটা সুপরিকল্পিত। শুধু কি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দায়ী? বোধ হয় না। ধ্বংসাত্মক আক্রমণ কুমিল্লার পূজামণ্ডপ দিয়ে শুরু হয়ে বিভিন্ন জেলার মন্দির ও পূজামণ্ডপে গিয়ে পৌঁছেছে। বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনা আকস্মিক কোনো ঘটনা ছিল কি না, প্রশ্ন উঠেছে। যদি আকস্মিক হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশ প্রশাসন কেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করল না। অনেকে মনে করেছে, পুলিশ প্রশাসনের মধ্যেও ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা ঘাপটি মেরে আছে। আছে প্রশাসনেও। তাই কি? আবার বিএনপি বলছে, সাম্প্রদায়িক এ ঘটনা আওয়ামী লীগের সৃষ্ট। তাদের কেউ কেউ বলছেন, এটা ক্ষমতাসীনদের ব্যর্থতা ইত্যাদি। বিএনপির নেতারা বলতে পারবেন কি, অসাম্প্রদায়িকতার জন্য তাঁরা কী করেছেন বা করছেন? সম্ভবত তাঁদের কাছে কোনো জবাব নেই। কেননা, স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক সংগঠন নিয়েই তাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন এবং সমন্বিত রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়েছেন।
ধর্মীয় উসকানি অস্ত্রের চেয়েও ধারালো। সরকারকে কঠোর হস্তে এমন পরিস্থিতির শিকড় উৎপাটন করতে হবে। রাষ্ট্র ও জাতির নিরাপত্তা শুধু সুসজ্জিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় রাজনৈতিক দোষারোপের সংস্কৃতি দ্বারাও। প্রয়োজন সংবিধানসম্মত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং তার বাস্তব প্রয়োগ। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং মুসলমান—সবারই নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক সংগঠনের আদর্শিক চেতনা যদি বাংলাদেশের সংবিধানসম্মত না হয়, তাহলে শুধু সংখ্যালঘু কেন, গোটা রাষ্ট্রই একদিন অরক্ষিত হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ঐক্যের অভাবই রাষ্ট্রের বড় ঝুঁকি—ওয়াহাব মিয়ার মতো কথাটা সবাইকেই বুঝতে হবে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১৪ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১৪ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৪ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৪ ঘণ্টা আগে