ফারুক মেহেদী
আমাদের উদীয়মান অর্থনীতির পথের বাধা নিয়ে লিখতে বসে আমার নিজের পথ হারানোর কথা মনে পড়ছে! পেশাগত কাজে ২০১৩ সালে লন্ডন সফরে গিয়ে শহরটির আগামাথা কিছুই ধরতে পারিনি। এরপর যে কদিন ছিলাম, কখনো পাতাল ট্রেনে এই স্টেশন ওই স্টেশনে, কখনো গাড়িতে লন্ডন শহরের কোন দিক থেকে কোন দিকে গেলাম, কিছুই ধরতে পারিনি। একদিন চাচা তারিকুল ইসলাম বললেন, ‘তুই একা চলতে পারবি না?’ আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম! বলেন কী! অসম্ভব। না উত্তর-দক্ষিণ, না পূর্ব-পশ্চিম—কিছুই মনে রাখতে পারি না! না চিনি রাস্তাঘাট, না আছে দিক-নিশানা! তাহলে আমি গন্তব্যে পৌঁছাব কীভাবে? পথভ্রষ্ট আমার পুরো ভ্রমণটিই আমি শেষ করেছি অন্যের সহযোগিতায়। আমার মতো সাধারণ একজনের সেদিন পথভ্রষ্ট হয়ে হারিয়ে গেলে জাতির কিছুই হতো না! তবে একটি দেশের অর্থনীতি যদি পথভ্রষ্ট হয়, তবে এর মাশুল নিশ্চয়ই ১৭ কোটি মানুষকে গুনতে হবে! যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো সে পর্যায়ে যায়নি। তারপরও করোনা-পরবর্তী সতর্কতা জরুরি।
করোনা আঘাত করার আগপর্যন্ত দেশটা খুব ভালোভাবেই এগোচ্ছিল। প্রায় ৮ শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার। ২ হাজার ডলারের বেশি মাথাপিছু আয়। রেকর্ড বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। রেমিট্যান্সপ্রবাহে রেকর্ড। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় দেশ। কৃষি, মাছ, সবজিতে সাফল্য। বেসরকারি খাতে জয়জয়কার। মেগা প্রকল্পের বিশাল কর্মযজ্ঞ।
করোনা এসে থমকে দিল সবকিছু। প্রায় দেড় বছরে তছনছ করে দিল উন্নয়নের সব হিসাব-নিকাশ। স্থবির হয়ে রইল বেসরকারি ও ব্যক্তি খাতের প্রায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন থেকে সেবা খাতসহ সর্বস্তরে হাহাকার। পর্যটন, এসএমই, পরিবহন খাতে বড় লোকসানে পড়লেন উদ্যোক্তারা। কাজ হারালেন বিপুল জনগোষ্ঠী। দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক, চা-বিক্রেতাসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে অসংখ্য মানুষের আয় কমে গেল। বহু মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব হলেন।
তাতে কী অর্থনীতি শেষ হয়ে গেছে? না, সব শেষ হয়ে যায়নি। একটা ধাক্কা লেগেছে মাত্র। চলতি পথে একটি বাধা পড়েছে। এখন বাংলাদেশ যে পথে ছিল, সেটি চিনে নিতে হবে। যেখানে যাওয়ার কথা ছিল, ঠিক ঠিক সেই গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে—এটুকুই।
একটি বৃহৎ পর্যালোচনা বা অ্যাসেসমেন্ট দরকার। এরপরই বোঝা যাবে যে কোন খাত কী রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই অনুযায়ী তাদের জন্য সরকার কৌশল নিতে পারে। কার জন্য কেমন কৌশল বা সহায়তা দেওয়া হবে, তা ধারণার ওপর বা গণহারে করার কোনো সুযোগ নেই। এখন অর্থনীতির মূল খাতগুলো মেরামত করতে হবে। প্রয়োজনমতো তাদের জন্য নীতিসহায়তা ও সতর্ক পদক্ষেপ লাগবে; বিশেষ করে রপ্তানি, রাজস্ব, রেমিট্যান্স, বিনিয়োগে এমনভাবে মনোযোগ দিতে হবে, যাতে অর্থনীতির দ্রুতগতির পথচলা সচল থাকে, পথ যেন আরও মসৃণ হয়।
রপ্তানি
এত ঝড়ঝাপ্টার পরও গত আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। আগস্ট মাসে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকার পণ্য। এ আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। এ সময়ে ২৭৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশের মতো। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে রপ্তানি আয় বেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বাস্তবে উদ্যোক্তাদের কারও কারও ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে! কারণ, টিকে থাকার জন্য তাঁরা কম দামে অর্ডার নিচ্ছেন। কনটেইনার ও জাহাজসংকটে পণ্য পাঠাতে বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে।
ব্যাংকঋণের ফলে কিস্তি দেওয়ার চাপ বাড়ছে।
অন্যদিকে, বড়রা টিকে থাকলেও ছোটদের অবস্থা শোচনীয়। গবেষণা সংস্থা সিপিডির তথ্য বলছে, বিজিএমইএর ৬২ শতাংশ কারখানা গড়ে ৫ কোটি এবং বিকেএমইএর ২৯ শতাংশ কারখানা গড়ে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা সহায়তা পেয়েছে। বড়রা বেশি সুবিধা পেলেও ছোটরা নানান জটিলতায় পায়নি। করোনার প্রথম ধাক্কায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির রক্তপ্রবাহ হিসেবে পরিচিত এ খাতের জন্য কার্যকরী অর্থনৈতিক কৌশল নিতে হবে। বড়দের টিকে থাকা যেমন টেকসই করতে হবে, তেমনি ছোটদের ব্যবসায় ফিরে আসার পথ বের করতে হবে। আর যাঁরা কর্মহীন হয়েছেন, তাঁদের কাজে ফেরাতে হবে।
রেমিট্যান্স
করোনার ধাক্কায় অনেক প্রবাসী চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। ধারণা করা হয়েছিল রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাবে। বাস্তবে তা হয়নি; বরং রেমিট্যান্স বেড়েছে। কিন্তু কিছুদিন ধরে এ ধারায় ছেদ পড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের আগস্ট মাসে ১৮১ কোটি ডলার বা ১৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকার বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যদিও তা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কম। শুরুতে করোনার ভয়ে অনেকে বেশি বেশি টাকা পাঠিয়েছিলেন। যাতায়াত বন্ধ থাকায় অবৈধ চ্যানেল বা হুন্ডি বন্ধ ছিল। তা ছাড়া, ২ শতাংশ সরকারি প্রণোদনার কারণে বেশি রেমিট্যান্স আসে। এখন তা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমি হতাশাবাদীদের দলে নই! আমি আশা করি সরকার প্রবাসী জনশক্তির দিকে নজর বাড়ালে, আরও বেশি লোককে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আবারও স্বাভাবিক হবে। তবে এ খাতকে টেকসই করার জন্য বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর কৌশল ধরে রাখতে হবে। না হলে সম্ভাবনাময় এ খাতটি পথভ্রষ্ট হতে পারে।
বিনিয়োগ
করোনার ধাক্কা ভালোভাবেই লেগেছে বিনিয়োগে। এ সময়ে চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে তেমন কোনো বিনিয়োগ আসেনি। সর্বশেষ জুনে প্রকাশিত আঙ্কটাডের তথ্যমতে, ২০২০ সালে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৩১ কোটি ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। চীন থেকে সরিয়ে নেওয়া জাপানের ৮৬ কোম্পানির একটিও বাংলাদেশে আসেনি। তারা গেছে ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামে। কিন্তু আসেনি বলে সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি।
দেশে ১০০ ইকোনমিক জোন হচ্ছে। মিরসরাইয়ে প্রায় দুই ডজন বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। ভারতের আদানি, জাপানের ফুজি, মিতসুবিশি, ম্যাকডোনাল্ডসহ আরও অনেক বিদেশি কোম্পানি ইতিমধ্যে কারখানাও স্থাপন শুরু করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টসের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা খুবই আশাব্যঞ্জক। দেশটিতে একটি বৃহৎ, তরুণ ও কঠোর পরিশ্রমী শ্রমশক্তি রয়েছে। এখানের কৃষি-বাণিজ্য, টেক্সটাইল, চামড়াজাত পণ্য, উৎপাদন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্যের আভাস দেওয়া হয়েছে।
রাজস্ব
রাজস্ব আয় না হলে দেশ চলবে না। সরকারের ব্যয় বা বিনিয়োগ হবে না। সরকারের ব্যয় না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে না। বেসরকারি খাতে প্রাণচাঞ্চল্য থাকবে না। আবার বেসরকারি খাত চাঙা না হলে রাজস্ব হবে না। এ চক্রটিকে সচল রাখতে হবে যেকোনো মূল্যে। অথচ এ খাতে করোনার প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৫ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা কম।
সার্বিক অর্থনীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারলেই কেবল রাজস্ব আয়ের ধারা স্বাভাবিক হবে। এর পাশাপাশি যেসব খাত ভালো চলছে, সেগুলোর প্রতি যত্ন নিতে হবে। এখন অর্থনীতিতে যে ধাক্কা, বেসরকারি খাতের স্থবিরতা, কর্মহীন মানুষ, লোকসান, ঋণখেলাপি, রুগ্ণ শিল্পের বৃত্তটা এখন সরকারকে ভাঙতে হবে। যথাযথ অ্যাসেসমেন্ট, কার্যকর পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় খাতকে আর্থিক ও নীতিসহায়তা দিয়ে একটি স্বাভাবিক, সুন্দর ও গতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এরপরই কাঙ্ক্ষিত পথে ফিরতে শুরু করবে দেশের অর্থনীতি। গন্তব্য হচ্ছে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা। যাত্রাপথের বাধাগুলো সরিয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা তৈরি করে, প্রস্তুতি নিয়েই পথ চলতে হবে। না হলে পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় উঠতি এ অর্থনীতির।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আমাদের উদীয়মান অর্থনীতির পথের বাধা নিয়ে লিখতে বসে আমার নিজের পথ হারানোর কথা মনে পড়ছে! পেশাগত কাজে ২০১৩ সালে লন্ডন সফরে গিয়ে শহরটির আগামাথা কিছুই ধরতে পারিনি। এরপর যে কদিন ছিলাম, কখনো পাতাল ট্রেনে এই স্টেশন ওই স্টেশনে, কখনো গাড়িতে লন্ডন শহরের কোন দিক থেকে কোন দিকে গেলাম, কিছুই ধরতে পারিনি। একদিন চাচা তারিকুল ইসলাম বললেন, ‘তুই একা চলতে পারবি না?’ আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম! বলেন কী! অসম্ভব। না উত্তর-দক্ষিণ, না পূর্ব-পশ্চিম—কিছুই মনে রাখতে পারি না! না চিনি রাস্তাঘাট, না আছে দিক-নিশানা! তাহলে আমি গন্তব্যে পৌঁছাব কীভাবে? পথভ্রষ্ট আমার পুরো ভ্রমণটিই আমি শেষ করেছি অন্যের সহযোগিতায়। আমার মতো সাধারণ একজনের সেদিন পথভ্রষ্ট হয়ে হারিয়ে গেলে জাতির কিছুই হতো না! তবে একটি দেশের অর্থনীতি যদি পথভ্রষ্ট হয়, তবে এর মাশুল নিশ্চয়ই ১৭ কোটি মানুষকে গুনতে হবে! যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো সে পর্যায়ে যায়নি। তারপরও করোনা-পরবর্তী সতর্কতা জরুরি।
করোনা আঘাত করার আগপর্যন্ত দেশটা খুব ভালোভাবেই এগোচ্ছিল। প্রায় ৮ শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার। ২ হাজার ডলারের বেশি মাথাপিছু আয়। রেকর্ড বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। রেমিট্যান্সপ্রবাহে রেকর্ড। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় দেশ। কৃষি, মাছ, সবজিতে সাফল্য। বেসরকারি খাতে জয়জয়কার। মেগা প্রকল্পের বিশাল কর্মযজ্ঞ।
করোনা এসে থমকে দিল সবকিছু। প্রায় দেড় বছরে তছনছ করে দিল উন্নয়নের সব হিসাব-নিকাশ। স্থবির হয়ে রইল বেসরকারি ও ব্যক্তি খাতের প্রায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন থেকে সেবা খাতসহ সর্বস্তরে হাহাকার। পর্যটন, এসএমই, পরিবহন খাতে বড় লোকসানে পড়লেন উদ্যোক্তারা। কাজ হারালেন বিপুল জনগোষ্ঠী। দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক, চা-বিক্রেতাসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে অসংখ্য মানুষের আয় কমে গেল। বহু মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব হলেন।
তাতে কী অর্থনীতি শেষ হয়ে গেছে? না, সব শেষ হয়ে যায়নি। একটা ধাক্কা লেগেছে মাত্র। চলতি পথে একটি বাধা পড়েছে। এখন বাংলাদেশ যে পথে ছিল, সেটি চিনে নিতে হবে। যেখানে যাওয়ার কথা ছিল, ঠিক ঠিক সেই গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে—এটুকুই।
একটি বৃহৎ পর্যালোচনা বা অ্যাসেসমেন্ট দরকার। এরপরই বোঝা যাবে যে কোন খাত কী রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই অনুযায়ী তাদের জন্য সরকার কৌশল নিতে পারে। কার জন্য কেমন কৌশল বা সহায়তা দেওয়া হবে, তা ধারণার ওপর বা গণহারে করার কোনো সুযোগ নেই। এখন অর্থনীতির মূল খাতগুলো মেরামত করতে হবে। প্রয়োজনমতো তাদের জন্য নীতিসহায়তা ও সতর্ক পদক্ষেপ লাগবে; বিশেষ করে রপ্তানি, রাজস্ব, রেমিট্যান্স, বিনিয়োগে এমনভাবে মনোযোগ দিতে হবে, যাতে অর্থনীতির দ্রুতগতির পথচলা সচল থাকে, পথ যেন আরও মসৃণ হয়।
রপ্তানি
এত ঝড়ঝাপ্টার পরও গত আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। আগস্ট মাসে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকার পণ্য। এ আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। এ সময়ে ২৭৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশের মতো। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে রপ্তানি আয় বেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বাস্তবে উদ্যোক্তাদের কারও কারও ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে! কারণ, টিকে থাকার জন্য তাঁরা কম দামে অর্ডার নিচ্ছেন। কনটেইনার ও জাহাজসংকটে পণ্য পাঠাতে বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে।
ব্যাংকঋণের ফলে কিস্তি দেওয়ার চাপ বাড়ছে।
অন্যদিকে, বড়রা টিকে থাকলেও ছোটদের অবস্থা শোচনীয়। গবেষণা সংস্থা সিপিডির তথ্য বলছে, বিজিএমইএর ৬২ শতাংশ কারখানা গড়ে ৫ কোটি এবং বিকেএমইএর ২৯ শতাংশ কারখানা গড়ে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা সহায়তা পেয়েছে। বড়রা বেশি সুবিধা পেলেও ছোটরা নানান জটিলতায় পায়নি। করোনার প্রথম ধাক্কায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির রক্তপ্রবাহ হিসেবে পরিচিত এ খাতের জন্য কার্যকরী অর্থনৈতিক কৌশল নিতে হবে। বড়দের টিকে থাকা যেমন টেকসই করতে হবে, তেমনি ছোটদের ব্যবসায় ফিরে আসার পথ বের করতে হবে। আর যাঁরা কর্মহীন হয়েছেন, তাঁদের কাজে ফেরাতে হবে।
রেমিট্যান্স
করোনার ধাক্কায় অনেক প্রবাসী চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। ধারণা করা হয়েছিল রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাবে। বাস্তবে তা হয়নি; বরং রেমিট্যান্স বেড়েছে। কিন্তু কিছুদিন ধরে এ ধারায় ছেদ পড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের আগস্ট মাসে ১৮১ কোটি ডলার বা ১৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকার বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যদিও তা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কম। শুরুতে করোনার ভয়ে অনেকে বেশি বেশি টাকা পাঠিয়েছিলেন। যাতায়াত বন্ধ থাকায় অবৈধ চ্যানেল বা হুন্ডি বন্ধ ছিল। তা ছাড়া, ২ শতাংশ সরকারি প্রণোদনার কারণে বেশি রেমিট্যান্স আসে। এখন তা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমি হতাশাবাদীদের দলে নই! আমি আশা করি সরকার প্রবাসী জনশক্তির দিকে নজর বাড়ালে, আরও বেশি লোককে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আবারও স্বাভাবিক হবে। তবে এ খাতকে টেকসই করার জন্য বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর কৌশল ধরে রাখতে হবে। না হলে সম্ভাবনাময় এ খাতটি পথভ্রষ্ট হতে পারে।
বিনিয়োগ
করোনার ধাক্কা ভালোভাবেই লেগেছে বিনিয়োগে। এ সময়ে চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে তেমন কোনো বিনিয়োগ আসেনি। সর্বশেষ জুনে প্রকাশিত আঙ্কটাডের তথ্যমতে, ২০২০ সালে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৩১ কোটি ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। চীন থেকে সরিয়ে নেওয়া জাপানের ৮৬ কোম্পানির একটিও বাংলাদেশে আসেনি। তারা গেছে ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামে। কিন্তু আসেনি বলে সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি।
দেশে ১০০ ইকোনমিক জোন হচ্ছে। মিরসরাইয়ে প্রায় দুই ডজন বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। ভারতের আদানি, জাপানের ফুজি, মিতসুবিশি, ম্যাকডোনাল্ডসহ আরও অনেক বিদেশি কোম্পানি ইতিমধ্যে কারখানাও স্থাপন শুরু করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টসের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা খুবই আশাব্যঞ্জক। দেশটিতে একটি বৃহৎ, তরুণ ও কঠোর পরিশ্রমী শ্রমশক্তি রয়েছে। এখানের কৃষি-বাণিজ্য, টেক্সটাইল, চামড়াজাত পণ্য, উৎপাদন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্যের আভাস দেওয়া হয়েছে।
রাজস্ব
রাজস্ব আয় না হলে দেশ চলবে না। সরকারের ব্যয় বা বিনিয়োগ হবে না। সরকারের ব্যয় না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে না। বেসরকারি খাতে প্রাণচাঞ্চল্য থাকবে না। আবার বেসরকারি খাত চাঙা না হলে রাজস্ব হবে না। এ চক্রটিকে সচল রাখতে হবে যেকোনো মূল্যে। অথচ এ খাতে করোনার প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৫ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা কম।
সার্বিক অর্থনীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারলেই কেবল রাজস্ব আয়ের ধারা স্বাভাবিক হবে। এর পাশাপাশি যেসব খাত ভালো চলছে, সেগুলোর প্রতি যত্ন নিতে হবে। এখন অর্থনীতিতে যে ধাক্কা, বেসরকারি খাতের স্থবিরতা, কর্মহীন মানুষ, লোকসান, ঋণখেলাপি, রুগ্ণ শিল্পের বৃত্তটা এখন সরকারকে ভাঙতে হবে। যথাযথ অ্যাসেসমেন্ট, কার্যকর পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় খাতকে আর্থিক ও নীতিসহায়তা দিয়ে একটি স্বাভাবিক, সুন্দর ও গতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এরপরই কাঙ্ক্ষিত পথে ফিরতে শুরু করবে দেশের অর্থনীতি। গন্তব্য হচ্ছে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা। যাত্রাপথের বাধাগুলো সরিয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা তৈরি করে, প্রস্তুতি নিয়েই পথ চলতে হবে। না হলে পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় উঠতি এ অর্থনীতির।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৮ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৮ ঘণ্টা আগে