নাজমুল ইসলাম
বুনো হাতি কোনো গ্রামে ঢুকলে মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালাতে শুরু করে। কারণ, হাতির পায়ের নিচে পড়লে আর রক্ষা নেই। জীবন বাঁচাতে মানুষ এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে। আবার আরেক ধরনের হাতির দেখা মেলে, যে হাতি দেখলে মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালায় না, বরং হাতির ঘাড়ে চড়ে বসে। মানুষের নির্দেশমতো এই হাতি দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়। এই হাতি বুনো হাতি নয়, সার্কাসের হাতি। শারীরিক গঠনে বুনো হাতি আর সার্কাসের হাতির মধ্যে পার্থক্য নেই। পার্থক্য মনস্তত্ত্বে। বুনো হাতি মানুষের দাসত্ব মেনে নেয় না। আর সার্কাসের হাতি মনে করে এই তার নিয়তি। এর থেকে তার মুক্তি নেই। যত দিন জীবন আছে, তত দিন এভাবেই চলতে হবে। মানুষের দাস হয়েই তাকে থাকতে হবে। মানুষ যা করতে বলবে, তাই করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো সার্কাসের হাতির এমন মনস্তত্ত্ব কীভাবে তৈরি হলো? বাচ্চা হাতিকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সার্কাসের হাতি হিসেবে গড়ে তোলা হয়। বাচ্চা হাতিকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। প্রথম সে শিকল থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। শিকল দিয়ে বাঁধার কারণে সে মুক্ত হতে পারে না। পায়ে ব্যথা পায়, তার পা রক্তাক্ত হয়। কিন্তু মুক্তি মেলে না। এক সময় সে ধরে নেয় এর থেকে তার আর মুক্তি নেই। সে দাসত্বকে বরণ করে নেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতির শারীরিক আকৃতি বাড়তে থাকে। এক সময় সে প্রকাণ্ড আকার ধারণ করে। শারীরিক গঠন বাড়লেও তার মানসিক শক্তি বাড়ে না। সে মুক্তির কথা ভুলে যায়। ভুলে যায় তার শরীরের সক্ষমতার কথা। ফলে ৪০ কেজি ওজনের একজন দুপেয়ে প্রাণী ওর ঘাড়ে চড়ে রাজত্ব শুরু করে। ঘাড়ের ওপর দু পা রেখে সার্কাসের হাতিকে নির্দেশনা দিতে শুরু করে। খুব প্রভুভক্ত হয়ে হাতি তার মনিবের নির্দেশনা মেনে চলে।
বাঙালির মনস্তত্ত্ব এই সার্কাসের হাতির মতো। হাতির মতো এরাও সব ধরনের দাসত্ব মেনে নিয়েছে। চোখের সামনে খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যা হোক না কেন—এটা তাদের কাছে যেন খুব স্বাভাবিক বিষয়। এ নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলে। সেই বেপরোয়া গাড়ির নিচে প্রতিদিনই মানুষ মারা যায়। মাঝেমধ্যে পত্রিকায় নারী ধর্ষণের খবর আসে। এই সমাজ নারীদের জন্য কতটা ভয়ানক, তা কেবল নারীরাই অনুধাবন করতে পারে। রাস্তায় বের হলে নোংরা কথা, নোংরা ইঙ্গিত—এ যেন নারীদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা। নিজের ইচ্ছামতো ভোট দেওয়ার কারণে এক নারী তাঁর সন্তানদের সামনে ধর্ষিত হয়। দিনের আলোতে কুপিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়। ভিডিও ভাইরাল হলে ঘাতক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়। কিন্তু এই ঘাতকদের কারা তৈরি করে, সেটা সামনে আসে না। অবশ্য কারা তৈরি করে সেটাও অজানা নয়। নগ্ন ক্ষমতার প্রত্যক্ষ বলয়ের মধ্যেই এরা বেড়ে ওঠে। কিন্তু এই নগ্ন ক্ষমতার প্রতি আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। আর বন্দুক যুদ্ধটাই যে কী সেটাও, স্পষ্ট নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক ব্যক্তি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কীভাবে মারা যায়—এই প্রশ্নও আমাদের মনে উদয় হয় না। সার্কাসের হাতির মাথা থাকে; কিন্তু এর ব্যবহার করতে সে শেখে না। ফলে খুব স্পষ্ট প্রশ্নও তার মনে উদয় হয় না।
নেতা হওয়ার পর নেতাদের আয় কয়েক শ গুণ বেড়ে যায়। দেশে-বিদেশে বাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকে। কোটিপতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কোটিপতি হওয়া দোষের কিছু নয়। কিন্তু কিছু না করেই কোটিপতি হওয়া কী স্বাভাবিক কিছু? ইলোন মাস্ক, জেফ বেজোস কিংবা বিল গেটস বিলিয়ন ডলারের মালিক। তাঁদের অর্থের উৎস ব্যবসা। আমাদের দেশেও ছোটখাটো ইলোন মাস্ক বা জেফ বেজোস আছেন। প্রচলিত ভাষায় বলা যায়, গরিবের ইলোন মাস্ক বা জেফ বেজোস। এই গরিবের ইলোন মাস্ক বা জেফ বেজোসের আয়ের উৎস কী? কিছু না করেই কেউ ডুপ্লেক্স বাড়ি কীভাবে করে? কোনো কিছু না করেই কেউ ব্যাংকের মালিক কীভাবে হয়? এই প্রশ্ন আমাদের মাথায় উদয় হয় না।
গত ২৭ জুলাই, ২০২১, প্রথম আলো পত্রিকায় ‘বাড়বাড়ন্ত কোটি টাকার হিসাব’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়। সেখানে বলা হয়, মার্চ ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ১১ হাজার ৬৪৭ টি। ২০১৫ সালে কোটি টাকার হিসাব ছিল ৫৭ হাজার ৫১৬ টি। গত মার্চে তা পৌঁছেছে ৯৪ হাজার ২৭২ টিতে। এত কোটিপতি কারা হচ্ছে, তা কিন্তু জানা যাচ্ছে না। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দেশে প্রকৃত কোটিপতির সঠিক হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করে না।’ ফলে এই হিসাবের মালিকদের আমরা দেখতে পাচ্ছি না এবং দেখতে চাইও না। কেন দেখতে চাই না? কারণ, এতে আমাদের কিছুই যায়-আসে না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেভাবে চলে, তাতে মনে হয় সেগুলো কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি। একান্ত অনুগতরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও চলে একই প্রক্রিয়া। পদোন্নতি পেতেও অনুগত হতে হবে, না হলে তা আসবে শামুকের গতিতে। এই গতিও ধারাবাহিক থাকবে কিনা সন্দেহ আছে। শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে হলে নিয়মিত মিছিল-মিটিং করতে হবে। ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়েও কখনো কখনো এই মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়। গেস্টরুম করতে হবে, যেখানে ম্যানার শেখানোর নামে উদ্ধত আচরণ করতে শেখানো হয়। চলে মানসিক অত্যাচার। কখনো কখনো শারীরিকভাবে নিগ্রহের স্বীকারও হতে হয়। তথাকথিত বড় ভাইদের উঠতে বসতে সালাম দিতে হবে, হ্যান্ডশেক করতে হয়। অন্যথায় চরম মূল্য দিতে হবে। এসব কিছুই শিরোধার্য হিসেবে আমরা মেনে নিয়েছি।
একখানা ডাবের দাম ১০০ টাকা। ডাব না খেলেও চলে। ভাত খেতে ডাব লাগে না। আবার ভাত খালিও খাওয়া যায় না। শাক-সবজি, তরিতরকারি, মাছ-মাংস কিছু তো দরকার। মাছ-মাংসের কথা বাদ দিলাম। তরিতরকারির দাম এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছেছে, সেই দামের কাছে কতজনের পৌঁছানো সম্ভব? মধ্যবিত্তের জন্য এ দাম অসহনীয়, আর নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। করোনার মধ্যে অসংখ্য মানুষ দরিদ্র হয়েছে, অনেকে কাজ হারিয়েছে। তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন বৃদ্ধি। কিন্তু এ নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। যেন এমন হওয়ারই কথা ছিল। সবাই একে মেনে নিয়েছে। উচ্চবিত্তরা মেনে নিয়েছে কারণ, এতে তাদের তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষেরাও এত সহজে একে কেন মেনে নিল? ১ কেজি কাঁচা তরকারি ১৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হবে—এটা কি এত স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়ার বিষয়? তার ওপর কৃষকেরা খুব কম দামে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে এসব পণ্য বিক্রি করেন। পণ্যের এই লাগামহীন দাম বাড়ার পেছনে থাকে এই মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগামহীন মুনাফা। মধ্যস্বত্বভোগীরা লাগামহীন মুনাফা করবে—এও আমরা মেনেই নিয়েছি। আবার সেই প্রশ্ন—কেন মেনে নিয়েছি? কারণ আর কিছু নয়, আমাদের মনস্তত্ত্ব।
করোনার আগে বাসে উঠলে বলত—‘৫ টাকার নিচে ভাড়া নাই; যেখানে নামো কমপক্ষে ৫ টাকা ভাড়া দিতে হবে।’ ৫ টাকার ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেল। অর্থাৎ, দূরত্ব যাই হোক ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। গাড়ি চালকদের এই আবদারও মেনে নিল মানুষ। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে বলে সরকার তেলের দাম বাড়িয়ে দিল। পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট ডাকল। মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়ল। কিন্তু এই দুর্ভোগের বিপরীতে তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। যেন এই দুর্ভোগ হওয়ারই কথা ছিল। তারা আবদার করল ভাড়া বাড়াতে হবে, না হলে গাড়ি চলবে না। ২ / ৩ দিনের মাথায় সরকার নবাবদের আবদার মেনে নিয়ে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দিল। এবার যেখানেই নামুন, ভাড়া দিতে হবে ১৫ টাকা। বিজয়নগর থেকে পল্টনে আসতেও ভাড়া গুনতে হবে ১৫ টাকা। ১৬ কোটি বাঙালি বিল গেটস হলে এই আবদার মেনে নেওয়া কঠিন ছিল না। কিন্তু অধিকাংশ বাঙালি বিল গেটসের ১ সেকেন্ডের আয় সারা বছরে করতে পারে না, অনেকে সারা জীবনেও পারে না। অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক অবস্থার মধ্যে পড়ে থাকা এসব বাঙালির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না, যখন সরকার আবদার মেনে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। কয়েক দিন পর যদি আর কোনো উপলক্ষ ধরে পরিবহন মালিকেরা আরও ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর আবদার করে, তখন কি সরকার তাও মেনে নেবে? সরকার বাড়াবে কি-না, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। তবে সার্কাসের হাতিদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা এখনই বলে দেওয়া যায়—মেনে নেবে।
লেখক: সাংবাদিক, আজকের পত্রিকা
বুনো হাতি কোনো গ্রামে ঢুকলে মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালাতে শুরু করে। কারণ, হাতির পায়ের নিচে পড়লে আর রক্ষা নেই। জীবন বাঁচাতে মানুষ এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে। আবার আরেক ধরনের হাতির দেখা মেলে, যে হাতি দেখলে মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালায় না, বরং হাতির ঘাড়ে চড়ে বসে। মানুষের নির্দেশমতো এই হাতি দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়। এই হাতি বুনো হাতি নয়, সার্কাসের হাতি। শারীরিক গঠনে বুনো হাতি আর সার্কাসের হাতির মধ্যে পার্থক্য নেই। পার্থক্য মনস্তত্ত্বে। বুনো হাতি মানুষের দাসত্ব মেনে নেয় না। আর সার্কাসের হাতি মনে করে এই তার নিয়তি। এর থেকে তার মুক্তি নেই। যত দিন জীবন আছে, তত দিন এভাবেই চলতে হবে। মানুষের দাস হয়েই তাকে থাকতে হবে। মানুষ যা করতে বলবে, তাই করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো সার্কাসের হাতির এমন মনস্তত্ত্ব কীভাবে তৈরি হলো? বাচ্চা হাতিকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সার্কাসের হাতি হিসেবে গড়ে তোলা হয়। বাচ্চা হাতিকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। প্রথম সে শিকল থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। শিকল দিয়ে বাঁধার কারণে সে মুক্ত হতে পারে না। পায়ে ব্যথা পায়, তার পা রক্তাক্ত হয়। কিন্তু মুক্তি মেলে না। এক সময় সে ধরে নেয় এর থেকে তার আর মুক্তি নেই। সে দাসত্বকে বরণ করে নেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতির শারীরিক আকৃতি বাড়তে থাকে। এক সময় সে প্রকাণ্ড আকার ধারণ করে। শারীরিক গঠন বাড়লেও তার মানসিক শক্তি বাড়ে না। সে মুক্তির কথা ভুলে যায়। ভুলে যায় তার শরীরের সক্ষমতার কথা। ফলে ৪০ কেজি ওজনের একজন দুপেয়ে প্রাণী ওর ঘাড়ে চড়ে রাজত্ব শুরু করে। ঘাড়ের ওপর দু পা রেখে সার্কাসের হাতিকে নির্দেশনা দিতে শুরু করে। খুব প্রভুভক্ত হয়ে হাতি তার মনিবের নির্দেশনা মেনে চলে।
বাঙালির মনস্তত্ত্ব এই সার্কাসের হাতির মতো। হাতির মতো এরাও সব ধরনের দাসত্ব মেনে নিয়েছে। চোখের সামনে খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যা হোক না কেন—এটা তাদের কাছে যেন খুব স্বাভাবিক বিষয়। এ নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলে। সেই বেপরোয়া গাড়ির নিচে প্রতিদিনই মানুষ মারা যায়। মাঝেমধ্যে পত্রিকায় নারী ধর্ষণের খবর আসে। এই সমাজ নারীদের জন্য কতটা ভয়ানক, তা কেবল নারীরাই অনুধাবন করতে পারে। রাস্তায় বের হলে নোংরা কথা, নোংরা ইঙ্গিত—এ যেন নারীদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা। নিজের ইচ্ছামতো ভোট দেওয়ার কারণে এক নারী তাঁর সন্তানদের সামনে ধর্ষিত হয়। দিনের আলোতে কুপিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়। ভিডিও ভাইরাল হলে ঘাতক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়। কিন্তু এই ঘাতকদের কারা তৈরি করে, সেটা সামনে আসে না। অবশ্য কারা তৈরি করে সেটাও অজানা নয়। নগ্ন ক্ষমতার প্রত্যক্ষ বলয়ের মধ্যেই এরা বেড়ে ওঠে। কিন্তু এই নগ্ন ক্ষমতার প্রতি আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। আর বন্দুক যুদ্ধটাই যে কী সেটাও, স্পষ্ট নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক ব্যক্তি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কীভাবে মারা যায়—এই প্রশ্নও আমাদের মনে উদয় হয় না। সার্কাসের হাতির মাথা থাকে; কিন্তু এর ব্যবহার করতে সে শেখে না। ফলে খুব স্পষ্ট প্রশ্নও তার মনে উদয় হয় না।
নেতা হওয়ার পর নেতাদের আয় কয়েক শ গুণ বেড়ে যায়। দেশে-বিদেশে বাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকে। কোটিপতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কোটিপতি হওয়া দোষের কিছু নয়। কিন্তু কিছু না করেই কোটিপতি হওয়া কী স্বাভাবিক কিছু? ইলোন মাস্ক, জেফ বেজোস কিংবা বিল গেটস বিলিয়ন ডলারের মালিক। তাঁদের অর্থের উৎস ব্যবসা। আমাদের দেশেও ছোটখাটো ইলোন মাস্ক বা জেফ বেজোস আছেন। প্রচলিত ভাষায় বলা যায়, গরিবের ইলোন মাস্ক বা জেফ বেজোস। এই গরিবের ইলোন মাস্ক বা জেফ বেজোসের আয়ের উৎস কী? কিছু না করেই কেউ ডুপ্লেক্স বাড়ি কীভাবে করে? কোনো কিছু না করেই কেউ ব্যাংকের মালিক কীভাবে হয়? এই প্রশ্ন আমাদের মাথায় উদয় হয় না।
গত ২৭ জুলাই, ২০২১, প্রথম আলো পত্রিকায় ‘বাড়বাড়ন্ত কোটি টাকার হিসাব’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়। সেখানে বলা হয়, মার্চ ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ১১ হাজার ৬৪৭ টি। ২০১৫ সালে কোটি টাকার হিসাব ছিল ৫৭ হাজার ৫১৬ টি। গত মার্চে তা পৌঁছেছে ৯৪ হাজার ২৭২ টিতে। এত কোটিপতি কারা হচ্ছে, তা কিন্তু জানা যাচ্ছে না। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দেশে প্রকৃত কোটিপতির সঠিক হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করে না।’ ফলে এই হিসাবের মালিকদের আমরা দেখতে পাচ্ছি না এবং দেখতে চাইও না। কেন দেখতে চাই না? কারণ, এতে আমাদের কিছুই যায়-আসে না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেভাবে চলে, তাতে মনে হয় সেগুলো কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি। একান্ত অনুগতরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও চলে একই প্রক্রিয়া। পদোন্নতি পেতেও অনুগত হতে হবে, না হলে তা আসবে শামুকের গতিতে। এই গতিও ধারাবাহিক থাকবে কিনা সন্দেহ আছে। শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে হলে নিয়মিত মিছিল-মিটিং করতে হবে। ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়েও কখনো কখনো এই মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়। গেস্টরুম করতে হবে, যেখানে ম্যানার শেখানোর নামে উদ্ধত আচরণ করতে শেখানো হয়। চলে মানসিক অত্যাচার। কখনো কখনো শারীরিকভাবে নিগ্রহের স্বীকারও হতে হয়। তথাকথিত বড় ভাইদের উঠতে বসতে সালাম দিতে হবে, হ্যান্ডশেক করতে হয়। অন্যথায় চরম মূল্য দিতে হবে। এসব কিছুই শিরোধার্য হিসেবে আমরা মেনে নিয়েছি।
একখানা ডাবের দাম ১০০ টাকা। ডাব না খেলেও চলে। ভাত খেতে ডাব লাগে না। আবার ভাত খালিও খাওয়া যায় না। শাক-সবজি, তরিতরকারি, মাছ-মাংস কিছু তো দরকার। মাছ-মাংসের কথা বাদ দিলাম। তরিতরকারির দাম এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছেছে, সেই দামের কাছে কতজনের পৌঁছানো সম্ভব? মধ্যবিত্তের জন্য এ দাম অসহনীয়, আর নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। করোনার মধ্যে অসংখ্য মানুষ দরিদ্র হয়েছে, অনেকে কাজ হারিয়েছে। তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন বৃদ্ধি। কিন্তু এ নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। যেন এমন হওয়ারই কথা ছিল। সবাই একে মেনে নিয়েছে। উচ্চবিত্তরা মেনে নিয়েছে কারণ, এতে তাদের তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষেরাও এত সহজে একে কেন মেনে নিল? ১ কেজি কাঁচা তরকারি ১৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হবে—এটা কি এত স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়ার বিষয়? তার ওপর কৃষকেরা খুব কম দামে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে এসব পণ্য বিক্রি করেন। পণ্যের এই লাগামহীন দাম বাড়ার পেছনে থাকে এই মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগামহীন মুনাফা। মধ্যস্বত্বভোগীরা লাগামহীন মুনাফা করবে—এও আমরা মেনেই নিয়েছি। আবার সেই প্রশ্ন—কেন মেনে নিয়েছি? কারণ আর কিছু নয়, আমাদের মনস্তত্ত্ব।
করোনার আগে বাসে উঠলে বলত—‘৫ টাকার নিচে ভাড়া নাই; যেখানে নামো কমপক্ষে ৫ টাকা ভাড়া দিতে হবে।’ ৫ টাকার ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেল। অর্থাৎ, দূরত্ব যাই হোক ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। গাড়ি চালকদের এই আবদারও মেনে নিল মানুষ। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে বলে সরকার তেলের দাম বাড়িয়ে দিল। পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট ডাকল। মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়ল। কিন্তু এই দুর্ভোগের বিপরীতে তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। যেন এই দুর্ভোগ হওয়ারই কথা ছিল। তারা আবদার করল ভাড়া বাড়াতে হবে, না হলে গাড়ি চলবে না। ২ / ৩ দিনের মাথায় সরকার নবাবদের আবদার মেনে নিয়ে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দিল। এবার যেখানেই নামুন, ভাড়া দিতে হবে ১৫ টাকা। বিজয়নগর থেকে পল্টনে আসতেও ভাড়া গুনতে হবে ১৫ টাকা। ১৬ কোটি বাঙালি বিল গেটস হলে এই আবদার মেনে নেওয়া কঠিন ছিল না। কিন্তু অধিকাংশ বাঙালি বিল গেটসের ১ সেকেন্ডের আয় সারা বছরে করতে পারে না, অনেকে সারা জীবনেও পারে না। অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক অবস্থার মধ্যে পড়ে থাকা এসব বাঙালির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না, যখন সরকার আবদার মেনে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। কয়েক দিন পর যদি আর কোনো উপলক্ষ ধরে পরিবহন মালিকেরা আরও ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর আবদার করে, তখন কি সরকার তাও মেনে নেবে? সরকার বাড়াবে কি-না, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। তবে সার্কাসের হাতিদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা এখনই বলে দেওয়া যায়—মেনে নেবে।
লেখক: সাংবাদিক, আজকের পত্রিকা
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
৭ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
৭ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
৭ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৭ ঘণ্টা আগে