হামিদ মীর, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক পাকিস্তান
একনায়ক, স্বৈরশাসক বা সন্ত্রাসবাদীরা হয়তো জামাল খাশোগি বা ডাফনে কারুয়ানা গালিজিয়ার মতো সাংবাদিকদের হত্যা করতে পারে, কিন্তু তারা এই সাংবাদিকদের সেই সব গল্পকে হত্যা করতে পারে না, যা তাঁরা বিশ্বকে জানাতে চেয়েছেন।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তাঁর এক উপদেষ্টাকে বলেছিলেন, সৌদি সরকারের সমালোচনা বন্ধ না করলে নির্বাসনে থাকা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির জন্য তিনি একটি বুলেট ব্যবহার করবেন। বাস্তবে তার চেয়েও ভয়াবহ কিছু হয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে গেলে সেখানেই একদল গুপ্তঘাতক জামাল খাসোগিকে হত্যা করে।
সৌদি আদালত পরে খাসোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। যদিও ঘটনা সম্পর্কে যাঁরা খোঁজ রাখেন, তাঁরা জানেন, ওই বিচারকদের কারোরই সত্যিকারের অপরাধীকে স্পর্শ করার বিন্দুমাত্র সাহস নেই। আর এই হতাশাজনক বাস্তবতা বোঝেন বলেই খাসোগির বাগদত্তা হেতিজে চেঙ্গিস এই হত্যাকাণ্ডের সত্যিকারের জবাবদিহি আদায়ের জন্য এখনো লড়ে যাচ্ছেন।
আগামী ২ নভেম্বর চেঙ্গিস তাঁর শেষ সুযোগটি হয়তো পাবেন। ওই দিন তিনি খাসোগি মামলায় পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) বা স্থায়ী গণ-আদালতের সামনে সাক্ষ্য দেবেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে সামনের সারির নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোর সৃষ্ট ফোরাম এই পিপিটি। ২ নভেম্বর একই সঙ্গে সাংবাদিক নির্যাতনের দায়মুক্তি সমাপ্তি-বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবস। ওই দিন গণ-আদালতের যে সেশনে চেঙ্গিস সাক্ষ্য দেবেন, তার আয়োজক আবার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা-সম্পর্কিত প্রভাবশালী তিন সংগঠন—কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড। ওই দিনের ট্রাইব্যুনালে শুধু খাসোগির মামলাটিই নয়, গোটা বিশ্বে সাংবাদিকদের ওপর হওয়া বিভিন্ন হামলার বিষয়টিও আলোচিত হবে।
নেদারল্যান্ডসের হেগে অনুষ্ঠেয় ওই শুনানিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে হওয়া বিভিন্ন অপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, হত্যার শিকার সাংবাদিকদের পরিবার, সহকর্মীসহ সবার বিষয় আলোচিত হবে, যাঁরা প্রিয়জন হারানোর পর নিজেরাও নানা হুমকিতে রয়েছেন। এই ট্রাইব্যুনাল বিভিন্ন হামলায় বেঁচে যাওয়া সাংবাদিকদের এমন একটি প্ল্যাটফর্ম দেবে, যেখানে তাঁরা বিভিন্ন হামলা ও হত্যার জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলবেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়া অংশের জন্য এই একটি জায়গাই এখন অবশিষ্ট আছে।
১৯৯৬ সালে প্রথম এমন গণ-আদালত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল, যার লক্ষ্য ছিল ভিয়েতনামে মার্কিন সরকারের করা যুদ্ধাপরাধের বিচার। এই ট্রাইব্যুনালের কাউকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও অপরাধ সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি এসব অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনসিদ্ধ প্রমাণ সংগ্রহের সক্ষমতা রয়েছে। গণ-আদালতের সঙ্গে যুক্ত থাকা সাংবাদিক ও বিচারকদের গ্রহণযোগ্যতার মধ্য দিয়েই সংগৃহীত প্রমাণের আইনি ভিতটি তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ভিতে তৈরি কাঠামোর মধ্যেই এই আদালত পরিচালিত হবে। এর সঙ্গে যুক্ত সব বিচারক ও আইনজীবীর রয়েছে এর আইন ও নীতি-সম্পর্কিত বিস্তৃত ধারণা। আদালতের নয় বিচারকের সবারই রয়েছে এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পরিচিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা।
মুখ্য কৌঁসুলি হিসেবে রয়েছেন প্রখ্যাত মানবাধিকার আইনজীবী আলমুডেনা বার্নাব্যু। তাঁর সঙ্গে থাকছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের বিচারক স্যার হাওয়ার্ড মরিসন। এল সালভাদরের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্লোস ইউজেনিও ভিডাস ক্যাসানোভার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বার্নাব্যু। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায়ে নিজ দেশে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ক্যাসানোভাকে ফ্লোরিডা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। এবার গণ-আদালতে বার্নাব্যু শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে সাংবাদিক লাসান্থা বিক্রমাতুঙ্গে হত্যার আদেশ দেওয়ার অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ হাজির করবেন। রাজাপক্ষে এখন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট।
আদালতের শুরুর অংশেই সাংবাদিক হত্যার দায়মুক্তির যে সমস্যা, তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে। এবারের শুনানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এ বছর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মারিয়া রেসা। ফিলিপাইনের এই সাংবাদিক সে দেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। এ ছাড়া ২০১৭ সালে গাড়িবোমা হামলায় নিহত মাল্টার সাংবাদিক ডাফনে কারুয়ানা গালিজিয়ার ছেলে ম্যাথিউ কারুয়ানা গালিজিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রের অনুসন্ধানী সাংবাদিক পাভলা হরকোভাও সাক্ষ্য দেবেন। এই শুনানির মাধ্যমে ভীষণ জরুরি হয়ে পড়া একটি সমস্যার ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করা হবে। আর তা হলো—বর্তমানে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, সত্যকে হত্যা করাই যেন বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ অপরাধ হয়ে উঠেছে।
এই গণ-আদালত থেকে শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া ও মেক্সিকো সরকারকে যথাক্রমে সাংবাদিক বিক্রমাতুঙ্গে, নাবিল আল-শারবাজি ও মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল লোপেজ ভেলাস্কোর পরিবারকে সুবিচার দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে। বিক্রমাতুঙ্গে হত্যা মামলার শুনানি শুরু হবে আগামী জানুয়ারিতে। এরপর হবে সিরিয়ার সাংবাদিক নাবিল হত্যা মামলার শুনানি, যাঁকে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর আটককেন্দ্রে হত্যা করা হয়েছিল। আর সর্বশেষে আগামী মার্চে হবে মেক্সিকো সিটিতে গবে লোপেজ হত্যার শুনানি। আগামী বছরের ৩ মে বিশ্ব সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দিবসে রায় শোনানো হবে।
গণ-আদালতের রায়ের মাধ্যমে হয়তো রাজাপক্ষে বা অন্য অপরাধীদের জেলে পাঠানো যাবে না। কিন্তু অপরাধী হিসেবে তাঁদের নামটি উঠে আসবে, জনপরিসরে তাঁরা অসম্মানিত হবেন। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এরই মধ্যে তাদের ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী’ তালিকায় রাজাপক্ষের নাম যুক্ত করেছে। এই একই তালিকায় রয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ আরও অনেকে। গণ-আদালতের রায় এই অপরাধীদের একটি বার্তা অন্তত দেবে যে, অপরাধ লুকিয়ে রাখা যায় না। সত্যের বিরুদ্ধে তাঁদের যে যুদ্ধ, তা তাঁদের বন্ধ করা উচিত।
সাংবাদিকদের সঙ্গে অপরাধের দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা এই গণ-আদালতের কার্যক্রমের মাধ্যমে বন্ধ হবে বলে আমি আশা করি। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সত্য প্রকাশে বাধা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই সত্য প্রকাশে বাধা প্রদানের বিরুদ্ধে যাঁরা এখনো লড়ে যাচ্ছেন, সেন্সরশিপের খড়্গে যাঁরা কাটা পড়তে চান না, তাঁদের প্রতিহত করতে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে যেসব ক্ষমতা-বুভুক্ষু রাজনীতিক ব্যবহার করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এখনই সময়। গণ-আদালতের বার্তাটি খুব সরল—একনায়ক, স্বৈরশাসক বা সন্ত্রাসবাদীরা হয়তো জামাল খাসোগি বা ডাফনে কারুয়ানা গালিজিয়ার মতো সাংবাদিকদের হত্যা করতে পারে, কিন্তু তারা এই সাংবাদিকদের সেই সব গল্পকে হত্যা করতে পারে না, যা তাঁরা বিশ্বকে জানাতে চেয়েছেন।
(ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
একনায়ক, স্বৈরশাসক বা সন্ত্রাসবাদীরা হয়তো জামাল খাশোগি বা ডাফনে কারুয়ানা গালিজিয়ার মতো সাংবাদিকদের হত্যা করতে পারে, কিন্তু তারা এই সাংবাদিকদের সেই সব গল্পকে হত্যা করতে পারে না, যা তাঁরা বিশ্বকে জানাতে চেয়েছেন।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তাঁর এক উপদেষ্টাকে বলেছিলেন, সৌদি সরকারের সমালোচনা বন্ধ না করলে নির্বাসনে থাকা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির জন্য তিনি একটি বুলেট ব্যবহার করবেন। বাস্তবে তার চেয়েও ভয়াবহ কিছু হয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে গেলে সেখানেই একদল গুপ্তঘাতক জামাল খাসোগিকে হত্যা করে।
সৌদি আদালত পরে খাসোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। যদিও ঘটনা সম্পর্কে যাঁরা খোঁজ রাখেন, তাঁরা জানেন, ওই বিচারকদের কারোরই সত্যিকারের অপরাধীকে স্পর্শ করার বিন্দুমাত্র সাহস নেই। আর এই হতাশাজনক বাস্তবতা বোঝেন বলেই খাসোগির বাগদত্তা হেতিজে চেঙ্গিস এই হত্যাকাণ্ডের সত্যিকারের জবাবদিহি আদায়ের জন্য এখনো লড়ে যাচ্ছেন।
আগামী ২ নভেম্বর চেঙ্গিস তাঁর শেষ সুযোগটি হয়তো পাবেন। ওই দিন তিনি খাসোগি মামলায় পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) বা স্থায়ী গণ-আদালতের সামনে সাক্ষ্য দেবেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে সামনের সারির নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোর সৃষ্ট ফোরাম এই পিপিটি। ২ নভেম্বর একই সঙ্গে সাংবাদিক নির্যাতনের দায়মুক্তি সমাপ্তি-বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবস। ওই দিন গণ-আদালতের যে সেশনে চেঙ্গিস সাক্ষ্য দেবেন, তার আয়োজক আবার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা-সম্পর্কিত প্রভাবশালী তিন সংগঠন—কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড। ওই দিনের ট্রাইব্যুনালে শুধু খাসোগির মামলাটিই নয়, গোটা বিশ্বে সাংবাদিকদের ওপর হওয়া বিভিন্ন হামলার বিষয়টিও আলোচিত হবে।
নেদারল্যান্ডসের হেগে অনুষ্ঠেয় ওই শুনানিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে হওয়া বিভিন্ন অপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, হত্যার শিকার সাংবাদিকদের পরিবার, সহকর্মীসহ সবার বিষয় আলোচিত হবে, যাঁরা প্রিয়জন হারানোর পর নিজেরাও নানা হুমকিতে রয়েছেন। এই ট্রাইব্যুনাল বিভিন্ন হামলায় বেঁচে যাওয়া সাংবাদিকদের এমন একটি প্ল্যাটফর্ম দেবে, যেখানে তাঁরা বিভিন্ন হামলা ও হত্যার জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলবেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়া অংশের জন্য এই একটি জায়গাই এখন অবশিষ্ট আছে।
১৯৯৬ সালে প্রথম এমন গণ-আদালত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল, যার লক্ষ্য ছিল ভিয়েতনামে মার্কিন সরকারের করা যুদ্ধাপরাধের বিচার। এই ট্রাইব্যুনালের কাউকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও অপরাধ সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি এসব অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনসিদ্ধ প্রমাণ সংগ্রহের সক্ষমতা রয়েছে। গণ-আদালতের সঙ্গে যুক্ত থাকা সাংবাদিক ও বিচারকদের গ্রহণযোগ্যতার মধ্য দিয়েই সংগৃহীত প্রমাণের আইনি ভিতটি তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ভিতে তৈরি কাঠামোর মধ্যেই এই আদালত পরিচালিত হবে। এর সঙ্গে যুক্ত সব বিচারক ও আইনজীবীর রয়েছে এর আইন ও নীতি-সম্পর্কিত বিস্তৃত ধারণা। আদালতের নয় বিচারকের সবারই রয়েছে এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পরিচিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা।
মুখ্য কৌঁসুলি হিসেবে রয়েছেন প্রখ্যাত মানবাধিকার আইনজীবী আলমুডেনা বার্নাব্যু। তাঁর সঙ্গে থাকছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের বিচারক স্যার হাওয়ার্ড মরিসন। এল সালভাদরের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্লোস ইউজেনিও ভিডাস ক্যাসানোভার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বার্নাব্যু। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায়ে নিজ দেশে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ক্যাসানোভাকে ফ্লোরিডা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। এবার গণ-আদালতে বার্নাব্যু শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে সাংবাদিক লাসান্থা বিক্রমাতুঙ্গে হত্যার আদেশ দেওয়ার অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ হাজির করবেন। রাজাপক্ষে এখন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট।
আদালতের শুরুর অংশেই সাংবাদিক হত্যার দায়মুক্তির যে সমস্যা, তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে। এবারের শুনানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এ বছর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মারিয়া রেসা। ফিলিপাইনের এই সাংবাদিক সে দেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। এ ছাড়া ২০১৭ সালে গাড়িবোমা হামলায় নিহত মাল্টার সাংবাদিক ডাফনে কারুয়ানা গালিজিয়ার ছেলে ম্যাথিউ কারুয়ানা গালিজিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রের অনুসন্ধানী সাংবাদিক পাভলা হরকোভাও সাক্ষ্য দেবেন। এই শুনানির মাধ্যমে ভীষণ জরুরি হয়ে পড়া একটি সমস্যার ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করা হবে। আর তা হলো—বর্তমানে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, সত্যকে হত্যা করাই যেন বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ অপরাধ হয়ে উঠেছে।
এই গণ-আদালত থেকে শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া ও মেক্সিকো সরকারকে যথাক্রমে সাংবাদিক বিক্রমাতুঙ্গে, নাবিল আল-শারবাজি ও মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল লোপেজ ভেলাস্কোর পরিবারকে সুবিচার দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে। বিক্রমাতুঙ্গে হত্যা মামলার শুনানি শুরু হবে আগামী জানুয়ারিতে। এরপর হবে সিরিয়ার সাংবাদিক নাবিল হত্যা মামলার শুনানি, যাঁকে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর আটককেন্দ্রে হত্যা করা হয়েছিল। আর সর্বশেষে আগামী মার্চে হবে মেক্সিকো সিটিতে গবে লোপেজ হত্যার শুনানি। আগামী বছরের ৩ মে বিশ্ব সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দিবসে রায় শোনানো হবে।
গণ-আদালতের রায়ের মাধ্যমে হয়তো রাজাপক্ষে বা অন্য অপরাধীদের জেলে পাঠানো যাবে না। কিন্তু অপরাধী হিসেবে তাঁদের নামটি উঠে আসবে, জনপরিসরে তাঁরা অসম্মানিত হবেন। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এরই মধ্যে তাদের ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী’ তালিকায় রাজাপক্ষের নাম যুক্ত করেছে। এই একই তালিকায় রয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ আরও অনেকে। গণ-আদালতের রায় এই অপরাধীদের একটি বার্তা অন্তত দেবে যে, অপরাধ লুকিয়ে রাখা যায় না। সত্যের বিরুদ্ধে তাঁদের যে যুদ্ধ, তা তাঁদের বন্ধ করা উচিত।
সাংবাদিকদের সঙ্গে অপরাধের দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা এই গণ-আদালতের কার্যক্রমের মাধ্যমে বন্ধ হবে বলে আমি আশা করি। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সত্য প্রকাশে বাধা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই সত্য প্রকাশে বাধা প্রদানের বিরুদ্ধে যাঁরা এখনো লড়ে যাচ্ছেন, সেন্সরশিপের খড়্গে যাঁরা কাটা পড়তে চান না, তাঁদের প্রতিহত করতে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে যেসব ক্ষমতা-বুভুক্ষু রাজনীতিক ব্যবহার করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এখনই সময়। গণ-আদালতের বার্তাটি খুব সরল—একনায়ক, স্বৈরশাসক বা সন্ত্রাসবাদীরা হয়তো জামাল খাসোগি বা ডাফনে কারুয়ানা গালিজিয়ার মতো সাংবাদিকদের হত্যা করতে পারে, কিন্তু তারা এই সাংবাদিকদের সেই সব গল্পকে হত্যা করতে পারে না, যা তাঁরা বিশ্বকে জানাতে চেয়েছেন।
(ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১১ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১১ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১১ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১২ ঘণ্টা আগে