শামীমা জামান
ইভানাকে দেখেছি। আত্মীয়ের ফেসবুকে। মিষ্টি একখান মুখ। সেই মুখে কোনো অসুখের ছাপ ছিল না। বলছি, ঢাকার অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল স্কলাস্টিকার ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সেলর ইভানা লায়লা চৌধুরীর কথা। স্বামীর পরকীয়া নির্যাতন সইতে না পেরে যে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। ডিভোর্সের পথে পা বাড়াতে সাহস করেনি মেয়েটা। পরিবার, মা-বাবার সামাজিক অবস্থানের কথা ভেবেই।
পরিবারে একটা ডিভোর্সি মেয়ে মানেই যেন আমাদের লজ্জার সীমা নেই। মেয়েটিকেও প্রতিটি পদক্ষেপে ডিভোর্স নামের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে করতেই জীবন পার করতে হয়। এই সব প্রতিকূলতার কারণেই সহনশীল হয়ে কত কিছু মেনে নিতে নিতে মেয়েরা তাদের জীবন পার করে। তবু ভুলেও ওই পথে পা মাড়ায় না। শারীরিক-মানসিক নির্যাতন সইতে সইতে মনের অসুখ বাঁধিয়ে ফেলে।
ইভানার ক্ষেত্রেও হয়তো তা-ই হয়েছিল। একটা বয়স থাকে, যে বয়সে ছোট ছোট কারণেও অভিমানে মরে যেতে ইচ্ছে করে। মৃত্যুকে একটা ফ্যান্টাসি হিসেবেই দেখা যায় তখন। ক্লাসের বন্ধুরা বুলি করেছে? মরে যাব। প্রথম ভালো লাগার মেয়েটি পাত্তা দিচ্ছে না, মরে যাব। মা বকা দিল? পৃথিবী আমাকে চায় না, মৃত্যুই ভালো। মনের এই ছেলেমানুষি বয়স হওয়ার পরেও থেকে গেলে সেটা আর ছেলেমানুষি নয়। শরীর-মনে সিন্দবাদের ভূতের মতো চড়ে বসা গভীর, জটিল এক ভয়ংকর রোগ। যে ‘বিপন্ন বিস্ময়’–এর কথা জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতায় ব্যক্ত করেছিলেন, সেই রোগ মেয়েদের ক্ষেত্রে বাড়তে পারে সঙ্গীর নির্যাতনে। সারতে পারে সঙ্গীর যত্নে, ভালোবাসায়। এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ আশপাশেই খুঁজে পাওয়া যাবে।
জন্মগত কারণে ডালিয়ার (ছদ্মনাম) কিছু মানসিক সমস্যা সুপ্ত অবস্থায় ছিল, বিয়ের আগ পর্যন্ত যার অস্তিত্ব কেউ টের পায়নি। বিয়ের পর একসময় স্বামীর পরকীয়ার কথা জেনে সে ভেঙে পড়ে। প্রতিবাদ করলে প্রথমে অস্বীকার, পরে ভাঁওতাবাজি, এরপর শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। নির্যাতক স্বামীকে ফেরাতে বাড়ির মুরব্বি নারীদের পরামর্শে একের পর এক সন্তান নেওয়া ও গর্ভপাত হওয়ার কারণে ডালিয়া এখন সিভিয়ার মানসিক রোগী। ঘরের এক কোণে বসে বিড়বিড় করা, কেউ ঢুকলে গালিগালাজ করে।
পরিবারের মুরব্বিরা ঘন ঘন বাচ্চা নিয়ে স্বামীকে ঘরে ফেরানোর মন্ত্রটি না দিয়ে ডিভোর্সের পথে যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারতেন। এখন তো সামাজিক লজ্জা, মেয়ের জীবন–দুই-ই গেল। দুশ্চরিত্র নির্যাতক পুরুষটি কিন্তু আরেক বিয়ে করে নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছে। তাই ‘সমাজ কী ভাবল’, ‘জাত গেল জাত গেল’—এই সব পুরোনো ধারণা ঝেড়ে ফেলতে হবে। সমাজ কেউ না। নিজে ভালো না থাকলে, নিজে শেষ হয়ে গেলে সমাজের কিছুই যাবে-আসবে না। যাবে-আসবে পরিবারের মানুষেরই। পরিবারের প্রতিটি বিবাহিত মেয়ের খোঁজখবর রাখা অবশ্য কর্তব্য।
ইভানার পরিবার তার সুন্দর হাসিমাখা মুখে আড়াল করা কষ্ট-নির্যাতনের ব্যাপারে বেখবর ছিল। এই বেখবর থাকাটাই অনেক নির্মম ঘটনার জন্ম দিতে পারে। সমাজকে বড় করে না দেখে পরিবারের সদস্যদের জীবনকেই বড় করে দেখতে হবে।
আমার বন্ধুর ছোট বোন রিমি। স্বামী মাদক, পর্নো নিয়ে এক নোংরা জীবনে অভ্যস্ত ছিল। চলত শারীরিক নির্যাতন। একসময় ড্রাইভারের সহযোগিতায় স্বামীর হাতে ছুরিকাহত হতে হতে বেঁচে যায়। সমাজ নামের অদ্ভুত গ্রহটিতে রটে যায়, মেয়েটি খারাপ, ড্রাইভারের সঙ্গে প্রেম!
সমাজের সভ্যদের কাছেই শুনলাম কথাটি। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করাতে সে বলল, ‘আমাদের তাতে কিছুই যায়-আসে না, বোন বেঁচে ফিরেছে তাতেই খুশি।’
কথাটি খুব ভালো লাগল। এভাবেই পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকতে হবে সমাজের কূট চক্ষুকে উপেক্ষা করে।
ইভানাকে দেখেছি। আত্মীয়ের ফেসবুকে। মিষ্টি একখান মুখ। সেই মুখে কোনো অসুখের ছাপ ছিল না। বলছি, ঢাকার অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল স্কলাস্টিকার ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সেলর ইভানা লায়লা চৌধুরীর কথা। স্বামীর পরকীয়া নির্যাতন সইতে না পেরে যে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। ডিভোর্সের পথে পা বাড়াতে সাহস করেনি মেয়েটা। পরিবার, মা-বাবার সামাজিক অবস্থানের কথা ভেবেই।
পরিবারে একটা ডিভোর্সি মেয়ে মানেই যেন আমাদের লজ্জার সীমা নেই। মেয়েটিকেও প্রতিটি পদক্ষেপে ডিভোর্স নামের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে করতেই জীবন পার করতে হয়। এই সব প্রতিকূলতার কারণেই সহনশীল হয়ে কত কিছু মেনে নিতে নিতে মেয়েরা তাদের জীবন পার করে। তবু ভুলেও ওই পথে পা মাড়ায় না। শারীরিক-মানসিক নির্যাতন সইতে সইতে মনের অসুখ বাঁধিয়ে ফেলে।
ইভানার ক্ষেত্রেও হয়তো তা-ই হয়েছিল। একটা বয়স থাকে, যে বয়সে ছোট ছোট কারণেও অভিমানে মরে যেতে ইচ্ছে করে। মৃত্যুকে একটা ফ্যান্টাসি হিসেবেই দেখা যায় তখন। ক্লাসের বন্ধুরা বুলি করেছে? মরে যাব। প্রথম ভালো লাগার মেয়েটি পাত্তা দিচ্ছে না, মরে যাব। মা বকা দিল? পৃথিবী আমাকে চায় না, মৃত্যুই ভালো। মনের এই ছেলেমানুষি বয়স হওয়ার পরেও থেকে গেলে সেটা আর ছেলেমানুষি নয়। শরীর-মনে সিন্দবাদের ভূতের মতো চড়ে বসা গভীর, জটিল এক ভয়ংকর রোগ। যে ‘বিপন্ন বিস্ময়’–এর কথা জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতায় ব্যক্ত করেছিলেন, সেই রোগ মেয়েদের ক্ষেত্রে বাড়তে পারে সঙ্গীর নির্যাতনে। সারতে পারে সঙ্গীর যত্নে, ভালোবাসায়। এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ আশপাশেই খুঁজে পাওয়া যাবে।
জন্মগত কারণে ডালিয়ার (ছদ্মনাম) কিছু মানসিক সমস্যা সুপ্ত অবস্থায় ছিল, বিয়ের আগ পর্যন্ত যার অস্তিত্ব কেউ টের পায়নি। বিয়ের পর একসময় স্বামীর পরকীয়ার কথা জেনে সে ভেঙে পড়ে। প্রতিবাদ করলে প্রথমে অস্বীকার, পরে ভাঁওতাবাজি, এরপর শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। নির্যাতক স্বামীকে ফেরাতে বাড়ির মুরব্বি নারীদের পরামর্শে একের পর এক সন্তান নেওয়া ও গর্ভপাত হওয়ার কারণে ডালিয়া এখন সিভিয়ার মানসিক রোগী। ঘরের এক কোণে বসে বিড়বিড় করা, কেউ ঢুকলে গালিগালাজ করে।
পরিবারের মুরব্বিরা ঘন ঘন বাচ্চা নিয়ে স্বামীকে ঘরে ফেরানোর মন্ত্রটি না দিয়ে ডিভোর্সের পথে যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারতেন। এখন তো সামাজিক লজ্জা, মেয়ের জীবন–দুই-ই গেল। দুশ্চরিত্র নির্যাতক পুরুষটি কিন্তু আরেক বিয়ে করে নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছে। তাই ‘সমাজ কী ভাবল’, ‘জাত গেল জাত গেল’—এই সব পুরোনো ধারণা ঝেড়ে ফেলতে হবে। সমাজ কেউ না। নিজে ভালো না থাকলে, নিজে শেষ হয়ে গেলে সমাজের কিছুই যাবে-আসবে না। যাবে-আসবে পরিবারের মানুষেরই। পরিবারের প্রতিটি বিবাহিত মেয়ের খোঁজখবর রাখা অবশ্য কর্তব্য।
ইভানার পরিবার তার সুন্দর হাসিমাখা মুখে আড়াল করা কষ্ট-নির্যাতনের ব্যাপারে বেখবর ছিল। এই বেখবর থাকাটাই অনেক নির্মম ঘটনার জন্ম দিতে পারে। সমাজকে বড় করে না দেখে পরিবারের সদস্যদের জীবনকেই বড় করে দেখতে হবে।
আমার বন্ধুর ছোট বোন রিমি। স্বামী মাদক, পর্নো নিয়ে এক নোংরা জীবনে অভ্যস্ত ছিল। চলত শারীরিক নির্যাতন। একসময় ড্রাইভারের সহযোগিতায় স্বামীর হাতে ছুরিকাহত হতে হতে বেঁচে যায়। সমাজ নামের অদ্ভুত গ্রহটিতে রটে যায়, মেয়েটি খারাপ, ড্রাইভারের সঙ্গে প্রেম!
সমাজের সভ্যদের কাছেই শুনলাম কথাটি। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করাতে সে বলল, ‘আমাদের তাতে কিছুই যায়-আসে না, বোন বেঁচে ফিরেছে তাতেই খুশি।’
কথাটি খুব ভালো লাগল। এভাবেই পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকতে হবে সমাজের কূট চক্ষুকে উপেক্ষা করে।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
২১ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১ দিন আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১ দিন আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১ দিন আগে