তরুণ চক্রবর্তী
মোদি ম্যাজিকের দিন শেষ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কৃষকদের লাগাতার আন্দোলন, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা, ব্যাপক দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর শাসক দলের বর্বরতা—একাধিক ইস্যু রয়েছে বিরোধীদের হাতে।
তাঁদের ঠাকুমা, ভারতের সাবেক প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দলে বিরুদ্ধ স্বর আগেই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বাঘা বাঘা নেতাকে বাদ দিয়েই দলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একনায়কতন্ত্র। তাই গণতন্ত্রকে হত্যা করে জরুরি অবস্থা জারিতেও পিছপা হননি তিনি। নিজের নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে ঠাকুমা প্রাণ হারানোয় তাঁদের বাবা, প্রয়াত রাজীব গান্ধীও সেই ধারাতেই কংগ্রেসকে চালিয়েছেন। ঠাকুমার আমলে দোর্দণ্ড প্রতাপ প্রণব মুখার্জিকে তিনি দল থেকে বের করে দেন। তবে তাঁদের বাবা জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারানোয় কিছুদিনের জন্য দলের হাল চলে গিয়েছিল গান্ধী পরিবারের বাইরে। কিন্তু তাঁদের মা সোনিয়া গান্ধী দলের চালিকাশক্তি নিজের হাতে নিয়ে বুঝিয়ে দেন, গান্ধী পরিবারের প্রতি আনুগত্যই কংগ্রেসিদের একমাত্র কর্তব্য। পারিবারিক শাসনের তামাম অভিযোগ নিয়েই ভারতে টানা ১০ বছর মনমোহন সিংয়ের সরকার চলে শুধু সোনিয়ার আনুগত্যে। আবার গান্ধী পরিবারের আনুগত্যে খামতি থাকায় প্রধানমন্ত্রিত্বের বদলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিতে হয় ভারতীয় রাজনীতিতে দাপুটে বাঙালি প্রণব মুখার্জিকে।
জেপিতে নরেন্দ্র মোদির উত্থানে টালমাটাল কংগ্রেসের হালও গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীর নরম হাতেই দিয়েছিলেন সোনিয়া। কিন্তু রাহুল ব্যর্থ। রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র দলের আস্থা আদায়ে ব্যর্থ। তাই ৭৪ বছর বয়সে ফের সোনিয়াকেই অসুস্থ শরীরে ধরতে হচ্ছে দলের লাগাম।
কংগ্রেসের পারিবারিক শাসন নিয়ে ভারতে অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু শুধু কংগ্রেসই নয়, ভারতের বেশির ভাগ দলেই পারিবারিক শাসনই এখন ভবিতব্য। ব্যতিক্রম বিজেপি ও বামপন্থী দলগুলো।
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, বেশির ভাগ রাজ্যেই আঞ্চলিক দলগুলোর পরিবারতন্ত্রই প্রধান ভরসা। যেমন জম্মু ও কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সে ফারুক আবদুল্লাহর পর তাঁর ছেলে ওমর আবদুল্লাহ, উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টিতে মুলায়ম সিং যাদবের ছেলে অখিলেশ যাদব, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মহারাষ্ট্রে শিবসেনার বাল ঠাকরের ভাইপো উদ্ভব ঠাকরে, তামিলনাড়ুতে ডিএমকের এম করুণানিধির ছেলে এম কে স্টালিন—এ রকম প্রচুর উদাহরণ রয়েছে। পারিবারিক সম্পত্তির মতো দলের উত্তরাধিকারও পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমর্পণ প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এটাকে প্রথম সফলভাবে চালু করেন ইন্দিরা গান্ধী। তাঁর বাবা পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু বেঁচে থাকতেই নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে তুলে ধরতে ইন্দিরা ছিলেন যত্নশীল। নেহরুর মৃত্যুর পর তাবড় তাবড় নেতাদের কোণঠাসা করে দলের লাগাম তুলে নেন নিজের হাতে। জগজ্জীবন রাম, জয়প্রকাশ নারায়ণ, চন্দ্রশেখর, মোরারজি দেশাইয়ের মতো নেতাদের টেক্কা দিয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের গুণে কংগ্রেসে চালু করেন ইন্দিরা-রাজ। লোকের মুখে মুখে, ‘ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া!’ তাঁর অকালপ্রয়াণে মায়ের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে রাজীব গান্ধী ক্ষমতায় এসেই দলকে নিজের তালুবন্দী করতে সক্ষম হন। তবে দেশবাসীর সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হন রাজীব। সেই থেকে কংগ্রেসের অন্তর্জলীযাত্রা শুরু।
রাজীবের শোককে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় এলেও একক শক্তিতে সরকার গড়তে আর পারেনি কংগ্রেস। পিভি নরসীমা রাও দল ও সরকারের হাল ধরেছিলেন ঠিকই। কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের গান্ধী-পরিবারের প্রতি আনুগত্যের বলি হতে হয় তাঁকে। সীতারাম কেশরির হাত ঘুরে জন্মসূত্রে বিদেশি সোনিয়ার হাতেই ফের শুরু কংগ্রেস গান্ধী-রাজ। দলকে মোটামুটি এক সুতোয় বেঁধে অটল বিহারি বাজপেয়ির সরকারকে পরাস্ত করে, আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোট করে দু-দুবার কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফেরান তিনি। সোনিয়ার হাত ধরেই উত্থান ছেলে রাহুলের। কিছুদিন পর বোন প্রিয়াঙ্কাও চলে আসেন।
পারিবারিক প্রথা মেনেই কংগ্রেসের সভাপতি হন রাহুল। কিন্তু তাঁর নরম হাতে কংগ্রেস লোকসভায় সবচেয়ে খারাপ ফল করে ২০১৪ ও ২০১৯ সালে। হারের দায় মেনে কংগ্রেস সভাপতি পদ ছাড়েন তিনি।
কিন্তু এখনো তিনিই সবচেয়ে ক্ষমতাবান। দায়িত্বহীন ক্ষমতা। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে চেহারায় মিল থাকায় অনেকেই ভেবেছিলেন প্রিয়াঙ্কা বোধ হয় ঠাকুমার মতো জনমোহিনী হবেন। কিন্তু ইন্দিরা তো দূর অস্ত, সোনিয়াও হতে পারেননি তিনি। তাই ভরসা কমছে কংগ্রেসিদের।
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তিনি সামাজিক গণমাধ্যমে সক্রিয় হলেও মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। দলীয় সংগঠনকেও শক্তিশালী করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ। তাঁর ভুলে আসাম, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া, মণিপুরসহ একাধিক রাজ্যে কংগ্রেস সরকার গড়তে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে সাবেক কংগ্রেস নেতারাই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্য শাসন করছেন। অথচ কংগ্রেস ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে। কংগ্রেস প্রথমসারির ২৩ জন নেতা (জি-২৩ নামে পরিচিত) চিঠি দিয়ে দলের স্থায়ী সভাপতি এবং সাংগঠনিক নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। কিন্তু কোনো হেলদোল দেখাননি রাহুল। এখন অবশ্য তাঁর মা দলের সভানেত্রীর পদ নিতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু দলের ভাঙন অব্যাহত। কংগ্রেসশাসিত পাঞ্জাব ও ছত্তিশগড়ে দলে বিদ্রোহ চলছে। দলের ক্রাইসিস মেটাতে ব্যর্থ রাহুল। সোনিয়া এতকাল দলীয় কোন্দল সামলাতে অনেকটাই সক্ষম ছিলেন। কিন্তু তাঁর অসুস্থতা কংগ্রেসকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। সামনেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন। কিন্তু এখনো দিশেহারা কংগ্রেস।
অথচ বিজেপির বিরুদ্ধে ইস্যুর অভাব নেই। জনগণ ক্ষুব্ধও। মোদি ম্যাজিকের দিন শেষ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কৃষকদের লাগাতার আন্দোলন, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা, ব্যাপক দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর শাসক দলের বর্বরতা—একাধিক ইস্যু রয়েছে বিরোধীদের হাতে। কিন্তু জাতীয় সংসদে বা সামাজিক গণমাধ্যমেই আটকে রয়েছেন রাহুল। উত্তর প্রদেশে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর ছেলে আন্দোলনরত কৃষকদের গাড়িচাপা দিয়ে মারলেও দেশজুড়ে ঝড় তুলতে ব্যর্থ রাহুল। গত দুটি লোকসভা নির্বাচনে প্রমাণিত, তাঁর জনপ্রিয়তা নেই। অথচ বিকল্প কাউকে তুলে আনতে চাইছে না গান্ধী পরিবার। গান্ধী পরিবারের বাইরে দলের লাগাম চলে যাক–এটা তাঁরা চান না। মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করা হলেও কংগ্রেসের লাগাম ছিল সোনিয়ার হাতেই। কিন্তু সোনিয়ার উত্তরসূরি রাহুল বা প্রিয়াঙ্কার হাত এতটাই দুর্বল যে হাতকে (হাত কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক) কংগ্রেসিরাও অনেকে ভরসা পাচ্ছেন না। হয় বিজেপি, নয় আঞ্চলিক দলে পা বাড়াচ্ছেন আজন্ম কংগ্রেসিরাও। মোদির বিকল্প সন্ধানে গোটা দেশ সচেষ্ট হলেও গান্ধী পরিবার রয়েছে পারিবারিক শাসন ধরে রাখার নেশায় বুঁদ।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা।
মোদি ম্যাজিকের দিন শেষ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কৃষকদের লাগাতার আন্দোলন, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা, ব্যাপক দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর শাসক দলের বর্বরতা—একাধিক ইস্যু রয়েছে বিরোধীদের হাতে।
তাঁদের ঠাকুমা, ভারতের সাবেক প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দলে বিরুদ্ধ স্বর আগেই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বাঘা বাঘা নেতাকে বাদ দিয়েই দলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একনায়কতন্ত্র। তাই গণতন্ত্রকে হত্যা করে জরুরি অবস্থা জারিতেও পিছপা হননি তিনি। নিজের নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে ঠাকুমা প্রাণ হারানোয় তাঁদের বাবা, প্রয়াত রাজীব গান্ধীও সেই ধারাতেই কংগ্রেসকে চালিয়েছেন। ঠাকুমার আমলে দোর্দণ্ড প্রতাপ প্রণব মুখার্জিকে তিনি দল থেকে বের করে দেন। তবে তাঁদের বাবা জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারানোয় কিছুদিনের জন্য দলের হাল চলে গিয়েছিল গান্ধী পরিবারের বাইরে। কিন্তু তাঁদের মা সোনিয়া গান্ধী দলের চালিকাশক্তি নিজের হাতে নিয়ে বুঝিয়ে দেন, গান্ধী পরিবারের প্রতি আনুগত্যই কংগ্রেসিদের একমাত্র কর্তব্য। পারিবারিক শাসনের তামাম অভিযোগ নিয়েই ভারতে টানা ১০ বছর মনমোহন সিংয়ের সরকার চলে শুধু সোনিয়ার আনুগত্যে। আবার গান্ধী পরিবারের আনুগত্যে খামতি থাকায় প্রধানমন্ত্রিত্বের বদলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিতে হয় ভারতীয় রাজনীতিতে দাপুটে বাঙালি প্রণব মুখার্জিকে।
জেপিতে নরেন্দ্র মোদির উত্থানে টালমাটাল কংগ্রেসের হালও গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীর নরম হাতেই দিয়েছিলেন সোনিয়া। কিন্তু রাহুল ব্যর্থ। রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র দলের আস্থা আদায়ে ব্যর্থ। তাই ৭৪ বছর বয়সে ফের সোনিয়াকেই অসুস্থ শরীরে ধরতে হচ্ছে দলের লাগাম।
কংগ্রেসের পারিবারিক শাসন নিয়ে ভারতে অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু শুধু কংগ্রেসই নয়, ভারতের বেশির ভাগ দলেই পারিবারিক শাসনই এখন ভবিতব্য। ব্যতিক্রম বিজেপি ও বামপন্থী দলগুলো।
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, বেশির ভাগ রাজ্যেই আঞ্চলিক দলগুলোর পরিবারতন্ত্রই প্রধান ভরসা। যেমন জম্মু ও কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সে ফারুক আবদুল্লাহর পর তাঁর ছেলে ওমর আবদুল্লাহ, উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টিতে মুলায়ম সিং যাদবের ছেলে অখিলেশ যাদব, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মহারাষ্ট্রে শিবসেনার বাল ঠাকরের ভাইপো উদ্ভব ঠাকরে, তামিলনাড়ুতে ডিএমকের এম করুণানিধির ছেলে এম কে স্টালিন—এ রকম প্রচুর উদাহরণ রয়েছে। পারিবারিক সম্পত্তির মতো দলের উত্তরাধিকারও পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমর্পণ প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এটাকে প্রথম সফলভাবে চালু করেন ইন্দিরা গান্ধী। তাঁর বাবা পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু বেঁচে থাকতেই নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে তুলে ধরতে ইন্দিরা ছিলেন যত্নশীল। নেহরুর মৃত্যুর পর তাবড় তাবড় নেতাদের কোণঠাসা করে দলের লাগাম তুলে নেন নিজের হাতে। জগজ্জীবন রাম, জয়প্রকাশ নারায়ণ, চন্দ্রশেখর, মোরারজি দেশাইয়ের মতো নেতাদের টেক্কা দিয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের গুণে কংগ্রেসে চালু করেন ইন্দিরা-রাজ। লোকের মুখে মুখে, ‘ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া!’ তাঁর অকালপ্রয়াণে মায়ের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে রাজীব গান্ধী ক্ষমতায় এসেই দলকে নিজের তালুবন্দী করতে সক্ষম হন। তবে দেশবাসীর সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হন রাজীব। সেই থেকে কংগ্রেসের অন্তর্জলীযাত্রা শুরু।
রাজীবের শোককে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় এলেও একক শক্তিতে সরকার গড়তে আর পারেনি কংগ্রেস। পিভি নরসীমা রাও দল ও সরকারের হাল ধরেছিলেন ঠিকই। কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের গান্ধী-পরিবারের প্রতি আনুগত্যের বলি হতে হয় তাঁকে। সীতারাম কেশরির হাত ঘুরে জন্মসূত্রে বিদেশি সোনিয়ার হাতেই ফের শুরু কংগ্রেস গান্ধী-রাজ। দলকে মোটামুটি এক সুতোয় বেঁধে অটল বিহারি বাজপেয়ির সরকারকে পরাস্ত করে, আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোট করে দু-দুবার কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফেরান তিনি। সোনিয়ার হাত ধরেই উত্থান ছেলে রাহুলের। কিছুদিন পর বোন প্রিয়াঙ্কাও চলে আসেন।
পারিবারিক প্রথা মেনেই কংগ্রেসের সভাপতি হন রাহুল। কিন্তু তাঁর নরম হাতে কংগ্রেস লোকসভায় সবচেয়ে খারাপ ফল করে ২০১৪ ও ২০১৯ সালে। হারের দায় মেনে কংগ্রেস সভাপতি পদ ছাড়েন তিনি।
কিন্তু এখনো তিনিই সবচেয়ে ক্ষমতাবান। দায়িত্বহীন ক্ষমতা। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে চেহারায় মিল থাকায় অনেকেই ভেবেছিলেন প্রিয়াঙ্কা বোধ হয় ঠাকুমার মতো জনমোহিনী হবেন। কিন্তু ইন্দিরা তো দূর অস্ত, সোনিয়াও হতে পারেননি তিনি। তাই ভরসা কমছে কংগ্রেসিদের।
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তিনি সামাজিক গণমাধ্যমে সক্রিয় হলেও মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। দলীয় সংগঠনকেও শক্তিশালী করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ। তাঁর ভুলে আসাম, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া, মণিপুরসহ একাধিক রাজ্যে কংগ্রেস সরকার গড়তে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে সাবেক কংগ্রেস নেতারাই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্য শাসন করছেন। অথচ কংগ্রেস ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে। কংগ্রেস প্রথমসারির ২৩ জন নেতা (জি-২৩ নামে পরিচিত) চিঠি দিয়ে দলের স্থায়ী সভাপতি এবং সাংগঠনিক নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। কিন্তু কোনো হেলদোল দেখাননি রাহুল। এখন অবশ্য তাঁর মা দলের সভানেত্রীর পদ নিতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু দলের ভাঙন অব্যাহত। কংগ্রেসশাসিত পাঞ্জাব ও ছত্তিশগড়ে দলে বিদ্রোহ চলছে। দলের ক্রাইসিস মেটাতে ব্যর্থ রাহুল। সোনিয়া এতকাল দলীয় কোন্দল সামলাতে অনেকটাই সক্ষম ছিলেন। কিন্তু তাঁর অসুস্থতা কংগ্রেসকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। সামনেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন। কিন্তু এখনো দিশেহারা কংগ্রেস।
অথচ বিজেপির বিরুদ্ধে ইস্যুর অভাব নেই। জনগণ ক্ষুব্ধও। মোদি ম্যাজিকের দিন শেষ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কৃষকদের লাগাতার আন্দোলন, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা, ব্যাপক দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর শাসক দলের বর্বরতা—একাধিক ইস্যু রয়েছে বিরোধীদের হাতে। কিন্তু জাতীয় সংসদে বা সামাজিক গণমাধ্যমেই আটকে রয়েছেন রাহুল। উত্তর প্রদেশে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর ছেলে আন্দোলনরত কৃষকদের গাড়িচাপা দিয়ে মারলেও দেশজুড়ে ঝড় তুলতে ব্যর্থ রাহুল। গত দুটি লোকসভা নির্বাচনে প্রমাণিত, তাঁর জনপ্রিয়তা নেই। অথচ বিকল্প কাউকে তুলে আনতে চাইছে না গান্ধী পরিবার। গান্ধী পরিবারের বাইরে দলের লাগাম চলে যাক–এটা তাঁরা চান না। মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করা হলেও কংগ্রেসের লাগাম ছিল সোনিয়ার হাতেই। কিন্তু সোনিয়ার উত্তরসূরি রাহুল বা প্রিয়াঙ্কার হাত এতটাই দুর্বল যে হাতকে (হাত কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক) কংগ্রেসিরাও অনেকে ভরসা পাচ্ছেন না। হয় বিজেপি, নয় আঞ্চলিক দলে পা বাড়াচ্ছেন আজন্ম কংগ্রেসিরাও। মোদির বিকল্প সন্ধানে গোটা দেশ সচেষ্ট হলেও গান্ধী পরিবার রয়েছে পারিবারিক শাসন ধরে রাখার নেশায় বুঁদ।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১৩ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১৪ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৪ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৪ ঘণ্টা আগে