ফজলুল কবির
‘ধর্ষণ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘পীড়ন’, ‘নির্যাতন’, ‘অত্যাচার’। এর শিকার যে কেউ হতে পারে। অর্থটি বুঝতে হলে দু-একটি উদাহরণের দিকে তাকালেই চলে। যেমন, প্রজা-ধর্ষণ। প্রয়োগ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো এক পীড়নমূলক শাসনব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে। আর এই প্রজা-ধর্ষণের ক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল ঊহ্য থাকলেও যেহেতু রাজার দিকেই, সেহেতু এর প্রতিকার মেলা নিয়েও আছে সংশয়। এত কথা সামনে আসছে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহারের দেওয়া সাম্প্রতিক এক রায়ের প্রেক্ষাপটে।
সময়ের সঙ্গে ‘ধর্ষণ’ শব্দের প্রয়োগ আর সর্বজনীন থাকেনি। এটি ক্রমেই নারীর সঙ্গে লেপ্টে গেছে। আর এটি কীভাবে হয়েছে, তা মানুষের ইতিহাস পাঠ করলেই বোঝা যাবে। দেশ-কালভেদে নারীর নির্যাতিত হওয়ার ভবিতব্য পাল্টায়নি। বরং এই নির্যাতনের ধরনে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন বিষয়। শারীরিক নির্যাতনের নানা রকমফের তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে যৌন নির্যাতন, যার বিশেষ একটি ধরনকে বলা হচ্ছে ধর্ষণ। এই যে নারীর লৈঙ্গিক পরিচয়ের সঙ্গে ধর্ষণ শব্দের সেঁটে যাওয়া এ থেকেই বোঝা যায়, সমাজ বা রাষ্ট্রকাঠামো কতটা পুরুষতান্ত্রিক। এই পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোরই সর্বশেষ মঞ্চায়ন বলা যায় মোসাম্মৎ কামরুন্নাহারের রায়কে।
রায়টি এসেছে গত বৃহস্পতিবার। রায়ে রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের মামলায় পাঁচ আসামির সবাই খালাস পেয়েছেন। দোষী সাব্যস্ত হওয়া বা না হওয়া এবং কোনো মামলায় আসামিরা শাস্তির আওতায় আসবেন কি না, এলে কতটা নাকি বেকসুর খালাস পাবেন, তা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ারের বিষয়। এ সম্পর্কিত শুনানিতে যথাযথ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত তাঁর রায় জানাবেন—এ নিয়ে অন্য কারও কিছু বলার সুযোগ নেই। কেউ তা বলছেও না। কিন্তু কথা উঠছে রায় ঘোষণার সময় আদালতের দেওয়া একটি পর্যবেক্ষণ নিয়ে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা ৭২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর আর আলামত থাকে না। এ সময়ের পর ধর্ষণের শিকার কেউ মামলা করতে গেলে পুলিশকে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে মামলা নিতে হবে। ধর্ষণের আলামত না পেলে পুলিশ যেন কোনো মামলা গ্রহণ না করে। এ ধরনের মামলায় আদালতের সময় নষ্ট হয়।’
প্রসঙ্গত, ধর্ষণের ঘটনার ৩৮ দিন পর ২০১৭ সালের ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে ধর্ষণের মামলা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। মামলার এজাহারে বলা হয়, আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ জন্মদিনের পার্টিতে অংশ নিতে গিয়ে তাঁরা দুজন ধর্ষণের শিকার হন। ২০১৮ সালের ৮ জুন পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার আদালতের রায়ে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলেসহ পাঁচ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় এই পর্যবেক্ষণ।
স্বাভাবিকভাবেই এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে সমালোচনামুখর হয়েছেন নারী সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, পুলিশ, আইনজীবী এমনকি রাজনীতিকেরাও। তাঁরা বলছেন, আদালত এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে অপরাধীদের সহজে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হবে। ধর্ষণের ঘটনাও বাড়বে। কেউ কেউ মামলার রায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানের প্রভাব রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। সংক্ষুব্ধ যে কেউ এমন অভিযোগ তুলতে পারেন। সে বিষয়টি এড়িয়েও সরাসরি রায়ের সঙ্গে দেওয়া বিচারকের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে। বিশেষত যখন এই রায় এসেছে এমন একটি দেশে, যেখানে ক্রমবর্ধমান হারে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে।
বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ১৭৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৩ জনকে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ধর্ষণের এই সংখ্যা মূলত সামনে আসা ঘটনাগুলোর। কিন্তু বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে এ কথা বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায় যে, এমন বহু ঘটনা আছে, যা একেবারেই সামনে আসে না। অনেকে সমাজের কথা ভেবে, অনেকে এ ধরনের মামলা-পরবর্তী ধকল থেকে বাঁচতে, অনেকে ধর্ষক ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের হুমকি-ধমকিতে দমে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আর অভিযোগই করেন না। এ অবস্থায় ৭২ ঘণ্টার যে সীমার কথা বলা হচ্ছে, তা এক ভয়াবহ সংকটের শুরুর বিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
কথা হলো এ ধরনের পরামর্শ দেওয়ার সূত্রটি কী? পর্যবেক্ষণে বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার যে আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন, তাকে আমলে নিলেও একটি ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা করার কোনো সময়সীমা থাকার কথা নয়। ধর্ষণের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বিধানের কথা আগে কখনো শোনা যায়নি। সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু তো সরাসরি বলেছেন, ‘ধর্ষণের কোনো ঘটনায় ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নিতে যে পরামর্শ দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, তা সম্পূর্ণ এখতিয়ারবহির্ভূত।’
আলামত ও সাক্ষীর প্রসঙ্গ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের একেক অঙ্গরাজ্যে একেক ধরনের বিধান রয়েছে, যার সর্বনিম্ন সীমা ৬ বছর। যুক্তরাজ্য ও পাশের দেশ ভারতের আইনেও এ ধরনের কোনো সময়সীমার কথা উল্লেখ বা এ ধরনের কোনো চর্চা নেই। আলোচ্য মামলাটিতে ঘটনা ও মামলার তারিখের মধ্যে ব্যবধান ছিল এসব বিবেচনায় অনেক কম, ৩৮ দিন। এতে আলামত সংগ্রহ বা সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজিরের ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে এবং এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু বিচারক বললেন, ‘ধর্ষণের আলামত না পেলে পুলিশ যেন কোনো মামলা গ্রহণ না করে। এ ধরনের মামলায় আদালতের সময় নষ্ট হয়।’ অর্থাৎ এই পরামর্শ মানলে ধর্ষণের অভিযোগ আদালতে ওঠার আগেই ভুক্তভোগীকে প্রমাণে ব্যস্ত হতে হবে। আদালত কী করে এমন একটি অপরাধের প্রমাণের বিষয়টি নিজের এখতিয়ারের বাইরে দিয়ে দিতে পারেন, তা একেবারেই স্পষ্ট নয়। আদালত তাঁর সময় নষ্ট হওয়ার কথা বলছেন। তিনি সময় বাঁচাতে চান। কিন্তু একজন নারীর যে জীবনটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে, সেদিকে দেখলেন না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আবার এই নারীর বয়স ৩ বছর থেকে শুরু করে ৭০ বছরও হতে পারে। শুনতে যেমনই লাগুক, এটাই বাস্তবতা। সময় নষ্টের যে প্রসঙ্গ বিচারক তুললেন, তিনি কিন্তু ভুলে গেলেন, আদালতের কাজটাই আসলে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী নাকি নির্দোষ, তা নিরূপণ। আইনের একেবারে ভিত্তিতে যে কথা বলা আছে, তা হলো—একজন নির্দোষও যেন শাস্তি না পায়। এ জন্য আদালত তাঁর প্রয়োজনীয় সময় নেবেন। এবং এটাই তাঁর কাজ, এ জন্যই তিনি নিযুক্ত। এই নিযুক্তির পেছনে সেই সাধারণের অর্থায়ন রয়েছে, যাদের অভিযোগ নিষ্পত্তিকে আজ সময়স্বল্পতার অজুহাতে জড়ানো হলো।
দেশে হওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে ধর্ষণের পর অপরাধী কৃতকর্মকে ধামাচাপা দিতে নানা ধরনের কাজ করে, যার মধ্যে হত্যাও রয়েছে। ফলে যে ৭২ ঘণ্টার কথা বলা হয়েছে, সেই সময়ের পর মামলা না নেওয়ার বিষয় সামনে এলে, তা অপরাধীদের একটা দায়মুক্তি দিচ্ছে আদতে। এই দায়মুক্তি দিয়ে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো নারীর ওপর আরও কতটা চড়ে বসতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। এই পর্যবেক্ষণ বলছে, সমাজ ও রাষ্ট্রের যে কাঠামো ‘ধর্ষণ’ শব্দটিকে নারীর শরীরের সঙ্গে লেপ্টে দিয়েছে, সেই কাঠামোই এখন নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ যৎসামান্য সুরক্ষাবর্মটি খুলে নিতে চাইছে। অন্যকে ‘সতর্ক’ হওয়ার পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে এই চাওয়ার প্রকাশ ঘটানো হয়েছে, যেখানে বিন্দুমাত্র সতর্ক হওয়ারও প্রয়োজন মনে করছে না কাঠামোটি।
‘ধর্ষণ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘পীড়ন’, ‘নির্যাতন’, ‘অত্যাচার’। এর শিকার যে কেউ হতে পারে। অর্থটি বুঝতে হলে দু-একটি উদাহরণের দিকে তাকালেই চলে। যেমন, প্রজা-ধর্ষণ। প্রয়োগ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো এক পীড়নমূলক শাসনব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে। আর এই প্রজা-ধর্ষণের ক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল ঊহ্য থাকলেও যেহেতু রাজার দিকেই, সেহেতু এর প্রতিকার মেলা নিয়েও আছে সংশয়। এত কথা সামনে আসছে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহারের দেওয়া সাম্প্রতিক এক রায়ের প্রেক্ষাপটে।
সময়ের সঙ্গে ‘ধর্ষণ’ শব্দের প্রয়োগ আর সর্বজনীন থাকেনি। এটি ক্রমেই নারীর সঙ্গে লেপ্টে গেছে। আর এটি কীভাবে হয়েছে, তা মানুষের ইতিহাস পাঠ করলেই বোঝা যাবে। দেশ-কালভেদে নারীর নির্যাতিত হওয়ার ভবিতব্য পাল্টায়নি। বরং এই নির্যাতনের ধরনে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন বিষয়। শারীরিক নির্যাতনের নানা রকমফের তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে যৌন নির্যাতন, যার বিশেষ একটি ধরনকে বলা হচ্ছে ধর্ষণ। এই যে নারীর লৈঙ্গিক পরিচয়ের সঙ্গে ধর্ষণ শব্দের সেঁটে যাওয়া এ থেকেই বোঝা যায়, সমাজ বা রাষ্ট্রকাঠামো কতটা পুরুষতান্ত্রিক। এই পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোরই সর্বশেষ মঞ্চায়ন বলা যায় মোসাম্মৎ কামরুন্নাহারের রায়কে।
রায়টি এসেছে গত বৃহস্পতিবার। রায়ে রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের মামলায় পাঁচ আসামির সবাই খালাস পেয়েছেন। দোষী সাব্যস্ত হওয়া বা না হওয়া এবং কোনো মামলায় আসামিরা শাস্তির আওতায় আসবেন কি না, এলে কতটা নাকি বেকসুর খালাস পাবেন, তা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ারের বিষয়। এ সম্পর্কিত শুনানিতে যথাযথ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত তাঁর রায় জানাবেন—এ নিয়ে অন্য কারও কিছু বলার সুযোগ নেই। কেউ তা বলছেও না। কিন্তু কথা উঠছে রায় ঘোষণার সময় আদালতের দেওয়া একটি পর্যবেক্ষণ নিয়ে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা ৭২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর আর আলামত থাকে না। এ সময়ের পর ধর্ষণের শিকার কেউ মামলা করতে গেলে পুলিশকে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে মামলা নিতে হবে। ধর্ষণের আলামত না পেলে পুলিশ যেন কোনো মামলা গ্রহণ না করে। এ ধরনের মামলায় আদালতের সময় নষ্ট হয়।’
প্রসঙ্গত, ধর্ষণের ঘটনার ৩৮ দিন পর ২০১৭ সালের ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে ধর্ষণের মামলা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। মামলার এজাহারে বলা হয়, আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ জন্মদিনের পার্টিতে অংশ নিতে গিয়ে তাঁরা দুজন ধর্ষণের শিকার হন। ২০১৮ সালের ৮ জুন পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার আদালতের রায়ে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলেসহ পাঁচ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় এই পর্যবেক্ষণ।
স্বাভাবিকভাবেই এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে সমালোচনামুখর হয়েছেন নারী সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, পুলিশ, আইনজীবী এমনকি রাজনীতিকেরাও। তাঁরা বলছেন, আদালত এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে অপরাধীদের সহজে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হবে। ধর্ষণের ঘটনাও বাড়বে। কেউ কেউ মামলার রায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানের প্রভাব রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। সংক্ষুব্ধ যে কেউ এমন অভিযোগ তুলতে পারেন। সে বিষয়টি এড়িয়েও সরাসরি রায়ের সঙ্গে দেওয়া বিচারকের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে। বিশেষত যখন এই রায় এসেছে এমন একটি দেশে, যেখানে ক্রমবর্ধমান হারে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে।
বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ১৭৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৩ জনকে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ধর্ষণের এই সংখ্যা মূলত সামনে আসা ঘটনাগুলোর। কিন্তু বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে এ কথা বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায় যে, এমন বহু ঘটনা আছে, যা একেবারেই সামনে আসে না। অনেকে সমাজের কথা ভেবে, অনেকে এ ধরনের মামলা-পরবর্তী ধকল থেকে বাঁচতে, অনেকে ধর্ষক ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের হুমকি-ধমকিতে দমে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আর অভিযোগই করেন না। এ অবস্থায় ৭২ ঘণ্টার যে সীমার কথা বলা হচ্ছে, তা এক ভয়াবহ সংকটের শুরুর বিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
কথা হলো এ ধরনের পরামর্শ দেওয়ার সূত্রটি কী? পর্যবেক্ষণে বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার যে আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন, তাকে আমলে নিলেও একটি ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা করার কোনো সময়সীমা থাকার কথা নয়। ধর্ষণের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বিধানের কথা আগে কখনো শোনা যায়নি। সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু তো সরাসরি বলেছেন, ‘ধর্ষণের কোনো ঘটনায় ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নিতে যে পরামর্শ দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, তা সম্পূর্ণ এখতিয়ারবহির্ভূত।’
আলামত ও সাক্ষীর প্রসঙ্গ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের একেক অঙ্গরাজ্যে একেক ধরনের বিধান রয়েছে, যার সর্বনিম্ন সীমা ৬ বছর। যুক্তরাজ্য ও পাশের দেশ ভারতের আইনেও এ ধরনের কোনো সময়সীমার কথা উল্লেখ বা এ ধরনের কোনো চর্চা নেই। আলোচ্য মামলাটিতে ঘটনা ও মামলার তারিখের মধ্যে ব্যবধান ছিল এসব বিবেচনায় অনেক কম, ৩৮ দিন। এতে আলামত সংগ্রহ বা সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজিরের ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে এবং এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু বিচারক বললেন, ‘ধর্ষণের আলামত না পেলে পুলিশ যেন কোনো মামলা গ্রহণ না করে। এ ধরনের মামলায় আদালতের সময় নষ্ট হয়।’ অর্থাৎ এই পরামর্শ মানলে ধর্ষণের অভিযোগ আদালতে ওঠার আগেই ভুক্তভোগীকে প্রমাণে ব্যস্ত হতে হবে। আদালত কী করে এমন একটি অপরাধের প্রমাণের বিষয়টি নিজের এখতিয়ারের বাইরে দিয়ে দিতে পারেন, তা একেবারেই স্পষ্ট নয়। আদালত তাঁর সময় নষ্ট হওয়ার কথা বলছেন। তিনি সময় বাঁচাতে চান। কিন্তু একজন নারীর যে জীবনটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে, সেদিকে দেখলেন না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আবার এই নারীর বয়স ৩ বছর থেকে শুরু করে ৭০ বছরও হতে পারে। শুনতে যেমনই লাগুক, এটাই বাস্তবতা। সময় নষ্টের যে প্রসঙ্গ বিচারক তুললেন, তিনি কিন্তু ভুলে গেলেন, আদালতের কাজটাই আসলে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী নাকি নির্দোষ, তা নিরূপণ। আইনের একেবারে ভিত্তিতে যে কথা বলা আছে, তা হলো—একজন নির্দোষও যেন শাস্তি না পায়। এ জন্য আদালত তাঁর প্রয়োজনীয় সময় নেবেন। এবং এটাই তাঁর কাজ, এ জন্যই তিনি নিযুক্ত। এই নিযুক্তির পেছনে সেই সাধারণের অর্থায়ন রয়েছে, যাদের অভিযোগ নিষ্পত্তিকে আজ সময়স্বল্পতার অজুহাতে জড়ানো হলো।
দেশে হওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে ধর্ষণের পর অপরাধী কৃতকর্মকে ধামাচাপা দিতে নানা ধরনের কাজ করে, যার মধ্যে হত্যাও রয়েছে। ফলে যে ৭২ ঘণ্টার কথা বলা হয়েছে, সেই সময়ের পর মামলা না নেওয়ার বিষয় সামনে এলে, তা অপরাধীদের একটা দায়মুক্তি দিচ্ছে আদতে। এই দায়মুক্তি দিয়ে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো নারীর ওপর আরও কতটা চড়ে বসতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। এই পর্যবেক্ষণ বলছে, সমাজ ও রাষ্ট্রের যে কাঠামো ‘ধর্ষণ’ শব্দটিকে নারীর শরীরের সঙ্গে লেপ্টে দিয়েছে, সেই কাঠামোই এখন নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ যৎসামান্য সুরক্ষাবর্মটি খুলে নিতে চাইছে। অন্যকে ‘সতর্ক’ হওয়ার পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে এই চাওয়ার প্রকাশ ঘটানো হয়েছে, যেখানে বিন্দুমাত্র সতর্ক হওয়ারও প্রয়োজন মনে করছে না কাঠামোটি।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
৭ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
৭ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
৭ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৭ ঘণ্টা আগে