চিররঞ্জন সরকার
কোনো রকম প্রক্রিয়া-পদ্ধতি না মেনে, পরিণতি বিবেচনা না করে আকস্মিকভাবে ৪ নভেম্বর থেকে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। স্রেফ একটা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। আর এতেই সারা দেশে আগুন জ্বলে উঠেছে। দেশের ইতিহাসে এক লাফে ১৫ টাকা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ঘটনা কখনো ঘটেনি। আগে হয়তো ২ থেকে ৫ টাকা অথবা সর্বোচ্চ ৮ টাকা বেড়েছিল। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে অনেক গণপরিবহন রাতারাতি অযৌক্তিক হারে ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ। ইতিমধ্যে দেশের পরিবহন মালিকদের সমিতি বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
কেরোসিন আর ডিজেলের দামের সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির রয়েছে নিবিড় সংযোগ। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে কেবল এ পণ্যটির মূল্য ওঠা-নামা করে না, এর সঙ্গে পরিবহন ভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি ব্যবহার করে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য এবং সেবার মূল্যও বেড়ে যায়। ফলে সরকার একটি পণ্যের মূল্য বাড়ালেও ভোক্তাকে বহু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ভার সইতে হয়।
বাংলাদেশে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল ব্যবহার হয়, তার ৭৩ শতাংশের বেশি ডিজেল। সড়ক ও নৌপরিবহন, কৃষির সেচপাম্প এবং বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা ক্ষেত্রে ডিজেলের ব্যবহার রয়েছে।
প্রতিবছর ৪০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। আর অকটেন আমদানি করা হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টন। প্রায় সমান পরিমাণ পেট্রল উৎপাদন করা হয় দেশীয় উৎস থেকে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়বে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের ভাড়ায়। লঞ্চসহ নৌযানের ভাড়াও বাড়বে। আর এর পরোক্ষ প্রভাব পড়বে বহু খাতে। ট্রাক কিংবা নৌযানের ভাড়া বেড়ে গেলে শাকসবজি থেকে শুরু করে যেসব পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাজারে আসে, তার সবেরই দাম বাড়বে। ডিজেলের দাম বাড়লে জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে সঙ্গে বাসভাড়াও বেড়ে যাবে। ফলে দেশের সব পরিবারেরই মাসিক খরচের হিসাব নতুন করে সাজাতে হবে। এটা মোটেও সহজ কাজ নয়। কারণ, মানুষের আয় বাড়ছে না। সীমিত আয় দিয়ে বাড়ন্ত ব্যয় মেটাতে গিয়ে বহু পরিবারকে খাবার কাটছাঁট করতে হবে। এতে করে সার্বিক পুষ্টি পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে; যা দেশের ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকশিল্পেও যে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির আঁচ পড়বে। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকায় বিদ্যুতের দাম বাড়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে সেচপাম্প ও পাওয়ারটিলার ডিজেলে চলে বলে কৃষকেরও ব্যয় বাড়বে। মাছ ধরা ট্রলারগুলোরও জ্বালানি ডিজেল, তাই সেখানেও খরচ বাড়বে। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
তেলের দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে সরকারের জ্বালানি বিভাগ বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পাশের দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় মোট ৭২৬.৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সরকার প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকা লোকসান গুনছে। তাই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অনিবার্য হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই যুক্তিকে অজুহাত মনে করছেন। কারণ, গত প্রায় আট বছর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল। অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি মাত্র ৪০ ডলারে নেমে এসেছিল। কিন্তু তখন দেশে তেলের দাম কমানো হয়নি। প্রতিবেশী অনেক দেশেই জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো হয়েছিল। কিন্তু দেশের বাজারে না কমিয়ে সরকার বিপুল অর্থ লাভ করেছে। ফলে দেশীয় তেলের বাজার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করা অযৌক্তিক।
এ ছাড়া এখন আর দেশে পেট্রল ও অকটেন আমদানি করার প্রয়োজন হয় না। দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত হিসেবে পাওয়া কনডেনসেট দেশেই পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণ করে পেট্রল ও অকটেন তৈরি হয়। এই পেট্রল ও অকটেন বিক্রি করেও সরকার লাভ করছে। ফলে কেরোসিন ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি না করে বরং কমানো উচিত।
প্রশ্ন উঠেছে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া নিয়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এর সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে দাম বাড়ানো হতেই পারে। কিন্তু এর একটা প্রক্রিয়া-পদ্ধতি আছে। একটা গ্রহণযোগ্য মাত্রা আছে। আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি করে এই মূল্যবৃদ্ধি করার কথা। কিন্তু তেমন কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে একধাপে ১৫ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে ‘বেআইনি’ বলছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রেক্ষাপটে হোক কিংবা অন্য যেকোনো কারণেই হোক, জ্বালানি তেলের দাম একধাপে লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মোটেও যুক্তিসংগত নয়। এটা দেশের সাধারণ মানুষের ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করবে। আমাদের দেশের মানুষ এমনিতেই করোনার প্রভাবে অত্যন্ত কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, করোনাকালে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। করোনার মধ্যে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। মোট দরিদ্রের সংখ্যা ৪২ শতাংশ বা প্রায় ৭ কোটি। বেকার হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এর মধ্যে দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। বহু পণ্যের দাম এখনো লাগামছাড়া। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অত্যন্ত বড় একটি আঘাত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি চুরি-অপচয়-দুর্নীতি ঠেকানো যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে হবে না। আর পথে পথে পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডারদের চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে পরিবহন ভাড়াও বাড়াতে হবে না। প্রশ্ন হলো, এসব ব্যাপারে সরকার দৃষ্টি দেবে কি? তেমন কোনো আন্তরিক উদ্যোগ গত তিন দশকে দেখা যায়নি।
জ্বালানি তেলের ব্যাপারে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও পরিকল্পনা থাকা দরকার। প্রয়োজনে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য জ্বালানির ‘মূল্য স্থিতিশীলতা তহবিল’ গঠন করা উচিত। যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল, তখন বিপিসি হাজার হাজার কোটি টাকা তেল বিক্রি করে আয় করেছে। সেই টাকা কোথায়, কীভাবে ব্যয় করা হয়েছে, তার কোনো হদিস নেই। এসব বিষয়ে জবাবদিহি থাকতে হবে।
প্রায়ই শোনা যায় টাকার অভাবে তেল এবং গ্যাস সন্ধানের নানা প্রকল্প আটকে গেছে। এসব প্রকল্পে টাকার জোগান নিশ্চিত করা দরকার। পাশাপাশি, সৌর বা বায়ুবিদ্যুতের মতো শক্তির উৎপাদনেও গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
তা না হলে ভবিষ্যতের পক্ষে তার পরিণামও ক্ষতিকর।
মূলকথা হলো, জ্বালানি তেলের ব্যাপারে সরকারকে যত শিগগির সম্ভব জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা-ক্ষোভকে সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে। কেবল দাম বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়ার সর্বনাশা প্রবণতা সরকারের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে। নানা কারণে মানুষের মনে এমনিতেই ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি সেই ক্ষোভের সলতেটাতে আগুন জ্বেলে দিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
কোনো রকম প্রক্রিয়া-পদ্ধতি না মেনে, পরিণতি বিবেচনা না করে আকস্মিকভাবে ৪ নভেম্বর থেকে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। স্রেফ একটা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। আর এতেই সারা দেশে আগুন জ্বলে উঠেছে। দেশের ইতিহাসে এক লাফে ১৫ টাকা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ঘটনা কখনো ঘটেনি। আগে হয়তো ২ থেকে ৫ টাকা অথবা সর্বোচ্চ ৮ টাকা বেড়েছিল। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে অনেক গণপরিবহন রাতারাতি অযৌক্তিক হারে ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ। ইতিমধ্যে দেশের পরিবহন মালিকদের সমিতি বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
কেরোসিন আর ডিজেলের দামের সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির রয়েছে নিবিড় সংযোগ। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে কেবল এ পণ্যটির মূল্য ওঠা-নামা করে না, এর সঙ্গে পরিবহন ভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি ব্যবহার করে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য এবং সেবার মূল্যও বেড়ে যায়। ফলে সরকার একটি পণ্যের মূল্য বাড়ালেও ভোক্তাকে বহু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ভার সইতে হয়।
বাংলাদেশে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল ব্যবহার হয়, তার ৭৩ শতাংশের বেশি ডিজেল। সড়ক ও নৌপরিবহন, কৃষির সেচপাম্প এবং বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা ক্ষেত্রে ডিজেলের ব্যবহার রয়েছে।
প্রতিবছর ৪০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। আর অকটেন আমদানি করা হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টন। প্রায় সমান পরিমাণ পেট্রল উৎপাদন করা হয় দেশীয় উৎস থেকে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়বে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের ভাড়ায়। লঞ্চসহ নৌযানের ভাড়াও বাড়বে। আর এর পরোক্ষ প্রভাব পড়বে বহু খাতে। ট্রাক কিংবা নৌযানের ভাড়া বেড়ে গেলে শাকসবজি থেকে শুরু করে যেসব পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাজারে আসে, তার সবেরই দাম বাড়বে। ডিজেলের দাম বাড়লে জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে সঙ্গে বাসভাড়াও বেড়ে যাবে। ফলে দেশের সব পরিবারেরই মাসিক খরচের হিসাব নতুন করে সাজাতে হবে। এটা মোটেও সহজ কাজ নয়। কারণ, মানুষের আয় বাড়ছে না। সীমিত আয় দিয়ে বাড়ন্ত ব্যয় মেটাতে গিয়ে বহু পরিবারকে খাবার কাটছাঁট করতে হবে। এতে করে সার্বিক পুষ্টি পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে; যা দেশের ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকশিল্পেও যে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির আঁচ পড়বে। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকায় বিদ্যুতের দাম বাড়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে সেচপাম্প ও পাওয়ারটিলার ডিজেলে চলে বলে কৃষকেরও ব্যয় বাড়বে। মাছ ধরা ট্রলারগুলোরও জ্বালানি ডিজেল, তাই সেখানেও খরচ বাড়বে। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
তেলের দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে সরকারের জ্বালানি বিভাগ বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পাশের দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় মোট ৭২৬.৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সরকার প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকা লোকসান গুনছে। তাই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অনিবার্য হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই যুক্তিকে অজুহাত মনে করছেন। কারণ, গত প্রায় আট বছর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল। অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি মাত্র ৪০ ডলারে নেমে এসেছিল। কিন্তু তখন দেশে তেলের দাম কমানো হয়নি। প্রতিবেশী অনেক দেশেই জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো হয়েছিল। কিন্তু দেশের বাজারে না কমিয়ে সরকার বিপুল অর্থ লাভ করেছে। ফলে দেশীয় তেলের বাজার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করা অযৌক্তিক।
এ ছাড়া এখন আর দেশে পেট্রল ও অকটেন আমদানি করার প্রয়োজন হয় না। দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত হিসেবে পাওয়া কনডেনসেট দেশেই পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণ করে পেট্রল ও অকটেন তৈরি হয়। এই পেট্রল ও অকটেন বিক্রি করেও সরকার লাভ করছে। ফলে কেরোসিন ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি না করে বরং কমানো উচিত।
প্রশ্ন উঠেছে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া নিয়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এর সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে দাম বাড়ানো হতেই পারে। কিন্তু এর একটা প্রক্রিয়া-পদ্ধতি আছে। একটা গ্রহণযোগ্য মাত্রা আছে। আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি করে এই মূল্যবৃদ্ধি করার কথা। কিন্তু তেমন কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে একধাপে ১৫ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে ‘বেআইনি’ বলছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রেক্ষাপটে হোক কিংবা অন্য যেকোনো কারণেই হোক, জ্বালানি তেলের দাম একধাপে লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মোটেও যুক্তিসংগত নয়। এটা দেশের সাধারণ মানুষের ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করবে। আমাদের দেশের মানুষ এমনিতেই করোনার প্রভাবে অত্যন্ত কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, করোনাকালে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। করোনার মধ্যে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। মোট দরিদ্রের সংখ্যা ৪২ শতাংশ বা প্রায় ৭ কোটি। বেকার হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এর মধ্যে দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। বহু পণ্যের দাম এখনো লাগামছাড়া। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অত্যন্ত বড় একটি আঘাত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি চুরি-অপচয়-দুর্নীতি ঠেকানো যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে হবে না। আর পথে পথে পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডারদের চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে পরিবহন ভাড়াও বাড়াতে হবে না। প্রশ্ন হলো, এসব ব্যাপারে সরকার দৃষ্টি দেবে কি? তেমন কোনো আন্তরিক উদ্যোগ গত তিন দশকে দেখা যায়নি।
জ্বালানি তেলের ব্যাপারে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও পরিকল্পনা থাকা দরকার। প্রয়োজনে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য জ্বালানির ‘মূল্য স্থিতিশীলতা তহবিল’ গঠন করা উচিত। যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল, তখন বিপিসি হাজার হাজার কোটি টাকা তেল বিক্রি করে আয় করেছে। সেই টাকা কোথায়, কীভাবে ব্যয় করা হয়েছে, তার কোনো হদিস নেই। এসব বিষয়ে জবাবদিহি থাকতে হবে।
প্রায়ই শোনা যায় টাকার অভাবে তেল এবং গ্যাস সন্ধানের নানা প্রকল্প আটকে গেছে। এসব প্রকল্পে টাকার জোগান নিশ্চিত করা দরকার। পাশাপাশি, সৌর বা বায়ুবিদ্যুতের মতো শক্তির উৎপাদনেও গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
তা না হলে ভবিষ্যতের পক্ষে তার পরিণামও ক্ষতিকর।
মূলকথা হলো, জ্বালানি তেলের ব্যাপারে সরকারকে যত শিগগির সম্ভব জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা-ক্ষোভকে সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে। কেবল দাম বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়ার সর্বনাশা প্রবণতা সরকারের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে। নানা কারণে মানুষের মনে এমনিতেই ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি সেই ক্ষোভের সলতেটাতে আগুন জ্বেলে দিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
৯ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
৯ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
৯ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৯ ঘণ্টা আগে