ড. মো. ফখরুল ইসলাম
কোনোক্রমেই থামছে না অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা। আগে টেকনাফ দিয়ে থাই-জাভা-সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ায় পৌঁছানো ছিল লক্ষ্য। এখন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সমুদ্রপথ রুদ্ধ করে রাখায় আদম দালালেরা নতুন গন্তব্য চিহ্নিত করে কমবয়সীদের অবৈধ পথে বিদেশে পাঠানোর টার্গেট করেছে। তারা এ যাত্রায় অনেকটা কৃতকার্য। এর অনেক কারণের সবচেয়ে বড় কারণ হলো—ঘাটে ঘাটে বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অবৈধ সহযোগিতা প্রাপ্তি।
তারা অন্যায় সুযোগের পথ তৈরি করে না দিলে অবৈধ পথে যে কারও দেশ থেকে বাইরে যাওয়া বা মাদক চোরাচালানের ব্যবসা করা অসম্ভব ব্যাপার। দেশে উন্নয়নের এত ডামাডোলের মধ্যেও কী এমন নেই যে মরণকে সঙ্গী করে অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা করতে হবে? সেটা এখন সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন। মানুষই এখন বড় সম্পদ। যে দেশে মানুষ বেশি কর্মঠ, সে দেশের উন্নয়নের গতি তত বেশি। লাখ লাখ বিদেশি নির্মাণশ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার, দরজিগুরু, শিক্ষক, রাঁধুনি, ডাক্তার এখন আমাদের দেশে চাকরি করছেন। তাঁরা অনেকে বৈধ, আবার অনেকে অবৈধ। আরও আছেন হাজার হাজার অবৈধ জুয়া চোর, বাটপার, কম্পিউটার হ্যাকার, ব্যাংক চোর, অবৈধ সোনা ও মাদক কারবারি, স্পাই আরও কত-কী! শুধু প্রতিবেশী দেশের প্রায় ২০ লাখ মানুষ আমাদের দেশে বৈধ-অবৈধভাবে বিভিন্ন চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংবাদে জানা গেছে। এটিএম বুথ থেকে টাকা সরানোর কাজে নিযুক্ত রয়েছে আফ্রিকা ও ইউরোপের অনেক দেশের জালিয়াতরা। তাঁরা মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে আটকও হন। এদের সংখ্যা অগণিত, তাঁদের সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই।
তাঁরা ভ্রমণকারীর ছদ্মবেশে প্রতিনিয়ত দেশে ঢুকছেন, বের হচ্ছেন। আমাদের দেশ মাদক ও সোনা চোরাচালানের রুট হওয়ায় এবং তাঁরা এ দেশের দামি দামি মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে চলাফেরা করায় তাঁদের চিহ্নিত করা কঠিন কাজ। ওরা ইংরেজি জানা স্মার্ট, অভিজ্ঞ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে পটু। তাই তাঁদের অবৈধ চাকরি বা ব্যবসার ধরন দেখে কারও বোঝার উপায় নেই তাঁরা বিশ্বচোর ও জগৎ জালিয়াতের সদস্য।
আর আমাদের দেশের মানুষ একবিংশ শতাব্দীতে এসে উচ্চশিক্ষিত হয়েও প্রযুক্তিতে দক্ষ হয় না, এমএ পাস করেও শুদ্ধ করে ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না। টেকনিক্যাল কাজ করতে জানেন না। এখনো অনেকেই বিদেশে যান ঘরকন্নার ছোটখাটো ম্যানুয়েল কাজ করতে। সবাই নন, তবে অনেকে ইউরোপের গ্রিস ও উন্নত দেশে গিয়েও দক্ষতার অভাবে ড্রাইভার ও কৃষি ফার্মের সাধারণ শ্রমিক। দেশে ধনীর দুলাল হয়ে বাবার মাথা ভেঙে খেলেও মধ্যপ্রাচ্যে অনেকেই গৃহকর্মী বা মেষ পালক। ওদের বেতন যৎসামান্য। বাসস্থানের অবস্থা খুব করুণ। কেউ কেউ পানির অভাবে বহুদিন গোসল করার সুযোগও পান না। হাঙ্গেরি, লিথুয়ানিয়া, গ্রিসের কৃষি ফার্মের ব্যারাকের একই অবস্থা। তবু কেন ইউরোপে যাওয়ার মোহ? এর চেয়ে দেশে বাবার জমি বা অন্যের পতিত জমি লিজ নিয়ে কৃষিশ্রমিক হওয়া অনেক ভালো। অনেক শান্তি আছে তাতে।
হ্যাঁ, যদি বৈধ পথে গিয়ে সম্মানজনকভাবে সেখানে কাজ করার সুযোগ হতো, তাহলে আমি এসব কথা লিখে কাউকে কষ্ট দিতাম না, নিজেও দুঃখ পেতে আগ্রহী হতাম না। আমি নিজের চোখে অনেকের দুরবস্থা দেখেছি। তাই তাঁদের কষ্টের জীবন আমার মোটেও সহ্য হয় না।
বিশেষ করে আমার এক বাল্যবন্ধু বহু বছর আগে স্থলপথে ভারত, আফগানিস্তান, ইরান হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে বরফশীতল খরস্রোতা ছোট পাহাড়ি নদী রাতের আঁধারে সাঁতরে পার হতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে ঠান্ডায় জমে মারা গিয়েছিল। তাঁদের সঙ্গীরা বনের মধ্যে কোনো এক জায়গায় তার লাশ পুঁতে রেখে সেই সংবাদ বহুদিন গোপন করেছিলেন। সেই বাড়িতে মা-বাবার কান্না আজও থামেনি।
তার ওপর প্রায় প্রতি মাসেই ভূমধ্যসাগরে রাবারের নৌকাডুবি হয়ে অথবা কোস্টগার্ডের গুলিতে প্রাণ হারিয়ে সাগরের নীল পানিতে সমাধিস্থ হওয়া মানুষগুলোর কথা টিভিতে দেখলে আমার মোটেও ভালো লাগে না।
একবার টিভিতে দেখলাম আদম দালালেরা নোয়াখালী-চট্টগ্রাম ছেড়ে এখন শরীয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা প্রভৃতি জেলায় হানা দিচ্ছে। তাঁরা স্থানীয় দালালের সহযোগিতায় হাইস্কুলে, কলেজে গিয়ে সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করছে। গরিব শিক্ষার্থীদের মা-বাবাকে জমি বিক্রি করে ইউরোপে পাঠানোর জন্য প্রলুব্ধ করছে। মিথ্যা প্রলোভন দিচ্ছে, সেখানে পড়াশোনা করবে, অনেক আয় করে বাড়িতে টাকা পাঠাবে, দ্রুত ধনী হবে ওদের মা-বাবারা।
কতটা নীচ, অসৎ ও অমানবিক এসব আদম দালাল।
পাশাপাশি অনেক গ্রামে ছেলেহারা মায়েরা ডুকরে কান্নাকাটি করে দালালদের গালি দিচ্ছেন, কেউ মারধর করতে উদ্যত হচ্ছেন। কিন্তু দালাল চক্র খুব শক্তিশালী, রাজনীতিও করে। তারা উল্টো পরিবারকে আক্রমণ করছে মাস্তান দিয়ে। থানায় মামলা দিচ্ছে মিথ্যার ডালি সাজিয়ে। বাড়িতে পুলিশ পাঠাচ্ছে।
টাকার লোভে বাড়িতে পুলিশ এসে বারবার হানা দিচ্ছে বলে এক সংবাদে জানা গেল।
এটাই কি আমাদের দেশে সামাজিক নিরাপত্তা? এটাই কি সরকারি নিরাপত্তামূলক জনসেবার নামান্তর? ঢাবি পড়াকালীন মরহুম ফকির আলমগীরের গান শুনতাম টিএসসি চত্বরে, ‘চল সখিনা দুবাই যাব, দেশে বড় দুঃখ রে...।’ তখন দুবাইয়ে যাওয়ার কারণ ছিল, দেশে কাজ ছিল না, আমিরাতে তরল সোনা বা তেলের দাম বেশি ছিল, বেতন বেশি দিত। আর এখন? এখন কি ইউরোপে বা গ্রিসে যাব জমির ঘাস কাটতে? ওদের ভেড়া ও ঘোড়া চরাতে? কেন যাব? কোন মোহে? দেশে নিজের জমিতে কৃষিকাজ করতে এত লজ্জা কিসের? আমাদের দেশের মাটি—সে তো সোনাফলা নিয়ামত!
আমাদের নেতারা এসব জরুরি সমস্যার দিকে নজর না দিয়ে তাপানুকূল ঘরে বসে নাক-মুখ ঢেকে নিজেরা একে অপরের নামে বিষোদ্গার করে প্রেস ব্রিফিং দিচ্ছেন। মানুষ সেটাকে অপছন্দ করছে, প্রতিদিন একই কায়দায় কারও লিখে দেওয়া বালখিল্যমূলক কথার ফুলঝুরি শুনতে শুনতে টিভি দেখতে ঘৃণা ধরে গেছে। কারণ, দেশের প্রাণশক্তি সম্ভাবনাময় যুবশক্তি নানা হতাশায় জর্জরিত হয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে পালাতে গিয়ে সাগরে ডুবে প্রাণ হারাচ্ছে, এগুলো দেখে তাঁদের প্রাণে কোনো দয়া-মায়া হয় না?
নেতাদের এই অজ্ঞানতা ও বেহাল দশা দেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও সেবাদানে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা মহা খুশি। জবাবদিহি না থাকায় তাদের মোহগ্রস্ততা থেকে বিলাসী জীবনযাপন দেশের অপরাধ তথা অবৈধ মাদক ব্যবসা, চোরাচালানি, গ্যাং কৃষ্টি, অবৈধ আদম ব্যবসা বন্ধ না হয়ে বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য একটু কঠোর ভূমিকা পালন করলে দ্রুত মাদক ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব এবং ভূমধ্যসাগরে বা অন্য কোথাও সলিলসমাধি বরণ করতে হবে না বলে আমার বিশ্বাস। আমরা যতই উন্নতির কথা প্রচার করি না কেন, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে অবৈধ অভিবাসীদের ঘন ঘন মৃত্যুর ঘটনা আমাদের সারা বিশ্বে হেয়প্রতিপন্ন করছে, আরও বন্যার্ত, কর্মহারা দরিদ্র মিসকিন হিসেবে।
মানুষের জন্য যদি নেতার প্রাণ না কাঁদে তাহলে তাঁরা কিসের মানবদরদি? দেশের মানুষ লইছকা বিলে ডুবে মরছে, মেঘনায় ডুবে মরছে, ভূমধ্যসাগরের নীল পানিতে ডুবে মরছে, বেওয়ারিশ লাশ হচ্ছে—আর নেতারা বিবৃতি দিয়ে খালাস! আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেশে করবে বসবাস—অবৈধ পথে পালাতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে আর হবে না বেওয়ারিশ লাশ। এই হোক আজকের ডিজিটাল রাজনীতির মূল সুর, আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশের পরম প্রত্যয়।
লেখক: ড. মো. ফখরুল ইসলাম অধ্যাপক ও ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
কোনোক্রমেই থামছে না অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা। আগে টেকনাফ দিয়ে থাই-জাভা-সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ায় পৌঁছানো ছিল লক্ষ্য। এখন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সমুদ্রপথ রুদ্ধ করে রাখায় আদম দালালেরা নতুন গন্তব্য চিহ্নিত করে কমবয়সীদের অবৈধ পথে বিদেশে পাঠানোর টার্গেট করেছে। তারা এ যাত্রায় অনেকটা কৃতকার্য। এর অনেক কারণের সবচেয়ে বড় কারণ হলো—ঘাটে ঘাটে বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অবৈধ সহযোগিতা প্রাপ্তি।
তারা অন্যায় সুযোগের পথ তৈরি করে না দিলে অবৈধ পথে যে কারও দেশ থেকে বাইরে যাওয়া বা মাদক চোরাচালানের ব্যবসা করা অসম্ভব ব্যাপার। দেশে উন্নয়নের এত ডামাডোলের মধ্যেও কী এমন নেই যে মরণকে সঙ্গী করে অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা করতে হবে? সেটা এখন সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন। মানুষই এখন বড় সম্পদ। যে দেশে মানুষ বেশি কর্মঠ, সে দেশের উন্নয়নের গতি তত বেশি। লাখ লাখ বিদেশি নির্মাণশ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার, দরজিগুরু, শিক্ষক, রাঁধুনি, ডাক্তার এখন আমাদের দেশে চাকরি করছেন। তাঁরা অনেকে বৈধ, আবার অনেকে অবৈধ। আরও আছেন হাজার হাজার অবৈধ জুয়া চোর, বাটপার, কম্পিউটার হ্যাকার, ব্যাংক চোর, অবৈধ সোনা ও মাদক কারবারি, স্পাই আরও কত-কী! শুধু প্রতিবেশী দেশের প্রায় ২০ লাখ মানুষ আমাদের দেশে বৈধ-অবৈধভাবে বিভিন্ন চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংবাদে জানা গেছে। এটিএম বুথ থেকে টাকা সরানোর কাজে নিযুক্ত রয়েছে আফ্রিকা ও ইউরোপের অনেক দেশের জালিয়াতরা। তাঁরা মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে আটকও হন। এদের সংখ্যা অগণিত, তাঁদের সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই।
তাঁরা ভ্রমণকারীর ছদ্মবেশে প্রতিনিয়ত দেশে ঢুকছেন, বের হচ্ছেন। আমাদের দেশ মাদক ও সোনা চোরাচালানের রুট হওয়ায় এবং তাঁরা এ দেশের দামি দামি মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে চলাফেরা করায় তাঁদের চিহ্নিত করা কঠিন কাজ। ওরা ইংরেজি জানা স্মার্ট, অভিজ্ঞ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে পটু। তাই তাঁদের অবৈধ চাকরি বা ব্যবসার ধরন দেখে কারও বোঝার উপায় নেই তাঁরা বিশ্বচোর ও জগৎ জালিয়াতের সদস্য।
আর আমাদের দেশের মানুষ একবিংশ শতাব্দীতে এসে উচ্চশিক্ষিত হয়েও প্রযুক্তিতে দক্ষ হয় না, এমএ পাস করেও শুদ্ধ করে ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না। টেকনিক্যাল কাজ করতে জানেন না। এখনো অনেকেই বিদেশে যান ঘরকন্নার ছোটখাটো ম্যানুয়েল কাজ করতে। সবাই নন, তবে অনেকে ইউরোপের গ্রিস ও উন্নত দেশে গিয়েও দক্ষতার অভাবে ড্রাইভার ও কৃষি ফার্মের সাধারণ শ্রমিক। দেশে ধনীর দুলাল হয়ে বাবার মাথা ভেঙে খেলেও মধ্যপ্রাচ্যে অনেকেই গৃহকর্মী বা মেষ পালক। ওদের বেতন যৎসামান্য। বাসস্থানের অবস্থা খুব করুণ। কেউ কেউ পানির অভাবে বহুদিন গোসল করার সুযোগও পান না। হাঙ্গেরি, লিথুয়ানিয়া, গ্রিসের কৃষি ফার্মের ব্যারাকের একই অবস্থা। তবু কেন ইউরোপে যাওয়ার মোহ? এর চেয়ে দেশে বাবার জমি বা অন্যের পতিত জমি লিজ নিয়ে কৃষিশ্রমিক হওয়া অনেক ভালো। অনেক শান্তি আছে তাতে।
হ্যাঁ, যদি বৈধ পথে গিয়ে সম্মানজনকভাবে সেখানে কাজ করার সুযোগ হতো, তাহলে আমি এসব কথা লিখে কাউকে কষ্ট দিতাম না, নিজেও দুঃখ পেতে আগ্রহী হতাম না। আমি নিজের চোখে অনেকের দুরবস্থা দেখেছি। তাই তাঁদের কষ্টের জীবন আমার মোটেও সহ্য হয় না।
বিশেষ করে আমার এক বাল্যবন্ধু বহু বছর আগে স্থলপথে ভারত, আফগানিস্তান, ইরান হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে বরফশীতল খরস্রোতা ছোট পাহাড়ি নদী রাতের আঁধারে সাঁতরে পার হতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে ঠান্ডায় জমে মারা গিয়েছিল। তাঁদের সঙ্গীরা বনের মধ্যে কোনো এক জায়গায় তার লাশ পুঁতে রেখে সেই সংবাদ বহুদিন গোপন করেছিলেন। সেই বাড়িতে মা-বাবার কান্না আজও থামেনি।
তার ওপর প্রায় প্রতি মাসেই ভূমধ্যসাগরে রাবারের নৌকাডুবি হয়ে অথবা কোস্টগার্ডের গুলিতে প্রাণ হারিয়ে সাগরের নীল পানিতে সমাধিস্থ হওয়া মানুষগুলোর কথা টিভিতে দেখলে আমার মোটেও ভালো লাগে না।
একবার টিভিতে দেখলাম আদম দালালেরা নোয়াখালী-চট্টগ্রাম ছেড়ে এখন শরীয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা প্রভৃতি জেলায় হানা দিচ্ছে। তাঁরা স্থানীয় দালালের সহযোগিতায় হাইস্কুলে, কলেজে গিয়ে সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করছে। গরিব শিক্ষার্থীদের মা-বাবাকে জমি বিক্রি করে ইউরোপে পাঠানোর জন্য প্রলুব্ধ করছে। মিথ্যা প্রলোভন দিচ্ছে, সেখানে পড়াশোনা করবে, অনেক আয় করে বাড়িতে টাকা পাঠাবে, দ্রুত ধনী হবে ওদের মা-বাবারা।
কতটা নীচ, অসৎ ও অমানবিক এসব আদম দালাল।
পাশাপাশি অনেক গ্রামে ছেলেহারা মায়েরা ডুকরে কান্নাকাটি করে দালালদের গালি দিচ্ছেন, কেউ মারধর করতে উদ্যত হচ্ছেন। কিন্তু দালাল চক্র খুব শক্তিশালী, রাজনীতিও করে। তারা উল্টো পরিবারকে আক্রমণ করছে মাস্তান দিয়ে। থানায় মামলা দিচ্ছে মিথ্যার ডালি সাজিয়ে। বাড়িতে পুলিশ পাঠাচ্ছে।
টাকার লোভে বাড়িতে পুলিশ এসে বারবার হানা দিচ্ছে বলে এক সংবাদে জানা গেল।
এটাই কি আমাদের দেশে সামাজিক নিরাপত্তা? এটাই কি সরকারি নিরাপত্তামূলক জনসেবার নামান্তর? ঢাবি পড়াকালীন মরহুম ফকির আলমগীরের গান শুনতাম টিএসসি চত্বরে, ‘চল সখিনা দুবাই যাব, দেশে বড় দুঃখ রে...।’ তখন দুবাইয়ে যাওয়ার কারণ ছিল, দেশে কাজ ছিল না, আমিরাতে তরল সোনা বা তেলের দাম বেশি ছিল, বেতন বেশি দিত। আর এখন? এখন কি ইউরোপে বা গ্রিসে যাব জমির ঘাস কাটতে? ওদের ভেড়া ও ঘোড়া চরাতে? কেন যাব? কোন মোহে? দেশে নিজের জমিতে কৃষিকাজ করতে এত লজ্জা কিসের? আমাদের দেশের মাটি—সে তো সোনাফলা নিয়ামত!
আমাদের নেতারা এসব জরুরি সমস্যার দিকে নজর না দিয়ে তাপানুকূল ঘরে বসে নাক-মুখ ঢেকে নিজেরা একে অপরের নামে বিষোদ্গার করে প্রেস ব্রিফিং দিচ্ছেন। মানুষ সেটাকে অপছন্দ করছে, প্রতিদিন একই কায়দায় কারও লিখে দেওয়া বালখিল্যমূলক কথার ফুলঝুরি শুনতে শুনতে টিভি দেখতে ঘৃণা ধরে গেছে। কারণ, দেশের প্রাণশক্তি সম্ভাবনাময় যুবশক্তি নানা হতাশায় জর্জরিত হয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে পালাতে গিয়ে সাগরে ডুবে প্রাণ হারাচ্ছে, এগুলো দেখে তাঁদের প্রাণে কোনো দয়া-মায়া হয় না?
নেতাদের এই অজ্ঞানতা ও বেহাল দশা দেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও সেবাদানে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা মহা খুশি। জবাবদিহি না থাকায় তাদের মোহগ্রস্ততা থেকে বিলাসী জীবনযাপন দেশের অপরাধ তথা অবৈধ মাদক ব্যবসা, চোরাচালানি, গ্যাং কৃষ্টি, অবৈধ আদম ব্যবসা বন্ধ না হয়ে বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য একটু কঠোর ভূমিকা পালন করলে দ্রুত মাদক ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব এবং ভূমধ্যসাগরে বা অন্য কোথাও সলিলসমাধি বরণ করতে হবে না বলে আমার বিশ্বাস। আমরা যতই উন্নতির কথা প্রচার করি না কেন, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে অবৈধ অভিবাসীদের ঘন ঘন মৃত্যুর ঘটনা আমাদের সারা বিশ্বে হেয়প্রতিপন্ন করছে, আরও বন্যার্ত, কর্মহারা দরিদ্র মিসকিন হিসেবে।
মানুষের জন্য যদি নেতার প্রাণ না কাঁদে তাহলে তাঁরা কিসের মানবদরদি? দেশের মানুষ লইছকা বিলে ডুবে মরছে, মেঘনায় ডুবে মরছে, ভূমধ্যসাগরের নীল পানিতে ডুবে মরছে, বেওয়ারিশ লাশ হচ্ছে—আর নেতারা বিবৃতি দিয়ে খালাস! আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেশে করবে বসবাস—অবৈধ পথে পালাতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে আর হবে না বেওয়ারিশ লাশ। এই হোক আজকের ডিজিটাল রাজনীতির মূল সুর, আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশের পরম প্রত্যয়।
লেখক: ড. মো. ফখরুল ইসলাম অধ্যাপক ও ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১ দিন আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১ দিন আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১ দিন আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১ দিন আগে