শাওন মাহমুদ
সমাজে গণমাধ্যম যত ক্ষমতা নিয়ে সচল হয়ে উঠতে থাকে, দেশ ও জনগণের ওপর এর প্রভাবের ধরন হয়ে ওঠে ভিন্ন ভিন্ন। গণমাধ্যম ক্ষমতা নিয়ে হিসাব করা শুরু করলে নিজেরাই ইস্যু তৈরি করে, সেই ইস্যুর পক্ষে বা বিপক্ষে নেতিবাচক প্রচারণা চালায় বা চালানোর সুযোগ পথ তৈরি করে দেয়। গত এক দশকে প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং ব্যবহার বেড়েছে আকাশসম, গণমাধ্যমও অবলীলায় পৌঁছাতে পারছে মানুষের একদম পাশে। এই বিশাল ক্ষমতা মানুষকে মানসিকভাবে প্রভাবিত করছে, মতামত দেওয়ার জায়গা তৈরি করে দিচ্ছে। এই অবাধ বায়বীয় তরঙ্গ ভালো কাজের চেয়ে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভেদ, বিশৃঙ্খলা, ঘৃণা, অযাচিত মতপ্রকাশের উঠোন।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলো এখন নিজেদের মতো করে বিষয় ঠিক করছে, জনগণ কোন বা কী বিষয় নিয়ে আলাপ বা মতামত দিতে পছন্দ করবে, তার ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। কারণ, গণমাধ্যম যখন জনগণকে বিশেষ উদ্দেশ্যের দিকে ধাবিত করতে চায় বা সে বিষয়গুলোতে বক্তব্য রাখতে চায়, তখন নিজেরাই সেসব ইস্যু ঠিক করে নেয়। টক শোর টিআরপি বাড়ানোর জন্য মনমতো ব্যক্তিত্ব বা তাদের বলয়ের মানুষটিকে ডাকছে। ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি এখন দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠান হয়ে গেছে। গৎবাঁধা তথ্য-উপাত্তে অত্যন্ত নাজুক অনুষ্ঠান বা কলাম তৈরি হচ্ছে।
এই বছরের এপ্রিলে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ১৮০টি দেশের মুক্ত গণমাধ্যম সূচক প্রকাশ করেছে। ২০২১ সালের এই সূচকে সবার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১তম। আর ২০১৯ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০তম। অর্থাৎ গতবারের সূচকেও বাংলাদেশের এক ধাপ অবনতি হয়েছিল।
২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে ‘নেতিবাচক প্রচারণা’র দায়ে সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছরের কারাদণ্ড। ফলে আত্মনিয়ন্ত্রণ (সেলফ-সেন্সর), প্রাতিষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা এবং সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থেকেও গণমাধ্যমগুলো নিজেদের মনমতো বলয় তৈরি করে রাখে। সম্পাদকেরা সংগত কারণেই জেল, জরিমানা বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঝুঁকি এড়াতে চান। এবং এর ফলে মুক্ত গণমাধ্যমের বিষয়টি মুখ থুবড়ে সূচকের নিচের দিকে ধাবিত হতে থাকে।
আমার ব্যক্তিগত ধারণা, টিকে থাকার বা জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য নিজেদের সুবিধামতো ইস্যু তৈরি করতে গিয়ে গণমাধ্যমগুলো ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত নিয়ে খুব একটা গবেষণা করার সময় কম পায়। দিনভিত্তিক স্মরণ করার জন্য কপি-পেস্ট বা ১০ বছর ধরে চলে আসা তথ্যগুলো দিয়েই কাজ চালিয়ে যেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। ভুলেই যায়, কত সহজে তারা মানুষের কাছে, নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে পারে। আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ শুধু দিবসভিত্তিক গৌরব নয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অহংবোধ নিয়ে বেঁচে থাকার ইতিহাস।
সাত-আট বছর ধরে খেয়াল করছিলাম যে, ’৭১-এর আগস্ট ২৯, ৩০, ৩১ তারিখে নিখোঁজ সাতজন ক্র্যাক প্লাটুন সদস্য। বাংলাদেশের সবচেয়ে নামকরা গণমাধ্যমটি এই ছবি থেকে শুধু শহীদ রুমী, আজাদ আর জুয়েলের ছবি দিয়ে সেসব দিন স্মরণ করে। বাদবাকিদের কথা খুব সযতনে এড়িয়ে যায়। হয়তো তারা জানে না বা তাদের কাছে তথ্য বা ছবি নেই। অবশ্য গত কয়েক বছরে এত স্পর্শকাতর বিষয়ে তারা জানতেও ইচ্ছুক হয়নি কখনোই। যেকোনো জনপ্রিয় গণমাধ্যম যখন
টার্গেটেড তথ্য প্রকাশ করে, তখন বুঝে নিতে হবে, আপনাকে তারা সব সত্য তথ্য জানতে দিতে চায় না বা জানাতে অলসতা বোধ করে। ঐতিহাসিক গৌরব হয়তো চলতি সময়ের ইস্যু থেকে তাদের কাছে অনেক বেশি ঝাপসা দেখায়।
গত ৫০ বছরে গণমাধ্যমগুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বা ভাষা আন্দোলন নিয়ে খুব সামান্য কাজ করেছে বা করছে। অথচ তাদের কাছে এই সময়গুলো ধরে রাখার জন্য এবং সমৃদ্ধ আর্কাইভ করার মতো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ছিল। হয়তো নিজেদের অবস্থান শীর্ষে এবং জনপ্রিয় রাখার প্রতিযোগিতায় সময় করে উঠতে পারেনি।
লেখক: শহীদ আলতাফ
মাহমুদের কন্যা
সমাজে গণমাধ্যম যত ক্ষমতা নিয়ে সচল হয়ে উঠতে থাকে, দেশ ও জনগণের ওপর এর প্রভাবের ধরন হয়ে ওঠে ভিন্ন ভিন্ন। গণমাধ্যম ক্ষমতা নিয়ে হিসাব করা শুরু করলে নিজেরাই ইস্যু তৈরি করে, সেই ইস্যুর পক্ষে বা বিপক্ষে নেতিবাচক প্রচারণা চালায় বা চালানোর সুযোগ পথ তৈরি করে দেয়। গত এক দশকে প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং ব্যবহার বেড়েছে আকাশসম, গণমাধ্যমও অবলীলায় পৌঁছাতে পারছে মানুষের একদম পাশে। এই বিশাল ক্ষমতা মানুষকে মানসিকভাবে প্রভাবিত করছে, মতামত দেওয়ার জায়গা তৈরি করে দিচ্ছে। এই অবাধ বায়বীয় তরঙ্গ ভালো কাজের চেয়ে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভেদ, বিশৃঙ্খলা, ঘৃণা, অযাচিত মতপ্রকাশের উঠোন।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলো এখন নিজেদের মতো করে বিষয় ঠিক করছে, জনগণ কোন বা কী বিষয় নিয়ে আলাপ বা মতামত দিতে পছন্দ করবে, তার ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। কারণ, গণমাধ্যম যখন জনগণকে বিশেষ উদ্দেশ্যের দিকে ধাবিত করতে চায় বা সে বিষয়গুলোতে বক্তব্য রাখতে চায়, তখন নিজেরাই সেসব ইস্যু ঠিক করে নেয়। টক শোর টিআরপি বাড়ানোর জন্য মনমতো ব্যক্তিত্ব বা তাদের বলয়ের মানুষটিকে ডাকছে। ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি এখন দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠান হয়ে গেছে। গৎবাঁধা তথ্য-উপাত্তে অত্যন্ত নাজুক অনুষ্ঠান বা কলাম তৈরি হচ্ছে।
এই বছরের এপ্রিলে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ১৮০টি দেশের মুক্ত গণমাধ্যম সূচক প্রকাশ করেছে। ২০২১ সালের এই সূচকে সবার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১তম। আর ২০১৯ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০তম। অর্থাৎ গতবারের সূচকেও বাংলাদেশের এক ধাপ অবনতি হয়েছিল।
২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে ‘নেতিবাচক প্রচারণা’র দায়ে সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছরের কারাদণ্ড। ফলে আত্মনিয়ন্ত্রণ (সেলফ-সেন্সর), প্রাতিষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা এবং সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থেকেও গণমাধ্যমগুলো নিজেদের মনমতো বলয় তৈরি করে রাখে। সম্পাদকেরা সংগত কারণেই জেল, জরিমানা বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঝুঁকি এড়াতে চান। এবং এর ফলে মুক্ত গণমাধ্যমের বিষয়টি মুখ থুবড়ে সূচকের নিচের দিকে ধাবিত হতে থাকে।
আমার ব্যক্তিগত ধারণা, টিকে থাকার বা জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য নিজেদের সুবিধামতো ইস্যু তৈরি করতে গিয়ে গণমাধ্যমগুলো ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত নিয়ে খুব একটা গবেষণা করার সময় কম পায়। দিনভিত্তিক স্মরণ করার জন্য কপি-পেস্ট বা ১০ বছর ধরে চলে আসা তথ্যগুলো দিয়েই কাজ চালিয়ে যেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। ভুলেই যায়, কত সহজে তারা মানুষের কাছে, নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে পারে। আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ শুধু দিবসভিত্তিক গৌরব নয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অহংবোধ নিয়ে বেঁচে থাকার ইতিহাস।
সাত-আট বছর ধরে খেয়াল করছিলাম যে, ’৭১-এর আগস্ট ২৯, ৩০, ৩১ তারিখে নিখোঁজ সাতজন ক্র্যাক প্লাটুন সদস্য। বাংলাদেশের সবচেয়ে নামকরা গণমাধ্যমটি এই ছবি থেকে শুধু শহীদ রুমী, আজাদ আর জুয়েলের ছবি দিয়ে সেসব দিন স্মরণ করে। বাদবাকিদের কথা খুব সযতনে এড়িয়ে যায়। হয়তো তারা জানে না বা তাদের কাছে তথ্য বা ছবি নেই। অবশ্য গত কয়েক বছরে এত স্পর্শকাতর বিষয়ে তারা জানতেও ইচ্ছুক হয়নি কখনোই। যেকোনো জনপ্রিয় গণমাধ্যম যখন
টার্গেটেড তথ্য প্রকাশ করে, তখন বুঝে নিতে হবে, আপনাকে তারা সব সত্য তথ্য জানতে দিতে চায় না বা জানাতে অলসতা বোধ করে। ঐতিহাসিক গৌরব হয়তো চলতি সময়ের ইস্যু থেকে তাদের কাছে অনেক বেশি ঝাপসা দেখায়।
গত ৫০ বছরে গণমাধ্যমগুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বা ভাষা আন্দোলন নিয়ে খুব সামান্য কাজ করেছে বা করছে। অথচ তাদের কাছে এই সময়গুলো ধরে রাখার জন্য এবং সমৃদ্ধ আর্কাইভ করার মতো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ছিল। হয়তো নিজেদের অবস্থান শীর্ষে এবং জনপ্রিয় রাখার প্রতিযোগিতায় সময় করে উঠতে পারেনি।
লেখক: শহীদ আলতাফ
মাহমুদের কন্যা
তিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
২ মিনিট আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১ দিন আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১ দিন আগে