জাহীদ রেজা নূর
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এসেছিল একই বছরের ১৫ আগস্টের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগের নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হন। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই তখন আত্মগোপন করেন, অনেকেই মোশতাকের অবৈধ ক্ষমতাদখল মেনে নেন। জেলহত্যার শিকার চার নেতা পালিয়ে যাননি, মোশতাক-মন্ত্রিসভায় যোগও দেননি। বঙ্গবন্ধুর পর তাঁরাই যে দেশের চালিকাশক্তি, সে কথা জানত এই অপশক্তি। তাই তারা এই চারজনকে বন্দী করে জেলখানায় রাখে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল পাকিস্তানি জান্তা। সে সময় সুদক্ষভাবে বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা করার কৃতিত্ব এই চার নেতার ওপরই বর্তায়। তাঁরা তা সফলভাবে পালন করেন।
মূলত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর আস্থা রেখেই এগিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা এনডিএফ থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৬৪ সালে যখন আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হলো, তখন থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়েছিল। এ সময়েই শেখ মুজিব মূলত পূর্ব বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতীয় নেতা হয়ে উঠছিলেন।
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের ঔজ্জ্বল্য এতটাই ছিল যে, অন্য নেতারা সে আলোয় ম্লান হয়ে যেতেন। পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগ আসলে ছিল তারুণ্যে ভরপুর এক আওয়ামী লীগ। শহীদ চার নেতাকে বুঝতে হলে এ কথাও বুঝতে হবে আগে।
সে সময় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে ছিলেন আতাউর রহমান খান, জহিরুদ্দিন হোসেন, আবদুস সালাম খান, আবদুল জব্বার খদ্দর, খাজা খয়রাত হোসেন, যশোরের মশিউর রহমান, রাজশাহীর মজিবুর রহমান, কুষ্টিয়ার সা’দ আহমদ প্রমুখ। তাঁদের অনেকেই চাননি আওয়ামী লীগ এনডিএফ থেকে বেরিয়ে একক দল হিসেবে আবার কাজ করুক। ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়াও তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। শেখ মুজিব তাতে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। ইত্তেফাকের সমর্থন ছাড়া আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করা যাবে না। তিনি তাঁর বন্ধু ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে আশঙ্কার কথা জানালেন। সিরাজুদ্দীন হোসেন মানিক মিয়াকে এড়িয়েই আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবনের কথা ছেপে দিলেন। সে অন্য গল্প, কিন্তু ইতিহাসের জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৬৬ সালের ১৮ থেকে ২০ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়, তাতে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে ১৫ বছর তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ। দলের সহসভাপতি হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। যশোরের মশিউর রহমান নয়া কর্মকর্তাদের নামের প্যানেল পাঠ করেন এবং পাবনার মনসুর আলী পূর্ণাঙ্গ প্যানেল সমর্থন করেন।
তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর নিখুঁত মেধা ও পর্যবেক্ষণ কাজে লাগিয়ে রাজনীতির মাঠে শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পেরিয়ে জাতি যখন নতুন যুগ-সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছিল, তখনই বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য এবং নিজেদের মেধাবী উপস্থিতি দিয়ে তাঁরা রাজনীতির মাঠের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর ইত্তেফাকের শিরোনাম হলো, ‘কেন্দ্রে শেখ মুজিব ও প্রদেশে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী নেতা নির্বাচিত’।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন চলার সময় এই চার নেতাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী।
দুই
ওপরের আলোচনার পথ ধরে এগোলে আমরা জেলহত্যার অর্থ বুঝতে পারব। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন না হলে এনডিএফের আওতায় থেকে দেশের বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে দলটি তেমন কোনো অবদান রাখতে পারত না। পুনরুজ্জীবনের পথ ধরেই আওয়ামী লীগে এল নতুন নেতৃত্ব, তাঁরাই হাল ধরলেন, হয়ে উঠলেন
বঙ্গবন্ধুর ভরসাস্থল।
খন্দকার মোশতাক আহমদও ছিলেন এই দলে। কিন্তু তাঁর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই। মার্কিনদের সঙ্গে আঁতাত করতে চেয়েছিলেন তিনি। নিয়তির পরিহাস হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাজউদ্দীন আহমদকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। এই ফাঁকে খন্দকার মোশতাক সরকারের মধ্যে থেকেই সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলেন। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের ফল হিসেবে একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্য হত্যা করল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। খন্দকার মোশতাক হাতে তুলে নিলেন ক্ষমতা।
তিন
যে চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হলো, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২৩ আগস্ট। সেই থেকে তাঁরা জেলে ছিলেন। কোনো কারণে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে এই নেতারা দেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, সে কথা জানত এই খুনি চক্র। এ কারণেই অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের সময়টিতে ২ নভেম্বর পেরিয়ে রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটা পিকআপ থেমেছিল। নেমেছিল কয়েকজন সেনাসদস্য। জেলার আমিনুর রহমানকে কারা মহাপরিদর্শক ফোন করে দ্রুত আসতে বলেছিলেন। মূল ফটকে সৈন্যদের দেখলেন তিনি। সেনাসদস্যরা কারা মহাপরিদর্শককে একটা কাগজ দিলেন। বেজে উঠল আমিনুল ইসলামের ঘরের ফোন। ও প্রান্ত থেকে বলা হলো, প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন আইজি সাহেবের সঙ্গে। আইজি সাহেবকে খবর দিলেন আমিনুর রহমান। আইজি সাহেবকে প্রেসিডেন্ট মোশতাক বলেছেন, ‘আর্মি অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা করো।’
চার নেতাকে একত্র করার নির্দেশ আসে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের এক কক্ষে ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে অন্য কক্ষ থেকে এখানে আনা হয়। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পোশাক পাল্টে নেন। তাজউদ্দীন আহমদ কোরআন পড়ছিলেন।
তাঁদের একত্র করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগলে গালিগালাজ করছিল সৈন্যরা।
তাঁদের এক ঘরে আনার পর মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণে হত্যা করা হয়। সেই অমানিশার আঁধার এখনো কাটেনি।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এসেছিল একই বছরের ১৫ আগস্টের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগের নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হন। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই তখন আত্মগোপন করেন, অনেকেই মোশতাকের অবৈধ ক্ষমতাদখল মেনে নেন। জেলহত্যার শিকার চার নেতা পালিয়ে যাননি, মোশতাক-মন্ত্রিসভায় যোগও দেননি। বঙ্গবন্ধুর পর তাঁরাই যে দেশের চালিকাশক্তি, সে কথা জানত এই অপশক্তি। তাই তারা এই চারজনকে বন্দী করে জেলখানায় রাখে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল পাকিস্তানি জান্তা। সে সময় সুদক্ষভাবে বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা করার কৃতিত্ব এই চার নেতার ওপরই বর্তায়। তাঁরা তা সফলভাবে পালন করেন।
মূলত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর আস্থা রেখেই এগিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা এনডিএফ থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৬৪ সালে যখন আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হলো, তখন থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়েছিল। এ সময়েই শেখ মুজিব মূলত পূর্ব বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতীয় নেতা হয়ে উঠছিলেন।
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের ঔজ্জ্বল্য এতটাই ছিল যে, অন্য নেতারা সে আলোয় ম্লান হয়ে যেতেন। পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগ আসলে ছিল তারুণ্যে ভরপুর এক আওয়ামী লীগ। শহীদ চার নেতাকে বুঝতে হলে এ কথাও বুঝতে হবে আগে।
সে সময় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে ছিলেন আতাউর রহমান খান, জহিরুদ্দিন হোসেন, আবদুস সালাম খান, আবদুল জব্বার খদ্দর, খাজা খয়রাত হোসেন, যশোরের মশিউর রহমান, রাজশাহীর মজিবুর রহমান, কুষ্টিয়ার সা’দ আহমদ প্রমুখ। তাঁদের অনেকেই চাননি আওয়ামী লীগ এনডিএফ থেকে বেরিয়ে একক দল হিসেবে আবার কাজ করুক। ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়াও তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। শেখ মুজিব তাতে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। ইত্তেফাকের সমর্থন ছাড়া আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করা যাবে না। তিনি তাঁর বন্ধু ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে আশঙ্কার কথা জানালেন। সিরাজুদ্দীন হোসেন মানিক মিয়াকে এড়িয়েই আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবনের কথা ছেপে দিলেন। সে অন্য গল্প, কিন্তু ইতিহাসের জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৬৬ সালের ১৮ থেকে ২০ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়, তাতে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে ১৫ বছর তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ। দলের সহসভাপতি হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। যশোরের মশিউর রহমান নয়া কর্মকর্তাদের নামের প্যানেল পাঠ করেন এবং পাবনার মনসুর আলী পূর্ণাঙ্গ প্যানেল সমর্থন করেন।
তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর নিখুঁত মেধা ও পর্যবেক্ষণ কাজে লাগিয়ে রাজনীতির মাঠে শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পেরিয়ে জাতি যখন নতুন যুগ-সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছিল, তখনই বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য এবং নিজেদের মেধাবী উপস্থিতি দিয়ে তাঁরা রাজনীতির মাঠের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর ইত্তেফাকের শিরোনাম হলো, ‘কেন্দ্রে শেখ মুজিব ও প্রদেশে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী নেতা নির্বাচিত’।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন চলার সময় এই চার নেতাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী।
দুই
ওপরের আলোচনার পথ ধরে এগোলে আমরা জেলহত্যার অর্থ বুঝতে পারব। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন না হলে এনডিএফের আওতায় থেকে দেশের বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে দলটি তেমন কোনো অবদান রাখতে পারত না। পুনরুজ্জীবনের পথ ধরেই আওয়ামী লীগে এল নতুন নেতৃত্ব, তাঁরাই হাল ধরলেন, হয়ে উঠলেন
বঙ্গবন্ধুর ভরসাস্থল।
খন্দকার মোশতাক আহমদও ছিলেন এই দলে। কিন্তু তাঁর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই। মার্কিনদের সঙ্গে আঁতাত করতে চেয়েছিলেন তিনি। নিয়তির পরিহাস হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাজউদ্দীন আহমদকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। এই ফাঁকে খন্দকার মোশতাক সরকারের মধ্যে থেকেই সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলেন। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের ফল হিসেবে একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্য হত্যা করল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। খন্দকার মোশতাক হাতে তুলে নিলেন ক্ষমতা।
তিন
যে চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হলো, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২৩ আগস্ট। সেই থেকে তাঁরা জেলে ছিলেন। কোনো কারণে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে এই নেতারা দেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, সে কথা জানত এই খুনি চক্র। এ কারণেই অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের সময়টিতে ২ নভেম্বর পেরিয়ে রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটা পিকআপ থেমেছিল। নেমেছিল কয়েকজন সেনাসদস্য। জেলার আমিনুর রহমানকে কারা মহাপরিদর্শক ফোন করে দ্রুত আসতে বলেছিলেন। মূল ফটকে সৈন্যদের দেখলেন তিনি। সেনাসদস্যরা কারা মহাপরিদর্শককে একটা কাগজ দিলেন। বেজে উঠল আমিনুল ইসলামের ঘরের ফোন। ও প্রান্ত থেকে বলা হলো, প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন আইজি সাহেবের সঙ্গে। আইজি সাহেবকে খবর দিলেন আমিনুর রহমান। আইজি সাহেবকে প্রেসিডেন্ট মোশতাক বলেছেন, ‘আর্মি অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা করো।’
চার নেতাকে একত্র করার নির্দেশ আসে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের এক কক্ষে ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে অন্য কক্ষ থেকে এখানে আনা হয়। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পোশাক পাল্টে নেন। তাজউদ্দীন আহমদ কোরআন পড়ছিলেন।
তাঁদের একত্র করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগলে গালিগালাজ করছিল সৈন্যরা।
তাঁদের এক ঘরে আনার পর মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণে হত্যা করা হয়। সেই অমানিশার আঁধার এখনো কাটেনি।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১১ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১১ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১২ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১২ ঘণ্টা আগে