এ কে এম শামসুদ্দিন
বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে অঙ্গসংগঠনগুলোর কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততার কথা উঠলেই দেখা যায় দলের কোনো কোনো নেতা তাঁদের দোষ মোচনের চেষ্টা করে থাকেন। এসব নেতা হয়তো ভাবেন, তাঁরা যা বলেন দেশের মানুষ বুঝি তা-ই বিশ্বাস করে।
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে তাণ্ডব ঘটে গেছে, তাতে আওয়ামী লীগ সরকার কিছুটা বেকায়দায় পড়ে গেলেও পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে পেরেছে বলে অনেকের ধারণা।
বর্তমানে ইকবাল নামের একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া ঘটনা সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দিন যতই গড়াচ্ছে, কুমিল্লার ঘটনার রেশ ধরে দেশের অন্যান্য স্থানে যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে, সেসব ঘটনার রহস্যও ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে। এই দাঙ্গা-হাঙ্গামার উৎস কী? কারা এর পেছনে জড়িত? ইত্যাদি নিয়ে নানাজনের নানান রকম বিশ্লেষণ, মন্তব্য ও বক্তব্য আমরা শুনতে পাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, নতুন কোনো ইস্যু তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এসব আলোচনা-সমালোচনা আরও কিছুদিন চলবে। বর্তমান সরকারের শাসনামলে আমরা এযাবৎ যা দেখে এসেছি, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, নতুন ইস্যু তৈরি হলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার এ ঘটনা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাবে।
অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার শপথ নিয়ে যে আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ আমলেই একের পর এক এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে চলেছে, তা সত্যিই দুঃখজনক। নিজেদের অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে যতই প্রচার করুক না কেন, সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা কিন্তু শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পরপর আওয়ামী লীগের প্রথম আমল থেকেই। এবার যেমন দুর্গোৎসবের অষ্টমীর দিন পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে, তেমনি ১৯৭২ সালের দুর্গোৎসবের অষ্টমীর দিন চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হয়েছিল। হামলা হয়েছিল তৎকালীন মন্ত্রী মনোরঞ্জন ধরের বাড়ির পূজামণ্ডপেও। তার পর থেকে সব সরকারের আমলেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক এসব ঘটনার জন্য বিএনপি কিংবা সাম্প্রদায়িক শক্তিকেই শুধু দায়ী করলে চলবে না; লোকদেখানো অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কথা যাঁরা বলেন, সেই আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলোও এর জন্য কম দায়ী নয়।
সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের কথা উঠলেই সরকারি দলের নেতারা রেফারেন্স হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কথা বারবার তুলে ধরেন। লক্ষ করে দেখেছি, বর্তমান সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর যখনই কোনো অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে; ঠিক তখনই বেশ সূক্ষ্মভাবে ২০০১ সালের সাম্প্রদায়িক ঘটনার কথা উল্লেখ করে, সে তুলনায় কিছুই ঘটেনি এমন বক্তব্য দিয়ে, ঘটে যাওয়া ঘটনাকে হালকা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুর্গাপূজাকে ঘিরে কুমিল্লাসহ সারা দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর এবার যে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, তা এতই তীব্র ছিল, যা ২০০১ সালের ঘটনার সঙ্গেই তুলনা চলে।
অভিযোগ আছে, বিভিন্ন জেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কাছে সাহায্য পেয়ে সাড়া মেলেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ভেতরে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও ক্ষমতাসীন দল সাম্প্রদায়িক ঘটনায় উসকানিদাতা হিসেবে প্রতিপক্ষের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের বদনাম ঠেকাতে পারেনি। ক্ষমতাসীনেরা যে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিজেদের লোক বা সমর্থক বলে মনে করে, এবারের ঘটনায় বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নেতারাই বরং ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের প্রতি আঙুল উঁচু করে দেখিয়ে দিয়েছেন সাম্প্রতিক দাঙ্গার ঘটনার জন্য কারা দায়ী। এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দল কিছুটা ব্যাকফুটে আছে, সন্দেহ নেই। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য ক্ষমতাসীন দল ও এর অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতার নাম বেশ জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হয়েছেন। আওয়ামী লীগের উচ্চমহলের কোনো কোনো নেতা অবশ্য এ অভিযোগ গ্রহণ করতে রাজি নন। এ নিয়ে তাঁদের বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেও দেখা যাচ্ছে। উসকানিদাতা হিসেবে অবশ্য কিছু কিছু হিন্দু তরুণের নামও সামনে চলে এসেছে; যাঁরা ফেসবুকে দাঙ্গার ছবি আপলোড করে উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করছি, রংপুরের পীরগঞ্জের জেলেপল্লিতে হামলা ও আগুন দেওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কারমাইকেল কলেজ শাখার দর্শন বিভাগের সহসভাপতি মো. সৈকত মণ্ডল চিহ্নিত হলেও সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা এখন আর তাঁকে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে স্বীকার করতে রাজি নন। এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে বেশ সোচ্চার দেখা যাচ্ছে। তিনি দেশের বিভিন্ন মিডিয়া ও অনুষ্ঠানে সৈকত মণ্ডল সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সত্যের অপলাপ মাত্র। তিনি অতিসম্প্রতি কলকাতার এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সেখানকার এক দৈনিক পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দেন। পত্রিকার সাংবাদিক পীরগঞ্জের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতারা জড়িত আছেন বলে বাংলাদেশের মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে; এ ব্যাপারে মন্ত্রীর কী বক্তব্য, জানতে চাইলে উত্তরে হাছান মাহমুদ সরাসরি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং নির্দ্বিধায় বলেন, ছাত্রলীগের সেই নেতাকে নাকি ঘটনার অনেক আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। অথচ বাস্তবতা হলো, কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের গত ১৮ অক্টোবরের এক বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, পীরগঞ্জের হামলার পরদিন দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে! শুধু তা-ই নয়, ছাত্রলীগ নেতা সৈকত মণ্ডলের সম্পৃক্ততার কারণে কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের অন্য নেতা-কর্মীরাও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন, ফলে গত ২৪ অক্টোবর রংপুর ছাত্রলীগের মহানগর কমিটি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগ কমিটিই বিলুপ্ত করে দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে অবশ্য কারণ হিসেবে কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণের কথা বলা হয়েছে।
দেশের সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, অপরাধ করে ধরা খাওয়ার পর আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনগুলোর এমন বহিষ্কার সংস্কৃতি আর কতকাল চলবে? বাল্যকালে স্কুলশিক্ষকেরা আমাদের একটি ইংরেজি প্রবাদবাক্য পড়িয়েছিলেন, Prevention is better than Cure, আমার বিশ্বাস, রাজনীতির অলিগলি ঘুরে বড় হওয়া যেসব নেতা, বিভিন্ন মিডিয়ায় দলের পক্ষে প্রায়ই বক্তব্য রাখেন, তাঁরাও তাঁদের বাল্যকালে এ প্রবাদবাক্যটি পড়েছিলেন। বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে অঙ্গসংগঠনগুলোর কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততার কথা উঠলেই দেখা যায়, দলের কোনো কোনো নেতা তাঁদের দোষ মোচনের চেষ্টা করে থাকেন। এসব নেতা হয়তো ভাবেন, তাঁরা যা বলেন দেশের মানুষ বুঝি তা-ই বিশ্বাস করে। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন কথা বলে।
সাধারণ মানুষ আজকাল তাঁদের কথায় আর আস্থা রাখতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে একটি গ্রাম্য বচনের কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে, ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’ কি এত সহজ?
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কথার ফুলঝুরি দিয়ে যতই অঙ্গসংগঠনের কেলেঙ্কারি ঢাকার চেষ্টা করুন না কেন, তাঁদের কপালে কলঙ্কের যে তিলক পড়েছে, তা সম্ভবত এত সহজে মুছে যাওয়ার নয়। অপরাধ করার পর, এসব নেতার মুখে অপরাধীদের সম্পর্কে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, ‘ওরা আমাদের কেউ নয়। ওরা বহিরাগত। ওরা সুপরিকল্পিতভাবে দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের ষড়যন্ত্র করছে।’ অতঃপর অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করেই তাঁদের দায় এড়াতে চান। প্রশ্ন হলো, এত দিন পরও এসব বহিরাগতকে চিহ্নিত করে দলছাড়া করা হচ্ছে না কেন?
এ প্রসঙ্গে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ২০১৯ সালে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির পরও বলা হয়েছিল, ‘ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কমিটিতে বহিরাগত বেশি। এমনকি শিবিরের ছেলেরাও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্বে চলে এসেছে।’ আওয়ামী লীগেও বিএনপির লোকজন ঢুকে পড়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে দলের বহিরাগত ও দুর্নীতিবাজদের তালিকা করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোতে এখন দুর্নীতিবাজ ও অনুপ্রবেশকারীদের বিদায় করার প্রক্রিয়া চলছে। সে অনুসারে উপজেলা পর্যায় থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকাও সংগ্রহ করা হয়েছিল। সে সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, ‘অপরাধী ও অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা এবার এদের কাউকেই আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কোনো কমিটিতে ঠাঁই দেব না।’ দুই বছর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া কথা অনুযায়ী এখন তো কোনো অনুপ্রবেশকারী থাকার কথা নয়।
এখন কোনো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে অপরাধী দলের কেউ নয়, ওরা অনুপ্রবেশকারী বলে আওয়ামী লীগের নেতারা যে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে থাকেন; প্রশ্ন হচ্ছে, এরা তাহলে কোন অনুপ্রবেশকারী?
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপের ঘটনার রেশ ধরে সারা দেশে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল, সে প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। এবারের দাঙ্গার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, প্রশাসনের নির্লিপ্ততা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তারা সেই ভূমিকা পালন করেনি।
৩১ অক্টোবরের আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত শিরোনামই তার প্রমাণ দেয়। শিরোনামটি হলো, ‘৯৯৯-এ শত শত ফোন ঠেকানো যায়নি হামলা’। হিন্দুধর্মাবলম্বী অনেক নেতা এবং দেশের প্রগতিশীল অনেক ব্যক্তিত্বের দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানা গেছে, তাঁদের অনেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য চেয়ে হামলায় আক্রান্ত জেলার ডিসি-এসপিদের টেলিফোন করে পাননি। যদিও কোথাও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সাড়া দিয়েছেন, দেখা গেছে তাঁদের পৌঁছানোর আগেই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে একাধিক মন্দির, আগুনে পুড়ে গেছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর। হাজার হাজার মানুষ জীবন বাঁচাতে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব হামলায় আওয়ামী লীগের কেউ কেউ জড়িত হওয়ার পরও ‘তারা জড়িত নয়’ বলে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মন্ত্রী ও নেতা বিবৃতি দিয়ে তাঁদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করলেও ক্ষমতাসীন হয়ে, সংখ্যালঘু হিন্দুদের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে যে ব্যর্থ হয়েছে, সেই ব্যর্থতার দায় তারা এড়াবে কী করে? নিজ দলের কেউ যদি অপরাধ করেও থাকে, দলের ভাবমূর্তি রক্ষার নামে মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে বরং দায় স্বীকার করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তা না করে দল থেকে বহিষ্কার করে ‘অপরাধী এখন দলের কেউ নয়’ বলে হাতসাফাই করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই।
দেশের বর্তমান রাজনীতির ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে, তাদের এ ধরনের বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে নিজেদের দুর্বলতা দেখানোর কোনো মানে হয় না। ওসব বক্তৃতা-বিবৃতিতে কাজ হবে না। ডিজিটালের এই যুগে মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। অপরাধীদের বহিষ্কারে হাতসাফাই হয়ে গেছে ভাবলে ভুল হবে। মানুষ এখন সহজেই সব বুঝতে পারে। এখন আর দায় এড়ানোর উপায় নেই। এসব সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের কষ্ট লাঘব করতে হলে, প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতেই হবে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট
বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে অঙ্গসংগঠনগুলোর কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততার কথা উঠলেই দেখা যায় দলের কোনো কোনো নেতা তাঁদের দোষ মোচনের চেষ্টা করে থাকেন। এসব নেতা হয়তো ভাবেন, তাঁরা যা বলেন দেশের মানুষ বুঝি তা-ই বিশ্বাস করে।
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে তাণ্ডব ঘটে গেছে, তাতে আওয়ামী লীগ সরকার কিছুটা বেকায়দায় পড়ে গেলেও পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে পেরেছে বলে অনেকের ধারণা।
বর্তমানে ইকবাল নামের একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া ঘটনা সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দিন যতই গড়াচ্ছে, কুমিল্লার ঘটনার রেশ ধরে দেশের অন্যান্য স্থানে যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে, সেসব ঘটনার রহস্যও ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে। এই দাঙ্গা-হাঙ্গামার উৎস কী? কারা এর পেছনে জড়িত? ইত্যাদি নিয়ে নানাজনের নানান রকম বিশ্লেষণ, মন্তব্য ও বক্তব্য আমরা শুনতে পাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, নতুন কোনো ইস্যু তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এসব আলোচনা-সমালোচনা আরও কিছুদিন চলবে। বর্তমান সরকারের শাসনামলে আমরা এযাবৎ যা দেখে এসেছি, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, নতুন ইস্যু তৈরি হলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার এ ঘটনা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাবে।
অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার শপথ নিয়ে যে আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ আমলেই একের পর এক এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে চলেছে, তা সত্যিই দুঃখজনক। নিজেদের অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে যতই প্রচার করুক না কেন, সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা কিন্তু শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পরপর আওয়ামী লীগের প্রথম আমল থেকেই। এবার যেমন দুর্গোৎসবের অষ্টমীর দিন পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে, তেমনি ১৯৭২ সালের দুর্গোৎসবের অষ্টমীর দিন চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হয়েছিল। হামলা হয়েছিল তৎকালীন মন্ত্রী মনোরঞ্জন ধরের বাড়ির পূজামণ্ডপেও। তার পর থেকে সব সরকারের আমলেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক এসব ঘটনার জন্য বিএনপি কিংবা সাম্প্রদায়িক শক্তিকেই শুধু দায়ী করলে চলবে না; লোকদেখানো অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কথা যাঁরা বলেন, সেই আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলোও এর জন্য কম দায়ী নয়।
সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের কথা উঠলেই সরকারি দলের নেতারা রেফারেন্স হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কথা বারবার তুলে ধরেন। লক্ষ করে দেখেছি, বর্তমান সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর যখনই কোনো অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে; ঠিক তখনই বেশ সূক্ষ্মভাবে ২০০১ সালের সাম্প্রদায়িক ঘটনার কথা উল্লেখ করে, সে তুলনায় কিছুই ঘটেনি এমন বক্তব্য দিয়ে, ঘটে যাওয়া ঘটনাকে হালকা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুর্গাপূজাকে ঘিরে কুমিল্লাসহ সারা দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর এবার যে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, তা এতই তীব্র ছিল, যা ২০০১ সালের ঘটনার সঙ্গেই তুলনা চলে।
অভিযোগ আছে, বিভিন্ন জেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কাছে সাহায্য পেয়ে সাড়া মেলেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ভেতরে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও ক্ষমতাসীন দল সাম্প্রদায়িক ঘটনায় উসকানিদাতা হিসেবে প্রতিপক্ষের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের বদনাম ঠেকাতে পারেনি। ক্ষমতাসীনেরা যে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিজেদের লোক বা সমর্থক বলে মনে করে, এবারের ঘটনায় বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নেতারাই বরং ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের প্রতি আঙুল উঁচু করে দেখিয়ে দিয়েছেন সাম্প্রতিক দাঙ্গার ঘটনার জন্য কারা দায়ী। এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দল কিছুটা ব্যাকফুটে আছে, সন্দেহ নেই। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য ক্ষমতাসীন দল ও এর অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতার নাম বেশ জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হয়েছেন। আওয়ামী লীগের উচ্চমহলের কোনো কোনো নেতা অবশ্য এ অভিযোগ গ্রহণ করতে রাজি নন। এ নিয়ে তাঁদের বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেও দেখা যাচ্ছে। উসকানিদাতা হিসেবে অবশ্য কিছু কিছু হিন্দু তরুণের নামও সামনে চলে এসেছে; যাঁরা ফেসবুকে দাঙ্গার ছবি আপলোড করে উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করছি, রংপুরের পীরগঞ্জের জেলেপল্লিতে হামলা ও আগুন দেওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কারমাইকেল কলেজ শাখার দর্শন বিভাগের সহসভাপতি মো. সৈকত মণ্ডল চিহ্নিত হলেও সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা এখন আর তাঁকে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে স্বীকার করতে রাজি নন। এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে বেশ সোচ্চার দেখা যাচ্ছে। তিনি দেশের বিভিন্ন মিডিয়া ও অনুষ্ঠানে সৈকত মণ্ডল সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সত্যের অপলাপ মাত্র। তিনি অতিসম্প্রতি কলকাতার এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সেখানকার এক দৈনিক পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দেন। পত্রিকার সাংবাদিক পীরগঞ্জের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতারা জড়িত আছেন বলে বাংলাদেশের মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে; এ ব্যাপারে মন্ত্রীর কী বক্তব্য, জানতে চাইলে উত্তরে হাছান মাহমুদ সরাসরি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং নির্দ্বিধায় বলেন, ছাত্রলীগের সেই নেতাকে নাকি ঘটনার অনেক আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। অথচ বাস্তবতা হলো, কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের গত ১৮ অক্টোবরের এক বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, পীরগঞ্জের হামলার পরদিন দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে! শুধু তা-ই নয়, ছাত্রলীগ নেতা সৈকত মণ্ডলের সম্পৃক্ততার কারণে কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের অন্য নেতা-কর্মীরাও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন, ফলে গত ২৪ অক্টোবর রংপুর ছাত্রলীগের মহানগর কমিটি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগ কমিটিই বিলুপ্ত করে দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে অবশ্য কারণ হিসেবে কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণের কথা বলা হয়েছে।
দেশের সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, অপরাধ করে ধরা খাওয়ার পর আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনগুলোর এমন বহিষ্কার সংস্কৃতি আর কতকাল চলবে? বাল্যকালে স্কুলশিক্ষকেরা আমাদের একটি ইংরেজি প্রবাদবাক্য পড়িয়েছিলেন, Prevention is better than Cure, আমার বিশ্বাস, রাজনীতির অলিগলি ঘুরে বড় হওয়া যেসব নেতা, বিভিন্ন মিডিয়ায় দলের পক্ষে প্রায়ই বক্তব্য রাখেন, তাঁরাও তাঁদের বাল্যকালে এ প্রবাদবাক্যটি পড়েছিলেন। বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে অঙ্গসংগঠনগুলোর কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততার কথা উঠলেই দেখা যায়, দলের কোনো কোনো নেতা তাঁদের দোষ মোচনের চেষ্টা করে থাকেন। এসব নেতা হয়তো ভাবেন, তাঁরা যা বলেন দেশের মানুষ বুঝি তা-ই বিশ্বাস করে। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন কথা বলে।
সাধারণ মানুষ আজকাল তাঁদের কথায় আর আস্থা রাখতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে একটি গ্রাম্য বচনের কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে, ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’ কি এত সহজ?
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কথার ফুলঝুরি দিয়ে যতই অঙ্গসংগঠনের কেলেঙ্কারি ঢাকার চেষ্টা করুন না কেন, তাঁদের কপালে কলঙ্কের যে তিলক পড়েছে, তা সম্ভবত এত সহজে মুছে যাওয়ার নয়। অপরাধ করার পর, এসব নেতার মুখে অপরাধীদের সম্পর্কে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, ‘ওরা আমাদের কেউ নয়। ওরা বহিরাগত। ওরা সুপরিকল্পিতভাবে দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের ষড়যন্ত্র করছে।’ অতঃপর অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করেই তাঁদের দায় এড়াতে চান। প্রশ্ন হলো, এত দিন পরও এসব বহিরাগতকে চিহ্নিত করে দলছাড়া করা হচ্ছে না কেন?
এ প্রসঙ্গে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ২০১৯ সালে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির পরও বলা হয়েছিল, ‘ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কমিটিতে বহিরাগত বেশি। এমনকি শিবিরের ছেলেরাও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্বে চলে এসেছে।’ আওয়ামী লীগেও বিএনপির লোকজন ঢুকে পড়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে দলের বহিরাগত ও দুর্নীতিবাজদের তালিকা করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোতে এখন দুর্নীতিবাজ ও অনুপ্রবেশকারীদের বিদায় করার প্রক্রিয়া চলছে। সে অনুসারে উপজেলা পর্যায় থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকাও সংগ্রহ করা হয়েছিল। সে সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, ‘অপরাধী ও অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা এবার এদের কাউকেই আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কোনো কমিটিতে ঠাঁই দেব না।’ দুই বছর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া কথা অনুযায়ী এখন তো কোনো অনুপ্রবেশকারী থাকার কথা নয়।
এখন কোনো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে অপরাধী দলের কেউ নয়, ওরা অনুপ্রবেশকারী বলে আওয়ামী লীগের নেতারা যে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে থাকেন; প্রশ্ন হচ্ছে, এরা তাহলে কোন অনুপ্রবেশকারী?
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপের ঘটনার রেশ ধরে সারা দেশে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল, সে প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। এবারের দাঙ্গার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, প্রশাসনের নির্লিপ্ততা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তারা সেই ভূমিকা পালন করেনি।
৩১ অক্টোবরের আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত শিরোনামই তার প্রমাণ দেয়। শিরোনামটি হলো, ‘৯৯৯-এ শত শত ফোন ঠেকানো যায়নি হামলা’। হিন্দুধর্মাবলম্বী অনেক নেতা এবং দেশের প্রগতিশীল অনেক ব্যক্তিত্বের দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানা গেছে, তাঁদের অনেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য চেয়ে হামলায় আক্রান্ত জেলার ডিসি-এসপিদের টেলিফোন করে পাননি। যদিও কোথাও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সাড়া দিয়েছেন, দেখা গেছে তাঁদের পৌঁছানোর আগেই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে একাধিক মন্দির, আগুনে পুড়ে গেছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর। হাজার হাজার মানুষ জীবন বাঁচাতে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব হামলায় আওয়ামী লীগের কেউ কেউ জড়িত হওয়ার পরও ‘তারা জড়িত নয়’ বলে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মন্ত্রী ও নেতা বিবৃতি দিয়ে তাঁদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করলেও ক্ষমতাসীন হয়ে, সংখ্যালঘু হিন্দুদের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে যে ব্যর্থ হয়েছে, সেই ব্যর্থতার দায় তারা এড়াবে কী করে? নিজ দলের কেউ যদি অপরাধ করেও থাকে, দলের ভাবমূর্তি রক্ষার নামে মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে বরং দায় স্বীকার করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তা না করে দল থেকে বহিষ্কার করে ‘অপরাধী এখন দলের কেউ নয়’ বলে হাতসাফাই করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই।
দেশের বর্তমান রাজনীতির ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে, তাদের এ ধরনের বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে নিজেদের দুর্বলতা দেখানোর কোনো মানে হয় না। ওসব বক্তৃতা-বিবৃতিতে কাজ হবে না। ডিজিটালের এই যুগে মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। অপরাধীদের বহিষ্কারে হাতসাফাই হয়ে গেছে ভাবলে ভুল হবে। মানুষ এখন সহজেই সব বুঝতে পারে। এখন আর দায় এড়ানোর উপায় নেই। এসব সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের কষ্ট লাঘব করতে হলে, প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতেই হবে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১১ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১২ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১২ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১২ ঘণ্টা আগে