সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ভাসানীর পক্ষে তো সোহরাওয়ার্দীর মন্ত্রিত্ব গ্রহণে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণই ছিল না; ভাসানীর পরামর্শের বিপরীতেই তিনি প্রথমে আইনমন্ত্রিত্ব, পরে প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছিলেন। শেখ মুজিবও অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আছে: ‘আমি নিজে কিছুতেই তাঁর আইনমন্ত্রী হওয়া সমর্থন করতে পারলাম না। এমনকি মনে মনে ক্ষেপে গিয়েছিলাম।’ মুজিব লিখেছেন, ‘ঢাকা থেকে করাচি রওনা হয়ে গেলাম। আমি মনকে কিছুতেই সান্ত্বনা দিতে পারছি না।...রাতে পৌঁছে আমি তাঁর সাথে দেখা করতে যাই নাই। দেখা হলে কী অবস্থা হয় বলা যায় না। আমি তাঁর সাথে বেয়াদবি করে বসতে পারি।’ পরদিন দেখা করলে সোহরাওয়ার্দী তাঁকে বলেছিলেন, ‘রাগ করেছ বোধ হয়।’ শেখ মুজিবের উত্তরটা ছিল স্পষ্ট:
‘রাগ করব কেন স্যার, ভাবছি, সারা জীবন আপনাকে নেতা মেনে ভুলই করেছি কি না?’
লাহোর প্রস্তাবের আলোচনায় ফেরত যাওয়া যাক। ১৯৫৪ সালের ২১ দফা এবং ১৯৬৬ সালের ৬ দফা—উভয় কর্মসূচিতেই লাহোর প্রস্তাবের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতির দিকটা স্থান পেয়েছে, যেটা আমরা এর আগেই উল্লেখ করেছি। ৬ দফার প্রথম দফাটিই হচ্ছে: ‘দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো এমন হতে হবে, যেখানে একটি ফেডারেশনভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ হবে এবং তার ভিত্তি হবে লাহোর প্রস্তাব।’ ৬ দফার এই প্রথম দফার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ‘আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা কর্মসূচি’ নামের পুস্তিকাটিতে যা বলা হয়েছে তা এ রকম: ‘এই দফায় বলা হইয়াছে যে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনাকরতঃ পাকিস্তানকে একটি সত্যিকারের ফেডারেশন গড়িতে হইবে। [...] ইহাতে আপত্তি কী আছে? ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচন এই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই হইয়াছিল [...] ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ববঙ্গের মুসলিম আসনের শতকরা সাড়ে ৯৭টি যে একুশ দফার পক্ষে আসিয়াছিল, লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনার দাবী ছিল তার অন্যতম প্রধান দাবী।’
এই পুস্তিকা শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রচারিত হলেও এটি লিখে দিয়েছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। এর ইংরেজি তরজমাও তাঁরই করা। আবুল মনসুর আহমদ তখন আর সক্রিয় রাজনীতিতে নেই; ৬ দফা আন্দোলনের প্রতি তাঁর যে তেমন একটা সমর্থন ছিল, তা-ও নয়; তবে তিনি লাহোর প্রস্তাবের অনুরাগী ছিলেন অবশ্যই। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন, বিশেষ করে এই মতাদর্শিক কারণে যে তাঁর মনে হয়েছে ‘বাংলাদেশে’র প্রতিষ্ঠা আসলে লাহোর প্রস্তাবেরই বাস্তবায়ন। স্মরণ করা যেতে পারে, আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে লাহোর প্রস্তাবের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের চেতনাটি কাজ করছিল বলে ধারণা করাটা মোটেই অসংগত নয়। মামলায় অভিযুক্তদের সামরিক অংশের দলনেতা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন যে ওই লাইনেই চিন্তা করতেন, তা বোঝা যায় এ ঘটনা থেকে যে আগরতলা মামলা থেকে মুক্ত হওয়ার পর তিনি যে একটি রাজনৈতিক দল গঠনে সচেষ্ট হয়েছিলেন, তার নাম অন্য কিছু রাখেননি, রেখেছিলেন ‘লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি’।
ওই সময় আগরতলা মামলায় অভিযুক্তদের কেউ কেউ যুক্ত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে, রুশপন্থী ন্যাপেও গেছেন কয়েকজন; কিন্তু মূল অংশটি ছিল মোয়াজ্জেমের সঙ্গেই। তিনি অন্য কোনো দলে যোগ না দিয়ে ‘লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি’ই গঠন করেন। এটি গঠিত হয় ১৯৭০ সালের ২৩ মার্চ। ৩০ বছর আগে ঠিক ওই দিনেই লাহোর প্রস্তাবটি উত্থাপিত ও গৃহীত হয়েছিল। লাহোর প্রস্তাব বলতে তিনি ১৯৪৬-এ জিন্নাহর উদ্যোগে বিকৃত রূপটিকে বোঝেননি, লাহোর প্রস্তাব বলতে মওলানা ভাসানী যেটিকে গণ্য করতেন সেটিকেই বুঝিয়েছেন। ভাসানীর মতোই প্রস্তাবের অন্তর্গত দ্বিজাতিতত্ত্বকে তিনি মানতেন না। আর তাঁরা যে স্বাধীন বাংলাদেশের কল্পনা করেছিলেন, সেটি ছিল সমাজতান্ত্রিক।
১৯৬৬ সালেই তাঁরা ঠিক করেছিলেন যে তাঁদের স্বাধীন রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে; সেখানে সবাইকে কাজ করতে হবে; ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকবে সরকারের মালিকানাধীন, কলকারখানা জাতীয়করণ করা হবে; প্রতিটি নাগরিকের জন্য থাকবে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার নিশ্চয়তা। রাষ্ট্রের নামও ঠিক করা হয়েছিল ‘বাংলাদেশ’। প্রকাশ্য দল গঠনের পরে মোয়াজ্জেম সময় পেয়েছিলেন মাত্র এক বছর। গণহত্যা শুরুর মুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদারেরা যাঁদের সবচেয়ে বড় দুশমন বলে চিহ্নিত করে রেখেছিল, তাঁদের মধ্যে মোয়াজ্জেমের স্থান ছিল তৃতীয়; শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের পরেই। তাঁর ওপর হানাদারদের সতর্ক চোখ ছিল। একাত্তরের ২৬ মার্চ সকালেই তারা তাঁকে আটক করে এবং কালবিলম্ব না করে প্রাণনাশ ঘটায়। মোয়াজ্জেমের হয়তো ধারণার মধ্যেই ছিল না যে পাকিস্তানি হানাদারেরা তাঁকে অতটা গুরুত্ব দেয়। ধারণা থাকলে ২৫ মার্চ রাতে তিনি নিশ্চয়ই আত্মগোপন করতেন।
মওলানা ভাসানীর বিশেষ পক্ষপাত ছিল লাহোর প্রস্তাবের প্রতি। হতে পারে এর প্রধান কারণ ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তান আন্দোলনের তিনি একজন অত্যন্ত সক্রিয় সমর্থক ছিলেন; এবং আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের দায়িত্বভার তাঁর স্কন্ধেই ছিল। তখন তিনি বাংলা ও আসামকে নিয়ে যে সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তানের কথা ভেবেছিলেন, সেই ভাবনা পরবর্তী সময়ে তাঁকে অব্যাহতি দেয়নি। তাঁর ওই পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিমদের সংখ্যাধিক্য থাকত বটে, কিন্তু তাকে তিনি একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করেননি, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবেই দেখতে চেয়েছেন, যেখানে সব সম্প্রদায়ের মানুষেরই থাকবে সমান গণতান্ত্রিক অধিকার। দেখা গেছে যে তাঁর চিন্তায় জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগ্রহ কাজ করেনি, কাজ করেছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ব্যাপারে আগ্রহ। আর পাকিস্তানকে তিনি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে কিছুতেই মেনে নিতে চাননি।
এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশন ভারতবর্ষকে তিন অংশে ভাগ করে, কেন্দ্রে অত্যন্ত সীমিত ক্ষমতা রেখে যে একটি ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটিতে লাহোর প্রস্তাবের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি ছিল না ঠিকই, কিন্তু ভারতবর্ষকে ঐক্যবদ্ধ রাখার একটা সুযোগ ছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রের হাতে থাকবে তিনটি মাত্র বিষয়: পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ। বাকি সব বিষয় থাকার কথা প্রদেশের হাতে। ভারতবর্ষকে যে তিনটি অংশে ভাগ করার প্রস্তাব ছিল, তার একটি গঠিত হতো বাংলা ও আসামকে নিয়ে। মওলানা ভাসানীর চিন্তায় পূর্বাঞ্চলের এই ধারণাও হয়তো কাজ করছিল। ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় মূলত কংগ্রেসের সেই সময়ের সভাপতি জওহরলাল নেহরুর আপত্তির কারণে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং তিন ভাগে বিভাজনে তিনি সম্মতি দেননি। পরে যখন দেখা গেল ভারতবর্ষ দুই টুকরো হয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি অবশ্য প্রস্তাবটিকে ফেরত আনা যায় কি না, সে কথা তুলেছিলেন, কিন্তু জল তত দিনে অনেক গড়িয়ে গেছে, তিক্ততা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে প্রস্তাবটিকে পুনরুজ্জীবিত করা আর সম্ভব ছিল না।
মওলানা ভাসানী পাকিস্তান আমলে একবারই পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, তা-ও অত্যন্ত অল্প সময়ের জন্যই; তখনই, ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ তারিখে বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি তাঁর একমাত্র বক্তৃতাতেই বলেছিলেন, ‘আমরা কি সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের গোলাম? ব্রিটিশের গোলামি করি নাই। ন্যায়সংগত অধিকারের জন্য চিরকাল লড়াই করেছি, আজও করব। আমরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পাট উৎপাদন করব, অথচ জুট ট্যাক্স, এমনকি রেলওয়ে ট্যাক্স, ইনকাম ট্যাক্স, সেলস ট্যাক্স নিয়ে যাবে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট? এই সব ট্যাক্সের শতকরা ৭৫ ভাগ প্রদেশের জন্য রেখে বাকি অংশ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টকে দেওয়া হোক।’
আসলে লাহোর প্রস্তাবভিত্তিক পূর্ব পাকিস্তানের চিন্তাটা মওলানা ভাসানী মনোজগৎ থেকে বিদায় দিতে চানওনি। (অবশ্যই দ্বিজাতিতত্ত্ব বাদ দিয়ে) ভৌগোলিক সত্তা হিসেবে না থাকুক, ধারণা হিসেবে অবশ্যই রয়ে গেছে। কাগমারী সম্মেলনে তিনি স্বাধীন ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র কথাই বলেছিলেন। অন্য সময়েও তিনি বলতেন, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার চাই। আর ওই পূর্ব পাকিস্তানের কথা বলতেন বলেই একাত্তর সালে শরণার্থী হয়ে যখন তিনি ভারতে যান, তখন সেখানকার শাসকেরা তাঁকে নিয়ে মোটেই স্বস্তি বোধ করেননি; তাঁকে তাঁরা কার্যত আটক অবস্থাতেই রেখেছিলেন এবং ১৬ ডিসেম্বরের পরেও তাঁকে আসামে যাওয়ার অনুমতি দেননি। ’৪৭ সালের ১৪ আগস্ট যখন পাকিস্তানের অভ্যুদয় ঘটেছে, ভাসানী সেদিন আসামে ছিলেন এবং আসাম সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করে রেখেছিল; ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের মৃত্যু ঘটিয়ে বাংলাদেশের যখন অভ্যুদয় ঘটছে, এই জননেতা তখনো ওই ভারতেই এবং সেখানকার সরকার তাঁকে আবারও বাস্তবিক পক্ষে আটক করেই রেখেছিল। কারণ কিন্তু ওই একই, লাহোর প্রস্তাবের প্রতি তাঁর আনুগত্য, বাংলা ও আসামকে নিয়ে
একটি রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে তাঁর সেই কথিত চিন্তা।
উনসত্তরের অভ্যুত্থানের পর পূর্ববঙ্গকে স্বাধীন করার অত্যাবশ্যকতাটা পরিষ্কার হয়ে ওঠে; মওলানা ভাসানী তো এই দাবি অনেক দিন ধরেই করে আসছিলেন, ১৯৭০-এর নভেম্বর মাসে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পরে ২৩ নভেম্বর পল্টন ময়দানের জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি ‘পূর্ব পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে সরাসরি স্লোগান দেন এবং তাতে জনসমুদ্র থেকে বিপুল প্রতিধ্বনি ওঠে। ওই সময় স্বাধীন-সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তানের ওই দাবি পাকিস্তানপন্থীরা তো বটেই, তাঁর নিজের দলেরও কেউ কেউ সমর্থন করতে পারেননি। ন্যাপের সিনিয়র সহসভাপতি বামপন্থী নেতা হাজি মোহাম্মদ দানেশ তো ভাসানীর ভূমিকায় বিরক্ত হয়ে ‘পাকিস্তান ভিত্তিতে’ নতুন একটি দল করারই উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলে ফেলেছিলেন।
বামপন্থী সাপ্তাহিক গণশক্তি, যে পত্রিকা তাঁর একদা অনুসারীরা বের করেছিলেন এবং যার কার্যালয় উদ্বোধন করার জন্য তাঁরা ভাসানীরই শরণাপন্ন হয়েছিলেন, সেই পত্রিকা মন্তব্য করে যে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বাধীন-সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তানের আওয়াজ তুলে মওলানা ‘পূর্ব বাংলায় আবার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত’ করাতে সাহায্য করেছেন। পত্রিকাটি এ-ও মনে করেছে যে ‘আমাদের শ্রেণীবিভক্ত সমাজে শ্রেণীর প্রশ্নকে বাদ দিয়ে পূর্ব বাংলার “মুক্তি” আনার যে ধ্বনি আওয়ামী লীগ তুলেছে, সেই ধ্বনির সাথে মওলানা ভাসানীর “স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান” ধ্বনির বিশেষ কোনো তফাত নেই।’ বলার অপেক্ষা রাখে না যে ভাসানীর জন্য শ্রেণিপ্রশ্নই ছিল সবচেয়ে জরুরি। এবং যে ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র স্বাধীনতা তিনি চাইছিলেন, তা শ্রেণিপ্রশ্নকে চাপা দেওয়ার জন্য নয়, বরং জাতিপ্রশ্নের মীমাংসা করে শ্রেণিপ্রশ্নকে সামনে আনার জন্যই। বামপন্থীদের অনেকেই সেটা বুঝতে চাননি, বুঝলে এ দেশের ইতিহাস হয়তো ভিন্নভাবে লেখা হতো।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভাসানীর পক্ষে তো সোহরাওয়ার্দীর মন্ত্রিত্ব গ্রহণে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণই ছিল না; ভাসানীর পরামর্শের বিপরীতেই তিনি প্রথমে আইনমন্ত্রিত্ব, পরে প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছিলেন। শেখ মুজিবও অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আছে: ‘আমি নিজে কিছুতেই তাঁর আইনমন্ত্রী হওয়া সমর্থন করতে পারলাম না। এমনকি মনে মনে ক্ষেপে গিয়েছিলাম।’ মুজিব লিখেছেন, ‘ঢাকা থেকে করাচি রওনা হয়ে গেলাম। আমি মনকে কিছুতেই সান্ত্বনা দিতে পারছি না।...রাতে পৌঁছে আমি তাঁর সাথে দেখা করতে যাই নাই। দেখা হলে কী অবস্থা হয় বলা যায় না। আমি তাঁর সাথে বেয়াদবি করে বসতে পারি।’ পরদিন দেখা করলে সোহরাওয়ার্দী তাঁকে বলেছিলেন, ‘রাগ করেছ বোধ হয়।’ শেখ মুজিবের উত্তরটা ছিল স্পষ্ট:
‘রাগ করব কেন স্যার, ভাবছি, সারা জীবন আপনাকে নেতা মেনে ভুলই করেছি কি না?’
লাহোর প্রস্তাবের আলোচনায় ফেরত যাওয়া যাক। ১৯৫৪ সালের ২১ দফা এবং ১৯৬৬ সালের ৬ দফা—উভয় কর্মসূচিতেই লাহোর প্রস্তাবের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতির দিকটা স্থান পেয়েছে, যেটা আমরা এর আগেই উল্লেখ করেছি। ৬ দফার প্রথম দফাটিই হচ্ছে: ‘দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো এমন হতে হবে, যেখানে একটি ফেডারেশনভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ হবে এবং তার ভিত্তি হবে লাহোর প্রস্তাব।’ ৬ দফার এই প্রথম দফার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ‘আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা কর্মসূচি’ নামের পুস্তিকাটিতে যা বলা হয়েছে তা এ রকম: ‘এই দফায় বলা হইয়াছে যে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনাকরতঃ পাকিস্তানকে একটি সত্যিকারের ফেডারেশন গড়িতে হইবে। [...] ইহাতে আপত্তি কী আছে? ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচন এই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই হইয়াছিল [...] ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ববঙ্গের মুসলিম আসনের শতকরা সাড়ে ৯৭টি যে একুশ দফার পক্ষে আসিয়াছিল, লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনার দাবী ছিল তার অন্যতম প্রধান দাবী।’
এই পুস্তিকা শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রচারিত হলেও এটি লিখে দিয়েছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। এর ইংরেজি তরজমাও তাঁরই করা। আবুল মনসুর আহমদ তখন আর সক্রিয় রাজনীতিতে নেই; ৬ দফা আন্দোলনের প্রতি তাঁর যে তেমন একটা সমর্থন ছিল, তা-ও নয়; তবে তিনি লাহোর প্রস্তাবের অনুরাগী ছিলেন অবশ্যই। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন, বিশেষ করে এই মতাদর্শিক কারণে যে তাঁর মনে হয়েছে ‘বাংলাদেশে’র প্রতিষ্ঠা আসলে লাহোর প্রস্তাবেরই বাস্তবায়ন। স্মরণ করা যেতে পারে, আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে লাহোর প্রস্তাবের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের চেতনাটি কাজ করছিল বলে ধারণা করাটা মোটেই অসংগত নয়। মামলায় অভিযুক্তদের সামরিক অংশের দলনেতা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন যে ওই লাইনেই চিন্তা করতেন, তা বোঝা যায় এ ঘটনা থেকে যে আগরতলা মামলা থেকে মুক্ত হওয়ার পর তিনি যে একটি রাজনৈতিক দল গঠনে সচেষ্ট হয়েছিলেন, তার নাম অন্য কিছু রাখেননি, রেখেছিলেন ‘লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি’।
ওই সময় আগরতলা মামলায় অভিযুক্তদের কেউ কেউ যুক্ত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে, রুশপন্থী ন্যাপেও গেছেন কয়েকজন; কিন্তু মূল অংশটি ছিল মোয়াজ্জেমের সঙ্গেই। তিনি অন্য কোনো দলে যোগ না দিয়ে ‘লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি’ই গঠন করেন। এটি গঠিত হয় ১৯৭০ সালের ২৩ মার্চ। ৩০ বছর আগে ঠিক ওই দিনেই লাহোর প্রস্তাবটি উত্থাপিত ও গৃহীত হয়েছিল। লাহোর প্রস্তাব বলতে তিনি ১৯৪৬-এ জিন্নাহর উদ্যোগে বিকৃত রূপটিকে বোঝেননি, লাহোর প্রস্তাব বলতে মওলানা ভাসানী যেটিকে গণ্য করতেন সেটিকেই বুঝিয়েছেন। ভাসানীর মতোই প্রস্তাবের অন্তর্গত দ্বিজাতিতত্ত্বকে তিনি মানতেন না। আর তাঁরা যে স্বাধীন বাংলাদেশের কল্পনা করেছিলেন, সেটি ছিল সমাজতান্ত্রিক।
১৯৬৬ সালেই তাঁরা ঠিক করেছিলেন যে তাঁদের স্বাধীন রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে; সেখানে সবাইকে কাজ করতে হবে; ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকবে সরকারের মালিকানাধীন, কলকারখানা জাতীয়করণ করা হবে; প্রতিটি নাগরিকের জন্য থাকবে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার নিশ্চয়তা। রাষ্ট্রের নামও ঠিক করা হয়েছিল ‘বাংলাদেশ’। প্রকাশ্য দল গঠনের পরে মোয়াজ্জেম সময় পেয়েছিলেন মাত্র এক বছর। গণহত্যা শুরুর মুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদারেরা যাঁদের সবচেয়ে বড় দুশমন বলে চিহ্নিত করে রেখেছিল, তাঁদের মধ্যে মোয়াজ্জেমের স্থান ছিল তৃতীয়; শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের পরেই। তাঁর ওপর হানাদারদের সতর্ক চোখ ছিল। একাত্তরের ২৬ মার্চ সকালেই তারা তাঁকে আটক করে এবং কালবিলম্ব না করে প্রাণনাশ ঘটায়। মোয়াজ্জেমের হয়তো ধারণার মধ্যেই ছিল না যে পাকিস্তানি হানাদারেরা তাঁকে অতটা গুরুত্ব দেয়। ধারণা থাকলে ২৫ মার্চ রাতে তিনি নিশ্চয়ই আত্মগোপন করতেন।
মওলানা ভাসানীর বিশেষ পক্ষপাত ছিল লাহোর প্রস্তাবের প্রতি। হতে পারে এর প্রধান কারণ ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তান আন্দোলনের তিনি একজন অত্যন্ত সক্রিয় সমর্থক ছিলেন; এবং আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের দায়িত্বভার তাঁর স্কন্ধেই ছিল। তখন তিনি বাংলা ও আসামকে নিয়ে যে সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তানের কথা ভেবেছিলেন, সেই ভাবনা পরবর্তী সময়ে তাঁকে অব্যাহতি দেয়নি। তাঁর ওই পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিমদের সংখ্যাধিক্য থাকত বটে, কিন্তু তাকে তিনি একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করেননি, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবেই দেখতে চেয়েছেন, যেখানে সব সম্প্রদায়ের মানুষেরই থাকবে সমান গণতান্ত্রিক অধিকার। দেখা গেছে যে তাঁর চিন্তায় জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগ্রহ কাজ করেনি, কাজ করেছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ব্যাপারে আগ্রহ। আর পাকিস্তানকে তিনি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে কিছুতেই মেনে নিতে চাননি।
এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশন ভারতবর্ষকে তিন অংশে ভাগ করে, কেন্দ্রে অত্যন্ত সীমিত ক্ষমতা রেখে যে একটি ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটিতে লাহোর প্রস্তাবের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি ছিল না ঠিকই, কিন্তু ভারতবর্ষকে ঐক্যবদ্ধ রাখার একটা সুযোগ ছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রের হাতে থাকবে তিনটি মাত্র বিষয়: পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ। বাকি সব বিষয় থাকার কথা প্রদেশের হাতে। ভারতবর্ষকে যে তিনটি অংশে ভাগ করার প্রস্তাব ছিল, তার একটি গঠিত হতো বাংলা ও আসামকে নিয়ে। মওলানা ভাসানীর চিন্তায় পূর্বাঞ্চলের এই ধারণাও হয়তো কাজ করছিল। ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় মূলত কংগ্রেসের সেই সময়ের সভাপতি জওহরলাল নেহরুর আপত্তির কারণে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং তিন ভাগে বিভাজনে তিনি সম্মতি দেননি। পরে যখন দেখা গেল ভারতবর্ষ দুই টুকরো হয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি অবশ্য প্রস্তাবটিকে ফেরত আনা যায় কি না, সে কথা তুলেছিলেন, কিন্তু জল তত দিনে অনেক গড়িয়ে গেছে, তিক্ততা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে প্রস্তাবটিকে পুনরুজ্জীবিত করা আর সম্ভব ছিল না।
মওলানা ভাসানী পাকিস্তান আমলে একবারই পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, তা-ও অত্যন্ত অল্প সময়ের জন্যই; তখনই, ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ তারিখে বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি তাঁর একমাত্র বক্তৃতাতেই বলেছিলেন, ‘আমরা কি সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের গোলাম? ব্রিটিশের গোলামি করি নাই। ন্যায়সংগত অধিকারের জন্য চিরকাল লড়াই করেছি, আজও করব। আমরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পাট উৎপাদন করব, অথচ জুট ট্যাক্স, এমনকি রেলওয়ে ট্যাক্স, ইনকাম ট্যাক্স, সেলস ট্যাক্স নিয়ে যাবে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট? এই সব ট্যাক্সের শতকরা ৭৫ ভাগ প্রদেশের জন্য রেখে বাকি অংশ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টকে দেওয়া হোক।’
আসলে লাহোর প্রস্তাবভিত্তিক পূর্ব পাকিস্তানের চিন্তাটা মওলানা ভাসানী মনোজগৎ থেকে বিদায় দিতে চানওনি। (অবশ্যই দ্বিজাতিতত্ত্ব বাদ দিয়ে) ভৌগোলিক সত্তা হিসেবে না থাকুক, ধারণা হিসেবে অবশ্যই রয়ে গেছে। কাগমারী সম্মেলনে তিনি স্বাধীন ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র কথাই বলেছিলেন। অন্য সময়েও তিনি বলতেন, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার চাই। আর ওই পূর্ব পাকিস্তানের কথা বলতেন বলেই একাত্তর সালে শরণার্থী হয়ে যখন তিনি ভারতে যান, তখন সেখানকার শাসকেরা তাঁকে নিয়ে মোটেই স্বস্তি বোধ করেননি; তাঁকে তাঁরা কার্যত আটক অবস্থাতেই রেখেছিলেন এবং ১৬ ডিসেম্বরের পরেও তাঁকে আসামে যাওয়ার অনুমতি দেননি। ’৪৭ সালের ১৪ আগস্ট যখন পাকিস্তানের অভ্যুদয় ঘটেছে, ভাসানী সেদিন আসামে ছিলেন এবং আসাম সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করে রেখেছিল; ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের মৃত্যু ঘটিয়ে বাংলাদেশের যখন অভ্যুদয় ঘটছে, এই জননেতা তখনো ওই ভারতেই এবং সেখানকার সরকার তাঁকে আবারও বাস্তবিক পক্ষে আটক করেই রেখেছিল। কারণ কিন্তু ওই একই, লাহোর প্রস্তাবের প্রতি তাঁর আনুগত্য, বাংলা ও আসামকে নিয়ে
একটি রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে তাঁর সেই কথিত চিন্তা।
উনসত্তরের অভ্যুত্থানের পর পূর্ববঙ্গকে স্বাধীন করার অত্যাবশ্যকতাটা পরিষ্কার হয়ে ওঠে; মওলানা ভাসানী তো এই দাবি অনেক দিন ধরেই করে আসছিলেন, ১৯৭০-এর নভেম্বর মাসে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পরে ২৩ নভেম্বর পল্টন ময়দানের জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি ‘পূর্ব পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে সরাসরি স্লোগান দেন এবং তাতে জনসমুদ্র থেকে বিপুল প্রতিধ্বনি ওঠে। ওই সময় স্বাধীন-সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তানের ওই দাবি পাকিস্তানপন্থীরা তো বটেই, তাঁর নিজের দলেরও কেউ কেউ সমর্থন করতে পারেননি। ন্যাপের সিনিয়র সহসভাপতি বামপন্থী নেতা হাজি মোহাম্মদ দানেশ তো ভাসানীর ভূমিকায় বিরক্ত হয়ে ‘পাকিস্তান ভিত্তিতে’ নতুন একটি দল করারই উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলে ফেলেছিলেন।
বামপন্থী সাপ্তাহিক গণশক্তি, যে পত্রিকা তাঁর একদা অনুসারীরা বের করেছিলেন এবং যার কার্যালয় উদ্বোধন করার জন্য তাঁরা ভাসানীরই শরণাপন্ন হয়েছিলেন, সেই পত্রিকা মন্তব্য করে যে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বাধীন-সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তানের আওয়াজ তুলে মওলানা ‘পূর্ব বাংলায় আবার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত’ করাতে সাহায্য করেছেন। পত্রিকাটি এ-ও মনে করেছে যে ‘আমাদের শ্রেণীবিভক্ত সমাজে শ্রেণীর প্রশ্নকে বাদ দিয়ে পূর্ব বাংলার “মুক্তি” আনার যে ধ্বনি আওয়ামী লীগ তুলেছে, সেই ধ্বনির সাথে মওলানা ভাসানীর “স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান” ধ্বনির বিশেষ কোনো তফাত নেই।’ বলার অপেক্ষা রাখে না যে ভাসানীর জন্য শ্রেণিপ্রশ্নই ছিল সবচেয়ে জরুরি। এবং যে ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র স্বাধীনতা তিনি চাইছিলেন, তা শ্রেণিপ্রশ্নকে চাপা দেওয়ার জন্য নয়, বরং জাতিপ্রশ্নের মীমাংসা করে শ্রেণিপ্রশ্নকে সামনে আনার জন্যই। বামপন্থীদের অনেকেই সেটা বুঝতে চাননি, বুঝলে এ দেশের ইতিহাস হয়তো ভিন্নভাবে লেখা হতো।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১ দিন আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১ দিন আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১ দিন আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১ দিন আগে