বিজন সাহা
যুদ্ধের পাশাপাশি সব সময়ই কাজ করে হিউম্যানিটারিয়ান এইডস। রাশিয়া ইতিমধ্যে কয়েক হাজার টন সাহায্য পাঠিয়েছে। যখনই কোনো জনপদ রুশ সেনাদের অধীনে আসে, তারা প্রথমেই যারা দীর্ঘদিন খাদ্যাভাবে ভুগছে, সেখানকার সেই সব সাধারণ মানুষদের মধ্যে খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বণ্টন করে। আর মানবতার কথা বলে মুখে ফেনা তোলা পশ্চিমা বিশ্ব অস্ত্র ছাড়া কী দিচ্ছে? এমনকি রাশিয়া যখন মানবিক করিডর খুলছে, তখন বিভিন্নভাবে সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
আসলে একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে, এই যুদ্ধ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় বাজার দখলের যুদ্ধ নয়, ব্রিটেনের ইইউ-বিরোধী যুদ্ধও। আসুন একটু পেছনে ফিরে তাকাই। নেপোলিয়নের ফ্রান্স প্রায় বিনা যুদ্ধে সমগ্র কন্টিনেন্টাল ইউরোপ দখল করে। ব্রিটেনের প্রধান শত্রু কে? নেপোলিয়ন। ১৮১২ সালে তাঁকে উসকে দেওয়া হয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ফলাফল সবার জানা।
এভাবেই ব্রিটেন প্রথম ইইউ ধ্বংস করেছিল। হ্যাঁ, সেটা ছিল প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়ন–নেপোলিয়ন সেটাই করতে চেয়েছিলেন। এরপর ১৯৩৯-৪১ সালে হিটলার সমগ্র কন্টিনেন্টাল ইউরোপ প্রায় বিনা যুদ্ধে দখল করে দ্বিতীয় ইইউর জন্ম দেন। ১৯৪১ সালে জার্মানির রাশিয়া আক্রমণের পেছনে ছিল চার্চিলের প্ররোচনা। সেই যুদ্ধ যে শুধু রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির ছিল না, তার প্রমাণ আমরা পাব স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের ইতিহাস থেকে। সেখানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানির পাশে যুদ্ধ করেছিল ইতালি, রোমানিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার কয়েক ব্যাটালিয়ন সৈন্য। ১৮১২ সালে ব্রিটেন ইউরোপের দুই প্রধান শক্তি ফ্রান্স ও রাশিয়াকে পরস্পর বিধ্বংসী যুদ্ধে নামিয়েছিল, ১৯৪১ সালে আবার ছিল ইউরোপের দুই প্রধান শক্তি জার্মানি ও রাশিয়া। এভাবেই ডিভাইড অ্যান্ড রুল মেথডে ব্রিটেন সারা বিশ্বকে পদানত করার চেষ্টা করেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেছে। তখন থেকেই সুযোগ খুঁজছে ইইউকে জব্দ করতে। এখন সে ইউক্রেনের হাত দিয়ে রাশিয়া ও ইইউকে নতুন যুদ্ধে নামিয়েছে। সঙ্গে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। লাভ? একই সঙ্গে বহু যুগের শত্রু রাশিয়া ও কন্টিনেন্টাল ইউরোপকে দুর্বল করা। সে ক্ষেত্রে সে আবারও সফল। আবারও ডিভাইড অ্যান্ড রুল।
ইদানীং অনেক কথা হচ্ছে বুচা নিয়ে, যেখানে নাকি রুশ সৈন্যরা নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করেছে। সেখানে আমরা কী দেখি? ইস্তাম্বুলে একধরনের ঐকমত্যে আসার পরই ব্রিটেন ঘোষণা করে, তারা রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলবে না। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে আদেশ দেয় তড়িঘড়ি করে কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর না করতে। এখন ভ্লাদিমির জেলেনস্কির নিরাপত্তার পুরোটাই ব্রিটিশ কমান্ডোর অধীনে। যদিও ৩০ মার্চ রুশ সৈন্য বুচা ত্যাগ করে এবং এরপর স্থানীয় মেয়র সব ঠিকঠাক আছে বলে ঘোষণা করেন এবং পরবর্তী কয়েক দিন কোনো হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায় না। কয়েক দিন বাদে কোত্থেকে যেন সেখানে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায় রাস্তার পাশে। রাশিয়া সেই লাশ কার, কবে, কীভাবে মারা গেল—এসব পরীক্ষার দাবি জানালেও পশ্চিমা বিশ্ব সেই দাবি উপেক্ষা করে। তাই সেটা যে প্রভোকেশন, রাশিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করার পাঁয়তারা, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সিরিয়ায় আমরা দেখেছি হোয়াইট হেলমেট কীভাবে ফেইক ভিডিও করে। ইউক্রেনও তার ব্যতিক্রম নয়। সবাই তো এক গুরুরই শিষ্য। এ ছাড়া ইউক্রেনে জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ করে যুদ্ধবন্দীদের হত্যার যে ভিডিও দেখানো হয়েছে, সেখানেও এমআই-৬-এর প্রিন্ট চোখে পড়ে। যখনই রাশিয়া এ সমস্ত খবর যে সত্য নয়, সেটা প্রমাণ করতে চাইছে; বিভিন্নভাবে তাকে সেটা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘে পর্যন্ত এ নিয়ে শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছে। কারণ, ঘটনার সত্য-মিথ্যা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। উদ্দেশ্য একটাই—রাশিয়াকে বিশ্বের মানুষের কাছে হেয় করা। গোয়েবলস বলেছিল, কোনো মিথ্যা যদি বারবার বলা হয়, সেটা সত্যে পরিণত হয়। এরা তো সেই গোয়েবলসেরই উত্তরসূরি।
আজ পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারের পতন হলো। কেন? তিনি আমেরিকার কথামতো রাশিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হননি। তাও ভালো। এর চেয়ে খারাপ অবস্থাও হতে পারত। সালভাদর আলিয়েন্দে, শেখ মুজিবুর রহমান—কত নেতাই তো মার্কিন ‘গণতান্ত্রিক’ ও ‘মানবিক’ রাজনীতির শিকার হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। ডমিনিক স্ট্রাউস-কান জনপ্রিয় ও সম্ভাবনাময় হওয়ার পরও নির্বাচনে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারেননি। আবার প্রায় অজ্ঞাত এমানুয়েল মাখো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এ এক প্যারাডক্স। গণতন্ত্রের মক্কা এই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতিতে যেকোনো স্বৈরাচারকেও হার মানায়। হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরাচার। কোনো দেশে স্বৈরাচারী শাসক যেমন জনগণের মুখ বন্ধ করে নিজের খেয়াল-খুশিমতো দেশ চালায়, যুক্তরাষ্ট্রও পৃথিবীর সব দেশের মুখ বন্ধ করে তাদের জাতীয় স্বার্থকে পদদলিত করে নিজের ইচ্ছাকে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়। আর যদি কেউ তা না মানে, তাহলে হয় সে দেশে সরকারের পতন ঘটে, সরকারপ্রধান প্রাণ হারান অথবা দেশটার অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সাবেক জেনারেল ব্ল্যাক সি, কালিনিনগ্রাদ, ভ্লাদিভোস্তক—এসব জায়গায় ন্যাটোর সামরিক তৎপরতা বাড়াতে বলছেন। এটা যে পারমাণবিক যুদ্ধ ডেকে আনতে পারে, সে কথা কি এরা ভাবেন? যদিও এখনো যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে, তবে সেটা হচ্ছে ইউক্রেনকে মধ্যে রেখে। এখানে ন্যাটোর প্রশিক্ষক, ছুটিতে থাকা সৈনিক—এ সবই আছে, আছে ন্যাটোর অস্ত্র, তবু সরাসরি ন্যাটো ও রাশিয়ার যুদ্ধ নয় এটি। অনেকের ধারণা, মারিউপোলের আজোভ স্টিলে ফ্রান্সের এক জেনারেল আটকা পড়েছেন। তাঁকে মুক্ত করে আনার জন্যই ইমানুয়েল মাখোঁ বারবার পুতিনকে ফোন করছেন। কী হবে যদি সত্যিই সেই যুদ্ধ লাগে? যুক্তরাষ্ট্র কি ভাবছে বরাবরের মতো সে এবারও রেহাই পাবে সাগরের ওপারে বসে? আর যদি হঠাৎ এটা পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হয়, যদি সাগর থেকে কয়েকটি বোমা যুক্তরাষ্ট্রে পড়ে, বড় বড় শহরে বা ইয়েলো স্টোন বা ওসব স্পর্শকাতর জায়গায় গিয়ে কোনো বোমা পড়ে, তাহলে প্রাণ-প্রকৃতির কী হবে?
উল্লেখ্য, ১৯১৭ সালের বিপ্লব, গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ হারিয়ে সোভিয়েত জনগণ সত্যিকার অর্থেই ছিল শান্তিপ্রিয়। তাই যখন আশির দশকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়, তারা সেটা লুফে নিয়েছিল। তাদের আশা ছিল—যুক্তরাষ্ট্র তাদের বন্ধু হবে। কিন্তু কী পেল তারা? নব্বইয়ের দশকের অরাজকতা। কারচুপিতে ভরা রাজনীতি, হতাশা, দারিদ্র্য; আর সবচেয়ে বড় কথা জাতীয় লাঞ্ছনা, অবমাননা। আর তাইতো তারা ঘুরে দাঁড়াল। আজ এখানে আগের মতো আর আমেরিকা-প্রেম নেই। ফলে মানুষ এখন জাতীয় মর্যাদা রক্ষা করতে চরম যুদ্ধে নামতেও প্রস্তুত। অন্তত লোকজনের সঙ্গে কথা বললে সেটাই মনে হয়। তারাও বলে, রাশিয়াই যদি না থাকে, সেই বিশ্ব দিয়ে আমাদের কী হবে। সত্যিকার অর্থেই পৃথিবী এক বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সব যুদ্ধই শেষ হয় সাধারণত শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে। তবে এবার সেটা হতে পারে পারস্পরিক ধ্বংসের মধ্য দিয়ে। তবে শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে হলেও বিশ্ব আর আগের মতো থাকবে না। ডলার আর একমাত্র কারেন্সি থাকবে না। সেটা আমেরিকার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। আমেরিকা লাগামহীনভাবে ডলার ছাপিয়ে সেই বাবলে (bubble) নিজেই ডুবে যেতে পারে। ইউরোপ হবে আরও অস্থির। একে তো জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে সেখানকার পণ্য আগের মতো কমপিটেটিভ থাকবে না। তার ওপর সামাজিক অস্থিরতার কারণে সেখানকার পুঁজি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে পারে। এই অঙ্ক অনেকের মতে ট্রিলিয়ন হতে পারে।
ইউরোপের কী হবে
সে ক্ষেত্রে ইউরোপের সুখের দিন শেষ। হতে পারে রাশিয়া, চীন, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের মতো করে চলবে। এতে যোগ দেবে আফ্রিকা, আরব দেশগুলো ও লাতিন আমেরিকা। আরব বসন্তের কথা সৌদি আরব, আরব আমিরাত ভোলেনি। এর ওপর আছেন জামাল খাশোগি। তাই তো দেখি বাইডেনের ডাকে সাড়া না দিয়ে চীনের সঙ্গে ইউয়ানের মাধ্যমে বাণিজ্য করতে চাইছে সৌদি আরব। ইউরোপে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি পূর্বের অবস্থান হারাবে। সেই স্থান দখল করার চেষ্টা করবে পোল্যান্ড। এর কারণ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে জার্মানির পক্ষে সামরিক শক্তি হয়ে ওঠাটা অনেক কঠিন। সেখানে অনেক বাধা। সেদিক থেকে পোল্যান্ড মুক্ত।
জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এত বড় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরও দুই দেশের মানুষ পরস্পরের বন্ধু হতে পেরেছিল। পোল্যান্ড সব সময়ই ছিল রুশবিরোধী। আর এটি ভৌগোলিকভাবে রাশিয়ার আরও কাছে। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি থেকে তাদের সামরিক ঘাঁটির এক বিরাট অংশ পোল্যান্ডে স্থানান্তরিত করতে আগ্রহী। এমনকি পারমাণবিক অস্ত্রও। জাপানও সামরিকভাবে শক্তিশালী হবে বলে অনেকের ধারণা। জাপানের ঐতিহাসিক পটভূমি, সামুরাই, হারিকিরি—এসব সে কথাই বলে। তবে ইউরোপের দেশগুলো যতটা এক্সপোজড, জাপান ততটা নয়। এ দেশ ইকোনোমিক্যালি ও টেকনোলজিক্যালি অনেক উন্নত। তাই ইসরায়েলের মতো সেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম। সেখানে একটাই বাধা—হিরোশিমা ও নাগাসাকির স্মৃতি।
এক কথায় আমরা আবার এক নতুন যুগের দোরগোড়ায়। এটা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের চেয়েও ব্যাপকভাবে নাড়া দেবে বিশ্বকে। সেই ভূমিকম্পে কে টিকে থাকবে, আর কে হারিয়ে যাবে, সেটা শুধু ভবিষ্যৎই বলতে পারে। বাইবেলে সডোম ও গোমেরা নামে প্রাচুর্যপূর্ণ দুই শহরের গল্প আছে, যারা নাকি বিলাস ও ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে ভোগবাদী বিশ্বে আমরা কি সেই চিত্রই দেখছি না। মানব সমাজ কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে না? অনেক দিন থেকেই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো (ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা) ও জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নিজেদের এক্সক্লুসিভ ক্লাবের সদস্য ভাবে। এবার হয়তো সেটাই হবে—অফিশিয়ালি। বিশ্ব দুই ভিন্ন ক্যাম্পে বাস করবে। পশ্চিমা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র তার মোড়লগিরি আগের মতোই করে যাবে, বাকি অংশে থাকবে একাধিক কেন্দ্র, যার পুরোধা হবে চীন, রাশিয়া ও ভারত।
পশ্চিমা বিশ্ব নেমেছে অল আউট যুদ্ধে আর তাই তো খেলোয়াড়, শিল্পী, সাহিত্যিক, অভিনেতা অভিনেত্রী, সাংবাদিক—কেউ বাদ যাচ্ছে না। এরা রাশিয়াকে একঘরে করে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। ইতিহাস বলে জিন্নাহর ব্রাহ্মণ পিতামহকে মাছের ব্যবসা করার দায়ে একঘরে করে গ্রাম্য সমাজ। তারা আশ্রয় পায় ইসলামে। পরবর্তী ইতিহাস ভারত বিভাগ। যদিও পাকিস্তান সৃষ্টি ইসলাম বা মানবজাতির জন্য কতটা সুফল বয়ে এনেছে, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ, তবুও কথা হলো কাউকে অন্যায়ভাবে কোণঠাসা করার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।
ন্যাটো কার জন্য
অনেক সময় মনে হয় ন্যাটো আসলে কার দরকার। ওয়ারশ জোট পতনের পর এর যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, করছেন। মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও ন্যাটোর প্রসারণ রাশিয়াকে ক্ষুব্ধ করেছে। তাকে বাধ্য করেছে নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবতে। ফলে ইউরোপের নিরাপত্তা বাড়েনি, কমেছে। কারণ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তেজনা কমায় না, বাড়ায়। তা ছাড়া সৃষ্টিকালে ন্যাটো আত্মরক্ষাকারী জোট হলেও সে আর এখন তা নেই। সার্বিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার ঘটনা একে আক্রমণকারী জোট হিসেবেই প্রমাণ করে। তাহলে কেন এই জোট? উত্তর—যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রির জন্য। ফলে ইউরোপের দেশগুলো বাধ্য হচ্ছে নিজেদের নিরাপত্তা বাজেট বাড়াতে; আর শর্ত অনুযায়ী মূলত মার্কিন অস্ত্র কিনতে। রাশিয়ায় ভয় দেখিয়ে ইউরোপে মোতায়েন করা হচ্ছে মার্কিন সেনা। এতে করে ইউরোপ আমেরিকার ওপর আরও বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। রাশিয়াকেও বন্দুকের মুখে রেখে বশ মানানোর চেষ্টা করা যাচ্ছে। আর এখানেই বেজেছে গোল। রাশিয়া ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এখন ইউক্রেনের মাধ্যমে এবং পরে ইউরোপের হাত দিয়ে রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে। সেটি আর হবে বলে মনে হয় না। বর্তমান টেকনোলজির যুগে এমনকি ইউরোপ থেকে রাশিয়া আক্রমণ করার পরও শত শত নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আমেরিকায় গিয়ে পড়বে। এই আশঙ্কাই এখন পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রেখেছে মার্কিন আগ্রাসী নীতি থেকে।
রাশিয়া ও পশ্চিমা নেতাদের কথাবার্তা খেয়াল করলে দেখবেন, রাশিয়া যতটা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানে প্রস্তুত, পশ্চিম ততটা নয়। কথায় কথায় তারা রাশিয়া, রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসের কথা বলে। কিন্তু পশ্চিমের অর্থনীতি ধ্বংসের বাস্তব চাবিকাঠি রাশিয়ার হাতে থাকার পরও সে সেটা করছে না, এ নিয়ে হুমকি দিচ্ছে না। কেউ কি ভেবেছিল বিশ্ব রাশিয়ার ওপর এতটা নির্ভরশীল? যত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে ইউরোপের মানুষ তত বেশি বিপদে পড়ছে। এরই মধ্যে ইউরোপের কোথাও কোথাও কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে দেখি সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ ও নতুন রাশিয়ার প্রথম দিনগুলোর অবস্থা। দুই বোতলের বেশি সূর্যমুখী তেল দিচ্ছে না। আমলারা বলছেন, শরীরে তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রিতে নামিয়া আনতে। সোভিয়েত ইউনিয়নে এটা সম্ভব ছিল, ইউরোপের মানুষ কি মানবে সেই নির্দেশ? তবে এভাবে চলতে থাকলে তাকে অন্যভাবে ভাবতে হতে পারে। মিনস্ক থেকে শিক্ষা নিয়ে রাশিয়া ইতিমধ্যেই বলেছে, তারা আর ইঁদুর-বিড়াল খেলতে রাজি নয়। এখন কোনো ইউক্রেন শহর দখল করার পর তারা আর সরে আসবে না, যাতে বুচার মতো কোনো প্রভোকেশন কেউ না করতে পারে।
যেসব এলাকা মুক্ত হচ্ছে, সেখানে স্থানীয় লোকদের নিয়ে প্রশাসন গড়ে তোলা হচ্ছে। আসলে পুরোনো প্রশাসনে বান্দেরার অনুসারীরা এমনভাবে ঢুকে পড়েছে যে, তাদের আর বিশ্বাস করা ঠিক হবে না বলে মনে করছে রাশিয়া। নতুন বাস্তবতায় নতুন করে ভাবতে হবে। তবে সেটাও কি তেমন ফলপ্রসূ হবে? আজ ক্রিমাতোরস্ক রেল স্টেশনে অপেক্ষারত সাধারণ মানুষের ওপর মিসাইল পড়ল ক্যাসেট বোম নিয়ে। সেটা করেছে ‘তোচকা’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, যা ইউক্রেন ছাড়া কেউ ব্যবহার করে না। অথচ ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব দোষ চাপাচ্ছে রাশিয়ার ঘাড়ে। কারণ তারা চায়, এভাবে রাশিয়ার সব প্রয়াসকে হেয় করতে, মানুষের চোখে এদের ছোট করতে।
মজার ব্যাপার হলো বোমা আর টুইটারে কিয়েভের নেতাদের পোস্ট আসে প্রায় একই সঙ্গে। তাতেই বোঝা যায়, টেক্সট আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এটা দেখবে না। তাদের দরকার এই অছিলায় ইউক্রেনে আরও আরও অস্ত্র সরবরাহ করা। যদি ইউক্রেনের মানুষের জীবন রক্ষাই তাদের এজেন্ডায় থাকত, তারা অস্ত্র নয়, খাদ্য পাঠাত।
রুশ হাইকমান্ড জানাচ্ছে যে, ইউক্রেন খারকভের কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে প্রায় ১২০ টন ব্লিচিং পাউডারসহ গোডাউন বিস্ফোরক দিয়ে ভরে রেখেছে। এর অর্থ যদি ওরা সেখানে বিস্ফোরণ ঘটায়, দোষ যাবে রাশিয়ার ঘাড়ে। ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে, সেটা অকল্পনীয়। শুধু কি তাই? এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউরোপ আরও অস্ত্র পাঠাবে ইউক্রেনে। কিন্তু সমস্যা হলো, তারা কি কখনো থামতে পারবে? নাকি ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে একমাত্র সরাসরি যুদ্ধ দিয়েই এই সমস্যার সমাধান হবে? কেউ কি ভেবে দেখেছে এর ফলাফল? এটা অনেকটা যেকোনো মূল্যে যুদ্ধটাকে চালিয়ে যাওয়ার পণ বলে মনে হয়। আসলে ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখব এখন আর কেউ অপরাধী খোঁজে না, প্রয়োজনমতো কারও ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়।
আবার স্মরণ করা যেতে পারে কলিন পাওয়েলের কথা। সিরিয়ায় বিভিন্ন নাটক করা হয়েছে। মৃত শিশু বেঁচে উঠেছে নতুন কোনো রোলে অভিনয় করার জন্য। ইউক্রেনে একই মহিলা কখনো বোমা হামলায় আহত বৃদ্ধা, অসীম সাহসী ইউক্রেন সেনা, আবার মারিউপোলের হাসপাতালে গর্ভবতী মহিলা। কী মালয়েশিয়ার বিমান এম এইচ ১৭, কী জাপারোঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কী ক্রামাতোরস্ক—পশ্চিমা বিশ্ব কোনো রকম সাক্ষ্যপ্রমাণের ধার না ধরে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে। ফলে আইন বা বিচার ব্যবস্থাকেই হেয় করা হচ্ছে।
শুধু কি তাই। সাংবাদিকতা আজ আসলে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার মেশিন হয়ে গেছে। ফলে সাংবাদিকতা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সাংবাদিকতা একদিন ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া আক্রমণকে জায়েজ করেছে। এদের কারণেই ইউরোপের মানুষ বান্দেরার অনুসারীদের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ এদের অনেকেই মনেপ্রাণে ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা করে। সত্যকে বিকৃতভাবে প্রকাশ করে এরা শুধু সত্যের অবমাননা করছে না, মানুষকেও মিথ্যেবাদী হতে শেখাচ্ছে, মানুষের মানবতাবোধ ভূলুণ্ঠিত করছে। কারণ মানবিক আদর্শ আর যাই হোক, ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করতে পারে না। সেদিন এক বন্ধুকে দেখলাম ফেসবুকে লিখেছে দেশে এখন যে কেউ তার প্রতিপক্ষকে শেষ করতে পারবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ—এসব দেশে যে ঘটনা ঘটে, সেটা ইউরোপ আমেরিকার কোনো দেশের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া অভিযোগ আনারই স্থানীয় রূপ। এসব দেশে যেমন কেউ ঘটনার সত্যতা প্রমাণের জন্য অপেক্ষা না করে কাউকে দোষী বানিয়ে ঘরদোর পোড়ায়, হত্যা করে বা ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে পুলিশের হাজতে ঢোকায়, একইভাবে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের অপছন্দের যেকোনো দেশ বা সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করে সেই দেশ ধ্বংস করার সব রকম প্রচেষ্টা চালায়। বাংলাদেশ যদি আধুনিক মৌলবাদী দেশ হয়, পশ্চিমা বিশ্ব আজ অত্যাধুনিক নিওলিবারেল মৌলবাদী দেশপুঞ্জ। এসব দেশে মধ্যযুগীয় ডাইনি পোড়ানো এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
যুদ্ধের পাশাপাশি সব সময়ই কাজ করে হিউম্যানিটারিয়ান এইডস। রাশিয়া ইতিমধ্যে কয়েক হাজার টন সাহায্য পাঠিয়েছে। যখনই কোনো জনপদ রুশ সেনাদের অধীনে আসে, তারা প্রথমেই যারা দীর্ঘদিন খাদ্যাভাবে ভুগছে, সেখানকার সেই সব সাধারণ মানুষদের মধ্যে খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বণ্টন করে। আর মানবতার কথা বলে মুখে ফেনা তোলা পশ্চিমা বিশ্ব অস্ত্র ছাড়া কী দিচ্ছে? এমনকি রাশিয়া যখন মানবিক করিডর খুলছে, তখন বিভিন্নভাবে সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
আসলে একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে, এই যুদ্ধ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় বাজার দখলের যুদ্ধ নয়, ব্রিটেনের ইইউ-বিরোধী যুদ্ধও। আসুন একটু পেছনে ফিরে তাকাই। নেপোলিয়নের ফ্রান্স প্রায় বিনা যুদ্ধে সমগ্র কন্টিনেন্টাল ইউরোপ দখল করে। ব্রিটেনের প্রধান শত্রু কে? নেপোলিয়ন। ১৮১২ সালে তাঁকে উসকে দেওয়া হয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ফলাফল সবার জানা।
এভাবেই ব্রিটেন প্রথম ইইউ ধ্বংস করেছিল। হ্যাঁ, সেটা ছিল প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়ন–নেপোলিয়ন সেটাই করতে চেয়েছিলেন। এরপর ১৯৩৯-৪১ সালে হিটলার সমগ্র কন্টিনেন্টাল ইউরোপ প্রায় বিনা যুদ্ধে দখল করে দ্বিতীয় ইইউর জন্ম দেন। ১৯৪১ সালে জার্মানির রাশিয়া আক্রমণের পেছনে ছিল চার্চিলের প্ররোচনা। সেই যুদ্ধ যে শুধু রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির ছিল না, তার প্রমাণ আমরা পাব স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের ইতিহাস থেকে। সেখানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানির পাশে যুদ্ধ করেছিল ইতালি, রোমানিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার কয়েক ব্যাটালিয়ন সৈন্য। ১৮১২ সালে ব্রিটেন ইউরোপের দুই প্রধান শক্তি ফ্রান্স ও রাশিয়াকে পরস্পর বিধ্বংসী যুদ্ধে নামিয়েছিল, ১৯৪১ সালে আবার ছিল ইউরোপের দুই প্রধান শক্তি জার্মানি ও রাশিয়া। এভাবেই ডিভাইড অ্যান্ড রুল মেথডে ব্রিটেন সারা বিশ্বকে পদানত করার চেষ্টা করেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেছে। তখন থেকেই সুযোগ খুঁজছে ইইউকে জব্দ করতে। এখন সে ইউক্রেনের হাত দিয়ে রাশিয়া ও ইইউকে নতুন যুদ্ধে নামিয়েছে। সঙ্গে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। লাভ? একই সঙ্গে বহু যুগের শত্রু রাশিয়া ও কন্টিনেন্টাল ইউরোপকে দুর্বল করা। সে ক্ষেত্রে সে আবারও সফল। আবারও ডিভাইড অ্যান্ড রুল।
ইদানীং অনেক কথা হচ্ছে বুচা নিয়ে, যেখানে নাকি রুশ সৈন্যরা নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করেছে। সেখানে আমরা কী দেখি? ইস্তাম্বুলে একধরনের ঐকমত্যে আসার পরই ব্রিটেন ঘোষণা করে, তারা রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলবে না। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে আদেশ দেয় তড়িঘড়ি করে কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর না করতে। এখন ভ্লাদিমির জেলেনস্কির নিরাপত্তার পুরোটাই ব্রিটিশ কমান্ডোর অধীনে। যদিও ৩০ মার্চ রুশ সৈন্য বুচা ত্যাগ করে এবং এরপর স্থানীয় মেয়র সব ঠিকঠাক আছে বলে ঘোষণা করেন এবং পরবর্তী কয়েক দিন কোনো হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায় না। কয়েক দিন বাদে কোত্থেকে যেন সেখানে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায় রাস্তার পাশে। রাশিয়া সেই লাশ কার, কবে, কীভাবে মারা গেল—এসব পরীক্ষার দাবি জানালেও পশ্চিমা বিশ্ব সেই দাবি উপেক্ষা করে। তাই সেটা যে প্রভোকেশন, রাশিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করার পাঁয়তারা, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সিরিয়ায় আমরা দেখেছি হোয়াইট হেলমেট কীভাবে ফেইক ভিডিও করে। ইউক্রেনও তার ব্যতিক্রম নয়। সবাই তো এক গুরুরই শিষ্য। এ ছাড়া ইউক্রেনে জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ করে যুদ্ধবন্দীদের হত্যার যে ভিডিও দেখানো হয়েছে, সেখানেও এমআই-৬-এর প্রিন্ট চোখে পড়ে। যখনই রাশিয়া এ সমস্ত খবর যে সত্য নয়, সেটা প্রমাণ করতে চাইছে; বিভিন্নভাবে তাকে সেটা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘে পর্যন্ত এ নিয়ে শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছে। কারণ, ঘটনার সত্য-মিথ্যা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। উদ্দেশ্য একটাই—রাশিয়াকে বিশ্বের মানুষের কাছে হেয় করা। গোয়েবলস বলেছিল, কোনো মিথ্যা যদি বারবার বলা হয়, সেটা সত্যে পরিণত হয়। এরা তো সেই গোয়েবলসেরই উত্তরসূরি।
আজ পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারের পতন হলো। কেন? তিনি আমেরিকার কথামতো রাশিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হননি। তাও ভালো। এর চেয়ে খারাপ অবস্থাও হতে পারত। সালভাদর আলিয়েন্দে, শেখ মুজিবুর রহমান—কত নেতাই তো মার্কিন ‘গণতান্ত্রিক’ ও ‘মানবিক’ রাজনীতির শিকার হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। ডমিনিক স্ট্রাউস-কান জনপ্রিয় ও সম্ভাবনাময় হওয়ার পরও নির্বাচনে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারেননি। আবার প্রায় অজ্ঞাত এমানুয়েল মাখো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এ এক প্যারাডক্স। গণতন্ত্রের মক্কা এই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতিতে যেকোনো স্বৈরাচারকেও হার মানায়। হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরাচার। কোনো দেশে স্বৈরাচারী শাসক যেমন জনগণের মুখ বন্ধ করে নিজের খেয়াল-খুশিমতো দেশ চালায়, যুক্তরাষ্ট্রও পৃথিবীর সব দেশের মুখ বন্ধ করে তাদের জাতীয় স্বার্থকে পদদলিত করে নিজের ইচ্ছাকে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়। আর যদি কেউ তা না মানে, তাহলে হয় সে দেশে সরকারের পতন ঘটে, সরকারপ্রধান প্রাণ হারান অথবা দেশটার অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সাবেক জেনারেল ব্ল্যাক সি, কালিনিনগ্রাদ, ভ্লাদিভোস্তক—এসব জায়গায় ন্যাটোর সামরিক তৎপরতা বাড়াতে বলছেন। এটা যে পারমাণবিক যুদ্ধ ডেকে আনতে পারে, সে কথা কি এরা ভাবেন? যদিও এখনো যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে, তবে সেটা হচ্ছে ইউক্রেনকে মধ্যে রেখে। এখানে ন্যাটোর প্রশিক্ষক, ছুটিতে থাকা সৈনিক—এ সবই আছে, আছে ন্যাটোর অস্ত্র, তবু সরাসরি ন্যাটো ও রাশিয়ার যুদ্ধ নয় এটি। অনেকের ধারণা, মারিউপোলের আজোভ স্টিলে ফ্রান্সের এক জেনারেল আটকা পড়েছেন। তাঁকে মুক্ত করে আনার জন্যই ইমানুয়েল মাখোঁ বারবার পুতিনকে ফোন করছেন। কী হবে যদি সত্যিই সেই যুদ্ধ লাগে? যুক্তরাষ্ট্র কি ভাবছে বরাবরের মতো সে এবারও রেহাই পাবে সাগরের ওপারে বসে? আর যদি হঠাৎ এটা পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হয়, যদি সাগর থেকে কয়েকটি বোমা যুক্তরাষ্ট্রে পড়ে, বড় বড় শহরে বা ইয়েলো স্টোন বা ওসব স্পর্শকাতর জায়গায় গিয়ে কোনো বোমা পড়ে, তাহলে প্রাণ-প্রকৃতির কী হবে?
উল্লেখ্য, ১৯১৭ সালের বিপ্লব, গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ হারিয়ে সোভিয়েত জনগণ সত্যিকার অর্থেই ছিল শান্তিপ্রিয়। তাই যখন আশির দশকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়, তারা সেটা লুফে নিয়েছিল। তাদের আশা ছিল—যুক্তরাষ্ট্র তাদের বন্ধু হবে। কিন্তু কী পেল তারা? নব্বইয়ের দশকের অরাজকতা। কারচুপিতে ভরা রাজনীতি, হতাশা, দারিদ্র্য; আর সবচেয়ে বড় কথা জাতীয় লাঞ্ছনা, অবমাননা। আর তাইতো তারা ঘুরে দাঁড়াল। আজ এখানে আগের মতো আর আমেরিকা-প্রেম নেই। ফলে মানুষ এখন জাতীয় মর্যাদা রক্ষা করতে চরম যুদ্ধে নামতেও প্রস্তুত। অন্তত লোকজনের সঙ্গে কথা বললে সেটাই মনে হয়। তারাও বলে, রাশিয়াই যদি না থাকে, সেই বিশ্ব দিয়ে আমাদের কী হবে। সত্যিকার অর্থেই পৃথিবী এক বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সব যুদ্ধই শেষ হয় সাধারণত শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে। তবে এবার সেটা হতে পারে পারস্পরিক ধ্বংসের মধ্য দিয়ে। তবে শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে হলেও বিশ্ব আর আগের মতো থাকবে না। ডলার আর একমাত্র কারেন্সি থাকবে না। সেটা আমেরিকার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। আমেরিকা লাগামহীনভাবে ডলার ছাপিয়ে সেই বাবলে (bubble) নিজেই ডুবে যেতে পারে। ইউরোপ হবে আরও অস্থির। একে তো জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে সেখানকার পণ্য আগের মতো কমপিটেটিভ থাকবে না। তার ওপর সামাজিক অস্থিরতার কারণে সেখানকার পুঁজি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে পারে। এই অঙ্ক অনেকের মতে ট্রিলিয়ন হতে পারে।
ইউরোপের কী হবে
সে ক্ষেত্রে ইউরোপের সুখের দিন শেষ। হতে পারে রাশিয়া, চীন, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের মতো করে চলবে। এতে যোগ দেবে আফ্রিকা, আরব দেশগুলো ও লাতিন আমেরিকা। আরব বসন্তের কথা সৌদি আরব, আরব আমিরাত ভোলেনি। এর ওপর আছেন জামাল খাশোগি। তাই তো দেখি বাইডেনের ডাকে সাড়া না দিয়ে চীনের সঙ্গে ইউয়ানের মাধ্যমে বাণিজ্য করতে চাইছে সৌদি আরব। ইউরোপে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি পূর্বের অবস্থান হারাবে। সেই স্থান দখল করার চেষ্টা করবে পোল্যান্ড। এর কারণ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে জার্মানির পক্ষে সামরিক শক্তি হয়ে ওঠাটা অনেক কঠিন। সেখানে অনেক বাধা। সেদিক থেকে পোল্যান্ড মুক্ত।
জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এত বড় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরও দুই দেশের মানুষ পরস্পরের বন্ধু হতে পেরেছিল। পোল্যান্ড সব সময়ই ছিল রুশবিরোধী। আর এটি ভৌগোলিকভাবে রাশিয়ার আরও কাছে। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি থেকে তাদের সামরিক ঘাঁটির এক বিরাট অংশ পোল্যান্ডে স্থানান্তরিত করতে আগ্রহী। এমনকি পারমাণবিক অস্ত্রও। জাপানও সামরিকভাবে শক্তিশালী হবে বলে অনেকের ধারণা। জাপানের ঐতিহাসিক পটভূমি, সামুরাই, হারিকিরি—এসব সে কথাই বলে। তবে ইউরোপের দেশগুলো যতটা এক্সপোজড, জাপান ততটা নয়। এ দেশ ইকোনোমিক্যালি ও টেকনোলজিক্যালি অনেক উন্নত। তাই ইসরায়েলের মতো সেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম। সেখানে একটাই বাধা—হিরোশিমা ও নাগাসাকির স্মৃতি।
এক কথায় আমরা আবার এক নতুন যুগের দোরগোড়ায়। এটা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের চেয়েও ব্যাপকভাবে নাড়া দেবে বিশ্বকে। সেই ভূমিকম্পে কে টিকে থাকবে, আর কে হারিয়ে যাবে, সেটা শুধু ভবিষ্যৎই বলতে পারে। বাইবেলে সডোম ও গোমেরা নামে প্রাচুর্যপূর্ণ দুই শহরের গল্প আছে, যারা নাকি বিলাস ও ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে ভোগবাদী বিশ্বে আমরা কি সেই চিত্রই দেখছি না। মানব সমাজ কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে না? অনেক দিন থেকেই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো (ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা) ও জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নিজেদের এক্সক্লুসিভ ক্লাবের সদস্য ভাবে। এবার হয়তো সেটাই হবে—অফিশিয়ালি। বিশ্ব দুই ভিন্ন ক্যাম্পে বাস করবে। পশ্চিমা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র তার মোড়লগিরি আগের মতোই করে যাবে, বাকি অংশে থাকবে একাধিক কেন্দ্র, যার পুরোধা হবে চীন, রাশিয়া ও ভারত।
পশ্চিমা বিশ্ব নেমেছে অল আউট যুদ্ধে আর তাই তো খেলোয়াড়, শিল্পী, সাহিত্যিক, অভিনেতা অভিনেত্রী, সাংবাদিক—কেউ বাদ যাচ্ছে না। এরা রাশিয়াকে একঘরে করে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। ইতিহাস বলে জিন্নাহর ব্রাহ্মণ পিতামহকে মাছের ব্যবসা করার দায়ে একঘরে করে গ্রাম্য সমাজ। তারা আশ্রয় পায় ইসলামে। পরবর্তী ইতিহাস ভারত বিভাগ। যদিও পাকিস্তান সৃষ্টি ইসলাম বা মানবজাতির জন্য কতটা সুফল বয়ে এনেছে, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ, তবুও কথা হলো কাউকে অন্যায়ভাবে কোণঠাসা করার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।
ন্যাটো কার জন্য
অনেক সময় মনে হয় ন্যাটো আসলে কার দরকার। ওয়ারশ জোট পতনের পর এর যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, করছেন। মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও ন্যাটোর প্রসারণ রাশিয়াকে ক্ষুব্ধ করেছে। তাকে বাধ্য করেছে নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবতে। ফলে ইউরোপের নিরাপত্তা বাড়েনি, কমেছে। কারণ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তেজনা কমায় না, বাড়ায়। তা ছাড়া সৃষ্টিকালে ন্যাটো আত্মরক্ষাকারী জোট হলেও সে আর এখন তা নেই। সার্বিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার ঘটনা একে আক্রমণকারী জোট হিসেবেই প্রমাণ করে। তাহলে কেন এই জোট? উত্তর—যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রির জন্য। ফলে ইউরোপের দেশগুলো বাধ্য হচ্ছে নিজেদের নিরাপত্তা বাজেট বাড়াতে; আর শর্ত অনুযায়ী মূলত মার্কিন অস্ত্র কিনতে। রাশিয়ায় ভয় দেখিয়ে ইউরোপে মোতায়েন করা হচ্ছে মার্কিন সেনা। এতে করে ইউরোপ আমেরিকার ওপর আরও বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। রাশিয়াকেও বন্দুকের মুখে রেখে বশ মানানোর চেষ্টা করা যাচ্ছে। আর এখানেই বেজেছে গোল। রাশিয়া ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এখন ইউক্রেনের মাধ্যমে এবং পরে ইউরোপের হাত দিয়ে রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে। সেটি আর হবে বলে মনে হয় না। বর্তমান টেকনোলজির যুগে এমনকি ইউরোপ থেকে রাশিয়া আক্রমণ করার পরও শত শত নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আমেরিকায় গিয়ে পড়বে। এই আশঙ্কাই এখন পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রেখেছে মার্কিন আগ্রাসী নীতি থেকে।
রাশিয়া ও পশ্চিমা নেতাদের কথাবার্তা খেয়াল করলে দেখবেন, রাশিয়া যতটা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানে প্রস্তুত, পশ্চিম ততটা নয়। কথায় কথায় তারা রাশিয়া, রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসের কথা বলে। কিন্তু পশ্চিমের অর্থনীতি ধ্বংসের বাস্তব চাবিকাঠি রাশিয়ার হাতে থাকার পরও সে সেটা করছে না, এ নিয়ে হুমকি দিচ্ছে না। কেউ কি ভেবেছিল বিশ্ব রাশিয়ার ওপর এতটা নির্ভরশীল? যত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে ইউরোপের মানুষ তত বেশি বিপদে পড়ছে। এরই মধ্যে ইউরোপের কোথাও কোথাও কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে দেখি সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ ও নতুন রাশিয়ার প্রথম দিনগুলোর অবস্থা। দুই বোতলের বেশি সূর্যমুখী তেল দিচ্ছে না। আমলারা বলছেন, শরীরে তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রিতে নামিয়া আনতে। সোভিয়েত ইউনিয়নে এটা সম্ভব ছিল, ইউরোপের মানুষ কি মানবে সেই নির্দেশ? তবে এভাবে চলতে থাকলে তাকে অন্যভাবে ভাবতে হতে পারে। মিনস্ক থেকে শিক্ষা নিয়ে রাশিয়া ইতিমধ্যেই বলেছে, তারা আর ইঁদুর-বিড়াল খেলতে রাজি নয়। এখন কোনো ইউক্রেন শহর দখল করার পর তারা আর সরে আসবে না, যাতে বুচার মতো কোনো প্রভোকেশন কেউ না করতে পারে।
যেসব এলাকা মুক্ত হচ্ছে, সেখানে স্থানীয় লোকদের নিয়ে প্রশাসন গড়ে তোলা হচ্ছে। আসলে পুরোনো প্রশাসনে বান্দেরার অনুসারীরা এমনভাবে ঢুকে পড়েছে যে, তাদের আর বিশ্বাস করা ঠিক হবে না বলে মনে করছে রাশিয়া। নতুন বাস্তবতায় নতুন করে ভাবতে হবে। তবে সেটাও কি তেমন ফলপ্রসূ হবে? আজ ক্রিমাতোরস্ক রেল স্টেশনে অপেক্ষারত সাধারণ মানুষের ওপর মিসাইল পড়ল ক্যাসেট বোম নিয়ে। সেটা করেছে ‘তোচকা’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, যা ইউক্রেন ছাড়া কেউ ব্যবহার করে না। অথচ ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব দোষ চাপাচ্ছে রাশিয়ার ঘাড়ে। কারণ তারা চায়, এভাবে রাশিয়ার সব প্রয়াসকে হেয় করতে, মানুষের চোখে এদের ছোট করতে।
মজার ব্যাপার হলো বোমা আর টুইটারে কিয়েভের নেতাদের পোস্ট আসে প্রায় একই সঙ্গে। তাতেই বোঝা যায়, টেক্সট আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এটা দেখবে না। তাদের দরকার এই অছিলায় ইউক্রেনে আরও আরও অস্ত্র সরবরাহ করা। যদি ইউক্রেনের মানুষের জীবন রক্ষাই তাদের এজেন্ডায় থাকত, তারা অস্ত্র নয়, খাদ্য পাঠাত।
রুশ হাইকমান্ড জানাচ্ছে যে, ইউক্রেন খারকভের কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে প্রায় ১২০ টন ব্লিচিং পাউডারসহ গোডাউন বিস্ফোরক দিয়ে ভরে রেখেছে। এর অর্থ যদি ওরা সেখানে বিস্ফোরণ ঘটায়, দোষ যাবে রাশিয়ার ঘাড়ে। ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে, সেটা অকল্পনীয়। শুধু কি তাই? এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউরোপ আরও অস্ত্র পাঠাবে ইউক্রেনে। কিন্তু সমস্যা হলো, তারা কি কখনো থামতে পারবে? নাকি ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে একমাত্র সরাসরি যুদ্ধ দিয়েই এই সমস্যার সমাধান হবে? কেউ কি ভেবে দেখেছে এর ফলাফল? এটা অনেকটা যেকোনো মূল্যে যুদ্ধটাকে চালিয়ে যাওয়ার পণ বলে মনে হয়। আসলে ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখব এখন আর কেউ অপরাধী খোঁজে না, প্রয়োজনমতো কারও ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়।
আবার স্মরণ করা যেতে পারে কলিন পাওয়েলের কথা। সিরিয়ায় বিভিন্ন নাটক করা হয়েছে। মৃত শিশু বেঁচে উঠেছে নতুন কোনো রোলে অভিনয় করার জন্য। ইউক্রেনে একই মহিলা কখনো বোমা হামলায় আহত বৃদ্ধা, অসীম সাহসী ইউক্রেন সেনা, আবার মারিউপোলের হাসপাতালে গর্ভবতী মহিলা। কী মালয়েশিয়ার বিমান এম এইচ ১৭, কী জাপারোঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কী ক্রামাতোরস্ক—পশ্চিমা বিশ্ব কোনো রকম সাক্ষ্যপ্রমাণের ধার না ধরে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে। ফলে আইন বা বিচার ব্যবস্থাকেই হেয় করা হচ্ছে।
শুধু কি তাই। সাংবাদিকতা আজ আসলে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার মেশিন হয়ে গেছে। ফলে সাংবাদিকতা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সাংবাদিকতা একদিন ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া আক্রমণকে জায়েজ করেছে। এদের কারণেই ইউরোপের মানুষ বান্দেরার অনুসারীদের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ এদের অনেকেই মনেপ্রাণে ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা করে। সত্যকে বিকৃতভাবে প্রকাশ করে এরা শুধু সত্যের অবমাননা করছে না, মানুষকেও মিথ্যেবাদী হতে শেখাচ্ছে, মানুষের মানবতাবোধ ভূলুণ্ঠিত করছে। কারণ মানবিক আদর্শ আর যাই হোক, ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করতে পারে না। সেদিন এক বন্ধুকে দেখলাম ফেসবুকে লিখেছে দেশে এখন যে কেউ তার প্রতিপক্ষকে শেষ করতে পারবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ—এসব দেশে যে ঘটনা ঘটে, সেটা ইউরোপ আমেরিকার কোনো দেশের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া অভিযোগ আনারই স্থানীয় রূপ। এসব দেশে যেমন কেউ ঘটনার সত্যতা প্রমাণের জন্য অপেক্ষা না করে কাউকে দোষী বানিয়ে ঘরদোর পোড়ায়, হত্যা করে বা ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে পুলিশের হাজতে ঢোকায়, একইভাবে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের অপছন্দের যেকোনো দেশ বা সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করে সেই দেশ ধ্বংস করার সব রকম প্রচেষ্টা চালায়। বাংলাদেশ যদি আধুনিক মৌলবাদী দেশ হয়, পশ্চিমা বিশ্ব আজ অত্যাধুনিক নিওলিবারেল মৌলবাদী দেশপুঞ্জ। এসব দেশে মধ্যযুগীয় ডাইনি পোড়ানো এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
১ দিন আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
১ দিন আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
১ দিন আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
১ দিন আগে