এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর জন্ম। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হওয়ায় শৈশব ও কৈশোরে বাবার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা তিনি খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছেন। বাবা মুজিবের কাছ থেকে পাওয়া অসীম ধৈর্য ও সাহস টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া এক সাধারণ মেয়ে শেখ হাসিনাকে আজ জননেত্রীর আসনে বসিয়েছে। শেখ হাসিনা আজ কেবল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তাঁকে বিশ্বনেতার মর্যাদায় আসীন করেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতার তালিকায় তিনি নিজেকে প্রথম সারিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রথম স্বাধীনতা বার্ষিকী উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে বেতার-টেলিভিশন ভাষণে বলেছিলেন, ‘শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে চাই। সে বাংলায় আগামী দিনের মায়েরা হাসবে—শিশুরা খেলবে। আমরা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলব। ১৯৭৫-এর ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগটি দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর বাঙালি জাতি নিমজ্জিত হয় এক গহিন অন্ধকারে। জাতির এক মহা সংকটকালে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন। স্বজন হারানোর ব্যথা বুকে চেপে তিনি বাবার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিলেন। সেদিন রাজনীতিতে শেখ হাসিনার আবির্ভাব কোটি মানুষের হৃদয়ে স্বস্তি এনে দিয়েছিল। একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় পেরিয়ে এসে জাতি পেয়েছিল নতুন আলোর সন্ধান। বাবার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন, তখন শেখ হাসিনার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নেমে তিনি বলেছিলেন, তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জনগণের পাশে থাকতে চান। সেই থেকে শেখ হাসিনার দেশ গড়ার সংগ্রাম শুরু হয়, যা আজও অব্যাহত।
শেখ হাসিনার একটি বড় গুণ হচ্ছে, তিনি যা বলেন তা করে দেখান। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’-এর অঙ্গীকার করেন। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে তাঁর সরকারের গৃহীত নীতিগুলো জনমনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, বাংলার মাটিতে সন্ত্রাসবাদের স্থান নেই। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে ভয়েস অব আমেরিকায় এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার আত্মীয়-পরিজন আমি দেখতে চাই না। কে কত বেশি উচ্চবিত্ত, সেটা আমি দেখতে চাই না। অনিয়ম যেখানে আছে, দুর্নীতি যেখানে আছে, বা আমাদের দেশকে ফাঁকি দিয়ে যারা কিছু করতে চাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী ও অগ্রগতিশীল উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের যে-কয়টা বড় অর্জন, তার প্রায় সবগুলো অর্জিত হয়েছে শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে। বিশ্বব্যাংকের নাটকীয়তা ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের দৃঢ় সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রমাণ। সামরিক শাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দু-দশক ধরে বিদ্যমান পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চরম সহিংস ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদন, ছিটমহল বিনিময়, সমুদ্র বিজয়, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট স্থাপন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলো শেখ হাসিনার সাহসী ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের উদাহরণ। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করে তিনি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন।
দারিদ্র্য দূর করে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন ও কর্মের প্রধান লক্ষ্য। বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন। হেনরি কিসিঞ্জারের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আজ অর্থনৈতিক সূচকে উপমহাদেশের একটি সমৃদ্ধিশালী দেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে যে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে, তা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই।
বর্তমানে দেশের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। নারী ও গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে। বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের মানবসম্পদ সূচক অনুযায়ী ১৫৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬ তম। যেখানে ভারত ও পাকিস্তান যথাক্রমে ১১৫ ও ১৩৪ তম অবস্থানে রয়েছে। গত ১০ বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৫৩৮ ডলার থেকে ১৭৫১ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ব্রিটিশ পত্রিকা স্পেকটেটর ইনডেক্সের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ মাথাপিছু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গত পাঁচ বছরে চীন ও ভারতের সমানতালে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আজ উপমহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে উন্নীত হয়েছে। নারী ও গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে ব্যাপক হারে। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত পদক্ষেপ জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।
রাজনীতি করার সুবাদে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। আমি উপলব্ধি করেছি শেখ হাসিনার ভেতরে এমন এক মানবিক সত্তা আছে, যা তাঁকে বিশ্বের অন্য নেতাদের থেকে আলাদা করেছে। তিনি আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেছেন আজীবন। আমাদের সৌভাগ্য যে, এমন একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতা পেয়েছি। রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অদ্বিতীয়।
বহুদর্শী মানবিক নেতৃত্বের উৎকৃষ্ট উদাহরণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। প্রখর স্মৃতিশক্তি, ধৈর্য, মানবিক মূল্যবোধ ও দলীয় কর্মীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা শেখ হাসিনাকে অনন্য নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছে। শেখ হাসিনার কাছে দলের প্রতিটি কর্মীই পরিচিত। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মীকে নাম ধরে ডাকেন তিনি, যা আমাকে বিস্মিত করে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানুষের কাছে যেমন জনপ্রিয়, একই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের কাছেও একজন সফল নেতা। কেবল বাংলাদেশের একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই নন, মানবিক বিশ্বের এক মহান নেতা হিসেবেও তিনি বিশ্বে সুপরিচিত হয়েছেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি মানবিক আচরণ করে বিশ্ব গণমাধ্যমে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে প্রশংসিত শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে পরিচিত হয়েছে মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে।
শেখ হাসিনা বারবার মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বারবার হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে তাঁকে দমিয়ে রাখার অপপ্রয়াস চালায় ঘাতকেরা। কিন্তু অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। অসীম সাহসী বাবার মতোই দেশপ্রেমিক এই নেত্রী অসংখ্য প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি এই আদর্শ নিয়ে জনগণের সেবক হিসেবে রাজনীতি করে যাচ্ছি।’ বারবার মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া নেতৃত্ব বর্তমান বিশ্বে বিরল। রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণই হচ্ছে তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মানবিক গুণাবলির বিবেচনায় বিশ্বের নামকরা ডজনখানেক বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। দেশি-বিদেশি বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে ইউনেসকো কর্তৃক ‘শান্তিবৃক্ষ’ এবং ২০১৫ সালে জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচিতে তিনি ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত হন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এ দেশে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব। সুখী ও সমৃদ্ধিশালী আগামীর বাংলাদেশ গঠনে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তিনি বাংলাদেশের নিপীড়িত, নিষ্পেষিত, দুঃখী মানুষের আশ্রয়স্থল। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হবে।
এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী: চেয়ারম্যান, সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ, নোয়াখালী এবং সভাপতি, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর জন্ম। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হওয়ায় শৈশব ও কৈশোরে বাবার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা তিনি খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছেন। বাবা মুজিবের কাছ থেকে পাওয়া অসীম ধৈর্য ও সাহস টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া এক সাধারণ মেয়ে শেখ হাসিনাকে আজ জননেত্রীর আসনে বসিয়েছে। শেখ হাসিনা আজ কেবল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তাঁকে বিশ্বনেতার মর্যাদায় আসীন করেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতার তালিকায় তিনি নিজেকে প্রথম সারিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রথম স্বাধীনতা বার্ষিকী উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে বেতার-টেলিভিশন ভাষণে বলেছিলেন, ‘শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে চাই। সে বাংলায় আগামী দিনের মায়েরা হাসবে—শিশুরা খেলবে। আমরা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলব। ১৯৭৫-এর ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগটি দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর বাঙালি জাতি নিমজ্জিত হয় এক গহিন অন্ধকারে। জাতির এক মহা সংকটকালে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন। স্বজন হারানোর ব্যথা বুকে চেপে তিনি বাবার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিলেন। সেদিন রাজনীতিতে শেখ হাসিনার আবির্ভাব কোটি মানুষের হৃদয়ে স্বস্তি এনে দিয়েছিল। একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় পেরিয়ে এসে জাতি পেয়েছিল নতুন আলোর সন্ধান। বাবার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন, তখন শেখ হাসিনার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নেমে তিনি বলেছিলেন, তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জনগণের পাশে থাকতে চান। সেই থেকে শেখ হাসিনার দেশ গড়ার সংগ্রাম শুরু হয়, যা আজও অব্যাহত।
শেখ হাসিনার একটি বড় গুণ হচ্ছে, তিনি যা বলেন তা করে দেখান। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’-এর অঙ্গীকার করেন। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে তাঁর সরকারের গৃহীত নীতিগুলো জনমনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, বাংলার মাটিতে সন্ত্রাসবাদের স্থান নেই। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে ভয়েস অব আমেরিকায় এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার আত্মীয়-পরিজন আমি দেখতে চাই না। কে কত বেশি উচ্চবিত্ত, সেটা আমি দেখতে চাই না। অনিয়ম যেখানে আছে, দুর্নীতি যেখানে আছে, বা আমাদের দেশকে ফাঁকি দিয়ে যারা কিছু করতে চাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী ও অগ্রগতিশীল উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের যে-কয়টা বড় অর্জন, তার প্রায় সবগুলো অর্জিত হয়েছে শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে। বিশ্বব্যাংকের নাটকীয়তা ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের দৃঢ় সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রমাণ। সামরিক শাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দু-দশক ধরে বিদ্যমান পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চরম সহিংস ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদন, ছিটমহল বিনিময়, সমুদ্র বিজয়, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট স্থাপন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলো শেখ হাসিনার সাহসী ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের উদাহরণ। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করে তিনি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন।
দারিদ্র্য দূর করে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন ও কর্মের প্রধান লক্ষ্য। বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন। হেনরি কিসিঞ্জারের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আজ অর্থনৈতিক সূচকে উপমহাদেশের একটি সমৃদ্ধিশালী দেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে যে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে, তা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই।
বর্তমানে দেশের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। নারী ও গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে। বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের মানবসম্পদ সূচক অনুযায়ী ১৫৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬ তম। যেখানে ভারত ও পাকিস্তান যথাক্রমে ১১৫ ও ১৩৪ তম অবস্থানে রয়েছে। গত ১০ বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৫৩৮ ডলার থেকে ১৭৫১ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ব্রিটিশ পত্রিকা স্পেকটেটর ইনডেক্সের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ মাথাপিছু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গত পাঁচ বছরে চীন ও ভারতের সমানতালে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আজ উপমহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে উন্নীত হয়েছে। নারী ও গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে ব্যাপক হারে। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত পদক্ষেপ জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।
রাজনীতি করার সুবাদে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। আমি উপলব্ধি করেছি শেখ হাসিনার ভেতরে এমন এক মানবিক সত্তা আছে, যা তাঁকে বিশ্বের অন্য নেতাদের থেকে আলাদা করেছে। তিনি আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেছেন আজীবন। আমাদের সৌভাগ্য যে, এমন একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতা পেয়েছি। রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অদ্বিতীয়।
বহুদর্শী মানবিক নেতৃত্বের উৎকৃষ্ট উদাহরণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। প্রখর স্মৃতিশক্তি, ধৈর্য, মানবিক মূল্যবোধ ও দলীয় কর্মীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা শেখ হাসিনাকে অনন্য নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছে। শেখ হাসিনার কাছে দলের প্রতিটি কর্মীই পরিচিত। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মীকে নাম ধরে ডাকেন তিনি, যা আমাকে বিস্মিত করে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানুষের কাছে যেমন জনপ্রিয়, একই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের কাছেও একজন সফল নেতা। কেবল বাংলাদেশের একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই নন, মানবিক বিশ্বের এক মহান নেতা হিসেবেও তিনি বিশ্বে সুপরিচিত হয়েছেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি মানবিক আচরণ করে বিশ্ব গণমাধ্যমে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে প্রশংসিত শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে পরিচিত হয়েছে মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে।
শেখ হাসিনা বারবার মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বারবার হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে তাঁকে দমিয়ে রাখার অপপ্রয়াস চালায় ঘাতকেরা। কিন্তু অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। অসীম সাহসী বাবার মতোই দেশপ্রেমিক এই নেত্রী অসংখ্য প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি এই আদর্শ নিয়ে জনগণের সেবক হিসেবে রাজনীতি করে যাচ্ছি।’ বারবার মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া নেতৃত্ব বর্তমান বিশ্বে বিরল। রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণই হচ্ছে তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মানবিক গুণাবলির বিবেচনায় বিশ্বের নামকরা ডজনখানেক বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। দেশি-বিদেশি বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে ইউনেসকো কর্তৃক ‘শান্তিবৃক্ষ’ এবং ২০১৫ সালে জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচিতে তিনি ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত হন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এ দেশে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব। সুখী ও সমৃদ্ধিশালী আগামীর বাংলাদেশ গঠনে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তিনি বাংলাদেশের নিপীড়িত, নিষ্পেষিত, দুঃখী মানুষের আশ্রয়স্থল। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হবে।
এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী: চেয়ারম্যান, সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ, নোয়াখালী এবং সভাপতি, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১ দিন আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১ দিন আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১ দিন আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১ দিন আগে