ফারুক মেহেদী
ওই দিন একটি মার্কেটে দেখলাম এক কিশোর ছেলে বাসা থেকে তৈরি করে আনা খাবারের প্যাকেট হাতে দোকানে দোকানে ঘুরছে। কেউ যদি কেনে! হয়তো মায়ের হাতে রান্না করা খাবারগুলো সে ফেরি করছে। অদ্ভুত সুন্দর, মায়াবী চেহারার ছেলেটির চোখে-মুখে দুঃখভরা অস্ফুট আর্তনাদ যেন! পরবর্তী দু-তিন দিন আমি ওই ছেলেটির চেহারা ভুলতে পারিনি। মনে হচ্ছিল, আহা, মায়াবী ছেলেটি বেঁচে থাকার জন্য কতই না কষ্ট করছে! কে জানে কত না-বলা গল্প আছে তার!
বাসার কাছাকাছি সকালের একটি কাঁচাবাজারে আমি প্রায়ই যাই। সেখানে একজন প্রবীণ লোককেও নিয়মিত অল্প কিছু সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য বসে থাকতে দেখি। এত অল্প সবজি যে ভাবি, এগুলো বিক্রি থেকে কীই-বা আয় হবে আর এতে তাঁর সংসারই বা কীভাবে চলবে। ওই বৃদ্ধের ভেতরের গল্প আর জানা হয় না। তবে ঠিকই তাঁর কায়ক্লেশের ছবি আমার মনের ভেতরে অদৃশ্য রক্তক্ষরণ বইয়ে দেয়। যাপিত জীবনের এসব সাদা-কালো গল্প ছাপিয়ে, আমাদের ব্যস্ত দিন-রাত্রির শিরোনাম হয়ে ওঠে একের পর এক ‘বিগ’ ইস্যু। কিছুদিন ধরে খবরের কাগজ আর টেলিভিশনের পর্দাজুড়ে পরীমণি, ই-কমার্সের প্রতারণাসহ অজস্র ঘটনা-রটনা আর সবশেষ কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়া নিয়ে যা হচ্ছে, তা রীতিমতো আমার মাথার ভেতরে হাতুড়িপেটা করছে! বিষয়গুলো নিয়ে লিখব, কথা বলব, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দেব—এমন আগ্রহও জাগছে না। মনে হচ্ছে আমরা সবাই একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। একটু যদি স্থানীয় নির্বাচনের দিকে তাকাই তাহলে কী দেখি? আওয়ামী লীগ যেন নিজেই নিজের প্রতিপক্ষ! দলীয় মার্কায় নির্বাচন। খবরের কাগজ ভরে যাচ্ছে মনোনয়ন পাওয়া থেকে শুরু করে দলীয় কোন্দল, গ্রুপিং, দলাদলি আর দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খবরে। রক্ত ঝরছে। এমনকি বাবা-ছেলেসহ একই পরিবারের প্রিয়জনও খুন হয়ে যাচ্ছে। টাকা, স্বজনপ্রীতি, খাতিরের কারণে ত্যাগী দলীয় নেতা-কর্মীর বদলে দল মনোনয়ন দিচ্ছে প্রবাসী, অন্য দলের মৌসুমি লোকদেরও। নির্বাচন শেষ হয়নি। এ থেকে সৃষ্ট তিক্ততা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, এটা সময়ই বলে দেবে। তবে কথা হচ্ছে কেন এমনটি হবে? দল কি এখনো নিজ দলের ত্যাগী, সৎ, জনপ্রিয় সত্যিকার লোককে মনোনয়ন দেওয়ার মতো রাজনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করেনি? যোগ্য প্রতিনিধি খুঁজে বের করতে একটি বড়, অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দলের জন্য কঠিন কিছু? আর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য, জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য এতটা বেপরোয়া হবেন কেন? তাঁদের ভেতরে কি আজও নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ বা উদার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়নি? তাহলে তৃণমূলে সত্যিকার অর্থে মানুষের জন্য রাজনৈতিক চর্চা আর কবে হবে?
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়ে গেছে দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তির ছোড়াছুড়ি। কীভাবে হবে নির্বাচন? কারা থাকবে কমিশনে—ইত্যাদি। বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনে তারা যাবে না। আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচন হবে স্বাভাবিক নিয়মে। মানে বড় দুই দল কে কীভাবে ক্ষমতায় যাবে, এ নিয়েই তাদের রাজনীতি। কোটি মানুষের সমস্যা, তাদের চাওয়া-পাওয়া এসব কারও ভাবনায় আছে বলে মনে হয় না। জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদেরা কি একটু জনমানুষঘনিষ্ঠ রাজনীতি করতে পারেন না? তাঁরা কি ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতার বাইরে গিয়ে এই যে করোনার পর কত মানুষ দরিদ্র হয়ে গেল, অনেকে কাজ হারাল, খাওয়া-পরার সমস্যায় আছে; তাদের জন্য একটু শক্ত করে কথা বলতে পারেন না? তাঁরা কি দেখেন না উন্নত দেশে রাজনীতিটা কেমন করে হয়? স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও কি রাজনীতিতে পরিণত বা একটি মানসম্পন্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায় না?
ই-কমার্সের ঢেউয়ে লাখো মানুষ পথহারা। ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে একেকজন হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের টাকা ফিরে পাওয়ার কোনো খবর নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আজ এখানে, কাল ওখানে চিৎকার করছেন। কেন তাঁরা না বুঝে বিনিয়োগ করলেন—এই অভিযোগ তাঁদের দিকে! ই-কমার্সের এত রমরমা অবস্থা চলছে কয়েক বছর ধরে, অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তর না করল কোনো নীতিমালা, না করল মানুষকে সচেতন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কি পারত না আগে থেকেই বিষয়টির ওপর নজরদারি করতে? একটি নীতিমালা করা, মানুষকে ই-কমার্সের ঝুঁকি নিয়ে সচেতন করার কর্মসূচি আগে থেকেই নিতে পারত না? আর যাঁরা একেবারে লোভে পড়ে ই-কমার্সের প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তাঁদেরও বিবেক-বুদ্ধিকে একটু কাজে লাগানো উচিত ছিল না?
বাজারে প্রতিটি নিত্যপণ্যে আগুন! সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও দাম লাগামহীন বাড়ছে। প্রতিটি পণ্যে অতিমুনাফালোভী চক্র সক্রিয়। দাম কমাতে শুল্ক কমানো হয় প্রতিবছর। ব্যবসায়ী-আমদানিকারকেরা ভোক্তার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খান। দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের শেষ নেই। অথচ সীমিত আয়ের ভোক্তার ত্রাহি অবস্থা। নুন আনতে যেন পান্তা ফুরায়। তার কথা কেউ ভাবে না। আবার যা কিনবেন তা-ও ভেজালে ভরা। মানে বেশি টাকা দিয়ে ভেজাল কিনছেন ভোক্তা। ব্যবসায়ীদের মধ্যে সততা, মূল্যবোধ আর নীতি-নৈতিকতার মতো বিষয়গুলো মরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে! না হলে কীভাবে তাঁদের একটি চক্র একজোট হয়ে দামে নৈরাজ্য আর খাদ্যে বিষ মেশাতে পারে? তাঁদেরও তো ঘরে প্রিয়জন আছে। তাঁরাও কী এ বিষে আক্রান্ত হতে পারেন না? শুধু সরকারের দিকে না তাকিয়ে প্রত্যেকের বিবেককে প্রশ্ন করা উচিত।
শেষ করব পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ অবমাননার ইস্যুটি দিয়ে। আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, আমরা উন্নত হচ্ছি, আমরা শিক্ষার হারে, স্বাস্থ্য সচেতনতায়, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অনেক বেশি পরিণত, বিশ্বে আমাদের মানবিক উদারতারও অনেক ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা কি সত্যিকার অসাম্প্রদায়িক হতে পেরেছি? কুমিল্লার ঘটনায় কী প্রমাণ করে? এখানেও কি অপরাজনীতির উসকানি নেই? সত্যিকার যাঁরা ধর্মে বিশ্বাস করেন, তাঁদের দ্বারা কি এ ধরনের ঘৃণ্য, ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো সম্ভব? সেটা যে ধর্মেরই হোক। আর এটা নিয়ে এখন চলছে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের মহোৎসব। কেন এটা নিয়ে রাজনীতি করতে হবে? কেন এর মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর, সম্ভাবনাময় দেশকে বিশ্বদরবারে সাম্প্রদায়িক দেশ বলে খাটো করার সুযোগ দেওয়া হবে? যাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁরা সাধারণ মানুষের কোনো সমস্যা নিয়ে কথা না বলে, রাতের অন্ধকারে ধর্মকে কাজে লাগিয়ে দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টা কার স্বার্থে করছেন?
এগুলো আর নিতে পারছি না। আমাদের যাবতীয় সিস্টেম, রাজনীতি, ধর্মনীতি, সমাজনীতি, সুশীলনীতি—সবকিছুতেই যেন কোনো না কোনোভাবে ক্ষুদ্রস্বার্থের গন্ধ! এসব ‘বিগ’ ইস্যুতে মনে হচ্ছে দেশের আপামর, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, দিবা-রাত্রির কষ্ট, সংগ্রাম আর অসহায়ত্বের আটপৌরে গল্পগুলো অনুপস্থিত! সব মানুষকে দুমুঠো খাবার দিয়ে, বেঁচে থাকার মতো বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা দিয়ে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য, একটি উদার, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গঠনের জন্য সবার এখন প্রতিযোগিতা করা দরকার। ধর্ম নিয়ে অধর্ম না করে, অসুস্থ রাজনীতি, ব্যক্তিস্বার্থে ইন্ধনে ঘি না ঢেলে, পৃথিবী যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ওই মিছিলে শামিল হতে হবে। সবারই একটা ইস্যু হওয়া উচিত; মানুষ এবং সুন্দর-সুখী, উন্নত সমাজ। এই এক ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ কি আমরা নিতে পারি না?
ওই দিন একটি মার্কেটে দেখলাম এক কিশোর ছেলে বাসা থেকে তৈরি করে আনা খাবারের প্যাকেট হাতে দোকানে দোকানে ঘুরছে। কেউ যদি কেনে! হয়তো মায়ের হাতে রান্না করা খাবারগুলো সে ফেরি করছে। অদ্ভুত সুন্দর, মায়াবী চেহারার ছেলেটির চোখে-মুখে দুঃখভরা অস্ফুট আর্তনাদ যেন! পরবর্তী দু-তিন দিন আমি ওই ছেলেটির চেহারা ভুলতে পারিনি। মনে হচ্ছিল, আহা, মায়াবী ছেলেটি বেঁচে থাকার জন্য কতই না কষ্ট করছে! কে জানে কত না-বলা গল্প আছে তার!
বাসার কাছাকাছি সকালের একটি কাঁচাবাজারে আমি প্রায়ই যাই। সেখানে একজন প্রবীণ লোককেও নিয়মিত অল্প কিছু সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য বসে থাকতে দেখি। এত অল্প সবজি যে ভাবি, এগুলো বিক্রি থেকে কীই-বা আয় হবে আর এতে তাঁর সংসারই বা কীভাবে চলবে। ওই বৃদ্ধের ভেতরের গল্প আর জানা হয় না। তবে ঠিকই তাঁর কায়ক্লেশের ছবি আমার মনের ভেতরে অদৃশ্য রক্তক্ষরণ বইয়ে দেয়। যাপিত জীবনের এসব সাদা-কালো গল্প ছাপিয়ে, আমাদের ব্যস্ত দিন-রাত্রির শিরোনাম হয়ে ওঠে একের পর এক ‘বিগ’ ইস্যু। কিছুদিন ধরে খবরের কাগজ আর টেলিভিশনের পর্দাজুড়ে পরীমণি, ই-কমার্সের প্রতারণাসহ অজস্র ঘটনা-রটনা আর সবশেষ কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়া নিয়ে যা হচ্ছে, তা রীতিমতো আমার মাথার ভেতরে হাতুড়িপেটা করছে! বিষয়গুলো নিয়ে লিখব, কথা বলব, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দেব—এমন আগ্রহও জাগছে না। মনে হচ্ছে আমরা সবাই একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। একটু যদি স্থানীয় নির্বাচনের দিকে তাকাই তাহলে কী দেখি? আওয়ামী লীগ যেন নিজেই নিজের প্রতিপক্ষ! দলীয় মার্কায় নির্বাচন। খবরের কাগজ ভরে যাচ্ছে মনোনয়ন পাওয়া থেকে শুরু করে দলীয় কোন্দল, গ্রুপিং, দলাদলি আর দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খবরে। রক্ত ঝরছে। এমনকি বাবা-ছেলেসহ একই পরিবারের প্রিয়জনও খুন হয়ে যাচ্ছে। টাকা, স্বজনপ্রীতি, খাতিরের কারণে ত্যাগী দলীয় নেতা-কর্মীর বদলে দল মনোনয়ন দিচ্ছে প্রবাসী, অন্য দলের মৌসুমি লোকদেরও। নির্বাচন শেষ হয়নি। এ থেকে সৃষ্ট তিক্ততা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, এটা সময়ই বলে দেবে। তবে কথা হচ্ছে কেন এমনটি হবে? দল কি এখনো নিজ দলের ত্যাগী, সৎ, জনপ্রিয় সত্যিকার লোককে মনোনয়ন দেওয়ার মতো রাজনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করেনি? যোগ্য প্রতিনিধি খুঁজে বের করতে একটি বড়, অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দলের জন্য কঠিন কিছু? আর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য, জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য এতটা বেপরোয়া হবেন কেন? তাঁদের ভেতরে কি আজও নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ বা উদার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়নি? তাহলে তৃণমূলে সত্যিকার অর্থে মানুষের জন্য রাজনৈতিক চর্চা আর কবে হবে?
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়ে গেছে দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তির ছোড়াছুড়ি। কীভাবে হবে নির্বাচন? কারা থাকবে কমিশনে—ইত্যাদি। বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনে তারা যাবে না। আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচন হবে স্বাভাবিক নিয়মে। মানে বড় দুই দল কে কীভাবে ক্ষমতায় যাবে, এ নিয়েই তাদের রাজনীতি। কোটি মানুষের সমস্যা, তাদের চাওয়া-পাওয়া এসব কারও ভাবনায় আছে বলে মনে হয় না। জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদেরা কি একটু জনমানুষঘনিষ্ঠ রাজনীতি করতে পারেন না? তাঁরা কি ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতার বাইরে গিয়ে এই যে করোনার পর কত মানুষ দরিদ্র হয়ে গেল, অনেকে কাজ হারাল, খাওয়া-পরার সমস্যায় আছে; তাদের জন্য একটু শক্ত করে কথা বলতে পারেন না? তাঁরা কি দেখেন না উন্নত দেশে রাজনীতিটা কেমন করে হয়? স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও কি রাজনীতিতে পরিণত বা একটি মানসম্পন্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায় না?
ই-কমার্সের ঢেউয়ে লাখো মানুষ পথহারা। ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে একেকজন হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের টাকা ফিরে পাওয়ার কোনো খবর নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আজ এখানে, কাল ওখানে চিৎকার করছেন। কেন তাঁরা না বুঝে বিনিয়োগ করলেন—এই অভিযোগ তাঁদের দিকে! ই-কমার্সের এত রমরমা অবস্থা চলছে কয়েক বছর ধরে, অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তর না করল কোনো নীতিমালা, না করল মানুষকে সচেতন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কি পারত না আগে থেকেই বিষয়টির ওপর নজরদারি করতে? একটি নীতিমালা করা, মানুষকে ই-কমার্সের ঝুঁকি নিয়ে সচেতন করার কর্মসূচি আগে থেকেই নিতে পারত না? আর যাঁরা একেবারে লোভে পড়ে ই-কমার্সের প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তাঁদেরও বিবেক-বুদ্ধিকে একটু কাজে লাগানো উচিত ছিল না?
বাজারে প্রতিটি নিত্যপণ্যে আগুন! সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও দাম লাগামহীন বাড়ছে। প্রতিটি পণ্যে অতিমুনাফালোভী চক্র সক্রিয়। দাম কমাতে শুল্ক কমানো হয় প্রতিবছর। ব্যবসায়ী-আমদানিকারকেরা ভোক্তার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খান। দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের শেষ নেই। অথচ সীমিত আয়ের ভোক্তার ত্রাহি অবস্থা। নুন আনতে যেন পান্তা ফুরায়। তার কথা কেউ ভাবে না। আবার যা কিনবেন তা-ও ভেজালে ভরা। মানে বেশি টাকা দিয়ে ভেজাল কিনছেন ভোক্তা। ব্যবসায়ীদের মধ্যে সততা, মূল্যবোধ আর নীতি-নৈতিকতার মতো বিষয়গুলো মরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে! না হলে কীভাবে তাঁদের একটি চক্র একজোট হয়ে দামে নৈরাজ্য আর খাদ্যে বিষ মেশাতে পারে? তাঁদেরও তো ঘরে প্রিয়জন আছে। তাঁরাও কী এ বিষে আক্রান্ত হতে পারেন না? শুধু সরকারের দিকে না তাকিয়ে প্রত্যেকের বিবেককে প্রশ্ন করা উচিত।
শেষ করব পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ অবমাননার ইস্যুটি দিয়ে। আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, আমরা উন্নত হচ্ছি, আমরা শিক্ষার হারে, স্বাস্থ্য সচেতনতায়, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অনেক বেশি পরিণত, বিশ্বে আমাদের মানবিক উদারতারও অনেক ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা কি সত্যিকার অসাম্প্রদায়িক হতে পেরেছি? কুমিল্লার ঘটনায় কী প্রমাণ করে? এখানেও কি অপরাজনীতির উসকানি নেই? সত্যিকার যাঁরা ধর্মে বিশ্বাস করেন, তাঁদের দ্বারা কি এ ধরনের ঘৃণ্য, ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো সম্ভব? সেটা যে ধর্মেরই হোক। আর এটা নিয়ে এখন চলছে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের মহোৎসব। কেন এটা নিয়ে রাজনীতি করতে হবে? কেন এর মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর, সম্ভাবনাময় দেশকে বিশ্বদরবারে সাম্প্রদায়িক দেশ বলে খাটো করার সুযোগ দেওয়া হবে? যাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁরা সাধারণ মানুষের কোনো সমস্যা নিয়ে কথা না বলে, রাতের অন্ধকারে ধর্মকে কাজে লাগিয়ে দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টা কার স্বার্থে করছেন?
এগুলো আর নিতে পারছি না। আমাদের যাবতীয় সিস্টেম, রাজনীতি, ধর্মনীতি, সমাজনীতি, সুশীলনীতি—সবকিছুতেই যেন কোনো না কোনোভাবে ক্ষুদ্রস্বার্থের গন্ধ! এসব ‘বিগ’ ইস্যুতে মনে হচ্ছে দেশের আপামর, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, দিবা-রাত্রির কষ্ট, সংগ্রাম আর অসহায়ত্বের আটপৌরে গল্পগুলো অনুপস্থিত! সব মানুষকে দুমুঠো খাবার দিয়ে, বেঁচে থাকার মতো বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা দিয়ে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য, একটি উদার, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গঠনের জন্য সবার এখন প্রতিযোগিতা করা দরকার। ধর্ম নিয়ে অধর্ম না করে, অসুস্থ রাজনীতি, ব্যক্তিস্বার্থে ইন্ধনে ঘি না ঢেলে, পৃথিবী যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ওই মিছিলে শামিল হতে হবে। সবারই একটা ইস্যু হওয়া উচিত; মানুষ এবং সুন্দর-সুখী, উন্নত সমাজ। এই এক ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ কি আমরা নিতে পারি না?
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১৫ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১৫ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৬ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৬ ঘণ্টা আগে