বিভুরঞ্জন সরকার
আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি আবার নতুন করে আন্দোলন এবং সরকার পতনের কথা বলছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা সব দলের সঙ্গে কথা বলছি ঐক্যবদ্ধ হতে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের পতনের আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি।’
দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, এমন আন্দোলন দেখবেন, যে আন্দোলনে এই সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলার আর সুযোগ থাকবে না।
বিএনপির নেতাদের এসব কথা শুনে কারও মনে হতে পারে, দেশে বুঝি শিগগিরই বড় ধরনের আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে এবং সেই আন্দোলনের চাপে ও তাপে দিশাহারা হয়ে শেখ হাসিনার সরকার বিদায় নেবে। কিন্তু আসলে কি দেশে খুব তাড়াতাড়ি কোনো গণ-আন্দোলন গড়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে? মানুষ কি সরকারের ওপর এতই ত্যক্তবিরক্ত যে সরকারকে আর সহ্য করতে পারছে না? যেকোনো সুযোগেই মানুষ রাস্তায় নেমে আসার জন্য তৈরি হয়েছে? সবচেয়ে বড় কথা, কোনো রাজনৈতিক দল চাইলে বা কোনো নেতা নির্দেশ দিলেই কি কোনো দেশে আন্দোলন হয়? রাজনৈতিকভাবে আমাদের দেশ চরমভাবে বিভক্ত। যাঁরা আওয়ামী লীগ বা সরকারকে পছন্দ বা সমর্থন করেন, তাঁরা বলবেন, না, দেশে সরকারবিরোধী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠার এখনই কোনো আশঙ্কা নেই। কিছু কিছু বিষয়ে মানুষের মনে অসন্তোষ বা ক্ষোভ থাকলেও অনেকেই এটা মনে করেন না যে, কেউ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলেই সবাই পথে বেরিয়ে আসবে। নানা বাস্তব কারণে আওয়ামী লীগের ওপর কারও কারও আস্থা কমে এলেও বিএনপি বা বিএনপির মিত্র দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে বিএনপির যাঁরা সমর্থক, তাঁরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর থেকে মানুষের মন উঠে গেছে। জনসমর্থনের জোরে নয়, সরকার টিকে আছে বিভিন্ন বাহিনী তথা প্রশাসনিক ক্ষমতার জোরে। বিরোধী দলকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখে সরকার দেশ শাসন করছে। মানুষ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। দরকার শুধু একটি ডাকের। বিএনপি ডাক দিলেই সরকার বেসামাল হয়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, বিএনপি দলীয়ভাবে আন্দোলনের জন্য কতটুকু প্রস্তুত? যাঁরা বিএনপির ভেতরের খবর জানেন, তাঁরা এটা বলবেন না যে বিএনপি আন্দোলনের জন্য রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত একটি সংহত দল। বিএনপি ডাক দিলেই মানুষ কোনো বাধা না মেনে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে—এমন টগবগে অবস্থা বাস্তবে কোথাও নেই। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে দলটি সাংগঠনিকভাবে নানা সমস্যায় জর্জরিত। দলের মধ্যে কলহ-কোন্দল তীব্র। কেন্দ্র, জেলা-উপজেলা এবং তৃণমূল পর্যন্ত দলটি অগোছালো ও বেহাল। দলের প্রধান দুই কান্ডারি—চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অবস্থা হলো ‘থেকেও না থাকা’র মতো। খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার অবস্থা তৈরি করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে।
দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধানে মনোযোগী না হয়ে বিএনপি নেতারা মাঝে মাঝেই কেন দেশের মানুষকে আন্দোলনের খোয়াব দেখান, সে প্রশ্নের সন্তোষজনক কোনো জবাব পাওয়া না গেলেও মনে করা হয়, কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙা রাখার জন্যই আন্দোলনের হুংকার দেওয়া হয়। কিন্তু হুইসেল বাজিয়ে নেতারা যে ঝুঁকি নিয়ে ঘর থেকে বের হন না, সেটা কে না জানে! এমন তো নয় যে বিএনপির তহবিলে আন্দোলনের মোটা অভিজ্ঞতা জমা আছে; বরং এটাই সত্য যে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলনেই বিএনপির কোনো সাফল্য নেই। এমনকি জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ও দলাংশকে নিয়ে একাধিকবার আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েও কোনো অর্জন ছাড়াই তাদের ঘরে ফিরতে হয়েছে। শেখ হাসিনাকে সরকারপ্রধান রেখে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে হুমকি দিয়েও তা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা তো দূরের কথা, সরকারের ওপর বড় রকমের চাপও সৃষ্টি করতে পারেনি। তবে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য হওয়ায় জনদুর্ভোগের কারণে দলটির ওপর কিছু মানুষের বিরক্তি বেড়েছে। এটা পরিষ্কার যে আন্দোলনের ব্যাকরণ আওয়ামী লীগ যতটা বোঝে, বিএনপি তার সামান্যও হয়তো বোঝে না। তাই ভুলের বৃত্তও ভাঙতে পারে না। আওয়ামী লীগ বিএনপির কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে সফল হয়েছিল আর বিএনপি একই দাবিতে আন্দোলন করে আম-ছালা সবই হারিয়েছে। বিএনপির অবস্থা যখন নড়বড়ে ছিল না, তখনো দলটি আন্দোলন জমাতে পারেনি। এখন পিছিয়ে পড়া নাজুক অবস্থানে থেকে সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনের কথা বলে কারও মধ্যে কোনো অনুপ্রেরণা তৈরি করতে পারবে বলে কি মনে করা যায়?
কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, বিএনপি এখন আসলে মুখরক্ষার পথ খুঁজছে। কীভাবে এবং কোথা থেকে শুরু করলে মানুষকে কাছে টানা যাবে, তা বুঝে উঠতে না পেরে ‘বৃহত্তর ঐক্য’, ‘সরকার পতন’ ইত্যাদি শব্দবোমা নিক্ষেপ করে দেখছে মাঠের প্রতিক্রিয়া। দেশে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে যে শোচনীয় অবস্থা হয়েছে পরের নির্বাচনে তার পুনরাবৃত্তি রোধ করাই এখন বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৩ সালের শেষ দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটবে। বিএনপি বাদ-প্রতিবাদ করবে, তবে তাতে সরকারের ভাবনায় পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।
বিএনপি যে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিচ্ছে, তাতে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেবে বলেও মনে হয় না। আমাদের দেশের রাজনীতিতে ঐক্যের চেয়ে অনৈক্যের ধারাই প্রবল। তা ছাড়া, ঐক্যের ভিত্তি কী হবে, সেটাও একটি বড় বিবেচনার বিষয়। স্বার্থকেন্দ্রিক ঐক্য খুব টেকসই হয় না। আবার আদর্শিক ঐক্যের জায়গাও এখন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। অর্থনৈতিক নীতির প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির অবস্থানে খুব ফারাক নেই। মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে আগে বিএনপির চেয়ে যেভাবে আলাদা করা যেত, এখন তা-ও কমে এসেছে। ইসলাম-পছন্দ দলগুলো আগে বিএনপির সঙ্গে নৈকট্য বোধ করলেও এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গেও তাদের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেছে। ধর্মের পক্ষে কার অবস্থান কতটা গভীর, সেটা প্রমাণের প্রতিযোগিতা চলছে। ধর্মনিরপেক্ষতার বাজারদর তেমন নেই। সামাজিক-সাংস্কৃতিক মনোস্তত্ত্বে ধর্মচেতনার বিষয়টির গভীর শেকড় বিস্তারের পটভূমি আওয়ামী লীগই তৈরি করছে। তাহলে কোন ইস্যুকে সামনে রেখে বৃহত্তর বা এ টু জেড ঐক্যের আশা করছে বিএনপি? এক লুটেরা শ্রেণিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে আরেক লুটেরা শ্রেণিকে ক্ষমতায় বসানোর ঐক্যে সবাই শামিল হবে বলে মনে হয় না। ঐক্য কার নেতৃত্বে, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক, নির্বাচনে জিতলে সরকারপ্রধান কে হবেন, সেটা স্পষ্ট না হলে মানুষের সংশয় কাটবে না।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘর গোছানোর দিকে আওয়ামী লীগও মনোযোগী হবে—এটাই স্বাভাবিক। টানা ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের অন্দরেও কলহ-কোন্দল বেড়েছে। পাওয়া না-পাওয়ার দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে হামলা-হানাহানির মতো ঘটনাও বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সর্বশেষ সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বন্দ্বে জড়ানো নেতাদের ‘মিলেমিশে’ চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
তাঁর পরামর্শ উপেক্ষা করার ঔদ্ধত্যও দলে বাড়ছে।
তারপরও বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ খারাপ অবস্থানে আছে বলে মনে করলে ভুল করা হবে। আওয়ামী লীগের বড় সম্পদ এখনো শেখ হাসিনা। তিনি শেষ পর্যন্ত সব বিপদ বা ঝুঁকি থেকে দলকে রক্ষা করেন। তাঁর কৌশল প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে অব্যর্থ। তিনি যেমন নিজ দলের সবলতা ও দুর্বলতা জানেন, তেমনি বিরোধী দলের সবলতা-দুর্বলতাও তাঁর জানার বাইরে নয়। সবচেয়ে বড় কথা, শেখ হাসিনা পায়ের মাপে জুতো খোঁজেন। অন্যদিকে পায়ের মাপে জুতো খুঁজতে গিয়ে বিএনপি বা আওয়ামী লীগবিরোধীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগকে ‘দেউলিয়া’ বললেও আওয়ামী লীগের চেয়ে ‘সমৃদ্ধ’ ও শক্তিধর দল কি তাঁর মিত্র তালিকায় আছে?
ব্যর্থ, জনবিচ্ছিন্ন, নামসর্বস্ব দল ও অথর্ব কিছু বাক্যবাগীশ নেতার হাঁকডাক যে রাজনীতিতে উত্তাল ঢেউ তৈরি করে না, তার প্রমাণ অতীতে বহুবার আমরা পেয়েছি।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি আবার নতুন করে আন্দোলন এবং সরকার পতনের কথা বলছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা সব দলের সঙ্গে কথা বলছি ঐক্যবদ্ধ হতে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের পতনের আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি।’
দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, এমন আন্দোলন দেখবেন, যে আন্দোলনে এই সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলার আর সুযোগ থাকবে না।
বিএনপির নেতাদের এসব কথা শুনে কারও মনে হতে পারে, দেশে বুঝি শিগগিরই বড় ধরনের আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে এবং সেই আন্দোলনের চাপে ও তাপে দিশাহারা হয়ে শেখ হাসিনার সরকার বিদায় নেবে। কিন্তু আসলে কি দেশে খুব তাড়াতাড়ি কোনো গণ-আন্দোলন গড়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে? মানুষ কি সরকারের ওপর এতই ত্যক্তবিরক্ত যে সরকারকে আর সহ্য করতে পারছে না? যেকোনো সুযোগেই মানুষ রাস্তায় নেমে আসার জন্য তৈরি হয়েছে? সবচেয়ে বড় কথা, কোনো রাজনৈতিক দল চাইলে বা কোনো নেতা নির্দেশ দিলেই কি কোনো দেশে আন্দোলন হয়? রাজনৈতিকভাবে আমাদের দেশ চরমভাবে বিভক্ত। যাঁরা আওয়ামী লীগ বা সরকারকে পছন্দ বা সমর্থন করেন, তাঁরা বলবেন, না, দেশে সরকারবিরোধী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠার এখনই কোনো আশঙ্কা নেই। কিছু কিছু বিষয়ে মানুষের মনে অসন্তোষ বা ক্ষোভ থাকলেও অনেকেই এটা মনে করেন না যে, কেউ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলেই সবাই পথে বেরিয়ে আসবে। নানা বাস্তব কারণে আওয়ামী লীগের ওপর কারও কারও আস্থা কমে এলেও বিএনপি বা বিএনপির মিত্র দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে বিএনপির যাঁরা সমর্থক, তাঁরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর থেকে মানুষের মন উঠে গেছে। জনসমর্থনের জোরে নয়, সরকার টিকে আছে বিভিন্ন বাহিনী তথা প্রশাসনিক ক্ষমতার জোরে। বিরোধী দলকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখে সরকার দেশ শাসন করছে। মানুষ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। দরকার শুধু একটি ডাকের। বিএনপি ডাক দিলেই সরকার বেসামাল হয়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, বিএনপি দলীয়ভাবে আন্দোলনের জন্য কতটুকু প্রস্তুত? যাঁরা বিএনপির ভেতরের খবর জানেন, তাঁরা এটা বলবেন না যে বিএনপি আন্দোলনের জন্য রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত একটি সংহত দল। বিএনপি ডাক দিলেই মানুষ কোনো বাধা না মেনে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে—এমন টগবগে অবস্থা বাস্তবে কোথাও নেই। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে দলটি সাংগঠনিকভাবে নানা সমস্যায় জর্জরিত। দলের মধ্যে কলহ-কোন্দল তীব্র। কেন্দ্র, জেলা-উপজেলা এবং তৃণমূল পর্যন্ত দলটি অগোছালো ও বেহাল। দলের প্রধান দুই কান্ডারি—চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অবস্থা হলো ‘থেকেও না থাকা’র মতো। খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার অবস্থা তৈরি করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে।
দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধানে মনোযোগী না হয়ে বিএনপি নেতারা মাঝে মাঝেই কেন দেশের মানুষকে আন্দোলনের খোয়াব দেখান, সে প্রশ্নের সন্তোষজনক কোনো জবাব পাওয়া না গেলেও মনে করা হয়, কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙা রাখার জন্যই আন্দোলনের হুংকার দেওয়া হয়। কিন্তু হুইসেল বাজিয়ে নেতারা যে ঝুঁকি নিয়ে ঘর থেকে বের হন না, সেটা কে না জানে! এমন তো নয় যে বিএনপির তহবিলে আন্দোলনের মোটা অভিজ্ঞতা জমা আছে; বরং এটাই সত্য যে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলনেই বিএনপির কোনো সাফল্য নেই। এমনকি জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ও দলাংশকে নিয়ে একাধিকবার আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েও কোনো অর্জন ছাড়াই তাদের ঘরে ফিরতে হয়েছে। শেখ হাসিনাকে সরকারপ্রধান রেখে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে হুমকি দিয়েও তা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা তো দূরের কথা, সরকারের ওপর বড় রকমের চাপও সৃষ্টি করতে পারেনি। তবে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য হওয়ায় জনদুর্ভোগের কারণে দলটির ওপর কিছু মানুষের বিরক্তি বেড়েছে। এটা পরিষ্কার যে আন্দোলনের ব্যাকরণ আওয়ামী লীগ যতটা বোঝে, বিএনপি তার সামান্যও হয়তো বোঝে না। তাই ভুলের বৃত্তও ভাঙতে পারে না। আওয়ামী লীগ বিএনপির কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে সফল হয়েছিল আর বিএনপি একই দাবিতে আন্দোলন করে আম-ছালা সবই হারিয়েছে। বিএনপির অবস্থা যখন নড়বড়ে ছিল না, তখনো দলটি আন্দোলন জমাতে পারেনি। এখন পিছিয়ে পড়া নাজুক অবস্থানে থেকে সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনের কথা বলে কারও মধ্যে কোনো অনুপ্রেরণা তৈরি করতে পারবে বলে কি মনে করা যায়?
কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, বিএনপি এখন আসলে মুখরক্ষার পথ খুঁজছে। কীভাবে এবং কোথা থেকে শুরু করলে মানুষকে কাছে টানা যাবে, তা বুঝে উঠতে না পেরে ‘বৃহত্তর ঐক্য’, ‘সরকার পতন’ ইত্যাদি শব্দবোমা নিক্ষেপ করে দেখছে মাঠের প্রতিক্রিয়া। দেশে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে যে শোচনীয় অবস্থা হয়েছে পরের নির্বাচনে তার পুনরাবৃত্তি রোধ করাই এখন বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৩ সালের শেষ দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটবে। বিএনপি বাদ-প্রতিবাদ করবে, তবে তাতে সরকারের ভাবনায় পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।
বিএনপি যে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিচ্ছে, তাতে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেবে বলেও মনে হয় না। আমাদের দেশের রাজনীতিতে ঐক্যের চেয়ে অনৈক্যের ধারাই প্রবল। তা ছাড়া, ঐক্যের ভিত্তি কী হবে, সেটাও একটি বড় বিবেচনার বিষয়। স্বার্থকেন্দ্রিক ঐক্য খুব টেকসই হয় না। আবার আদর্শিক ঐক্যের জায়গাও এখন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। অর্থনৈতিক নীতির প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির অবস্থানে খুব ফারাক নেই। মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে আগে বিএনপির চেয়ে যেভাবে আলাদা করা যেত, এখন তা-ও কমে এসেছে। ইসলাম-পছন্দ দলগুলো আগে বিএনপির সঙ্গে নৈকট্য বোধ করলেও এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গেও তাদের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেছে। ধর্মের পক্ষে কার অবস্থান কতটা গভীর, সেটা প্রমাণের প্রতিযোগিতা চলছে। ধর্মনিরপেক্ষতার বাজারদর তেমন নেই। সামাজিক-সাংস্কৃতিক মনোস্তত্ত্বে ধর্মচেতনার বিষয়টির গভীর শেকড় বিস্তারের পটভূমি আওয়ামী লীগই তৈরি করছে। তাহলে কোন ইস্যুকে সামনে রেখে বৃহত্তর বা এ টু জেড ঐক্যের আশা করছে বিএনপি? এক লুটেরা শ্রেণিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে আরেক লুটেরা শ্রেণিকে ক্ষমতায় বসানোর ঐক্যে সবাই শামিল হবে বলে মনে হয় না। ঐক্য কার নেতৃত্বে, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক, নির্বাচনে জিতলে সরকারপ্রধান কে হবেন, সেটা স্পষ্ট না হলে মানুষের সংশয় কাটবে না।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘর গোছানোর দিকে আওয়ামী লীগও মনোযোগী হবে—এটাই স্বাভাবিক। টানা ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের অন্দরেও কলহ-কোন্দল বেড়েছে। পাওয়া না-পাওয়ার দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে হামলা-হানাহানির মতো ঘটনাও বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সর্বশেষ সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বন্দ্বে জড়ানো নেতাদের ‘মিলেমিশে’ চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
তাঁর পরামর্শ উপেক্ষা করার ঔদ্ধত্যও দলে বাড়ছে।
তারপরও বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ খারাপ অবস্থানে আছে বলে মনে করলে ভুল করা হবে। আওয়ামী লীগের বড় সম্পদ এখনো শেখ হাসিনা। তিনি শেষ পর্যন্ত সব বিপদ বা ঝুঁকি থেকে দলকে রক্ষা করেন। তাঁর কৌশল প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে অব্যর্থ। তিনি যেমন নিজ দলের সবলতা ও দুর্বলতা জানেন, তেমনি বিরোধী দলের সবলতা-দুর্বলতাও তাঁর জানার বাইরে নয়। সবচেয়ে বড় কথা, শেখ হাসিনা পায়ের মাপে জুতো খোঁজেন। অন্যদিকে পায়ের মাপে জুতো খুঁজতে গিয়ে বিএনপি বা আওয়ামী লীগবিরোধীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগকে ‘দেউলিয়া’ বললেও আওয়ামী লীগের চেয়ে ‘সমৃদ্ধ’ ও শক্তিধর দল কি তাঁর মিত্র তালিকায় আছে?
ব্যর্থ, জনবিচ্ছিন্ন, নামসর্বস্ব দল ও অথর্ব কিছু বাক্যবাগীশ নেতার হাঁকডাক যে রাজনীতিতে উত্তাল ঢেউ তৈরি করে না, তার প্রমাণ অতীতে বহুবার আমরা পেয়েছি।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৬ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৬ ঘণ্টা আগে